Ajker Patrika

সব সংকট কাটিয়ে ভালো থাকুক আমাদের অরণ্য

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ১২: ৫৮
সব সংকট কাটিয়ে ভালো থাকুক আমাদের অরণ্য

বছর তিনেক আগের কথা। বান্দরবানের রুমা উপজেলা। কেওক্রাডংয়ের পাদদেশে দার্জিলিং পাড়া। সেখানে গিয়ে আস্তানা গেড়েছি মেঘলা দিদিদের কটেজে। বাড়ির পেছনে ছোট্ট একটি পাহাড়ে হয়েছে আদার চাষ। সকালে ঘুম ভাঙার পর সেখানে ওঠে সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল কেওক্রাডং ফেরত পর্যটকেরা হেঁটে ফিরছেন পাড়ার মাঝের মাঠ ধরে। তারপরই চোখ গেল উল্টো দিকে। আর তাতেই চমকালাম। মাঝারি উচ্চতার পাহাড়টায় ঘন গাছপালার সারি। কোনো কোনোটি হয়তো শত বর্ষের সীমানা পেরিয়েছে। এর পাশে একটু দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক পাহাড়েও গাছপালার ঠাসবুনোট।

পরে দার্জিলিং পাড়ার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম জঙ্গলে ঠাসা পাহাড় দুটি বন্যপ্রাণীর আড্ডাখানা। মায়া হরিণ আছে সেখানে। আর আছে মাথা গরম ভালুকেরা।

আজ ২১ মার্চ, আন্তর্জাতিক বন দিবস। তাই চলুন আরও কয়েকটি অরণ্যের গল্প শুনি। কাপ্তাইয়ে বন বিভাগের রাম পাহাড় বিট অফিস থেকে চমৎকার দেখা যায় সীতা পাহাড়ের অরণ্য। ২০০৬-৭ সালের দিকে প্রথম যখন সেখানে যাই তখনই কর্ণফুলীর ওপাশের সীতা পাহাড়ের অংশটা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। প্রাচীন সব গাছপালা, লতা-গুল্ম মিলে এমন একে দেখে মনে হচ্ছিল কল্পরাজ্য থেকে ওঠে আসা প্রাগৈতিহাসিক কোনো অরণ্য। কেন যেন ঘুরে-ফিরে স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।

সীতা পাহাড়ের অরণ্যে ডানা মেলা এক শিকারি ইগলকে দেখে ভাবছিলাম লস্ট ওয়ার্ল্ড বা হারানো পৃথিবীর টেরোড্যাকটিলের কথা। পরদিন ভোরে সীতা পাহাড়ের ওপরে গাছের ডালে খেলা করা হনুমানগুলিকে হাতের আঙুলের চেয়ে বড় দেখাচ্ছিল না কোনোমতেই। পরে অবশ্য আরও বেশ কয়েক বার গিয়েছি কাপ্তাইয়ে। উঠেছি সীতা পাহাড়ের চূড়ায়ও।

বান্দরবানের অরণ্যে আকাশচুম্বী সব বৃক্ষ। ছবি: ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সমনে পড়ে কালেঙ্গার জঙ্গলে গিয়ে শ ফুটি সব গাছে কালো বিশালাকায় কাঠবিড়ালিদের মেলা কিংবা বড় মোদকের আগে হঠাৎ পৌঁছে যাওয়া নেই নীরব এলাকার কথা, যেখানে নদীর দু-ধারে কেবলই ছিল উঁচু সব বৃক্ষরাজির রাজত্ব। লাঠিটিলার গহিন অরণ্যের আকাশ ঢেকে দেওয়া সেই সব মায়াবী গাছপালার কথাও ভুলতে পারি না। আজ বিশেষ এই দিনটিতে ভাবি, কেমন আছে প্রিয় সেই অরণ্যগুলো।

বাঘের খোঁজে বান্দরবানের গহিনে, হাতির খোঁজে রাঙামাটির কাসালং, চিতার খোঁজে কাপ্তাই মুখ খাল—কত জঙ্গলে যে চষে বেরিয়েছি। যেখানেই গিয়েছি পেয়ে বসেছে হতাশা, চোখের কোণে অজান্তেই জমা হয়েছে জল। কাসালংয়ের মাইনির বন বাংলোতে গিয়ে দেখি চারপাশে বনের ছিটেফোঁটা নেই। অথচ এনায়েত মাওলা ষাট-সত্তর বছর আগে মাইনির ধারেই চিতা বাঘ-বাঘ শিকার করেছেন। সাঙ্গুর দিকে যাওয়ার সময় ২০১১ সালে রেমাক্রির ধারে একটা পাহাড় দেখিয়ে আমাদের মধ্যবয়স্ক মারমা গাইড বলছিলেন, তাঁর বালক বয়সে লুকিয়ে সেখানে বাঘ দেখার গল্প। মধুপুরে গিয়ে মনে পড়েছে ১৯৫০ সালের আশপাশে এদিকেও ছিল বাঘের রাজত্ব। চিতা বাঘ ছিল ওখানে মুক্তিযুদ্ধের আশপাশের সময়। ভাওয়াল-মধুপুরের অরণ্যের অবস্থাও মোটেই ভালো নয় এখন।

সিলেটের বনগুলোতে গিয়েও মন খারাপ হতো পুরোনো দিনের কথা ভেবে। আবদুর রহমান চৌধুরী সুনামগঞ্জের লাউর এলাকায় ও খাসিয়া পাহাড়ে বাঘ-হাতির যে রাজ্যের কথা বলে গিয়েছেন তা কোথায় হারাল! তখন সেখানে ছিল গভীর বনানী। নানির মুখে শোনা গোয়াল থেকে বাঘ গরু নিয়ে যাওয়ার গল্প কিংবা নানার বাড়ির কাছে দুই ভাইয়ের খালি হাতে বাঘ শিকারের ঘটনা, সাতছড়িতে চিতা বাঘের গাড়ির কাচে থাবা চালানোর সেই সব ঘটনা মনে পড়লেও অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ-অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ধরে ভ্রমণ করার সময় দেখা মিলেছিল এই পাহাড়ি অরণ্যের।টেকনাফ গেলে আবার মনে পড়ে ধীরাজ ভট্টাচার্যের যখন পুলিশ ছিলামের সেই গহিন অরণ্যে ভরপুর, বাঘ ডাকা টেকনাফের বর্ণনার কথা। আমার দাদির ওসি বাবার পোস্টিং সূত্রে প্রায় নব্বই-পঁচানব্বই বছর আগে ছিলেন কক্সবাজার, টেকনাফ, হ্নীলার মতো জায়গাগুলোতে। দাদিরা বাঘের ডাক শুনতে পেতেন রাতে। কোয়ার্টার ঘেরা ছিল উঁচু পাচিলে।

তবে তখন বুঝতে পারিনি সামনে আরও খারাপ দিন আসছে। যত দিন গড়াচ্ছে তত বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েকটা উদাহরণই যথেষ্ট। কির্সতং-রুংরাংয়ের মায়ায় পড়েছেন অনেক অরণ্যপ্রেমীই। যে ধনেশ পাখির নামে রুংরাং-র নাম সেখানে এখন ধনেশ পাখির দেখা পাওয়া ভার। ক্রিসতংও হারিয়েছে আগের আদিম চেহারা। বছর তিনেক আগে কেওক্রাডং গিয়ে শুনেছিলাম ধনেশ পাখির ঠোঁট বিক্রির খবর।

কেওক্রাডংয়ে যাওয়ার পথে দার্জিলিং পাড়ার উল্টো পাশে অরণ্যে ঢাকা এক পাহাড়।রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে গাছ কাটার খবরও কানে আসে। কখনো সংবাদমাধ্যমে, কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এক সময় খুব সমৃদ্ধ এক বন ছিল কক্সবাজারের টেকনাফ গেম রিজার্ভ। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা আসার পর এই অরণ্যের করুণ হাল হয়েছে। কক্সবাজার জেলার অনেক অরণ্যই এখন রোহিঙ্গা-সংকটে সঙিন অবস্থায় আছে।

অথচ বন আর বন্যপ্রাণী মানুষের কম উপকার তো করে না। আমাদের ছেড়ে দেওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে গাছ। পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বড় সংরক্ষণাগার এই অরণ্য। শুধুমাত্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যগুলোতেই ২ হাজার ৫০০ কোটি টন সংরক্ষিত আছে কোনো না কোনোভাবে। গাছপালা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনও সরবরাহ করে।

বান্দরবানের অরণ্যে। বেশ কয়েক বছর আগের তোলা।ছায়া দিয়ে বনের গাছপালা আমাদের শীতলতা দেয়। এ ছাড়া ট্রান্সপিরেশন নামের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চারপাশের বাতাসের তাপমাত্রা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শিকড়ের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে গাছ। তারপর পাতার মাধ্যমে কিছু পানি বাতাসে ছেড়ে দেয়। এভাবে উত্তপ্ত পরিবেশ শীতল হয়।

মাটি থেকে পানি নিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয় গাছ। তাই বড়সড় জায়গা নিয়ে বিস্তৃত জঙ্গলগুলো নিজেদের একটা ক্ষুদ্র জলবায়ু এলাকা তৈরির পাশাপাশি আবহাওয়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন. দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের জঙ্গল শুধু এর ভেতরে ও আশপাশে বৃষ্টিপাত ঘটাতে ভূমিকা রাখে তা নয়, এমনকি উত্তর আমেরিকার বিশাল সমতলভূমিতেও বৃষ্টি ঝরতে পারে এর প্রভাবে।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ির অরণ্য।কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করার পাশাপাশি কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং সালফার ডাই অক্সাইড থেকে বাতাসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে বন। সাহায্য করে ভূমিক্ষয় রোধেও।

আরও অনেক উপকারিতাই আছে বন ও এর গাছপালার। সেগুলো না হয় তোলা থাকল অন্য কোনো দিনের জন্য।

মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় অবস্থিত আশ্চর্য সুন্দর এক বন লাঠিটিলা।কিন্তু এত সব উপকারিতার বিনিময়ে বনকে আমরা কিছুই দিতে পারিনি। বরং নানাভাবে ক্ষতিই করে গিয়েছি। আগে আমাদের চমৎকার গ্রামীণ বন ছিল। এসব বনে মেছো বিড়াল, খাটাশ বা গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর আড্ডাখানা। কিন্তু এখন খুব কম গ্রামেই এ ধরনের বন বা বাগান আছে। তাই গ্রামের আশপাশে বাস করা প্রাণীরাও আছে বড় বিপদে। লোকালয়ে এসে মানুষের পিটুনিতে নিয়মিত মেছো বিড়াল, বন বিড়াল মারা পড়ার সংবাদ শুনে কেঁদে উঠে মন।

এক শীতের সকালে আদপুরের জঙ্গলের এক ছড়া পেরোচ্ছেন এক বনপ্রহরী।এখন মনে হচ্ছে, বন দিবসের নিরাশার কথা বেশি হয়ে গিয়েছে। আশার কথাও আছে। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই এখন গাছের চারা লাগাচ্ছেন। তেমনি বন্যপ্রাণী ও অরণ্য নিয়ে কাজ করছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা কোনো জায়গায় বন্যপ্রাণী ধরা পড়লে সেগুলো উদ্ধার করে বন বিভাগের সহায়তায় অরণ্যে ও নিরাপদ পরিবেশে মুক্ত করছে। তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে কোনো কোনো জায়গায় হাতিসহ আহত বা অসুস্থ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর চিকিৎসা দিয়েছে বন বিভাগ এমন খবরও পড়েছি। আবার স্থানীয়রাও সচেতন হচ্ছেন। এই তো গত মঙ্গলবার মেহেরপুর উপজেলায় একটা মেছো বিড়াল আটকা পড়েছিল হাঁসের খামারে। সেটিকে খাঁচায় আটকে ফেলা হলেও মেরে ফেলা হয়নি, বন বিভাগের সহায়তায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সাজাকের পাহাড়ি অরণ্য।বন দিবসে দেশের অরণ্য আর বন্যপ্রাণীদের জন্য শুভকামনা। আশা করি, আবার রুংরাংয়ে মহানন্দে বিশাল ডানা ছড়িয়ে উড়ে বেড়াবে ধনেশ, অরণ্যচারী পথ হারাবেন কির্সতংয়ের দিনেই রাত নামা বনে কিংবা সাঙ্গু-মাতামুহুরিতে নিরাপদে থাকবে শতবর্ষী গাছেরা।

সূত্র: বনের উপকারিতার কিছু তথ্য ট্রি হাগার ডট কম ও ব্লগ ডট টেনট্রি ডট কম থেকে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ, রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যশোরে টানা দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরে টানা দুইদিন সূর্যের দেখা নেই। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঘ মাস আসতে এখনো অনেক বাকি। আজ সোমবার কেবল ১৪ পৌষ। তবে এখনই হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে দেশজুড়ে। আজ সকাল ৬টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রাতে সারা দেশেই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

আজ সকাল ৯টা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকালে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪, রংপুরে ১৩, ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৭ এবং খুলনা ও বরিশালে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুয়াশার কারণে দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

এ ছাড়া সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় শীত আরও বেড়েছে, পড়বে ঘন কুয়াশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশায় ব্যাহত চলাচল

  • দক্ষিণের পথে লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা।
  • কুয়াশায় ব্যাহত সড়ক ও বিমান যোগাযোগও।
  • বাগেরহাটে শীতের জেরে বৃদ্ধের মৃত্যু।
  • রাতের তাপমাত্রা আরেকটু কমতে পারে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৯
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তিও। তবে কয়েক দিন পরই নতুন বছরের শুরুতে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, গতকাল সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামা মানে রীতিমতো হাড়কাঁপানো শীত।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবারসহ আগামী চার দিন সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদর অব্যাহত থাকতে পারে।

লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ

ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাতে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়।

কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌযোগাযোগের পাশাপাশি বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকালও ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট দেরিতে অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। তবে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট অন্যত্র পাঠানো হয়নি।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ গতকাল দুপুরের দিকে বলেন, ‘ভোরে রানওয়ের দৃশ্যমানতা কম থাকায় ফ্লাইট অপারেশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। তবে সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ফ্লাইট অপারেশন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে’।

বাগেরহাটে বৃদ্ধের মৃত্যু

বাগেরহাটের চিতলমারীতে শীতের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে বৈদ্যনাথ মণ্ডল (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। বৈদ্যনাথ চিতলমারী উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের মুকুন্দলাল মণ্ডলের ছেলে।

এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে গত চার দিনে মোট ৫৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

উত্তরে জীবন বিপর্যস্ত

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কুয়াশার জন্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। হিমালয়ের পাদদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বরাবরই উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সে অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, গত দুই দিনে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৩ এবং সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ও গতকাল দুপুর ১২টার আগে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির ছিল। এটি চলতি মৌসুমে এখানকার সর্বনিম্ন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেঁকে বসেছে শীত, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কমতে পারে তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৭
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

মধ্য পৌষে এসে সারা দেশে শীত যেন জেঁকে বসেছে। গতকালের তুলনায় আজ রোববার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে। এর সঙ্গে পড়বে ঘন কুয়াশা।

আজ বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এসব কথা জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় ছিল ১৪ দশমিক ৩।

বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সকালে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, রংপুর, বরিশালে ১৩; ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৩, সিলেটে ১৪ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও আবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে আজ রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া আজ ঢাকায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

২৯ ডিসেম্বরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন হবে না উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিন রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত