জাহীদ রেজা নূর

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর বহু দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক জায়গায় করোনাভাইরাস এখনো তাদের প্রতিপত্তি বজায় রেখেছে; বিশেষ করে রাশিয়ায় এখনো তা বিপজ্জনকভাবেই বিরাজমান।
প্রতিটি মহামারির মতো করোনা মহামারি, যাকে আমরা অতিমারি নাম দিয়েছি, একদিন কেটে যাবে। করোনার জীবাণুকে শায়েস্তা করার মালমসলা পরিপূর্ণভাবে জোগাড় করে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী যে এ রকম একটি ভয়াবহ সময় কাটিয়েছিল ২০২০-২১ সালের দিকে, সেটা হয়ে যাবে ইতিহাসের অংশ। এই সময়টায় জন্ম হয়নি যাদের, তারা কল্পনাতেও আনতে পারবে না, একদা মৃত্যু কেমন ডাল-ভাত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বব্যাপী আমাদের জীবনে।
এর আগে মৃত্যু ডাল-ভাত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আর একটিই আছে—মুক্তিযুদ্ধ। সেটা বৈশ্বিক নয়, পরিপ্রেক্ষিত দেশীয়। যদিও তখন একেবারে শৈশব আমার, কিন্তু সে বয়সেই আমরা জেনে গিয়েছিলাম, জীবন-মরণের সীমানা ঘুচে যাওয়া কাকে বলে।
দুই. সে একসময় এসেছিল আমাদের জীবনে। সবচেয়ে ক্ষুদ্র মানুষটিও তখন মহিরুহের রূপ নিয়েছিল। সবচেয়ে মুখচোরা মানুষটিও সেদিন চিৎকার করে স্লোগান দিয়েছিল, ‘জয় বাংলা’। গ্রামগঞ্জে রাজাকার, শান্তি কমিটি আর পাকিস্তানি হানাদারদের চরম অত্যাচারের মধ্যেও একটা স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে গ্রামবাসী। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের বাইরে একটা বিরাট জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের সারিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে অকুতোভয়ে। সংস্কৃতিসেবীরা ট্রাকে করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়ে শুনিয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী গান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিসেবী, অধ্যাপকেরা গোপনে সাহায্য করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধের নায়ক যিনি, তিনি তখন কারাগারে। তাঁকে হত্যা করা হবে, এই সংশয় মাথায় নিয়েই তাঁর স্বপ্নের দেশকে মুক্ত করতে চেয়েছে বাঙালিসহ এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ।
তারপর? তারপর দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা কি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি? আমরা কি সেই দেশে বসবাস করছি, যে দেশে নানা ধর্মের, নানা পেশার মানুষ নিরাপদে জীবন যাপন করছে?
উত্তরটা খুবই ঘোলাটে। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, আমরা এগিয়ে চলেছি। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, পিছিয়ে যাচ্ছি আরও।
পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা হয় যেসব কারণে, তারই কয়েকটি নিয়ে আজ আলোচনা করব। এর বাইরে নিশ্চয়ই আমাদের বড় অনেক সাফল্য আছে। যাকে আমরা হতাশার জায়গা বলছি, সেগুলো চিহ্নিত করা গেলে সাফল্যগুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়বে চোখে। কিন্তু এগুলোকে আড়ালে রেখে দিলে তাতে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধকে চিনে নেওয়ার সুযোগ আর থাকবে না।
তিন. মুক্তিযুদ্ধের গান ছিল ‘গেরিলা, গেরিলা, আমরা গেরিলা, স্বাধীনতার রক্তে রাঙা আমরা গেরিলা’। সেই গেরিলাদের হাতে থাকত গ্রেনেড। হাতে থাকত রিকয়েললেস রাইফেল। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনীর অপারেশনের কাহিনিগুলো পড়লেই বোঝা যায়, সে সময় তাদের কাছে ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন’ ছিল। এক একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের অর্থ ছিল মুক্তির দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। দেশের একখণ্ড মাটিকে শত্রুমুক্ত করার মানে ছিল, নিজের স্বপ্নের আরও কাছে পৌঁছে যাওয়া। যেন ভুলে না যাই, এই যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এটা শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধ নয়। শুধু নৈতিক, আদর্শিক সহযোগিতাই দেশের জনগণ করেনি, তারা অস্ত্র হাতেও লড়াই করেছে। একটি পুরো দেশের কতিপয় পথভ্রষ্ট দালাল আর বিপথগামী চৈনিক কমরেড ছাড়া সবার আকাঙ্ক্ষা তখন মুক্ত দেশ। সেই দেশটি আমরা পেলাম ১৬ ডিসেম্বরে।
রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা এ দেশটিতে এরপরও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড ছুড়েছিল যারা, তারা কিন্তু এই মুক্ত স্বদেশেরই নাগরিক। তারা হত্যা করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। এ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সালের উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে দুটি সামরিক শাসন, বিএনপি-এরশাদ শাসন পার হতে হতে দেশটার সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতিটা হয়েছিল, সেটা ছিল মূল্যবোধের। দেশের আপামর জনগণ যে আদর্শে দীক্ষিত হয়েছিল, অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িকতা, সেই আদর্শে তত দিনে মরিচা পড়েছে। একদল ভুঁইফোড় দালালে ভরে গিয়েছিল দেশ, যে যেভাবে পেরেছে, আখের গুছিয়ে নিয়েছে। দেশের স্বার্থের সঙ্গে নিজের স্বার্থকে তারা এক করে দেখেনি। নিজের পকেট স্ফীত হোক, দেশ গোল্লায় যাক—এই নীতিকেই তারা জীবনাচরণের আদর্শে পরিণত করেছে। দল-মতনির্বিশেষে সবাই তত দিনে মুক্তিযুদ্ধকে শুধু ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, জীবনাচরণের অবশ্যম্ভাবী অংশ বলে আর মনে করছে না। ফলে ২০০৪ সালের কাছাকাছি সময়ে আসতে আসতে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে শুরু করেছে। যে গ্রেনেড বাঙালি ছুড়েছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে, সেই গ্রেনেডই তারা ছুড়েছে নিজ দেশের মানুষের দিকে। এই পরিবর্তনটি হৃদয়ঙ্গম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নইলে বোঝা যাবে না, আমরা ধীরে ধীরে নিজের দেশ থেকে কতটা দূরে সরে এসে কী দেশ বানালাম!
চার. টিক্কা খান যখন গভর্নর হয়ে এলেন, তখন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী (বদরুদ্দীন আহমদ সিদ্দিকী) তাঁকে গভর্নর হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাননি। ৯ মার্চ তাঁর শপথ গ্রহণের দিন ঠিক হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। বি এ সিদ্দিকী জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে, জনগণের মনের ভাষা পড়ে নিয়ে টিক্কা খানকে শপথবাক্য পাঠ করাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
বিচারপতি বা বিচারকদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকে। আমরা সব সময়ই মনে করি, সওয়াল-জবাবের পর বিচারক যে রায় দেবেন, তা হবে নিরপেক্ষ। তাঁর সেই নিরপেক্ষতা অর্জন করতে হয় সমাজ, দেশ, দেশের সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। মূল যে বিষয়, বিচারিক ও আইনি পড়াশোনা তো আছেই।
ইদানীং আমরা নিম্ন আদালতের কয়েকটি রায় ও পর্যবেক্ষণ দেখেছি, তাতে দৃশ্যমান হয়েছে, আদালত যে রায় বা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা আদালতের স্বাভাবিক রীতি-নীতির বাইরে। পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে দেওয়ার ঘটনা কিংবা বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণবিষয়ক মামলার পর্যবেক্ষণ বিচলিত করেছে সাধারণ মানুষকেও। উচ্চ আদালতে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে বিচারকদের।
এমন এক দেশ নির্মাণ করলাম আমরা, যে দেশে বিচারক তাঁর মর্যাদা ধরে রাখতে পারেন না! তাঁর বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে হয়! যদি সত্যিই স্বাধীনতার অর্থ তিনি বুঝতেন, তাহলে আরও অনেক বেশি বুঝতে পারতেন মানুষকে। পড়তে পারতেন মানুষের মনের কথা। পড়তে পারতেন আইনের কথা। মানবিকতা বজায় রেখে কীভাবে আইনের সঙ্গী হয়ে পর্যবেক্ষণ দিতে হয়, সেটা তাঁকে শিখিয়ে দিতে হতো না।
আমাদের স্বাধীনতার অর্থ এখানে এসেও খেই হারিয়ে ফেলেছে।
পাঁচ. ১৯৭১ সালে আমরা বসবাস করতাম ঢাকা শহরের শান্তিনগর এলাকার চামেলীবাগে। আবুজর গিফারী কলেজ ছিল মালিবাগে। এখনকার মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে। সে কলেজেরই ছাত্র সংসদের সম্পাদক ছিলেন ফারুক ইকবাল। ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন, তখনই ঢাকা হয়ে ওঠে মিছিলের শহর। সেই উত্তাল দিনগুলোর একটি ছিল ৩ মার্চ। সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল শিরোনাম ছিল ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’। সেদিনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ফারুক ইকবাল। সে খবর বিদ্যুতের গতিতে এসে পৌঁছেছিল আমাদের পাড়ায়। পাড়ার বৃদ্ধ, যুবক, শিশু বেরিয়ে পড়েছিল ফারুক ইকবালের লাশ কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া মিছিলে যোগ দিতে।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে যে তরুণটি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, তাঁর নাম নূর হোসেন। গরিব এই অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছিলেন নিজ দেশের পুলিশের গুলিতে। বাইরের কোনো শক্তি তাঁকে হত্যা করেনি।
সরলভাবেই বোঝা যায়, আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা এই স্বাধীন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইভাবে হত্যা করছে দেশের সাধারণ মানুষকে।
ছয়. এরপর আরও কত ঘটনা ঘটেছে। হরতাল চলাকালে বিশ্বজিৎ হত্যা, হরতালের নামে বাসে-গাড়িতে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, হোলি আর্টিজান, ক্যাসিনো কারবারসহ যা যা ঘটে চলল, তার কোথাও মানুষের প্রতি মমতা নেই। ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই।’
এই যে দেশপ্রেমহীনতার জীবাণু আমাদের ভেতরে ঢুকেছে এবং নিশ্চিন্তে বসবাস করছে, তা করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর। করোনা তো চলে যাবে, কিন্তু এই ভাইরাস নির্মূল করবে কে?

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর বহু দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক জায়গায় করোনাভাইরাস এখনো তাদের প্রতিপত্তি বজায় রেখেছে; বিশেষ করে রাশিয়ায় এখনো তা বিপজ্জনকভাবেই বিরাজমান।
প্রতিটি মহামারির মতো করোনা মহামারি, যাকে আমরা অতিমারি নাম দিয়েছি, একদিন কেটে যাবে। করোনার জীবাণুকে শায়েস্তা করার মালমসলা পরিপূর্ণভাবে জোগাড় করে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী যে এ রকম একটি ভয়াবহ সময় কাটিয়েছিল ২০২০-২১ সালের দিকে, সেটা হয়ে যাবে ইতিহাসের অংশ। এই সময়টায় জন্ম হয়নি যাদের, তারা কল্পনাতেও আনতে পারবে না, একদা মৃত্যু কেমন ডাল-ভাত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বব্যাপী আমাদের জীবনে।
এর আগে মৃত্যু ডাল-ভাত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আর একটিই আছে—মুক্তিযুদ্ধ। সেটা বৈশ্বিক নয়, পরিপ্রেক্ষিত দেশীয়। যদিও তখন একেবারে শৈশব আমার, কিন্তু সে বয়সেই আমরা জেনে গিয়েছিলাম, জীবন-মরণের সীমানা ঘুচে যাওয়া কাকে বলে।
দুই. সে একসময় এসেছিল আমাদের জীবনে। সবচেয়ে ক্ষুদ্র মানুষটিও তখন মহিরুহের রূপ নিয়েছিল। সবচেয়ে মুখচোরা মানুষটিও সেদিন চিৎকার করে স্লোগান দিয়েছিল, ‘জয় বাংলা’। গ্রামগঞ্জে রাজাকার, শান্তি কমিটি আর পাকিস্তানি হানাদারদের চরম অত্যাচারের মধ্যেও একটা স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে গ্রামবাসী। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের বাইরে একটা বিরাট জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের সারিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে অকুতোভয়ে। সংস্কৃতিসেবীরা ট্রাকে করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়ে শুনিয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী গান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিসেবী, অধ্যাপকেরা গোপনে সাহায্য করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধের নায়ক যিনি, তিনি তখন কারাগারে। তাঁকে হত্যা করা হবে, এই সংশয় মাথায় নিয়েই তাঁর স্বপ্নের দেশকে মুক্ত করতে চেয়েছে বাঙালিসহ এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ।
তারপর? তারপর দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা কি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি? আমরা কি সেই দেশে বসবাস করছি, যে দেশে নানা ধর্মের, নানা পেশার মানুষ নিরাপদে জীবন যাপন করছে?
উত্তরটা খুবই ঘোলাটে। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, আমরা এগিয়ে চলেছি। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, পিছিয়ে যাচ্ছি আরও।
পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা হয় যেসব কারণে, তারই কয়েকটি নিয়ে আজ আলোচনা করব। এর বাইরে নিশ্চয়ই আমাদের বড় অনেক সাফল্য আছে। যাকে আমরা হতাশার জায়গা বলছি, সেগুলো চিহ্নিত করা গেলে সাফল্যগুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়বে চোখে। কিন্তু এগুলোকে আড়ালে রেখে দিলে তাতে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধকে চিনে নেওয়ার সুযোগ আর থাকবে না।
তিন. মুক্তিযুদ্ধের গান ছিল ‘গেরিলা, গেরিলা, আমরা গেরিলা, স্বাধীনতার রক্তে রাঙা আমরা গেরিলা’। সেই গেরিলাদের হাতে থাকত গ্রেনেড। হাতে থাকত রিকয়েললেস রাইফেল। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনীর অপারেশনের কাহিনিগুলো পড়লেই বোঝা যায়, সে সময় তাদের কাছে ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন’ ছিল। এক একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের অর্থ ছিল মুক্তির দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। দেশের একখণ্ড মাটিকে শত্রুমুক্ত করার মানে ছিল, নিজের স্বপ্নের আরও কাছে পৌঁছে যাওয়া। যেন ভুলে না যাই, এই যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এটা শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধ নয়। শুধু নৈতিক, আদর্শিক সহযোগিতাই দেশের জনগণ করেনি, তারা অস্ত্র হাতেও লড়াই করেছে। একটি পুরো দেশের কতিপয় পথভ্রষ্ট দালাল আর বিপথগামী চৈনিক কমরেড ছাড়া সবার আকাঙ্ক্ষা তখন মুক্ত দেশ। সেই দেশটি আমরা পেলাম ১৬ ডিসেম্বরে।
রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা এ দেশটিতে এরপরও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড ছুড়েছিল যারা, তারা কিন্তু এই মুক্ত স্বদেশেরই নাগরিক। তারা হত্যা করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। এ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সালের উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে দুটি সামরিক শাসন, বিএনপি-এরশাদ শাসন পার হতে হতে দেশটার সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতিটা হয়েছিল, সেটা ছিল মূল্যবোধের। দেশের আপামর জনগণ যে আদর্শে দীক্ষিত হয়েছিল, অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িকতা, সেই আদর্শে তত দিনে মরিচা পড়েছে। একদল ভুঁইফোড় দালালে ভরে গিয়েছিল দেশ, যে যেভাবে পেরেছে, আখের গুছিয়ে নিয়েছে। দেশের স্বার্থের সঙ্গে নিজের স্বার্থকে তারা এক করে দেখেনি। নিজের পকেট স্ফীত হোক, দেশ গোল্লায় যাক—এই নীতিকেই তারা জীবনাচরণের আদর্শে পরিণত করেছে। দল-মতনির্বিশেষে সবাই তত দিনে মুক্তিযুদ্ধকে শুধু ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, জীবনাচরণের অবশ্যম্ভাবী অংশ বলে আর মনে করছে না। ফলে ২০০৪ সালের কাছাকাছি সময়ে আসতে আসতে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে শুরু করেছে। যে গ্রেনেড বাঙালি ছুড়েছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে, সেই গ্রেনেডই তারা ছুড়েছে নিজ দেশের মানুষের দিকে। এই পরিবর্তনটি হৃদয়ঙ্গম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নইলে বোঝা যাবে না, আমরা ধীরে ধীরে নিজের দেশ থেকে কতটা দূরে সরে এসে কী দেশ বানালাম!
চার. টিক্কা খান যখন গভর্নর হয়ে এলেন, তখন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী (বদরুদ্দীন আহমদ সিদ্দিকী) তাঁকে গভর্নর হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাননি। ৯ মার্চ তাঁর শপথ গ্রহণের দিন ঠিক হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। বি এ সিদ্দিকী জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে, জনগণের মনের ভাষা পড়ে নিয়ে টিক্কা খানকে শপথবাক্য পাঠ করাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
বিচারপতি বা বিচারকদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকে। আমরা সব সময়ই মনে করি, সওয়াল-জবাবের পর বিচারক যে রায় দেবেন, তা হবে নিরপেক্ষ। তাঁর সেই নিরপেক্ষতা অর্জন করতে হয় সমাজ, দেশ, দেশের সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। মূল যে বিষয়, বিচারিক ও আইনি পড়াশোনা তো আছেই।
ইদানীং আমরা নিম্ন আদালতের কয়েকটি রায় ও পর্যবেক্ষণ দেখেছি, তাতে দৃশ্যমান হয়েছে, আদালত যে রায় বা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা আদালতের স্বাভাবিক রীতি-নীতির বাইরে। পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে দেওয়ার ঘটনা কিংবা বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণবিষয়ক মামলার পর্যবেক্ষণ বিচলিত করেছে সাধারণ মানুষকেও। উচ্চ আদালতে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে বিচারকদের।
এমন এক দেশ নির্মাণ করলাম আমরা, যে দেশে বিচারক তাঁর মর্যাদা ধরে রাখতে পারেন না! তাঁর বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে হয়! যদি সত্যিই স্বাধীনতার অর্থ তিনি বুঝতেন, তাহলে আরও অনেক বেশি বুঝতে পারতেন মানুষকে। পড়তে পারতেন মানুষের মনের কথা। পড়তে পারতেন আইনের কথা। মানবিকতা বজায় রেখে কীভাবে আইনের সঙ্গী হয়ে পর্যবেক্ষণ দিতে হয়, সেটা তাঁকে শিখিয়ে দিতে হতো না।
আমাদের স্বাধীনতার অর্থ এখানে এসেও খেই হারিয়ে ফেলেছে।
পাঁচ. ১৯৭১ সালে আমরা বসবাস করতাম ঢাকা শহরের শান্তিনগর এলাকার চামেলীবাগে। আবুজর গিফারী কলেজ ছিল মালিবাগে। এখনকার মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে। সে কলেজেরই ছাত্র সংসদের সম্পাদক ছিলেন ফারুক ইকবাল। ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন, তখনই ঢাকা হয়ে ওঠে মিছিলের শহর। সেই উত্তাল দিনগুলোর একটি ছিল ৩ মার্চ। সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল শিরোনাম ছিল ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’। সেদিনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ফারুক ইকবাল। সে খবর বিদ্যুতের গতিতে এসে পৌঁছেছিল আমাদের পাড়ায়। পাড়ার বৃদ্ধ, যুবক, শিশু বেরিয়ে পড়েছিল ফারুক ইকবালের লাশ কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া মিছিলে যোগ দিতে।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে যে তরুণটি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, তাঁর নাম নূর হোসেন। গরিব এই অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছিলেন নিজ দেশের পুলিশের গুলিতে। বাইরের কোনো শক্তি তাঁকে হত্যা করেনি।
সরলভাবেই বোঝা যায়, আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা এই স্বাধীন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইভাবে হত্যা করছে দেশের সাধারণ মানুষকে।
ছয়. এরপর আরও কত ঘটনা ঘটেছে। হরতাল চলাকালে বিশ্বজিৎ হত্যা, হরতালের নামে বাসে-গাড়িতে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, হোলি আর্টিজান, ক্যাসিনো কারবারসহ যা যা ঘটে চলল, তার কোথাও মানুষের প্রতি মমতা নেই। ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই।’
এই যে দেশপ্রেমহীনতার জীবাণু আমাদের ভেতরে ঢুকেছে এবং নিশ্চিন্তে বসবাস করছে, তা করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর। করোনা তো চলে যাবে, কিন্তু এই ভাইরাস নির্মূল করবে কে?
জাহীদ রেজা নূর

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর বহু দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক জায়গায় করোনাভাইরাস এখনো তাদের প্রতিপত্তি বজায় রেখেছে; বিশেষ করে রাশিয়ায় এখনো তা বিপজ্জনকভাবেই বিরাজমান।
প্রতিটি মহামারির মতো করোনা মহামারি, যাকে আমরা অতিমারি নাম দিয়েছি, একদিন কেটে যাবে। করোনার জীবাণুকে শায়েস্তা করার মালমসলা পরিপূর্ণভাবে জোগাড় করে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী যে এ রকম একটি ভয়াবহ সময় কাটিয়েছিল ২০২০-২১ সালের দিকে, সেটা হয়ে যাবে ইতিহাসের অংশ। এই সময়টায় জন্ম হয়নি যাদের, তারা কল্পনাতেও আনতে পারবে না, একদা মৃত্যু কেমন ডাল-ভাত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বব্যাপী আমাদের জীবনে।
এর আগে মৃত্যু ডাল-ভাত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আর একটিই আছে—মুক্তিযুদ্ধ। সেটা বৈশ্বিক নয়, পরিপ্রেক্ষিত দেশীয়। যদিও তখন একেবারে শৈশব আমার, কিন্তু সে বয়সেই আমরা জেনে গিয়েছিলাম, জীবন-মরণের সীমানা ঘুচে যাওয়া কাকে বলে।
দুই. সে একসময় এসেছিল আমাদের জীবনে। সবচেয়ে ক্ষুদ্র মানুষটিও তখন মহিরুহের রূপ নিয়েছিল। সবচেয়ে মুখচোরা মানুষটিও সেদিন চিৎকার করে স্লোগান দিয়েছিল, ‘জয় বাংলা’। গ্রামগঞ্জে রাজাকার, শান্তি কমিটি আর পাকিস্তানি হানাদারদের চরম অত্যাচারের মধ্যেও একটা স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে গ্রামবাসী। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের বাইরে একটা বিরাট জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের সারিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে অকুতোভয়ে। সংস্কৃতিসেবীরা ট্রাকে করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়ে শুনিয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী গান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিসেবী, অধ্যাপকেরা গোপনে সাহায্য করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধের নায়ক যিনি, তিনি তখন কারাগারে। তাঁকে হত্যা করা হবে, এই সংশয় মাথায় নিয়েই তাঁর স্বপ্নের দেশকে মুক্ত করতে চেয়েছে বাঙালিসহ এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ।
তারপর? তারপর দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা কি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি? আমরা কি সেই দেশে বসবাস করছি, যে দেশে নানা ধর্মের, নানা পেশার মানুষ নিরাপদে জীবন যাপন করছে?
উত্তরটা খুবই ঘোলাটে। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, আমরা এগিয়ে চলেছি। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, পিছিয়ে যাচ্ছি আরও।
পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা হয় যেসব কারণে, তারই কয়েকটি নিয়ে আজ আলোচনা করব। এর বাইরে নিশ্চয়ই আমাদের বড় অনেক সাফল্য আছে। যাকে আমরা হতাশার জায়গা বলছি, সেগুলো চিহ্নিত করা গেলে সাফল্যগুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়বে চোখে। কিন্তু এগুলোকে আড়ালে রেখে দিলে তাতে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধকে চিনে নেওয়ার সুযোগ আর থাকবে না।
তিন. মুক্তিযুদ্ধের গান ছিল ‘গেরিলা, গেরিলা, আমরা গেরিলা, স্বাধীনতার রক্তে রাঙা আমরা গেরিলা’। সেই গেরিলাদের হাতে থাকত গ্রেনেড। হাতে থাকত রিকয়েললেস রাইফেল। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনীর অপারেশনের কাহিনিগুলো পড়লেই বোঝা যায়, সে সময় তাদের কাছে ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন’ ছিল। এক একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের অর্থ ছিল মুক্তির দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। দেশের একখণ্ড মাটিকে শত্রুমুক্ত করার মানে ছিল, নিজের স্বপ্নের আরও কাছে পৌঁছে যাওয়া। যেন ভুলে না যাই, এই যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এটা শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধ নয়। শুধু নৈতিক, আদর্শিক সহযোগিতাই দেশের জনগণ করেনি, তারা অস্ত্র হাতেও লড়াই করেছে। একটি পুরো দেশের কতিপয় পথভ্রষ্ট দালাল আর বিপথগামী চৈনিক কমরেড ছাড়া সবার আকাঙ্ক্ষা তখন মুক্ত দেশ। সেই দেশটি আমরা পেলাম ১৬ ডিসেম্বরে।
রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা এ দেশটিতে এরপরও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড ছুড়েছিল যারা, তারা কিন্তু এই মুক্ত স্বদেশেরই নাগরিক। তারা হত্যা করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। এ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সালের উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে দুটি সামরিক শাসন, বিএনপি-এরশাদ শাসন পার হতে হতে দেশটার সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতিটা হয়েছিল, সেটা ছিল মূল্যবোধের। দেশের আপামর জনগণ যে আদর্শে দীক্ষিত হয়েছিল, অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িকতা, সেই আদর্শে তত দিনে মরিচা পড়েছে। একদল ভুঁইফোড় দালালে ভরে গিয়েছিল দেশ, যে যেভাবে পেরেছে, আখের গুছিয়ে নিয়েছে। দেশের স্বার্থের সঙ্গে নিজের স্বার্থকে তারা এক করে দেখেনি। নিজের পকেট স্ফীত হোক, দেশ গোল্লায় যাক—এই নীতিকেই তারা জীবনাচরণের আদর্শে পরিণত করেছে। দল-মতনির্বিশেষে সবাই তত দিনে মুক্তিযুদ্ধকে শুধু ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, জীবনাচরণের অবশ্যম্ভাবী অংশ বলে আর মনে করছে না। ফলে ২০০৪ সালের কাছাকাছি সময়ে আসতে আসতে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে শুরু করেছে। যে গ্রেনেড বাঙালি ছুড়েছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে, সেই গ্রেনেডই তারা ছুড়েছে নিজ দেশের মানুষের দিকে। এই পরিবর্তনটি হৃদয়ঙ্গম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নইলে বোঝা যাবে না, আমরা ধীরে ধীরে নিজের দেশ থেকে কতটা দূরে সরে এসে কী দেশ বানালাম!
চার. টিক্কা খান যখন গভর্নর হয়ে এলেন, তখন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী (বদরুদ্দীন আহমদ সিদ্দিকী) তাঁকে গভর্নর হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাননি। ৯ মার্চ তাঁর শপথ গ্রহণের দিন ঠিক হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। বি এ সিদ্দিকী জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে, জনগণের মনের ভাষা পড়ে নিয়ে টিক্কা খানকে শপথবাক্য পাঠ করাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
বিচারপতি বা বিচারকদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকে। আমরা সব সময়ই মনে করি, সওয়াল-জবাবের পর বিচারক যে রায় দেবেন, তা হবে নিরপেক্ষ। তাঁর সেই নিরপেক্ষতা অর্জন করতে হয় সমাজ, দেশ, দেশের সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। মূল যে বিষয়, বিচারিক ও আইনি পড়াশোনা তো আছেই।
ইদানীং আমরা নিম্ন আদালতের কয়েকটি রায় ও পর্যবেক্ষণ দেখেছি, তাতে দৃশ্যমান হয়েছে, আদালত যে রায় বা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা আদালতের স্বাভাবিক রীতি-নীতির বাইরে। পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে দেওয়ার ঘটনা কিংবা বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণবিষয়ক মামলার পর্যবেক্ষণ বিচলিত করেছে সাধারণ মানুষকেও। উচ্চ আদালতে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে বিচারকদের।
এমন এক দেশ নির্মাণ করলাম আমরা, যে দেশে বিচারক তাঁর মর্যাদা ধরে রাখতে পারেন না! তাঁর বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে হয়! যদি সত্যিই স্বাধীনতার অর্থ তিনি বুঝতেন, তাহলে আরও অনেক বেশি বুঝতে পারতেন মানুষকে। পড়তে পারতেন মানুষের মনের কথা। পড়তে পারতেন আইনের কথা। মানবিকতা বজায় রেখে কীভাবে আইনের সঙ্গী হয়ে পর্যবেক্ষণ দিতে হয়, সেটা তাঁকে শিখিয়ে দিতে হতো না।
আমাদের স্বাধীনতার অর্থ এখানে এসেও খেই হারিয়ে ফেলেছে।
পাঁচ. ১৯৭১ সালে আমরা বসবাস করতাম ঢাকা শহরের শান্তিনগর এলাকার চামেলীবাগে। আবুজর গিফারী কলেজ ছিল মালিবাগে। এখনকার মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে। সে কলেজেরই ছাত্র সংসদের সম্পাদক ছিলেন ফারুক ইকবাল। ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন, তখনই ঢাকা হয়ে ওঠে মিছিলের শহর। সেই উত্তাল দিনগুলোর একটি ছিল ৩ মার্চ। সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল শিরোনাম ছিল ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’। সেদিনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ফারুক ইকবাল। সে খবর বিদ্যুতের গতিতে এসে পৌঁছেছিল আমাদের পাড়ায়। পাড়ার বৃদ্ধ, যুবক, শিশু বেরিয়ে পড়েছিল ফারুক ইকবালের লাশ কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া মিছিলে যোগ দিতে।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে যে তরুণটি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, তাঁর নাম নূর হোসেন। গরিব এই অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছিলেন নিজ দেশের পুলিশের গুলিতে। বাইরের কোনো শক্তি তাঁকে হত্যা করেনি।
সরলভাবেই বোঝা যায়, আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা এই স্বাধীন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইভাবে হত্যা করছে দেশের সাধারণ মানুষকে।
ছয়. এরপর আরও কত ঘটনা ঘটেছে। হরতাল চলাকালে বিশ্বজিৎ হত্যা, হরতালের নামে বাসে-গাড়িতে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, হোলি আর্টিজান, ক্যাসিনো কারবারসহ যা যা ঘটে চলল, তার কোথাও মানুষের প্রতি মমতা নেই। ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই।’
এই যে দেশপ্রেমহীনতার জীবাণু আমাদের ভেতরে ঢুকেছে এবং নিশ্চিন্তে বসবাস করছে, তা করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর। করোনা তো চলে যাবে, কিন্তু এই ভাইরাস নির্মূল করবে কে?

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর বহু দেশে, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক জায়গায় করোনাভাইরাস এখনো তাদের প্রতিপত্তি বজায় রেখেছে; বিশেষ করে রাশিয়ায় এখনো তা বিপজ্জনকভাবেই বিরাজমান।
প্রতিটি মহামারির মতো করোনা মহামারি, যাকে আমরা অতিমারি নাম দিয়েছি, একদিন কেটে যাবে। করোনার জীবাণুকে শায়েস্তা করার মালমসলা পরিপূর্ণভাবে জোগাড় করে ফেলবেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী যে এ রকম একটি ভয়াবহ সময় কাটিয়েছিল ২০২০-২১ সালের দিকে, সেটা হয়ে যাবে ইতিহাসের অংশ। এই সময়টায় জন্ম হয়নি যাদের, তারা কল্পনাতেও আনতে পারবে না, একদা মৃত্যু কেমন ডাল-ভাত হয়ে গিয়েছিল বিশ্বব্যাপী আমাদের জীবনে।
এর আগে মৃত্যু ডাল-ভাত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আর একটিই আছে—মুক্তিযুদ্ধ। সেটা বৈশ্বিক নয়, পরিপ্রেক্ষিত দেশীয়। যদিও তখন একেবারে শৈশব আমার, কিন্তু সে বয়সেই আমরা জেনে গিয়েছিলাম, জীবন-মরণের সীমানা ঘুচে যাওয়া কাকে বলে।
দুই. সে একসময় এসেছিল আমাদের জীবনে। সবচেয়ে ক্ষুদ্র মানুষটিও তখন মহিরুহের রূপ নিয়েছিল। সবচেয়ে মুখচোরা মানুষটিও সেদিন চিৎকার করে স্লোগান দিয়েছিল, ‘জয় বাংলা’। গ্রামগঞ্জে রাজাকার, শান্তি কমিটি আর পাকিস্তানি হানাদারদের চরম অত্যাচারের মধ্যেও একটা স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে গ্রামবাসী। নিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের বাইরে একটা বিরাট জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের সারিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে অকুতোভয়ে। সংস্কৃতিসেবীরা ট্রাকে করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়ে শুনিয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী গান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিসেবী, অধ্যাপকেরা গোপনে সাহায্য করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধের নায়ক যিনি, তিনি তখন কারাগারে। তাঁকে হত্যা করা হবে, এই সংশয় মাথায় নিয়েই তাঁর স্বপ্নের দেশকে মুক্ত করতে চেয়েছে বাঙালিসহ এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ।
তারপর? তারপর দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা কি সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পেয়েছি? আমরা কি সেই দেশে বসবাস করছি, যে দেশে নানা ধর্মের, নানা পেশার মানুষ নিরাপদে জীবন যাপন করছে?
উত্তরটা খুবই ঘোলাটে। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, আমরা এগিয়ে চলেছি। কোনো কোনো সূচকে মনে হয়, পিছিয়ে যাচ্ছি আরও।
পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা হয় যেসব কারণে, তারই কয়েকটি নিয়ে আজ আলোচনা করব। এর বাইরে নিশ্চয়ই আমাদের বড় অনেক সাফল্য আছে। যাকে আমরা হতাশার জায়গা বলছি, সেগুলো চিহ্নিত করা গেলে সাফল্যগুলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ধরা পড়বে চোখে। কিন্তু এগুলোকে আড়ালে রেখে দিলে তাতে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধকে চিনে নেওয়ার সুযোগ আর থাকবে না।
তিন. মুক্তিযুদ্ধের গান ছিল ‘গেরিলা, গেরিলা, আমরা গেরিলা, স্বাধীনতার রক্তে রাঙা আমরা গেরিলা’। সেই গেরিলাদের হাতে থাকত গ্রেনেড। হাতে থাকত রিকয়েললেস রাইফেল। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনীর অপারেশনের কাহিনিগুলো পড়লেই বোঝা যায়, সে সময় তাদের কাছে ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন’ ছিল। এক একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের অর্থ ছিল মুক্তির দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। দেশের একখণ্ড মাটিকে শত্রুমুক্ত করার মানে ছিল, নিজের স্বপ্নের আরও কাছে পৌঁছে যাওয়া। যেন ভুলে না যাই, এই যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এটা শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধ নয়। শুধু নৈতিক, আদর্শিক সহযোগিতাই দেশের জনগণ করেনি, তারা অস্ত্র হাতেও লড়াই করেছে। একটি পুরো দেশের কতিপয় পথভ্রষ্ট দালাল আর বিপথগামী চৈনিক কমরেড ছাড়া সবার আকাঙ্ক্ষা তখন মুক্ত দেশ। সেই দেশটি আমরা পেলাম ১৬ ডিসেম্বরে।
রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা এ দেশটিতে এরপরও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড ছুড়েছিল যারা, তারা কিন্তু এই মুক্ত স্বদেশেরই নাগরিক। তারা হত্যা করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। এ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সালের উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে দুটি সামরিক শাসন, বিএনপি-এরশাদ শাসন পার হতে হতে দেশটার সবচেয়ে বেশি যে ক্ষতিটা হয়েছিল, সেটা ছিল মূল্যবোধের। দেশের আপামর জনগণ যে আদর্শে দীক্ষিত হয়েছিল, অর্থাৎ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা অসাম্প্রদায়িকতা, সেই আদর্শে তত দিনে মরিচা পড়েছে। একদল ভুঁইফোড় দালালে ভরে গিয়েছিল দেশ, যে যেভাবে পেরেছে, আখের গুছিয়ে নিয়েছে। দেশের স্বার্থের সঙ্গে নিজের স্বার্থকে তারা এক করে দেখেনি। নিজের পকেট স্ফীত হোক, দেশ গোল্লায় যাক—এই নীতিকেই তারা জীবনাচরণের আদর্শে পরিণত করেছে। দল-মতনির্বিশেষে সবাই তত দিনে মুক্তিযুদ্ধকে শুধু ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে, জীবনাচরণের অবশ্যম্ভাবী অংশ বলে আর মনে করছে না। ফলে ২০০৪ সালের কাছাকাছি সময়ে আসতে আসতে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে শুরু করেছে। যে গ্রেনেড বাঙালি ছুড়েছিল বর্বর পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে, সেই গ্রেনেডই তারা ছুড়েছে নিজ দেশের মানুষের দিকে। এই পরিবর্তনটি হৃদয়ঙ্গম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নইলে বোঝা যাবে না, আমরা ধীরে ধীরে নিজের দেশ থেকে কতটা দূরে সরে এসে কী দেশ বানালাম!
চার. টিক্কা খান যখন গভর্নর হয়ে এলেন, তখন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী (বদরুদ্দীন আহমদ সিদ্দিকী) তাঁকে গভর্নর হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাননি। ৯ মার্চ তাঁর শপথ গ্রহণের দিন ঠিক হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। বি এ সিদ্দিকী জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে, জনগণের মনের ভাষা পড়ে নিয়ে টিক্কা খানকে শপথবাক্য পাঠ করাতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
বিচারপতি বা বিচারকদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকে। আমরা সব সময়ই মনে করি, সওয়াল-জবাবের পর বিচারক যে রায় দেবেন, তা হবে নিরপেক্ষ। তাঁর সেই নিরপেক্ষতা অর্জন করতে হয় সমাজ, দেশ, দেশের সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। মূল যে বিষয়, বিচারিক ও আইনি পড়াশোনা তো আছেই।
ইদানীং আমরা নিম্ন আদালতের কয়েকটি রায় ও পর্যবেক্ষণ দেখেছি, তাতে দৃশ্যমান হয়েছে, আদালত যে রায় বা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা আদালতের স্বাভাবিক রীতি-নীতির বাইরে। পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে দেওয়ার ঘটনা কিংবা বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণবিষয়ক মামলার পর্যবেক্ষণ বিচলিত করেছে সাধারণ মানুষকেও। উচ্চ আদালতে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে বিচারকদের।
এমন এক দেশ নির্মাণ করলাম আমরা, যে দেশে বিচারক তাঁর মর্যাদা ধরে রাখতে পারেন না! তাঁর বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে হয়! যদি সত্যিই স্বাধীনতার অর্থ তিনি বুঝতেন, তাহলে আরও অনেক বেশি বুঝতে পারতেন মানুষকে। পড়তে পারতেন মানুষের মনের কথা। পড়তে পারতেন আইনের কথা। মানবিকতা বজায় রেখে কীভাবে আইনের সঙ্গী হয়ে পর্যবেক্ষণ দিতে হয়, সেটা তাঁকে শিখিয়ে দিতে হতো না।
আমাদের স্বাধীনতার অর্থ এখানে এসেও খেই হারিয়ে ফেলেছে।
পাঁচ. ১৯৭১ সালে আমরা বসবাস করতাম ঢাকা শহরের শান্তিনগর এলাকার চামেলীবাগে। আবুজর গিফারী কলেজ ছিল মালিবাগে। এখনকার মৌচাক মার্কেটের বিপরীতে। সে কলেজেরই ছাত্র সংসদের সম্পাদক ছিলেন ফারুক ইকবাল। ১ মার্চ যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন, তখনই ঢাকা হয়ে ওঠে মিছিলের শহর। সেই উত্তাল দিনগুলোর একটি ছিল ৩ মার্চ। সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল শিরোনাম ছিল ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’। সেদিনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ফারুক ইকবাল। সে খবর বিদ্যুতের গতিতে এসে পৌঁছেছিল আমাদের পাড়ায়। পাড়ার বৃদ্ধ, যুবক, শিশু বেরিয়ে পড়েছিল ফারুক ইকবালের লাশ কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া মিছিলে যোগ দিতে।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে যে তরুণটি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, তাঁর নাম নূর হোসেন। গরিব এই অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছিলেন নিজ দেশের পুলিশের গুলিতে। বাইরের কোনো শক্তি তাঁকে হত্যা করেনি।
সরলভাবেই বোঝা যায়, আইয়ুব-ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মারা এই স্বাধীন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একইভাবে হত্যা করছে দেশের সাধারণ মানুষকে।
ছয়. এরপর আরও কত ঘটনা ঘটেছে। হরতাল চলাকালে বিশ্বজিৎ হত্যা, হরতালের নামে বাসে-গাড়িতে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, হোলি আর্টিজান, ক্যাসিনো কারবারসহ যা যা ঘটে চলল, তার কোথাও মানুষের প্রতি মমতা নেই। ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই।’
এই যে দেশপ্রেমহীনতার জীবাণু আমাদের ভেতরে ঢুকেছে এবং নিশ্চিন্তে বসবাস করছে, তা করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর। করোনা তো চলে যাবে, কিন্তু এই ভাইরাস নির্মূল করবে কে?

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই।
২২ নভেম্বর ২০২১
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই।
২২ নভেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই।
২২ নভেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

গত শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজন মানুষও মারা যাননি। দেড় বছরের মধ্যে এটাই ছিল করোনায় মৃত্যুহীন প্রথম দিন। খুবই স্বস্তিকর একটি সংবাদ। তবে করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বলে তা একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই।
২২ নভেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫