শরিফুল হাসান

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ও ঘুমধুমের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ির দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মর্টার শেল পড়ে এক বাংলাদেশির ঘরে আগুন ধরে গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি সড়কে যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে গত দুদিনে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) প্রায় এক শ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারে; বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যেতে মেরিন ড্রাইভের যে ৮০ কিলোমিটার সড়ক, এর খুব কাছেই মিয়ানমার। সে কারণেই কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধ আর সংঘাতের যে উত্তেজনা, তার ছোঁয়া পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এখানে সড়কের পাশের চা-দোকানগুলোয় গেলে মিয়ানমারের যুদ্ধের আলাপ কানে আসবে।
মিয়ানমারের ভবিষ্যতে কী হবে, কারা ক্ষমতা নেবে, সামরিক জান্তার কী হবে, ফের রোহিঙ্গারা আসবে কি না, সঙ্গে আরাকান কিংবা অন্য কেউ আসবে কি না—এমন নানা বিষয় নিয়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষজন যেমন ভাবছেন, তেমনি পরিস্থিতির ওপর রাখছেন এখানকার বিদেশিরাও, যাঁরা নানাভাবে মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের কাজে যুক্ত। অবশ্য কেবল বান্দরবান, কক্সবাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কিংবা বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখও এখন মিয়ানমারের দিকে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। এরপর কয়েকটি নির্বাচন হলেও ১৯৬২ সাল থেকে নানাভাবে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানকার সামরিক জান্তারা। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
সামরিক জান্তা কঠোর হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করছে এবং হাজার হাজার তরুণ এতে প্রাণ হারান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। এর মধ্যেই দেশটিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এনইউজি ঘোষণা করেছে, সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে দেশে একটি ‘ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ গঠন করা হবে এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ সংগঠিত হয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক জোট হয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। জোটটি পরিচিতি পেয়েছে ‘থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স’ নামে। তারা একসঙ্গে মিলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছে গত ২৭ অক্টোবর থেকে।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী (তাতমাদো) একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়ছে।
রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন শান্ত থাকলেও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের কাছে অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডব্লিউএসপি) শান রাজ্যের হোপাং শহরে চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছে। এই রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে দুটি শহর দখল করে নিয়েছে। ইরাবতীর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি দখলে নিয়েছেন আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গত সপ্তাহে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াইয়ে অন্তত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘর ছেড়েছে অসংখ্য মানুষ। চলতি গৃহযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বামার-জনতার একাংশও সামরিক জান্তা বা তাতমাদোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। ফলে সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রচণ্ড চাপে আছেন।
বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের বৈঠকেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ২৮ জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এটাও জানি, প্রত্যাবাসন এখন কিছুটা সমস্যার মুখে পড়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত বন্ধ করে অস্ত্রবিরতির জন্য আমরা মধ্যস্থতা করছি। রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে।’
এর আগে ২৭ জানুয়ারি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একটি পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে সেখানেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে আসে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে আমাদের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এটি নিয়ে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশ জনবহুল, রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩০ হাজার করে নতুন রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
ভূরাজনীতির বিষয়াদি ছাড়াও মিয়ানমার ও রাখাইনে কী ঘটে, তাতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসন। ২০২১ সালের ৩ জুন মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) ‘পলিসি পজিশন অন দ্য রোহিঙ্গা ইন রাখাইন স্টেট’ নামে একটি অবস্থানপত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ নামে সম্বোধন করেছে।
মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ‘মিয়ানমারের বর্তমান সংকট এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে এর প্রভাব’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। ওই সেমিনারে অনলাইনে যোগ দিয়ে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ও উপদেষ্টা কিয়াও জাও বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য অধিকারসহ প্রকৃত প্রত্যাবাসন চায় মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য সরকার সামরিক জান্তার পতন ঘটাবে। আমরা একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করব।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের জাতীয় সরকারের বক্তব্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মিয়ানমারের মতোই অনিশ্চিত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার মুখে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই বছরেরই নভেম্বরে তড়িঘড়ি করে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ। এরপর ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। ‘যাচাই-বাছাই’-এর পর তা থেকে ৬২ হাজার ২৮৫ ব্যক্তির তথ্য নিশ্চিত করে মিয়ানমার। কিন্তু সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসিত হয়নি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আশ্রয়শিবিরে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই ৫ লাখ। প্রতিবছর ক্যাম্পে নতুন করে ৩০ হাজার শিশু যুক্ত হচ্ছে। বিয়েও হচ্ছে ব্যাপক হারে। এভাবে নতুন-পুরোনো মিলে প্রতিদিন রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে সব রোহিঙ্গাকে ফিরতে কত সময় লাগবে—জানা নেই কারও। তারপরও কাল থেকেই যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করে, তাহলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ফিরতে কত দিন লাগবে?
চলুন, অঙ্কটা মেলানোর চেষ্টা করি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, কাল থেকে যদি অব্যাহতভাবে বছরের ৩৬৫ দিন ৩০০ করে রোহিঙ্গা ফেরে, তাহলে বছরে ফিরবে ১ লাখ। এই হিসাবে ১২ লাখ লোকের ফিরতে লাগবে অন্তত ১২ বছর। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সপ্তাহের দুদিন যদি প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকে, তাহলে সময় লাগবে ১৫ বছর। আর যদি দিনে ৩০০-র বদলে ২০০ জন করে ফেরে, তাহলে সময় লাগবে প্রায় ২৪ বছর। কিন্তু এই সময়ে নতুন করে কত শিশুর জন্ম হবে?
এই জটিলতায় যদি যোগ হয় এমন বাস্তবতা যে সাত বছরে একজনও ফেরেনি, কবে ফিরবে কেউ জানে না, এমনকি আদৌ ফিরবে কি না, তা-ও জানা নেই, তাহলে সামনে আসে কেবলই এক অনিশ্চয়তা। আর সেই অনিশ্চয়তায় সামনে দাঁড়িয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশও। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি উত্তেজনা বাড়ালেও অনিশ্চয়তা কমায়নি এতটুকুও; বরং নতুন করে আরও অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, আরাকানের রাখাইনরাও আসতে পারে। যেহেতু প্রতিবেশী বদলানোর সুযোগ থাকে না। কাজেই সামনের দিনগুলোতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।
লেখক: কলামিস্ট

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ও ঘুমধুমের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ির দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মর্টার শেল পড়ে এক বাংলাদেশির ঘরে আগুন ধরে গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি সড়কে যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে গত দুদিনে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) প্রায় এক শ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারে; বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যেতে মেরিন ড্রাইভের যে ৮০ কিলোমিটার সড়ক, এর খুব কাছেই মিয়ানমার। সে কারণেই কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধ আর সংঘাতের যে উত্তেজনা, তার ছোঁয়া পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এখানে সড়কের পাশের চা-দোকানগুলোয় গেলে মিয়ানমারের যুদ্ধের আলাপ কানে আসবে।
মিয়ানমারের ভবিষ্যতে কী হবে, কারা ক্ষমতা নেবে, সামরিক জান্তার কী হবে, ফের রোহিঙ্গারা আসবে কি না, সঙ্গে আরাকান কিংবা অন্য কেউ আসবে কি না—এমন নানা বিষয় নিয়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষজন যেমন ভাবছেন, তেমনি পরিস্থিতির ওপর রাখছেন এখানকার বিদেশিরাও, যাঁরা নানাভাবে মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের কাজে যুক্ত। অবশ্য কেবল বান্দরবান, কক্সবাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কিংবা বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখও এখন মিয়ানমারের দিকে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। এরপর কয়েকটি নির্বাচন হলেও ১৯৬২ সাল থেকে নানাভাবে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানকার সামরিক জান্তারা। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
সামরিক জান্তা কঠোর হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করছে এবং হাজার হাজার তরুণ এতে প্রাণ হারান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। এর মধ্যেই দেশটিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এনইউজি ঘোষণা করেছে, সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে দেশে একটি ‘ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ গঠন করা হবে এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ সংগঠিত হয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক জোট হয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। জোটটি পরিচিতি পেয়েছে ‘থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স’ নামে। তারা একসঙ্গে মিলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছে গত ২৭ অক্টোবর থেকে।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী (তাতমাদো) একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়ছে।
রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন শান্ত থাকলেও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের কাছে অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডব্লিউএসপি) শান রাজ্যের হোপাং শহরে চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছে। এই রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে দুটি শহর দখল করে নিয়েছে। ইরাবতীর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি দখলে নিয়েছেন আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গত সপ্তাহে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াইয়ে অন্তত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘর ছেড়েছে অসংখ্য মানুষ। চলতি গৃহযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বামার-জনতার একাংশও সামরিক জান্তা বা তাতমাদোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। ফলে সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রচণ্ড চাপে আছেন।
বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের বৈঠকেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ২৮ জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এটাও জানি, প্রত্যাবাসন এখন কিছুটা সমস্যার মুখে পড়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত বন্ধ করে অস্ত্রবিরতির জন্য আমরা মধ্যস্থতা করছি। রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে।’
এর আগে ২৭ জানুয়ারি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একটি পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে সেখানেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে আসে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে আমাদের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এটি নিয়ে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশ জনবহুল, রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩০ হাজার করে নতুন রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
ভূরাজনীতির বিষয়াদি ছাড়াও মিয়ানমার ও রাখাইনে কী ঘটে, তাতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসন। ২০২১ সালের ৩ জুন মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) ‘পলিসি পজিশন অন দ্য রোহিঙ্গা ইন রাখাইন স্টেট’ নামে একটি অবস্থানপত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ নামে সম্বোধন করেছে।
মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ‘মিয়ানমারের বর্তমান সংকট এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে এর প্রভাব’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। ওই সেমিনারে অনলাইনে যোগ দিয়ে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ও উপদেষ্টা কিয়াও জাও বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য অধিকারসহ প্রকৃত প্রত্যাবাসন চায় মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য সরকার সামরিক জান্তার পতন ঘটাবে। আমরা একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করব।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের জাতীয় সরকারের বক্তব্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মিয়ানমারের মতোই অনিশ্চিত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার মুখে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই বছরেরই নভেম্বরে তড়িঘড়ি করে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ। এরপর ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। ‘যাচাই-বাছাই’-এর পর তা থেকে ৬২ হাজার ২৮৫ ব্যক্তির তথ্য নিশ্চিত করে মিয়ানমার। কিন্তু সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসিত হয়নি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আশ্রয়শিবিরে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই ৫ লাখ। প্রতিবছর ক্যাম্পে নতুন করে ৩০ হাজার শিশু যুক্ত হচ্ছে। বিয়েও হচ্ছে ব্যাপক হারে। এভাবে নতুন-পুরোনো মিলে প্রতিদিন রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে সব রোহিঙ্গাকে ফিরতে কত সময় লাগবে—জানা নেই কারও। তারপরও কাল থেকেই যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করে, তাহলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ফিরতে কত দিন লাগবে?
চলুন, অঙ্কটা মেলানোর চেষ্টা করি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, কাল থেকে যদি অব্যাহতভাবে বছরের ৩৬৫ দিন ৩০০ করে রোহিঙ্গা ফেরে, তাহলে বছরে ফিরবে ১ লাখ। এই হিসাবে ১২ লাখ লোকের ফিরতে লাগবে অন্তত ১২ বছর। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সপ্তাহের দুদিন যদি প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকে, তাহলে সময় লাগবে ১৫ বছর। আর যদি দিনে ৩০০-র বদলে ২০০ জন করে ফেরে, তাহলে সময় লাগবে প্রায় ২৪ বছর। কিন্তু এই সময়ে নতুন করে কত শিশুর জন্ম হবে?
এই জটিলতায় যদি যোগ হয় এমন বাস্তবতা যে সাত বছরে একজনও ফেরেনি, কবে ফিরবে কেউ জানে না, এমনকি আদৌ ফিরবে কি না, তা-ও জানা নেই, তাহলে সামনে আসে কেবলই এক অনিশ্চয়তা। আর সেই অনিশ্চয়তায় সামনে দাঁড়িয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশও। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি উত্তেজনা বাড়ালেও অনিশ্চয়তা কমায়নি এতটুকুও; বরং নতুন করে আরও অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, আরাকানের রাখাইনরাও আসতে পারে। যেহেতু প্রতিবেশী বদলানোর সুযোগ থাকে না। কাজেই সামনের দিনগুলোতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।
লেখক: কলামিস্ট
শরিফুল হাসান

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ও ঘুমধুমের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ির দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মর্টার শেল পড়ে এক বাংলাদেশির ঘরে আগুন ধরে গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি সড়কে যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে গত দুদিনে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) প্রায় এক শ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারে; বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যেতে মেরিন ড্রাইভের যে ৮০ কিলোমিটার সড়ক, এর খুব কাছেই মিয়ানমার। সে কারণেই কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধ আর সংঘাতের যে উত্তেজনা, তার ছোঁয়া পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এখানে সড়কের পাশের চা-দোকানগুলোয় গেলে মিয়ানমারের যুদ্ধের আলাপ কানে আসবে।
মিয়ানমারের ভবিষ্যতে কী হবে, কারা ক্ষমতা নেবে, সামরিক জান্তার কী হবে, ফের রোহিঙ্গারা আসবে কি না, সঙ্গে আরাকান কিংবা অন্য কেউ আসবে কি না—এমন নানা বিষয় নিয়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষজন যেমন ভাবছেন, তেমনি পরিস্থিতির ওপর রাখছেন এখানকার বিদেশিরাও, যাঁরা নানাভাবে মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের কাজে যুক্ত। অবশ্য কেবল বান্দরবান, কক্সবাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কিংবা বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখও এখন মিয়ানমারের দিকে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। এরপর কয়েকটি নির্বাচন হলেও ১৯৬২ সাল থেকে নানাভাবে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানকার সামরিক জান্তারা। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
সামরিক জান্তা কঠোর হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করছে এবং হাজার হাজার তরুণ এতে প্রাণ হারান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। এর মধ্যেই দেশটিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এনইউজি ঘোষণা করেছে, সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে দেশে একটি ‘ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ গঠন করা হবে এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ সংগঠিত হয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক জোট হয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। জোটটি পরিচিতি পেয়েছে ‘থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স’ নামে। তারা একসঙ্গে মিলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছে গত ২৭ অক্টোবর থেকে।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী (তাতমাদো) একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়ছে।
রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন শান্ত থাকলেও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের কাছে অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডব্লিউএসপি) শান রাজ্যের হোপাং শহরে চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছে। এই রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে দুটি শহর দখল করে নিয়েছে। ইরাবতীর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি দখলে নিয়েছেন আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গত সপ্তাহে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াইয়ে অন্তত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘর ছেড়েছে অসংখ্য মানুষ। চলতি গৃহযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বামার-জনতার একাংশও সামরিক জান্তা বা তাতমাদোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। ফলে সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রচণ্ড চাপে আছেন।
বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের বৈঠকেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ২৮ জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এটাও জানি, প্রত্যাবাসন এখন কিছুটা সমস্যার মুখে পড়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত বন্ধ করে অস্ত্রবিরতির জন্য আমরা মধ্যস্থতা করছি। রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে।’
এর আগে ২৭ জানুয়ারি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একটি পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে সেখানেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে আসে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে আমাদের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এটি নিয়ে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশ জনবহুল, রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩০ হাজার করে নতুন রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
ভূরাজনীতির বিষয়াদি ছাড়াও মিয়ানমার ও রাখাইনে কী ঘটে, তাতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসন। ২০২১ সালের ৩ জুন মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) ‘পলিসি পজিশন অন দ্য রোহিঙ্গা ইন রাখাইন স্টেট’ নামে একটি অবস্থানপত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ নামে সম্বোধন করেছে।
মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ‘মিয়ানমারের বর্তমান সংকট এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে এর প্রভাব’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। ওই সেমিনারে অনলাইনে যোগ দিয়ে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ও উপদেষ্টা কিয়াও জাও বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য অধিকারসহ প্রকৃত প্রত্যাবাসন চায় মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য সরকার সামরিক জান্তার পতন ঘটাবে। আমরা একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করব।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের জাতীয় সরকারের বক্তব্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মিয়ানমারের মতোই অনিশ্চিত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার মুখে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই বছরেরই নভেম্বরে তড়িঘড়ি করে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ। এরপর ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। ‘যাচাই-বাছাই’-এর পর তা থেকে ৬২ হাজার ২৮৫ ব্যক্তির তথ্য নিশ্চিত করে মিয়ানমার। কিন্তু সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসিত হয়নি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আশ্রয়শিবিরে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই ৫ লাখ। প্রতিবছর ক্যাম্পে নতুন করে ৩০ হাজার শিশু যুক্ত হচ্ছে। বিয়েও হচ্ছে ব্যাপক হারে। এভাবে নতুন-পুরোনো মিলে প্রতিদিন রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে সব রোহিঙ্গাকে ফিরতে কত সময় লাগবে—জানা নেই কারও। তারপরও কাল থেকেই যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করে, তাহলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ফিরতে কত দিন লাগবে?
চলুন, অঙ্কটা মেলানোর চেষ্টা করি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, কাল থেকে যদি অব্যাহতভাবে বছরের ৩৬৫ দিন ৩০০ করে রোহিঙ্গা ফেরে, তাহলে বছরে ফিরবে ১ লাখ। এই হিসাবে ১২ লাখ লোকের ফিরতে লাগবে অন্তত ১২ বছর। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সপ্তাহের দুদিন যদি প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকে, তাহলে সময় লাগবে ১৫ বছর। আর যদি দিনে ৩০০-র বদলে ২০০ জন করে ফেরে, তাহলে সময় লাগবে প্রায় ২৪ বছর। কিন্তু এই সময়ে নতুন করে কত শিশুর জন্ম হবে?
এই জটিলতায় যদি যোগ হয় এমন বাস্তবতা যে সাত বছরে একজনও ফেরেনি, কবে ফিরবে কেউ জানে না, এমনকি আদৌ ফিরবে কি না, তা-ও জানা নেই, তাহলে সামনে আসে কেবলই এক অনিশ্চয়তা। আর সেই অনিশ্চয়তায় সামনে দাঁড়িয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশও। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি উত্তেজনা বাড়ালেও অনিশ্চয়তা কমায়নি এতটুকুও; বরং নতুন করে আরও অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, আরাকানের রাখাইনরাও আসতে পারে। যেহেতু প্রতিবেশী বদলানোর সুযোগ থাকে না। কাজেই সামনের দিনগুলোতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।
লেখক: কলামিস্ট

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু ও ঘুমধুমের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলিতে নাইক্ষ্যংছড়ির দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। মর্টার শেল পড়ে এক বাংলাদেশির ঘরে আগুন ধরে গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি সড়কে যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে গত দুদিনে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) প্রায় এক শ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজারে; বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজার থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত যেতে মেরিন ড্রাইভের যে ৮০ কিলোমিটার সড়ক, এর খুব কাছেই মিয়ানমার। সে কারণেই কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারজুড়ে গৃহযুদ্ধ আর সংঘাতের যে উত্তেজনা, তার ছোঁয়া পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এখানে সড়কের পাশের চা-দোকানগুলোয় গেলে মিয়ানমারের যুদ্ধের আলাপ কানে আসবে।
মিয়ানমারের ভবিষ্যতে কী হবে, কারা ক্ষমতা নেবে, সামরিক জান্তার কী হবে, ফের রোহিঙ্গারা আসবে কি না, সঙ্গে আরাকান কিংবা অন্য কেউ আসবে কি না—এমন নানা বিষয় নিয়ে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষজন যেমন ভাবছেন, তেমনি পরিস্থিতির ওপর রাখছেন এখানকার বিদেশিরাও, যাঁরা নানাভাবে মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গাদের কাজে যুক্ত। অবশ্য কেবল বান্দরবান, কক্সবাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কিংবা বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির খবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের চোখও এখন মিয়ানমারের দিকে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মিয়ানমার। এরপর কয়েকটি নির্বাচন হলেও ১৯৬২ সাল থেকে নানাভাবে দেশটির ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে ছিল সেখানকার সামরিক জান্তারা। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
সামরিক জান্তা কঠোর হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করছে এবং হাজার হাজার তরুণ এতে প্রাণ হারান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বদলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে নানা প্রান্তে। এর মধ্যেই দেশটিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এনইউজি ঘোষণা করেছে, সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে দেশে একটি ‘ফেডারেল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন’ গঠন করা হবে এবং সেই লক্ষ্যে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ সংগঠিত হয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক জোট হয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। জোটটি পরিচিতি পেয়েছে ‘থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স’ নামে। তারা একসঙ্গে মিলে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছে গত ২৭ অক্টোবর থেকে।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী (তাতমাদো) একের পর এক পরাজয়ের মুখে পড়ছে।
রাজধানী নেপিডো এবং প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন শান্ত থাকলেও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্রোহীদের কাছে অন্তত ৩৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্রোহীরা বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মিয়ানমারের নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডব্লিউএসপি) শান রাজ্যের হোপাং শহরে চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছে। এই রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে দুটি শহর দখল করে নিয়েছে। ইরাবতীর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর আরেকটি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি দখলে নিয়েছেন আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গত সপ্তাহে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াইয়ে অন্তত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ঘর ছেড়েছে অসংখ্য মানুষ। চলতি গৃহযুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বামার-জনতার একাংশও সামরিক জান্তা বা তাতমাদোর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। ফলে সামরিক জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রচণ্ড চাপে আছেন।
বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের বৈঠকেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ২৮ জানুয়ারির ওই বৈঠকের পর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এটাও জানি, প্রত্যাবাসন এখন কিছুটা সমস্যার মুখে পড়েছে। রাখাইনে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত বন্ধ করে অস্ত্রবিরতির জন্য আমরা মধ্যস্থতা করছি। রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠা হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনার পথ সুগম হবে।’
এর আগে ২৭ জানুয়ারি নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একটি পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে সেখানেও রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উঠে আসে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের তখন স্থান দিয়েছিলাম। যে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের কারণে আমাদের নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এটি নিয়ে আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়েছে। শিবিরগুলো উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিস্তারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশ জনবহুল, রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতিবছর ৩০ হাজার করে নতুন রোহিঙ্গা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
ভূরাজনীতির বিষয়াদি ছাড়াও মিয়ানমার ও রাখাইনে কী ঘটে, তাতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসন। ২০২১ সালের ৩ জুন মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) ‘পলিসি পজিশন অন দ্য রোহিঙ্গা ইন রাখাইন স্টেট’ নামে একটি অবস্থানপত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’ নামে সম্বোধন করেছে।
মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ‘মিয়ানমারের বর্তমান সংকট এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে এর প্রভাব’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। ওই সেমিনারে অনলাইনে যোগ দিয়ে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ও উপদেষ্টা কিয়াও জাও বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য অধিকারসহ প্রকৃত প্রত্যাবাসন চায় মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য সরকার সামরিক জান্তার পতন ঘটাবে। আমরা একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করব।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের জাতীয় সরকারের বক্তব্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু মিয়ানমারের মতোই অনিশ্চিত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার মুখে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই বছরেরই নভেম্বরে তড়িঘড়ি করে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বাংলাদেশ। এরপর ৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৬ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। ‘যাচাই-বাছাই’-এর পর তা থেকে ৬২ হাজার ২৮৫ ব্যক্তির তথ্য নিশ্চিত করে মিয়ানমার। কিন্তু সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসিত হয়নি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আশ্রয়শিবিরে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই ৫ লাখ। প্রতিবছর ক্যাম্পে নতুন করে ৩০ হাজার শিশু যুক্ত হচ্ছে। বিয়েও হচ্ছে ব্যাপক হারে। এভাবে নতুন-পুরোনো মিলে প্রতিদিন রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে সব রোহিঙ্গাকে ফিরতে কত সময় লাগবে—জানা নেই কারও। তারপরও কাল থেকেই যদি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে শুরু করে, তাহলে ১২ লাখ রোহিঙ্গার ফিরতে কত দিন লাগবে?
চলুন, অঙ্কটা মেলানোর চেষ্টা করি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, কাল থেকে যদি অব্যাহতভাবে বছরের ৩৬৫ দিন ৩০০ করে রোহিঙ্গা ফেরে, তাহলে বছরে ফিরবে ১ লাখ। এই হিসাবে ১২ লাখ লোকের ফিরতে লাগবে অন্তত ১২ বছর। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সপ্তাহের দুদিন যদি প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকে, তাহলে সময় লাগবে ১৫ বছর। আর যদি দিনে ৩০০-র বদলে ২০০ জন করে ফেরে, তাহলে সময় লাগবে প্রায় ২৪ বছর। কিন্তু এই সময়ে নতুন করে কত শিশুর জন্ম হবে?
এই জটিলতায় যদি যোগ হয় এমন বাস্তবতা যে সাত বছরে একজনও ফেরেনি, কবে ফিরবে কেউ জানে না, এমনকি আদৌ ফিরবে কি না, তা-ও জানা নেই, তাহলে সামনে আসে কেবলই এক অনিশ্চয়তা। আর সেই অনিশ্চয়তায় সামনে দাঁড়িয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশও। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি উত্তেজনা বাড়ালেও অনিশ্চয়তা কমায়নি এতটুকুও; বরং নতুন করে আরও অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, আরাকানের রাখাইনরাও আসতে পারে। যেহেতু প্রতিবেশী বদলানোর সুযোগ থাকে না। কাজেই সামনের দিনগুলোতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।
লেখক: কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫