Ajker Patrika

থিসিস চুরি এবং আরও কিছু বাস্তবতা

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ৪১
থিসিস চুরি এবং আরও কিছু বাস্তবতা

এই তো কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক থিসিস চুরির অভিযোগে পদাবনতি পেলেন। তিনি তাঁর থিসিসের প্রায় পুরোটাই ঝেড়ে দিয়েছেন অন্যের লেখা থেকে। প্রমাণিত এই সত্য এতটাই ভয়াবহ যে পুরো শিক্ষক সমাজকেই তা লজ্জার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমাদের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এখন যে ধীরে ধীরে পড়াশোনা ছাড়া আর সব ব্যাপারেই বিখ্যাত হয়ে উঠছে, সেটাও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকাশিত খবর থেকেই টের পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের থিসিস চুরির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বেশ কয়েকবার এ রকম অভিযোগ উঠেছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, অভিযোগ সত্য। এ রকম এক বিপন্ন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষকেরা।

আমি কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে তাঁদের লিখতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পত্রিকায় সরাসরি এ বিষয়ে লেখার ব্যাপারে হয়তো সেলফ-সেন্সরশিপ কাজ করে। কিংবা এমনও হতে পারে, কাক কাকের মাংস খায় না। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হয়তো ভয়। কোথায় কী কথা বলতে গিয়ে সামাজিকভাবে হেয় হতে হবে, ক্ষমতা বা পেশিশক্তির খপ্পরে পড়ে মান-সম্মান যাবে—সেটাও হয়তো ভেবেছেন তাঁরা। কে আর সেই ঝুঁকি নিতে চাইবে? শিক্ষকদের এই নীরবতার একটা সামাজিক কারণ আছে। সমাজ সত্যকে কতটা মূল্য দিচ্ছে, সেটাই মূল আলোচনার বিষয় হতে পারে।

দুই
আমরা এখনই বলতে শুরু করতে পারি, এই শিক্ষকের জন্য শাস্তিটা কম হয়ে গেছে। আরও বড় শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল তাঁর। যিনি ওপরে ওঠার সিঁড়ির খোঁজ করতে গিয়ে বেছে নেন অন্ধকার শর্টকাট রাস্তা, তিনি তো শিক্ষক হওয়ারই উপযুক্ত নন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের চোখের সামনে একজন ‘চোর’কে দেখতে পাবে। তাঁর প্রতি কি সত্যিই সম্মান রাখতে পারবে তারা? একজন ছিঁচকে চোরের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য কোথায়? শিক্ষা নিয়ে চুরির ঘটনা তো বুঝিয়ে দেয়, সমাজের জন্য ছিঁচকে চোরের চেয়ে এই চোর অনেক বেশি অপকারী।

এ কথাগুলো বলার সময় আমরা একটা দিকে খেয়াল রাখি না। আমরা যে ছবিটি হতাশ চোখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে দেখছি, সে ছবিটি কিন্তু এককভাবে শিক্ষকদের ছবি নয়। দৃষ্টি একটু প্রসারিত করলে দেখা যাবে, সমাজের সর্বত্রই এই ধস নেমেছে। আমাদের মূল্যবোধ, চেতনা, নৈতিকতাসহ গর্ব করার মতো বিষয়গুলো থেকে ক্রমেই আমরা সরে যাচ্ছি। যে সেক্টরের দিকেই চোখ দিই না কেন, দেখতে পাব ভাটার টানে সব ভেসে যাচ্ছে সাগরে। পাড়ে পড়ে থাকছে শুধুই আবর্জনা। তাই সাংবাদিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকরিজীবী—তালিকা বাড়ানো যাবে যেমন ইচ্ছে, সবাই সেই ধস ‘উপভোগ’ করছেন। কখনো কখনো একেকটি সেক্টরে পচা দুর্গন্ধময় সংবাদের জন্ম হলেই আমরা কেবল বুঝতে পারি, সর্বনাশের শিকড়টা কত গভীরে পোঁতা আছে।

তিন
শিক্ষকের চৌর্যবৃত্তি নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন আলোচনা শুধু শিক্ষকতা পেশাতেই সীমাবদ্ধ রাখা যাক। একটু আগেই বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরেই চুরি, ঘুষ, পেশিশক্তির মর্যাদা বাড়ছে। যেহেতু বিনে পয়সায় এই কুরুচিপূর্ণ কাজগুলো করা যায় অনায়াসে, জীবন থেকে হটিয়ে দেওয়া যায় সুরুচি, মূল্যবোধ আর নৈতিকতাকে এবং তার বিনিময়ে সামাজিকভাবে ঘৃণিত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না, তাই ওই নষ্ট পচা গলা পথেই পা বাড়াচ্ছে মানুষ। ফলে ঘৃণিত কাজগুলোও আপগ্রেডেড হয়ে সম্মান পাচ্ছে।এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের শিক্ষা-চুরির বিষয়টি দেখতে হবে।স্কুলশিক্ষক, কলেজশিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেমন হবেন, কীভাবে পড়াবেন,

সেই পড়াশোনার আলো থেকে শিক্ষার্থী কীভাবে বেছে নেবে তার ভবিষ্যৎ চলার পথ, তা আমরা কমবেশি জানি। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হবেন উন্নত আদর্শের মানুষ। আমরা ৭৩-এর অধ্যাদেশের বিশদ বর্ণনা না করেও বলতে পারি, সেখানে শিক্ষকদের যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতি সম্মান থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পিএইচডি থিসিস চুরির দিকে যেতেন না। বিষয়ের একটু গভীরে গেলেই দেখা যাবে, ছাত্রজীবন থেকে আদর্শহীনভাবে গড়ে উঠলে, কেবল নম্বরকেই শিক্ষক হওয়ার মূল বিষয় মনে করা হলে, শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ‘মেধাবী ছাত্র’টি সহজেই অনৈতিকতার পথ বেছে নিতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রিস্ট্রাকচারিং সিস্টেমটা গড়ে উঠেছে, তার মধ্যেও রয়েছে অসৎ হওয়ার মন্ত্র। ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপক পদ নেই। পদ না থাকলেও কিছু ক্রাইটেরিয়া পূরণ করলে পদোন্নতি দিয়ে দেওয়া হয়। এই ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে একটা হলো ডিগ্রি। ফলে যেকোনোভাবে ডিগ্রি লাভের প্রতিযোগিতায় যখন একজন শিক্ষক নামেন, তখন তিনি চুরি করছেন নাকি ডাকাতি করছেন, সেটা তাঁর মনে থাকে না। পড়ানো এবং গবেষণা তো তখন লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হলো পদ। পদোন্নতি পাওয়া মানে জাতে ওঠা। ব্যস! সেই জাতে উঠতে গিয়েই বিনা আয়াসে প্রভাষক হন সহকারী অধ্যাপক, সহকারী হন সহযোগী, সহযোগী হন পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক!

জাহীদ রেজা নূরচার
আচ্ছা, পিএইচডি পাওয়ার ব্যাপার যদি এমন হয়? আমি কোনো পিএইচডি ছাত্রের সুপারভাইজার। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দুজন শিক্ষক বন্ধু আছেন, যাদের আমি বললাম, ‘বন্ধুরা, আমার ছাত্রটা তো পিএইচডি থিসিস লিখে শেষ করেছে। যা-ই লিখে থাকুক না, তোমরা এক্সটারনাল হয়ে এসো। আমরা তিনজন মিলে ওকে এই খেয়া পার করিয়ে দিই।’ পিএইচডি থিসিসগুলো মানসম্মত হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন করায় একজন অধ্যাপক এ চিত্রটি তুলে ধরলেন। পরিষ্কার হলো কিছু বিষয়। এটা অবশ্য সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কিন্তু ঘটছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কত কথাই না শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ যেন দিনে দিনে পরিহাসে পরিণত হচ্ছে। দলীয়করণ-প্রক্রিয়া এখন এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে একজন বশংবদ উপাচার্য না হলে আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলছে না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একজন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েক দফা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বেশ কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সেক্টরের শিক্ষকেরা চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে বসেন, তাঁর কথা শোনেন, তিনি পাঠদানে সক্ষম কি না, সেগুলো বিবেচনা করেন। কিন্তু আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে কী ধরনের ঘটনা ঘটে, তার প্রকাশ তো পত্রিকায় দেখা যায়। সরকারের আশীর্বাদে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ায় সরকারের প্রতি তো একটা দায় থাকে তাঁর। সেই দায় পূরণ করতে গিয়ে এবং দলবাজির চাপে পড়ে আমাদের উপাচার্যরা শিক্ষার পরিবেশ কতটা রক্ষা করতে পারেন, সে তো সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে।

পাঁচ
শিক্ষকদের রাজনীতিপ্রীতি এই অধঃপতনের একটা বড় কারণ। কোনো মানুষই রাজনীতির বাইরে নয়। কিন্তু শিক্ষকেরা যদি সরাসরি দলীয় রাজনীতি করেন, তাহলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি কথা বলতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে ভুল হোক, শুদ্ধ হোক, দলীয় পতাকা বহন করেই তাঁকে চলতে হয়। আমাদের দেশে নীল, সাদা, গোলাপি নানা রঙে নিজেকে রাঙিয়ে দিয়ে শিক্ষক যখন নির্বাচনের প্রচারণার মাঠে নামেন, তখনই বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার এতটা দূরত্ব সৃষ্টি হলো কেন, ক্লাসরুমের চেয়ে ক্লাব বা প্রশাসনিক পদ শিক্ষকের এত প্রিয় হয়ে উঠল কেন।

শিক্ষকের মূল কাজ জ্ঞানদান ও জ্ঞান সৃষ্টি করা, সে কথা আমরা ভুলতে বসেছি। অনেকেই যেমন শর্টকাটে কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন, কোনো জবাবদিহির ধার ধারছেন না, তেমনি শিক্ষকেরা তাঁদের মতো হয়ে নেপোর মতো ‘দই’ মারবেন না, তা হবে কেন? তিনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, একজন ব্যাংক কর্মকর্তা কোনো রহস্যজনক কোম্পানিকে হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফ্ল্যাটের মালিক বনে যাচ্ছেন, একজন সম্রাট ক্যাসিনো ব্যবসা করে কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন, হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার খবর প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকায়, কিন্তু এই পাচারকারীদের ধরা যাচ্ছে না, ছোঁয়া যাচ্ছে না—তখন নিজেকে নৈতিকভাবে ঠিক রাখা কতটা কঠিন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ছয়
মাথা পচে গেলে শরীর পচতে কতক্ষণ? আমাদের মাথার অসুখ সারাতে হলে সর্বদিকে নজর দিতে হবে। অনৈতিকতার প্রভুত্ব থেকে মুক্ত হতে হবে। সামগ্রিক এই পতন ঠেকাতে হবে সম্মিলিতভাবে। কিন্তু যে লোভ, যে সুবিধাবাদ আমাদের সমাজকে প্রায় গিলে খেয়েছে, সেই লোভ ও সুবিধাবাদকে এড়িয়ে নৈতিকতার জয় ঘোষণা করার মতো মনোবল ও আত্মিক শক্তি কি অবশিষ্ট আছে আমাদের?

অন্তত ধর্মীয় অবমাননার নাম করে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাটের ফন্দি, ভোগবাদী মানসিকতায় নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া, দেশপ্রেমহীন রাজনৈতিক পরিচয়ে নিজেকে সবল করা, পড়াশোনার ক্ষেত্রে শর্টকাট পথ বেছে নেওয়া, সংস্কৃতিজগতের মাফিয়া হওয়া ইত্যাদি ঘটনার দিকে তাকালে মনে হয় না, এই অরাজকতা থেকে আশু মুক্তি সম্ভব।

আমি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের কথা ইচ্ছে করেই সামনে আনলাম না। যা বলা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং উপাচার্য মিলে যে অশুভ ত্রিভুজ তৈরি হয়েছে, তা প্রকাশ পাবে। আর সেটা আমি না বললেও কারও জানতে বাকি নেই। 

লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত