Ajker Patrika

লবণাক্ততা মোকাবিলায় জৈব কৃষি, সুন্দরবনের নারীদের অনন্য লড়াই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ১৯: ০৯
ধানের দেশীয় জাত সংরক্ষণের মধ্যে লবণাক্ততার সঙ্গে লড়াই করছেন সুন্দরবনের নারীরা। ছবি: সংগৃহীত
ধানের দেশীয় জাত সংরক্ষণের মধ্যে লবণাক্ততার সঙ্গে লড়াই করছেন সুন্দরবনের নারীরা। ছবি: সংগৃহীত

বছর পঞ্চাশের বর্ণালি ধারা যখন তাঁর স্বামীর রাসায়নিক সারের দোকানে পা রাখেন, তখন কেবল স্বামীকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী তত দিনে স্কুলশিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ভারতীয় সুন্দরবনের এক প্রান্তে ছোট্ট জনপদ নিচিন্তাপুর এখন জৈব কৃষিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। বর্ণালির গ্রাম এটি।

বর্ণালিদের এলাকায় রাসায়নিক সারের দোকানগুলো একসময় কৃষকদের মিলনস্থল হয়ে উঠেছিল। আজ এসব স্থানেই তাঁরা আলোচনা করেন, কখনো একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন কোন বীজ কিনবেন, কোন সার ব্যবহার করবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সুন্দরবনে প্রধান ফসল ধান। জমিতে পুরুষদের মতোই, বরং তার চেয়ে বেশি কাজ করেন নারীরা। কিন্তু হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার কেনার সিদ্ধান্ত মূলত পুরুষেরাই নিয়ে থাকেন।

উত্তীর্ণ ধরা বর্ণালির মতোই আরেক নারী। ২০০৫ সালে যখন দোকানটির দায়িত্ব নেন, তখন তিনি এই সমস্যাগুলো জানতেন। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ধরা বলেন, ‘আমি সুন্দরবনের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি।’

তবে ধরা যা জানতেন না, তা হলো, দোকানে ১২ বছর কাটানোর পর তাঁর জীবন এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেবে। তিনি বলেন, পুরুষেরা এসে খুব হতাশা নিয়ে অভিযোগ করতেন। নিচিন্তাপুর পশ্চিমবঙ্গের কুলপি প্রশাসনিক ব্লকে কৃষকেরা অভিযোগ করতেন, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে পরের মৌসুমে আরও বেশি সার কিনতে হবে। সুন্দরবনে এটি কৃষকের অনিশ্চিত পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ভারত ও বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এই বদ্বীপ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনপ্রবণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিমিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় প্রায় ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় প্রায় নিয়মিত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।

এই অঞ্চলে মে হলো এক আতঙ্কের মাস। ২০২০ সালের মে মাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এবং ২০২৪ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে লবণাক্ত পানি ঢুকে মাটিকেও লবণাক্ত করে তুলছে। এর ফলে কৃষিজমি বছরের পর বছর চাষের অনুপযোগী থাকছে।

২০০৯ সালের মে মাসে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কিছু জায়গায় চার থেকে পাঁচ বছর কৃষিকাজ বন্ধ ছিল। ধরা বলেন, ‘নিচিন্তাপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পাঁচ বছর পরেও কারও কারও জমি এখনো লবণাক্ত।’

কিন্তু লবণাক্ত মাটিতে যা বাড়তে বাধা পায়, তা হলো আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মতভাবে উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের জাত, যার জন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। যা টিকে থাকে, তা হলো সুন্দরবনের দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী ধান, ঘূর্ণিঝড় আইলার পরে এই সত্য ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

তবু কৃষকেরা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সার কিনতে থাকেন। ধরা বলেন, কৃষকদের হতাশা ও অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে।

২০১৭ সালে ধরা নিচিন্তাপুর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠে অবস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রম কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রে জৈব কৃষির ওপর এক বছরের কোর্সে ভর্তি হন। আজ তিনি তাঁর কোম্পানি, অ্যাগ্রি ফার্মার্স প্রোডিউসার কো-লিমিটেডের চেয়ারপারসন। কোম্পানিটি জৈব কৃষিকে উৎসাহিত করে এবং নিচিন্তাপুর ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২ হাজার কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত। ধরা বলেন, ‘২ হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। কারণ, সুন্দরবনে প্রায় সব নারীই কৃষক।’ ২০২৩ সালে এই কোম্পানি গঠন করেন তিনি।

প্রশিক্ষণের পর এলাকার অশ্বত্থাতলা গ্রামের বাসিন্দা ধরা নিচিন্তাপুর ও নিকটবর্তী গ্রামগুলোর নারীদের একটি সমিতির কাছে যান। সমিতিটি তিনিই তৈরি করেছিলেন। প্রথমে স্বনির্ভর সমিতি গঠনের নজর ছিল। তবে ২০১৬ সালে বড় পরিসরে অশ্বত্থাতলা জনকল্যাণ মহিলা সমিতি গঠিত হয়। ধরা বলেন, জৈব কৃষিতে নারীরা উৎসাহের সঙ্গে সাড়া দিয়েছেন।

২০১৮ সাল থেকে ধরা এলাকার নারী কৃষকদের নিমপীঠ ইনস্টিটিউটে জৈব কৃষি কোর্সে যোগদানের জন্য সংগঠিত করতে শুরু করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৩০ জন মহিলা কৃষকের ১৫ থেকে ২০টি দল ইনস্টিটিউটে গিয়েছেন। এটি অব্যাহত থাকবে।

প্রশিক্ষণ নারী কৃষকদের জীবন বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। কেউ কেউ ভূমিহীন। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে জৈব কৃষিতে ঝুঁকেছেন। এ ছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নেও বেশ ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ।

ধরার কোম্পানি কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সাহায্য করে। ধরা বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ২ হাজার কৃষকের মধ্যে প্রায় ৫৮০ জন শেয়ারহোল্ডার এবং বাকিদের আমাদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। বাকি কৃষকদের কোম্পানি থেকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য জৈব উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়।’

এই উদ্যোগের জন্য চলতি বছর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ধরা।

ধরাকে অনুসরণ করে সুন্দরবনের অরুণনগর গ্রামে আরও অনেক নারী জৈব কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন আর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্পর্শ করেন না। তাঁরা ধান ও সবজি চাষে ব্যবহার করেন গোবর সার এবং নিমভিত্তিক কীটনাশক। এ ছাড়া কম্পোস্ট ও ভার্মিকম্পোস্ট, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে শিখেছেন তাঁরা।

এর পাশাপাশি সুন্দরবনের নারীরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন—তাঁরা দেশীয় জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছেন।

২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কারণ, তখন লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পুরুষ কৃষকেরা ব্যাপক হারে অন্যত্র চলে যান। মনে করা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে বিশেষ করে পুরুষ ও ছেলেদের এটিই বৃহত্তম অভিবাসন। ফলে পরিবারে নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কৃষিকাজের দায়িত্ব নেন এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়।

প্রায় একই সময়ে দেশীয় ধানের জলবায়ু-সহিষ্ণু বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতনভাবে এর চাষ শুরু হয়। তবে আধুনিক জাতের প্রবর্তনের পর কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ দেশীয় জাত বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিল।

সাবেক কৃষি কর্মকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘একসময় পশ্চিমবঙ্গে ৫ হাজারের বেশি দেশীয় ধানের জাত ছিল, কিন্তু এখন আমরা ১৫০টির মতো জাত খুঁজে পাই, যা চাষ করা হচ্ছে।’ তিনি তাঁর কর্মজীবনের ২০ বছর কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪০০টির বেশি দেশীয় ধানের জাত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন।

অনুপম বলেন, সবুজ বিপ্লব ঐতিহ্যবাহী ফসলের পরিবর্তে রাসায়নিক সার-সহিষ্ণু আধুনিক ধান ও গমকে উৎসাহিত করেছিল। কৃষির এই ধারণা কেবল উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রকল্প একফসলি চাষকেও উৎসাহিত করেছিল, মাটি ও ফসলের জন্য খারাপ এবং দেশীয় ফসলের পুষ্টি ও স্বল্প খরচের সুবিধাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, কালাভাত একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ধানের জাত।

অনুপম বলেন, রাসায়নিক সার, বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফসল কীটপতঙ্গের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। যার ফলে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৮০ সাল থেকে সুন্দরবনে এই প্রভাব বোঝা যেতে শুরু করে বলে জানান তিনি।

ভারতীয় প্রাণিবিদ্যা সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অমলেশ মিশ্রও সুন্দরবনের দেশীয় ধান সংরক্ষণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।

সুন্দরবনের সাগর ব্লকের বাসিন্দা মিশ্র সাগরে অমলগ্রাম পিপা নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর প্রাঙ্গণে তিনি দেশীয় ধানের জাতের একটি বীজ ভান্ডার তৈরি করছেন, যার জন্য তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টির বেশি জাতের ধান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ১২০টির বেশি সুন্দরবনের।

মিশ্র বলেন, দাদসাল, দুধের সর, ট্যাংরাসাল, খেজুরছড়ি ও হ্যাংরা সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু দেশীয় জাত। অন্যান্য দেশীয় ধান অন্যান্য ধরনের সহিষ্ণুতা দেখায়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর ধানের খেতে পানির স্তর দুই ফুটের বেশি উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কয়েকটি জাত তখনো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। মিশ্র জানান, এর মধ্যে ছিল বিন্নি, ডোকরাপাটনাই, কালাভাত, মালাবতী, পাটনাই ও তালমুগুর।

যে জাতগুলো উচ্চগতির বাতাস সহ্য করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—ট্যাংরাসাল, হোগলা, সাদামোটা, পাটনাই ও ডোকরা।

সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেশীয় ধানের জাত রয়েছে। এর মধ্যে গুলিগতি নামে দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী জাত, ২৫-৩০ দিন এক ফুট বা তার বেশি স্থির পানি সহ্য করতে পারে। জাতটি চিরতরে হারিয়ে গেছে।

কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের (স্বায়ত্তশাসিত) জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা স্নাতকোত্তর ও গবেষণা বিভাগ অমলগ্রাম পিপার সহযোগিতায় সুন্দরবনের জলবায়ু-সহিষ্ণু দেশীয় ধানের জাত চিহ্নিত করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।

বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়ক গাঙ্গুলি বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি জাত সংগ্রহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে—ভুটমুড়ি, ট্যাংরাসাল, তালমুগুর, হ্যাংরা, হোগলা, কালাভাত, নোনা বোখরা, আমন বাঁশকথা, আমন দেরাদুন গন্ধেশ্বরী, তালাদি নোনা ও সাটিয়া। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ফসলের জাতকে দেশীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি এটি ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তু অঞ্চলে কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে জন্মে থাকে। এর মানে হলো, এটি সেখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অনুপম পালের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের কয়েকটি লবণ-সহিষ্ণু জাতের মধ্যে রয়েছে—নোনা বোখরা, তালমুগুর বা কেরালার আল্টাপাতি।

মাঠপর্যায়ে এই জ্ঞান নারীরাই লালন করেন। তাঁরা বীজ সংরক্ষণ ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করেন।

রূপান্তর ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে সুন্দরবনের শিশু ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর থেকে সুন্দরবনের নারী কৃষকদের দেশীয় ধান চাষে সাহায্য করছে। তারা ব্যাপকভাবে দুধের সর ধানের বীজ বিতরণ করে। এই বীজ আবার নারীদের থেকেই সংগ্রহ করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর সুন্দরবনে ত্রাণকাজ কলকাতাভিত্তিক সংস্থাটির জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্মিতা সেন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, ত্রাণের লাইনে খুব কম পুরুষ দাঁড়িয়েছেন। পুরুষেরা সাহায্য চাইতে গেলে তাঁদের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করতেন।’

স্মিতা বলেন, ‘আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করি, কিসে তাঁদের মর্যাদা বাড়বে। নারীরা সাধারণ ত্রাণসামগ্রী, বেশি খাবার বা পোশাক চাননি। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমির লবণাক্ততা কমাতে চুন (চুনের গুঁড়ো) ও সরিষার খৈল চেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই জমিতে কাজ করতেন। যদিও তাঁরা নিজেদের কৃষক বলতে দ্বিধা করতেন!’

রূপান্তর নারীদের দিকেই মনোযোগ নিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝেমধ্যে পুরুষদের ঔদাসীন্য তাদের কাজে বরং সাহায্য করে। স্মিতা বলেন, একটি গ্রামে সংস্থার একটি গোষ্ঠীর সদস্য জৈব কৃষি চেষ্টা করার কথা বলার সময় হাসেন। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর মাটি এতটাই লবণাক্ত ছিল যে তাঁর স্বামীর মনে হয়েছিল আর চাষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু ২০২১ সালে দেশীয় বীজে ভালোভাবে সবজি ফললে এবং ২০২২ সালে দুধের সর ধান সফল হলে পরিবারটি জৈব কৃষি শুরু করে।

বর্তমানে রূপান্তরের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার নারী কৃষক। তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমন ফসল হিসেবে দুধের সর চাষ করেন।

এই নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন ৬১ বছর বয়সী মীরা খাটুয়া। এপ্রিলের এক গরম দিনে বেলা ১১টায় তাঁর দেড় বিঘা জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি এনজিও লোকদের তাঁর মাটির কুঁড়েঘরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন জাতের বীজ দেখান। তিনি ধান, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, শিম ও শাকসবজি চাষ করেন। তাঁর কুঁড়েঘর ও দরজার ওপর গৃহসজ্জার মতো পেঁয়াজ ঝুলছিল। নিজেই সেগুলো ফলিয়েছেন। আর এভাবেই পেঁয়াজগুলো দীর্ঘদিন সতেজ থাকবে বলে জানান। ৫০ বছর বয়সী ফিরোজা বিবির বাড়িতেও একইভাবে কাণ্ডসহ টমেটো ঝুলতে দেখা যায়।

এভাবেই সুন্দরবনের নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের চমৎকার অভিযোজন কৌশল উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

দ্য অয়্যারের সৌজন্যে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ু দূষণে তৃতীয় স্থানে ঢাকা, শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতের মৌসুমে বাতাস থাকে শুষ্ক। বেড়ে যায় ধূলিকণার পরিমাণ। আর এ কারণে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে। আজ সোমবার ঢাকার বায়ুমানের অবনতি হয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২৩২, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক স্কোর ২৭৪, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো মিশরের কায়রো (২৩৫), ভারতের কলকাতা (২১০) ও ভিয়েতনামের হ্যানয় (১৯১)।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি— গোড়ান, দক্ষিণ পল্লবী, ইস্টার্ন হাউজিং, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, শান্তা ফোরাম, পেয়ারাবাগ রেল লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা আবারও ১৬ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভোরবেলা কিছুটা কুয়াশা পড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আজ সোমবার সকালে রাজধানী ঢাকায় রোদের দেখা মিলেছে। তবে গতকালের চেয়ে কিছুটা বেশি শীত পড়ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকালে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৭ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সকালে সূর্যের দেখা নেই, কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। পাশাপাশি বইছিল হালকা হিমেল বাতাস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকালে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ পরিষ্কার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৬ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় বেড়েছে বায়ুদূষণ, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কাবুল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতের মৌসুমে বাতাস থাকে শুষ্ক। বেড়ে যায় ধূলিকণার পরিমাণ। আর এ কারণে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে। আজ শনিবার ঢাকার বায়ুমানের অবনতি হয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকা ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। আর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তানের রাজধানী শহর কাবুল।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২০২, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা কাবুলের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক স্কোর ৪৯৫, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো ভারতের দিল্লি (৩৯৩), বাহরাইনের মানামা (২৬৪), ভারতের কলকাতা (২২৬) ও পাকিস্তানের করাচি (২০৩)।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি— দক্ষিণ পল্লবী, কল্যাণপুর, পেয়ারাবাগ রেল লাইন, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, গোড়ান, শান্তা ফোরাম, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত