ফ্যাক্টচেক /রোজাকে বিয়ে করতে গিয়ে মিথিলার কথা ভেবে কাঁদছেন তাহসান— ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা কী

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ১৬
Thumbnail image
তাহসান খানের বিয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিও

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান। গত ৪ জানুয়ারি রোজা আহমেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। এই বিয়ে ঘিরে ভক্তদের মধ্যে চলছে উন্মাদনা। এর মধ্যে তাহসানের বিয়ের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বিয়ের পোশাক পরা এক যুবক মাথা নিচু করে নিকাহনামায় স্বাক্ষর করছেন, অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তিনি কাঁদছেন। ভিডিওটির নিচে ক্যাপশনে লেখা, ‘হয়তো মিথিলার কথা বার বার মনে পরছে।’ আবার ভিডিওটির ভেতরে লেখা আছে, ‘তাহসান ২য় বিয়ে করতে গিয়ে অনেক কান্না করছে।’ একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ইউটিউবটিকটকেও পোস্ট করা হয়েছে।

শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ‘Lullu & Lolita’ (লুল্লু ও ললিতা) নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে এবং এতে ২ লাখ ৪০ হাজার ‘রিয়েক্ট’ পড়েছে। ভিডিওটিতে সাড়ে ৫ হাজারের মতো কমেন্ট করা হয়েছে।

এসব কমেন্টে কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে ‘ভিডিওটি তাহসানের বিয়ের ভিডিও নয়’ বলে উল্লেখ আছে। কোনো কোনো অ্যাকাউন্ট ‘এটি পাকিস্তানের কোনো ব্যক্তির বিয়ের ভিডিও’ বলেও কমেন্ট করেছে। আবার এটিকে ‘তাহসানের বিয়ের ভিডিও’ বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। টুম্পা ইসলাম (Tumpa islam) নামে এক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়, ‘সত্যি ভিডিওটা দেখে খুবই কষ্ট পাইলাম। ছেলেদের মনের মধ্যেও ভালোবাসা আছে মেয়েদের জন্য কান্না আসে।’

‘নিশাত নিশাত’ নামের অ্যাকাউন্ট লিখেছে, ‘মিথিলার কথা না, নিশ্চিত মেয়ের কথা ভেবে কেঁদেছেন।’

সত্যতা জানার উদ্দেশ্যে কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘ayankhtri1’ নামে টিকটক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পাওয়া যায়, যেটি ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়।

ভিন্ন ভাষার ক্যাপশনে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ভিডিও
ভিন্ন ভাষার ক্যাপশনে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ভিডিও

ইংরেজিসহ দুটি ভাষায় ভিডিওটির ক্যাপশন লেখা ছিল। গুগলের ভাষা শনাক্তকারী টুলের সাহায্যে দেখা যায়, অপর ক্যাপশনটি উর্দু ভাষায় লেখা হয়েছে, যা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।

গুগল ট্রান্সলেশনের তথ্যমতে এটি উর্দু ভাষা
গুগল ট্রান্সলেশনের তথ্যমতে এটি উর্দু ভাষা

ক্যাপশনটিতে লেখা হয়, ‘মা তোমার কথা মনে পড়ছে। আল্লাহ আমার মাকে ক্ষমা কর।’

অর্থাৎ, গত ৪ জানুয়ারি তাহসান ও রোজার বিয়ের বেশ আগেই ভিডিওটি টিকটকে আছে।

ayankhtri 1 নামে টিকটক অ্যাকাউন্টে একই বিয়ের ঘটনায় একই ব্যক্তির আরও কিছু ভিডিও পাওয়া যায়। এমন কিছু ভিডিও দেখুন , ,

এই টিকটক অ্যাকাউন্টে আরও একটি ভিডিও পোস্টা করা হয়েছে। সেই ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিকে কবর জিয়ারত করতে দেখা যায়। সেটাতে ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘মা তোমাকে মনে পড়ছে।’

এসব ভিডিও থেকে ধারণা করা যায়, মৃত মাকে মনে করেই হয়ত ওই ব্যক্তি বিয়ের দিন কাঁদছিলেন।

পরে ayankhtri1 নামে টিকটক অ্যাকাউন্টে গেলে ‘@tariq 00818’ নামে দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টকে ফলো করতে বলা হয়।

ayankhtri1 নামে টিকটক অ্যাকাউন্টটি ‘@tariq 00818’ নামক দ্বিতীয় অ্যাকাউন্ট অনুসরন করতে বলেন
ayankhtri1 নামে টিকটক অ্যাকাউন্টটি ‘@tariq 00818’ নামক দ্বিতীয় অ্যাকাউন্ট অনুসরন করতে বলেন

সার্চ করে ‘@tariq00818’ নামে অ্যাকাউন্টটি টিকটক খুঁজে পায় আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তবে এতে বিয়ের এমন কোনো ভিডিও ছিল না। অ্যাকাউন্টটির বায়ো অপশনে ‘ayankhatri 11’ নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টকে ফলো করতে বলা হয়।

‘ayankhatri11’ নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গিয়ে ‘তাহসানের বিয়ের দৃশ্য’ দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পাওয়া যায়। পাশাপাশি টিকটক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা আরও কিছু ভিডিও সেখানে পাওয়া যায়।

অ্যাকাউন্টটির পরিচিতি সেকশনে গিয়ে জানা যায়, এটি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়।

‘ayankhatri11’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটির পরিচিতি পাতার স্ক্রিনশট
‘ayankhatri11’ নামক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটির পরিচিতি পাতার স্ক্রিনশট

সুতরাং, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহসান খানের বিয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পাকিস্তানের এক যুবকের বিয়ের ভিডিও। সেই রোজাকে বিয়ের সময় মিথিলাকে মনে করে তাহসান কাঁদছেন— সেই দাবিটিও মিথ্যা। এমন দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শপথ নিয়েই বাইডেনের নীতি বাতিল ও ১০০ নির্বাহী আদেশের ঘোষণা ট্রাম্পের

বিচার বিভাগের সমস্যা তুলে ধরলেন বিচারক, আনিসুল হক বললেন ‘সমস্যা কেটে যাবে’

শাহজালাল বিমানবন্দরে চাকরি নেননি মনোজ কুমার, বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি

বিদ্যালয়ে একই পরিবারের ১৬ জনের চাকরি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

ভাতা নয়, সঞ্চয়পত্র কিনে দিচ্ছে সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত