Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যর্থ হয়...

মহিউদ্দিন খান মোহন
অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যর্থ হয়...

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে অনেকেই অনুমান করছেন, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত ও বিপর্যস্ত করার একটি সূক্ষ্ম প্রয়াস ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সদ্য ক্ষমতাহারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাড়ে ১৫ বছর বৈধ-অবৈধ সুবিধাভোগী শ্রেণিটি সংগত কারণেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপর্যস্ত করতে চাইবে। তবে এ সরকার ব্যর্থ হলে তার ফলাফল কী দাঁড়াবে, তা অনুধাবন করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার স্বাভাবিক কোনো সরকার নয়। একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কেউ যদি সংবিধানের ধারা-উপধারায় এই সরকার গঠনের ভিত্তি খুঁজতে যান, তাহলে তাঁকে হতাশ হতেই হবে। কেননা, যে প্রক্রিয়ায় এই সরকার গঠিত হয়েছে, সংবিধানের কোথাও তার উল্লেখ নেই। তবে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বা প্রয়োজনের অনিবার্যতার সূত্র অনুযায়ী কখনো কখনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্নে জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট সে সিদ্ধান্তই দিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মতামত চেয়েছিলেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি সাংবিধানিক শূন্যতা রোধকল্পে অন্তর্বর্তী একটি সরকার গঠনের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। সুতরাং এই সরকারের আইনি ভিত্তি বলতে সুপ্রিম কোর্টের ওই রেফারেন্স। আর দ্বিতীয় ভিত্তি হলো জনসাধারণ, যারা সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে ৫ আগস্টের ছাত্র- জনতার গণ-অভ্যুত্থানের জন্ম দিয়েছে।

এটা তো স্বীকার করতেই হবে যে একটি সরকারের বিরুদ্ধে এমন সর্বাত্মক গণ-অভ্যুত্থান আমাদের দেশে খুব একটা হয়নি। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৯ সালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে কিংবা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে এ বছরের ৫ আগস্ট সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের রয়েছে বিরাট পার্থক্য। ওই দুটি গণ-অভ্যুত্থানেও ব্যাপক জনগণের সমর্থন ছিল, এটা ঠিক। তবে এবার যেভাবে সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল, তেমনটি আগে কখনো দেখা যায়নি। আগের দুটি গণ-আন্দোলন বা গণ-অভ্যুত্থানে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও এবার ছাত্র-যুবক ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী, নিরীহ ক্ষুদ্র দোকানদার, রিকশাচালক এমনকি সাধারণ গৃহবধূরা পর্যন্ত রাজপথে নেমে এসেছিলেন। আর এই গণ-অভ্যুত্থানই অন্তর্বর্তী সরকারের ভিত্তিভূমি। সুতরাং যাঁরা বলার চেষ্টা করছেন, এই সরকারের কোনো ভিত্তি নেই, তাঁরা ভ্রান্তিবিলাসে ভুগছেন।

একটি বিষয় সচেতন ব্যক্তিদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হঠাৎ করেই দেশে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণির নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে মিছিল-সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি বেড়ে গেছে। সবচেয়ে অবাক কাণ্ড হলো, যেসব দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে, বিগত ১৫ বছরে তারা সেগুলো নিয়ে একটি হাঁচি পর্যন্ত দেয়নি। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তাদের দাবি আদায়ের চেতনা জেগে উঠল। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, বাস্তবিকই কি তারা তাদের দাবি আদায় করতে চায়, নাকি এ সরকারকে বিব্রত-বিপর্যস্ত করাই আসল লক্ষ্য? আনসার থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক, ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক—কে নেই দাবি আদায়ের আন্দোলনে? এরই মধ্যে গত সরকারের আমলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যেসব কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও শুরু হয় হট্টগোল। তাঁরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত করেন!

সবাই ডিসি হবেন—এমন একটি মনোভাব লক্ষ করা গেছে তাঁদের মধ্যে। অথচ যখন তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছিল, তখন তাঁরা টুঁ শব্দটি করার সাহস করেননি। এই যে সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দেওয়ার প্রবণতা, এটা আমাদের জাতীয় চরিত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।

অন্যদিকে ঘটে গেছে এক অভাবনীয় ঘটনা। সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঘেরাও করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন। উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের নিরস্ত করতে পুলিশকে শেষ পর্যন্ত কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে হয়েছে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হয়তো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনুরূপ একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, এই আন্দোলনের পেছনে ইন্ধনদাতা কারা? অনেকেই মনে করেন, সদ্য পতিত সরকারের অনুচরেরা এর নেপথ্য কুশীলব। যদিও সরকারের তরফ থেকে ওই দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করার পর আন্দোলন স্তিমিত হয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।

যেকোনো জাতীয় ও জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে একটি সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় অনেক ভেবেচিন্তে। গৃহীত সিদ্ধান্তের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রভাব-কুপ্রভাব কতটা পড়বে, সেসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা, একটি ছোট্ট ভুল সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সুতরাং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের উচিত ধৈর্য ধারণ করা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার একটি অস্থায়ী সরকার। এই সরকারের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার করে দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করা এবং সে রকম একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। আনসারদের সমস্যার সমাধান কিংবা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দায়িত্ব এই সরকারের নয়। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারের নেওয়াটাই যৌক্তিক।

অপরদিকে একধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক চাপও অন্তর্বর্তী সরকারকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। হিসাবমতো যে রাজনৈতিক শক্তির কাছ থেকে এই সরকারের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পাওয়ার কথা, তারা মুখে সহযোগিতার কথা বললেও কার্যত বৈরিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে চরম নির্যাতিত বিএনপি এখন নির্বাচনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে একক শক্তিমান হয়ে ওঠা বিএনপি নেতাদের কথাবার্তায় ক্ষমতার দণ্ড হাতে পেতে উদগ্র হয়ে ওঠার লক্ষণ পরিদৃশ্যমান। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারসহ যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেগুলো সম্পন্ন করতে যে দু-চার বছর সময় লাগবে, তা সবাই মেনে নিলেও বিএনপি মানতে চাইছে না। ইতিমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়, ওটা নির্বাচিত পার্লামেন্ট করবে।

কথাটা অযৌক্তিক নয়। তবে সে পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য যে সুস্থ পরিবেশ দরকার তা তো এই সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকার রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করবে, তবে তা কার্যকর করবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার তথা পার্লামেন্ট। এ এক সুকঠিন কাজ। এই কাজটি সম্পন্ন করতে হলে সময়ের প্রয়োজন এবং তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ।

যেকোনো সৃজনশীল কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ অত্যাবশ্যক। আমাদের রাষ্ট্র সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সৃজনশীল কাজ। সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিন্তে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে। আর সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার সময়টুকু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা।

আর যদি তারা ক্ষমতার জন্য উদগ্র হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার পথকে এবড়োখেবড়ো করে দেয়, তাহলে ফলাফল হিতে বিপরীত হতে পারে। ক্ষমতা হয়ে যেতে পারে সোনার হরিণ। কারণ, সেই এবড়োখেবড়ো পথ বেয়ে কোন অজগর দৃশ্যপটে আবির্ভূত হবে, কিছুই বলা যায় না।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত