Ajker Patrika

চিনির কারণে কি ডায়াবেটিস হয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ১৭
চিনির কারণে কি ডায়াবেটিস হয়

স্বাস্থ্যের সঙ্গে চিনির অম্লমধুর সম্পর্ক। অনেক খাবারের মধ্যেই শর্করা উপাদান হিসেবে থাকে চিনি। ফলমূল, শাক-সবজি, শষ্য ও দুগ্ধজাত খাবার এর মধ্যে আছে। এসব খাবার পুরোটা খেয়ে যেটুকু প্রাকৃতিক চিনি শরীরগ্রহণ করে তাতে সমস্যা নেই। প্রশ্ন উঠে শুধু চিনি ও চিনিযুক্ত করা খাবার নিয়ে। মাত্রাতিরিক্ত চিনি নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে চিনির সম্পর্ক কি? চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয়- এমন ধারণা কমবেশি প্রচলিত। আসলে কি চিনি খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হয়?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগে প্রয়োজন ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু জানাশোনা। প্রথমেই জানা যাক, ডায়াবেটিস কি, কেন হয়?

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, মানুষের অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করতে না পারলে বা শরীর কার্যকরভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে না পারলে, যে স্বাস্থ্যগত সমস্য তৈরি হয় তা ডায়াবেটিস নামে পরিচিত।

মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ইনসুলিন। পাকস্থলীর পেছনে থাকা প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থি থেকে এটি তৈরি হয়। রক্তে গ্লুকোজ (শর্করার) বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন। মানুষের শরীর শর্করা বা চিনি গ্রহণ করার পর শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য তা রক্তনালির মাধ্যমে কোষে নিয়ে যায় ইনসুলিন। শর্করাযুক্ত সব খাবারকে শরীর গ্লুকোজ বা চিনিতে পরিণত করে আর ইনসুলিন সেই চিনিকে কোষে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা না থাকলে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা ব্যাপক বেড়ে যায়। এমন অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসিমিয়া বলে। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় বিরাজ করলে শরীরের বড় ক্ষতি হয়, একাধিক অঙ্গ ও টিস্যু অকার্যকর হতে পারে।

সব বয়সের মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস আজীবনের জন্য হতে পারে। তবে চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ডায়াবেটিসের তিনটি ধরন আছে:

টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করে না। শরীরের কোষগুলোতে ইনসুলিন কাজ করে না। এটি ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরণ। প্রধানত প্রাপ্তবয়স্করা এ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, তবে শিশুদেরও এটি হতে পারে। বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই এই ধরনের। 

টাইপ ১ ডায়াবেটিস: টাইপ-১ ডায়াবেটিস জেনেটিক বা বংশগত। বাহ্যিক কোনো কারণে কেউ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না। এক্ষেত্রে অজানা কারণে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। এটি সাধারণত শিশু ও অল্প বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়; আবার যেকোনো বয়সেও হতে পারে।

গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস: গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা নারীর শরীরে এমন এক হরমোন নিঃসরণ করে, যা ইনসুলিন ব্যবহারে শরীরের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই হরমোন ইনসুলিন প্রতিরোধী। এটি গর্ভাবস্থায় নিঃসরণ হওয়া স্বাভাবিক, প্রসবের তা আর থাকেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্রা বেশি হয়, তখন গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস হয়। এই ডায়াবেটিস থেকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে এবং জন্ম নেওয়া শিশুর এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।  

ডায়াবেটিস কেন হয়- এ প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজন চিকিৎসাকেন্দ্র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছে। 

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। শরীরের পেশি, চর্বি ও লিভারের কোষগুলো যেভাবে ইনসুলিন নেওয়া উচিত সেভাবে যখন সাড়া দেয় না তখন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ঘটে। বেশ কিছু বিষয় এই ইনসুলিন রেজিট্যান্সের জন্য দায়ী। এর মধ্যে আছে স্থূলতা, শরীর চর্চা, অভাব, খাদ্য, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও জেনেটিকস ইত্যাদি।  

অটো ইমিউন ডিজিজ: দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অজানা কারণে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষকে আক্রমণ করলে, সে পরিস্থিতিকে অটো ইমিউন ডিজিজ বলে। 

হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা: গর্ভাবস্থায়, প্লাসেন্টা হরমোন নিঃসরণ করে যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। এ অবস্থায় অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে।

অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতি: অস্ত্রোপচার বা যেকোনো আঘাতের কারণে অগ্ন্যাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইনসুলিন তৈরির ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলেও ডায়াবেটিস হয়।

জেনেটিক মিউটেশন: জেনেটিক মিউটেশন বা জিনের ডিএনএ সিকোয়েন্সের পরিবর্তনের ফলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। 

ডায়াবেটিসের সঙ্গে চিনির কি সম্পর্ক?

যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ডায়াবেটিস ইউকে জানায়, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সঙ্গে চিনির কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারাও এর জন্য দায়ী না। এটি মূলত অটো ইমিউন ডিজিজ, যেখানে  দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষকে ধ্বংস করে দেয়। 

আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে উত্তর কিছুটা জটিল। কারণ, চিনি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য সরাসরি দায়ী নয়। তবে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থেকে ডায়াবেটিস হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রচুর ক্যালরি থাকায় চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ বাড়তি ওজন সৃষ্টি করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেসের ট্রাস্ট ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ার হসপিটালসের ওয়েবসাইটে বলা হয়, খাবার বা জীবনধারার সঙ্গে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক নেই। চিনি সরাসরি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী- এটিও সত্য নয়। উচ্চমাত্রায় চিনিগ্রহণের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত ওজন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার মেডিসিন সেন্টার চিনির সঙ্গে ডায়বেটিসের সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত ধারণার কথা তুলে ধরে বলেছে, চিনি খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস হয় না। ইনসুলিন নিঃসরণ বা কার্যক্রমের ত্রুটির কারণে ডায়াবেটিস হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটি একাডেমিক এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ডিউক হেলথ চিনির সঙ্গে  ডায়বেটিসের সম্পর্ক নিয়ে জানায়, ডায়াবেটিসের জন্য অযথা চিনিকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে চিনি অপরাধী নয়। প্রকৃত অপরাধী হলো- ওজন বৃদ্ধি ও নিষ্ক্রিয়তা। মানুষ যখন শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরি খায়, তখন তাদের ওজন বেড়ে যায়। এই বাড়তি ক্যালোরির একটি অংশ চিনি থেকে আসতে পারে। তবে এজন্য সরাসরি চিনিকে দোষারোপ করা যায় না। 

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সম্পূর্ণভাবে চিনি বাদ দেওয়া অবৈজ্ঞানিক। কারণ শরীরের চাহিদার সঙ্গে ক্যালরিগ্রহণের পরিমাণ মেলানো অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে চিনির প্রয়োজন হতে পারে।  

একজন মানুষের কতটুকু চিনি প্রয়োজন?

ডায়াবেটিস ইউকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে চিনি গ্রহণের আদর্শ পরিমাণ ৩০ গ্রাম বা সাত চা চামচ। এক টেবিল চামচ কেচাপে প্রায় এক চা চামচ চিনি থাকে, একটি চকলেট বিস্কুটে দুই চা চামচ পর্যন্ত চিনি থাকে। এক টেবিল চামচ সমান তিন চা চামচ।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসেবে, বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫৩ কোটিরও বেশি। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ। এদের মধ্যে ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছেন।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার উপায়

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক একাডেমিক চিকিৎসাকেন্দ্র মায়ো ক্লিনিক ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার উপায় বাতলে জানায়, কেউ যদি প্রিডায়াবেটিস অবস্থায় থাকে, তাহলে জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যথা: 

১. অতিরিক্ত ওজন কমানো 

ওজন কমানো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে দেহের ওজন প্রায় ৭ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশ মতে, প্রিডায়াবেটিসে অবস্থায় দেহের ওজন ৭ থেকে ১০ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।  

২. শারীরিকভাবে আরও সক্রিয় হওয়া 

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ব্যায়াম  যেভাবে সাহায্য করতে পারে:

* ওজন কমানো
* ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ 
* রক্তে শর্করাকে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করে

৩. স্বাস্থ্যকর উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ 
উদ্ভিজ্জ খাবার ভিটামিন, খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে। কার্বোহাইড্রেটে শর্করা ও স্টার্চের পাশাপাশি ফাইবারও আছে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার ওজন কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। টমেটো, মরিচ, বিভিন্ন ধরনের শাক, ব্রকলি এবং ফুলকপি মটরশুঁটি, ছোলা এবং মসুর ডাল ইত্যাদি।  

৪. স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ 
চর্বিযুক্ত খাবারে ক্যালরি বেশি থাকে এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। ওজন কমাতে খাদ্যতালিকায় অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত বিভিন্ন খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন, অলিভ, সান ফ্লাওয়ার তেল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কুমড়ার বীজ, চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখা। 

সিদ্ধান্ত
চিনি খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হয় না। তবে চিনির কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিসের প্রধান যে দুটি ধরন- এর মধ্যে টাইপ ১ ডায়বেটিসের জন্য দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দায়ী। বিপরীতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও স্থূলতা। তাই জীবনধারা বদলানো, অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেওয়া, স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত