মামুনুর রশীদ

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আছে। সেখানে কোনো আন্দোলন-প্রতিবাদ হয় না। কিন্তু ২ নভেম্বর যা ঘটে গেল তা কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ নয়, নয় কোনো সমাবেশ বা বিক্ষোভ। বিষয়টি ছিল একেবারেই হামলা। প্রথমে সন্ধ্যা ৬টায় টিকিট ঘরে গিয়ে কিছু ব্যক্তি টিকিট বিক্রি বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়। উপস্থিত নাট্যকর্মীরা সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এরপর তারা গেট ভেঙে মঞ্চে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এবং নাটক বন্ধের জন্য হুমকি দিতে থাকে। ওই সময় দেশ নাট্যদলের নিত্যপুরাণ নাটকটি চলছিল। সেই উত্তেজিত ব্যক্তিদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। শিল্পকলার নিরাপত্তা বিধানের জন্য যে ব্যবস্থা ছিল সেই ব্যবস্থাটিও কোনো কাজে লাগল না। একপর্যায়ে মহাপরিচালক পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে নাটকটি বন্ধ করে দিলেন।
শিল্পকলা একাডেমি বা মহিলা সমিতিতে গত তিপ্পান্ন বছরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। দুই-একবার কেউ কেউ চেষ্টা করলেও আমরা সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে গেলে আর কেউ সাহস পায় না। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও হয়তো চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সেটাও সফল হয়নি। নাটক আমরা করে থাকি মানুষের জন্য। মানুষই আমাদের একমাত্র সহায়, রাষ্ট্র বা সরকার নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেটা ঘটল তাতে মনে হচ্ছে, সরকারের প্রতিনিধি যখন নাটক বন্ধ করে দেন, তখন বোঝা গেল সরকারও এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ।
নাটকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ১৮৭৬ সাল থেকে। তখনকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার তাদের সমালোচনা সহ্য করেনি। তারা অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যবস্থা করেছিল। এবারে নাট্যমঞ্চে হামলা তার চেয়ে দুই পায়ে এগিয়ে। ওই নাট্যদলের একজন সদস্য নাকি ফেসবুকে সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্য ওই দিনের হামলাকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। যেকোনো মন্তব্য কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না-ই হতে পারে। তার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে বা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যে কেউ গণতান্ত্রিক উপায়েই এর প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু নাটক বন্ধ করে দেওয়া এবং নাট্যমঞ্চে হামলা করা সমাধান যারা ভাবে, তারা কি প্রকৃতই গণতন্ত্রের মানুষ?
নাট্যমঞ্চে শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রী বা নেপথ্যের শিল্পীরাই থাকেন না, দর্শকও থাকেন। দর্শক টিকিট কিনে নিতান্তই একটা সুস্থ বিনোদনের জন্য নাটক দেখতে যান। পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁরা খুব অসহায়বোধ করেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা নাট্যমঞ্চের নিরাপত্তার ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করেন। এই ধরনের হামলা যদি চলতেই থাকে, তাহলে দর্শক নাট্যমঞ্চে আসতেই চাইবেন না।
মনে পড়ে যায় উদীচীর সম্মেলনে হামলার কথা। সেদিনও দর্শক এই হামলার শিকার হয়েছিলেন। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে এখনো তাঁদের জীবন কাটছে দুঃসহ যন্ত্রণায়। কিন্তু সেদিন একটা মানসিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল দর্শকের মাঝে। অনুষ্ঠান চলেছে এবং সারা দেশে একটা তীব্র প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল। এরপরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে হামলা—সেখানেও অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, সারা দেশে কোথাও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়নি।
এর মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কিছুটা স্তিমিতও হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নাটক এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠান চারদিকে নিয়মিতভাবে হতেও পারেনি। শিল্পকলা একাডেমির একটি হলেই নাটক চলছে। দর্শকদের সরব উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। এটা হচ্ছে ঢাকার অবস্থা। ঢাকার বাইরে ২২টি শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া বাঙালির জীবন অচল। যাত্রাপালা, পালাগান, লোকগান, পুঁথিপাঠ এসব আমাদের লোকশিল্প যা বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে উৎসারিত এই সৃজনশীলতা বাঙালির জীবনে একটা স্বস্তিময় আবহ সৃষ্টি করে।
শতাব্দী পেরিয়ে লালন, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিমসহ অনেক মরমি শিল্পী আমাদের জীবনে নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির মানসিকতায় নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ছাড়াও আলোকিত করেছেন তার মানসকে। সম্প্রতি মাজার ভাঙা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেটিও এ দেশের পীর-আউলিয়াদের প্রতি একধরনের হামলার প্রতীক। কিন্তু যাঁরা বিশ্বাসী, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তাঁরা শতাব্দীর পর শতাব্দী এই পীর-আউলিয়াদের সম্মান করে এসেছেন। এবং এই সম্মানটির চরিত্র অসাম্প্রদায়িক। হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র) বা হজরত শাহজালাল (র)-এর দরগায় যত লোক যায়, তারা ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষেই যায়। বাংলাদেশে যত ছোট-বড় মাজার আছে সেগুলোরও বেশ বড় ধরনের ভক্তকুল আছে। এই ভক্তকুলের আবেগকে সম্পূর্ণভাবে ভাঙচুর করে দিয়েছে সাম্প্রতিক হামলাকারীরা।
শিল্পেরও কিছু ভক্তকুল থাকে এবং তাঁরা অগণিত। শিল্পের তৃষ্ণায় এই অগণিত ভক্তকুল গান শোনেন, নাটক দেখেন, সিনেমা দেখেন। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, একটা কিছু শেখার জন্য, অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য এবং সেই সঙ্গে শিক্ষার অংশ হিসেবে শিল্পকে গ্রহণ করেন। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি শিক্ষায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ধরনের ধস নেমেছে। সেই ধস থেকে উঠে আসার জন্য শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য একটি সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সৃজনশীলতায় যাওয়ার পথে দরকার শিল্প-সাহিত্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ প্রকাশ করা। কিন্তু কোন মনস্তত্ত্ব থেকে একটি শিল্পকর্মের ঘটনা যখন ঘটছে তখন এর ওপর হামলা করা হলো?
সম্প্রতি যারা লাইব্রেরি আর্কাইভ ও শিল্পকলা একাডেমি পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মনস্তত্ত্বটা বোঝা বড় কঠিন। নানা কারণেই বাংলাদেশে একটি উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যারা ভয়ের সংস্কৃতি নির্মাণ করে মানুষের সুকুমার আকাঙ্ক্ষাগুলো ধ্বংস করতে চায়। অথচ তারা মনে রাখে না যে এই উপমহাদেশে সুফি দর্শনের মাধ্যমে একটি শান্তির বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের নানান সমস্যা থাকে। একটি প্রাত্যহিক জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, যাকে বলা যায় রুটি-রুজির সংস্কৃতি, সেই সমস্যাটাও প্রকট। আজকে দ্রব্যমূল্যের এই উল্লম্ফন মানুষকে শ্বাসরোধ করে তুলছে। সব জায়গায় আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুও তা-ই।
ধর্মীয় শাস্ত্রীরা এ কথাও বলেছেন—যদি দুটি পয়সা থাকে, একটি পয়সা দিয়ে খাবার কিনে নিও, আরেকটি পয়সা দিয়ে একটি ফুল কিনো। ফুল মানে এখানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের সেই কালের চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। নাটকের মতো একটি শিল্প সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। সেখানে খেয়ে না খেয়ে এই শিল্পের সেবায় বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ মানুষ নিবেদিত। তাঁরা সাধারণত খুব স্পর্শকাতর সমাজের অগ্রণী চিন্তার অংশীদার।
যে নাটকটি সেদিন অভিনীত হচ্ছিল সেটি একটি পুরাণের গল্প। এক হতভাগ্য একলব্যের বঞ্চনার কাহিনি। শ্রেণিবিভক্ত এবং বর্ণপ্রথাশ্রয়ী ভারতবর্ষে যুদ্ধাবস্থার যে অবস্থা তার একটি চিত্র। এই নিষ্ঠুর কাহিনি যেকোনো মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। বহুদিন ধরে নাটকটি অভিনীত হচ্ছে এবং দর্শক প্রশংসিতও হচ্ছে। সেই নাটকটি থেকে দর্শককে বঞ্চিত করা হলো। কয়েক দিনের মধ্যেই আরণ্যকের নাটক আমার নির্দেশনায় ‘কোম্পানী’ অভিনীত হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে আমাদের দেশকে লুটের সংস্কৃতি তৈরি করে গেছে তারই চিত্র এটি। লুট ও অর্থ পাচারের এক সম্যক চিত্র এই ‘কোম্পানী’। ইতিহাসকে সমসাময়িকতার বিচারের মাধ্যমে বিপুল দর্শক এই নাটকটি দেখতে আসেন। এমনই অনেক নাটক তিপ্পান্ন বছর ধরে আমাদের নাট্যমঞ্চে অভিনীত হয়ে আসছে। দর্শকের নতুন এক ভাবনা থাকবে বিশ্লেষণের পথে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে। আশা করি এ দেশের নাট্যকর্মীরা এবং সংবেদনশীল দর্শক এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন এবং শিল্প তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না রেখে বলতে চাই—শত হামলা, শত অবরোধ সৃষ্টি করেও শিল্পের অনিরুদ্ধ চাকা সামনের দিকে চলতেই থাকবে।
লেখক: মামুনুর রশীদ
নাট্যব্যক্তিত্ব

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আছে। সেখানে কোনো আন্দোলন-প্রতিবাদ হয় না। কিন্তু ২ নভেম্বর যা ঘটে গেল তা কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ নয়, নয় কোনো সমাবেশ বা বিক্ষোভ। বিষয়টি ছিল একেবারেই হামলা। প্রথমে সন্ধ্যা ৬টায় টিকিট ঘরে গিয়ে কিছু ব্যক্তি টিকিট বিক্রি বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়। উপস্থিত নাট্যকর্মীরা সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এরপর তারা গেট ভেঙে মঞ্চে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এবং নাটক বন্ধের জন্য হুমকি দিতে থাকে। ওই সময় দেশ নাট্যদলের নিত্যপুরাণ নাটকটি চলছিল। সেই উত্তেজিত ব্যক্তিদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। শিল্পকলার নিরাপত্তা বিধানের জন্য যে ব্যবস্থা ছিল সেই ব্যবস্থাটিও কোনো কাজে লাগল না। একপর্যায়ে মহাপরিচালক পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে নাটকটি বন্ধ করে দিলেন।
শিল্পকলা একাডেমি বা মহিলা সমিতিতে গত তিপ্পান্ন বছরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। দুই-একবার কেউ কেউ চেষ্টা করলেও আমরা সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে গেলে আর কেউ সাহস পায় না। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও হয়তো চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সেটাও সফল হয়নি। নাটক আমরা করে থাকি মানুষের জন্য। মানুষই আমাদের একমাত্র সহায়, রাষ্ট্র বা সরকার নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেটা ঘটল তাতে মনে হচ্ছে, সরকারের প্রতিনিধি যখন নাটক বন্ধ করে দেন, তখন বোঝা গেল সরকারও এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ।
নাটকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ১৮৭৬ সাল থেকে। তখনকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার তাদের সমালোচনা সহ্য করেনি। তারা অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যবস্থা করেছিল। এবারে নাট্যমঞ্চে হামলা তার চেয়ে দুই পায়ে এগিয়ে। ওই নাট্যদলের একজন সদস্য নাকি ফেসবুকে সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্য ওই দিনের হামলাকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। যেকোনো মন্তব্য কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না-ই হতে পারে। তার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে বা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যে কেউ গণতান্ত্রিক উপায়েই এর প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু নাটক বন্ধ করে দেওয়া এবং নাট্যমঞ্চে হামলা করা সমাধান যারা ভাবে, তারা কি প্রকৃতই গণতন্ত্রের মানুষ?
নাট্যমঞ্চে শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রী বা নেপথ্যের শিল্পীরাই থাকেন না, দর্শকও থাকেন। দর্শক টিকিট কিনে নিতান্তই একটা সুস্থ বিনোদনের জন্য নাটক দেখতে যান। পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁরা খুব অসহায়বোধ করেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা নাট্যমঞ্চের নিরাপত্তার ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করেন। এই ধরনের হামলা যদি চলতেই থাকে, তাহলে দর্শক নাট্যমঞ্চে আসতেই চাইবেন না।
মনে পড়ে যায় উদীচীর সম্মেলনে হামলার কথা। সেদিনও দর্শক এই হামলার শিকার হয়েছিলেন। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে এখনো তাঁদের জীবন কাটছে দুঃসহ যন্ত্রণায়। কিন্তু সেদিন একটা মানসিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল দর্শকের মাঝে। অনুষ্ঠান চলেছে এবং সারা দেশে একটা তীব্র প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল। এরপরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে হামলা—সেখানেও অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, সারা দেশে কোথাও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়নি।
এর মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কিছুটা স্তিমিতও হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নাটক এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠান চারদিকে নিয়মিতভাবে হতেও পারেনি। শিল্পকলা একাডেমির একটি হলেই নাটক চলছে। দর্শকদের সরব উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। এটা হচ্ছে ঢাকার অবস্থা। ঢাকার বাইরে ২২টি শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া বাঙালির জীবন অচল। যাত্রাপালা, পালাগান, লোকগান, পুঁথিপাঠ এসব আমাদের লোকশিল্প যা বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে উৎসারিত এই সৃজনশীলতা বাঙালির জীবনে একটা স্বস্তিময় আবহ সৃষ্টি করে।
শতাব্দী পেরিয়ে লালন, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিমসহ অনেক মরমি শিল্পী আমাদের জীবনে নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির মানসিকতায় নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ছাড়াও আলোকিত করেছেন তার মানসকে। সম্প্রতি মাজার ভাঙা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেটিও এ দেশের পীর-আউলিয়াদের প্রতি একধরনের হামলার প্রতীক। কিন্তু যাঁরা বিশ্বাসী, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তাঁরা শতাব্দীর পর শতাব্দী এই পীর-আউলিয়াদের সম্মান করে এসেছেন। এবং এই সম্মানটির চরিত্র অসাম্প্রদায়িক। হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র) বা হজরত শাহজালাল (র)-এর দরগায় যত লোক যায়, তারা ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষেই যায়। বাংলাদেশে যত ছোট-বড় মাজার আছে সেগুলোরও বেশ বড় ধরনের ভক্তকুল আছে। এই ভক্তকুলের আবেগকে সম্পূর্ণভাবে ভাঙচুর করে দিয়েছে সাম্প্রতিক হামলাকারীরা।
শিল্পেরও কিছু ভক্তকুল থাকে এবং তাঁরা অগণিত। শিল্পের তৃষ্ণায় এই অগণিত ভক্তকুল গান শোনেন, নাটক দেখেন, সিনেমা দেখেন। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, একটা কিছু শেখার জন্য, অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য এবং সেই সঙ্গে শিক্ষার অংশ হিসেবে শিল্পকে গ্রহণ করেন। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি শিক্ষায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ধরনের ধস নেমেছে। সেই ধস থেকে উঠে আসার জন্য শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য একটি সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সৃজনশীলতায় যাওয়ার পথে দরকার শিল্প-সাহিত্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ প্রকাশ করা। কিন্তু কোন মনস্তত্ত্ব থেকে একটি শিল্পকর্মের ঘটনা যখন ঘটছে তখন এর ওপর হামলা করা হলো?
সম্প্রতি যারা লাইব্রেরি আর্কাইভ ও শিল্পকলা একাডেমি পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মনস্তত্ত্বটা বোঝা বড় কঠিন। নানা কারণেই বাংলাদেশে একটি উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যারা ভয়ের সংস্কৃতি নির্মাণ করে মানুষের সুকুমার আকাঙ্ক্ষাগুলো ধ্বংস করতে চায়। অথচ তারা মনে রাখে না যে এই উপমহাদেশে সুফি দর্শনের মাধ্যমে একটি শান্তির বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের নানান সমস্যা থাকে। একটি প্রাত্যহিক জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, যাকে বলা যায় রুটি-রুজির সংস্কৃতি, সেই সমস্যাটাও প্রকট। আজকে দ্রব্যমূল্যের এই উল্লম্ফন মানুষকে শ্বাসরোধ করে তুলছে। সব জায়গায় আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুও তা-ই।
ধর্মীয় শাস্ত্রীরা এ কথাও বলেছেন—যদি দুটি পয়সা থাকে, একটি পয়সা দিয়ে খাবার কিনে নিও, আরেকটি পয়সা দিয়ে একটি ফুল কিনো। ফুল মানে এখানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের সেই কালের চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। নাটকের মতো একটি শিল্প সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। সেখানে খেয়ে না খেয়ে এই শিল্পের সেবায় বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ মানুষ নিবেদিত। তাঁরা সাধারণত খুব স্পর্শকাতর সমাজের অগ্রণী চিন্তার অংশীদার।
যে নাটকটি সেদিন অভিনীত হচ্ছিল সেটি একটি পুরাণের গল্প। এক হতভাগ্য একলব্যের বঞ্চনার কাহিনি। শ্রেণিবিভক্ত এবং বর্ণপ্রথাশ্রয়ী ভারতবর্ষে যুদ্ধাবস্থার যে অবস্থা তার একটি চিত্র। এই নিষ্ঠুর কাহিনি যেকোনো মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। বহুদিন ধরে নাটকটি অভিনীত হচ্ছে এবং দর্শক প্রশংসিতও হচ্ছে। সেই নাটকটি থেকে দর্শককে বঞ্চিত করা হলো। কয়েক দিনের মধ্যেই আরণ্যকের নাটক আমার নির্দেশনায় ‘কোম্পানী’ অভিনীত হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে আমাদের দেশকে লুটের সংস্কৃতি তৈরি করে গেছে তারই চিত্র এটি। লুট ও অর্থ পাচারের এক সম্যক চিত্র এই ‘কোম্পানী’। ইতিহাসকে সমসাময়িকতার বিচারের মাধ্যমে বিপুল দর্শক এই নাটকটি দেখতে আসেন। এমনই অনেক নাটক তিপ্পান্ন বছর ধরে আমাদের নাট্যমঞ্চে অভিনীত হয়ে আসছে। দর্শকের নতুন এক ভাবনা থাকবে বিশ্লেষণের পথে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে। আশা করি এ দেশের নাট্যকর্মীরা এবং সংবেদনশীল দর্শক এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন এবং শিল্প তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না রেখে বলতে চাই—শত হামলা, শত অবরোধ সৃষ্টি করেও শিল্পের অনিরুদ্ধ চাকা সামনের দিকে চলতেই থাকবে।
লেখক: মামুনুর রশীদ
নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আছে। সেখানে কোনো আন্দোলন-প্রতিবাদ হয় না। কিন্তু ২ নভেম্বর যা ঘটে গেল তা কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ নয়, নয় কোনো সমাবেশ বা বিক্ষোভ। বিষয়টি ছিল একেবারেই হামলা। প্রথমে সন্ধ্যা ৬টায় টিকিট ঘরে গিয়ে কিছু ব্যক্তি টিকিট বিক্রি বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়। উপস্থিত নাট্যকর্মীরা সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এরপর তারা গেট ভেঙে মঞ্চে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এবং নাটক বন্ধের জন্য হুমকি দিতে থাকে। ওই সময় দেশ নাট্যদলের নিত্যপুরাণ নাটকটি চলছিল। সেই উত্তেজিত ব্যক্তিদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। শিল্পকলার নিরাপত্তা বিধানের জন্য যে ব্যবস্থা ছিল সেই ব্যবস্থাটিও কোনো কাজে লাগল না। একপর্যায়ে মহাপরিচালক পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে নাটকটি বন্ধ করে দিলেন।
শিল্পকলা একাডেমি বা মহিলা সমিতিতে গত তিপ্পান্ন বছরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। দুই-একবার কেউ কেউ চেষ্টা করলেও আমরা সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে গেলে আর কেউ সাহস পায় না। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও হয়তো চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সেটাও সফল হয়নি। নাটক আমরা করে থাকি মানুষের জন্য। মানুষই আমাদের একমাত্র সহায়, রাষ্ট্র বা সরকার নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেটা ঘটল তাতে মনে হচ্ছে, সরকারের প্রতিনিধি যখন নাটক বন্ধ করে দেন, তখন বোঝা গেল সরকারও এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ।
নাটকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ১৮৭৬ সাল থেকে। তখনকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার তাদের সমালোচনা সহ্য করেনি। তারা অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যবস্থা করেছিল। এবারে নাট্যমঞ্চে হামলা তার চেয়ে দুই পায়ে এগিয়ে। ওই নাট্যদলের একজন সদস্য নাকি ফেসবুকে সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্য ওই দিনের হামলাকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। যেকোনো মন্তব্য কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না-ই হতে পারে। তার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে বা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যে কেউ গণতান্ত্রিক উপায়েই এর প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু নাটক বন্ধ করে দেওয়া এবং নাট্যমঞ্চে হামলা করা সমাধান যারা ভাবে, তারা কি প্রকৃতই গণতন্ত্রের মানুষ?
নাট্যমঞ্চে শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রী বা নেপথ্যের শিল্পীরাই থাকেন না, দর্শকও থাকেন। দর্শক টিকিট কিনে নিতান্তই একটা সুস্থ বিনোদনের জন্য নাটক দেখতে যান। পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁরা খুব অসহায়বোধ করেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা নাট্যমঞ্চের নিরাপত্তার ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করেন। এই ধরনের হামলা যদি চলতেই থাকে, তাহলে দর্শক নাট্যমঞ্চে আসতেই চাইবেন না।
মনে পড়ে যায় উদীচীর সম্মেলনে হামলার কথা। সেদিনও দর্শক এই হামলার শিকার হয়েছিলেন। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে এখনো তাঁদের জীবন কাটছে দুঃসহ যন্ত্রণায়। কিন্তু সেদিন একটা মানসিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল দর্শকের মাঝে। অনুষ্ঠান চলেছে এবং সারা দেশে একটা তীব্র প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল। এরপরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে হামলা—সেখানেও অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, সারা দেশে কোথাও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়নি।
এর মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কিছুটা স্তিমিতও হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নাটক এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠান চারদিকে নিয়মিতভাবে হতেও পারেনি। শিল্পকলা একাডেমির একটি হলেই নাটক চলছে। দর্শকদের সরব উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। এটা হচ্ছে ঢাকার অবস্থা। ঢাকার বাইরে ২২টি শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া বাঙালির জীবন অচল। যাত্রাপালা, পালাগান, লোকগান, পুঁথিপাঠ এসব আমাদের লোকশিল্প যা বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে উৎসারিত এই সৃজনশীলতা বাঙালির জীবনে একটা স্বস্তিময় আবহ সৃষ্টি করে।
শতাব্দী পেরিয়ে লালন, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিমসহ অনেক মরমি শিল্পী আমাদের জীবনে নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির মানসিকতায় নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ছাড়াও আলোকিত করেছেন তার মানসকে। সম্প্রতি মাজার ভাঙা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেটিও এ দেশের পীর-আউলিয়াদের প্রতি একধরনের হামলার প্রতীক। কিন্তু যাঁরা বিশ্বাসী, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তাঁরা শতাব্দীর পর শতাব্দী এই পীর-আউলিয়াদের সম্মান করে এসেছেন। এবং এই সম্মানটির চরিত্র অসাম্প্রদায়িক। হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র) বা হজরত শাহজালাল (র)-এর দরগায় যত লোক যায়, তারা ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষেই যায়। বাংলাদেশে যত ছোট-বড় মাজার আছে সেগুলোরও বেশ বড় ধরনের ভক্তকুল আছে। এই ভক্তকুলের আবেগকে সম্পূর্ণভাবে ভাঙচুর করে দিয়েছে সাম্প্রতিক হামলাকারীরা।
শিল্পেরও কিছু ভক্তকুল থাকে এবং তাঁরা অগণিত। শিল্পের তৃষ্ণায় এই অগণিত ভক্তকুল গান শোনেন, নাটক দেখেন, সিনেমা দেখেন। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, একটা কিছু শেখার জন্য, অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য এবং সেই সঙ্গে শিক্ষার অংশ হিসেবে শিল্পকে গ্রহণ করেন। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি শিক্ষায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ধরনের ধস নেমেছে। সেই ধস থেকে উঠে আসার জন্য শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য একটি সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সৃজনশীলতায় যাওয়ার পথে দরকার শিল্প-সাহিত্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ প্রকাশ করা। কিন্তু কোন মনস্তত্ত্ব থেকে একটি শিল্পকর্মের ঘটনা যখন ঘটছে তখন এর ওপর হামলা করা হলো?
সম্প্রতি যারা লাইব্রেরি আর্কাইভ ও শিল্পকলা একাডেমি পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মনস্তত্ত্বটা বোঝা বড় কঠিন। নানা কারণেই বাংলাদেশে একটি উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যারা ভয়ের সংস্কৃতি নির্মাণ করে মানুষের সুকুমার আকাঙ্ক্ষাগুলো ধ্বংস করতে চায়। অথচ তারা মনে রাখে না যে এই উপমহাদেশে সুফি দর্শনের মাধ্যমে একটি শান্তির বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের নানান সমস্যা থাকে। একটি প্রাত্যহিক জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, যাকে বলা যায় রুটি-রুজির সংস্কৃতি, সেই সমস্যাটাও প্রকট। আজকে দ্রব্যমূল্যের এই উল্লম্ফন মানুষকে শ্বাসরোধ করে তুলছে। সব জায়গায় আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুও তা-ই।
ধর্মীয় শাস্ত্রীরা এ কথাও বলেছেন—যদি দুটি পয়সা থাকে, একটি পয়সা দিয়ে খাবার কিনে নিও, আরেকটি পয়সা দিয়ে একটি ফুল কিনো। ফুল মানে এখানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের সেই কালের চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। নাটকের মতো একটি শিল্প সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। সেখানে খেয়ে না খেয়ে এই শিল্পের সেবায় বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ মানুষ নিবেদিত। তাঁরা সাধারণত খুব স্পর্শকাতর সমাজের অগ্রণী চিন্তার অংশীদার।
যে নাটকটি সেদিন অভিনীত হচ্ছিল সেটি একটি পুরাণের গল্প। এক হতভাগ্য একলব্যের বঞ্চনার কাহিনি। শ্রেণিবিভক্ত এবং বর্ণপ্রথাশ্রয়ী ভারতবর্ষে যুদ্ধাবস্থার যে অবস্থা তার একটি চিত্র। এই নিষ্ঠুর কাহিনি যেকোনো মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। বহুদিন ধরে নাটকটি অভিনীত হচ্ছে এবং দর্শক প্রশংসিতও হচ্ছে। সেই নাটকটি থেকে দর্শককে বঞ্চিত করা হলো। কয়েক দিনের মধ্যেই আরণ্যকের নাটক আমার নির্দেশনায় ‘কোম্পানী’ অভিনীত হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে আমাদের দেশকে লুটের সংস্কৃতি তৈরি করে গেছে তারই চিত্র এটি। লুট ও অর্থ পাচারের এক সম্যক চিত্র এই ‘কোম্পানী’। ইতিহাসকে সমসাময়িকতার বিচারের মাধ্যমে বিপুল দর্শক এই নাটকটি দেখতে আসেন। এমনই অনেক নাটক তিপ্পান্ন বছর ধরে আমাদের নাট্যমঞ্চে অভিনীত হয়ে আসছে। দর্শকের নতুন এক ভাবনা থাকবে বিশ্লেষণের পথে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে। আশা করি এ দেশের নাট্যকর্মীরা এবং সংবেদনশীল দর্শক এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন এবং শিল্প তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না রেখে বলতে চাই—শত হামলা, শত অবরোধ সৃষ্টি করেও শিল্পের অনিরুদ্ধ চাকা সামনের দিকে চলতেই থাকবে।
লেখক: মামুনুর রশীদ
নাট্যব্যক্তিত্ব

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে আছে। সেখানে কোনো আন্দোলন-প্রতিবাদ হয় না। কিন্তু ২ নভেম্বর যা ঘটে গেল তা কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ নয়, নয় কোনো সমাবেশ বা বিক্ষোভ। বিষয়টি ছিল একেবারেই হামলা। প্রথমে সন্ধ্যা ৬টায় টিকিট ঘরে গিয়ে কিছু ব্যক্তি টিকিট বিক্রি বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়। উপস্থিত নাট্যকর্মীরা সেটা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এরপর তারা গেট ভেঙে মঞ্চে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এবং নাটক বন্ধের জন্য হুমকি দিতে থাকে। ওই সময় দেশ নাট্যদলের নিত্যপুরাণ নাটকটি চলছিল। সেই উত্তেজিত ব্যক্তিদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। শিল্পকলার নিরাপত্তা বিধানের জন্য যে ব্যবস্থা ছিল সেই ব্যবস্থাটিও কোনো কাজে লাগল না। একপর্যায়ে মহাপরিচালক পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে নাটকটি বন্ধ করে দিলেন।
শিল্পকলা একাডেমি বা মহিলা সমিতিতে গত তিপ্পান্ন বছরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। দুই-একবার কেউ কেউ চেষ্টা করলেও আমরা সম্মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে গেলে আর কেউ সাহস পায় না। ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও হয়তো চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সেটাও সফল হয়নি। নাটক আমরা করে থাকি মানুষের জন্য। মানুষই আমাদের একমাত্র সহায়, রাষ্ট্র বা সরকার নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেটা ঘটল তাতে মনে হচ্ছে, সরকারের প্রতিনিধি যখন নাটক বন্ধ করে দেন, তখন বোঝা গেল সরকারও এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ।
নাটকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ১৮৭৬ সাল থেকে। তখনকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার তাদের সমালোচনা সহ্য করেনি। তারা অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যবস্থা করেছিল। এবারে নাট্যমঞ্চে হামলা তার চেয়ে দুই পায়ে এগিয়ে। ওই নাট্যদলের একজন সদস্য নাকি ফেসবুকে সাম্প্রতিক আন্দোলন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্য ওই দিনের হামলাকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। যেকোনো মন্তব্য কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না-ই হতে পারে। তার জন্য আইনি ব্যবস্থা আছে বা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যে কেউ গণতান্ত্রিক উপায়েই এর প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু নাটক বন্ধ করে দেওয়া এবং নাট্যমঞ্চে হামলা করা সমাধান যারা ভাবে, তারা কি প্রকৃতই গণতন্ত্রের মানুষ?
নাট্যমঞ্চে শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রী বা নেপথ্যের শিল্পীরাই থাকেন না, দর্শকও থাকেন। দর্শক টিকিট কিনে নিতান্তই একটা সুস্থ বিনোদনের জন্য নাটক দেখতে যান। পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁরা খুব অসহায়বোধ করেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা নাট্যমঞ্চের নিরাপত্তার ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করেন। এই ধরনের হামলা যদি চলতেই থাকে, তাহলে দর্শক নাট্যমঞ্চে আসতেই চাইবেন না।
মনে পড়ে যায় উদীচীর সম্মেলনে হামলার কথা। সেদিনও দর্শক এই হামলার শিকার হয়েছিলেন। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে এখনো তাঁদের জীবন কাটছে দুঃসহ যন্ত্রণায়। কিন্তু সেদিন একটা মানসিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল দর্শকের মাঝে। অনুষ্ঠান চলেছে এবং সারা দেশে একটা তীব্র প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল। এরপরে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখে হামলা—সেখানেও অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন, বহু মানুষ আহত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, সারা দেশে কোথাও অনুষ্ঠান বন্ধ হয়নি।
এর মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কিছুটা স্তিমিতও হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নাটক এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠান চারদিকে নিয়মিতভাবে হতেও পারেনি। শিল্পকলা একাডেমির একটি হলেই নাটক চলছে। দর্শকদের সরব উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। এটা হচ্ছে ঢাকার অবস্থা। ঢাকার বাইরে ২২টি শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া বাঙালির জীবন অচল। যাত্রাপালা, পালাগান, লোকগান, পুঁথিপাঠ এসব আমাদের লোকশিল্প যা বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে উৎসারিত এই সৃজনশীলতা বাঙালির জীবনে একটা স্বস্তিময় আবহ সৃষ্টি করে।
শতাব্দী পেরিয়ে লালন, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিমসহ অনেক মরমি শিল্পী আমাদের জীবনে নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির মানসিকতায় নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টি করা ছাড়াও আলোকিত করেছেন তার মানসকে। সম্প্রতি মাজার ভাঙা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেটিও এ দেশের পীর-আউলিয়াদের প্রতি একধরনের হামলার প্রতীক। কিন্তু যাঁরা বিশ্বাসী, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তাঁরা শতাব্দীর পর শতাব্দী এই পীর-আউলিয়াদের সম্মান করে এসেছেন। এবং এই সম্মানটির চরিত্র অসাম্প্রদায়িক। হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র) বা হজরত শাহজালাল (র)-এর দরগায় যত লোক যায়, তারা ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষেই যায়। বাংলাদেশে যত ছোট-বড় মাজার আছে সেগুলোরও বেশ বড় ধরনের ভক্তকুল আছে। এই ভক্তকুলের আবেগকে সম্পূর্ণভাবে ভাঙচুর করে দিয়েছে সাম্প্রতিক হামলাকারীরা।
শিল্পেরও কিছু ভক্তকুল থাকে এবং তাঁরা অগণিত। শিল্পের তৃষ্ণায় এই অগণিত ভক্তকুল গান শোনেন, নাটক দেখেন, সিনেমা দেখেন। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, একটা কিছু শেখার জন্য, অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য এবং সেই সঙ্গে শিক্ষার অংশ হিসেবে শিল্পকে গ্রহণ করেন। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি শিক্ষায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ধরনের ধস নেমেছে। সেই ধস থেকে উঠে আসার জন্য শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী শিক্ষার্থীর জন্য একটি সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সৃজনশীলতায় যাওয়ার পথে দরকার শিল্প-সাহিত্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ প্রকাশ করা। কিন্তু কোন মনস্তত্ত্ব থেকে একটি শিল্পকর্মের ঘটনা যখন ঘটছে তখন এর ওপর হামলা করা হলো?
সম্প্রতি যারা লাইব্রেরি আর্কাইভ ও শিল্পকলা একাডেমি পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মনস্তত্ত্বটা বোঝা বড় কঠিন। নানা কারণেই বাংলাদেশে একটি উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যারা ভয়ের সংস্কৃতি নির্মাণ করে মানুষের সুকুমার আকাঙ্ক্ষাগুলো ধ্বংস করতে চায়। অথচ তারা মনে রাখে না যে এই উপমহাদেশে সুফি দর্শনের মাধ্যমে একটি শান্তির বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের নানান সমস্যা থাকে। একটি প্রাত্যহিক জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, যাকে বলা যায় রুটি-রুজির সংস্কৃতি, সেই সমস্যাটাও প্রকট। আজকে দ্রব্যমূল্যের এই উল্লম্ফন মানুষকে শ্বাসরোধ করে তুলছে। সব জায়গায় আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুও তা-ই।
ধর্মীয় শাস্ত্রীরা এ কথাও বলেছেন—যদি দুটি পয়সা থাকে, একটি পয়সা দিয়ে খাবার কিনে নিও, আরেকটি পয়সা দিয়ে একটি ফুল কিনো। ফুল মানে এখানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের সেই কালের চিন্তাভাবনা, জীবনযাপন, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। নাটকের মতো একটি শিল্প সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। সেখানে খেয়ে না খেয়ে এই শিল্পের সেবায় বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ মানুষ নিবেদিত। তাঁরা সাধারণত খুব স্পর্শকাতর সমাজের অগ্রণী চিন্তার অংশীদার।
যে নাটকটি সেদিন অভিনীত হচ্ছিল সেটি একটি পুরাণের গল্প। এক হতভাগ্য একলব্যের বঞ্চনার কাহিনি। শ্রেণিবিভক্ত এবং বর্ণপ্রথাশ্রয়ী ভারতবর্ষে যুদ্ধাবস্থার যে অবস্থা তার একটি চিত্র। এই নিষ্ঠুর কাহিনি যেকোনো মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। বহুদিন ধরে নাটকটি অভিনীত হচ্ছে এবং দর্শক প্রশংসিতও হচ্ছে। সেই নাটকটি থেকে দর্শককে বঞ্চিত করা হলো। কয়েক দিনের মধ্যেই আরণ্যকের নাটক আমার নির্দেশনায় ‘কোম্পানী’ অভিনীত হবে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে আমাদের দেশকে লুটের সংস্কৃতি তৈরি করে গেছে তারই চিত্র এটি। লুট ও অর্থ পাচারের এক সম্যক চিত্র এই ‘কোম্পানী’। ইতিহাসকে সমসাময়িকতার বিচারের মাধ্যমে বিপুল দর্শক এই নাটকটি দেখতে আসেন। এমনই অনেক নাটক তিপ্পান্ন বছর ধরে আমাদের নাট্যমঞ্চে অভিনীত হয়ে আসছে। দর্শকের নতুন এক ভাবনা থাকবে বিশ্লেষণের পথে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে। আশা করি এ দেশের নাট্যকর্মীরা এবং সংবেদনশীল দর্শক এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন এবং শিল্প তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না রেখে বলতে চাই—শত হামলা, শত অবরোধ সৃষ্টি করেও শিল্পের অনিরুদ্ধ চাকা সামনের দিকে চলতেই থাকবে।
লেখক: মামুনুর রশীদ
নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
০৭ নভেম্বর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
০৭ নভেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
০৭ নভেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
০৭ নভেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫