Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

যে ভালোবাসার সঙ্গে শ্রদ্ধা নেই, তা আমি গ্রহণ করি না

সৈয়দ আব্দুল হাদী। ছবি: তালহা মোস্তাফা

বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। গান গেয়ে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে কতটা সন্তুষ্ট? গান ছাড়া পেশাগত জীবনে আর কী করেছেন তিনি? বাংলা গানের সোনালি যুগ পেরিয়ে আসা এই শিল্পী কী বলছেন বর্তমান সময়ের সংগীত নিয়ে? এমন নানা প্রশ্ন আর প্রসঙ্গ নিয়ে সৈয়দ আব্দুল হাদীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এস রানা

এম এস রানা

একবার বলেছিলেন, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে কিছুটা সময় হলেও রেয়াজ করতেন। এখন কি নিয়মিত রেয়াজ করা সম্ভব হয়?

এখন আর নিয়মিত রেয়াজ করা হয় না। আগেও যে প্রতিদিন রেয়াজ করতে পারতাম, ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। তবে যেদিন রেকর্ডিং থাকত, বা কোনো অনুষ্ঠান থাকত, সেদিন অবশ্যই রেয়াজ করতাম।

আপনার পেশাগত জীবন শুরু কী দিয়ে?

গান করতাম। পাশাপাশি জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু। ওখানে লেকচার দিতে দিতে গলার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত, গান গাইতে অসুবিধা হতো। তাই শিক্ষকতা ছেড়ে দিলাম।

বিটিভির শুরুর দিকে প্রযোজক হিসেবেও তো কাজ করেছেন?

হ্যাঁ। তখন ছিল পিটিসি। পাকিস্তান টেলিভিশন করপোরেশন। ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হলো। আমি জয়েন করলাম ১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে। তখন প্রযোজক হওয়াটাও সহজ ছিল না। কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্রং থাকতে হতো।

আপনার প্রযোজনায় প্রথম অনুষ্ঠান কী ছিল?

প্রযোজক হিসেবে আমার শুরু স্টুডেন্টস প্রোগ্রাম দিয়ে। যেহেতু ইউনিভার্সিটি থেকে তখন বের হয়েছি, তাই আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হলো। ছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। আমি ‘ড. জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’ নাটকটি করেছিলাম। এর নাট্যরূপ দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁদের কেউ সম্ভবত আর বেঁচে নেই। এ ছাড়া গানের অনুষ্ঠানই বেশি করতাম। সেখানে রওশন আরা মুস্তাফিজ, হাসিনা মমতাজ—এদের নিয়ে এলাম। এ ছাড়া একটা নাটক করেছিলাম, সেই নাটকে সুচন্দা প্রথম অভিনয় করেছিলেন।

এই সময়ের গান শোনেন?

হ্যাঁ, খুব আগ্রহ নিয়ে শুনি।

কী মনে হয়, আপনারা যে জায়গাটা তৈরি করেছেন, সংগীতাঙ্গন কি সেই জায়গায় আটকে আছে, নাকি পিছিয়ে গেল কিংবা উন্নতি করল?

এটা অনেক বড় প্রসঙ্গ। সংক্ষেপে বলা মুশকিল। তবে এটা বলতে পারি, আমরা বড় হয়েছি একটা আদর্শিক যুগে, সেই যুগ কি এখন আছে? এই রকমভাবে শুধু যে সমাজের পরিবর্তন এসেছে, তা নয়; সর্বক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন এসেছে। স্বাভাবিকভাবে গানের ক্ষেত্রেও এসেছে। প্রধানত যে কথা বলতে চাই, গান তো অবশ্যই একটা বিনোদন, সেটা আগেও ছিল। তবে সেগুলো শিল্প হতো, শিল্প হয়েও মানুষকে বিনোদিত করত। আর এখন ব্যাপারটা উল্টে গেছে। আগে বিনোদন, তারপর শিল্পভাবনা। শিল্প হলে হলো, না হলে নাই, বিনোদন হলেই হলো। এখন যারা গান করছে, তাদের অনেকের গান শুনে মনে হয়, বেশ ভালো গলা, তারা শিখে এসেছে। কিন্তু সমস্যা একটাই—কারও নিজস্ব গায়কি তৈরি হচ্ছে না, নিজস্ব কণ্ঠ তৈরি হচ্ছে না। অটো টিউনার দিয়ে গান তৈরি হয়ে যাচ্ছে। শিল্পীর একটি নিজস্ব কণ্ঠ থাকতে হবে, নিজস্ব গায়কি থাকতে হবে।

একসময় অসংখ্য সিনেমা হতো, সেখানে অনেক গান তৈরি হতো, সেগুলো জনপ্রিয় হতো। একপর্যায়ে দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান এল, যারা শিল্পীদের গাওয়া গান অ্যালবাম আকারে বাজারজাত করত। এখন অত সিনেমাও হয় না, প্রতিষ্ঠানগুলো নেই। শিল্পীরা নিজ উদ্যোগে, নিজ খরচে, ইউটিউবে গান করছে। শিল্পী তৈরির ক্ষেত্রে এটা প্রতিবন্ধকতা কি না?

যুগের কারণেই এটা হয়েছে। আগেও এমন সময় ছিল, যখন যিনি লিখতেন, তিনিই সুর করতেন, আবার কখনো তিনিই গাইতেন। এরপর গ্রামোফোন কোম্পানি এল। পরিবর্তন এল। একজন গান লিখছেন, অন্যজন সুর করছেন, আরেকজন গাইছেন। আর এখন নিজের ঘরে বসেই নিজের লেখা, নিজের সুর করা গান গেয়ে ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে। কোয়ালিটি কী হচ্ছে, তা দেখার কেউ নেই। আসলে আমরা ধীরে ধীরে এক-একটা দ্বীপ হয়ে যাচ্ছি। একসময় একান্নবর্তী পরিবার ছিল। খাওয়ার সময় হলে ঘণ্টা বাজানো হতো, সবাই একসঙ্গে খেতে বসত। সময়ের দাবিতে এখন আর একান্নবর্তী পরিবার দেখা যায় না। সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। গানের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আমরা প্রত্যেকে এক-একটা দ্বীপ হয়ে যাচ্ছি। কারও সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই।

গানের তো নিজস্ব একটা ভাষা আছে, নিজস্ব দাবি আছে। আপনার কি মনে হয়, এখনকার এই পরিবর্তনটাও একসময় বদলে যেতে পারে, সংগীত আবার তার আগের জগতে, পুরোনো ধারা বা নিয়মে ফিরে যেতে পারে?

একটা উদাহরণ দিই, আইনস্টাইনকে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, তৃতীয় মহাযুদ্ধে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তা বলতে পারব না, তবে চতুর্থ মহাযুদ্ধের কথা বলতে পারি, সেটা হবে ইটপাটকেল আর লাঠিসোঁটা দিয়ে। মানে, সভ্যতা আবার নতুন করে শুরু হবে। নিশ্চয় বোঝাতে পেরেছি। সংগীতও নিশ্চয় নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একসময় তার শিকড়ে ফিরে যাবে। তবে সেটা কবে, বলতে পারব না।

গান গেয়ে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এ নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

প্রথম তিনটি পুরস্কার নিয়ে খুশি। জেনুইনলি পেয়েছি। তবে এমন এমন গান আমার ছিল, যে দশবার আমাকে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারত। অথচ, শেষের দুইটা পুরস্কার যে গান দুটির জন্য পেয়েছি, আমি নিজে হলে এই পুরস্কার দিতাম না। কারণ, আমার এর চেয়ে ভালো গান ছিল।

কেন এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন?

আসলে তত দিনে লবিং বা তদবির ঢুকে গেছে। লবিং তো নোবেল নিয়েও হয়। তাই বলে রাস্তা থেকে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে তো লবিং করবে না কেউ। লবিং করতে হলে হয় আপনার লোক থাকতে হবে, নয়তো আপনার নিজেকেই ভিক্ষা করতে হবে। দুটোর কোনোটাই আমার পছন্দ নয়। যে জন্য অনেক কিছুই আমি জীবনে পাইনি। তাতে কিছুই যায় আসে না। মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেটাই আমার কাছে বড়। একটা কথা বলি, যে ভালোবাসার সঙ্গে শ্রদ্ধা নেই, তা আমি গ্রহণ করি না। আবার যে শ্রদ্ধার সঙ্গে ভালোবাসা নেই, সেটাও গ্রহণ করি না।

শিল্পীজীবনে সৈয়দ আব্দুল হাদী হিসেবে কি কোনো আক্ষেপ আছে?

আক্ষেপ নেই, তবে ভ্রুক্ষেপ আছে। আমার কাছে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো আত্মমর্যাদা, এটাকে বিক্রি করে কিছুই করতে চাই না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /২০২৫ সালে যাঁদের হারিয়েছি

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত
প্রবীর মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

বছরজুড়েই বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীদের প্রয়াণ শোকাহত করেছে সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষকে। ২০২৫ সালে প্রয়াত শিল্পীদের খবর এই প্রতিবেদনে।

অঞ্জনা রহমান

৪ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

প্রবীর মিত্র

৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন

২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন। কয়েক বছর ধরে লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন অঞ্জন।

সন্‌জীদা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত
সন্‌জীদা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

সন্‌জীদা খাতুন

২৫ মার্চ মারা যান বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন। তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, কিডনি রোগে ভুগছিলেন।

গুলশান আরা আহমেদ

১৫ এপ্রিল মারা যান ছোট পর্দার অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ। হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

১০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান সংগীত ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

অঞ্জনা রহমান। ছবি সংগৃহীত
অঞ্জনা রহমান। ছবি সংগৃহীত

জীনাত রেহানা

‘সাগরের তীর থেকে’ গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা মারা যান ২ জুলাই। দীর্ঘদিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।

এ কে রাতুল

জিম করতে গিয়ে ২৭ জুলাই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান মিউজিশিয়ান এ কে রাতুল। তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা জসীমের মেজ ছেলে।

অমরেশ রায় চৌধুরী

১২ আগস্ট মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী অমরেশ রায় চৌধুরী।

ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদা পারভীন

১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

সেলিম হায়দার

ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গিটারিস্ট সেলিম হায়দার মারা যান ২৭ নভেম্বর। ক্যানসারসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সংগীত ক্যারিয়ারে ফিডব্যাকসহ বাজিয়েছেন বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গে। গত ৩০ বছর রুনা লায়লার সঙ্গেও নিয়মিত বাজিয়েছেন তিনি।

জেনস সুমন

গত ২৮ নভেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সংগীতশিল্পী জেনস সুমন। ১৬ বছরের বিরতি কাটিয়ে গত বছর আবার গানে ফিরেছিলেন ‘একটা চাদর হবে’খ্যাত এই গায়ক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /চলচ্চিত্রে ২০২৫ সালের আলোচিত ৫ ঘটনা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত
পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত

বছরজুড়ে চলচ্চিত্রের জগতে ঘটেছে কাঙ্ক্ষিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনা। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য রইল নির্বাচিত পাঁচটি আলোচিত ঘটনার খবর।

নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার

গত মে মাসে থাইল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে নুসরাত ফারিয়াকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে জুলাই অভ্যুত্থানের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এক দিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান এই নায়িকা।

পরীমণির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

গত এপ্রিল মাসে গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। তবে পরীমণি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোটাই ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।

কান উৎসবে ‘আলী’ সিনেমার অভিনেতার সঙ্গে নির্মাতা আদনান আল রাজীব। ছবি: সংগৃহীত
কান উৎসবে ‘আলী’ সিনেমার অভিনেতার সঙ্গে নির্মাতা আদনান আল রাজীব। ছবি: সংগৃহীত

শাকিবের মেগাস্টার শব্দ নিয়ে জাহিদ হাসানের আপত্তি

অনেকেই শাকিব খানকে মেগাস্টার বলে সম্বোধন করেন। তবে শাকিব খানের নামের আগে এই শব্দচয়ন নিয়ে আপত্তিও রয়েছে অনেকের। গত জুনে এক সাক্ষাৎকারে শাকিবের নামের আগে ব্যবহার করা মেগাস্টার শব্দটি নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানান জাহিদ হাসান। এতে শাকিবের ভক্তদের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। ছবি: সংগৃহীত
প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। ছবি: সংগৃহীত

কান উৎসবে পুরস্কার জয়

গত মে মাসে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে স্পেশাল মেনশন পুরস্কার জিতে নেয় আদনান আল রাজীব পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আলী’। কান উৎসবে এটি বাংলাদেশের প্রথম পুরস্কার।

সিনেমা থেকে বাদ পড়লেন দীঘি

একাধিক সিনেমা থেকে বাদ পড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। বছরের শুরুতে গত ফেব্রুয়ারিতে জানা যায়, ‘টগর’ সিনেমায় দীঘির জায়গায় নেওয়া হয়েছে পূজা চেরিকে। নির্মাতা আলোক হাসান জানান, পেশাদারি মনোভাবের অভাব থাকায় দীঘিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সরকারি অনুদানের ‘দেনা পাওনা’ সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয় দীঘিকে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /২০২৫ সালে বিয়ে ও বিচ্ছেদ হলো যাঁদের

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
মেহজাবীন চৌধুরী ও আদনান আল রাজিব। ছবি: সংগৃহীত
মেহজাবীন চৌধুরী ও আদনান আল রাজিব। ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে অনেক তারকা যেমন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন, তেমনি এসেছে বিবাহবিচ্ছেদের খবর। তারকাদের বিয়ে ও বিচ্ছেদের খবর নিয়ে এই প্রতিবেদন।

বিয়ে করলেন যাঁরা

বছরের শুরুতেই বিয়ের খবর জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান। তাহসানের সঙ্গে অভিনেত্রী মিথিলার বিচ্ছেদ হয়েছে ২০১৭ সালে। এরপর মিথিলা ওপার বাংলার নির্মাতা সৃজিতের সঙ্গে ঘর বাঁধলেও তাহসান ছিলেন একা। এ বছর জানুয়ারিতে নতুন সংসার বাঁধলেন তাহসান। পাত্রী রোজা আহমেদ। পেশায় মেকওভার আর্টিস্ট। রোজা নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে কসমেটোলজির ওপর পড়াশোনা করেছেন। তিনি একজন উদ্যোক্তা। নিউইয়র্কে রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর।

স্ত্রী রোজার সঙ্গে তাহসান। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রী রোজার সঙ্গে তাহসান। ছবি: সংগৃহীত

এ বছর বিশেষ আলোচনার জন্ম দিয়েছে অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও নির্মাতা আদনান আল রাজীবের বিয়ের ঘটনা। ২০১৩ সাল থেকে দুজনে প্রেম করছেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ ১৩ বছরের প্রমের সফল পরিণতি আসে এ বছর। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন তাঁরা।

এ বছর একই সঙ্গে বিচ্ছেদ, বিয়ে ও নবাগত সন্তানের খবর দিয়ে চমকে দিয়েছেন সংগীত তারকা জেমস। দ্বিতীয় স্ত্রী বেনজীরের সঙ্গে জেমসের বিচ্ছেদ হয়েছে ২০১৪ সালে। এর ১০ বছর পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক নামিয়া আমিনকে বিয়ে করেন জেমস। এ বছর জুন মাসে তিনি পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছেন। এত দিন ব্যক্তিগত জীবনের এসব খবর গোপন রেখেছিলেন জেমস। গত ২২ অক্টোবর নিজেই জানিয়েছেন সব ঘটনা। সেই সঙ্গে প্রকাশ করেছেন নতুন সংসারে ঘর আলো করে আসা পুত্রসন্তানের ছবি।

স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে জেমস। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে জেমস। ছবি: সংগৃহীত

এ বছর আরও যাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অভিনয়শিল্পী শবনম ফারিয়া, শামীম হাসান সরকার, জামিল হোসেন, মাইমুনা ফেরদৌস মম, সংগীতশিল্পী বাঁধন সরকার পূজা, নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মিজানুর রহমান আরিয়ান ও জাহিম প্রীতম।

ভেঙেছে যাঁদের সংসার

অনেক তারকার নতুন সংসার শুরু করার খবরের পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও জানা গেছে এ বছর। ১৪ ডিসেম্বর অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু জানান, সংবাদ পাঠিকা মমরেনাজ মোমোর সঙ্গে ছয় বছর আগে বিচ্ছেদ হয়েছে তাঁর। এত দিন দুজনের সিদ্ধান্তেই খবরটি গোপন রেখেছিলেন তাঁরা। আবার দুজনে আলোচনা করেই বিচ্ছেদের খবরটি প্রকাশ করেছেন এ বছর।

সানাউল্লাহ নূরে সাগর ও সালমা। ছবি: সংগৃহীত
সানাউল্লাহ নূরে সাগর ও সালমা। ছবি: সংগৃহীত

২০ ডিসেম্বর অভিনেত্রী আফসানা আরা বিন্দু জানান তাঁর সংসার ভাঙার খবর। ২০১৭ সাল থেকে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিক ও বিন্দু সেপারেশনে ছিলেন। ২০২২ সালে আলোচনার মাধ্যমেই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। কাছের মানুষেরা জানলেও মিডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশ করেননি তাঁরা।

গতকাল ৩০ ডিসেম্বর সংগীতশিল্পী সালমার সঙ্গে বিচ্ছেদের খবর জানান সানাউল্লাহ নূরে সাগর। এরপর সালমা নিজেও জানিয়েছেন তাঁর সংসার ভাঙার খবর। সালমা জানিয়েছেন, ২৯ নভেম্বর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে তাঁদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার প্রয়াণে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

বিনোদন ডেস্ক
বেগম খালেদা জিয়া।	ছবি: সংগৃহীত
বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে

—হানিফ সংকেত, নির্মাতা ও উপস্থাপক

সর্বজন শ্রদ্ধেয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে একজন অভিভাবক। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। তাঁর শোকাবহ পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা।

আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে

—মনির খান, সংগীতশিল্পী

২০১১ সালে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। হাতে পুরস্কার ও গলায় মেডেল পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে।’ একপর্যায়ে তিনি আমাকে জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক কমিটির সহসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বানালেন। সেই সুবাদে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। উনি বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, নির্দেশনা দিতেন কীভাবে কাজ করতে হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার, কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কিছু চলে যাওয়া পাহাড় সমান বেদনার। অনেকবার তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। বারবার এসেছে তাঁর বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গ। উনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘এ দেশের মাটি ও মানুষ ছাড়া বিদেশের মাটিতে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশের মানুষের অন্তরেই আমার বসবাস। এখানেই আমার মৃত্যু হবে, এই মাটিতেই আমার কবর হবে।’ তাঁর কথাই সত্য হলো।

তিনি দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ

—কনকচাঁপা, সংগীতশিল্পী

চলে গেলেন স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আপসহীন অবিসংবাদিত নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বারবার তাঁর নামের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘আপসহীন’। তিনি অন্যায়, মিথ্যাচার, স্বৈরচারিতার কাছে মাথা নত করেননি। দেশের মানুষের মায়ায় তিনি সংসার, সন্তান, আরাম-আয়েশি বিলাসী জীবন—কিছুর তোয়াক্কা করেন নাই। আফসোস, একটা মিথ্যা মামলার কারণে তিনি সুন্দরভাবে জীবনের সমাপ্তি টানতে পারলেন না। জেলখানায় তাঁর জীবন কীভাবে কেটেছে তা ভেবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। অথচ তিনি থাকতেন নির্ভার! এ জন্যই তিনি অকুতোভয় জীবনযোদ্ধা, মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানবী। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল, ‘জীবনে যা কিছু হয়ে যাক এই দেশ, এই দেশের মানুষ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।’ দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি, তিনিই প্রকৃত রাজনীতিবিদ এবং খাঁটি দেশনেতা। আমাদের দুঃখ রাখার জায়গা নেই যে আমরা তাঁকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারিনি।

বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন তিনি

—জয়া আহসান, অভিনেত্রী

বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য। রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চির প্রশান্তি লাভ করুক।

শত প্রতিকূলতায়ও মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি

—আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী

আমাদের জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্ব ও দীর্ঘদিনের জনসেবা বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তিনি অসাধারণ এক জীবন যাপন করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও যে মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতি তাঁকে সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

তাঁর প্রয়াণে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল

—বেবী নাজনীন, সংগীতশিল্পী

বেগম খালেদা জিয়া দেশ এবং মানুষের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজনীতির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁকে হারানোর দুঃখ মানুষের মনে সব সময় বিরাজমান থাকবে।

খালেদা জিয়া হলো একটা ইনস্টিটিউশন। তাঁর সঙ্গে থেকে অনেকে অনেক কিছু শিখেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অভিভাবক ছিলেন। দলের নেতা-কর্মীদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন কীভাবে রাজনীতি করতে হয়। আমারও হাতেখড়ি তিনিই দিয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। আমার মতো তাঁর কাছাকাছি আর কেউ হয়তো থাকেনি। উনি জেলে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। খুব আদর ও স্নেহ করে বলেছিলেন, ‘ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও। তোমরা দেশ বাঁচাও এবং দেশের মানুষ বাঁচাও।’

এই অন্তিম যাত্রায় তিনি যেমন মানুষের দোয়া নিয়ে গেছেন, তেমনি দেশের মানুষের জন্য রেখে গেছেন আশীর্বাদ, যা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষের মাঝে গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত