Ajker Patrika

অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় সরকারে রূপ দেওয়া উচিত

আমীন আল রশীদ
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯: ৩০
অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় সরকারে রূপ দেওয়া উচিত

জাতীয় সরকারের ধারণা বিশ্ব তো বটেই, বাংলাদেশেও নতুন নয়। ২০২১ সালে এ রকম একটি সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি আলোর মুখ দেখেনি। সাধারণভাবে জাতীয় সরকার বলতে বোঝানো হয় এমন একটি সরকারকে, যারা দৃশ্যত জনগণের স্বার্থে কাজ করে এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে। 

যুক্তরাজ্যে ১৯৩০-এর দশকে অর্থনৈতিক সংকটের সময় একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। এই সরকার মূলত বিভিন্ন প্রধান রাজনৈতিক দল যেমন লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি ও লিবারেল পার্টির মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। এই সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর দেশ পুনর্গঠনে সহযোগিতা করতে পারে। এপার্থাইডের অবসানের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠিত হয়েছিল, যাতে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ন্যাশনাল পার্টি এবং ইনকাথা ফ্রিডম পার্টির সদস্যরা অংশ নেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিগত এবং রাজনৈতিক বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসছিল। 

তার মানে জাতীয় সরকার হচ্ছে কোনো একটি দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে গড়ে তোলা একধরনের বহুদলীয় সরকার। সেই অর্থে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছে, সেগুলো জাতীয় সরকার নয়। কেননা ওই সরকার পরিচালনার সঙ্গে ছিলেন মূলত সাবেক সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী তথা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ এটি নির্দলীয়। নির্দলীয় সরকারকে জাতীয় সরকার বলার সুযোগ নেই। ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে নাগরিক অধিকার-বিষয়ক সংগঠন ব্লাস্টের আয়োজনে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে একটি আলোচনায় একজন সিনিয়র আইনজীবী এই সরকারকে বলেছেন ‘ভালো মানুষের সরকার’। 

বাস্তবতা হলো, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ভালো মানুষের চেয়েও বেশি দরকার যোগ্য ও দক্ষ মানুষ। একজন শিক্ষক ক্লাসে যতই ভালো পড়ান না কেন; একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী যত মানবিক ও সৎ মানুষ হোন না কেন; একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা যতই দুর্নীতিমুক্ত হোন না কেন—দিন শেষে রাষ্ট্র পরিচালনা একটি বিরাট রাজনৈতিক যজ্ঞ। তবে নাগরিক সমাজের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো যোগ্য ব্যক্তি নেই, এমনটিও বলার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাঁরা এবারের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন—এখন পর্যন্ত তাঁদের কারও ব্যক্তিগত দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ না উঠলেও বা তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো হলেও কারও কারও যোগ্যতা, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় চালানোর মতো দক্ষতা আছে কি না—তা নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা আছে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান সম্প্রতি একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে বলেছেন, ‘একজন আমলা যদি শয়তান হয়, তাহলে সে এক শ ইবলিসের চেয়েও বড় ভয়ংকর।’ কথা হচ্ছে, এ রকম আমলা কি এখনো নেই? তাঁদের সঙ্গে পেরে ওঠার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে শুধু ভালো মানুষ হলেই চলবে না, শয়তানের শয়তানি ধরতে পারার মতো কৌশলও তাঁর জানা থাকা দরকার। এটি ভালো বোঝেন রাজনীতিবিদেরা। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যদিও রাজনীতিবিদেরা, বিশেষ করে মন্ত্রী-এমপিরা অনেক বেশি আমলানির্ভর হয়ে গিয়েছিলেন। তার কারণ অযোগ্য লোকদের এমপি-মন্ত্রী হওয়া। কিন্তু যখন যোগ্য লোকেরা এমপি-মন্ত্রী হতেন, তখন আমলারা তটস্থ থাকতেন। অতএব এখন অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা বদিউর রহমানের ভাষায় ‘ইবলিস আমলাদের’ কতটা বাগে আনতে পারছেন বা পেরেছেন—সেটি বিরাট প্রশ্ন। কারণ, এরই মধ্যে গণমাধ্যমে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে যে পুলিশ এখনো সেভাবে সক্রিয় হয়নি। প্রশাসনেও যে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে, সেটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাহলে সমাধান কী? সমাধান জাতীয় সরকার। 

অন্তর্বর্তী সরকার যে তিন বা ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে চলে যাবে না বরং তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি শেষ করার পরেই ভোটের আয়োজন করবে, তা এরই মধ্যে একাধিকবার বলা হয়েছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে গিয়ে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টাও এ কথা বলেছেন। সম্প্রতি সেনাপ্রধান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দেড় বছর পরে নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের ভেতরে আরও বেশি সময় (দুই থেকে তিন বছর) থাকার বিষয়ে আলোচনা আছে। 

যদি তাই হয়, অর্থাৎ যদি দেড়-দুই বছরের আগে নির্বাচন না হয়, তাহলে এখন যে ২১ জন উপদেষ্টা আছেন, তাঁরা এই লম্বা সময় সরকার চালিয়ে যেতে পারবেন? আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি, বিশেষ করে বাজার ঠিক রাখা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যদি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানায় এবং অভ্যুত্থানের মুখে পতন হলেও আওয়ামী লীগ যদি মাস কয়েকের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এবং তারাও যদি মাঠ গরম করে ফেলে—সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আরও কঠিন কাজ। তার সঙ্গে আছে সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি করে প্রতিবেদন সরকারকে দেবে। সেই প্রতিবেদনের আলোকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। সুতরাং বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এতসব কাজের চাপ নিতে আদৌ সক্ষম কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন। 

এমতাবস্থায় উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। একজনের মাথার ওপর একটির বেশি মন্ত্রণালয় রাখা উচিত নয়। কেননা একজন ব্যক্তির ওপর একাধিক মন্ত্রণালয় থাকলে তাঁর পক্ষে কোনো মন্ত্রণালয়ের কাজ ঠিকমতো করা সম্ভব নয়। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গেলে ভুল হওয়ারও শঙ্কা থাকে। কাজের গুণগত মান বজায় রাখা কঠিন। 

উপদেষ্টাদের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এই সরকারকে একটি বহুদলীয় জাতীয় সরকারে রূপ দিতে পারলে চলমান সংস্কার এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি সর্বজনগ্রাহ্য ক্ষেত্র তৈরি করা সহজ হবে। এই সরকার আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলো থেকে কাউকে হয়তো নেবে না বা নিতে চাইলেও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী কোনো অংশের আপত্তির মুখে পড়বে, কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের বাইরে আরও যেসব দল আছে, সেসব দলে নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয় চালানোর মতো যোগ্য, দক্ষ এবং ‍তুলনামূলক ভালো মানুষ আছেন। 

রাজনীতিবিদ মানেই খারাপ, দুর্নীতিবাজ—এটি একটি গড়পড়তা ধারণা। এখনো প্রচুর রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে যাঁরা নীতিনৈতিকতা মেনে চলেন। যাঁদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। যাঁরা যোগ্য ও দক্ষ এবং নেতৃত্বের গুণাবলি আছে। তা ছাড়া ১৮ কোটি মানুষের মধ্য থেকে ১০-১৫ জন ভালো রাজনীতিবিদ পাওয়া যাবে না, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। 

হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব অনেক। অন্তর্বর্তী সরকারে তাদের একজন প্রতিনিধি আছেন। একইভাবে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবিসহ অন্যান্য তুলনামূলক ছোট দল থেকেও যদি যোগ্যতম লোকদের নিয়ে এই সরকার পুনর্গঠন করা যায়, তাহলে সেটি দেশের স্থিতিশীলতা, আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং সর্বোপরি কাঙ্ক্ষিত সংস্কারকাজ এগিয়ে নেওয়া সহজ করবে। শর্ত থাকবে, যেসব নেতা এই অন্তর্বর্তী বা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তাঁরা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা আছে, এ রকম অনেক রাজনীতিবিদ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে—যাঁরা একই সঙ্গে ভালো মানুষ এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ।

সাংবাদিক ও লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত