Ajker Patrika

জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের আসন্ন রাজনৈতিক জটিলতা

ড. মঞ্জুরে খোদা
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪৬
জুলাই অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের আসন্ন রাজনৈতিক জটিলতা

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতির এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা তৈরি করে। প্রথমত এই অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়নি, হয়েছে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এবং অতি অল্প সময়ে। সে কারণে এই সরকারের ওপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগের নৈতিক অধিকার নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেনাবাহিনী মৌনতা অবলম্বন করে তাদের সমর্থন ও সাহস যুগিয়েছে। সুশীল সমাজ, এনজিওপাড়া, বিদেশি সংস্থার পরোক্ষ ভূমিকার কথাও শোনা যায়।

অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারপ্রধান হয়েছেন বিশ্বখ্যাত প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, যাঁর দেশ-বিদেশে বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব আছে। সুতরাং ব্যক্তি হিসেবেও তিনি কোনো দুর্বল ব্যক্তি নন। তাঁকে কোনো দল ও নেতা-নেত্রীকে সমীহ ও তোয়াজ করে চলতে হবে, এমনটা মনে হয় না। 
 
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কী অবস্থা? 
দলটির নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়ন করলে দলটির নেতা-কর্মীরাও জীবন বাঁচাতে আত্মগোপন করেন, অনেকে বিদেশে পালিয়ে যান, কেউ কেউ পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন, অনেককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, অনেকে খুনও হন। মোটকথা দলটি এখন অস্তিত্বের সংকটে নিমজ্জিত। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা ও মার্কিন দেশে থাকা তাঁর ছেলে জয়ের বক্তব্য দলটির নেতা-কর্মীদের যতটা না স্বস্তির কারণ হয়েছে, তারচেয়ে অধিক অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। 

আওয়ামী লীগ এখন সারা দেশে ছাত্র-জনতার ক্রোধ ও প্রতিহিংসার কবলে। তারা এখন ফের কীভাবে রাজনীতিতে সংগঠিত হবে, ঘুরে দাঁড়াবে, তার হয়তো কৌশল ভাবছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে আজকের অবস্থাটাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য শেষ কথা—এমনটা নয়। বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়তো এই অবস্থা শিগগির পাল্টে দিতে পারে। কীভাবে?

ভবিষ্যৎ ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো পক্ষ তাদের নিজ স্বার্থে তাদের সঙ্গে কোনো গোপন আঁতাত ও বোঝাপড়ায় আসতে পারে। সেটা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 
 
বিএনপি কি তাহলে ক্ষমতায় যাচ্ছে?  
জুলাই অভ্যুত্থান বিএনপির জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তাদের জন্য মাঠটি ফাঁকা হয়ে যায়। সরকার পতনের পরপরই সর্বত্রই পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, সর্বত্র তাঁদের মহড়াও শুরু হয়ে যায়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে শাসক দলের ভাবভঙ্গি আমেজ চলে আসে। কোণঠাসা ও নীরব থাকা সমর্থকেরাও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু  অজানা বাস্তবতায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমীকরণ কি এতটা সরল ও সহজ হবে তাঁদের জন্য? 

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভাষণে অনেক কথা বলেছেন। বিএনপি তাতে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তাদের নেতা মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ (রূপরেখা) দেবেন। আমরা গণতন্ত্রে উত্তরণের সেই রোডম্যাপ ওনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি। ধোঁয়াশা এখনো পরিষ্কার হয়নি।’ ইতিমধ্যে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ১/১১-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।  

বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি দল, এটা কোনো বিপ্লবী বা শক্ত নীতি-আদর্শের সুশৃঙ্খল দল নয়। তাই আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়াই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাদের ক্ষমতায়ন যত বিলম্ব হবে, সংকট ততই বাড়বে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতা-কর্মীদের তারা কীভাবে, কী বলে নিয়ন্ত্রণ করবে? তাঁরা ইতিমধ্যে দখল, চাঁদাবাজি, মাস্তানি শুরু করে দিয়েছেন। হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে গোপনে-প্রকাশ্যে লেনদেন চলছে। নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি হলে তা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই দলটির জন্য সুখকর হবে না। অতএব তাদের দাবি দ্রুত নির্বাচন। বিএনপির নেতা তারেক রহমানও বিদেশ থেকে সে কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার যদি নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে অন্য কোনো পথে হাঁটে, তাহলে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা ছাড়া উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে তাদের মিত্র দরকার। কে হবে সেই মিত্র? 

বিএনপি ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে। দলটির ওপর দিয়ে গেছে অনেক বিপর্যয়। একটি বুর্জোয়া দল হিসেবে এখানে নীতিনৈতিকতার বিষয় সামান্যই কাজ করে, ব্যক্তিগত স্বার্থ-সুবিধাই প্রধান। এমতাবস্থায় ক্ষমতার বাইরে যত দিন থাকবে, তত তাদের জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে এই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে দখল, চাঁদাবাজি, ক্ষমতাবাজির অভিযোগ আসছে। সেটা নিশ্চয়ই তাদের ইমেজকে উজ্জ্বল করছে না। যদিও মূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু নেতা-কর্মীরা তার সামান্য অনুসরণ করছেন। 
 
জামায়াত-হেফাজত কি হবে বিএনপির জোটসঙ্গী, না একক শক্তি? 
জামায়াত ও ইসলামি দলগুলো বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে আছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কি তা বজায় থাকবে? ইতিমধ্যে ইসলামপন্থী দলগুলোর একটা বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা আলোচনা করেছে যে ইসলামপন্থী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলে ভবিষ্যতে তারাই সরকার গঠন করবে এবং ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে। তেমনটা হলে বিএনপির জন্য সেটা স্বস্তিকর নয়। কেননা বিএনপি ও ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে একটা ভোট ভাগের হিসাব আছে। তেমনটা হলে সেই অবস্থা কাকে সুবিধা করে দেবে?   

জুলাই অভ্যুত্থানের পর জামায়াত বেশ খোশ মেজাজে আছে। তাদের তৎপরতা, কর্মকাণ্ড চোখে পড়ার মতো। নেতৃত্বের বক্তব্যও শোভন ও নেতৃত্বসুলভ। তাঁদের কথাবার্তায় আত্মবিশ্বাস লক্ষ করা যাচ্ছে। জামায়াতই একমাত্র দল যাদের পরিষ্কার হিসাবে আছে প্রশাসনের কোথায় তাদের কী অবস্থা। এমনকি দল হিসেবেও সুশৃঙ্খল। তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েম করতে মরিয়া। তারা এই সময়টা উপযুক্ত মনে করছে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য। অতএব জামায়াত এখন নিজেদেরকে আর কারও জোটসঙ্গী না ভেবে হয়তো একক শক্তির কথা ভাবছে। 

জামায়াত-হেফাজত এখনই নির্বাচনের পক্ষে না, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে চায়। সেই সুযোগে তারা নিজেদের সামাজিক অবস্থান সংহত ও দলকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চায়। 
 
ইউনূসকে ঘিরে কি তৃতীয় কোনো শক্তির উত্থান ঘটবে? 
শোনা যাচ্ছে, প্রফেসর ইউনূসের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্রদের একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি হতে পারে। ইতিমধ্যে বিদেশি একটি সংবাদমাধ্যমে ছাত্রদের নতুন দল গঠনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁরা অবশ্য পরে জানিয়েছেন তাঁরা এখনই এমনটা ভাবছেন না। সেটা হলে নির্বাচনের আরেকটি শক্তি মাঠে চলে আসবে, তখন নির্বাচনী লড়াই হবে ৪ থেকে ৫টি ফ্রন্টে। যদি প্রধান দলগুলো এককভাবে নির্বাচন করে তাহলে নির্বাচনের হিসাব হবে হয়তো অন্য রকম। 

ইউনূসের পক্ষেও ব্যাপক জনসমর্থন আছে। মানুষ পরিবারকেন্দ্রিক দ্বি-দলীয় ধারার তাদের দুর্নীতি, দুঃশাসন, আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, সন্ত্রাস, সিন্ডিকেট দেখতে চায় না। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে একজন যোগ্য, শিক্ষিত, স্বীকৃত বিশ্বনন্দিত ব্যক্তির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক শক্তিও তাঁর প্রতি ইতিবাচক।       
 
জনগণই ঠিক করবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমাদের ক্ষমতায় থাকা নির্ভর করছে ছাত্র-জনতার ওপর। তিনি বলেছেন, ছাত্ররা আমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন, সুতরাং ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষাকে আমার গুরুত্ব দিতে হবে। তার মানে তাঁর ক্ষমতায় থাকা কি অনির্দিষ্ট নয়? তিনি বলেন, গত সরকারের সময় সব প্রতিষ্ঠান—বিচার, শাসন, আইন, নির্বাচন সব ধ্বংস হয়ে গেছে, সেগুলো ঠিক করতে হবে এবং তা করতে সময় লাগবে। সেটা করেই অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকার বিদায় নেবে। মিডিয়ার সঙ্গে এক আলাপে সাংবাদিক নূরুল কবীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে পর্যায়ের সংস্কারের কথা বলছে তা করতে তো প্রায় ২০ বছর সময় লাগবে। তত দিন কি রাজনৈতিক দলগুলো অপেক্ষা করবে? অরাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকবে? সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ থাকা উচিত। সেটা পরিষ্কার না থাকাই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির আরেক অধ্যায় ও গল্পের শুরু। 

প্রথমত, ইউনূস সাহেব কি কোনো ক্ষমতালোভী ব্যক্তি? সেটা হলে সেই সুযোগ তাঁর আগেই ছিল, তিনি নেননি। কিন্তু সেই অবস্থার বাস্তবতা ও মানুষের চাওয়ার ওপর পরিবর্তন হতে পারে না? 

তাঁকে ঘিরে যে সুশীল সমাজ, এনজিওপাড়া, ব্যবসায়ী, সেনাবাহিনী, পশ্চিমা শক্তি, আন্তর্জাতিক কমিউনিটি, ছাত্র শক্তির নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে, তারা সব ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে দৃশ্যমান একটি গুণগত পরিবর্তন আনার অঙ্গীকারের কথা বলছে। তার জন্য তারা ৩ থেকে ৬ বছরের একটা ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল। তার অধিক সময় নিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 
 
কেমন হতে পারে সেই নির্বাচন ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক সমীকরণ?   
এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক। 
১.    ভবিষ্যতে নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রধান দাবিদার কি বিএনপি? নির্বাচন কি বিএনপি একা করবে, না জোটগতভাবে? 
২.    জামায়াত ও ইসলামি দলগুলো কি নিজেরা আলাদা জোট করে নির্বাচন করবে? 
৩.    ড.  ইউনূসকে ঘিরে তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটবে কি না? 
৪.    আওয়ামী লীগ নির্বাচন করলে সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতিই বলবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে/প্রশ্নে তাদের অবস্থান কী হবে? 
৫.    ডান-বাম-মধ্য অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দল-জোট অবস্থান কী হবে সেটা খুব বড় বিষয় না হলেও তারাও নির্বাচনে থাকবে। 
৬.    একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এই সরকার কি সেনা সমর্থিত না ছাত্র সমর্থিত সরকার? ছাত্রদের শক্তির ও সাহসের উৎস তাহলে কী? 
৭.    আগামী নির্বাচন ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, সমীকরণ ও বোঝাপড়াও গুরুত্বপূর্ণ। 

(বাকি অংশ পড়ুন আগামীকাল) 

লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত