Ajker Patrika

তীব্র গরমে অর্থনীতিতে বছরে ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
তীব্র গরমে অর্থনীতিতে বছরে ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা
ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে ক্রমেই বায়ুর তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এতে তীব্র গরমে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি অর্থনীতির জন্যও তা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে তাপজনিত অসুস্থতায় প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ এবং সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেক এ. রাজা। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ডিভিশনাল ডিরেক্টর জাঁ পেসমে, সাউথ এশিয়া হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্র্যাকটিসের প্র্যাকটিস ম্যানেজার ফেং ঝাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এখন আর কোনো তাত্ত্বিক বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক ঘটনা হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশে অনেক বেশি তীব্র, যা আমাদের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কেবল গবেষণা প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ না থেকে সুপারিশগুলোকে সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনায় রূপ দিতে হবে। প্রতিটি সংস্থাকে নিজ নিজ ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ের অংশীদারদের দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে সুপারিশগুলো কার্যকর পদক্ষেপে পরিণত হয়।

জলবায়ু সহনশীলতার সঙ্গে সুশাসন ও নাগরিক আচরণের পরিবর্তনের সম্পর্কের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘গঠনমূলক সংস্কারের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও দরকার। ছোট ছোট পদক্ষেপ; যেমন অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো—বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সবুজ নগর মানেই সুস্থ জীবন।’

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর ‘অনুভূত তাপমাত্রা’ বেড়েছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি। এর ফলে ডায়রিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি ও বিষণ্ণতার মতো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে; বিশেষ করে নারীরা গরমজনিত অসুস্থতায় বেশি ভোগেন। গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী কাশি শীতকালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যখন তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তখন কর্মীদের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। এখানে তাপের প্রভাব জাতীয় গড়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি। এ কারণে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। নারীরা গরমজনিত অসুস্থতায় বেশি ভোগেন, ফলে হিট স্ট্রোকসহ ক্লান্তি বোধ করেন। গরমকালে ডায়রিয়া ও কাশি শীতের তুলনায় দ্বিগুণ হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জ্যাঁ পেসমে বলেন, ‘তীব্র গরম শুধু মৌসুমি সমস্যা নয়। এটি আমাদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ও অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। সঠিক নীতি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।’ এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেন তিনি।

প্রতিবেদনে তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় প্রস্তুতি, স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ উদ্যোগ, শহরে সবুজ এলাকা তৈরি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গরমে স্বাস্থ্যগত অবনতি ও উৎপাদনশীলতা কমার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র আছে। বাংলাদেশ মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর প্রকৃত ঝুঁকির মুখে।’

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাড়তি তাপমাত্রার কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাশা ক্রমেই বাড়ে, অন্যদিকে ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে উদ্বেগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার কারণে উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। এর প্রভাব গ্রীষ্মকালে বেশি। গড় হিসাবে গ্রীষ্মে শারীরিক অসুস্থতায় কাজ না করার দিন ১ দশমিক ৪ এবং শীতে ১ দশমিক ২ দিন। মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে গ্রীষ্মে কাজ হারানোর দিন দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩, যা শীতকালে ১ দশমিক ৯ দিন।

পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম দিন কাজ হারালেও ৩৬ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। এ বয়সীরা গ্রীষ্মে শারীরিক কারণে গড়ে ১ দশমিক ৭ দিন ও মানসিক কারণে আড়াই দিন কাজ হারিয়েছেন। তরুণদের (১৬-৩৫ বছর) ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যার প্রভাব তুলনামূলক বেশি।

আয়ের দিক থেকে দেখা যায়, কম আয়ের মানুষদের কাজ হারানোর দিন বেশি। গ্রীষ্মে তাঁরা গড়ে ১ দশমিক ৭ দিন কাজ করতে পারেননি, যেখানে ধনীরা হারিয়েছেন ১ দশমিক ১ দিন। কাজের ধরনে পার্থক্যও চোখে পড়ে। শারীরিক কারণে অদক্ষ শ্রমিকদের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি (গ্রীষ্মে ১ দশমিক ৮ দিন)। আর মানসিক সমস্যায় দক্ষ শ্রমিকেরা গড়ে ২ দশমিক ৯ দিন কাজ হারিয়েছেন। অফিসকর্মীদের ক্ষতি তুলনায় কম।

বিশ্বব্যাংক কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলছে, তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে গরমজনিত রোগ মোকাবিলা করা, শহরে সবুজ এলাকা তৈরি, সঠিক আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যতথ্য সংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর অর্থায়নের মাধ্যমে প্রতিরোধ ও অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ জোরদার করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আশরাফুলের লাশ ঘরে রেখেই শারীরিক সম্পর্ক করেন জরেজ ও শামীমা: র‍্যাব

বিহারে ইতিহাস গড়ে বিজেপি জোটের বিপুল জয়, সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মহাজোটের ভরাডুবি

প্রধান শিক্ষক ও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল, গাংনীতে তোলপাড়

পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির বক্তব্য প্রচার, আরএমপি কমিশনারকে আদালতে তলব

শেরপুর-২ আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরানে শতবর্ষের মধ্যে ভয়াবহতম খরা, তেহরানে বৃষ্টি প্রার্থনায় নামাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ২০
শুক্রবার জুমার দিন তেহরানে হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। ছবি: এএফপি
শুক্রবার জুমার দিন তেহরানে হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। ছবি: এএফপি

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কবলে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। এই গভীর সংকটের মুখে আল্লাহর করুণা চেয়ে গতকাল শুক্রবার জুমার দিনে তেহরানের উত্তরে একটি মসজিদে শত শত মানুষ বৃষ্টি কামনায় বিশেষ নামাজে অংশ নেন।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এ বছর ইরানের রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গত এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন। দেশের প্রায় অর্ধেক প্রদেশ কয়েক মাস ধরে এক ফোঁটা বৃষ্টিরও দেখা পায়নি।

পানি সংকটের তীব্রতা মোকাবিলায় সরকার তেহরানের প্রায় ১ কোটি মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে পানির সরবরাহ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, তা প্রধান বাঁধগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানী তেহরানে পানীয় জল সরবরাহকারী পাঁচটি প্রধান বাঁধের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ খালি এবং অন্য একটি বাঁধে পানি ধারণক্ষমতার আট শতাংশেরও কম।

গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়েছিলেন, শীতের আগে বৃষ্টি না হলে তেহরানকে হয়তো কিছু মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার মতো সংকটের সম্মুখীন হতে হবে। যদিও পরে সরকার ব্যাখ্যা করে, প্রেসিডেন্ট কেবল বাসিন্দাদের পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন এবং এটি কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নয়।

এই কঠিন সময়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি কামনায় শুক্রবার তেহরানের এমামজাদেহ সালেহ মসজিদে পুরুষ ও নারীরা সম্মিলিতভাবে বিশেষ নামাজ (ইস্তিস্কার নামাজ) পড়েন। ইসলামি প্রথা মেনে নারীরা পর্দার আড়ালে পুরুষদের থেকে আলাদা স্থানে নামাজে অংশ নেন।

সাধারণত, আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত তেহরানে শরৎকালের বৃষ্টি এবং শীতের তুষারপাতের ফলে গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্মের পর স্বস্তি আসে। কিন্তু এ বছর পর্বত চূড়াগুলো শুষ্ক রয়েছে গেছে, যদিও বছরের এ সময়টাতে চূড়ায় সাধারণত বরফ জমে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তেহরানের বাসিন্দারা দৈনিক প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানি ব্যবহার করে। অন্যদিকে, গোটা দেশে এ বছর বৃষ্টিপাতের স্তর মাত্র ১৫২ মিলিমিটার (৬ ইঞ্চি)-এ পৌঁছেছে, যা গত ৫৭ বছরের গড়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আশরাফুলের লাশ ঘরে রেখেই শারীরিক সম্পর্ক করেন জরেজ ও শামীমা: র‍্যাব

বিহারে ইতিহাস গড়ে বিজেপি জোটের বিপুল জয়, সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মহাজোটের ভরাডুবি

প্রধান শিক্ষক ও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল, গাংনীতে তোলপাড়

পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির বক্তব্য প্রচার, আরএমপি কমিশনারকে আদালতে তলব

শেরপুর-২ আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দিল্লির, ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শীতের শুষ্ক মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু বর্ষা পেরোতেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহর বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষ স্থান নিয়ে আছে। এর মধ্যে ভারতের দিল্লির অবস্থা বেশ কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৭৫। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।

অন্যদিকে শীর্ষ অবস্থানে থাকা দিল্লির একিউআই স্কোর ৫১৯। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

বিশ্বের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের তালিকার বাকি শহরগুলো হলো—

(বায়ুমানের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে র‍্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন হতে পারে)

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২৫০, খুব অস্বাস্থ্যকর)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২০১, খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইরাকের বাগদাদ (১৮০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

শীর্ষ দশের অন্যান্য শহর:

৬. হ্যানয়, ভিয়েতনাম (১৭৫)

৭. উহান, চীন (১৭০)

৮. কুয়েত সিটি, কুয়েত (১৬২)

৯. মানামা, বাহরাইন (১৬০)

১০. মুম্বাই, ভারত (১৫৮)

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আশরাফুলের লাশ ঘরে রেখেই শারীরিক সম্পর্ক করেন জরেজ ও শামীমা: র‍্যাব

বিহারে ইতিহাস গড়ে বিজেপি জোটের বিপুল জয়, সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মহাজোটের ভরাডুবি

প্রধান শিক্ষক ও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল, গাংনীতে তোলপাড়

পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির বক্তব্য প্রচার, আরএমপি কমিশনারকে আদালতে তলব

শেরপুর-২ আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কার্তিকের শেষেই যেন নামছে শীত, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ ১৮.৯ ডিগ্রি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫২
কুয়াশাভরা সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। খড়খড়ি বাইপাস বাজার এলাকা, রাজশাহী, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। ছবি: মিলন শেখ
কুয়াশাভরা সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। খড়খড়ি বাইপাস বাজার এলাকা, রাজশাহী, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। ছবি: মিলন শেখ

কার্তিকের শেষ দিন আজ। হেমন্তের ইতি টানতে বাকি আরও এক মাস। তবে এর মধ্যে প্রকৃতি জানান দিচ্ছে, শীতের বড় তাড়া। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বেড়ে চলেছে শীতের তীব্রতা। পিছিয়ে নেই ঢাকাও। রাত বাড়তেই শীতল হাওয়া বইছে চারদিকে।

আজ শনিবার ভোরে সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে আজ সকাল ৬টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়েছে ৮৮ শতাংশ।

আজ সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া বুলেটিন থেকে জানা যায়, ঢাকায় আজ সকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আশরাফুলের লাশ ঘরে রেখেই শারীরিক সম্পর্ক করেন জরেজ ও শামীমা: র‍্যাব

বিহারে ইতিহাস গড়ে বিজেপি জোটের বিপুল জয়, সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মহাজোটের ভরাডুবি

প্রধান শিক্ষক ও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল, গাংনীতে তোলপাড়

পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির বক্তব্য প্রচার, আরএমপি কমিশনারকে আদালতে তলব

শেরপুর-২ আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় শীতের আমেজ, তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ১৪ ডিগ্রিতে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় সেটি কমে হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে রাজধানী ঢাকায়ও নেমেছে শীতের আমেজ। এই সময় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকায় আজ দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। একই সঙ্গে আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় আকাশ আজ পরিষ্কার থাকতে পারে। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।

আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারা দেশে গত কয়েক দিনের তুলনায় তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত শীত খুব বেশি পড়বে না। আবহাওয়ার পরিবর্তন এই সময়ে খুব বেশি না-ও হতে পারে। ২২ নভেম্বরের পর শীত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আশরাফুলের লাশ ঘরে রেখেই শারীরিক সম্পর্ক করেন জরেজ ও শামীমা: র‍্যাব

বিহারে ইতিহাস গড়ে বিজেপি জোটের বিপুল জয়, সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও মহাজোটের ভরাডুবি

প্রধান শিক্ষক ও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল, গাংনীতে তোলপাড়

পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির বক্তব্য প্রচার, আরএমপি কমিশনারকে আদালতে তলব

শেরপুর-২ আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত