Ajker Patrika

সব ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারী উপাদান বিলুপ্ত করা জরুরি

সব ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারী উপাদান বিলুপ্ত করা জরুরি

ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। শিক্ষকতা এবং গবেষণার পাশাপাশি তিনি জাতীয় ইস্যুতেও সক্রিয় অ্যাকটিভিস্ট। তিনি শিক্ষক নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকও। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
তানজীমউদ্দিন খান: কতটুকু আশাবাদী সেটা তো সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করার সুযোগ নেই। এই গণ-অভ্যুত্থানটা অবশ্যম্ভাবী ছিল। যেহেতু নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা উঠেছে, সেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের বিকল্প ভাবার আপাতত সুযোগ নেই। 

আজকের পত্রিকা: দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত একধরনের স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় চলে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে সংস্কার করা যেতে পারে?
তানজীমউদ্দিন খান: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিয়াত্তরের অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই অধ্যাদেশে অনেক স্ববিরোধিতা রয়েছে। যদিও এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই অধ্যাদেশ আমাদের একাডেমিক ও চিন্তার স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ। এই অধ্যাদেশে এমন কিছু উপাদান আছে, যেখানে উপাচার্যকে স্বৈরাচারী হওয়ার সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন আছে।

এটার অবস্থা অনেকটা আমাদের সংবিধানের মতোই! সে জন্যই, বিশেষ করে সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কটা কী হবে, সেটা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে অধ্যাদেশে লুকিয়ে থাকা স্বৈরাচারী উপাদানগুলো বিলুপ্ত করা খুব জরুরি। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের সংস্কার বর্তমান বাস্তবতায় খুব জরুরি। শুধু অধ্যাদেশ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রচলিত অনুশীলন. যেমন শিক্ষক সমিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব ধরনের নির্বাচনে সরকারদলীয় শিক্ষকদের কারা কীভাবে মনোনয়ন পাবেন, সেটাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপাচার্য ঠিক করে দেন।

তাই এই স্বৈরাচারী কাঠামোয় এসব নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত হয়। ২০০৮ সালের পরে আমরা দেখেছি, একজন চাকরিপ্রার্থীর যে ধরনের যোগ্যতা থাকার কথা, সেটাকে তোয়াক্কা না করে দলীয় পরিচয় এবং আনুগত্যের ওপর ভিত্তি করে অনেক বড়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যদিও এটা কম-বেশি আগে থেকেই ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে এ রকম অযোগ্যদের নিয়োগ কোনো রাখঢাক ছাড়া নির্লজ্জভাবে হয়েছে অনেক বড় আকারে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯০৬ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন সেই সময়কার উপাচার্য। যত্রতত্র বা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিভিন্ন বিভাগ খোলা হয়েছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু দলীয় ভোটারের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায়। এগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় বুঝি কোনো একটি সরকারদলীয় মালিকানার শিল্পপ্রতিষ্ঠান!

এটা করতে গিয়ে আসলে সংখ্যাগত আধিপত্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনী কাঠামোকে দলীয়ভাবে কুক্ষিগত করা হয়েছে। শিক্ষক সমিতিও এর ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সরকারদলীয় যাঁরা অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের একটা বড় অংশ আবার প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন। এটা কিন্তু ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’। প্রশাসনিক দায়িত্বে যিনি থাকেন, তিনি আবার কী করে, দর-কষাকষির এজেন্ট হিসেবে শিক্ষক সমিতিতে থাকেন?

কেউ যদি হলের প্রভোস্ট হন, তিনি নিশ্চিতভাবে তাঁর হলের হাউস টিউটরদের ভোট নিশ্চিতভাবে পান বা জুনিয়র শিক্ষকদের হাউস টিউটর করার লোভ দেখিয়ে তাঁর পক্ষে ভোট নিশ্চিত করেন। শুধু তা-ই নয়, প্রভোস্টের প্রার্থীকে হাউস টিউটর ভোট দিচ্ছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য জুনিয়র শিক্ষকেরা ভোট দেওয়ার পর ব্যালটের ছবি তুলে প্রভোস্ট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সবচেয়ে বড় কর্মকর্তাকে নিশ্চিত করেন, তাঁদের দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। একইভাবে ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট নির্বাচনেও কারা প্রার্থী হবেন, সেটাও উপাচার্য নির্ধারণ করে দিতেন। উপাচার্যের সম্মতি বা আশীর্বাদের বাইরে খুব কম ক্ষেত্রেই কেউ নির্বাচনে তাঁদের দলের প্রার্থী হতে পারতেন। এভাবে সব ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সব সময় একটা স্বৈরাচারী কাঠামো জারি রাখা হয়েছে।

তাই ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ আরও গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক করার বিকল্প নেই এবং উপাচার্যসহ অন্য সবার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা যায়। সবকিছু মিলিয়ে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ নিয়ে আমাদের সংস্কারের কথা ভাবতে হবে; বিশেষ করে সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করা খুব জরুরি। সরকার তার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে চায়, না একে স্বাধীন একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়, যার মধ্য দিয়ে সরকার উপকৃত হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে।

একটা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র, সরকারকে সঠিক পথ দেখায়। আর রাষ্ট্র, সরকারের ভুল পথকে চিহ্নিত করা—এ ধরনের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চায়, না ওই ধরনের প্রতিষ্ঠান চায়—সেটা সরকারের জন্য পুনর্নির্ধারণ করা খুব জরুরি। এটা পুনর্নির্ধারণ করতে হলে আমাদের কাঠামোগত সংস্কার খুব দ্রুত শুরু করা দরকার।

আজকের পত্রিকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থেকে সব প্রশাসনিক পদে কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিলে তা স্বচ্ছ হবে?
তানজীমউদ্দিন খান: প্রথম বিষয় হচ্ছে, উপাচার্যের নিয়োগটা হতে হবে স্বচ্ছ। যে গুণগুলো থাকলে একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে চালাতে পারবেন, সে রকম ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। আনুগত্য, বিশেষ দলের প্রতি সমর্থন কিংবা ব্যক্তিগত আনুগত্যের ভিত্তিতে—এভাবে কেউ নিয়োগ পেলে সামগ্রিক কাঠামোটা কিন্তু ধ্বংস হবে। উপাচার্য যখন আনুগত্যের নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং প্রশাসনিক অন্য পদগুলোতে তাঁর আনুগত্য কারা, সেই বিবেচনা ধরে তিনি সেই পদগুলোতে নিয়োগ দেন। ফলে উপাচার্য যদি সঠিক মানুষটা হন এবং প্রশাসনিক পদগুলোতে, যেমন—হল প্রভোস্ট কে হবেন?

সেটা উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কী রকম সম্পর্ক এবং নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় উপাচার্য না থেকে ওপেন কলের মাধ্যমে সবাইকে আমন্ত্রণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ওপেন কলের মাধ্যমে বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে যাঁদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতা আছে, তাঁরা যদি আগ্রহী হন, তখন আবেদন করবেন। যাঁরা এসব বাছাই করবেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ হবেন না। স্বাধীন একটা বাছাই কমিটি থাকতে হবে, যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে হলের প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেবে। আর স্বাধীন সেই নিয়োগ কমিটির সদস্যদেরও কোনো দলীয় পরিচয় থাকা যাবে না। নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় মার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই মার্কের বিষয়টাও গোপন না রেখে জনপরিসরে জানাতে হবে। নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ আছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। এই মাপকাঠি বিবেচনা করে নিয়োগপদ্ধতি চালু করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে?
তানজীমউদ্দিন খান: আমি যে আলোচনাটি বারবার করে থাকি, সেটা হলো—উপাচার্যকে কেন্দ্র করে সবকিছু কেন্দ্রীভূত এবং আবির্ভূত হয়। একাডেমিক কাউন্সিলে আমরা অধ্যাপকেরা একত্র হই। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেক এলোমেলোভাবে এগুলো হয়। সেখানে যাঁরা সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন, আবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞানের পিএইচডি থিসিস নিয়ে আলোচনা করেন। আর একাডেমিক কাউন্সিল খুবই কেন্দ্রীভূত একটা ব্যবস্থা। কিন্তু সেটা না করে, একাডেমিক কাউন্সিল যদি অনুষদভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হতো, তাহলে সেটা ভালো হতো, ভিন্ন রকম হতো।

আবার শুধু অনুষদভিত্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটা ‘শিক্ষার্থী একাডেমিক বা গবেষণা কাউন্সিল’ করা যেতে পারে, যেখানে যাঁরা বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স বা চতুর্থ বর্ষে পড়ে, তাদের অংশগ্রহণ থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বটা এভাবেও আসতে পারে। এখানে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত যারা ভালো রেজাল্ট করেছে, তাদের প্রথম তিন বা পাঁচজন করে প্রতি বিভাগে থাকতে পারে শিক্ষার্থী একাডেমিক বা গবেষণা কাউন্সিলে। যে শিক্ষার্থী মেধাবী হিসেবে ভালো রেজাল্ট করেছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করছে, সেটা ওই মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্য রকম একটা আবেদন তৈরি করবে। এই মুহূর্তে আমার কাছে এগুলো একটা সমাধান মনে হচ্ছে।

কিন্তু নিশ্চয় আরও ভালো সমাধান বা উপায় থাকতে পারে। আর ডাকসুর বাইরে এ ধরনের প্রক্রিয়া একটা ভালো উপায় হতে পারে। কারণ ডাকসুর গঠনতন্ত্র মতে, এর প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন উপাচার্য। ছাত্রদের সংগঠনে কীভাবে একজন উপাচার্য এর প্রধান হতে পারেন? উপাচার্য ডাকসুর সর্বোচ্চভাবে উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারেন। ডাকসুর প্রেসিডেন্ট তো একজন শিক্ষার্থী হওয়ার কথা। এখনকার ডাকসুও তাই প্রেসিডেন্ট তথা উপাচার্যে কেন্দ্রীভূত অথবা তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে সেই স্বেচ্ছাচারী, একনায়কতান্ত্রিক ব্যাপারগুলো খুব শক্তিশালীভাবে ক্রিয়া করে। তাই এখানেও সংস্কার খুব জরুরি।

আজকের পত্রিকা: কাঠামোগত আমূল পরিবর্তন ছাড়া কোনোভাবেই মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আশা করা যায় না। একটা গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে আপনার পরামর্শ কী?
তানজীমউদ্দিন খান: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা স্লোগান খুব জনপ্রিয় হয়েছে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামত’। এর মূলটা ছিল নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে। আর ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও রাষ্ট্র মেরামত’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের বাইরের কিছু না। সেই অর্থে এটা করা খুব জরুরি। আমরা এখন একটা সম্ভাবনার মধ্যে আছি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সে রকম নেতৃত্বগুণসম্পন্ন ব্যক্তি থাকেন এবং এই সরকারের মধ্যে সেই অনুধাবনটা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়’ হয়ে উঠুক, তাহলে আমার কাছে মনে হয় না এগুলো কঠিন কিছু; বিশেষ করে বিগত সময়ে যাঁরা দলীয় রাজনীতি করেছেন, তাঁরা তো দলীয় রাজনীতির মোড়কে ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক কাজই করেছেন। মোটাদাগে বিভিন্ন পদ-পদবি টিকে থাকা, কিছু হওয়া বা পাওয়ার জন্যই তাঁরা কাজ করেছেন, অন্য কিছুর জন্য নয়।

এসবের সঙ্গে দলীয় মতাদর্শেরও কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা ও নীল দল বা অন্য দলে গড়পড়তা হিসেবে কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক ব্যাপারটাই হলো মূল। এটা যদি সবাই অনুধাবন করে বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রতিষ্ঠান আর সেখানে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে শিক্ষক হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তিও নিচে নেমে যাবে। অন্য কথায়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে যদি একটা যৌথ স্বার্থের জায়গা হিসেবে বিবেচনা না করে, যদি শুধু দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, তাহলে নতুন এই পরিস্থিতিতে সংস্কার করা কঠিন। অন্যদিকে সংস্কার শুরু করার এখনই সুবর্ণ সময়। এই সময় ইতিহাসে বারবার আসে না!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত