Ajker Patrika

উত্তরবঙ্গে দ্রুত বদলে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহপথ, বাড়বে খরার তীব্রতা: গবেষণা

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৪৩
দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে গবেষকেরা পানি প্রবাহপথের পরিবর্তনকে তুলে এনেছেন। ছবি: সংগৃহীত
দেশের উত্তরাঞ্চলে খরা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে গবেষকেরা পানি প্রবাহপথের পরিবর্তনকে তুলে এনেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর বিভাগের বেশির ভাগ জেলাতেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। অঞ্চলটিতে খরার অন্যতম কারণ এটি। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, কেবল স্তর নিচে নেমে যাওয়া নয়, ভূগর্ভে পানির প্রবাহের যে পথ ও বিন্যাস তা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ফলে, পানির প্রাপ্যতাও সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হচ্ছে।

গবেষণাটি করেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান মনির, সুবরণ চন্দ্র সরকার, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের গবেষক (সিইজিআইএস) রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মো. নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত ‘পানি-সংকটপূর্ণ ও খরাপ্রবণ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আঞ্চলিক ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহপথের পরিবর্তনের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন’—শীর্ষক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে পানি সংকটাপন্ন ও খরাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহপথের পরিবর্তন ও প্রবাহগতির বিরূপ প্রভাব মূল্যায়ন করা। ভৌগোলিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডার্সি প্রবাহ মডেল একত্রিত করে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহপথের পরিবর্তনের ভিজুয়ালাইজেশন, প্রবাহ প্রবণতা, ভলিউম ব্যালেন্স ও প্রবাহগতি নিরূপণ করা হয়েছে।

গবেষণা থেকে দেখা গেছে, গত ২০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানি প্রবাহের ফলে কোনো একটি স্থানে সাধারণত যে পরিমাণ পানি স্থিতিশীল থাকে, তার পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে এবং প্রবাহগতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো—স্যাচুরেটেড স্তরের (সাধারণত মাটির নিচে সর্বনিম্ন যে গভীরতায় স্বচ্ছ ও সুপেয় পানি নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়) পরিবর্তন ও হাইড্রোলিক হেডের (নদী বা সাগরের পানিপৃষ্ঠের তুলনায় কোনো একটি অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতার ফারাক) ওঠানামা।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গড় প্রবাহ গতির হার ছিল প্রতি বছর ৫ হাজার ৯০০ থেকে ৭ হাজার ৩০০ মিটার পর্যন্ত এবং প্রতিটি মৌসুমেই এটি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ভলিউম ব্যালেন্স রেসিডিউয়াল (কোনো একটি ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে পানি আসা-যাওয়ার পর কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে) ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সামান্য বৃদ্ধি পেলেও ২০১০-২০২০ সালের মধ্যে তা হ্রাস পেয়েছে।

এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায়। গবেষণা এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহপথের ওঠানামার হার ব্যাপকভাবে বদলে যাচ্ছে এবং এর প্রবণতাও পরিবর্তিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর যেখানে থাকার কথা প্রতি বছরই সেটা আরও নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।

গবেষণার ফলাফল নির্দেশ করে যে, উত্তরবঙ্গের ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ পথের পরিবর্তন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং এর বিন্যাসও বদলে যাচ্ছে। বিশেষ করে, যেসব অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যাপক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, সেসব এলাকায় এই অবক্ষয় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গবেষণার এলাকার ৩১ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল বর্তমানে চরম ও তীব্র খরার সম্মুখীন, যার প্রধান কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের তারতম্য।

সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার গবেষণার এলাকার পরিবেশগত ব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদনের ওপর গুরুতর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। উত্তরবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও বিপর্যয়কর হবে যদি আমরা গভীর জলাধার থেকে ভূগর্ভস্থ পানির নিষ্কাশন কমিয়ে না আনি এবং পৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।

উল্লেখিত গবেষণা এলাকার বিভিন্ন জেলার অসংখ্য কূপের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব মনিটরিং কূপে মৌসুমি প্রবণতা সাধারণত একরকম হলেও অঞ্চলজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। যেখানে গড় স্তর যথাক্রমে ২ দশমিক ৭১ মিটার, ৩ দশমিক ৮৭ মিটার এবং ৩ দশমিক ৭০ মিটার। ২০০১ সালের প্রাক-বর্ষা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ মূলত উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে জমা হয়েছিল, তবে বিভিন্ন স্থানে পানির অভাবের কারণে ছড়িয়ে পড়া প্রবাহের কিছু বিচ্ছিন্ন দিকও দেখা যায়।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের উত্তর অংশ এবং কেন্দ্রীয় কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহের গতি তুলনামূলকভাবে বেশি। গবেষণা এলাকার দক্ষিণাংশেও অপেক্ষাকৃত বেশি প্রবাহ গতি লক্ষ্য করা যায়। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর ফলাফল অনুযায়ী, সাধারণত ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাহের গতিপথে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে, যা শুধুমাত্র উত্তর থেকে দক্ষিণেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এমন কয়েকটি স্থানের দিকেও প্রবাহিত হচ্ছে যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এই গবেষণার ফলাফল নির্দেশ করে যে, উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহের দিক উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এর প্রবণতা ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে এমন এলাকাগুলোতে এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে, যেখানে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যাপক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়। বর্তমান বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অধিকাংশ মনিটরিং স্টেশনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিম্নগামী প্রবণতা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি, ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, বৃষ্টিপাত ও ভূগর্ভস্থ পানির গভীরতার মধ্যে একটি নেতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান, এবং সম্ভাব্য বাষ্পীভবন ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে।

সেচের জন্য ব্যাপক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে কৃষি উৎপাদন এবং গবেষণা এলাকার জীববৈচিত্র্যের ওপর গভীর প্রভাব পড়ছে, যা শেষ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে খরার তীব্রতা বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে বাষ্পীভবনের ক্রমাগত বৃদ্ধি রবি শস্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই মৌসুমে গাছের বৃদ্ধির জন্য অধিক হারে পানির প্রয়োজন হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস এবং গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা শুষ্ক ও গরম পরিবেশ সৃষ্টি করছে, যা সরাসরি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এবং ফসল উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলছে।

এই গবেষণা ভবিষ্যতে উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির সংকট এবং পরিবেশগত অবনতি মোকাবিলার জন্য কার্যকর পথনির্দেশনা প্রদান করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশায় ব্যাহত চলাচল

  • দক্ষিণের পথে লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা।
  • কুয়াশায় ব্যাহত সড়ক ও বিমান যোগাযোগও।
  • বাগেরহাটে শীতের জেরে বৃদ্ধের মৃত্যু।
  • রাতের তাপমাত্রা আরেকটু কমতে পারে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তিও। তবে কয়েক দিন পরই নতুন বছরের শুরুতে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, গতকাল সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামা মানে রীতিমতো হাড়কাঁপানো শীত।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবারসহ আগামী চার দিন সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদর অব্যাহত থাকতে পারে।

লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ

ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাতে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়।

কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌযোগাযোগের পাশাপাশি বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকালও ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট দেরিতে অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। তবে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট অন্যত্র পাঠানো হয়নি।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ গতকাল দুপুরের দিকে বলেন, ‘ভোরে রানওয়ের দৃশ্যমানতা কম থাকায় ফ্লাইট অপারেশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। তবে সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ফ্লাইট অপারেশন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে’।

বাগেরহাটে বৃদ্ধের মৃত্যু

বাগেরহাটের চিতলমারীতে শীতের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে বৈদ্যনাথ মণ্ডল (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। বৈদ্যনাথ চিতলমারী উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের মুকুন্দলাল মণ্ডলের ছেলে।

এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে গত চার দিনে মোট ৫৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

উত্তরে জীবন বিপর্যস্ত

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কুয়াশার জন্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। হিমালয়ের পাদদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বরাবরই উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সে অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, গত দুই দিনে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৩ এবং সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ও গতকাল দুপুর ১২টার আগে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির ছিল। এটি চলতি মৌসুমে এখানকার সর্বনিম্ন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জেঁকে বসেছে শীত, বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কমতে পারে তাপমাত্রা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৭
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

মধ্য পৌষে এসে সারা দেশে শীত যেন জেঁকে বসেছে। গতকালের তুলনায় আজ রোববার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে। এর সঙ্গে পড়বে ঘন কুয়াশা।

আজ বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এসব কথা জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় ছিল ১৪ দশমিক ৩।

বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সকালে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, রংপুর, বরিশালে ১৩; ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৩, সিলেটে ১৪ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও আবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে আজ রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া আজ ঢাকায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

২৯ ডিসেম্বরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন হবে না উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিন রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফের বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি, ঢাকার বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতের মৌসুমে বাতাস থাকে শুষ্ক। বেড়ে যায় ধূলিকণার পরিমাণ। আর এ কারণে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে। আজ রোববার ঢাকার বায়ুমানের অবনতি হয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২১৬, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক স্কোর ৪২৪, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো আফগানিস্তানের কাবুল (২৪৩), ভারতের কলকাতা (২১৪) ও পাকিস্তানের লাহোর (২০২)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাপমাত্রা কমবে কি না জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকায় আজ রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, যা গতকাল একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৫।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত