Ajker Patrika

হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে কি নজরদারি করা যায়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১৫: ১৮
হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে কি নজরদারি করা যায়

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলতি মাসের শুরু থেকেই উত্তাল দেশ। এ আন্দোলন ঘিরে ঘটেছে সহিংসতা, ঝড়েছে প্রাণ। একপর্যায়ে পুরো দেশ চলে যায় ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটে। গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা সীমিত আকারে সচল হয়। বন্ধ আছে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের কাছে একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোন কলে যোগাযোগের নতুন নিয়ম নাকি কার্যকর করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত কিছু ‘সরকারি নির্দেশনা’ও নজরে এনেছেন তাঁরা।

এসব নির্দেশনার মধ্যে আছে ব্যবহারকারীদের সব কল রেকর্ড করা হবে, সমস্ত কল রেকর্ডিং সংরক্ষণ করা হবে, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, এক্সসহ (সাবেক টুইটার) সব সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি করা হবে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 

নির্দেশনাগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, একই ধরনের নির্দেশনা এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন: ভারত, ঘানা, আরব আমিরাতে ইংরেজি ভাষায় প্রচার করা হয়েছে। সেই নির্দেশনাগুলোই বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে অন্তত ২০২০ সাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে।

হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, এক্সের কি নজরদারি করা সম্ভব?
হোয়াটসঅ্যাপ হেল্প সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা আদান-প্রদানের সুরক্ষার বিষয়টি এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড অর্থাৎ এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করা হলে সেটি বার্তা প্রেরক ও গ্রাহক ছাড়া কারও পক্ষে পড়া, শোনা বা দেখা সম্ভব না। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের পক্ষেও তা দেখা সম্ভব না।

তবে হোয়াটসঅ্যাপ হেল্প সেন্টার বলছে, বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থাগুলো হোয়াটসঅ্যাপের কাছে ডেটা চেয়ে আবেদন করতে পারে। তবে এসব আবেদনের আইনি বৈধতা থাকতে হয়। হোয়াটসঅ্যাপ নিজেদের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার ‘গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট ফর ইউজার ডেটা রিপোর্ট’-এ বছরে দুইবার এসব আবেদনের তথ্য প্রকাশ করে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ কিছু নির্দিষ্ট তথ্য সরকারকে দেয়।

এসব তথ্যের মধ্যে থাকে—
ব্যবহারকারীর প্রাথমিক তথ্য: যেমন, ব্যবহারকারীর নাম, হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলার তারিখ, সবশেষ হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় থাকার সময়, আইপি অ্যাড্রেস, ব্যবহারকারীর ডিভাইসের ধরন এবং ই-মেইল। 

অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য: এর মধ্যে আছে ব্যবহারকারীর অ্যাবাউট সেকশনে দেওয়া তথ্য, প্রোফাইল ছবি, কোনো গ্রুপে থাকলে তার বর্ণনা এবং কনট্যাক্ট নম্বরের বর্ণনা। 

মেসেজ এবং কল লগ: সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ এসব তথ্য সংরক্ষণ করে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আইনিভাবে প্রয়োজন হলে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ এসব কল লগ সংগ্রহ করতে পারে। এর মধ্যে আছে ওই ব্যক্তি কার সঙ্গে, কখন, কীভাবে এবং কোন আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে যোগাযোগ করছেন।

হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোনকলে যোগাযোগের নতুন নিয়ম সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো ভারতেও প্রচার হয়েছিল। ছবি: দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ামোদ্দা কথা, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান অত্যন্ত নিরাপদ বলে দাবি করা হলেও সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ঠিকই ব্যবহারকারীর গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ।

ফেসবুকের বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম মেসেঞ্জারে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা শুরুতে ছিল না। তবে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মেসেঞ্জারে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা চালু করে।

ফলে হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেঞ্জারে পাঠানো বার্তাও সুরক্ষা পায়। 

মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স (সাবেক টুইটার) হেল্প সেন্টার সূত্রেও জানা যায়, এই প্ল্যাটফর্মটিরও এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা রয়েছে। ফলে এখানেও সরাসরি বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বার্তা প্রেরক ও গ্রাহক ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সেটি দেখা সম্ভব না।

আবার কোনো দেশের সরকারের পক্ষেই ফেসবুককে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে। গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা খেয়াল করেছি যে, এই মুহূর্তে কিছু সামাজিকমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব তারা যেহেতু আমাদের বাংলাদেশের আইনকে কোনোভাবেই মানছে না, আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা কোনো কিছুকেই তারা সম্মান দেখাচ্ছে না এবং তারা তাদের নিজেদের পলিসি গাইডলাইন, প্রাইভেসি সেটিংস নিজেরাই ভঙ্গ করছে। তো এই মুহূর্তে আমরা এই ঝুঁকিটা কীভাবে নেব। তারা এসে যদি সেই প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা এসব বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করবে, তখন আমরা বিবেচনা করে দেখব।’

তবে সরকার বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন ইউজার আইডি বা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে অনুরোধ করেছে। ফেসবুক এসব অনুরোধে সাড়াও দিয়েছে। যেমন, ২০২০ সালে ফেসবুকের কাছে ২৪১টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩৭১টি ইউজার আইডি বা অ্যাকাউন্ট-সম্পর্কিত তথ্য চায় বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে ১৪২টি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুরোধ ও ৯৯টি জরুরি অনুরোধ রয়েছে। সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে তথ্য দিয়েছে ফেসবুক।

বাংলাদেশে কল রেকর্ড
বাংলাদেশে কল রেকর্ড করা হয় কি না এমন তথ্যের অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলায় ২০২১ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন পাস হয়, ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। এ আইনে ফোনে আড়ি পাতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিধিমালা অনুসরণ করেই অনেক সময় ব্যক্তির ফোন কল রেকর্ড করে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গ্রাহকের বার্তা সুরক্ষার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপের বক্তব্য। ছবি: হোয়াটসঅ্যাপ হেল্প সেন্টারমোখলেসুর রহমান বিবিসি বাংলাকে আরও বলেন, টেলিফোনে আড়ি পাতাসংক্রান্ত আইনে ২০১৪ সালে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ওই পরিবর্তনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে কারও ফোনে আড়ি পাতা বা কথোপকথনের রেকর্ড সংগ্রহ করার সুযোগ তৈরি হয়। জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে, বিদেশি গুপ্তচর সন্দেহ করলে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এনটিএমসির (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেল) সহায়তায় কারও ফোন কল রেকর্ড করতে চাওয়ার আবেদন করতে পারে। তবে নির্দিষ্ট কোনো নাগরিকের কর্মকাণ্ড যদি রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বা হুমকি না হয়, তাহলে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া কারও ফোনে কেউ বৈধভাবে আড়ি পাততে পারবে না। 

২০২২ সালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের টেলিফোন আলাপের একটি অডিও ফাঁস হয়, পরে এটি তাঁদের দুজনের কথোপকথন বলে সরকার থেকে নিশ্চিতও করা হয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশে কল রেকর্ড করার মতো ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত