Ajker Patrika

জাতির জীবনে প্রেরণা

মামুনুর রশীদ
জাতির জীবনে প্রেরণা

মানুষের জীবনে স্বর্ণযুগ সব সময় আসে না। আমরা যারা শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত তারা সব সময়ই জীবন থেকে প্রেরণা খুঁজি। একটা বড় প্রেরণার জায়গা তৈরি হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের সময়ে, যার একটা সফল সমাপ্তি হয়েছিল এবং আমরা আমাদের প্রিয় ভাষাকে রক্ষা করতে পেরেছি। এরপর ষাটের দশকের গণ-অভ্যুত্থান এবং যার পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধ। তারও একটা সফল সমাপ্তি ঘটেছিল। এই সবকিছুই এসেছিল রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু পঁচাত্তরে এসে আবারও একটি রক্তক্ষয়ী প্রতিক্রিয়াশীল অভ্যুত্থান ঘটে। যার ফলাফল ১৫টি বছরের জন্য দেশটিকে নিয়ে পুনরায় বিপরীতমুখী প্রচেষ্টা চলে। এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াই এবং তারও একটা সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। এই সময়ে একটা প্রতিবাদী শিল্প-সাহিত্যের জন্ম নেয়। সব রাজনৈতিক শক্তি সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করেছিল। একমাত্র মৌলবাদী এবং একাত্তরের শত্রুদের সঙ্গে নেওয়া হয়নি।

কিন্তু গণতন্ত্রের এই সংগ্রামের একটা সফল সমাপ্তি হলেও সাম্প্রদায়িক শক্তির অবসান ঘটেনি। এরপর নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ ঘটে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সমাজে অনৈক্য থেকেই যায়। সেই অনৈক্য নানা ধরনের সংঘর্ষ এবং আন্দোলনের পথ ধরে জনজীবনে নতুন কোনো প্রেরণার সৃষ্টি করে না। এ এক দুঃখজনক ঘটনা এবং সব সময়ই জিম্মি হয়েছে মানুষ। যেমন—হরতাল, অবরোধ, দলে দলে সংঘর্ষ এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় কখনো মৌলবাদীদের অংশীদারি আবার কখনো ব্যবসায়ীদের ব্যাপকভাবে অংশীদারি।

এই অনৈক্যের ফলে আমাদের সম্পদ বিপুলভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশগ্রহণের ফলে একটা অসম্ভব কল্পনাতীত বিত্তের মালিক তাঁরা হয়ে যান। দেশটা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যে অঙ্গীকার ছিল সমাজতন্ত্রের, তা থেকে ছিটকে গিয়ে একটা পুঁজিবাদী ধারার দেশে পরিণত হয়। এই পুঁজিবাদের যে বড় শক্তি তা হলো বৈষম্য। আর এই বৈষম্যের ফলাফল হচ্ছে একশ্রেণির লোক রাতারাতি বড়লোক হবে, অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য বরণ করবে। আর এই পুঁজিবাদ রাষ্ট্রের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব নাগরিক অধিকারকে বিপর্যস্ত করে ব্যক্তিগত ব্যবসার অন্তর্গত করে তুলবে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে তারা ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবে, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি করে বিপুল বিত্তের মালিক বনে যাবে। আমাদের চোখের সামনেই ছোট্ট একটি ক্লিনিক মাত্র দুই দশকের মধ্যে সারা দেশে বিপুল অবকাঠামো তৈরি করে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল-কলেজের শিক্ষাব্যবস্থাও একেবারেই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গড়ে তুলে অকল্পনীয় বিত্তের মালিক হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে দুটো ব্যবস্থাই ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের হাতে পড়ে একধরনের প্রায় লুটেরা সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা দেশটাকে বসবাসের অযোগ্য মনে করছে। যেসব শিক্ষাঙ্গনে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ বেশি, সেগুলোতে অভিভাবকেরা বিপুল অর্থ লগ্নি করছেন। এই লগ্নির টাকা কোথা থেকে আসে? একদিকে ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা আর অন্যদিকে আমলা-রাজনীতিবিদদের অবৈধ অর্থ। শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠাতে পারলে অর্থ পাচারের সুবিধা হবে। আর বিদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটা শিক্ষা-বাণিজ্যের মধ্যে জড়িয়ে যায়। তাদেরও তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীর দরকার। প্রয়োজনবোধে তারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে অভিবাসনের আইন পর্যন্ত সংশোধন করতে পারে।

স্বাস্থ্যব্যবস্থাগুলোও তাই। দেশের ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো যখন অপ্রতুল সামর্থ্য দেখায়, তখন বিদেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের রোগী চিকিৎসার জন্য নিবেদিত হয়। ইতিমধ্যে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার অপ্রতুল ব্যবস্থা, শিক্ষকের অভাব—সব মিলিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসক তৈরির ব্যবস্থাটিও ভেঙে পড়ে। তারপরেও নানান কৌশলে চিকিৎসকদের যথার্থ শিক্ষার সুযোগ আর অবশিষ্ট থাকে না। তাই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং বিত্তহীন মানুষেরাও বাঁচার প্রয়োজনে অবশিষ্ট সব সম্পদ বিক্রি করে হলেও বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
এমনও দেখা গেছে, চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে দেশে ও বিদেশে একটি পরিবার সম্পূর্ণভাবে পথে বসেছে। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অপচয়ের অভাব নেই।

দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, শিক্ষিত মানুষ, আমলা— প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা নেবেন কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য কোনো রকম ত্যাগ স্বীকার করবেন না। ঔপনিবেশিক আমলে আমলাদের জন্য উপজেলা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থাটি ছিল, তা অত্যন্ত বিলাসবহুল এবং অপ্রয়োজনীয়। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষা বা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা নেই, তাই আমলাদের কথামতোই তাদের চলতে হচ্ছে। আর এর ওপর আছে তদবিরের চাপ। বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সবাই আত্মীয়স্বজন। এই আত্মীয়তার উদ্দেশ্য মহৎ কোনো কাজে নয়, একেবারেই ব্যক্তিগত কারণে এবং সেই কারণটি অবশ্যই অর্থনৈতিক স্বার্থে।
প্রযুক্তির অভাবিত উন্নতির ফলে এবং সমাজে সত্যিকারের প্রেরণার অভাবের কারণে মানুষের মধ্যে একটা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য এসে গেছে। এই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য একশ্রেণির লোকের মধ্যে শুধুই বিলাসিতা এবং ভোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এই ভোগ আবার বল্গাহীন। এতই বল্গাহীন যে ভোগের ক্ষুধা মেটাতে গিয়ে যেকোনো অবৈধ কাজ বৈধ হয়ে যায়। নিজের দেশ ছেড়ে এই ভোগ বিদেশ পর্যন্ত গড়ায়। মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় নাইট ক্লাব বা ক্যাসিনোতে কোটি কোটি টাকার জুয়ায় বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়।

আরও অবাক হওয়ার কথা—দেশে এত সংস্থা থাকার পরেও ইয়াবা, আইসপিলের মতো মাদকের আমদানিকে ঠেকানো যাচ্ছে না। অবাক হওয়ার বিষয়—ক্রিকেট খেলা এখন শুধু একটি ক্রীড়া নয়, জুয়ার উৎস। প্রতি রানে রানে জুয়া ধরে বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রকৃতিও লুণ্ঠনের এক অপূর্ব জায়গা। পাহাড় কেটে তা দখল করা, বনভূমি উজাড় করে সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা করা এবং বালু উত্তোলনের নামে নদীর সর্বনাশ ঘটানো—এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুরা শিক্ষায় কোনো আনন্দ পাচ্ছে না, শুধু নম্বরের জন্য কোচিং সেন্টারে বিরক্তিকর সময় পার করছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকারের কোনো শিক্ষা হচ্ছে না।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছাত্ররাজনীতির চরম অধঃপতন ঘটেছে। ছাত্ররা ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলের অন্তঃসারশূন্যতার সুযোগে সব কটি দলেরই ছাত্রসংগঠন নিজেদের ইচ্ছামতো বিভক্তি ডেকে আনছে এবং সেখানেও গভীর আত্মসচেতনতার অভাব। তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি বা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে যে ছাত্ররাজনীতির চিত্র পাওয়া যায়, সে রকম কোনো প্রেরণার জায়গা আজকের ছাত্রদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। সাধারণ ছাত্ররা সব সময় একটা ভয়ের মধ্যে থাকে, হল, হোস্টেলে একটি সিট পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। হাউস টিউটর করুণার পাত্র হিসেবে দিন যাপন করেন। কেউ কেউ এর সুযোগ নিয়ে শিক্ষক রাজনীতিতে একধরনের চাপ প্রয়োগ করে থাকে।

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ক্রীড়া হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছে। কয়েকবার তারা বিজয়ী হলেও উপর্যুপরি পরাজয়ের ফলে জনগণও নিজেদের পরাজিত মনে করে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এই ক্রীড়া সারা দিনের জন্য পুরো জাতিকে আটকে রাখে। এর বিকল্প কোনো ক্রীড়া সমাজে প্রেরণার সৃষ্টি করতে পারে কি না, তা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো ভাবনা নেই। এই ক্রীড়ার ফলে অন্য সব ক্রীড়ায় সরকারি বিনিয়োগ একেবারে কমে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ফুটবলের মতো একটি জনপ্রিয় খেলা নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে শুকিয়ে মরছে।

মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন, সমাজের প্রতিটি বিষয়কে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা তার থাকা প্রয়োজন এবং তার জন্য একটা মুক্তচিন্তার মাধ্যমে সমালোচনাও করা উচিত। কিন্তু প্রতিটি বিষয়ে যদি শুধু নিজের কথা ভাবা হয় তাহলে তা আত্মঘাতী হয়ে পড়তে পারে। সমাজে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বলতে যা বুঝি তাতে প্রেরণার কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সমাজে আন্দোলনও প্রয়োজন। তবে সেই আন্দোলন যদি প্রেরণার সৃষ্টি করতে না পারে, তাহলে তা বিরক্তিকর কালক্ষেপণ মাত্র। কিন্তু প্রেরণা ছাড়াই বা একটি জাতি কী করে বাঁচবে বা বিকশিত হবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত