জাহীদ রেজা নূর

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান বদি প্রমাণ করেছেন, শুধু রাজনীতিতে নন, অন্য আরও অনেক কিছুতেই তিনি দক্ষ, এমনকি কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় নাম লেখালেও তিনি ভালো করতে পারতেন।
কথাটা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে বলা হলেও আসলে তা শুধু বদির সমস্যা নয়। রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ ধরনের বদিতেই দিনে দিনে ভরে যাবে রাজনীতির মাঠ। রাজনীতি যে নিজের দলের লক্ষ্য ও আদর্শের সমন্বয়ে দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সেটা দিনদিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে যখন আইনজ্ঞরা উপেক্ষিত হন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাই হয়ে পড়েন সংখ্যাগুরু, তখন দেশের আইনকানুন তৈরিতে কাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়।
দুই. সংকটটা রাজনীতির গোড়ায় ঢুকে গেছে। রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সঙ্গে পেশিশক্তির একটা যোগাযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে বহুদিন আগে থেকেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে কতটা গণতন্ত্রের চর্চা আছে, সেটা আমজনতা এখন ভালোই জানে। শুধু কি রাজনৈতিক দল? ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সে রকম খুব কম প্রতিষ্ঠানেই গণতন্ত্রের দেখা পাওয়া যাবে। লিডারশিপের বদলে বসিং যদি মুখ্য হয়ে ওঠে, তাহলে ছড়ি ঘোরানোই হয়ে উঠবে চালিকাশক্তি, তাতে সন্দেহ করার কিছু থাকে না।
অনেকেই বলে থাকেন, বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা নেই। সেখানেও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হয় না। পেশি ও অর্থশক্তিতে বলীয়ানেরাই এখন তৃণমূল রাজনীতির কান্ডারি হয়ে বসেছেন। এই নতুন ধরনের নেতৃত্বের মধ্যে যেকোনো মূল্যে পদ ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে এলাকায় ক্ষমতা বিস্তার করাটাই মুখ্য। দেশের যে এলাকায়ই যাওয়া হোক না কেন, যেকোনো দলের সাংগঠনিক নেতৃত্বের দিকে তাকানো হোক না কেন, এ ধরনের ভুঁইফোড় নেতৃত্ব দৃশ্যমান হবেই। পেশিশক্তি আর অর্থবলের কাছে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিও পরাজিত হয়েছে, এ কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো।
তিন. আবদুর রহমান বদি একজন আঞ্চলিক নেতা। সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তিনি জাতীয় নেতৃত্বের স্বাদও পেয়েছেন। সুতরাং তাঁর কৃতকর্মের আলোচনা-সমালোচনা বড় ফোরামেই হবে। আমরা তাই বিভিন্ন মহল থেকে এ ঘটনার বিশ্লেষণের অপেক্ষায় থাকব এবং পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনার উল্লেখ করব, যেখানে পেশিশক্তির মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যাবে।
আমাদের অনেকেরই নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে শ্যামল কান্তি ভক্তের কথা। তিনি ছিলেন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। ঘটনাটা ২০১৬ সালের ১৩ মের। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রকাশ্যে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছিল। এই ‘মহা আয়োজনের’ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ সেলিম ওসমান।
ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে যেকোনো মানুষকে নাজেহাল করার এই আপত্তিকর সংস্কৃতি আমাদের এখানে চালু হয়ে গেছে। এটা এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা।
কিছু একটা হলেই যে কারও ধর্মীয় অনুভূতি জেগে উঠছে এখন। তার পরিণাম হচ্ছে ভয়াবহ। একজন মানুষ বা একদল মানুষকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার পর যখন দেখা যাচ্ছে, তিনি বা তাঁরা কোনো ধরনের ধর্মীয় অবমাননার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তখন কিন্তু সেই সব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
শৈশব থেকে আমরা শিখে এসেছি, মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। আমাদের রাজনীতিবিদদের বাড়াবাড়িতে শিক্ষকেরা সে অধিকার হারিয়েছেন। ধর্মীয় অবমাননা বিষয়ে এ লেখাটি নয়। আমি বলতে চাইছি, রাজনীতিকে কতটা সংকীর্ণভাবে দেখা হলে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করানোর মধ্যে যে হিংসা, ক্রোধ, পেশিশক্তির প্রকাশ ঘটে, তা কখনোই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। রাজনীতিবিদ তাঁর তরিকার মধ্যে এই পেশিশক্তি ঢুকিয়ে ফেলেছেন। একজন প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে অপমান করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুরো শিক্ষককুলকে সেই বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন যে রাজনীতির কাছে মাথা নত করে থাকো, নইলে ‘খবর’ আছে। সেই খবর ‘স্কুল কমিটি’র মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হলেও ক্ষতি নেই।
চার. দলের ওপর মহলে যদি এই যথেচ্ছাচারের অনুমোদন থাকে, তাহলে নিচের মহলেও তা ছড়িয়ে যায়। এখন বলব ছাত্রলীগের এক আঞ্চলিক নেতার কথা। এই তো অল্প কয়েক দিন আগে শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষককে মারধর করেছেন কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী। কলেজের বাংলা বিভাগে স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষার সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ এবং ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সংবর্ধনা ও আপ্যায়নের আয়োজন করেছিল বাংলা বিভাগ। সেই আয়োজনে কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, তার জবাবদিহি চান সোহাগ ব্যাপারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষক বি এম সোহেলকে মারধর করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবশ্য ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে কলেজ কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর যা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন কখনোই শৃঙ্খলাবহির্ভূত বা বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দিই।’
খুব ভালো কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করার পর আর কিছু কি করা হয়েছে? শিক্ষকদের আপ্যায়নে ছাত্রলীগের নেতাদের কেন দাওয়াত করতে হবে, তার কি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে? শিক্ষকের শরীরে হাত তোলার জন্য কি এই বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হয়েছে? সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কি এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে শিক্ষকের শরীরে হাত তোলা মহা অন্যায়, এ কাজ যেন কেউ না করে। করলে ভয়াবহ শাস্তি?
পাঁচ. খুব সুন্দর করে মহসিন মাদবর বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন’। কথাটা ঠিক। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রদের মধ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছিল মুসলিম লীগপন্থী প্রগতিশীল ছাত্ররা। কিছুদিন পর আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি বিরোধী দলের সৃষ্টিও হয়েছিল এরই ধারাবাহিকতায়। সেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, যা এখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠন, এ কথা স্বীকার করে নিলে বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কেও ছাত্রলীগের কর্মীদের জানা থাকা দরকার। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের একটি তাৎপর্যময় দিক ছিল তাঁর সৌজন্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে খাজা নাজিমুদ্দিন ঘরানার রাজনীতিবিদ ছিলেন না, সেটা তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই বোঝা যায়। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমপন্থী প্রগতিশীল ঘরানায় ছিল তাঁর অবস্থান। ১৯৫২ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। রাজবন্দীদের মুক্তি ও একুশের ঘটনায় পুলিশের গুলিবর্ষণের তদন্ত দাবি করে শেখ মুজিব যখন খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন তিনি আক্রোশে আকীর্ণ ছিলেন না। তিনি সৌজন্যবোধ হারিয়ে ফেলেননি; বরং তিনি খাজা সাহেবের ভদ্রতার কথা লিখেছেন। খাজা নাজিমুদ্দিনও শেখ মুজিবকে ‘শরীর কেমন, কেমন আছো, কত দিন থাকবে’—এ প্রশ্নগুলো করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, খাজা সাহেব জানতেন শেখ মুজিব একজন ভালো কর্মী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্নেহও করতেন।
বইয়ের অন্য জায়গায় বঙ্গবন্ধু নাজিমুদ্দিনের সমালোচনা করেছেন যখন, তখন ‘তিনি দুর্বল প্রকৃতির,’ ‘কর্মদক্ষতা এবং উদ্যোগের অভাব’ রয়েছে তাঁর, এসব যখন লিখছেন, তখন পাশাপাশি তিনি যে ‘অমায়িক’ এ কথাটাও উল্লেখ করছেন।
ওপরে যে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে বঙ্গবন্ধুর আচরণ কতটা আলাদা, সেটা দেখানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু-প্রসঙ্গ তুলে আনলাম। এবার এই নেতা-পাতিনেতা-ছাত্রনেতাদের নিরিখে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করে দেখুন। বঙ্গবন্ধু নিজেই স্বীকার করেছেন, কৈশোরে ডাকাবুকো ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা কোন সময়? যখন অধিকার হরণ করা হতো, তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থে মারপিটও করেছেন। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করার সময় হাতাহাতি, অপমান ইত্যাদি করেছেন—এমন নজির নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবার প্রতি যত বেশি ঝুঁকেছেন, ততই হয়ে উঠেছেন পরমতসহিষ্ণু। যাঁরা ভিন্নমতের অধিকারী, তাঁদেরও তিনি আঘাত করেননি। স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অনেককে তিনি অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যা মুজিব চরিত্রের মহৎ দিকটিকেই তুলে আনে। যদিও অনুকম্পাপ্রাপ্তরা অকৃতজ্ঞতারই পরিচয় দিয়েছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
শুধু ভেবে দেখতে বলি, বঙ্গবন্ধু কোনো বর্ধিত সভায় তাঁরই দলের এক নেতাকে পেটাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে কোনো শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে কিংবা শিক্ষকদের আপ্যায়নে কেন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নিমন্ত্রণ করলেন না, তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষকের শরীরে হাত তুলছেন–এ রকম দৃশ্য কি কল্পনাতেও আসে?
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু এই ধরনের দলীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না। তাহলে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে কেন এই রাজনীতি বাড়তে থাকবে, সে প্রশ্নটি অবশ্যই করতে হবে রাজনীতিবিদদের কাছে। তাঁরা কী বলেন, তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।
জাহীদ রেজা নূর,উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান বদি প্রমাণ করেছেন, শুধু রাজনীতিতে নন, অন্য আরও অনেক কিছুতেই তিনি দক্ষ, এমনকি কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় নাম লেখালেও তিনি ভালো করতে পারতেন।
কথাটা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে বলা হলেও আসলে তা শুধু বদির সমস্যা নয়। রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ ধরনের বদিতেই দিনে দিনে ভরে যাবে রাজনীতির মাঠ। রাজনীতি যে নিজের দলের লক্ষ্য ও আদর্শের সমন্বয়ে দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সেটা দিনদিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে যখন আইনজ্ঞরা উপেক্ষিত হন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাই হয়ে পড়েন সংখ্যাগুরু, তখন দেশের আইনকানুন তৈরিতে কাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়।
দুই. সংকটটা রাজনীতির গোড়ায় ঢুকে গেছে। রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সঙ্গে পেশিশক্তির একটা যোগাযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে বহুদিন আগে থেকেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে কতটা গণতন্ত্রের চর্চা আছে, সেটা আমজনতা এখন ভালোই জানে। শুধু কি রাজনৈতিক দল? ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সে রকম খুব কম প্রতিষ্ঠানেই গণতন্ত্রের দেখা পাওয়া যাবে। লিডারশিপের বদলে বসিং যদি মুখ্য হয়ে ওঠে, তাহলে ছড়ি ঘোরানোই হয়ে উঠবে চালিকাশক্তি, তাতে সন্দেহ করার কিছু থাকে না।
অনেকেই বলে থাকেন, বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা নেই। সেখানেও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হয় না। পেশি ও অর্থশক্তিতে বলীয়ানেরাই এখন তৃণমূল রাজনীতির কান্ডারি হয়ে বসেছেন। এই নতুন ধরনের নেতৃত্বের মধ্যে যেকোনো মূল্যে পদ ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে এলাকায় ক্ষমতা বিস্তার করাটাই মুখ্য। দেশের যে এলাকায়ই যাওয়া হোক না কেন, যেকোনো দলের সাংগঠনিক নেতৃত্বের দিকে তাকানো হোক না কেন, এ ধরনের ভুঁইফোড় নেতৃত্ব দৃশ্যমান হবেই। পেশিশক্তি আর অর্থবলের কাছে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিও পরাজিত হয়েছে, এ কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো।
তিন. আবদুর রহমান বদি একজন আঞ্চলিক নেতা। সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তিনি জাতীয় নেতৃত্বের স্বাদও পেয়েছেন। সুতরাং তাঁর কৃতকর্মের আলোচনা-সমালোচনা বড় ফোরামেই হবে। আমরা তাই বিভিন্ন মহল থেকে এ ঘটনার বিশ্লেষণের অপেক্ষায় থাকব এবং পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনার উল্লেখ করব, যেখানে পেশিশক্তির মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যাবে।
আমাদের অনেকেরই নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে শ্যামল কান্তি ভক্তের কথা। তিনি ছিলেন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। ঘটনাটা ২০১৬ সালের ১৩ মের। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রকাশ্যে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছিল। এই ‘মহা আয়োজনের’ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ সেলিম ওসমান।
ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে যেকোনো মানুষকে নাজেহাল করার এই আপত্তিকর সংস্কৃতি আমাদের এখানে চালু হয়ে গেছে। এটা এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা।
কিছু একটা হলেই যে কারও ধর্মীয় অনুভূতি জেগে উঠছে এখন। তার পরিণাম হচ্ছে ভয়াবহ। একজন মানুষ বা একদল মানুষকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার পর যখন দেখা যাচ্ছে, তিনি বা তাঁরা কোনো ধরনের ধর্মীয় অবমাননার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তখন কিন্তু সেই সব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
শৈশব থেকে আমরা শিখে এসেছি, মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। আমাদের রাজনীতিবিদদের বাড়াবাড়িতে শিক্ষকেরা সে অধিকার হারিয়েছেন। ধর্মীয় অবমাননা বিষয়ে এ লেখাটি নয়। আমি বলতে চাইছি, রাজনীতিকে কতটা সংকীর্ণভাবে দেখা হলে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করানোর মধ্যে যে হিংসা, ক্রোধ, পেশিশক্তির প্রকাশ ঘটে, তা কখনোই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। রাজনীতিবিদ তাঁর তরিকার মধ্যে এই পেশিশক্তি ঢুকিয়ে ফেলেছেন। একজন প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে অপমান করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুরো শিক্ষককুলকে সেই বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন যে রাজনীতির কাছে মাথা নত করে থাকো, নইলে ‘খবর’ আছে। সেই খবর ‘স্কুল কমিটি’র মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হলেও ক্ষতি নেই।
চার. দলের ওপর মহলে যদি এই যথেচ্ছাচারের অনুমোদন থাকে, তাহলে নিচের মহলেও তা ছড়িয়ে যায়। এখন বলব ছাত্রলীগের এক আঞ্চলিক নেতার কথা। এই তো অল্প কয়েক দিন আগে শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষককে মারধর করেছেন কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী। কলেজের বাংলা বিভাগে স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষার সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ এবং ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সংবর্ধনা ও আপ্যায়নের আয়োজন করেছিল বাংলা বিভাগ। সেই আয়োজনে কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, তার জবাবদিহি চান সোহাগ ব্যাপারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষক বি এম সোহেলকে মারধর করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবশ্য ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে কলেজ কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর যা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন কখনোই শৃঙ্খলাবহির্ভূত বা বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দিই।’
খুব ভালো কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করার পর আর কিছু কি করা হয়েছে? শিক্ষকদের আপ্যায়নে ছাত্রলীগের নেতাদের কেন দাওয়াত করতে হবে, তার কি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে? শিক্ষকের শরীরে হাত তোলার জন্য কি এই বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হয়েছে? সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কি এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে শিক্ষকের শরীরে হাত তোলা মহা অন্যায়, এ কাজ যেন কেউ না করে। করলে ভয়াবহ শাস্তি?
পাঁচ. খুব সুন্দর করে মহসিন মাদবর বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন’। কথাটা ঠিক। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রদের মধ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছিল মুসলিম লীগপন্থী প্রগতিশীল ছাত্ররা। কিছুদিন পর আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি বিরোধী দলের সৃষ্টিও হয়েছিল এরই ধারাবাহিকতায়। সেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, যা এখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠন, এ কথা স্বীকার করে নিলে বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কেও ছাত্রলীগের কর্মীদের জানা থাকা দরকার। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের একটি তাৎপর্যময় দিক ছিল তাঁর সৌজন্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে খাজা নাজিমুদ্দিন ঘরানার রাজনীতিবিদ ছিলেন না, সেটা তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই বোঝা যায়। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমপন্থী প্রগতিশীল ঘরানায় ছিল তাঁর অবস্থান। ১৯৫২ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। রাজবন্দীদের মুক্তি ও একুশের ঘটনায় পুলিশের গুলিবর্ষণের তদন্ত দাবি করে শেখ মুজিব যখন খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন তিনি আক্রোশে আকীর্ণ ছিলেন না। তিনি সৌজন্যবোধ হারিয়ে ফেলেননি; বরং তিনি খাজা সাহেবের ভদ্রতার কথা লিখেছেন। খাজা নাজিমুদ্দিনও শেখ মুজিবকে ‘শরীর কেমন, কেমন আছো, কত দিন থাকবে’—এ প্রশ্নগুলো করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, খাজা সাহেব জানতেন শেখ মুজিব একজন ভালো কর্মী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্নেহও করতেন।
বইয়ের অন্য জায়গায় বঙ্গবন্ধু নাজিমুদ্দিনের সমালোচনা করেছেন যখন, তখন ‘তিনি দুর্বল প্রকৃতির,’ ‘কর্মদক্ষতা এবং উদ্যোগের অভাব’ রয়েছে তাঁর, এসব যখন লিখছেন, তখন পাশাপাশি তিনি যে ‘অমায়িক’ এ কথাটাও উল্লেখ করছেন।
ওপরে যে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে বঙ্গবন্ধুর আচরণ কতটা আলাদা, সেটা দেখানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু-প্রসঙ্গ তুলে আনলাম। এবার এই নেতা-পাতিনেতা-ছাত্রনেতাদের নিরিখে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করে দেখুন। বঙ্গবন্ধু নিজেই স্বীকার করেছেন, কৈশোরে ডাকাবুকো ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা কোন সময়? যখন অধিকার হরণ করা হতো, তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থে মারপিটও করেছেন। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করার সময় হাতাহাতি, অপমান ইত্যাদি করেছেন—এমন নজির নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবার প্রতি যত বেশি ঝুঁকেছেন, ততই হয়ে উঠেছেন পরমতসহিষ্ণু। যাঁরা ভিন্নমতের অধিকারী, তাঁদেরও তিনি আঘাত করেননি। স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অনেককে তিনি অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যা মুজিব চরিত্রের মহৎ দিকটিকেই তুলে আনে। যদিও অনুকম্পাপ্রাপ্তরা অকৃতজ্ঞতারই পরিচয় দিয়েছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
শুধু ভেবে দেখতে বলি, বঙ্গবন্ধু কোনো বর্ধিত সভায় তাঁরই দলের এক নেতাকে পেটাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে কোনো শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে কিংবা শিক্ষকদের আপ্যায়নে কেন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নিমন্ত্রণ করলেন না, তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষকের শরীরে হাত তুলছেন–এ রকম দৃশ্য কি কল্পনাতেও আসে?
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু এই ধরনের দলীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না। তাহলে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে কেন এই রাজনীতি বাড়তে থাকবে, সে প্রশ্নটি অবশ্যই করতে হবে রাজনীতিবিদদের কাছে। তাঁরা কী বলেন, তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।
জাহীদ রেজা নূর,উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান বদি প্রমাণ করেছেন, শুধু রাজনীতিতে নন, অন্য আরও অনেক কিছুতেই তিনি দক্ষ, এমনকি কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় নাম লেখালেও তিনি ভালো করতে পারতেন।
কথাটা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে বলা হলেও আসলে তা শুধু বদির সমস্যা নয়। রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ ধরনের বদিতেই দিনে দিনে ভরে যাবে রাজনীতির মাঠ। রাজনীতি যে নিজের দলের লক্ষ্য ও আদর্শের সমন্বয়ে দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সেটা দিনদিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে যখন আইনজ্ঞরা উপেক্ষিত হন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাই হয়ে পড়েন সংখ্যাগুরু, তখন দেশের আইনকানুন তৈরিতে কাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়।
দুই. সংকটটা রাজনীতির গোড়ায় ঢুকে গেছে। রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সঙ্গে পেশিশক্তির একটা যোগাযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে বহুদিন আগে থেকেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে কতটা গণতন্ত্রের চর্চা আছে, সেটা আমজনতা এখন ভালোই জানে। শুধু কি রাজনৈতিক দল? ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সে রকম খুব কম প্রতিষ্ঠানেই গণতন্ত্রের দেখা পাওয়া যাবে। লিডারশিপের বদলে বসিং যদি মুখ্য হয়ে ওঠে, তাহলে ছড়ি ঘোরানোই হয়ে উঠবে চালিকাশক্তি, তাতে সন্দেহ করার কিছু থাকে না।
অনেকেই বলে থাকেন, বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা নেই। সেখানেও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হয় না। পেশি ও অর্থশক্তিতে বলীয়ানেরাই এখন তৃণমূল রাজনীতির কান্ডারি হয়ে বসেছেন। এই নতুন ধরনের নেতৃত্বের মধ্যে যেকোনো মূল্যে পদ ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে এলাকায় ক্ষমতা বিস্তার করাটাই মুখ্য। দেশের যে এলাকায়ই যাওয়া হোক না কেন, যেকোনো দলের সাংগঠনিক নেতৃত্বের দিকে তাকানো হোক না কেন, এ ধরনের ভুঁইফোড় নেতৃত্ব দৃশ্যমান হবেই। পেশিশক্তি আর অর্থবলের কাছে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিও পরাজিত হয়েছে, এ কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো।
তিন. আবদুর রহমান বদি একজন আঞ্চলিক নেতা। সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তিনি জাতীয় নেতৃত্বের স্বাদও পেয়েছেন। সুতরাং তাঁর কৃতকর্মের আলোচনা-সমালোচনা বড় ফোরামেই হবে। আমরা তাই বিভিন্ন মহল থেকে এ ঘটনার বিশ্লেষণের অপেক্ষায় থাকব এবং পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনার উল্লেখ করব, যেখানে পেশিশক্তির মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যাবে।
আমাদের অনেকেরই নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে শ্যামল কান্তি ভক্তের কথা। তিনি ছিলেন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। ঘটনাটা ২০১৬ সালের ১৩ মের। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রকাশ্যে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছিল। এই ‘মহা আয়োজনের’ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ সেলিম ওসমান।
ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে যেকোনো মানুষকে নাজেহাল করার এই আপত্তিকর সংস্কৃতি আমাদের এখানে চালু হয়ে গেছে। এটা এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা।
কিছু একটা হলেই যে কারও ধর্মীয় অনুভূতি জেগে উঠছে এখন। তার পরিণাম হচ্ছে ভয়াবহ। একজন মানুষ বা একদল মানুষকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার পর যখন দেখা যাচ্ছে, তিনি বা তাঁরা কোনো ধরনের ধর্মীয় অবমাননার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তখন কিন্তু সেই সব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
শৈশব থেকে আমরা শিখে এসেছি, মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। আমাদের রাজনীতিবিদদের বাড়াবাড়িতে শিক্ষকেরা সে অধিকার হারিয়েছেন। ধর্মীয় অবমাননা বিষয়ে এ লেখাটি নয়। আমি বলতে চাইছি, রাজনীতিকে কতটা সংকীর্ণভাবে দেখা হলে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করানোর মধ্যে যে হিংসা, ক্রোধ, পেশিশক্তির প্রকাশ ঘটে, তা কখনোই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। রাজনীতিবিদ তাঁর তরিকার মধ্যে এই পেশিশক্তি ঢুকিয়ে ফেলেছেন। একজন প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে অপমান করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুরো শিক্ষককুলকে সেই বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন যে রাজনীতির কাছে মাথা নত করে থাকো, নইলে ‘খবর’ আছে। সেই খবর ‘স্কুল কমিটি’র মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হলেও ক্ষতি নেই।
চার. দলের ওপর মহলে যদি এই যথেচ্ছাচারের অনুমোদন থাকে, তাহলে নিচের মহলেও তা ছড়িয়ে যায়। এখন বলব ছাত্রলীগের এক আঞ্চলিক নেতার কথা। এই তো অল্প কয়েক দিন আগে শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষককে মারধর করেছেন কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী। কলেজের বাংলা বিভাগে স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষার সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ এবং ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সংবর্ধনা ও আপ্যায়নের আয়োজন করেছিল বাংলা বিভাগ। সেই আয়োজনে কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, তার জবাবদিহি চান সোহাগ ব্যাপারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষক বি এম সোহেলকে মারধর করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবশ্য ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে কলেজ কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর যা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন কখনোই শৃঙ্খলাবহির্ভূত বা বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দিই।’
খুব ভালো কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করার পর আর কিছু কি করা হয়েছে? শিক্ষকদের আপ্যায়নে ছাত্রলীগের নেতাদের কেন দাওয়াত করতে হবে, তার কি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে? শিক্ষকের শরীরে হাত তোলার জন্য কি এই বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হয়েছে? সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কি এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে শিক্ষকের শরীরে হাত তোলা মহা অন্যায়, এ কাজ যেন কেউ না করে। করলে ভয়াবহ শাস্তি?
পাঁচ. খুব সুন্দর করে মহসিন মাদবর বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন’। কথাটা ঠিক। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রদের মধ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছিল মুসলিম লীগপন্থী প্রগতিশীল ছাত্ররা। কিছুদিন পর আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি বিরোধী দলের সৃষ্টিও হয়েছিল এরই ধারাবাহিকতায়। সেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, যা এখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠন, এ কথা স্বীকার করে নিলে বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কেও ছাত্রলীগের কর্মীদের জানা থাকা দরকার। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের একটি তাৎপর্যময় দিক ছিল তাঁর সৌজন্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে খাজা নাজিমুদ্দিন ঘরানার রাজনীতিবিদ ছিলেন না, সেটা তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই বোঝা যায়। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমপন্থী প্রগতিশীল ঘরানায় ছিল তাঁর অবস্থান। ১৯৫২ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। রাজবন্দীদের মুক্তি ও একুশের ঘটনায় পুলিশের গুলিবর্ষণের তদন্ত দাবি করে শেখ মুজিব যখন খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন তিনি আক্রোশে আকীর্ণ ছিলেন না। তিনি সৌজন্যবোধ হারিয়ে ফেলেননি; বরং তিনি খাজা সাহেবের ভদ্রতার কথা লিখেছেন। খাজা নাজিমুদ্দিনও শেখ মুজিবকে ‘শরীর কেমন, কেমন আছো, কত দিন থাকবে’—এ প্রশ্নগুলো করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, খাজা সাহেব জানতেন শেখ মুজিব একজন ভালো কর্মী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্নেহও করতেন।
বইয়ের অন্য জায়গায় বঙ্গবন্ধু নাজিমুদ্দিনের সমালোচনা করেছেন যখন, তখন ‘তিনি দুর্বল প্রকৃতির,’ ‘কর্মদক্ষতা এবং উদ্যোগের অভাব’ রয়েছে তাঁর, এসব যখন লিখছেন, তখন পাশাপাশি তিনি যে ‘অমায়িক’ এ কথাটাও উল্লেখ করছেন।
ওপরে যে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে বঙ্গবন্ধুর আচরণ কতটা আলাদা, সেটা দেখানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু-প্রসঙ্গ তুলে আনলাম। এবার এই নেতা-পাতিনেতা-ছাত্রনেতাদের নিরিখে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করে দেখুন। বঙ্গবন্ধু নিজেই স্বীকার করেছেন, কৈশোরে ডাকাবুকো ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা কোন সময়? যখন অধিকার হরণ করা হতো, তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থে মারপিটও করেছেন। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করার সময় হাতাহাতি, অপমান ইত্যাদি করেছেন—এমন নজির নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবার প্রতি যত বেশি ঝুঁকেছেন, ততই হয়ে উঠেছেন পরমতসহিষ্ণু। যাঁরা ভিন্নমতের অধিকারী, তাঁদেরও তিনি আঘাত করেননি। স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অনেককে তিনি অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যা মুজিব চরিত্রের মহৎ দিকটিকেই তুলে আনে। যদিও অনুকম্পাপ্রাপ্তরা অকৃতজ্ঞতারই পরিচয় দিয়েছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
শুধু ভেবে দেখতে বলি, বঙ্গবন্ধু কোনো বর্ধিত সভায় তাঁরই দলের এক নেতাকে পেটাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে কোনো শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে কিংবা শিক্ষকদের আপ্যায়নে কেন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নিমন্ত্রণ করলেন না, তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষকের শরীরে হাত তুলছেন–এ রকম দৃশ্য কি কল্পনাতেও আসে?
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু এই ধরনের দলীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না। তাহলে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে কেন এই রাজনীতি বাড়তে থাকবে, সে প্রশ্নটি অবশ্যই করতে হবে রাজনীতিবিদদের কাছে। তাঁরা কী বলেন, তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।
জাহীদ রেজা নূর,উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান বদি প্রমাণ করেছেন, শুধু রাজনীতিতে নন, অন্য আরও অনেক কিছুতেই তিনি দক্ষ, এমনকি কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় নাম লেখালেও তিনি ভালো করতে পারতেন।
কথাটা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে বলা হলেও আসলে তা শুধু বদির সমস্যা নয়। রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ ধরনের বদিতেই দিনে দিনে ভরে যাবে রাজনীতির মাঠ। রাজনীতি যে নিজের দলের লক্ষ্য ও আদর্শের সমন্বয়ে দেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সেটা দিনদিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে যখন আইনজ্ঞরা উপেক্ষিত হন, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাই হয়ে পড়েন সংখ্যাগুরু, তখন দেশের আইনকানুন তৈরিতে কাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়।
দুই. সংকটটা রাজনীতির গোড়ায় ঢুকে গেছে। রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সঙ্গে পেশিশক্তির একটা যোগাযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে বহুদিন আগে থেকেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে কতটা গণতন্ত্রের চর্চা আছে, সেটা আমজনতা এখন ভালোই জানে। শুধু কি রাজনৈতিক দল? ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সে রকম খুব কম প্রতিষ্ঠানেই গণতন্ত্রের দেখা পাওয়া যাবে। লিডারশিপের বদলে বসিং যদি মুখ্য হয়ে ওঠে, তাহলে ছড়ি ঘোরানোই হয়ে উঠবে চালিকাশক্তি, তাতে সন্দেহ করার কিছু থাকে না।
অনেকেই বলে থাকেন, বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা নেই। সেখানেও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হয় না। পেশি ও অর্থশক্তিতে বলীয়ানেরাই এখন তৃণমূল রাজনীতির কান্ডারি হয়ে বসেছেন। এই নতুন ধরনের নেতৃত্বের মধ্যে যেকোনো মূল্যে পদ ধরে রাখার প্রবণতা রয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে এলাকায় ক্ষমতা বিস্তার করাটাই মুখ্য। দেশের যে এলাকায়ই যাওয়া হোক না কেন, যেকোনো দলের সাংগঠনিক নেতৃত্বের দিকে তাকানো হোক না কেন, এ ধরনের ভুঁইফোড় নেতৃত্ব দৃশ্যমান হবেই। পেশিশক্তি আর অর্থবলের কাছে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিও পরাজিত হয়েছে, এ কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো।
তিন. আবদুর রহমান বদি একজন আঞ্চলিক নেতা। সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তিনি জাতীয় নেতৃত্বের স্বাদও পেয়েছেন। সুতরাং তাঁর কৃতকর্মের আলোচনা-সমালোচনা বড় ফোরামেই হবে। আমরা তাই বিভিন্ন মহল থেকে এ ঘটনার বিশ্লেষণের অপেক্ষায় থাকব এবং পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনার উল্লেখ করব, যেখানে পেশিশক্তির মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যাবে।
আমাদের অনেকেরই নিশ্চয় মনে পড়ে যাবে শ্যামল কান্তি ভক্তের কথা। তিনি ছিলেন পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছিলেন। ঘটনাটা ২০১৬ সালের ১৩ মের। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রকাশ্যে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছিল। এই ‘মহা আয়োজনের’ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ সেলিম ওসমান।
ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে যেকোনো মানুষকে নাজেহাল করার এই আপত্তিকর সংস্কৃতি আমাদের এখানে চালু হয়ে গেছে। এটা এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা।
কিছু একটা হলেই যে কারও ধর্মীয় অনুভূতি জেগে উঠছে এখন। তার পরিণাম হচ্ছে ভয়াবহ। একজন মানুষ বা একদল মানুষকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার পর যখন দেখা যাচ্ছে, তিনি বা তাঁরা কোনো ধরনের ধর্মীয় অবমাননার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তখন কিন্তু সেই সব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে সে রকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
শৈশব থেকে আমরা শিখে এসেছি, মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। আমাদের রাজনীতিবিদদের বাড়াবাড়িতে শিক্ষকেরা সে অধিকার হারিয়েছেন। ধর্মীয় অবমাননা বিষয়ে এ লেখাটি নয়। আমি বলতে চাইছি, রাজনীতিকে কতটা সংকীর্ণভাবে দেখা হলে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করানোর মধ্যে যে হিংসা, ক্রোধ, পেশিশক্তির প্রকাশ ঘটে, তা কখনোই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। রাজনীতিবিদ তাঁর তরিকার মধ্যে এই পেশিশক্তি ঢুকিয়ে ফেলেছেন। একজন প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে অপমান করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুরো শিক্ষককুলকে সেই বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন যে রাজনীতির কাছে মাথা নত করে থাকো, নইলে ‘খবর’ আছে। সেই খবর ‘স্কুল কমিটি’র মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হলেও ক্ষতি নেই।
চার. দলের ওপর মহলে যদি এই যথেচ্ছাচারের অনুমোদন থাকে, তাহলে নিচের মহলেও তা ছড়িয়ে যায়। এখন বলব ছাত্রলীগের এক আঞ্চলিক নেতার কথা। এই তো অল্প কয়েক দিন আগে শরীয়তপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষককে মারধর করেছেন কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ ব্যাপারী। কলেজের বাংলা বিভাগে স্নাতক সম্মান (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের মৌখিক পরীক্ষার সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন বিশেষজ্ঞ এবং ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সংবর্ধনা ও আপ্যায়নের আয়োজন করেছিল বাংলা বিভাগ। সেই আয়োজনে কেন ছাত্রলীগ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, তার জবাবদিহি চান সোহাগ ব্যাপারী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁরা এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষক বি এম সোহেলকে মারধর করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবশ্য ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে কলেজ কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর যা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন কখনোই শৃঙ্খলাবহির্ভূত বা বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দিই।’
খুব ভালো কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করার পর আর কিছু কি করা হয়েছে? শিক্ষকদের আপ্যায়নে ছাত্রলীগের নেতাদের কেন দাওয়াত করতে হবে, তার কি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে? শিক্ষকের শরীরে হাত তোলার জন্য কি এই বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হয়েছে? সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কি এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে শিক্ষকের শরীরে হাত তোলা মহা অন্যায়, এ কাজ যেন কেউ না করে। করলে ভয়াবহ শাস্তি?
পাঁচ. খুব সুন্দর করে মহসিন মাদবর বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন’। কথাটা ঠিক। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রদের মধ্যে একটা জায়গা করে নিয়েছিল মুসলিম লীগপন্থী প্রগতিশীল ছাত্ররা। কিছুদিন পর আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি বিরোধী দলের সৃষ্টিও হয়েছিল এরই ধারাবাহিকতায়। সেই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, যা এখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই সংগঠন, এ কথা স্বীকার করে নিলে বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কেও ছাত্রলীগের কর্মীদের জানা থাকা দরকার। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের একটি তাৎপর্যময় দিক ছিল তাঁর সৌজন্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে খাজা নাজিমুদ্দিন ঘরানার রাজনীতিবিদ ছিলেন না, সেটা তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই বোঝা যায়। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমপন্থী প্রগতিশীল ঘরানায় ছিল তাঁর অবস্থান। ১৯৫২ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। রাজবন্দীদের মুক্তি ও একুশের ঘটনায় পুলিশের গুলিবর্ষণের তদন্ত দাবি করে শেখ মুজিব যখন খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন তিনি আক্রোশে আকীর্ণ ছিলেন না। তিনি সৌজন্যবোধ হারিয়ে ফেলেননি; বরং তিনি খাজা সাহেবের ভদ্রতার কথা লিখেছেন। খাজা নাজিমুদ্দিনও শেখ মুজিবকে ‘শরীর কেমন, কেমন আছো, কত দিন থাকবে’—এ প্রশ্নগুলো করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, খাজা সাহেব জানতেন শেখ মুজিব একজন ভালো কর্মী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্নেহও করতেন।
বইয়ের অন্য জায়গায় বঙ্গবন্ধু নাজিমুদ্দিনের সমালোচনা করেছেন যখন, তখন ‘তিনি দুর্বল প্রকৃতির,’ ‘কর্মদক্ষতা এবং উদ্যোগের অভাব’ রয়েছে তাঁর, এসব যখন লিখছেন, তখন পাশাপাশি তিনি যে ‘অমায়িক’ এ কথাটাও উল্লেখ করছেন।
ওপরে যে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে বঙ্গবন্ধুর আচরণ কতটা আলাদা, সেটা দেখানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু-প্রসঙ্গ তুলে আনলাম। এবার এই নেতা-পাতিনেতা-ছাত্রনেতাদের নিরিখে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করে দেখুন। বঙ্গবন্ধু নিজেই স্বীকার করেছেন, কৈশোরে ডাকাবুকো ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা কোন সময়? যখন অধিকার হরণ করা হতো, তখন তিনি বৃহত্তর স্বার্থে মারপিটও করেছেন। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করার সময় হাতাহাতি, অপমান ইত্যাদি করেছেন—এমন নজির নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবার প্রতি যত বেশি ঝুঁকেছেন, ততই হয়ে উঠেছেন পরমতসহিষ্ণু। যাঁরা ভিন্নমতের অধিকারী, তাঁদেরও তিনি আঘাত করেননি। স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অনেককে তিনি অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যা মুজিব চরিত্রের মহৎ দিকটিকেই তুলে আনে। যদিও অনুকম্পাপ্রাপ্তরা অকৃতজ্ঞতারই পরিচয় দিয়েছে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
শুধু ভেবে দেখতে বলি, বঙ্গবন্ধু কোনো বর্ধিত সভায় তাঁরই দলের এক নেতাকে পেটাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে কোনো শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে কিংবা শিক্ষকদের আপ্যায়নে কেন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে নিমন্ত্রণ করলেন না, তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষকের শরীরে হাত তুলছেন–এ রকম দৃশ্য কি কল্পনাতেও আসে?
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু এই ধরনের দলীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না। তাহলে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে কেন এই রাজনীতি বাড়তে থাকবে, সে প্রশ্নটি অবশ্যই করতে হবে রাজনীতিবিদদের কাছে। তাঁরা কী বলেন, তা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।
জাহীদ রেজা নূর,উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান
২৫ এপ্রিল ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান
২৫ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান
২৫ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আবার আলোচনায় উঠে এসেছেন কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের তিন নেতাকে পিটিয়েছেন। পেটানোর কারণ মতবিরোধ। ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই বদি যদি বলার চেষ্টা করেন যে তিনি মারপিট করেননি, শুধু ফুলের টোকা দিয়েছেন, তাহলে কেউই তা বিশ্বাস করবে না। আবদুর রহমান
২৫ এপ্রিল ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫