Ajker Patrika

অপরাধের বিস্তার সমাজকে আতঙ্কগ্রস্ত করছে

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ১০: ২৯
অপরাধের বিস্তার সমাজকে আতঙ্কগ্রস্ত করছে

অপরাধ কমবেশি সব সমাজেই রয়েছে। আমাদের সমাজেও এর প্রবণতা কখনোই শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়নি। মাঝেমধ্যে অপরাধের বিস্তার এবং ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া দেখে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত হতে দেখা যায়। রাষ্ট্রে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহু ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণবিজ্ঞান নামক একটি বিভাগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু আছে। এই বিভাগগুলো থেকে অপরাধ সংঘটন, বিস্তার এবং কমানোর উপায় নিয়ে নানা ধরনের সেমিনার, গবেষণা ও লেখালেখি হচ্ছে। পুলিশ এবং একাডেমিক পর্যায় থেকে দেশে অপরাধপ্রবণতা হ্রাসে নানাভাবে কাজ করা হচ্ছে। নানা অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধী ধরাও পড়ছে, আদালতে ব্যাপকসংখ্যক মামলার বিচার চলছে, অনেকেই সাজা পেয়ে কারাভোগও করছে। অনেক বড় বড় অপরাধী দেশের ভেতরে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার অনেকে দেশের বাইরে বসবাস করছে। সেখান থেকে দেশের অভ্যন্তরে অনুসারীদের দিয়ে নতুন নতুন অপরাধ করে চলছে।

দেশে প্রকৃতপক্ষে কত ধরনের অপরাধ রয়েছে, কতসংখ্যক ব্যক্তি এসব অপরাধের সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে জড়িত, তার সঠিক পরিসংখ্যান খুব সহজে পাওয়ার নয়। নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে অনেকেই নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে। একের পর এক অপরাধ করে চলছে। অনেকের কাছেই অপরাধ একটি পেশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এভাবেই গোটা সমাজে নানাভাবে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, অপরাধীর সংখ্যাও অগুনতি। সবাই আর্থিক অনটনে পড়ে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, এমন নয়। এরা মূলত অসৎ সঙ্গে অবচেতন মনেই সর্বনাশা এই পথে জড়িয়ে পড়ে। তারপর পেছনে ফেরার আর পথ থাকে না। তবে বেশির ভাগ অপরাধীই অনিয়ম, বৈষম্য, অর্থনৈতিক সংকট, শিক্ষা এবং কর্মদক্ষতার অভাবে বড় ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ তখন হয়ে ওঠে ক্ষমতা, অর্থবিত্তে যথেষ্ট শক্তিশালী। ক্ষমতার অপব্যবহার, জোরজবরদস্তি, শক্তিপ্রয়োগ, আতঙ্ক ছড়ানো কিংবা নানা ধরনের সন্ত্রাসীকাজে যুক্ত থেকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে ‘সাহসী’ হয়ে ওঠে। এরা তখন সমাজকে দুর্বল মনে করে, নিজেদের শক্তিধর হিসেবেই ভাবতে থাকে। জীবন তাদের কাছে তখনই কেবল এক অন্য রকম জগৎ হিসেবে ধরা দেয়। যেখানে বিবেক, নৈতিকতা, মানবিকতা, যুক্তিবাদিতা, সামাজিকতা তুচ্ছ জ্ঞাত হতে থাকে।

আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা যেহেতু এখনো নিয়মশৃঙ্খলা, আইন, বিচার, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জীবনবোধ গঠনের মৌলিক ধারণায় যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। দুর্বলতা ও দোদুল্যমানতায় ওঠানামা করছে। তাই সমাজের নিম্ন অবস্থান থেকে উচ্চ অবস্থান পর্যন্ত অপরাধ এবং অপরাধীদের বেড়ে না উঠতে দেওয়া, আইন ও বিচারের সম্মুখীন করা, আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়া ইত্যাদি সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির নেতৃত্বের কাছ থেকে যথাযথভাবে পাচ্ছে না। ফলে অপরাধপ্রবণতা ও অপরাধীদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা সামাজিক শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা মোটের ওপর অসম্ভব হয়ে উঠছে। অধিকন্তু সমাজের সর্বত্র প্রভাবশালী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই সমর্থক, লাঠিয়াল এবং প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এসব অপরাধীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হলেও আশ্রয়-প্রশ্রয় কিংবা ব্যবহার করে থাকে। দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অনেকেই বিত্ত সম্প্রসারণে এ দুর্বৃত্তদের নানাভাবে ব্যবহার করে থাকে। দুর্বৃত্তরাও বিত্তশালী ও ক্ষমতাধরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় থেকে একের পর এক অপরাধ করতে মোটেও দ্বিধা করে না। ফলে আমাদের সমাজের দ্বিচারিতার বিষয়টি মোটেও অজানা কিংবা অস্বীকার করার উপায় নেই। এভাবে চলতে চলতে সমাজ এখন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এর গতি ও পরিণতি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ঢাকা শহরে বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত জানুয়ারিতে ৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মার্চ মাসে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে প্রকাশ্যে শাহজাহানপুরের ব্যস্ত রাস্তায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গাড়িতে শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ হত্যা করে পালিয়ে যান। তাঁর গুলিতে রিকশারোহী কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি মারা যান। মাসুম মতিঝিলকেন্দ্রিক আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যতম শুটার। দীর্ঘদিন তিনি শুটারের ছদ্মাবরণে জীবনযাপন করলেও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার মাধ্যমে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। টিপু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পালিয়ে বগুড়ায় একটি হোটেলে উঠেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে এখন আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে নিয়েছে। মাসুমের মতো অপরাধীর সংখ্যা ঢাকায় কম নয়। এঁরা ‘ওপরতলার’ অপরাধী। এঁদের অপরাধের পেছনে রাজনীতি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইন্ধন প্রত্যক্ষভাবেই থাকে। সে কারণেই বারবার অপরাধ করেও সমাজে ভালো মানুষের ছদ্মাবরণে ঘুরে বেড়ায়। সমাজ এদের অপরাধী হিসেবে সব সময় চিনতেও পারে না। দ্বিতীয় যেই হত্যাকাণ্ডটি সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে তা হলো, মিরপুরের কাজীপাড়ায় গত ২৬ মার্চ ভোরবেলায় ডেন্টিস্ট আহমেদ মাহী বুলবুলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা। হত্যাকারীরা সাধারণ কোনো ছিনতাইকারী নয়। তাঁর সঙ্গে থাকা টাকা কিংবা মোবাইল ফোন তারা নেয়নি। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। জানা গেছে, সন্দেহভাজন চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় যে ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার ৫টিই মিরপুর এলাকায়।

২৫ মার্চ সবুজবাগে বাসায় ঢুকে গৃহবধূ তানিয়া আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে ‘নামীদামি’ কিলারদের হাতে। এরা কোনো সাধারণ অপরাধী নয়। যাঁদের হত্যা করেছে, তাঁরাও এসব অপরাধীদের হয় স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন নতুবা কারও না কারও স্বার্থরক্ষায় পথের কাঁটা সরাতে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রীতি অবশ্য মাসুমের গুলি ছোড়ার টার্গেটে ছিলেন না, রিকশারোহী হওয়ায় তিনি ঘটনাচক্রে মারা গেলেন। ঢাকা শহরে এ ধরনের টার্গেট হত্যাকাণ্ড এখন বেড়েই চলছে। এর বাইরে রাতের ঢাকায় এখন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে অনেকেই সর্বস্ব হারাচ্ছেন। তাঁরা অনেকে শারীরিকভাবে আক্রান্তও হচ্ছেন। ছিনতাইকারী অপরাধীর সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা-উত্তরকালে কর্মহারা নিম্ন আয়ে যাদের সংসার চলছে না, তারা এখন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কাজে পথে নেমেছে। আন্তজেলা বাস চলাচলে চুরি-ডাকাতি রাতের বেলায় বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ উঠছে। বোঝা যাচ্ছে, সম্পদ-টাকাপয়সা লুটে নেওয়া অপরাধীরা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, অন্যান্য শহরেও দিনে ও রাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা আগের চেয়ে এখন ঊর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশে রিক্রুটিংসহ নানা কাজে দালাল ও অপরাধীদের চাঁদাবাজি ও সংযুক্তি আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে। মধ্যস্বত্বভোগী, ডিলার, আড়তদার এমনকি বড় বড় মিলার, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে কম অপরাধ করছে না।

অপরাধপ্রবণতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কতটা ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হয়েছে, তা একটু তলিয়ে দেখলেই হাতেনাতে ধরা পড়ে। কিন্তু ওই অপরাধীদের টুঁটি চেপে ধরার কেউ নেই। প্রশাসনেও ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ঠেকানো যাচ্ছে না। সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণে অব্যবস্থার পেছনে নিহিত রয়েছে অপরাধপ্রবণতা ও মানসিকতা। ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে কোথাও কোথাও অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও দলবাজির খবর প্রকাশিত হলেও কারোরই কোনো চক্ষুলজ্জা নেই, প্রতিকার করারও যেন কেউ নেই! হতদরিদ্রদের জন্য এই ব্যবস্থাটি চালু করলেও কার্ড প্রাপ্তিতে অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। কারা করেছেন? তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের কারও কারও নাম উচ্চারিত হলেও তাঁদের কাছে যুক্তির অভাব নেই। তাঁদের যেন সব কার্ড বিতরণ করতে দেওয়া হলেও তাঁরা হতদরিদ্রদের চোখে দেখতেন না। আবার ডিলারদের অনেকেই পণ্য নিয়ে যা করছেন তার পেছনে রয়েছে দুর্নীতির মানসিকতা। বারবার পণ্য কিনে যাঁরা অন্যদের পণ্য পেতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরাও কম যান না। এভাবে গভীরভাবে দেখলে আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র অপরাধের মানসিকতা এতটাই প্রবল যে অপরাধমুক্ত জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও অনেকের পক্ষেই তা কঠিন হয়ে উঠছে। সমাজ এবং মানুষ শৃঙ্খলিত হয়ে পড়ছে এসব প্রবণতার বেড়াজালে। প্রশ্ন হচ্ছে উন্নত দেশ, সমাজ ও জীবন এভাবে কি নিশ্চিত করা যাবে? উত্তর হচ্ছে, না। উপায় তাহলে কী? শিক্ষা, সংস্কৃতি, আইনের শাসন, সুশাসন এবং রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতার চর্চার কোনো বিকল্প নতুন প্রজন্মের নেই।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত