Ajker Patrika

নিরাপদে থাকুক বুনো হাতি

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৩, ১৬: ৩৭
নিরাপদে থাকুক বুনো হাতি

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।

হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি। 

রাঙামাটির অরণ্যে বুনো হাতিচটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য। 

বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ। 

ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে। 

রাঙীপাড়ার সেই মা ও বাচ্চা হাতিহাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো। 

এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা। 

গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি বুনো হাতিকেপুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত। 

কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য। 

এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।

মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা! 

হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে। 

বুনো এশীয় হাতি আছে এমন দেশের সংখ্যা ১৩বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’। 

ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।

হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।  

কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই। 

অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে। 

এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই। 

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই। 

কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে। 

এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর। 

সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন। 

তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি। 

হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে। 

চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো? 

তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। 

রাঙীপাড়ায় মায়ের সঙ্গে বাচ্চা হাতিএই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে। 

এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। 

বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ

  • ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে আছে বাংলাদেশও
  • অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে কোটি কোটি মানুষ
  • ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ১০ শতাংশের সমপরিমাণ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ (আইজিপি-এইচএফ) অঞ্চলের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে। এতে বছরে এই অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে অঞ্চলটির অর্থনীতিতে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। এই দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও।

বিশ্বব্যাংকের ‘এ ব্রেথ অব চেঞ্জ: সলিউশনস ফর ক্লিনার এয়ার ইন দ্য ইন্দো-গেঞ্জেটিক প্লেইনস অ্যান্ড হিমালয়ান ফুটহিলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইজিপি-এইচএফ অঞ্চলে বায়ুদূষণ এখনো অন্যতম বড় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সমন্বিত ও বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নিলে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এতে একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুটোরই উন্নতি হবে।

গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানের অংশবিশেষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলের বায়ুদূষণের প্রধান পাঁচটি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রান্না ও ঘর গরম করার কাজে লাকড়িজাতীয় কঠিন বস্তু ব্যবহার, শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) ও বায়োম্যাসের ফিল্টার ছাড়া অদক্ষ ব্যবহার, অনুন্নত প্রযুক্তির ইঞ্জিনের যানবাহন চালানো, কৃষকদের খেতের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং রাসায়নিক সার ও গোবরের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং গৃহস্থালি ও কারখানার বর্জ্য পোড়ানো।

দূষণ কমাতে কয়েকটি তুলনামূলকভাবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এগুলো হলো–বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না, শিল্পকারখানার বয়লার, ফার্নেস ও ইটভাটার আধুনিকায়ন, নন-মোটরাইজড ও বৈদ্যুতিক পরিবহনব্যবস্থার প্রসার, কৃষিবর্জ্য ও পশুবর্জ্যের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য পৃথক্‌করণ ও পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।

প্রতিবেদনে নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার কৌশলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. দূষণের উৎসেই নির্গমন কমানোর ব্যবস্থা। ২. স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করে শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া। ৩. কার্যকর আইন, বাজারভিত্তিক প্রণোদনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, ‘নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার সমাধানগুলো বাস্তবসম্মত ও কার্যকর। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবার, কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে আর্থিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সুযোগ তৈরি করে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে ‘চারটি আই’ (ইংরেজি আদ্যক্ষর)—তথ্য, প্রণোদনা, প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা, পরিচ্ছন্ন বিকল্পে বিনিয়োগে প্রণোদনা, কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলাই এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবেশবিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার অ্যান জিনেট গ্লাউবার বলেন, স্থানীয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নির্মল বায়ু অর্জন সম্ভব নয়। সরকারগুলো একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল দূষণ কমানো, লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং সবার জন্য নিরাপদ বায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, আজও দূষণে শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বেশ কিছুদিন ধরে দিল্লির বাতাসের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ। আজ বৃহস্পতিবার দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরটি। অন্যদিকে ঢাকার বায়ুমান আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৯০। যা নির্দেশ করে ঢাকার বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশ কিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— কল্যাণপুর (২৬০), দক্ষিণ পল্লবী (২৫৬), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (১৯৬), গোড়ান (১৯৬) ও বেচারাম দেউরি (১৯০)।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দিল্লি। শহরটির একিউআই স্কোর ৩১০। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২৭০, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সারাজেভ (২২৭, খুব অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (২০১, খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে মিসরের কায়রো (১৯৪, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেড়েছে ঢাকার তাপমাত্রা, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পৌষ মাসের তৃতীয় দিন আজ। শীতের মৌসুম চলে এলেও রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে তাপমাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সকালের আবহাওয়া বুলেটিনে দেখা যায়, গতকালের তুলনায় আজ সকালে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত