Ajker Patrika

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকরী জেলা কমিটি প্রয়োজন

ফাহাদ বিন সিদ্দিক
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ৪২
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকরী জেলা কমিটি প্রয়োজন

ছোটবেলায় নিলুফার ছিল আর দশজন শিশুর মতো হাস্যোজ্জ্বল। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করত। নিলুফারকে চার বছর বয়সে তার মা-বাবা ভর্তি করেন একটি স্কুলে। প্রতিদিন যখন ছোট্ট নিলুফার স্কুলে যেত, তখন মা-বাবার সে কী আনন্দ! কিন্তু এই আনন্দ ফিকে হয়ে ওঠে হঠাৎ করেই। একদিন ছোট্ট নিলুফার ঘুম থেকে উঠে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে জানান, নিলুফার মাসকুলার ডিসট্রোফি নামের একটি রোগ হয়েছে। যে রোগের ফলে নিলুফার ধীরে ধীরে চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে, ছোট হয়ে আসে তার চলাচলের পরিসর। কিন্তু দমে না গিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই স্বপ্ন ডানায় আকাশ পাড়ি দিতে চায় নিলুফার।

নিলুফার নিজে নিজেই পড়াশোনা শুরু করে এবং বিভিন্ন জিনিস শিখতে ও জানতে থাকে। একসময় সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চায়, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত অব্যবস্থাপনা তাকে শেখার কিংবা চলাফেরার স্বাধীনতা দেয় না। নিলুফার বুঝতে পারে, তার শিক্ষকেরাই চান যে সে আলাদা পড়াশোনা করুক, সবার সঙ্গে নয়। এমন বৈষম্যমূলক ব্যবহারের কারণে নিলুফার ভেঙে পড়ে। সে জানে না কার কাছে যাবে তার অভিযোগ নিয়ে। ভাঙা মন নিয়েও পাখা মেলতে চাওয়া নিলুফার প্রতিটি ধাপেই বাধার সম্মুখীন হয়।

শহরের ফুটপাতগুলো নিলুফারের হুইলচেয়ারবান্ধব নয়, যখন-তখন কোথাও যেতে পারে না সে। লোকাল বাসগুলোর দরজা ফুটপাত থেকে উঁচুতে এবং প্রবেশপথ সরু হওয়ার কারণে নিলুফার হুইলচেয়ার নিয়ে বাসে উঠতে পারে না। টেবিল টেনিসে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় তার জন্য উপযোগী করে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি।

নিলুফারের মতো আরও অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন যাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তেমনি একজন নিলুফারের বন্ধু শামসুল আলম, একজন বাক প্রতিবন্ধী। আলম যখন একটি আইনগত সমস্যায় পড়েন তখন থানায় ইশারা ভাষার সুবিধা না থাকার কারণে তাঁর কথা বুঝিয়ে বলতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন। থানায় এমন অভিজ্ঞতার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আলম বিষয়টি নিয়ে আদালতে পর্যন্ত যেতে চাননি। এত বৈষম্যের সম্মুখীন হওয়ার পরও নিলুফাররা স্বপ্ন দেখেন এক বৈষম্যহীন সমাজের, যেখানে তাঁদের স্বপ্নের ডানা মেলায় কোনো বাধা আসবে না। এই পৃথিবীতে নিলুফার কিংবা অন্য যেকোনো মানুষ অধিকার ও মানব মর্যাদার দিক থেকে সমান এবং সবার অধিকার রয়েছে সমান সুযোগ ও সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার।

নিলুফাররা হয়তো জানেন না যে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের অর্জিত সংবিধান নারী বা শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে রাষ্ট্রকে [অনুচ্ছেদ ২৮]। এ ছাড়া সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে ঐতিহাসিক বা সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর (যেমন প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী) অনুকূলে [অনুচ্ছেদ ২৮]। যে কারণে রাষ্ট্রের হাতে ক্ষমতা রয়েছে শহরের সব ফুটপাত প্রতিবন্ধীবান্ধব করা কিংবা বাসে ওঠার পথ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযোগীভাবে তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের দেশে নিলুফাররা ক্রমাগত অধিকারহীনতা ও বৈষম্যের মাঝে পিষ্ট হচ্ছেন। আমার মতে, এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করে নিলুফারদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশগত বাধা।

চরম উপেক্ষা ও প্রান্তিক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সনদ তৈরি করে, যা ২০০৬ সালে অনুমোদিত হয়। এই সনদের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবেশগত বাধা দূরীকরণে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে ২০১৩ সালে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার এবং সুরক্ষা আইনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এর মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ—তাঁরা যেকোনো বয়স বা লিঙ্গ বা সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর হোক না কেন।

এই আইনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ২১ ধরনের অধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে [ধারা ১৬ (১)]। এই ২১ ধরনের অধিকারসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা কোনো ধরনের বৈষম্য প্রদর্শন বা বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না [ধারা ১৬ (২) ]। এই ২১ ধরনের অধিকারের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সর্বক্ষেত্রে সমান আইনি স্বীকৃতি এবং বিচারপ্রাপ্তির পথ সুগম করা; স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ; সব স্থানে প্রবেশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তি; সংস্কৃতি, বিনোদন, পর্যটন, অবকাশ ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ; শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বাক্‌প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ইশারা ভাষাকে প্রথম ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার মতো বিষয়গুলোকে অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে [ধারা ১৬ (১)]।

আইনে আরও বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো প্রকার বৈষম্য প্রদর্শন বা বৈষম্যমূলক আচরণ করলে অথবা এই আইনে উল্লিখিত কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাসংক্রান্ত কমিটির কাছে আবেদন করতে পারেন। জেলা কমিটি বিষয়টি অনুসন্ধান করে এবং দুই পক্ষকে শুনে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বৈষম্য দূর করার জন্য বা অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আদেশ প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে। আদেশ অনুযায়ী বৈষম্য দূর করা না হলে বা অধিকার বাস্তবায়ন করা না হলে জেলা কমিটি ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্যও আদেশ দিতে পারে [ধারা ৩৬]।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে জেলা কমিটির ভূমিকা কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। ২০২৩ সালে, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কর্তৃক একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর মাধ্যমে জেলা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা কমিটি গঠন এবং কমিটির সভার বিষয়ক তথ্য ১৫টি জেলার কাছে জানতে চেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন দাখিল করা হয়। সেই গবেষণা সূত্রে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি জেলাতেই কমিটি বিদ্যমান হলেও কমিটির বৈঠক নিয়মিত হয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের ২৭ (২) ধারা অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাসংক্রান্ত জেলা কমিটির অন্যূন চারটি সভা হওয়ার বিধান থাকলেও, ৭টি জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১ মে ২০২১ থেকে ৩০ মে ২০২২ পর্যন্ত বাস্তবিক অর্থে কোনো জেলাতেই কমিটির পর্যাপ্ত সভা হয়নি। বেশির ভাগ জেলাতেই মাত্র একবার করে সভা হয়েছে। জেলা কমিটির এ ধরনের অনিয়মিত সভা একদিকে যেমন আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়, ঠিক তেমনি এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাসংক্রান্ত জেলা কমিটি প্রতিটি জেলায় সঠিকভাবে গঠন করা হলেও এর কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হচ্ছে না।

ফলে নিলুফারদের মতো হাজারো অধিকারবঞ্চিতদের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো নিয়ে এই কমিটির যে উদ্যোগগুলো নেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো তারা নিতে পারছে না। নিয়মিত সভা না হওয়ার ফলে বর্তমানে জেলা কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। হয়তো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারলে নিলুফাররা পৌঁছে যেতেন এই কমিটির কাছে। এ ছাড়া এর ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে জেলা কমিটির ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কার্যাবলি (যেমন সরকার বা জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন, সব উপজেলা কমিটি বা শহর কমিটি কার্যাবলির সমন্বয় ও তদারকি ইত্যাদি) [ধারা ২২] কতটুকু সুচারুরূপে পালন হচ্ছে, সে বিষয়েও অস্পষ্টতা রয়ে যায়।

আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের প্রণীত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০’ পূরণের লক্ষ্যে সচেষ্ট ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিবন্ধী কল্যাণের বিষয়টিও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে প্রতীয়মান হয়; যেমন প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, অসমতা দূরীকরণ ও প্রতিবন্ধী মানুষের অবারিত প্রবেশাধিকার। ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে যেমন সরকারি পরিষেবার দপ্তরগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষাসংক্রান্ত জেলা কমিটিগুলোর কার্যক্রমগুলো আরও সুসংগঠিত ও বেগবান করা প্রয়োজন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখায় উল্লিখিত চরিত্রগুলো কাল্পনিক।

ফাহাদ বিন সিদ্দিক, গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত