সেলিম জাহান

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বারবার উঠে এসেছে।
অসমতা ও বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, সামাজিক ন্যায্যতার দলন ও অন্যায্য পক্ষপাত। অসমতা প্রতিফলিত হতে পারে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক অঙ্গনে। বৈষম্য ঘটে ঘরে-বাইরে, দেশজ, আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে। অসমতা নিরীক্ষণ করতে কিংবা বৈষম্য নিরূপণে আমরা প্রায়ই ফলাফলের দিকে তাকাই যেমন—আয়বৈষম্য কিংবা সম্পদের অসমতা। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে যে বৈষম্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে, সেটা হচ্ছে ‘সুযোগের বৈষম্য’ যেমন—শিক্ষায় কিংবা স্বাস্থ্যসেবায় অথবা তথ্যপ্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে আয় ও সম্পদের অসমতা সর্বজনবিদিত। সত্যিকার অর্থে, এই অসমতা বোঝার জন্য উপাত্তের প্রয়োজন হয় না, ঢাকা শহরের পথে-ঘাটে বেরোলেই তা চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কিংবা অর্থ পাচারের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে অর্থ ও বিত্ত সামান্য কিছু মানুষ ও পরিবারে কুক্ষিগত। মোটাদাগের উপাত্তের দিকে যদি তাকাই, তাহলে আয়ের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ যেখানে দেশের নিম্নতম ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর যায়, সেখানে সমাজের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করে দেশজ আয়ের ৩৮ শতাংশ। ভোগের ক্ষেত্রে যেখানে নিম্নতম ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে মাসিক মাথাপিছু ব্যয় ২ হাজার ১২২ টাকা, সেখানে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে সে সংখ্যাটি হচ্ছে ৯ হাজার ১৩৭ টাকা।
মানব উন্নয়নের নানা সূচকেও এমন বৈষম্য বিদ্যমান। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেখানে প্রতি হাজারে ৪৯, সেখানে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা প্রতি হাজারে ২৫। তেমনিভাবে, দেশের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ৮৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষিত নার্সের হাতে। অন্যদিকে, নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির মাত্র ৩২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের দ্বারা। আঞ্চলিক বৈষম্যের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, বরিশালে সাক্ষরতার হার যেখানে ৭৫ শতাংশ, সিলেটে সেটা ৬০ শতাংশ। তেমনিভাবে পরিবেশ নাজুক জেলাগুলোতে বিভিন্ন পীড়ার প্রাদুর্ভাব অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। এসব অঞ্চলে মোট গৃহস্থালির ৪৫ শতাংশই নানা পীড়ার শিকার।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগে বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। শিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি ধারা, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম, বিত্তবান ও বিত্তহীনদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রবণতার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগে একটি বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। দিনের পর দিন কোনো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোটা-ব্যবস্থা বজায় রেখে শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে অসমতা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। এসবের প্রতিফলন ঘটেছে শিক্ষা অর্জনের ফলাফলে এবং তারপরে কর্ম নিয়োজনে। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে ত্রিধারা ব্যবস্থা বজায় রেখে স্বাস্থ্য সুযোগের ক্ষেত্রেও একটি বিশাল বৈষম্যের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ফলে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সেবার পরিমাণ যেমন অপ্রতুল, তেমনি তার মানও খুব নিচু। সাধারণ মানুষই সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসুবিধা পায় না। অন্যদিকে বিত্তবানেরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়।
তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির তিন-চতুর্থাংশের যেখানে আন্তর্যোগ সেবায় লভ্যতা আছে, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সংখ্যাটি হচ্ছে মাত্র ৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলের ৫৫ শতাংশ মানুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের তেমন মানুষের অনুপাত হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৩ শতাংশ ঘরে কম্পিউটার আছে এবং ৭৮ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জানে না।
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যেও ফলাফল ও সুযোগের মধ্যে অসমতা রয়েছে। যেমন—উচ্চতম শিক্ষা স্তরে নারীর অন্তর্ভুক্তির হার যেখানে ১৭ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে ২৪ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণের হার যেখানে ৮১ শতাংশ, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম স্তরের নির্বাহীদের মধ্যে নারীর অনুপাত হচ্ছে মাত্র ১২ শতাংশ। বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর মধ্যে ফারাক হচ্ছে ২৯ শতাংশ। আন্তর্যোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৩৩ শতাংশ পুরুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, নারীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংখ্যা হচ্ছে ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বৈষম্য অত্যন্ত গভীর—এই সত্য অতীত ও নিকট অতীতে বারবারই পরিলক্ষিত হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা বিতর্কের জায়গাটি সরকারি দল কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে দখল করে রাখে এবং বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ড নিষ্পেষিত হয়। প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না এবং সেই জায়গায় সরকারি দল একচ্ছত্রভাবে বিরাজ করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা যদি বলি, তাহলে সেখানে যেকোনো রকমের বিকল্প মতকে শায়েস্তা করেছে ক্ষমতাসীন দল। জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ, অন্যান্য পেশাজীবী, সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।
দেশের নীতিমালা নির্ধারণে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সেখানে বিত্ত ও ক্ষমতার পক্ষপাত ছিল সুস্পষ্ট। দরিদ্র, প্রান্তিক গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও চাওয়া-পাওয়া কখনো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। নানা সময়ে লোকদেখানো অংশগ্রহণমূলক আলাপ-আলোচনার একটা ভাব তৈরি করা হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলো কার্যকর কোনো জন অংশগ্রহণ ছিল না। নারী জনগোষ্ঠী নানা সময়ে কথা বলেছে বটে, কিন্তু কখনোই তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
দেশের যে জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক অঙ্গনের কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রে প্রান্তিক সীমায় রেখে দেওয়া হয়েছিল, তারা হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। তাদের আমরা সর্বদা দেশের ভবিষ্যৎ করে রেখে দিয়েছি, তাদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি। তরুণ সমাজের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তাদের সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতাকে আমাদের সমাজ বিবর্তন ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারিনি। তরুণ শক্তির এই অপচয় বৈষম্যের এক বিশাল নেতিবাচক ফলাফল।
সামাজিক দিক থেকে ধনী-দরিদ্র, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, আশরাফ-আতরাফের বৈষম্য আমাদের সমাজে আজও বিদ্যমান। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত সম্পদে, ঋণসুবিধায়, তথ্য ও প্রযুক্তিসেবায়। ফলে কর্মনিয়োজন এবং আয়ের দিক থেকেও তারা বঞ্চনার শিকার হয়। পরিবেশ-নাজুক অঞ্চলে যেসব প্রান্তিক মানুষের বাস, তারাও ক্রমবর্ধমান অসমতার শিকার হয়। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যকার নিম্নবর্ণের মানুষ এবং আশরাফ-আতরাফদের মধ্যে আতরাফেরা সামাজিক বৈষম্যমূলক একটি স্থানে অবস্থান করে। সামাজিক দিক থেকে বাংলাদেশে নগর ও পল্লির মধ্যকার বৈষম্যের কথা সুবিদিত।
সমাজ অঙ্গনে ধর্মীয় বৈষম্যের কথা বারবার নানা আলোচনায় উঠে এসেছে। নানা সময়ে নানা ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাহত করার অভিযোগও উঠেছে। এ সবই বৈষম্যমূলক আচরণ। কারণ ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিকেরই সমান অধিকার।
সামাজিক অঙ্গনে অসমতা শুধু সামষ্টিক পর্যায়েই বিরাজ করে না, একধরনের বৈষম্য ব্যষ্টিক ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। যেমন—পরিবারের মধ্যে মেয়েদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, খাদ্য গ্রহণ, মত প্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আর্থিক স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়। বয়োকনিষ্ঠদের মতামতও পরিবারের মধ্যে উপেক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের মধ্যে নানা মাত্রিকতার বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়।
সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বহু বৈষম্য লক্ষণীয়। নগর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সরকার যতটা উদ্গ্রীব থাকে, গ্রামীণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ অনেক সময় ততটা পরিলক্ষিত হয় না। বহু ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্প ও সংস্কৃতিকে মূলধারায় প্রবিষ্ট করার জন্য একটি অনধিকার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তেমনিভাবে যেসব অঞ্চলে এসব গোষ্ঠী বসবাস করে থাকে, সেখানকার শিক্ষালয়ে শিক্ষা প্রদান সেসব গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় না হয়ে বাংলা মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এ-ও লক্ষ করা গেছে যে, ওই সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য, সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় না। এসব মিলিয়েই একটি সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাদের পরিপ্রেক্ষিতে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি সমাজে সমৃদ্ধ ও বেগবান করে।
বাংলাদেশের সমাজে মানসিক বৈষম্যের কথাও বহুজন বলেছেন। আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীকে হীন বলে মনে করা হয় এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাদের অবস্থাকে আমরা সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখি না, তাদের বিষয়গুলো আমরা সঠিকভাবে বিবেচনা করি না। তেমনিভাবে মানুষের প্রতি আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। আমরা বহু সময়ে মানুষের ন্যূনতম সম্মানটুকু দিই না, যদি সে হয় দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ।
শেষ কথা হচ্ছে, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হলে তার একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিত থাকতে হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যক্তি-মানুষের একটা দায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। আমাদের চেতনায় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমাদের আচার-আচরণে, আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যেকে যদি সমতার প্রতি শ্রদ্ধাবান হই, তাহলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সেটা একটি বিরাট শক্তি হিসেবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হতে হবে সমাজের কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম।
লেখক: সেলিম জাহান
অর্থনীতিবিদ

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বারবার উঠে এসেছে।
অসমতা ও বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, সামাজিক ন্যায্যতার দলন ও অন্যায্য পক্ষপাত। অসমতা প্রতিফলিত হতে পারে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক অঙ্গনে। বৈষম্য ঘটে ঘরে-বাইরে, দেশজ, আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে। অসমতা নিরীক্ষণ করতে কিংবা বৈষম্য নিরূপণে আমরা প্রায়ই ফলাফলের দিকে তাকাই যেমন—আয়বৈষম্য কিংবা সম্পদের অসমতা। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে যে বৈষম্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে, সেটা হচ্ছে ‘সুযোগের বৈষম্য’ যেমন—শিক্ষায় কিংবা স্বাস্থ্যসেবায় অথবা তথ্যপ্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে আয় ও সম্পদের অসমতা সর্বজনবিদিত। সত্যিকার অর্থে, এই অসমতা বোঝার জন্য উপাত্তের প্রয়োজন হয় না, ঢাকা শহরের পথে-ঘাটে বেরোলেই তা চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কিংবা অর্থ পাচারের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে অর্থ ও বিত্ত সামান্য কিছু মানুষ ও পরিবারে কুক্ষিগত। মোটাদাগের উপাত্তের দিকে যদি তাকাই, তাহলে আয়ের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ যেখানে দেশের নিম্নতম ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর যায়, সেখানে সমাজের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করে দেশজ আয়ের ৩৮ শতাংশ। ভোগের ক্ষেত্রে যেখানে নিম্নতম ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে মাসিক মাথাপিছু ব্যয় ২ হাজার ১২২ টাকা, সেখানে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে সে সংখ্যাটি হচ্ছে ৯ হাজার ১৩৭ টাকা।
মানব উন্নয়নের নানা সূচকেও এমন বৈষম্য বিদ্যমান। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেখানে প্রতি হাজারে ৪৯, সেখানে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা প্রতি হাজারে ২৫। তেমনিভাবে, দেশের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ৮৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষিত নার্সের হাতে। অন্যদিকে, নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির মাত্র ৩২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের দ্বারা। আঞ্চলিক বৈষম্যের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, বরিশালে সাক্ষরতার হার যেখানে ৭৫ শতাংশ, সিলেটে সেটা ৬০ শতাংশ। তেমনিভাবে পরিবেশ নাজুক জেলাগুলোতে বিভিন্ন পীড়ার প্রাদুর্ভাব অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। এসব অঞ্চলে মোট গৃহস্থালির ৪৫ শতাংশই নানা পীড়ার শিকার।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগে বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। শিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি ধারা, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম, বিত্তবান ও বিত্তহীনদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রবণতার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগে একটি বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। দিনের পর দিন কোনো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোটা-ব্যবস্থা বজায় রেখে শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে অসমতা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। এসবের প্রতিফলন ঘটেছে শিক্ষা অর্জনের ফলাফলে এবং তারপরে কর্ম নিয়োজনে। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে ত্রিধারা ব্যবস্থা বজায় রেখে স্বাস্থ্য সুযোগের ক্ষেত্রেও একটি বিশাল বৈষম্যের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ফলে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সেবার পরিমাণ যেমন অপ্রতুল, তেমনি তার মানও খুব নিচু। সাধারণ মানুষই সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসুবিধা পায় না। অন্যদিকে বিত্তবানেরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়।
তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির তিন-চতুর্থাংশের যেখানে আন্তর্যোগ সেবায় লভ্যতা আছে, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সংখ্যাটি হচ্ছে মাত্র ৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলের ৫৫ শতাংশ মানুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের তেমন মানুষের অনুপাত হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৩ শতাংশ ঘরে কম্পিউটার আছে এবং ৭৮ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জানে না।
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যেও ফলাফল ও সুযোগের মধ্যে অসমতা রয়েছে। যেমন—উচ্চতম শিক্ষা স্তরে নারীর অন্তর্ভুক্তির হার যেখানে ১৭ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে ২৪ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণের হার যেখানে ৮১ শতাংশ, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম স্তরের নির্বাহীদের মধ্যে নারীর অনুপাত হচ্ছে মাত্র ১২ শতাংশ। বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর মধ্যে ফারাক হচ্ছে ২৯ শতাংশ। আন্তর্যোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৩৩ শতাংশ পুরুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, নারীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংখ্যা হচ্ছে ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বৈষম্য অত্যন্ত গভীর—এই সত্য অতীত ও নিকট অতীতে বারবারই পরিলক্ষিত হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা বিতর্কের জায়গাটি সরকারি দল কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে দখল করে রাখে এবং বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ড নিষ্পেষিত হয়। প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না এবং সেই জায়গায় সরকারি দল একচ্ছত্রভাবে বিরাজ করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা যদি বলি, তাহলে সেখানে যেকোনো রকমের বিকল্প মতকে শায়েস্তা করেছে ক্ষমতাসীন দল। জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ, অন্যান্য পেশাজীবী, সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।
দেশের নীতিমালা নির্ধারণে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সেখানে বিত্ত ও ক্ষমতার পক্ষপাত ছিল সুস্পষ্ট। দরিদ্র, প্রান্তিক গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও চাওয়া-পাওয়া কখনো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। নানা সময়ে লোকদেখানো অংশগ্রহণমূলক আলাপ-আলোচনার একটা ভাব তৈরি করা হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলো কার্যকর কোনো জন অংশগ্রহণ ছিল না। নারী জনগোষ্ঠী নানা সময়ে কথা বলেছে বটে, কিন্তু কখনোই তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
দেশের যে জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক অঙ্গনের কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রে প্রান্তিক সীমায় রেখে দেওয়া হয়েছিল, তারা হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। তাদের আমরা সর্বদা দেশের ভবিষ্যৎ করে রেখে দিয়েছি, তাদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি। তরুণ সমাজের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তাদের সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতাকে আমাদের সমাজ বিবর্তন ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারিনি। তরুণ শক্তির এই অপচয় বৈষম্যের এক বিশাল নেতিবাচক ফলাফল।
সামাজিক দিক থেকে ধনী-দরিদ্র, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, আশরাফ-আতরাফের বৈষম্য আমাদের সমাজে আজও বিদ্যমান। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত সম্পদে, ঋণসুবিধায়, তথ্য ও প্রযুক্তিসেবায়। ফলে কর্মনিয়োজন এবং আয়ের দিক থেকেও তারা বঞ্চনার শিকার হয়। পরিবেশ-নাজুক অঞ্চলে যেসব প্রান্তিক মানুষের বাস, তারাও ক্রমবর্ধমান অসমতার শিকার হয়। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যকার নিম্নবর্ণের মানুষ এবং আশরাফ-আতরাফদের মধ্যে আতরাফেরা সামাজিক বৈষম্যমূলক একটি স্থানে অবস্থান করে। সামাজিক দিক থেকে বাংলাদেশে নগর ও পল্লির মধ্যকার বৈষম্যের কথা সুবিদিত।
সমাজ অঙ্গনে ধর্মীয় বৈষম্যের কথা বারবার নানা আলোচনায় উঠে এসেছে। নানা সময়ে নানা ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাহত করার অভিযোগও উঠেছে। এ সবই বৈষম্যমূলক আচরণ। কারণ ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিকেরই সমান অধিকার।
সামাজিক অঙ্গনে অসমতা শুধু সামষ্টিক পর্যায়েই বিরাজ করে না, একধরনের বৈষম্য ব্যষ্টিক ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। যেমন—পরিবারের মধ্যে মেয়েদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, খাদ্য গ্রহণ, মত প্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আর্থিক স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়। বয়োকনিষ্ঠদের মতামতও পরিবারের মধ্যে উপেক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের মধ্যে নানা মাত্রিকতার বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়।
সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বহু বৈষম্য লক্ষণীয়। নগর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সরকার যতটা উদ্গ্রীব থাকে, গ্রামীণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ অনেক সময় ততটা পরিলক্ষিত হয় না। বহু ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্প ও সংস্কৃতিকে মূলধারায় প্রবিষ্ট করার জন্য একটি অনধিকার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তেমনিভাবে যেসব অঞ্চলে এসব গোষ্ঠী বসবাস করে থাকে, সেখানকার শিক্ষালয়ে শিক্ষা প্রদান সেসব গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় না হয়ে বাংলা মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এ-ও লক্ষ করা গেছে যে, ওই সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য, সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় না। এসব মিলিয়েই একটি সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাদের পরিপ্রেক্ষিতে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি সমাজে সমৃদ্ধ ও বেগবান করে।
বাংলাদেশের সমাজে মানসিক বৈষম্যের কথাও বহুজন বলেছেন। আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীকে হীন বলে মনে করা হয় এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাদের অবস্থাকে আমরা সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখি না, তাদের বিষয়গুলো আমরা সঠিকভাবে বিবেচনা করি না। তেমনিভাবে মানুষের প্রতি আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। আমরা বহু সময়ে মানুষের ন্যূনতম সম্মানটুকু দিই না, যদি সে হয় দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ।
শেষ কথা হচ্ছে, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হলে তার একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিত থাকতে হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যক্তি-মানুষের একটা দায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। আমাদের চেতনায় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমাদের আচার-আচরণে, আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যেকে যদি সমতার প্রতি শ্রদ্ধাবান হই, তাহলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সেটা একটি বিরাট শক্তি হিসেবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হতে হবে সমাজের কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম।
লেখক: সেলিম জাহান
অর্থনীতিবিদ
সেলিম জাহান

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বারবার উঠে এসেছে।
অসমতা ও বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, সামাজিক ন্যায্যতার দলন ও অন্যায্য পক্ষপাত। অসমতা প্রতিফলিত হতে পারে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক অঙ্গনে। বৈষম্য ঘটে ঘরে-বাইরে, দেশজ, আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে। অসমতা নিরীক্ষণ করতে কিংবা বৈষম্য নিরূপণে আমরা প্রায়ই ফলাফলের দিকে তাকাই যেমন—আয়বৈষম্য কিংবা সম্পদের অসমতা। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে যে বৈষম্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে, সেটা হচ্ছে ‘সুযোগের বৈষম্য’ যেমন—শিক্ষায় কিংবা স্বাস্থ্যসেবায় অথবা তথ্যপ্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে আয় ও সম্পদের অসমতা সর্বজনবিদিত। সত্যিকার অর্থে, এই অসমতা বোঝার জন্য উপাত্তের প্রয়োজন হয় না, ঢাকা শহরের পথে-ঘাটে বেরোলেই তা চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কিংবা অর্থ পাচারের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে অর্থ ও বিত্ত সামান্য কিছু মানুষ ও পরিবারে কুক্ষিগত। মোটাদাগের উপাত্তের দিকে যদি তাকাই, তাহলে আয়ের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ যেখানে দেশের নিম্নতম ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর যায়, সেখানে সমাজের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করে দেশজ আয়ের ৩৮ শতাংশ। ভোগের ক্ষেত্রে যেখানে নিম্নতম ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে মাসিক মাথাপিছু ব্যয় ২ হাজার ১২২ টাকা, সেখানে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে সে সংখ্যাটি হচ্ছে ৯ হাজার ১৩৭ টাকা।
মানব উন্নয়নের নানা সূচকেও এমন বৈষম্য বিদ্যমান। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেখানে প্রতি হাজারে ৪৯, সেখানে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা প্রতি হাজারে ২৫। তেমনিভাবে, দেশের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ৮৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষিত নার্সের হাতে। অন্যদিকে, নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির মাত্র ৩২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের দ্বারা। আঞ্চলিক বৈষম্যের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, বরিশালে সাক্ষরতার হার যেখানে ৭৫ শতাংশ, সিলেটে সেটা ৬০ শতাংশ। তেমনিভাবে পরিবেশ নাজুক জেলাগুলোতে বিভিন্ন পীড়ার প্রাদুর্ভাব অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। এসব অঞ্চলে মোট গৃহস্থালির ৪৫ শতাংশই নানা পীড়ার শিকার।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগে বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। শিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি ধারা, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম, বিত্তবান ও বিত্তহীনদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রবণতার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগে একটি বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। দিনের পর দিন কোনো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোটা-ব্যবস্থা বজায় রেখে শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে অসমতা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। এসবের প্রতিফলন ঘটেছে শিক্ষা অর্জনের ফলাফলে এবং তারপরে কর্ম নিয়োজনে। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে ত্রিধারা ব্যবস্থা বজায় রেখে স্বাস্থ্য সুযোগের ক্ষেত্রেও একটি বিশাল বৈষম্যের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ফলে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সেবার পরিমাণ যেমন অপ্রতুল, তেমনি তার মানও খুব নিচু। সাধারণ মানুষই সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসুবিধা পায় না। অন্যদিকে বিত্তবানেরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়।
তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির তিন-চতুর্থাংশের যেখানে আন্তর্যোগ সেবায় লভ্যতা আছে, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সংখ্যাটি হচ্ছে মাত্র ৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলের ৫৫ শতাংশ মানুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের তেমন মানুষের অনুপাত হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৩ শতাংশ ঘরে কম্পিউটার আছে এবং ৭৮ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জানে না।
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যেও ফলাফল ও সুযোগের মধ্যে অসমতা রয়েছে। যেমন—উচ্চতম শিক্ষা স্তরে নারীর অন্তর্ভুক্তির হার যেখানে ১৭ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে ২৪ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণের হার যেখানে ৮১ শতাংশ, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম স্তরের নির্বাহীদের মধ্যে নারীর অনুপাত হচ্ছে মাত্র ১২ শতাংশ। বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর মধ্যে ফারাক হচ্ছে ২৯ শতাংশ। আন্তর্যোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৩৩ শতাংশ পুরুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, নারীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংখ্যা হচ্ছে ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বৈষম্য অত্যন্ত গভীর—এই সত্য অতীত ও নিকট অতীতে বারবারই পরিলক্ষিত হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা বিতর্কের জায়গাটি সরকারি দল কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে দখল করে রাখে এবং বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ড নিষ্পেষিত হয়। প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না এবং সেই জায়গায় সরকারি দল একচ্ছত্রভাবে বিরাজ করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা যদি বলি, তাহলে সেখানে যেকোনো রকমের বিকল্প মতকে শায়েস্তা করেছে ক্ষমতাসীন দল। জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ, অন্যান্য পেশাজীবী, সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।
দেশের নীতিমালা নির্ধারণে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সেখানে বিত্ত ও ক্ষমতার পক্ষপাত ছিল সুস্পষ্ট। দরিদ্র, প্রান্তিক গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও চাওয়া-পাওয়া কখনো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। নানা সময়ে লোকদেখানো অংশগ্রহণমূলক আলাপ-আলোচনার একটা ভাব তৈরি করা হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলো কার্যকর কোনো জন অংশগ্রহণ ছিল না। নারী জনগোষ্ঠী নানা সময়ে কথা বলেছে বটে, কিন্তু কখনোই তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
দেশের যে জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক অঙ্গনের কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রে প্রান্তিক সীমায় রেখে দেওয়া হয়েছিল, তারা হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। তাদের আমরা সর্বদা দেশের ভবিষ্যৎ করে রেখে দিয়েছি, তাদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি। তরুণ সমাজের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তাদের সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতাকে আমাদের সমাজ বিবর্তন ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারিনি। তরুণ শক্তির এই অপচয় বৈষম্যের এক বিশাল নেতিবাচক ফলাফল।
সামাজিক দিক থেকে ধনী-দরিদ্র, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, আশরাফ-আতরাফের বৈষম্য আমাদের সমাজে আজও বিদ্যমান। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত সম্পদে, ঋণসুবিধায়, তথ্য ও প্রযুক্তিসেবায়। ফলে কর্মনিয়োজন এবং আয়ের দিক থেকেও তারা বঞ্চনার শিকার হয়। পরিবেশ-নাজুক অঞ্চলে যেসব প্রান্তিক মানুষের বাস, তারাও ক্রমবর্ধমান অসমতার শিকার হয়। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যকার নিম্নবর্ণের মানুষ এবং আশরাফ-আতরাফদের মধ্যে আতরাফেরা সামাজিক বৈষম্যমূলক একটি স্থানে অবস্থান করে। সামাজিক দিক থেকে বাংলাদেশে নগর ও পল্লির মধ্যকার বৈষম্যের কথা সুবিদিত।
সমাজ অঙ্গনে ধর্মীয় বৈষম্যের কথা বারবার নানা আলোচনায় উঠে এসেছে। নানা সময়ে নানা ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাহত করার অভিযোগও উঠেছে। এ সবই বৈষম্যমূলক আচরণ। কারণ ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিকেরই সমান অধিকার।
সামাজিক অঙ্গনে অসমতা শুধু সামষ্টিক পর্যায়েই বিরাজ করে না, একধরনের বৈষম্য ব্যষ্টিক ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। যেমন—পরিবারের মধ্যে মেয়েদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, খাদ্য গ্রহণ, মত প্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আর্থিক স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়। বয়োকনিষ্ঠদের মতামতও পরিবারের মধ্যে উপেক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের মধ্যে নানা মাত্রিকতার বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়।
সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বহু বৈষম্য লক্ষণীয়। নগর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সরকার যতটা উদ্গ্রীব থাকে, গ্রামীণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ অনেক সময় ততটা পরিলক্ষিত হয় না। বহু ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্প ও সংস্কৃতিকে মূলধারায় প্রবিষ্ট করার জন্য একটি অনধিকার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তেমনিভাবে যেসব অঞ্চলে এসব গোষ্ঠী বসবাস করে থাকে, সেখানকার শিক্ষালয়ে শিক্ষা প্রদান সেসব গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় না হয়ে বাংলা মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এ-ও লক্ষ করা গেছে যে, ওই সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য, সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় না। এসব মিলিয়েই একটি সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাদের পরিপ্রেক্ষিতে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি সমাজে সমৃদ্ধ ও বেগবান করে।
বাংলাদেশের সমাজে মানসিক বৈষম্যের কথাও বহুজন বলেছেন। আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীকে হীন বলে মনে করা হয় এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাদের অবস্থাকে আমরা সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখি না, তাদের বিষয়গুলো আমরা সঠিকভাবে বিবেচনা করি না। তেমনিভাবে মানুষের প্রতি আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। আমরা বহু সময়ে মানুষের ন্যূনতম সম্মানটুকু দিই না, যদি সে হয় দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ।
শেষ কথা হচ্ছে, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হলে তার একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিত থাকতে হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যক্তি-মানুষের একটা দায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। আমাদের চেতনায় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমাদের আচার-আচরণে, আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যেকে যদি সমতার প্রতি শ্রদ্ধাবান হই, তাহলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সেটা একটি বিরাট শক্তি হিসেবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হতে হবে সমাজের কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম।
লেখক: সেলিম জাহান
অর্থনীতিবিদ

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বারবার উঠে এসেছে।
অসমতা ও বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, সামাজিক ন্যায্যতার দলন ও অন্যায্য পক্ষপাত। অসমতা প্রতিফলিত হতে পারে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক অঙ্গনে। বৈষম্য ঘটে ঘরে-বাইরে, দেশজ, আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে। অসমতা নিরীক্ষণ করতে কিংবা বৈষম্য নিরূপণে আমরা প্রায়ই ফলাফলের দিকে তাকাই যেমন—আয়বৈষম্য কিংবা সম্পদের অসমতা। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে যে বৈষম্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠেছে, সেটা হচ্ছে ‘সুযোগের বৈষম্য’ যেমন—শিক্ষায় কিংবা স্বাস্থ্যসেবায় অথবা তথ্যপ্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে আয় ও সম্পদের অসমতা সর্বজনবিদিত। সত্যিকার অর্থে, এই অসমতা বোঝার জন্য উপাত্তের প্রয়োজন হয় না, ঢাকা শহরের পথে-ঘাটে বেরোলেই তা চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কিংবা অর্থ পাচারের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে অর্থ ও বিত্ত সামান্য কিছু মানুষ ও পরিবারে কুক্ষিগত। মোটাদাগের উপাত্তের দিকে যদি তাকাই, তাহলে আয়ের মাপকাঠিতে বাংলাদেশের মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ যেখানে দেশের নিম্নতম ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর যায়, সেখানে সমাজের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষ ভোগ করে দেশজ আয়ের ৩৮ শতাংশ। ভোগের ক্ষেত্রে যেখানে নিম্নতম ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে মাসিক মাথাপিছু ব্যয় ২ হাজার ১২২ টাকা, সেখানে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ গৃহস্থালিতে সে সংখ্যাটি হচ্ছে ৯ হাজার ১৩৭ টাকা।
মানব উন্নয়নের নানা সূচকেও এমন বৈষম্য বিদ্যমান। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশু মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেখানে প্রতি হাজারে ৪৯, সেখানে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা প্রতি হাজারে ২৫। তেমনিভাবে, দেশের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ৮৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষিত নার্সের হাতে। অন্যদিকে, নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির মাত্র ৩২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের দ্বারা। আঞ্চলিক বৈষম্যের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, বরিশালে সাক্ষরতার হার যেখানে ৭৫ শতাংশ, সিলেটে সেটা ৬০ শতাংশ। তেমনিভাবে পরিবেশ নাজুক জেলাগুলোতে বিভিন্ন পীড়ার প্রাদুর্ভাব অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। এসব অঞ্চলে মোট গৃহস্থালির ৪৫ শতাংশই নানা পীড়ার শিকার।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুযোগে বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। শিক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি ধারা, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম, বিত্তবান ও বিত্তহীনদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি প্রবণতার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগে একটি বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। দিনের পর দিন কোনো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোটা-ব্যবস্থা বজায় রেখে শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে অসমতা আরও বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। এসবের প্রতিফলন ঘটেছে শিক্ষা অর্জনের ফলাফলে এবং তারপরে কর্ম নিয়োজনে। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে ত্রিধারা ব্যবস্থা বজায় রেখে স্বাস্থ্য সুযোগের ক্ষেত্রেও একটি বিশাল বৈষম্যের দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ফলে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সেবার পরিমাণ যেমন অপ্রতুল, তেমনি তার মানও খুব নিচু। সাধারণ মানুষই সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসুবিধা পায় না। অন্যদিকে বিত্তবানেরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়।
তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ গৃহস্থালির তিন-চতুর্থাংশের যেখানে আন্তর্যোগ সেবায় লভ্যতা আছে, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ গৃহস্থালির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সংখ্যাটি হচ্ছে মাত্র ৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলের ৫৫ শতাংশ মানুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের তেমন মানুষের অনুপাত হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৩ শতাংশ ঘরে কম্পিউটার আছে এবং ৭৮ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জানে না।
বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মধ্যেও ফলাফল ও সুযোগের মধ্যে অসমতা রয়েছে। যেমন—উচ্চতম শিক্ষা স্তরে নারীর অন্তর্ভুক্তির হার যেখানে ১৭ শতাংশ, সেখানে পুরুষদের মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে ২৪ শতাংশ। দেশের শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণের হার যেখানে ৮১ শতাংশ, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম স্তরের নির্বাহীদের মধ্যে নারীর অনুপাত হচ্ছে মাত্র ১২ শতাংশ। বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুরুষ-নারীর মধ্যে ফারাক হচ্ছে ২৯ শতাংশ। আন্তর্যোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৩৩ শতাংশ পুরুষ আন্তর্যোগ ব্যবহার করে, নারীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংখ্যা হচ্ছে ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বৈষম্য অত্যন্ত গভীর—এই সত্য অতীত ও নিকট অতীতে বারবারই পরিলক্ষিত হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা বিতর্কের জায়গাটি সরকারি দল কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে দখল করে রাখে এবং বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ড নিষ্পেষিত হয়। প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না এবং সেই জায়গায় সরকারি দল একচ্ছত্রভাবে বিরাজ করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা যদি বলি, তাহলে সেখানে যেকোনো রকমের বিকল্প মতকে শায়েস্তা করেছে ক্ষমতাসীন দল। জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ, অন্যান্য পেশাজীবী, সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।
দেশের নীতিমালা নির্ধারণে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সেখানে বিত্ত ও ক্ষমতার পক্ষপাত ছিল সুস্পষ্ট। দরিদ্র, প্রান্তিক গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও চাওয়া-পাওয়া কখনো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। নানা সময়ে লোকদেখানো অংশগ্রহণমূলক আলাপ-আলোচনার একটা ভাব তৈরি করা হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলো কার্যকর কোনো জন অংশগ্রহণ ছিল না। নারী জনগোষ্ঠী নানা সময়ে কথা বলেছে বটে, কিন্তু কখনোই তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
দেশের যে জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক অঙ্গনের কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রে প্রান্তিক সীমায় রেখে দেওয়া হয়েছিল, তারা হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। তাদের আমরা সর্বদা দেশের ভবিষ্যৎ করে রেখে দিয়েছি, তাদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি। তরুণ সমাজের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তাদের সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতাকে আমাদের সমাজ বিবর্তন ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারিনি। তরুণ শক্তির এই অপচয় বৈষম্যের এক বিশাল নেতিবাচক ফলাফল।
সামাজিক দিক থেকে ধনী-দরিদ্র, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, আশরাফ-আতরাফের বৈষম্য আমাদের সমাজে আজও বিদ্যমান। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত সম্পদে, ঋণসুবিধায়, তথ্য ও প্রযুক্তিসেবায়। ফলে কর্মনিয়োজন এবং আয়ের দিক থেকেও তারা বঞ্চনার শিকার হয়। পরিবেশ-নাজুক অঞ্চলে যেসব প্রান্তিক মানুষের বাস, তারাও ক্রমবর্ধমান অসমতার শিকার হয়। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যকার নিম্নবর্ণের মানুষ এবং আশরাফ-আতরাফদের মধ্যে আতরাফেরা সামাজিক বৈষম্যমূলক একটি স্থানে অবস্থান করে। সামাজিক দিক থেকে বাংলাদেশে নগর ও পল্লির মধ্যকার বৈষম্যের কথা সুবিদিত।
সমাজ অঙ্গনে ধর্মীয় বৈষম্যের কথা বারবার নানা আলোচনায় উঠে এসেছে। নানা সময়ে নানা ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাহত করার অভিযোগও উঠেছে। এ সবই বৈষম্যমূলক আচরণ। কারণ ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিকেরই সমান অধিকার।
সামাজিক অঙ্গনে অসমতা শুধু সামষ্টিক পর্যায়েই বিরাজ করে না, একধরনের বৈষম্য ব্যষ্টিক ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। যেমন—পরিবারের মধ্যে মেয়েদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, খাদ্য গ্রহণ, মত প্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আর্থিক স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়। বয়োকনিষ্ঠদের মতামতও পরিবারের মধ্যে উপেক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের মধ্যে নানা মাত্রিকতার বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়।
সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বহু বৈষম্য লক্ষণীয়। নগর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সরকার যতটা উদ্গ্রীব থাকে, গ্রামীণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ অনেক সময় ততটা পরিলক্ষিত হয় না। বহু ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিল্প ও সংস্কৃতিকে মূলধারায় প্রবিষ্ট করার জন্য একটি অনধিকার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তেমনিভাবে যেসব অঞ্চলে এসব গোষ্ঠী বসবাস করে থাকে, সেখানকার শিক্ষালয়ে শিক্ষা প্রদান সেসব গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় না হয়ে বাংলা মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এ-ও লক্ষ করা গেছে যে, ওই সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য, সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় না। এসব মিলিয়েই একটি সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাদের পরিপ্রেক্ষিতে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি সমাজে সমৃদ্ধ ও বেগবান করে।
বাংলাদেশের সমাজে মানসিক বৈষম্যের কথাও বহুজন বলেছেন। আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীকে হীন বলে মনে করা হয় এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাদের অবস্থাকে আমরা সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখি না, তাদের বিষয়গুলো আমরা সঠিকভাবে বিবেচনা করি না। তেমনিভাবে মানুষের প্রতি আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। আমরা বহু সময়ে মানুষের ন্যূনতম সম্মানটুকু দিই না, যদি সে হয় দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ।
শেষ কথা হচ্ছে, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হলে তার একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিত থাকতে হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যক্তি-মানুষের একটা দায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। আমাদের চেতনায় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমাদের আচার-আচরণে, আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যেকে যদি সমতার প্রতি শ্রদ্ধাবান হই, তাহলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সেটা একটি বিরাট শক্তি হিসেবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হতে হবে সমাজের কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম।
লেখক: সেলিম জাহান
অর্থনীতিবিদ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বার
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বার
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বার
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আজ বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। দেশের জনগণের এই প্রত্যাশা নতুন নয়। নানা মাত্রিকতায় বৈষম্যের শিকার হয়েই বাঙালি জনগোষ্ঠী পাকিস্তান আমলে সংগ্রাম করেছে, আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন, সমতার বিষয়, সাম্যের কথা বার
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫