Ajker Patrika

দফার যেন দফারফা না হয়

মহিউদ্দিন খান মোহন
দফার যেন দফারফা না হয়

আমাদের দেশের রাজনীতিতে ‘দফা’ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘ঐতিহাসিক ২১ দফা’সংবলিত। ওই ২১ দফায় পাকিস্তানি শাসক চক্রের শোষণ-নির্যাতনের হাত থেকে পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির দিকনির্দেশনা ছিল।

ইতিহাস বিখ্যাত ২১ দফা রচনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ। তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘যুক্তফ্রন্টের মতেও ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলার ইতিহাসে একটা স্মরণীয় দিন। কাজেই ২১ ফিগারটাকে চিরস্মরণীয় করিবার অতিরিক্ত উপায় হিসাবে যুক্তফ্রন্টের কর্মসূচিকে ২১ দফার কর্মসূচি করিলে কেমন হয়? ৪২ দফা কাটিয়া ২৮ দফা করা গেলে ২৮ দফাকে কাটিয়া ২১ দফা করা যাইবে না কেন? নিশ্চয়ই করা যাইবে। তাই করিলাম।

অতঃপর আমার কাজ সহজ হইয়া গেল। ইতিহাস বিখ্যাত ২১ দফা রচনা হইয়া গেল।’ (পৃষ্ঠা ২৪৫, চতুর্থ সংস্করণ, ১৯৮৪)। এ দেশের মানুষ যুক্তফ্রন্টের ২১ দফাকে তাদের মুক্তিসনদ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অভূতপূর্ব বিজয় অর্জিত হয়েছিল। যদিও নানা রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে যুক্তফ্রন্ট সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধীদলীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান উত্থাপন করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা। ওই বছরই ১৮-১৯ মার্চের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ছয় দফায় পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক মুদ্রাব্যবস্থাসহ বর্তমান বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বলাই বাহুল্য, ছয় দফা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পছন্দ হয়নি। তারা এর মধ্যে পাকিস্তান ভাঙার গন্ধ আবিষ্কার করে। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়; যা ইতিহাসে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে খ্যাত। ওই সময় আরও দুটি দফা জনপ্রিয় হয়েছিল। একটি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা এবং মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪ দফা। ছয় দফাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রদ্রোহ বলে প্রচার করলেও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সেটাকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেছিল। মূলত সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল ছয় দফা; যার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয়। এর পরের ইতিহাস সবারই জানা।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও দফার রাজনীতি চলে আসছে। ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেন তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি। ওই কর্মসূচিতে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি রূপরেখা দেন। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির কিছুটা পরিবর্তন করে সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা এবং সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ নানা বিষয় সংযুক্ত করেন। এই ১৯ দফার ভিত্তিতেই তিনি একই বছরের ৩০ মে গণভোট করেছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯ দফার ছায়া পড়েছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতেও। আর এই ১৯ দফাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপির মূল রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টো।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন। তিনিও তাঁর পূর্বসূরি জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দিয়েছিলেন ১৮ দফা কর্মসূচি। তারই ভিত্তিতে প্রথমে জনদল এবং পরে গঠন করেন জাতীয় পার্টি।

দফার রাজনীতির সর্বশেষ খবর হলো, এবার বিএনপি ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ নামে ২৭ দফার একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই ২৭ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটিকে ‘মেরামত’ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির এই রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচি নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। সেই সব আলোচনায় যে বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে তা হলো, ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাষ্ট্রক্ষমতা। রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে এবং সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব। কেউ কেউ আবার বিএনপির দফায় দফায় দফা পরিবর্তনের বিষয়টিকেও সামনে আনছে। তারা বলছে, প্রায় এক দশক ধরে বিএনপি নেতাদের মুখে সরকার পতনের এক দফার কথা শোনা গেছে। তাঁরা বহুবার বলেছেন, সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই তাঁদের লক্ষ্য। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। বলা হলো, ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁরা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন।

মজার ব্যাপার হলো, বিএনপির ওই ১০ দফায় ‘দুর্বার’ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ছাড়া বাকি দফাগুলোতে যেসব দাবি করা হয়েছ, সেগুলো হয় তাঁদের ক্ষমতায় গিয়ে পূরণ করতে হবে, না হয় বর্তমান সরকারকেই তা পূরণে বাধ্য করতে হবে। কিন্তু যে সরকারকে তাঁরা বৈধ বলে স্বীকার করেন না, সেই সরকারের কাছে দাবি জানানো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নয় কি? সেই ১০ দফার সুরাহা হওয়ার আগেই তারা নতুন আরেক দফা নিয়ে হাজির হয়েছে—২৭ দফা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন, বিএনপি এখন কোনটায় গুরুত্ব দেবে—১০ দফায়, নাকি ২৭ দফায়? যদিও এটা কারও কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না, ১০ দফা ঘোষণার ৯ দিনের মাথায় হঠাৎ করে ২৭ দফা ঘোষণার প্রয়োজন দেখা দিল কেন? তা ছাড়া, ২৭ দফায় তাঁরা যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা বলেছেন, সেগুলো আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরতে পারতেন; বরং সেটাই হতো অধিকতর যুক্তিসংগত।

অনেকে আবার বিএনপির এই ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’র সঙ্গে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের ‘লাইনচ্যুত বাংলাদেশ-রাষ্ট্রকে টেনে তোলা’র কোরাসের সাযুজ্য খুঁজে পাচ্ছেন। তখন বাংলাদেশকে লাইনে আনার নামে যে রাজনৈতিক সংস্কারের জিগির তোলা হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য এবং পরিণতি কী হয়েছিল, তা সবার জানা। সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিরা বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কারের ভূত হয়তো এখনো বিএনপির কাঁধে ভিন্ন পরিচয়ে চেপে আছে। তা না হলে মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রস্তাবের অন্যতম ধারা ‘দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না’ ২৭ দফায় কেন সংযুক্ত করা হলো? যেখানে বিএনপি মহাসচিব এই সেদিনও বলেছেন, তাঁদের দল ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়াই পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেখানে এমন মেরামত-চিন্তা সন্দেহের উদ্রেক করে বৈকি! তাহলে কি এই ‘মেরামত-মিস্ত্রিরা’ চান না খালেদা জিয়া আর প্রধানমন্ত্রী হন?

বিএনপির এই রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্টান্টবাজি ও হাস্যকর হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এতে আন্দোলন জমবে না, জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। অন্যদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘আমাদের প্রশাসন ধ্বংস হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে। পুরো দেশ একটা ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় সংস্কার খুব জরুরি।’ তবে তিনি মনে করেন, এই সংস্কার একার পক্ষে করা অসম্ভব। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক সমঝোতা।সমঝোতা না হলে রূপরেখা বাস্তবায়ন নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে হলে তাঁদের ঐকমত্যে আসতে হবে বলেও তিনি মনে করেন। (আজকের পত্রিকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২)।

এক দফার আন্দোলনরত বিএনপি হঠাৎ করে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে কেন মেতে উঠল—এ প্রশ্ন অনেকের। এক দফার পর ১০ দফা, সেখান থেকে ২৭ দফা। ফলে সচেতন ব্যক্তিরা ধন্দে পড়ে গেছেন আসলে বিএনপি কী করতে চায়, তা নিয়ে। অনেকেই বলছেন, বিএনপি তাদের দাবি বা রূপরেখা নিয়ে যেভাবে শাখামৃগের মতো লাফাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত দফার আবার দফারফা হয়ে 
যাবে না তো! 

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত