Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস: কতিপয় পর্যবেক্ষণ

আবু তাহের খান
অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস: কতিপয় পর্যবেক্ষণ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন গত ৮ আগস্ট। সে হিসাবে ৭ সেপ্টেম্বর তাদের কার্যকালের এক মাস পূর্ণ হলো। একটি উত্তাল গণবিক্ষোভের মধ্য দিয়ে আকস্মিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভকারী এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের কেউই আগে থেকে জানতেন না যে এ ধরনের গুরুদায়িত্ব তাঁদের ওপর অর্পিত হতে যাচ্ছে। ফলে কারোরই এ ব্যাপারে কোনোরূপ প্রস্তুতি গ্রহণের বা বাড়ির কাজ (হোম ওয়ার্ক) সেরে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু দায়িত্ব যেহেতু তাঁরা গ্রহণ করেছেন, সেহেতু পূর্ব-প্রস্তুতি থাক বা না থাক, নৈতিক অবস্থান থেকে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাধারণ জনগণের কাছে তাঁদের জবাবদিহি করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের গত এক মাসের অর্থাৎ কার্যকালের প্রথম মাসের কর্মকাণ্ডের বিপরীতে অর্জিত সাফল্য-ব্যর্থতার মোটা দাগভিত্তিক একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হলো।

সরকারের গত মাসাধিককালের সর্বাধিক উল্লেখ্যযোগ্য কিংবা বলা চলে সবচেয়ে বড় সাফল্য এই যে দায়িত্ব গ্রহণের অব্যবহিত পরের দিনগুলোতে রাষ্ট্রীয় মেশিনারির ব্যাপক অনুপস্থিতি সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ-অযোগ্য তেমন বড় ধরনের কোনো সংঘাত, অন্তর্ঘাত, বিশৃঙ্খলা ও খুনোখুনি থেকে তারা দেশকে মোটামুটি ভালোভাবেই রক্ষা করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের ভূমিকার চেয়েও অধিক কৃতিত্ব দিতে হবে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যকার সংহতির শক্তিকে, যে শক্তি নানা স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর উসকানি ও অপতৎপরতাকে উপেক্ষা করে দলমত, ধর্মবর্ণ ও পার্থক্যপূর্ণ চিন্তার ঊর্ধ্বে থেকে পারস্পরিক ঐক্য ও সহমর্মিতাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তদুপরি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাসহ সর্বস্তরের জনগণের একচ্ছত্র সমর্থনও এ ক্ষেত্রে সরকারের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে। অবশ্য তাই বলে সরকারের নিজস্ব কৃতিত্বকেও এ ক্ষেত্রে খাটো করে দেখাটা উচিত হবে না। কারণ এ রকম একটি জটিল পরিস্থিতিতে তারা যে ওই সুযোগগুলোর যথাযথ ব্যবহার ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, আমদানি-রপ্তানি, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ইত্যাদিকে মোটামুটিভাবে সচল রাখতে পেরেছে, সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের নানা স্পষ্ট ও দৃঢ় বক্তব্যে জনগণ যথেষ্ট আশাবাদী ও উৎসাহিত হওয়ার পরও এ পদে আকস্মিক পরিবর্তন আনার বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের ভেতর হয়তো নিশ্চয় কোনো চিন্তাভাবনা আছে, যা আমরা সাধারণ মানুষেরা জানি না। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিষয়টিকে ঘিরে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে।

যথার্থই আশঙ্কা ছিল যে রাষ্ট্রের এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটি ব্যতীত দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যাপকভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠবে এবং বহু ক্ষেত্রে তারা তা হয়েছেও। তারপরও যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি, তজ্জন্য সরকারকে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। তবে মানতেই হবে যে এরপরও উল্লিখিত আগ্রাসন ও দখলদারত্ব পুরোপুরি বন্ধ রাখা যায়নি। দেশের বহু জায়গায় এখনো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দখলদারত্ব অব্যাহত আছে। আর এদিকে নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ঘটনা যে কুখ্যাত সব দাগি আসামি একের পর এক জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এটি কেন কীভাবে ঘটছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় তা এখনই সতর্কতার সঙ্গে না দেখলে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। পদোন্নতি-পদায়ন নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনে যে বিশৃঙ্খলা চলছে, তার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে ৪৯টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে হট্টগোলের ঘটনায়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৭ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৪’-এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে যে ভাষণ দিয়েছেন, তার মাধ্যমে তিনি শুধু তাঁর নিজ দেশের পরিস্থিতিকেই সবার সামনে তুলে ধরেননি, একই সঙ্গে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সবার, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী হতে পারে, সে বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেছেন। এটিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কসংক্রান্ত নীতিমালার নতুন দলিল হিসেবেও আখ্যায়িত করা যেতে পারে। জাতিসংঘ যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রতিক গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল পাঠিয়েছে, সেটিও নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাসেরই প্রতিফলন, যা সামনের দিনগুলোতেও ধরে রাখতে হবে।

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্র প্রণয়নের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটিও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ শ্বেতপত্রের তথ্য ও সুপারিশ রাষ্ট্রের আর্থিক খাত পুনরুদ্ধারে ও আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২৫-৩০) প্রণয়নে বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধির উদ্যোগ, কতিপয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, এস আলম নিয়ন্ত্রিত ছয় ব্যাংকের ঋণসীমা বেঁধে দেওয়া ইত্যাদি নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সরকার পতনের পর ইতিমধ্যে মাসাধিককাল পেরিয়ে যাওয়ার পরও বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু, ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান বা অনুরূপদের এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার যে বরাবরই দরবেশরূপী মাফিয়াদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সাধারণের আস্থা হারিয়েছে, সে মাফিয়াদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি ক্ষমতাত্যাগের দিনেও মাফিয়া সালমান রহমানকে অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সুবিধা পাইয়ে দিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যিনি একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পিএইচডি কেলেঙ্কারিসহ আরও নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে শিক্ষক নামধারী এই কলঙ্কিত নীরব ঘাতকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আরও দ্রুত ও ব্যাপকভিত্তিক হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করি।

এবারে সরকারের কিছু প্রশাসনিক ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা তুলি। এইচএসসির অগৃহীত পরীক্ষাসমূহ বাতিল করে অটোপাস দেওয়ার বিষয়টি একটি শতভাগ ভুল সিদ্ধান্ত। যখন অটোপাস দেওয়ার মতো একটি বড় সিদ্ধান্ত শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের পূর্ব-সম্মতি ছাড়াই গ্রহণ করে ফেলা হয়। বিষয়টি প্রশাসনিক শৃঙ্খলার গুরুতর লঙ্ঘন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে বিষয়টিকে কঠোরভাবে দেখা উচিত বলে মনে করি।

জাতীয় সংসদে দায়মুক্তি আইন পাসের মাধ্যমে (যা পুরোপুরি অসাংবিধানিক) গত দেড় দশকে যেসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে, কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত তৎসংশ্লিষ্ট গণবিরোধী চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে বাতিলের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা। সিপিডি ইতিমধ্যে হিসাব কষে দেখিয়েছে যে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ছাড়াই দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। কিন্তু তারপরও এ ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা খুবই ধীরগতির বলে মনে হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকেও একই ধরনের পর্যালোচনা উদ্যোগের আওতায় গণ্য করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে গত ১৫ বছরে আর কোন কোন রাষ্ট্রস্বার্থবিরোধী চুক্তি পর্যালোচনা করা দরকার, সেটিও যাচাই করে দেখা প্রয়োজন।

রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কাজ করবে এসব কমিশন। কমিশনগুলোর প্রধান হিসেবে ছয়জনের নামও ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কমিশন গঠনের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. শাহদীন মালিক।

ছয়টি কমিশন গঠনের কারণ হিসেবে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একাধিপত্য ও দুঃশাসন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বা পরিবার বা কোনো গোষ্ঠীর কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব আশঙ্কা রোধ করার জন্য নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি। নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন—এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের যে উচ্ছৃঙ্খল প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, সে বিষয়টি সামনে এনে দেশবাসীর প্রতি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসের কর্মকাণ্ডের ওপর পর্যালোচনামূলক বক্তব্যসমূহের উপসংহার টানতে চাই এই বলে যে এ সরকারকে ঘিরে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা যেমনি বিশাল, তেমনি তাদের সামনে চ্যালেঞ্জও বহুমাত্রিক। আর সেইসব বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ সরকার শেষ পর্যন্ত কতটুকু এগোতে পারবে, তা শুধু তাদের এক মাসের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য করাটা মোটেও সমীচীন হবে না। তবে তাদের এ সময়ের আচরণের মধ্যে সমগ্র জনগণকে একসঙ্গে ধারণ করবার যে দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা গেছে, সেটি যদি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে তাহলে তাদের পক্ষে অসফল হওয়ার কোনোই কারণ নেই। অন্যদিকে তা অসফল হওয়ার মানেই হচ্ছে এত শত মানুষের রক্ত ও ত্যাগে অর্জিত এ অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা, যা আমাদের কারোরই কাম্য হতে পারে না। অতএব দেশ, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই এ সরকারকে সফল হওয়া প্রয়োজন।

লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত