Ajker Patrika

নির্বাচনী নিলামে ওঠার সারিতে জাতীয় পার্টি ?

মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারী
আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১১: ০৩
নির্বাচনী নিলামে ওঠার সারিতে জাতীয় পার্টি ?

বাংলাদেশে এখন নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিলামে ওঠার বাতিক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাতে আদর্শের কোনো বালাই নেই। এককালের অনেক বাম বহু আগেই আদর্শ ত্যাগ করে বিএনপি, জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন, মন্ত্রী-এমপিও হয়েছিলেন।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টি একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন কমিশন এবং সরকার সম্পর্কে বেশ কিছু মন্তব্য করেছে, যা বিএনপি এবং বিএনপির মিত্রদলগুলোর বক্তব্যের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য নেই বলেই মনে হচ্ছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ওই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের বলেছেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের সামনে প্রশাসন বা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায় হয়ে পড়ে। তাই কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা আছে।’ মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সঙ্গে জি এম কাদেরের বক্তব্যের এখানে মিল খুঁজে পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জি এম কাদের আরও বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করেছে। ঔপনিবেশিক আমলে মানুষকে শোষণ করতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হতো। প্রশাসকদের জবাবদিহি থাকত শুধু সরকারের কাছে। কারণ, সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসকদের কোনো জবাবদিহি থাকে না। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও নেই। সব ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, রাজনীতিবিদদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। তাই দেশের জনগণের কাছে কারও জবাবদিহি নেই।’ জি এম কাদের যেই পার্টির চেয়ারম্যান সেই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কি জাতীয় পার্টিকে ভিন্নধারার রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করেছিলেন? জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান হয়ে তিনিও কি জাতীয় পার্টিকে সে ধরনের সংগঠনে রূপান্তরিত করার কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন? তেমন উদ্যোগ নিতে হলে তো দলের গঠনতন্ত্রেই পরিবর্তন আনতে হবে।

যে অর্থে জি এম কাদের বর্তমান সরকারকে কর্তৃত্ববাদী সরকার বলছেন, সে অর্থে সরকার তো জিয়াউর রহমানের শাসনকালে যেমন ছিল এরশাদের শাসনকালেও কম ছিল না। ১৯৮৬ ও ’৮৮ সালে এরশাদের অধীন নির্বাচন কেমন হয়েছিল, তা জি এম কাদেরের অজানা কিছু নয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাকালে জাতীয় পার্টিকে কীভাবে পরিচালনা করেছিলেন, তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। জাতীয় পার্টিও এরশাদের ব্যক্তিগত পার্টির অঙ্গন অতিক্রম করতে পারেনি। এই দলে একসময় বিএনপি, অতি ডান, অতি বাম এবং সুবিধাবাদী অনেকেই ক্ষমতার মধু উপভোগ করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন।

১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানও বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগে আগ্রহীদের নিয়ে। তাতে স্বাধীনতাবিরোধী, অতি ডান, অতি বাম এবং সুবিধাবাদীরাই জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের অনেকে জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদের সঙ্গে ভেড়েন এবং জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করা হলে তাতে যোগ দেন। আদর্শগতভাবে জাতীয় পার্টি বিএনপির খুব বেশি দূরের নয়। বড় ভাই এবং ছোট ভাইয়ের মধ্যে যতটা মিল-অমিল থাকে, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে আদর্শগত মিল ও অমিল হচ্ছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত স্বার্থ। আদর্শগতভাবে উভয় দলই ডান চিন্তাধারার খুব কাছাকাছি। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিএনপিকে আদর্শগতভাবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন। জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদ সামরিক ছাউনি থেকে এসে একই ধারায় ক্ষমতা দখল করেন, দলও একইভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। দলের আদর্শে বিএনপির ছাপ স্পষ্ট। যদিও বিএনপি এরশাদ এবং তাঁর দলকে বিমাতাসুলভ দৃষ্টিতেই দেখেছে। এরশাদের দল এবং এরশাদের রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ তাদের মনেপ্রাণে কামনা হলেও বাস্তবে সেটি বেশ কঠিন ছিল।

১৯৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটার পর বিএনপি ভেবেছিল সামরিক শাসক এরশাদের দল ও এরশাদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না এবং সেই জায়গা তাদের কাছে চলে যাবে। কিন্তু ১৯৯১-এর নির্বাচনের ফল তাদেরও কিছুটা বিস্মিত করেছিল। অবশ্য বিএনপি তখন নির্বাচনে জয়লাভ করবে বা সরকার গঠন করবে—এটি তাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল। ওই বিজয় তাদের সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছিল। বিএনপির গোপন আঁতাত ছিল জামায়াতের সঙ্গে। সেটির ষোলোকলা পূর্ণ হওয়ায় বিএনপি এরশাদের প্রতি নির্দয় হয়ে উঠেছিল। এরশাদ তখন আওয়ামী লীগের সমর্থন কামনা করেছিলেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের জন্য বাম ছোট দলগুলোর সমর্থন পেয়েছিল। তারপরও জাতীয় পার্টি আগ বাড়িয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সমর্থন জানায়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি উন্মুক্তভাবে রাজনীতি করার সুবিধা পেয়েছিল, যা বিএনপির শাসনামলে এরশাদের ভাগ্যে জোটেনি। জাতীয় পার্টি ইনডেমনিটি বিল বাতিলে সমর্থন দিয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও গঙ্গা পানিচুক্তি স্বাক্ষরে বিরোধিতা করেনি এবং পক্ষেও জোরালোভাবে ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে এরশাদের সঙ্গে জামায়াত বিএনপির সখ্য বাড়তে থাকে। এই গোষ্ঠী এরশাদ ও জাতীয় পার্টিকে হাতে নিয়ে ২০০১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে কুপোকাত করার পাশাপাশি দক্ষিণপন্থায় দেশকে নিয়ে যাওয়ার একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল।

১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে চারদলীয় জোট গঠনের মাধ্যমেই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশ্য পরে এই জোট থেকে এরশাদ বের হয়ে আসতে বাধ্য হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে চরম ডানপন্থার দেশে পরিণত করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকার দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করার মিশন বাস্তবায়ন করতে থাকে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রাক্কালে রাজনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া ঘটে। তখন জাতীয় পার্টি এবং এরশাদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোটে যোগদান করেন। এরশাদ তখন বুঝতে পারেন বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের ভরাডুবি ঘটলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যজোটের সরকার গঠিত হয়। জি এম কাদের সেই সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় পার্টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে নেপথ্যে সম্পর্ক রাখে। অথচ এই শক্তির উত্থানের পেছনে জামায়াত এবং বিএনপির সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা অঘোষিত ছিল না। জামায়াত-বিএনপি শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সমর্থন আদায় করতে বদ্ধপরিকর ছিল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করে জামায়াত-বিএনপি এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্নিসংযোগসহ নির্বাচন বানচালে সব শক্তি প্রয়োগ করেছিল। জাতীয় পার্টি তখন বিরোধী দলের আসন লাভের পরিকল্পনা থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন লাভ করে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও দলটি প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ করে। রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা এবং জি এম কাদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হন। জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টিতে এখন দুটি ধারা, কেউ কেউ বলেন তিনটি ধারা। তবে দলটি যে এখন নানা গৃহবিবাদে জড়িত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের জীবদ্দশাতেই দলে বিভাজনের অন্ত ছিল না। এরশাদের মৃত্যুর পর সেই বিবাদ এখন ভেতরে-ভেতরে বিসম্বাদে পরিণত হয়েছে।    

জাতীয় পার্টি এখন আর আগের পর্যায়ে নেই। এটি ছোট হতে হতে রংপুরেও এর ঠিকানা খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ নয়। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই দলের ভেতরে দুর্ভাবনার শেষ নেই। অনেকেই এত দিন পদ-পদবি, এমপি-মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেছেন। এরশাদের প্রথম জামানার নেতাদের তেমন কেউই এখন আর নেই। এখন জি এম কাদেরের জামানায় নতুন জেনারেশন। তাঁদের ভাবনাচিন্তা কতটা দলকেন্দ্রিক, কতটা এরশাদকেন্দ্রিক, কতটা রওশন এরশাদকেন্দ্রিক, কতটা জি এম কাদেরকেন্দ্রিক, তা বলা মুশকিল। সে কারণে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত দলের অভ্যন্তরে নেতাদের মধ্যে নানা রকম হিসাবনিকাশও বাড়ছে। রাজনীতির কোন মেরুতে গেলে নিজের সুবিধা ঠিক থাকবে, সেই হিসাবনিকাশ বাড়তে শুরু করেছে বললে অত্যুক্তি করা হবে না। মাঠে এখন রাজনৈতিক প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকার উৎখাতে মিত্র খুঁজছে। দু-একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাও চলছে।

প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যারা বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবে, তারা ভবিষ্যতে জোট ক্ষমতায় গেলে সরকারের মন্ত্রী এবং পদ-পদবি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।

বাংলাদেশে এখন নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিলামে ওঠার বাতিক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাতে আদর্শের কোনো বালাই থাকে না। এককালের অনেক বাম নেতা বহু আগেই আদর্শ ত্যাগ করে বিএনপি, জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন, মন্ত্রী-এমপিও হয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালের নির্বাচনগুলোতে নিলামে ওঠার জন্য অনেকেই মঞ্চ তৈরি করেছেন। জামায়াত-বিএনপির মঞ্চের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরও কেউ কেউ যোগ দিয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে মঞ্চের সংখ্যা মনে হয় বাড়বে। কারণ, নিলামে ওঠার জন্য অনেকেরই আগ্রহ ভেতরে-ভেতরে বেড়েই চলছে। জি এম কাদের দর-কষাকষি নাকি দলের ভেতরের রেষারেষির হিসাবনিকাশ থেকে মঞ্চ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেটি বোঝা যাবে অল্প কিছুদিন পরেই।

মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত