মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি ও অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়াহিয়ার ঘোষণা বেতারে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা পূর্ববাংলা যেন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
এমন দৃশ্য কেউ আগে দেখেনি, ভাবতেও পারেনি। রাস্তায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে দিতে নেমে আসে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠানরত ক্রিকেট ম্যাচ ভন্ডুল হয়ে যায়। দর্শক স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে শরিক হন এবং স্লোগানে অংশ নেন।স্লোগান ছিল—‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘ছয় দফা নয় এক দফা, এক দফা, এক দফা’ ইত্যাদি। অধিবেশন স্থগিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইএর মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান।
বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে ও আন্তদেশীয় রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ মিছিল স্লোগান দিতে দিতে মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর দিকে যেতে থাকে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। ৩ তারিখের অধিবেশনে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ঠিক সেই সময় ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের কথা ছড়িয়ে পড়লে হোটেল পূর্বাণীতে সাংবাদিক এবং উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি ২ মার্চ ঢাকা শহরে, ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন। ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন বলে জানান।
নানা ঘটনায় বাঙালি পাকিস্তানের প্রতি চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের প্রতি একসময় যেটুকু বিশ্বাস অবশিষ্ট ছিল, তা-ও তখন পরিত্যাজ্য হয়ে যায়। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এর শাসক অধিকাংশ রাজনীতিক পূর্ব বাংলাকে কতখানি অবজ্ঞা-অবহেলা করছিল, তা মানুষকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী অবিসংবাদিত নেতারূপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। নানা অজুহাত আর তালবাহানা একের পর এক ঘটাতে থাকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক এবং পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো ও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
৩ মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার তালবাহানা করেছিলেন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঢাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগদান করলে নাকি তাঁদের হত্যা করা হবে এমন হুমকিও ভুট্টোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
ইয়াহিয়ার ঘোষিত সিদ্ধান্তের কথা শুনে বঙ্গবন্ধু উত্তেজিত হয়ে যদি কোনো হঠকারী কর্মসূচি ঘোষণা করতেন, তাহলে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী নামিয়ে তখনই সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতে দেরি করত না। ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টো এমন সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অপারেশন সার্চলাইট নামে এক গণহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিকে অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানকে পরিবর্তন করে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়। সেই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু যদি জনগণের স্লোগান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ট্যাংক, বিমানসহ ঝাঁপিয়ে পড়ত। পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো সেটিকেই সমর্থন করত। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রতি পূর্ব বাংলার জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেওয়া হতো।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন অভিজ্ঞ পোড় খাওয়া নেতা হওয়ায় বুঝতে পেরেছিলেন যে ইয়াহিয়া, ভুট্টো কিংবা কাইয়ুম খানদের ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা মানুষ ব্যক্ত করেছে সেটিকে আরও প্রস্ফুটিত করার সময় নিতে বঙ্গবন্ধু ভুল করেননি। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল আহ্বান করে দেখতে চাইলেন জনগণ কীভাবে সাড়া দেয়। ২ মার্চ ঢাকায় অভূতপূর্ব হরতাল পালিত হলো। জনগণ রাস্তায় নেমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকল। সমস্ত অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ ছিল। পরদিন ৩ মার্চ আহূত হরতালও একইভাবে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছিল। ওই দিন ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে অসহযোগের ডাক দেন। তিনি জনগণকে সর্বাত্মক সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান।
সেই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডাকসুসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-কর্মচারীগণও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি পতাকাও উত্তোলন করা হয়। সারা দেশে ছাত্র-তরুণ, কৃষক-শ্রমিক, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ শুধু হরতালই পালন করেনি, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বাঙালিবিরোধী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আহ্বান জানান। পরদিন থেকে অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে স্বাধীনতার আওয়াজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সমগ্র পূর্ব বাংলা তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। ঘরে ঘরে তখন আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল পাকিস্তানিদের অন্য়ায়-অবিচার এবং বাঙালিদের অধিকার হরণের বিষয়াদি। কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নারী-পুরুষ সবাই পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে দিল।
স্বাধীনতার প্রশ্নে জাতীয় মহাঐক্য কতটা শাণিত হয়েছিল, তা ৭ তারিখের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুসহ সব জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সব মহলই দেখতে পেয়েছিল। রেসকোর্স ময়দান ইতিপূর্বে কখনো এত বিশাল জনসমুদ্র দেখেনি। জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস গড়ার যে ভাষণটি প্রদান করেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মন ও প্রাণকে স্বাধীনতার এক সুতায় বেঁধে ফেলেছিল। সেই ভাষণেই উচ্চারিত হলো—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উপস্থিত শ্রোতারা করতালির মাধ্যমে তা সমর্থন করলেন। বঙ্গবন্ধু বলতে ভুলে গেলেন না ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার, হুকুম দেওয়ার সুযোগ না পেলে সবাইকে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা করার। বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ভাষণ পূর্ব বাংলার প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিধ্বনি ছিল। সে কারণেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চলাইট নামিয়ে গণহত্যা শুরু করলে নিরস্ত্র বাঙালি এবং অন্যান্য নৃ জাতি-গোষ্ঠী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার অমর বাণীটি সর্বত্র উচ্চারিত হতে থাকে, প্রস্তুতি নিতে থাকে সবাই যার যার মতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আর কোনো বিকল্প ছিল না।
৯ মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ী জনগণ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার পতাকা নিয়েই ১৬ ডিসেম্বর ঘরে ফিরেছেন। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুও জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন।
১ মার্চ ইয়াহিয়া খান হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার ফাঁদে পা দেননি। তিনি স্বাধীনতার মহাসড়কে জাতিকে তুলে দিলেন। ১ মার্চ তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাস বিনির্মাণের মাইলস্টোন, গোটা জাতিকে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় একত্র করার দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন।
লেখক: অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি ও অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়াহিয়ার ঘোষণা বেতারে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা পূর্ববাংলা যেন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
এমন দৃশ্য কেউ আগে দেখেনি, ভাবতেও পারেনি। রাস্তায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে দিতে নেমে আসে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠানরত ক্রিকেট ম্যাচ ভন্ডুল হয়ে যায়। দর্শক স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে শরিক হন এবং স্লোগানে অংশ নেন।স্লোগান ছিল—‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘ছয় দফা নয় এক দফা, এক দফা, এক দফা’ ইত্যাদি। অধিবেশন স্থগিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইএর মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান।
বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে ও আন্তদেশীয় রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ মিছিল স্লোগান দিতে দিতে মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর দিকে যেতে থাকে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। ৩ তারিখের অধিবেশনে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ঠিক সেই সময় ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের কথা ছড়িয়ে পড়লে হোটেল পূর্বাণীতে সাংবাদিক এবং উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি ২ মার্চ ঢাকা শহরে, ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন। ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন বলে জানান।
নানা ঘটনায় বাঙালি পাকিস্তানের প্রতি চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের প্রতি একসময় যেটুকু বিশ্বাস অবশিষ্ট ছিল, তা-ও তখন পরিত্যাজ্য হয়ে যায়। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এর শাসক অধিকাংশ রাজনীতিক পূর্ব বাংলাকে কতখানি অবজ্ঞা-অবহেলা করছিল, তা মানুষকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী অবিসংবাদিত নেতারূপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। নানা অজুহাত আর তালবাহানা একের পর এক ঘটাতে থাকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক এবং পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো ও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
৩ মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার তালবাহানা করেছিলেন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঢাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগদান করলে নাকি তাঁদের হত্যা করা হবে এমন হুমকিও ভুট্টোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
ইয়াহিয়ার ঘোষিত সিদ্ধান্তের কথা শুনে বঙ্গবন্ধু উত্তেজিত হয়ে যদি কোনো হঠকারী কর্মসূচি ঘোষণা করতেন, তাহলে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী নামিয়ে তখনই সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতে দেরি করত না। ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টো এমন সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অপারেশন সার্চলাইট নামে এক গণহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিকে অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানকে পরিবর্তন করে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়। সেই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু যদি জনগণের স্লোগান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ট্যাংক, বিমানসহ ঝাঁপিয়ে পড়ত। পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো সেটিকেই সমর্থন করত। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রতি পূর্ব বাংলার জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেওয়া হতো।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন অভিজ্ঞ পোড় খাওয়া নেতা হওয়ায় বুঝতে পেরেছিলেন যে ইয়াহিয়া, ভুট্টো কিংবা কাইয়ুম খানদের ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা মানুষ ব্যক্ত করেছে সেটিকে আরও প্রস্ফুটিত করার সময় নিতে বঙ্গবন্ধু ভুল করেননি। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল আহ্বান করে দেখতে চাইলেন জনগণ কীভাবে সাড়া দেয়। ২ মার্চ ঢাকায় অভূতপূর্ব হরতাল পালিত হলো। জনগণ রাস্তায় নেমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকল। সমস্ত অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ ছিল। পরদিন ৩ মার্চ আহূত হরতালও একইভাবে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছিল। ওই দিন ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে অসহযোগের ডাক দেন। তিনি জনগণকে সর্বাত্মক সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান।
সেই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডাকসুসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-কর্মচারীগণও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি পতাকাও উত্তোলন করা হয়। সারা দেশে ছাত্র-তরুণ, কৃষক-শ্রমিক, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ শুধু হরতালই পালন করেনি, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বাঙালিবিরোধী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আহ্বান জানান। পরদিন থেকে অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে স্বাধীনতার আওয়াজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সমগ্র পূর্ব বাংলা তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। ঘরে ঘরে তখন আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল পাকিস্তানিদের অন্য়ায়-অবিচার এবং বাঙালিদের অধিকার হরণের বিষয়াদি। কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নারী-পুরুষ সবাই পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে দিল।
স্বাধীনতার প্রশ্নে জাতীয় মহাঐক্য কতটা শাণিত হয়েছিল, তা ৭ তারিখের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুসহ সব জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সব মহলই দেখতে পেয়েছিল। রেসকোর্স ময়দান ইতিপূর্বে কখনো এত বিশাল জনসমুদ্র দেখেনি। জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস গড়ার যে ভাষণটি প্রদান করেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মন ও প্রাণকে স্বাধীনতার এক সুতায় বেঁধে ফেলেছিল। সেই ভাষণেই উচ্চারিত হলো—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উপস্থিত শ্রোতারা করতালির মাধ্যমে তা সমর্থন করলেন। বঙ্গবন্ধু বলতে ভুলে গেলেন না ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার, হুকুম দেওয়ার সুযোগ না পেলে সবাইকে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা করার। বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ভাষণ পূর্ব বাংলার প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিধ্বনি ছিল। সে কারণেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চলাইট নামিয়ে গণহত্যা শুরু করলে নিরস্ত্র বাঙালি এবং অন্যান্য নৃ জাতি-গোষ্ঠী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার অমর বাণীটি সর্বত্র উচ্চারিত হতে থাকে, প্রস্তুতি নিতে থাকে সবাই যার যার মতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আর কোনো বিকল্প ছিল না।
৯ মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ী জনগণ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার পতাকা নিয়েই ১৬ ডিসেম্বর ঘরে ফিরেছেন। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুও জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন।
১ মার্চ ইয়াহিয়া খান হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার ফাঁদে পা দেননি। তিনি স্বাধীনতার মহাসড়কে জাতিকে তুলে দিলেন। ১ মার্চ তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাস বিনির্মাণের মাইলস্টোন, গোটা জাতিকে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় একত্র করার দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন।
লেখক: অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারি

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি ও অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়াহিয়ার ঘোষণা বেতারে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা পূর্ববাংলা যেন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
এমন দৃশ্য কেউ আগে দেখেনি, ভাবতেও পারেনি। রাস্তায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে দিতে নেমে আসে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠানরত ক্রিকেট ম্যাচ ভন্ডুল হয়ে যায়। দর্শক স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে শরিক হন এবং স্লোগানে অংশ নেন।স্লোগান ছিল—‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘ছয় দফা নয় এক দফা, এক দফা, এক দফা’ ইত্যাদি। অধিবেশন স্থগিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইএর মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান।
বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে ও আন্তদেশীয় রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ মিছিল স্লোগান দিতে দিতে মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর দিকে যেতে থাকে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। ৩ তারিখের অধিবেশনে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ঠিক সেই সময় ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের কথা ছড়িয়ে পড়লে হোটেল পূর্বাণীতে সাংবাদিক এবং উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি ২ মার্চ ঢাকা শহরে, ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন। ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন বলে জানান।
নানা ঘটনায় বাঙালি পাকিস্তানের প্রতি চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের প্রতি একসময় যেটুকু বিশ্বাস অবশিষ্ট ছিল, তা-ও তখন পরিত্যাজ্য হয়ে যায়। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এর শাসক অধিকাংশ রাজনীতিক পূর্ব বাংলাকে কতখানি অবজ্ঞা-অবহেলা করছিল, তা মানুষকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী অবিসংবাদিত নেতারূপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। নানা অজুহাত আর তালবাহানা একের পর এক ঘটাতে থাকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক এবং পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো ও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
৩ মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার তালবাহানা করেছিলেন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঢাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগদান করলে নাকি তাঁদের হত্যা করা হবে এমন হুমকিও ভুট্টোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
ইয়াহিয়ার ঘোষিত সিদ্ধান্তের কথা শুনে বঙ্গবন্ধু উত্তেজিত হয়ে যদি কোনো হঠকারী কর্মসূচি ঘোষণা করতেন, তাহলে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী নামিয়ে তখনই সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতে দেরি করত না। ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টো এমন সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অপারেশন সার্চলাইট নামে এক গণহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিকে অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানকে পরিবর্তন করে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়। সেই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু যদি জনগণের স্লোগান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ট্যাংক, বিমানসহ ঝাঁপিয়ে পড়ত। পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো সেটিকেই সমর্থন করত। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রতি পূর্ব বাংলার জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেওয়া হতো।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন অভিজ্ঞ পোড় খাওয়া নেতা হওয়ায় বুঝতে পেরেছিলেন যে ইয়াহিয়া, ভুট্টো কিংবা কাইয়ুম খানদের ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা মানুষ ব্যক্ত করেছে সেটিকে আরও প্রস্ফুটিত করার সময় নিতে বঙ্গবন্ধু ভুল করেননি। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল আহ্বান করে দেখতে চাইলেন জনগণ কীভাবে সাড়া দেয়। ২ মার্চ ঢাকায় অভূতপূর্ব হরতাল পালিত হলো। জনগণ রাস্তায় নেমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকল। সমস্ত অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ ছিল। পরদিন ৩ মার্চ আহূত হরতালও একইভাবে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছিল। ওই দিন ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে অসহযোগের ডাক দেন। তিনি জনগণকে সর্বাত্মক সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান।
সেই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডাকসুসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-কর্মচারীগণও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি পতাকাও উত্তোলন করা হয়। সারা দেশে ছাত্র-তরুণ, কৃষক-শ্রমিক, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ শুধু হরতালই পালন করেনি, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বাঙালিবিরোধী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আহ্বান জানান। পরদিন থেকে অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে স্বাধীনতার আওয়াজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সমগ্র পূর্ব বাংলা তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। ঘরে ঘরে তখন আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল পাকিস্তানিদের অন্য়ায়-অবিচার এবং বাঙালিদের অধিকার হরণের বিষয়াদি। কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নারী-পুরুষ সবাই পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে দিল।
স্বাধীনতার প্রশ্নে জাতীয় মহাঐক্য কতটা শাণিত হয়েছিল, তা ৭ তারিখের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুসহ সব জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সব মহলই দেখতে পেয়েছিল। রেসকোর্স ময়দান ইতিপূর্বে কখনো এত বিশাল জনসমুদ্র দেখেনি। জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস গড়ার যে ভাষণটি প্রদান করেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মন ও প্রাণকে স্বাধীনতার এক সুতায় বেঁধে ফেলেছিল। সেই ভাষণেই উচ্চারিত হলো—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উপস্থিত শ্রোতারা করতালির মাধ্যমে তা সমর্থন করলেন। বঙ্গবন্ধু বলতে ভুলে গেলেন না ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার, হুকুম দেওয়ার সুযোগ না পেলে সবাইকে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা করার। বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ভাষণ পূর্ব বাংলার প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিধ্বনি ছিল। সে কারণেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চলাইট নামিয়ে গণহত্যা শুরু করলে নিরস্ত্র বাঙালি এবং অন্যান্য নৃ জাতি-গোষ্ঠী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার অমর বাণীটি সর্বত্র উচ্চারিত হতে থাকে, প্রস্তুতি নিতে থাকে সবাই যার যার মতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আর কোনো বিকল্প ছিল না।
৯ মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ী জনগণ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার পতাকা নিয়েই ১৬ ডিসেম্বর ঘরে ফিরেছেন। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুও জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন।
১ মার্চ ইয়াহিয়া খান হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার ফাঁদে পা দেননি। তিনি স্বাধীনতার মহাসড়কে জাতিকে তুলে দিলেন। ১ মার্চ তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাস বিনির্মাণের মাইলস্টোন, গোটা জাতিকে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় একত্র করার দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন।
লেখক: অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ করেছিলেন যে, পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি ও অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইয়াহিয়ার ঘোষণা বেতারে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই গোটা পূর্ববাংলা যেন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
এমন দৃশ্য কেউ আগে দেখেনি, ভাবতেও পারেনি। রাস্তায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে দিতে নেমে আসে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠানরত ক্রিকেট ম্যাচ ভন্ডুল হয়ে যায়। দর্শক স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে শরিক হন এবং স্লোগানে অংশ নেন।স্লোগান ছিল—‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘ছয় দফা নয় এক দফা, এক দফা, এক দফা’ ইত্যাদি। অধিবেশন স্থগিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইএর মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান।
বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে ও আন্তদেশীয় রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ মিছিল স্লোগান দিতে দিতে মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর দিকে যেতে থাকে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। ৩ তারিখের অধিবেশনে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ঠিক সেই সময় ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের কথা ছড়িয়ে পড়লে হোটেল পূর্বাণীতে সাংবাদিক এবং উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি ২ মার্চ ঢাকা শহরে, ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন। ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন বলে জানান।
নানা ঘটনায় বাঙালি পাকিস্তানের প্রতি চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের প্রতি একসময় যেটুকু বিশ্বাস অবশিষ্ট ছিল, তা-ও তখন পরিত্যাজ্য হয়ে যায়। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এর শাসক অধিকাংশ রাজনীতিক পূর্ব বাংলাকে কতখানি অবজ্ঞা-অবহেলা করছিল, তা মানুষকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী অবিসংবাদিত নেতারূপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। নানা অজুহাত আর তালবাহানা একের পর এক ঘটাতে থাকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক এবং পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো ও মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
৩ মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার তালবাহানা করেছিলেন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঢাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগদান করলে নাকি তাঁদের হত্যা করা হবে এমন হুমকিও ভুট্টোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
ইয়াহিয়ার ঘোষিত সিদ্ধান্তের কথা শুনে বঙ্গবন্ধু উত্তেজিত হয়ে যদি কোনো হঠকারী কর্মসূচি ঘোষণা করতেন, তাহলে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী নামিয়ে তখনই সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতে দেরি করত না। ইয়াহিয়া ও জুলফিকার আলী ভুট্টো এমন সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অপারেশন সার্চলাইট নামে এক গণহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিকে অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানকে পরিবর্তন করে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়। সেই মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু যদি জনগণের স্লোগান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ট্যাংক, বিমানসহ ঝাঁপিয়ে পড়ত। পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশগুলো সেটিকেই সমর্থন করত। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রতি পূর্ব বাংলার জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেওয়া হতো।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন অভিজ্ঞ পোড় খাওয়া নেতা হওয়ায় বুঝতে পেরেছিলেন যে ইয়াহিয়া, ভুট্টো কিংবা কাইয়ুম খানদের ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা মানুষ ব্যক্ত করেছে সেটিকে আরও প্রস্ফুটিত করার সময় নিতে বঙ্গবন্ধু ভুল করেননি। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় হরতাল আহ্বান করে দেখতে চাইলেন জনগণ কীভাবে সাড়া দেয়। ২ মার্চ ঢাকায় অভূতপূর্ব হরতাল পালিত হলো। জনগণ রাস্তায় নেমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকল। সমস্ত অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ ছিল। পরদিন ৩ মার্চ আহূত হরতালও একইভাবে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেছিল। ওই দিন ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ আয়োজিত পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে অসহযোগের ডাক দেন। তিনি জনগণকে সর্বাত্মক সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান।
সেই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ডাকসুসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-কর্মচারীগণও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত একটি পতাকাও উত্তোলন করা হয়। সারা দেশে ছাত্র-তরুণ, কৃষক-শ্রমিক, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ শুধু হরতালই পালন করেনি, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বাঙালিবিরোধী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার আহ্বান জানান। পরদিন থেকে অসহযোগ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে স্বাধীনতার আওয়াজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সমগ্র পূর্ব বাংলা তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। ঘরে ঘরে তখন আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল পাকিস্তানিদের অন্য়ায়-অবিচার এবং বাঙালিদের অধিকার হরণের বিষয়াদি। কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নারী-পুরুষ সবাই পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না—এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে দিল।
স্বাধীনতার প্রশ্নে জাতীয় মহাঐক্য কতটা শাণিত হয়েছিল, তা ৭ তারিখের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুসহ সব জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সব মহলই দেখতে পেয়েছিল। রেসকোর্স ময়দান ইতিপূর্বে কখনো এত বিশাল জনসমুদ্র দেখেনি। জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস গড়ার যে ভাষণটি প্রদান করেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মন ও প্রাণকে স্বাধীনতার এক সুতায় বেঁধে ফেলেছিল। সেই ভাষণেই উচ্চারিত হলো—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। উপস্থিত শ্রোতারা করতালির মাধ্যমে তা সমর্থন করলেন। বঙ্গবন্ধু বলতে ভুলে গেলেন না ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার, হুকুম দেওয়ার সুযোগ না পেলে সবাইকে অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা করার। বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ভাষণ পূর্ব বাংলার প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিধ্বনি ছিল। সে কারণেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চলাইট নামিয়ে গণহত্যা শুরু করলে নিরস্ত্র বাঙালি এবং অন্যান্য নৃ জাতি-গোষ্ঠী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায়। সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার অমর বাণীটি সর্বত্র উচ্চারিত হতে থাকে, প্রস্তুতি নিতে থাকে সবাই যার যার মতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আর কোনো বিকল্প ছিল না।
৯ মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ী জনগণ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার পতাকা নিয়েই ১৬ ডিসেম্বর ঘরে ফিরেছেন। ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুও জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন।
১ মার্চ ইয়াহিয়া খান হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের লালিত স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার ফাঁদে পা দেননি। তিনি স্বাধীনতার মহাসড়কে জাতিকে তুলে দিলেন। ১ মার্চ তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাস বিনির্মাণের মাইলস্টোন, গোটা জাতিকে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় একত্র করার দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন।
লেখক: অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ
০১ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ
০১ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ
০১ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মার্চ মাস অসংখ্য অগ্নিঝরা ঘটনাপ্রবাহে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে পাকিস্তানের সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে এক বেতার ভাষণে তাঁরই পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের গণপরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। অধিবেশন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ভাষণে ইয়াহিয়া উল্লেখ
০১ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫