Ajker Patrika

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে বিলাসী ভ্রমণ

উপসম্পাদকীয়
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২২, ০৯: ২৬
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে বিলাসী ভ্রমণ

৫ জুলাই ঢাকার এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে ‘মসলা চাষ শিখতে বিদেশ যাবেন ১৮ কর্মকর্তা’। ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সরকারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এই সফরের আয়োজন। এই সফরের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবে ৬৫ জন কর্মকর্তার বিদেশ সফর করার কথা বলা হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে এই সংখ্যা কমিয়ে ১৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন এ সফরে মোট ব্যয় হবে ৯০ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। একই সঙ্গে ১৮ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের প্রস্তাবটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে দৈনিক আজকের পত্রিকায় আরও একটি সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল গত ২৯ জুন। শিরোনামটি ছিল ‘চর দেখতে কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া সফর’। ‘চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট ব্রিজিং’ নামের এক প্রকল্পের অধীনে এই প্রশিক্ষণ সফরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি টাকা। এই সফরে মোট ২০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জন অস্ট্রেলিয়া ও ১১ জন কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভূমিহীন মানুষদের চরে স্থানান্তর করে তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্প নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের ওপরের কারও এই সফর থেকে নেওয়া জ্ঞান বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর সুযোগ নেই। অথচ সচিব, মন্ত্রীর পিএস, সচিবের পিএস, ডিপুটি কালেক্টর, অতিরিক্ত ডিপুটি কালেক্টরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই বিলাসী সফরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সফর আয়োজন করতে গিয়ে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা কিছুটা কৌশলেরও আশ্রয় নিয়েছেন। গত ১২ মে সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের তিন দিন আগে তাড়াহুড়া করে ৮ মে দুই দফায় ২০ সরকারি কর্মকর্তার নামে সরকারি আদেশ প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, সহজেই সবার নজর এড়ানোর জন্য এই সফরের সরকারি আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপন হিসেবে দেখানোর পরিবর্তে মন্ত্রণালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, চর থাকা তো দূরের কথা, মরুভূমি কিংবা বিরানভূমি ছাড়া কিছুই নেই যে দেশে, সেই অস্ট্রেলিয়ায় কেন কর্মকর্তাদের পাঠানো হলো, তা বোধগম্য নয়। অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরে আসার পরপর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন—এমন একজন উপসচিবকে এ সফর থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা এখন তাঁর কী কাজে লাগবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সফরের অভিজ্ঞতা তো অবশ্যই কাজে লাগবে, লাগবে না কেন? অস্ট্রেলিয়ায় চর নেই। মরুভূমি, বিরানভূমি তো আছে।’

অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি ও বিরানভূমি দেখে যদি চর দেখা হয়, তাহলে সুদান এবং ওমানেও তো মরুভূমি-বিরানভূমি আছে, তাহলে সেখানে কেন আপনাদের সফরের ব্যবস্থা করা হলো না? এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।

এসব সফরের পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকে, তা দেশবাসীর কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। তা না হলে অস্ট্রেলিয়া সফর করে এসেছেন এমন দুজন কর্মকর্তা তিন-চার মাসের মধ্যেই অবসরে যাবেন জেনেও তাঁদের সফরসঙ্গী করা হলো কোন যুক্তিতে? আসলে এসব সফরের পেছনে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কিছু স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। এমনও দেখা গেছে, মন্ত্রণালয়ের কোনো বড় কর্মকর্তার সন্তান যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছেন, কাজেই সরকারি একটা সফর ম্যানেজ করে ওই সব দেশে ৮-১০ দিনের জন্য তিনি বেড়িয়ে এলেন। তাতে রথ দেখা আর কলা বেচা হলো, মন্দ কী?

পুকুর কাটার প্রশিক্ষণ নিতে বিমানে বিদেশ ভ্রমণকর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে গত ১২ মে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার এক্সপোজার ভিজিট, স্টাডি ট্যুর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।’ আরও একটি পরিপত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। লক্ষ করার বিষয়, এ দুটি পরিপত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির মধ্যে কিছুটা ফাঁক রাখা হয়েছে, তা হলো—দুটো পরিপত্রেই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ‘সীমিত’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ব্যাপারে এই ‘সীমিত’ শব্দটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু ‘সীমিত’, তাই প্রয়োজনীয়তা থাকলে বিদেশ ভ্রমণে যেতেই পারেন। অনেকে আবার দাবি করছেন, পরিপত্র জারির আগে বিদেশ সফরের যেসব সরকারি আদেশ হয়েছে তাতে বিদেশ সফরে বাধা থাকার কথা নয়। ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, বিদেশ ভ্রমণে রাজস্ব খাত থেকে অর্থ না গেলে সমস্যা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের উঁচু মহল কি একবারও ধারণা করেনি যে এই ‘সীমিত’ শব্দটি ব্যবহার করে অনেকেই কোনো না কোনো যুক্তি দেখিয়ে বিদেশ সফরের সুযোগ নিতে পারেন? তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এই সীমিত শব্দটি সচেতনভাবেই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবার অনেক সময় দেখা যায় ঠিকাদারি পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনে বিদেশ সফর নিয়েও কিছুটা ধোঁয়াশা আছে। এসব সফরের সম্পূর্ণ খরচ ঠিকাদারি কোম্পানিই বহন করে। কাজেই এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। এটি আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিসংগত মনে হলেও ঠিকাদারের টাকায় বিদেশ সফর করা কতটুকু নৈতিকতাবিবর্জিত কাজ, তা কি একবারও ভেবে দেখা হয়েছে? একটি কথা মনে রাখতে হবে, ঠিকাদার নিজের টাকায় কর্মকর্তাদের বিদেশ ঘুরিয়ে আনেন না, যে প্রকল্পের জন্য বিদেশ সফর, সেই প্রকল্প থেকে ঠিকাদার যে টাকা পাচ্ছেন, তারই একটি ক্ষুদ্র অংশ থেকেই এ সফরের খরচ মিটিয়ে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অন্যান্য বরাদ্দের মধ্যে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের খরচের টাকাও প্রকল্পের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে যেহেতু সরকারের তরফ থেকে এযাবৎ কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনি, কাজেই উল্লিখিত দাবি বা ব্যাখ্যা সঠিক বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা হয়তো অচিরেই অবসরে যাবেন, তাঁদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের বিদেশ সফর দলের সঙ্গে তাঁদের নামও অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা কিছুটা আর্থিক বেনিফিট পান। এ কারণেই আমরা প্রায়ই দেখতে পাই, অবসর নেওয়ার আগে কেউ কেউ এ ধরনের ‘দিলখুশ’ ট্রিপে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে যান। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তিস্বার্থ দেখতে গিয়ে জনগণের করের টাকা খরচ করার অধিকার তাঁদের কে দিয়েছে? এ প্রসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যহীন’ বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের এ-সংক্রান্ত একটি রিট মামলার বিচার শেষে রায় দেওয়ার সময় কিছু পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। নদী পারাপারের ফেরির জন্য সার্চ ও ফগলাইট কেনার প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন করতে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন বিআইডব্লিউটিসির একদল কর্মকর্তা। বিআইডব্লিউটিসির একটি চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা ওই মামলায় বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক নিয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দিতে গিয়ে পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘এখানে সরকারি কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য কেবল তাঁদের সরকারি অবস্থান এবং কর্তৃত্বের অপব্যবহারই করেননি, তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ হয়েছেন।’ অন্য আরেকটি পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সার্বিক অদক্ষতার কারণে ফগ লাইটের গুণগত মান ও কার্যকারিতা সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফগ লাইট প্রয়োজন হয় শীতকালে। অথচ যুক্তি ও কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে তাঁরা জুন মাসে ওই লাইট পরীক্ষা করেছিলেন। সরকারি দায়িত্বশীলরা যদি এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন হন, তাহলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের যে ক্ষতি হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, কর্মকর্তারা কেবল তাঁদের পদের অপব্যবহারই করেননি, অযোগ্যতা স্বীকার না করে চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ নব্য জমিদারের মতো।’ কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বা ভ্রমণ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি আলোচিত খবরের প্রসঙ্গ টেনে আদালত তখন বলেছিলেন, ‘আমাদের খুব শিগগির হয়তো দেখতে হতে পারে যে সরকারি কর্মকর্তারা ফরমাল স্যুট পরা শিখতে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। বিষয়টি অযৌক্তিক শোনালেও শিগগিরই তা বাস্তবে পরিণত হতে পারে।’

সরকারি কর্মকর্তাদের এসব অদ্ভুত বিদেশ সফর নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার পরও তা বন্ধ করা যায়নি।

কোনো না কোনো যুক্তি দেখিয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ এখনো জারি আছে। যৌক্তিক কারণে বিদেশ সফর করার প্রয়োজন হলে তা করবে, তাতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু ‘চর’ দেখা, ‘মসলার চাষ’ প্রশিক্ষণ, ‘পুকুর কাটা’ শিক্ষা কিংবা ‘নলকূপ বসানো’র কাজ শেখা ইত্যাদি উদ্ভট প্রকৃতির যুক্তি দেখিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের করের টাকায় যখন প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়, তখন আপত্তি না করে পারা যায় না। মাঝেমধ্যে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, যেসব ব্যক্তি এমন বিলাসী ভ্রমণে বিদেশে যান, যাওয়ার আগে নিজ স্ত্রী, সন্তান, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-পরিজনকে তাঁরা কী বলে যান? ‘আমি পুকুর কাটার প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছি! মসলা চাষ কীভাবে করে তার প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছি!! অথবা নলকূপ বসানোর কাজ শিখতে যাচ্ছি!!! মনে মনে ভাবি, এসব বলতে এতটুকুও কি তাঁদের লজ্জা করে না?

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত