Ajker Patrika

১৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে ট্রাম্পের জলবায়ুবিরোধী নীতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের জলবায়ু নীতিতে সম্ভাব্য ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঘটবে ভারতে। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের জলবায়ু নীতিতে সম্ভাব্য ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঘটবে ভারতে। ছবি: এএফপি

বিশ্ব যখন জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার করছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ুবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছেন। আতঙ্কের বিষয় হলো, ট্রাম্পের এই নীতি আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক উষ্ণতা-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

প্রোপাবলিকা ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণ ও নির্গমন হ্রাস উদ্যোগ বাতিলের ফলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হবে। এতে ভবিষ্যতে শুধু তাপমাত্রাজনিত কারণেই ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

গত ৮ এপ্রিল একটি নির্বাহী আদেশে পুনরায় কয়লা উৎপাদন বহাল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
গত ৮ এপ্রিল একটি নির্বাহী আদেশে পুনরায় কয়লা উৎপাদন বহাল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

গবেষণা বলছে, আগামী দশকগুলোতে তীব্র গরমে প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি হবে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র ও উষ্ণ দেশগুলোতে। এই দেশগুলো বৈশ্বিক দূষণের তুলনামূলক কম অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় অপ্রস্তুত। তাই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে এসব দেশে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাম্পের জলবায়ুবিরোধী নীতির ফলে ২০৩৫ সালের পর পরবর্তী ৮০ বছরে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বিশ্বজুড়ে ১৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর এর সবই হবে তাপমাত্রাজনিত কারণে। প্রকৃতপক্ষে তাপমাত্রাজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি, তবে শীত-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসায় মোট হিসাবে কিছুটা ভারসাম্য হতে পারে।

জলবায়ু সম্মেলনে অনুপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র

ব্রাজিলের বেলেমে (কপ-৩০) জলবায়ুসংকট মোকাবিলায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের প্রতিনিধিরা একত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে যোগ দেয়নি। বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ২০ শতাংশ! এ কারণে কপ-৩০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

যেভাবে হিসাব করা হলো ১৩ লাখ মৃত্যুর পূর্বাভাস

প্রোপাবলিকা ও দ্য গার্ডিয়ান গবেষণায় ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের পরিমাণ বের করতে রোডিয়াম গ্রুপের (Rhodium Group) মডেল ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যম পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ৫.৭ বিলিয়ন টন কার্বন নির্গমন হবে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রাজনিত কারণে ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

গবেষণায় ‘মরটালিটি কোস্ট অব কার্বন’ (Mortality Cost of Carbon) নামের একটি স্বীকৃত মেট্রিক ব্যবহার করা হয়েছে। বেন্টলি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ আর. ড্যানিয়েল ব্রেসলার এটি তৈরি করেছেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, একটি মৃত্যু ঘটাতে গড়ে ৪ হাজার ৪৩৪ টন কার্বন নিঃসরণই যথেষ্ট। জীবদ্দশায় ৩.৫ জন আমেরিকান গড়ে ঠিক এ পরিমাণ কার্বন নির্গমন করেন।

ব্রেসলারের মতে, যদি বৈশ্বিক নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ২১০০ সালের মধ্যে মানবসৃষ্ট তাপমাত্রাজনিত মৃত্যু ৮ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছাতে পারে।

ইফে কিলিমানজারো ইউএস ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগুলো ভয়ংকর। কিন্তু এগুলো শুধু সংখ্যা নয়; এগুলো মানুষের জীবন, পরিবারের গল্প, তাদের স্বপ্ন।’

ট্রাম্প প্রশাসনের জলবায়ুবিরোধী সিদ্ধান্তগুলো কী

যুক্তরাষ্ট্রে গত এক বছরে ট্রাম্প প্রশাসন ও রিপাবলিকানদের সহায়তায় জলবায়ুসংক্রান্ত অনেক পদক্ষেপ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও উৎপাদন খাতের ট্যাক্স ক্রেডিট কাটা, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণ শিথিল, সরকারি জমিতে ড্রিলিং সহজ করা, যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ বাতিল, তেল-গ্যাস শিল্পে দূষণ সীমাবদ্ধতা প্রত্যাহার ও মিথেন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ বন্ধ।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডোয়ের স্কুল অব সাসটেইনেবিলিটির অর্থনীতিবিদ মার্শাল বার্ক বলেন, ‘ট্রাম্পের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী জলবায়ু নীতি কার্যকর হয়েছিল। সেগুলো প্রত্যাহার করা মানে সরাসরি বৈশ্বিক ক্ষতি বাড়ানো।’

তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স দাবি করেন, ‘আমেরিকা বামপন্থীদের ভুয়া জলবায়ু দাবিতে বিশ্বাস করে না। তিনি অবশ্য তাপমাত্রাজনিত মৃত্যুর পূর্বাভাস সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।

মানুষ গরমে কীভাবে মারা যায়

চরম তাপে মানবদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ঘাম ঝরা বন্ধ হয়ে যায়, এরপর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অঙ্গ বিকল হওয়া এবং শেষে মৃত্যু ঘটে।

বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে—বাইরে কাজে নিয়োজিত শ্রমিক, শিশু, বৃদ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। এ ছাড়া যাদের ঘরে এসি বা তাপ কমানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে তারাও ঝুঁকিতে আছে।

ফল কোথায় সবচেয়ে ভয়াবহ?

ব্রেসলারের হিসাব অনুযায়ী, নাইজার ও সোমালিয়াতে মাথাপিছু তাপসম্পর্কিত মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হবে। তবে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হবে ভারত। বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ পাকিস্তানে। সেখানে ৬-৭ শতাংশ মানুষ তাপমাত্রাজনিত কারণে মারা যেতে পারে। বাংলাদেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশের বাস। এখানে তাপমাত্রাজনিত কারণে ১-২ শতাংশ মানুষ মারা যেতে পারে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দূষণকারী দেশ হলেও, সেখানে মৃত্যুর হার মাত্র ১ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে তাপসংক্রান্ত মৃত্যু ২০০০ সালের পর থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

উল্টো পথে হাঁটছেন ট্রাম্প

গত বছর অর্থাৎ বাইডেন প্রশাসন কয়েক দশকের মধ্যে জলবায়ুনীতিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ফিরে প্রথম দিনই ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেন। এরপর প্রথম ১০০ দিনে তিনি তাঁর আগের মেয়াদের সব জলবায়ুনীতি প্রত্যাহার করেন।

পরিস্থিতি পাল্টাতে কী প্রয়োজন

বেন্টলি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ আর. ড্যানিয়েল ব্রেসলার বলেন, ‘যদি আপনি নির্গমন বাড়ান, মৃত্যুও বাড়বে। আর নির্গমন কমালে, জীবন বাঁচবে। এ ছাড়া, দেশগুলো কত দ্রুত নির্গমন কমায়, বাজার কীভাবে বদলায় এবং ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টরা কী সিদ্ধান্ত নেন তার ওপরও এটি নির্ভর করবে।’

অর্থনীতিবিদ আর. ড্যানিয়েল ব্রেসলার আরও বলেন, ‘যদি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নির্গমন প্রায় শূন্যে নেমে আসে, তাহলে তাপমাত্রাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২১০০ সালের মধ্যে ৯০ লাখে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবুও চলতি বছরেই ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তনের ফলে ৬ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত