জাহীদ রেজা নূর

আশির দশকে ‘ক্রান্তি’ বা ‘শক্তি’ নামে নির্মিত সিনেমার মাধ্যমে দিলীপ কুমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হতে পারত। আমাদের বলতে আশির দশকের তরুণদের কথা বলছি। আশির দশকের শুরুতে যখন একটু একটু করে ভিসিআর এসে হাজির হচ্ছে ঢাকা শহরে, সিনেমা হলের মতো টিকিট কেটে হিন্দি ছবি দেখা হচ্ছে বেগমবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায়, সে সময় নির্ঘাত মাঝবয়সী দিলীপ কুমারকে ছোট্ট টিভি স্ক্রিনে দেখার সৌভাগ্য হতো। একসময় এই ভদ্রলোক ‘ট্র্যাজেডি কিং’ উপাধি পেয়েছিলেন, সে কথা পত্র–পত্রিকার লেখালেখির মাধ্যমে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করা যেত।
ট্র্যাজেডি শব্দটির সঙ্গে উপভোগ শব্দটিকে কি খুবই বিসদৃশ লাগছে? একটু ভেবে দেখলেই পরিষ্কার হবে, আসলে দিলীপ কুমারের ট্র্যাজেডি মানেই বক্স অফিসে 'কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা'। হলভর্তি দর্শক হাপুস নয়নে কাঁদছে, আর প্রযোজকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে—এ এক অন্য খেলা! সেই যখন পেশোয়ারে থাকতেন ইউসুফ খান (পরে দিলীপ কুমার), যখন তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি কাপুর পরিবার, তখনো আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিল না দিলীপ কুমারদের। কত খাটাখাটনি, বাবার সঙ্গে ঝগড়া, পালিয়ে গিয়ে আর্মি ক্লাবে চাকরি, ফেরার সময় ৫ হাজার রুপি নিয়ে ঘরে ফেরা—নাহ! দিলীপ কুমারের জীবনী এখানে বলার কোনো প্রয়োজন নেই, যারা এ লেখা পড়ছেন, তাঁরা সবাই জানেন দিলীপের জীবনেতিহাস। এখানে শুধু সে কথাই বলার চেষ্টা করছি, আশির দশকে আসলে আমরা কী করে দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। এবং সেটা পেলাম আস্ত রোমান্টিক এবং ট্র্যাজিক কুমারকেই! মাঝবয়সী চরিত্রাভিনেতাকে নয়।
দুই.
এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নিউ ইস্কাটনের বাড়ি থেকে আমাদের নামিয়ে দিল পুলিশ। বাড়ির আসবাবপত্র ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে লাগল রাস্তায়। আমরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের এই কাণ্ডকীর্তি দেখতে লাগলাম। এ সময় আমার কোনো এক ভাই বুঝতে পারল, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে রাত কাটাতে হবে ফুটপাতে। তাই তখনই বাড়ি খুঁজতে বের হলেন তিনি। একটা ভাড়া বাড়ির খুব প্রয়োজন তখন।
সে সময় জিগাতলা পোস্ট অফিসের কাছে একটি বাড়ি পাওয়া গেল। সে এক আকস্মিক ব্যাপার। শুধু তাই নয়, মালপত্র নিয়ে সে বাড়ির একতলায় ওঠার পর দোতলায় বসবাসরত বাড়িওয়ালারা আমাদের মুরগি আর ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ালেন রাতে। এ রকম ট্র্যাজেডির মধ্যে এ যেন স্বর্গীয় আদর–যত্ন।
এই জিগাতলায় এলাম বলেই তরুণ দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। কী করে তা সম্ভব হলো, সেটাই বলি। নতুন জায়গা। শহরের কেন্দ্র থেকে বেশ খানিকটা দূরে। ধানমন্ডি, রায়ের বাজার, হাজারিবাগ খুব কাছে। ট্যানারির বীভৎস গন্ধ প্রায় সব সময় নাকে এসে লাগে। তারই মধ্যে নতুন জীবন। হেঁটে হেঁটে জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। হাজারীবাগ গিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে কিছু দূর এগোলেই সুইপার কলোনি। সেটা পার হয়ে আরও কিছুটা এগোলে বিডিআর মিলনায়তন। সেখানে গিয়ে দেখি ছবি চলছে। সাধারণ সিনেমা হলের চেয়ে টিকিটের দাম কম। ছবির নাম ‘বাবুল’। অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার আর নার্গিস। দিলীপ কুমার বড়লোকের ছেলে। পোস্টমাস্টার হয়ে এসেছেন এই ছোট্ট শহরে। গরিব বাবার মেয়ে নার্গিস। ছবিতে যার নাম বেলা। বেলা আর অশোকের মধ্যে খুব ভাব। বেলার বাবা ভাবেন, অশোক নিশ্চয়ই বেলাকে বিয়ে করবে। এ সময় উষা নামে একটি ধনী বাবার কন্যার সঙ্গে পরিচয় হয় অশোকের। অশোক হয় তার গৃহশিক্ষক। উষা প্রেমে 'পড়ে' অশোকের।
এর পর এগিয়ে চলে কাহিনি। যারা দেখেননি, তাদের কাছে ছবিটি দেখার আহ্বান থাকল। এর বেশি কাহিনি বলে দিলে দেখার আগ্রহ নষ্ট হতে পারে। তবে এটুকু বলে রাখি, ছবিজুড়ে শামসাদ বেগম আর তালাত মাহমুদের গাওয়া গান মন ভরে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ঢাকা শহরের একটি সিনেমা হলে ভারতীয় হিন্দি ছবি! আমাদের জানা ছিল, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান–ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার পর ভারতীয় ছবির আগমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে প্রিন্টগুলো ছিল এখানে, সেগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হতো। ফলে বিডিআর মিলনায়তনে বাবুল, বৈজু বাওরা, লুকোচুরির মতো ছবিগুলো চলত। খুবই খারাপ প্রিন্ট। কিন্তু বারবার তা দেখতাম। লুকোচুরি মনে হয় কুড়িবারের বেশি দেখেছিলাম, বাবুল দেখেছিলাম দশবারের বেশি।
তিন.
দুঃসংবাদগুলো দিয়ে রাখি।
দিলীপ কুমারের ছোট ভাই নাসির খান মারা গিয়েছিলেন সেই ১৯৭৪ সালে। তিনিও ছিলেন নামকরা চলচ্চিত্র অভিনেতা। বৈজয়ন্তী মালা আর দিলীপ কুমারের সঙ্গে তিনি ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
দিলীপ কুমার তাঁর আরও দুই ভাইকে হারিয়েছেন গত বছর। দুজনেই মারা গেছেন কোভিডে। আসলাম খান মারা গেছেন গত বছর আগস্ট মাসে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এহসান খান মারা গেছেন ৯০ বছর বয়সে, গত বছরেরই সেপ্টেম্বরে।
চার.
অমিতাভ বচ্চন বহু আগেই বলেছিলেন, দিলীপ কুমার ভারতের সেরা অভিনেতাদের একজন এবং শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সেরা অভিনেতাদের অন্যতম।
কথাটা অমিতাভ বাড়িয়ে বলেননি। আমাদের অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, দিলীপ কুমার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু হলে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটা পেয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে। ‘দাগ’ ছিল ছবিটার নাম। এর পর আরও সাতবার সেই পুরস্কার জুটেছে তাঁর কপালে। সে সময়কার সেরা অভিনেত্রীরা তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মধুবালা, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, নিম্মি, মিনা কুমারী, কামিনী কৌশল।
এখন তো শিল্পকেও নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য। সে কারণেই একটি তথ্য এখানে জানিয়ে রাখতে চাই।
পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
এর পর যদি ষাটের দশকের মুঘল–ই–আজম ছবিটির কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, ভারতের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ১১ বছর টিকে ছিল সেটা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। ১৯৭১ সালে নির্মিত ‘হাতি মেরা সাথি’ ছবিটি এই রেকর্ড ভঙ্গ করে। এর পর সে রেকর্ডও ভেঙে যায় ১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার পর। তবে অনেকেই বলে থাকেন, যদি মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রাখা হয়, তাহলে ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি হিসেবে মুঘল–ই আজমকেই সামনে রাখতে হবে। ২০১১ সালের হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হচ্ছে!
মুঘল–ই–আজম ছবিটি রাজপুত্র সেলিমকে নিয়ে। আমরা যাকে জাহাঙ্গীর বলে জানি। সেলিম বিদ্রোহ করেছিলেন তাঁর বাবা আকবরের বিরুদ্ধে। এই ছবিতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন সেলিমের ভূমিকায়। বাবা আকবর হয়েছিলেন রাজ কাপুরের বাবা পৃত্থীরাজ কাপুর। মধুবালা অভিনয় করেছিলেন আনারকলি চরিত্রে। ছবিটি ছিল সাদা–কালো। শুধু দ্বিতীয় ভাগে কিঞ্চিৎ রঙিন ছিল। ২০০৪ সালে পুরো ছবিটি রঙিন করে আবার সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
পাঁচ.
যদিও এই তথ্য অনেকেই জানেন, পত্র–পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে, তারপরও মনে হয়, এখানে উল্লেখ করা দরকার। ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনকে আমরা চিনি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবির মাধ্যমে। এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তিনি সেখানে শেরিফ আলী চরিত্রে দিলীপ কুমারকে চেয়েছিলেন। দিলীপ রাজি হননি। তখন মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরিফ ওই চরিত্রে অভিনয় করেন। ওমর শরীফের জীবনে এই ছবি একটি মাইলফলক হয়ে আছে।
যে তথ্য অনেকেই জানেন না, সেটা এখানে বলি। দিলীপ কুমার ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ ছবিটি দেখার পর নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘আমি যদি এই ছবিতে অভিনয় করতাম, তাহলে ওমর শরিফের মতো এত ভালো করতে পারতাম না। তিনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।’
ডেভিড লিন ‘তাজমহল’ নামে একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সে ছবির নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলেন এলিজাবেথ টেইলরকে। আর নায়ক হিসেবে ভেবেছিলেন দিলীপ কুমারকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়নি।
ছয়.
সত্তরের দশকে দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারে ধস নেমেছিল। ছবিগুলো সেভাবে দর্শক টানতে পারছিল না। তবে ১৯৭০ সালটি আমাদের জন্য খুব আনন্দদায়ক। এ বছর তিনি ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। দিলীপ কুমার অভিনীত একমাত্র বাংলা ছবি এটি। ১৯৭৪ সালে এই ছবি হিন্দি ভাষায় আবার করেন তিনি। উত্তর–পূর্ব ভারতের একজন চা শ্রমিক চা বাগানের ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তারই বর্ণনা রয়েছে এই ছবিতে। সায়রা বানু, অনিল চ্যাটার্জি, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। ১৯৭৬ সালে তিনি ছুটি নেন চলচ্চিত্র থেকে। ফিরে আসেন আশির দশকের শুরুতে।
সাত.
লেখাটা এখান থেকেই শুরু করেছিলাম। এ সময় ভিসিআরের মাধ্যমে ছোট পর্দায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে মোলাকাত হতে পারত। কিন্তু বিডিআর অডিটোরিয়ামের বড় পর্দায়ই ট্র্যাজেডির রাজাকে আমরা দেখে ফেলেছিলাম। ‘ক্রান্তি’ ছবিতে দিলীপের সঙ্গে ছিলেন মনোজ কুমার, শশী কাপুর, হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিনহা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন তিনি এই ছবিতে। ভারতের স্বাধীনতার সৈনিক। তারকাবহুল এই ছবি দর্শক লুফে নিয়েছিল। এর পর সুভাষ ঘাইয়ের ‘বিধাতা’। তারপর একই পরিচালকের ‘কর্ম।’ কর্ম নিয়ে একটা কথা বলতে ভালো লাগবে। এই ছবিতে দিলীপ অভিনয় করেছিলেন তাঁরই সমসাময়িক আরেক বড় শিল্পী নুতনের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, ‘শিকওয়া’ নামের একটি ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন আরও তিন দশক আগে। কিন্তু ছবিটি শেষ করা হয়নি। ১৯৮৯ সালেও দিলীপ–নুতন অভিনয় করেন ‘কানুন আপনা আপনা’ নামে ছবিতে।
শেষ ছবিটি ছিল ‘কিলা’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এর পর আর অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি।
আট.
এরপরও অনেকগুলো বছর বেঁচেছেন দিলীপ কুমার। বেশ কয়েকবার তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়েছে আমাদের। পরে তা মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার কিন্তু মৃত্যু সংবাদটা মিথ্যে ছিল না।
৭ জুলাই চলেই গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের শৃঙ্গ স্পর্শ করা এই প্রতিভাবান মানুষটি।

আশির দশকে ‘ক্রান্তি’ বা ‘শক্তি’ নামে নির্মিত সিনেমার মাধ্যমে দিলীপ কুমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হতে পারত। আমাদের বলতে আশির দশকের তরুণদের কথা বলছি। আশির দশকের শুরুতে যখন একটু একটু করে ভিসিআর এসে হাজির হচ্ছে ঢাকা শহরে, সিনেমা হলের মতো টিকিট কেটে হিন্দি ছবি দেখা হচ্ছে বেগমবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায়, সে সময় নির্ঘাত মাঝবয়সী দিলীপ কুমারকে ছোট্ট টিভি স্ক্রিনে দেখার সৌভাগ্য হতো। একসময় এই ভদ্রলোক ‘ট্র্যাজেডি কিং’ উপাধি পেয়েছিলেন, সে কথা পত্র–পত্রিকার লেখালেখির মাধ্যমে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করা যেত।
ট্র্যাজেডি শব্দটির সঙ্গে উপভোগ শব্দটিকে কি খুবই বিসদৃশ লাগছে? একটু ভেবে দেখলেই পরিষ্কার হবে, আসলে দিলীপ কুমারের ট্র্যাজেডি মানেই বক্স অফিসে 'কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা'। হলভর্তি দর্শক হাপুস নয়নে কাঁদছে, আর প্রযোজকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে—এ এক অন্য খেলা! সেই যখন পেশোয়ারে থাকতেন ইউসুফ খান (পরে দিলীপ কুমার), যখন তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি কাপুর পরিবার, তখনো আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিল না দিলীপ কুমারদের। কত খাটাখাটনি, বাবার সঙ্গে ঝগড়া, পালিয়ে গিয়ে আর্মি ক্লাবে চাকরি, ফেরার সময় ৫ হাজার রুপি নিয়ে ঘরে ফেরা—নাহ! দিলীপ কুমারের জীবনী এখানে বলার কোনো প্রয়োজন নেই, যারা এ লেখা পড়ছেন, তাঁরা সবাই জানেন দিলীপের জীবনেতিহাস। এখানে শুধু সে কথাই বলার চেষ্টা করছি, আশির দশকে আসলে আমরা কী করে দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। এবং সেটা পেলাম আস্ত রোমান্টিক এবং ট্র্যাজিক কুমারকেই! মাঝবয়সী চরিত্রাভিনেতাকে নয়।
দুই.
এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নিউ ইস্কাটনের বাড়ি থেকে আমাদের নামিয়ে দিল পুলিশ। বাড়ির আসবাবপত্র ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে লাগল রাস্তায়। আমরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের এই কাণ্ডকীর্তি দেখতে লাগলাম। এ সময় আমার কোনো এক ভাই বুঝতে পারল, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে রাত কাটাতে হবে ফুটপাতে। তাই তখনই বাড়ি খুঁজতে বের হলেন তিনি। একটা ভাড়া বাড়ির খুব প্রয়োজন তখন।
সে সময় জিগাতলা পোস্ট অফিসের কাছে একটি বাড়ি পাওয়া গেল। সে এক আকস্মিক ব্যাপার। শুধু তাই নয়, মালপত্র নিয়ে সে বাড়ির একতলায় ওঠার পর দোতলায় বসবাসরত বাড়িওয়ালারা আমাদের মুরগি আর ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ালেন রাতে। এ রকম ট্র্যাজেডির মধ্যে এ যেন স্বর্গীয় আদর–যত্ন।
এই জিগাতলায় এলাম বলেই তরুণ দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। কী করে তা সম্ভব হলো, সেটাই বলি। নতুন জায়গা। শহরের কেন্দ্র থেকে বেশ খানিকটা দূরে। ধানমন্ডি, রায়ের বাজার, হাজারিবাগ খুব কাছে। ট্যানারির বীভৎস গন্ধ প্রায় সব সময় নাকে এসে লাগে। তারই মধ্যে নতুন জীবন। হেঁটে হেঁটে জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। হাজারীবাগ গিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে কিছু দূর এগোলেই সুইপার কলোনি। সেটা পার হয়ে আরও কিছুটা এগোলে বিডিআর মিলনায়তন। সেখানে গিয়ে দেখি ছবি চলছে। সাধারণ সিনেমা হলের চেয়ে টিকিটের দাম কম। ছবির নাম ‘বাবুল’। অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার আর নার্গিস। দিলীপ কুমার বড়লোকের ছেলে। পোস্টমাস্টার হয়ে এসেছেন এই ছোট্ট শহরে। গরিব বাবার মেয়ে নার্গিস। ছবিতে যার নাম বেলা। বেলা আর অশোকের মধ্যে খুব ভাব। বেলার বাবা ভাবেন, অশোক নিশ্চয়ই বেলাকে বিয়ে করবে। এ সময় উষা নামে একটি ধনী বাবার কন্যার সঙ্গে পরিচয় হয় অশোকের। অশোক হয় তার গৃহশিক্ষক। উষা প্রেমে 'পড়ে' অশোকের।
এর পর এগিয়ে চলে কাহিনি। যারা দেখেননি, তাদের কাছে ছবিটি দেখার আহ্বান থাকল। এর বেশি কাহিনি বলে দিলে দেখার আগ্রহ নষ্ট হতে পারে। তবে এটুকু বলে রাখি, ছবিজুড়ে শামসাদ বেগম আর তালাত মাহমুদের গাওয়া গান মন ভরে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ঢাকা শহরের একটি সিনেমা হলে ভারতীয় হিন্দি ছবি! আমাদের জানা ছিল, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান–ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার পর ভারতীয় ছবির আগমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে প্রিন্টগুলো ছিল এখানে, সেগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হতো। ফলে বিডিআর মিলনায়তনে বাবুল, বৈজু বাওরা, লুকোচুরির মতো ছবিগুলো চলত। খুবই খারাপ প্রিন্ট। কিন্তু বারবার তা দেখতাম। লুকোচুরি মনে হয় কুড়িবারের বেশি দেখেছিলাম, বাবুল দেখেছিলাম দশবারের বেশি।
তিন.
দুঃসংবাদগুলো দিয়ে রাখি।
দিলীপ কুমারের ছোট ভাই নাসির খান মারা গিয়েছিলেন সেই ১৯৭৪ সালে। তিনিও ছিলেন নামকরা চলচ্চিত্র অভিনেতা। বৈজয়ন্তী মালা আর দিলীপ কুমারের সঙ্গে তিনি ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
দিলীপ কুমার তাঁর আরও দুই ভাইকে হারিয়েছেন গত বছর। দুজনেই মারা গেছেন কোভিডে। আসলাম খান মারা গেছেন গত বছর আগস্ট মাসে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এহসান খান মারা গেছেন ৯০ বছর বয়সে, গত বছরেরই সেপ্টেম্বরে।
চার.
অমিতাভ বচ্চন বহু আগেই বলেছিলেন, দিলীপ কুমার ভারতের সেরা অভিনেতাদের একজন এবং শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সেরা অভিনেতাদের অন্যতম।
কথাটা অমিতাভ বাড়িয়ে বলেননি। আমাদের অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, দিলীপ কুমার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু হলে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটা পেয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে। ‘দাগ’ ছিল ছবিটার নাম। এর পর আরও সাতবার সেই পুরস্কার জুটেছে তাঁর কপালে। সে সময়কার সেরা অভিনেত্রীরা তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মধুবালা, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, নিম্মি, মিনা কুমারী, কামিনী কৌশল।
এখন তো শিল্পকেও নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য। সে কারণেই একটি তথ্য এখানে জানিয়ে রাখতে চাই।
পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
এর পর যদি ষাটের দশকের মুঘল–ই–আজম ছবিটির কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, ভারতের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ১১ বছর টিকে ছিল সেটা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। ১৯৭১ সালে নির্মিত ‘হাতি মেরা সাথি’ ছবিটি এই রেকর্ড ভঙ্গ করে। এর পর সে রেকর্ডও ভেঙে যায় ১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার পর। তবে অনেকেই বলে থাকেন, যদি মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রাখা হয়, তাহলে ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি হিসেবে মুঘল–ই আজমকেই সামনে রাখতে হবে। ২০১১ সালের হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হচ্ছে!
মুঘল–ই–আজম ছবিটি রাজপুত্র সেলিমকে নিয়ে। আমরা যাকে জাহাঙ্গীর বলে জানি। সেলিম বিদ্রোহ করেছিলেন তাঁর বাবা আকবরের বিরুদ্ধে। এই ছবিতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন সেলিমের ভূমিকায়। বাবা আকবর হয়েছিলেন রাজ কাপুরের বাবা পৃত্থীরাজ কাপুর। মধুবালা অভিনয় করেছিলেন আনারকলি চরিত্রে। ছবিটি ছিল সাদা–কালো। শুধু দ্বিতীয় ভাগে কিঞ্চিৎ রঙিন ছিল। ২০০৪ সালে পুরো ছবিটি রঙিন করে আবার সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
পাঁচ.
যদিও এই তথ্য অনেকেই জানেন, পত্র–পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে, তারপরও মনে হয়, এখানে উল্লেখ করা দরকার। ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনকে আমরা চিনি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবির মাধ্যমে। এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তিনি সেখানে শেরিফ আলী চরিত্রে দিলীপ কুমারকে চেয়েছিলেন। দিলীপ রাজি হননি। তখন মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরিফ ওই চরিত্রে অভিনয় করেন। ওমর শরীফের জীবনে এই ছবি একটি মাইলফলক হয়ে আছে।
যে তথ্য অনেকেই জানেন না, সেটা এখানে বলি। দিলীপ কুমার ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ ছবিটি দেখার পর নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘আমি যদি এই ছবিতে অভিনয় করতাম, তাহলে ওমর শরিফের মতো এত ভালো করতে পারতাম না। তিনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।’
ডেভিড লিন ‘তাজমহল’ নামে একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সে ছবির নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলেন এলিজাবেথ টেইলরকে। আর নায়ক হিসেবে ভেবেছিলেন দিলীপ কুমারকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়নি।
ছয়.
সত্তরের দশকে দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারে ধস নেমেছিল। ছবিগুলো সেভাবে দর্শক টানতে পারছিল না। তবে ১৯৭০ সালটি আমাদের জন্য খুব আনন্দদায়ক। এ বছর তিনি ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। দিলীপ কুমার অভিনীত একমাত্র বাংলা ছবি এটি। ১৯৭৪ সালে এই ছবি হিন্দি ভাষায় আবার করেন তিনি। উত্তর–পূর্ব ভারতের একজন চা শ্রমিক চা বাগানের ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তারই বর্ণনা রয়েছে এই ছবিতে। সায়রা বানু, অনিল চ্যাটার্জি, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। ১৯৭৬ সালে তিনি ছুটি নেন চলচ্চিত্র থেকে। ফিরে আসেন আশির দশকের শুরুতে।
সাত.
লেখাটা এখান থেকেই শুরু করেছিলাম। এ সময় ভিসিআরের মাধ্যমে ছোট পর্দায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে মোলাকাত হতে পারত। কিন্তু বিডিআর অডিটোরিয়ামের বড় পর্দায়ই ট্র্যাজেডির রাজাকে আমরা দেখে ফেলেছিলাম। ‘ক্রান্তি’ ছবিতে দিলীপের সঙ্গে ছিলেন মনোজ কুমার, শশী কাপুর, হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিনহা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন তিনি এই ছবিতে। ভারতের স্বাধীনতার সৈনিক। তারকাবহুল এই ছবি দর্শক লুফে নিয়েছিল। এর পর সুভাষ ঘাইয়ের ‘বিধাতা’। তারপর একই পরিচালকের ‘কর্ম।’ কর্ম নিয়ে একটা কথা বলতে ভালো লাগবে। এই ছবিতে দিলীপ অভিনয় করেছিলেন তাঁরই সমসাময়িক আরেক বড় শিল্পী নুতনের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, ‘শিকওয়া’ নামের একটি ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন আরও তিন দশক আগে। কিন্তু ছবিটি শেষ করা হয়নি। ১৯৮৯ সালেও দিলীপ–নুতন অভিনয় করেন ‘কানুন আপনা আপনা’ নামে ছবিতে।
শেষ ছবিটি ছিল ‘কিলা’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এর পর আর অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি।
আট.
এরপরও অনেকগুলো বছর বেঁচেছেন দিলীপ কুমার। বেশ কয়েকবার তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়েছে আমাদের। পরে তা মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার কিন্তু মৃত্যু সংবাদটা মিথ্যে ছিল না।
৭ জুলাই চলেই গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের শৃঙ্গ স্পর্শ করা এই প্রতিভাবান মানুষটি।
জাহীদ রেজা নূর

আশির দশকে ‘ক্রান্তি’ বা ‘শক্তি’ নামে নির্মিত সিনেমার মাধ্যমে দিলীপ কুমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হতে পারত। আমাদের বলতে আশির দশকের তরুণদের কথা বলছি। আশির দশকের শুরুতে যখন একটু একটু করে ভিসিআর এসে হাজির হচ্ছে ঢাকা শহরে, সিনেমা হলের মতো টিকিট কেটে হিন্দি ছবি দেখা হচ্ছে বেগমবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায়, সে সময় নির্ঘাত মাঝবয়সী দিলীপ কুমারকে ছোট্ট টিভি স্ক্রিনে দেখার সৌভাগ্য হতো। একসময় এই ভদ্রলোক ‘ট্র্যাজেডি কিং’ উপাধি পেয়েছিলেন, সে কথা পত্র–পত্রিকার লেখালেখির মাধ্যমে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করা যেত।
ট্র্যাজেডি শব্দটির সঙ্গে উপভোগ শব্দটিকে কি খুবই বিসদৃশ লাগছে? একটু ভেবে দেখলেই পরিষ্কার হবে, আসলে দিলীপ কুমারের ট্র্যাজেডি মানেই বক্স অফিসে 'কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা'। হলভর্তি দর্শক হাপুস নয়নে কাঁদছে, আর প্রযোজকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে—এ এক অন্য খেলা! সেই যখন পেশোয়ারে থাকতেন ইউসুফ খান (পরে দিলীপ কুমার), যখন তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি কাপুর পরিবার, তখনো আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিল না দিলীপ কুমারদের। কত খাটাখাটনি, বাবার সঙ্গে ঝগড়া, পালিয়ে গিয়ে আর্মি ক্লাবে চাকরি, ফেরার সময় ৫ হাজার রুপি নিয়ে ঘরে ফেরা—নাহ! দিলীপ কুমারের জীবনী এখানে বলার কোনো প্রয়োজন নেই, যারা এ লেখা পড়ছেন, তাঁরা সবাই জানেন দিলীপের জীবনেতিহাস। এখানে শুধু সে কথাই বলার চেষ্টা করছি, আশির দশকে আসলে আমরা কী করে দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। এবং সেটা পেলাম আস্ত রোমান্টিক এবং ট্র্যাজিক কুমারকেই! মাঝবয়সী চরিত্রাভিনেতাকে নয়।
দুই.
এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নিউ ইস্কাটনের বাড়ি থেকে আমাদের নামিয়ে দিল পুলিশ। বাড়ির আসবাবপত্র ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে লাগল রাস্তায়। আমরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের এই কাণ্ডকীর্তি দেখতে লাগলাম। এ সময় আমার কোনো এক ভাই বুঝতে পারল, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে রাত কাটাতে হবে ফুটপাতে। তাই তখনই বাড়ি খুঁজতে বের হলেন তিনি। একটা ভাড়া বাড়ির খুব প্রয়োজন তখন।
সে সময় জিগাতলা পোস্ট অফিসের কাছে একটি বাড়ি পাওয়া গেল। সে এক আকস্মিক ব্যাপার। শুধু তাই নয়, মালপত্র নিয়ে সে বাড়ির একতলায় ওঠার পর দোতলায় বসবাসরত বাড়িওয়ালারা আমাদের মুরগি আর ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ালেন রাতে। এ রকম ট্র্যাজেডির মধ্যে এ যেন স্বর্গীয় আদর–যত্ন।
এই জিগাতলায় এলাম বলেই তরুণ দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। কী করে তা সম্ভব হলো, সেটাই বলি। নতুন জায়গা। শহরের কেন্দ্র থেকে বেশ খানিকটা দূরে। ধানমন্ডি, রায়ের বাজার, হাজারিবাগ খুব কাছে। ট্যানারির বীভৎস গন্ধ প্রায় সব সময় নাকে এসে লাগে। তারই মধ্যে নতুন জীবন। হেঁটে হেঁটে জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। হাজারীবাগ গিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে কিছু দূর এগোলেই সুইপার কলোনি। সেটা পার হয়ে আরও কিছুটা এগোলে বিডিআর মিলনায়তন। সেখানে গিয়ে দেখি ছবি চলছে। সাধারণ সিনেমা হলের চেয়ে টিকিটের দাম কম। ছবির নাম ‘বাবুল’। অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার আর নার্গিস। দিলীপ কুমার বড়লোকের ছেলে। পোস্টমাস্টার হয়ে এসেছেন এই ছোট্ট শহরে। গরিব বাবার মেয়ে নার্গিস। ছবিতে যার নাম বেলা। বেলা আর অশোকের মধ্যে খুব ভাব। বেলার বাবা ভাবেন, অশোক নিশ্চয়ই বেলাকে বিয়ে করবে। এ সময় উষা নামে একটি ধনী বাবার কন্যার সঙ্গে পরিচয় হয় অশোকের। অশোক হয় তার গৃহশিক্ষক। উষা প্রেমে 'পড়ে' অশোকের।
এর পর এগিয়ে চলে কাহিনি। যারা দেখেননি, তাদের কাছে ছবিটি দেখার আহ্বান থাকল। এর বেশি কাহিনি বলে দিলে দেখার আগ্রহ নষ্ট হতে পারে। তবে এটুকু বলে রাখি, ছবিজুড়ে শামসাদ বেগম আর তালাত মাহমুদের গাওয়া গান মন ভরে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ঢাকা শহরের একটি সিনেমা হলে ভারতীয় হিন্দি ছবি! আমাদের জানা ছিল, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান–ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার পর ভারতীয় ছবির আগমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে প্রিন্টগুলো ছিল এখানে, সেগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হতো। ফলে বিডিআর মিলনায়তনে বাবুল, বৈজু বাওরা, লুকোচুরির মতো ছবিগুলো চলত। খুবই খারাপ প্রিন্ট। কিন্তু বারবার তা দেখতাম। লুকোচুরি মনে হয় কুড়িবারের বেশি দেখেছিলাম, বাবুল দেখেছিলাম দশবারের বেশি।
তিন.
দুঃসংবাদগুলো দিয়ে রাখি।
দিলীপ কুমারের ছোট ভাই নাসির খান মারা গিয়েছিলেন সেই ১৯৭৪ সালে। তিনিও ছিলেন নামকরা চলচ্চিত্র অভিনেতা। বৈজয়ন্তী মালা আর দিলীপ কুমারের সঙ্গে তিনি ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
দিলীপ কুমার তাঁর আরও দুই ভাইকে হারিয়েছেন গত বছর। দুজনেই মারা গেছেন কোভিডে। আসলাম খান মারা গেছেন গত বছর আগস্ট মাসে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এহসান খান মারা গেছেন ৯০ বছর বয়সে, গত বছরেরই সেপ্টেম্বরে।
চার.
অমিতাভ বচ্চন বহু আগেই বলেছিলেন, দিলীপ কুমার ভারতের সেরা অভিনেতাদের একজন এবং শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সেরা অভিনেতাদের অন্যতম।
কথাটা অমিতাভ বাড়িয়ে বলেননি। আমাদের অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, দিলীপ কুমার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু হলে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটা পেয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে। ‘দাগ’ ছিল ছবিটার নাম। এর পর আরও সাতবার সেই পুরস্কার জুটেছে তাঁর কপালে। সে সময়কার সেরা অভিনেত্রীরা তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মধুবালা, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, নিম্মি, মিনা কুমারী, কামিনী কৌশল।
এখন তো শিল্পকেও নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য। সে কারণেই একটি তথ্য এখানে জানিয়ে রাখতে চাই।
পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
এর পর যদি ষাটের দশকের মুঘল–ই–আজম ছবিটির কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, ভারতের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ১১ বছর টিকে ছিল সেটা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। ১৯৭১ সালে নির্মিত ‘হাতি মেরা সাথি’ ছবিটি এই রেকর্ড ভঙ্গ করে। এর পর সে রেকর্ডও ভেঙে যায় ১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার পর। তবে অনেকেই বলে থাকেন, যদি মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রাখা হয়, তাহলে ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি হিসেবে মুঘল–ই আজমকেই সামনে রাখতে হবে। ২০১১ সালের হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হচ্ছে!
মুঘল–ই–আজম ছবিটি রাজপুত্র সেলিমকে নিয়ে। আমরা যাকে জাহাঙ্গীর বলে জানি। সেলিম বিদ্রোহ করেছিলেন তাঁর বাবা আকবরের বিরুদ্ধে। এই ছবিতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন সেলিমের ভূমিকায়। বাবা আকবর হয়েছিলেন রাজ কাপুরের বাবা পৃত্থীরাজ কাপুর। মধুবালা অভিনয় করেছিলেন আনারকলি চরিত্রে। ছবিটি ছিল সাদা–কালো। শুধু দ্বিতীয় ভাগে কিঞ্চিৎ রঙিন ছিল। ২০০৪ সালে পুরো ছবিটি রঙিন করে আবার সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
পাঁচ.
যদিও এই তথ্য অনেকেই জানেন, পত্র–পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে, তারপরও মনে হয়, এখানে উল্লেখ করা দরকার। ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনকে আমরা চিনি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবির মাধ্যমে। এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তিনি সেখানে শেরিফ আলী চরিত্রে দিলীপ কুমারকে চেয়েছিলেন। দিলীপ রাজি হননি। তখন মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরিফ ওই চরিত্রে অভিনয় করেন। ওমর শরীফের জীবনে এই ছবি একটি মাইলফলক হয়ে আছে।
যে তথ্য অনেকেই জানেন না, সেটা এখানে বলি। দিলীপ কুমার ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ ছবিটি দেখার পর নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘আমি যদি এই ছবিতে অভিনয় করতাম, তাহলে ওমর শরিফের মতো এত ভালো করতে পারতাম না। তিনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।’
ডেভিড লিন ‘তাজমহল’ নামে একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সে ছবির নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলেন এলিজাবেথ টেইলরকে। আর নায়ক হিসেবে ভেবেছিলেন দিলীপ কুমারকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়নি।
ছয়.
সত্তরের দশকে দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারে ধস নেমেছিল। ছবিগুলো সেভাবে দর্শক টানতে পারছিল না। তবে ১৯৭০ সালটি আমাদের জন্য খুব আনন্দদায়ক। এ বছর তিনি ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। দিলীপ কুমার অভিনীত একমাত্র বাংলা ছবি এটি। ১৯৭৪ সালে এই ছবি হিন্দি ভাষায় আবার করেন তিনি। উত্তর–পূর্ব ভারতের একজন চা শ্রমিক চা বাগানের ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তারই বর্ণনা রয়েছে এই ছবিতে। সায়রা বানু, অনিল চ্যাটার্জি, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। ১৯৭৬ সালে তিনি ছুটি নেন চলচ্চিত্র থেকে। ফিরে আসেন আশির দশকের শুরুতে।
সাত.
লেখাটা এখান থেকেই শুরু করেছিলাম। এ সময় ভিসিআরের মাধ্যমে ছোট পর্দায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে মোলাকাত হতে পারত। কিন্তু বিডিআর অডিটোরিয়ামের বড় পর্দায়ই ট্র্যাজেডির রাজাকে আমরা দেখে ফেলেছিলাম। ‘ক্রান্তি’ ছবিতে দিলীপের সঙ্গে ছিলেন মনোজ কুমার, শশী কাপুর, হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিনহা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন তিনি এই ছবিতে। ভারতের স্বাধীনতার সৈনিক। তারকাবহুল এই ছবি দর্শক লুফে নিয়েছিল। এর পর সুভাষ ঘাইয়ের ‘বিধাতা’। তারপর একই পরিচালকের ‘কর্ম।’ কর্ম নিয়ে একটা কথা বলতে ভালো লাগবে। এই ছবিতে দিলীপ অভিনয় করেছিলেন তাঁরই সমসাময়িক আরেক বড় শিল্পী নুতনের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, ‘শিকওয়া’ নামের একটি ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন আরও তিন দশক আগে। কিন্তু ছবিটি শেষ করা হয়নি। ১৯৮৯ সালেও দিলীপ–নুতন অভিনয় করেন ‘কানুন আপনা আপনা’ নামে ছবিতে।
শেষ ছবিটি ছিল ‘কিলা’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এর পর আর অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি।
আট.
এরপরও অনেকগুলো বছর বেঁচেছেন দিলীপ কুমার। বেশ কয়েকবার তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়েছে আমাদের। পরে তা মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার কিন্তু মৃত্যু সংবাদটা মিথ্যে ছিল না।
৭ জুলাই চলেই গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের শৃঙ্গ স্পর্শ করা এই প্রতিভাবান মানুষটি।

আশির দশকে ‘ক্রান্তি’ বা ‘শক্তি’ নামে নির্মিত সিনেমার মাধ্যমে দিলীপ কুমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হতে পারত। আমাদের বলতে আশির দশকের তরুণদের কথা বলছি। আশির দশকের শুরুতে যখন একটু একটু করে ভিসিআর এসে হাজির হচ্ছে ঢাকা শহরে, সিনেমা হলের মতো টিকিট কেটে হিন্দি ছবি দেখা হচ্ছে বেগমবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায়, সে সময় নির্ঘাত মাঝবয়সী দিলীপ কুমারকে ছোট্ট টিভি স্ক্রিনে দেখার সৌভাগ্য হতো। একসময় এই ভদ্রলোক ‘ট্র্যাজেডি কিং’ উপাধি পেয়েছিলেন, সে কথা পত্র–পত্রিকার লেখালেখির মাধ্যমে রসিয়ে রসিয়ে উপভোগ করা যেত।
ট্র্যাজেডি শব্দটির সঙ্গে উপভোগ শব্দটিকে কি খুবই বিসদৃশ লাগছে? একটু ভেবে দেখলেই পরিষ্কার হবে, আসলে দিলীপ কুমারের ট্র্যাজেডি মানেই বক্স অফিসে 'কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা'। হলভর্তি দর্শক হাপুস নয়নে কাঁদছে, আর প্রযোজকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে—এ এক অন্য খেলা! সেই যখন পেশোয়ারে থাকতেন ইউসুফ খান (পরে দিলীপ কুমার), যখন তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি কাপুর পরিবার, তখনো আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিল না দিলীপ কুমারদের। কত খাটাখাটনি, বাবার সঙ্গে ঝগড়া, পালিয়ে গিয়ে আর্মি ক্লাবে চাকরি, ফেরার সময় ৫ হাজার রুপি নিয়ে ঘরে ফেরা—নাহ! দিলীপ কুমারের জীবনী এখানে বলার কোনো প্রয়োজন নেই, যারা এ লেখা পড়ছেন, তাঁরা সবাই জানেন দিলীপের জীবনেতিহাস। এখানে শুধু সে কথাই বলার চেষ্টা করছি, আশির দশকে আসলে আমরা কী করে দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। এবং সেটা পেলাম আস্ত রোমান্টিক এবং ট্র্যাজিক কুমারকেই! মাঝবয়সী চরিত্রাভিনেতাকে নয়।
দুই.
এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নিউ ইস্কাটনের বাড়ি থেকে আমাদের নামিয়ে দিল পুলিশ। বাড়ির আসবাবপত্র ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে লাগল রাস্তায়। আমরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের এই কাণ্ডকীর্তি দেখতে লাগলাম। এ সময় আমার কোনো এক ভাই বুঝতে পারল, এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে রাত কাটাতে হবে ফুটপাতে। তাই তখনই বাড়ি খুঁজতে বের হলেন তিনি। একটা ভাড়া বাড়ির খুব প্রয়োজন তখন।
সে সময় জিগাতলা পোস্ট অফিসের কাছে একটি বাড়ি পাওয়া গেল। সে এক আকস্মিক ব্যাপার। শুধু তাই নয়, মালপত্র নিয়ে সে বাড়ির একতলায় ওঠার পর দোতলায় বসবাসরত বাড়িওয়ালারা আমাদের মুরগি আর ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ালেন রাতে। এ রকম ট্র্যাজেডির মধ্যে এ যেন স্বর্গীয় আদর–যত্ন।
এই জিগাতলায় এলাম বলেই তরুণ দিলীপ কুমারকে খুঁজে পেলাম। কী করে তা সম্ভব হলো, সেটাই বলি। নতুন জায়গা। শহরের কেন্দ্র থেকে বেশ খানিকটা দূরে। ধানমন্ডি, রায়ের বাজার, হাজারিবাগ খুব কাছে। ট্যানারির বীভৎস গন্ধ প্রায় সব সময় নাকে এসে লাগে। তারই মধ্যে নতুন জীবন। হেঁটে হেঁটে জায়গাটার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। হাজারীবাগ গিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে কিছু দূর এগোলেই সুইপার কলোনি। সেটা পার হয়ে আরও কিছুটা এগোলে বিডিআর মিলনায়তন। সেখানে গিয়ে দেখি ছবি চলছে। সাধারণ সিনেমা হলের চেয়ে টিকিটের দাম কম। ছবির নাম ‘বাবুল’। অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার আর নার্গিস। দিলীপ কুমার বড়লোকের ছেলে। পোস্টমাস্টার হয়ে এসেছেন এই ছোট্ট শহরে। গরিব বাবার মেয়ে নার্গিস। ছবিতে যার নাম বেলা। বেলা আর অশোকের মধ্যে খুব ভাব। বেলার বাবা ভাবেন, অশোক নিশ্চয়ই বেলাকে বিয়ে করবে। এ সময় উষা নামে একটি ধনী বাবার কন্যার সঙ্গে পরিচয় হয় অশোকের। অশোক হয় তার গৃহশিক্ষক। উষা প্রেমে 'পড়ে' অশোকের।
এর পর এগিয়ে চলে কাহিনি। যারা দেখেননি, তাদের কাছে ছবিটি দেখার আহ্বান থাকল। এর বেশি কাহিনি বলে দিলে দেখার আগ্রহ নষ্ট হতে পারে। তবে এটুকু বলে রাখি, ছবিজুড়ে শামসাদ বেগম আর তালাত মাহমুদের গাওয়া গান মন ভরে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ঢাকা শহরের একটি সিনেমা হলে ভারতীয় হিন্দি ছবি! আমাদের জানা ছিল, ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান–ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার পর ভারতীয় ছবির আগমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে প্রিন্টগুলো ছিল এখানে, সেগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানো হতো। ফলে বিডিআর মিলনায়তনে বাবুল, বৈজু বাওরা, লুকোচুরির মতো ছবিগুলো চলত। খুবই খারাপ প্রিন্ট। কিন্তু বারবার তা দেখতাম। লুকোচুরি মনে হয় কুড়িবারের বেশি দেখেছিলাম, বাবুল দেখেছিলাম দশবারের বেশি।
তিন.
দুঃসংবাদগুলো দিয়ে রাখি।
দিলীপ কুমারের ছোট ভাই নাসির খান মারা গিয়েছিলেন সেই ১৯৭৪ সালে। তিনিও ছিলেন নামকরা চলচ্চিত্র অভিনেতা। বৈজয়ন্তী মালা আর দিলীপ কুমারের সঙ্গে তিনি ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
দিলীপ কুমার তাঁর আরও দুই ভাইকে হারিয়েছেন গত বছর। দুজনেই মারা গেছেন কোভিডে। আসলাম খান মারা গেছেন গত বছর আগস্ট মাসে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এহসান খান মারা গেছেন ৯০ বছর বয়সে, গত বছরেরই সেপ্টেম্বরে।
চার.
অমিতাভ বচ্চন বহু আগেই বলেছিলেন, দিলীপ কুমার ভারতের সেরা অভিনেতাদের একজন এবং শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সেরা অভিনেতাদের অন্যতম।
কথাটা অমিতাভ বাড়িয়ে বলেননি। আমাদের অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, দিলীপ কুমার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু হলে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটা পেয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে। ‘দাগ’ ছিল ছবিটার নাম। এর পর আরও সাতবার সেই পুরস্কার জুটেছে তাঁর কপালে। সে সময়কার সেরা অভিনেত্রীরা তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মধুবালা, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, নিম্মি, মিনা কুমারী, কামিনী কৌশল।
এখন তো শিল্পকেও নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য। সে কারণেই একটি তথ্য এখানে জানিয়ে রাখতে চাই।
পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
এর পর যদি ষাটের দশকের মুঘল–ই–আজম ছবিটির কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, ভারতের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ১১ বছর টিকে ছিল সেটা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। ১৯৭১ সালে নির্মিত ‘হাতি মেরা সাথি’ ছবিটি এই রেকর্ড ভঙ্গ করে। এর পর সে রেকর্ডও ভেঙে যায় ১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার পর। তবে অনেকেই বলে থাকেন, যদি মুদ্রাস্ফীতির কথা মাথায় রাখা হয়, তাহলে ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি হিসেবে মুঘল–ই আজমকেই সামনে রাখতে হবে। ২০১১ সালের হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হচ্ছে!
মুঘল–ই–আজম ছবিটি রাজপুত্র সেলিমকে নিয়ে। আমরা যাকে জাহাঙ্গীর বলে জানি। সেলিম বিদ্রোহ করেছিলেন তাঁর বাবা আকবরের বিরুদ্ধে। এই ছবিতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন সেলিমের ভূমিকায়। বাবা আকবর হয়েছিলেন রাজ কাপুরের বাবা পৃত্থীরাজ কাপুর। মধুবালা অভিনয় করেছিলেন আনারকলি চরিত্রে। ছবিটি ছিল সাদা–কালো। শুধু দ্বিতীয় ভাগে কিঞ্চিৎ রঙিন ছিল। ২০০৪ সালে পুরো ছবিটি রঙিন করে আবার সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
পাঁচ.
যদিও এই তথ্য অনেকেই জানেন, পত্র–পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে, তারপরও মনে হয়, এখানে উল্লেখ করা দরকার। ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনকে আমরা চিনি লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবির মাধ্যমে। এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তিনি সেখানে শেরিফ আলী চরিত্রে দিলীপ কুমারকে চেয়েছিলেন। দিলীপ রাজি হননি। তখন মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরিফ ওই চরিত্রে অভিনয় করেন। ওমর শরীফের জীবনে এই ছবি একটি মাইলফলক হয়ে আছে।
যে তথ্য অনেকেই জানেন না, সেটা এখানে বলি। দিলীপ কুমার ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ ছবিটি দেখার পর নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘আমি যদি এই ছবিতে অভিনয় করতাম, তাহলে ওমর শরিফের মতো এত ভালো করতে পারতাম না। তিনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।’
ডেভিড লিন ‘তাজমহল’ নামে একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সে ছবির নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলেন এলিজাবেথ টেইলরকে। আর নায়ক হিসেবে ভেবেছিলেন দিলীপ কুমারকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়নি।
ছয়.
সত্তরের দশকে দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারে ধস নেমেছিল। ছবিগুলো সেভাবে দর্শক টানতে পারছিল না। তবে ১৯৭০ সালটি আমাদের জন্য খুব আনন্দদায়ক। এ বছর তিনি ‘সাগিনা মাহাতো’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। দিলীপ কুমার অভিনীত একমাত্র বাংলা ছবি এটি। ১৯৭৪ সালে এই ছবি হিন্দি ভাষায় আবার করেন তিনি। উত্তর–পূর্ব ভারতের একজন চা শ্রমিক চা বাগানের ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তারই বর্ণনা রয়েছে এই ছবিতে। সায়রা বানু, অনিল চ্যাটার্জি, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। ১৯৭৬ সালে তিনি ছুটি নেন চলচ্চিত্র থেকে। ফিরে আসেন আশির দশকের শুরুতে।
সাত.
লেখাটা এখান থেকেই শুরু করেছিলাম। এ সময় ভিসিআরের মাধ্যমে ছোট পর্দায় দিলীপ কুমারের সঙ্গে মোলাকাত হতে পারত। কিন্তু বিডিআর অডিটোরিয়ামের বড় পর্দায়ই ট্র্যাজেডির রাজাকে আমরা দেখে ফেলেছিলাম। ‘ক্রান্তি’ ছবিতে দিলীপের সঙ্গে ছিলেন মনোজ কুমার, শশী কাপুর, হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিনহা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন তিনি এই ছবিতে। ভারতের স্বাধীনতার সৈনিক। তারকাবহুল এই ছবি দর্শক লুফে নিয়েছিল। এর পর সুভাষ ঘাইয়ের ‘বিধাতা’। তারপর একই পরিচালকের ‘কর্ম।’ কর্ম নিয়ে একটা কথা বলতে ভালো লাগবে। এই ছবিতে দিলীপ অভিনয় করেছিলেন তাঁরই সমসাময়িক আরেক বড় শিল্পী নুতনের সঙ্গে। মজার ব্যাপার হলো, ‘শিকওয়া’ নামের একটি ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন আরও তিন দশক আগে। কিন্তু ছবিটি শেষ করা হয়নি। ১৯৮৯ সালেও দিলীপ–নুতন অভিনয় করেন ‘কানুন আপনা আপনা’ নামে ছবিতে।
শেষ ছবিটি ছিল ‘কিলা’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এর পর আর অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি।
আট.
এরপরও অনেকগুলো বছর বেঁচেছেন দিলীপ কুমার। বেশ কয়েকবার তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়েছে আমাদের। পরে তা মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার কিন্তু মৃত্যু সংবাদটা মিথ্যে ছিল না।
৭ জুলাই চলেই গেলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের শৃঙ্গ স্পর্শ করা এই প্রতিভাবান মানুষটি।

‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা। আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু প্রমুখ।
১ ঘণ্টা আগে
গত জুলাইয়ে প্রকাশ পেয়েছিল সংগীতশিল্পী নিলয় ও কোনালের গাওয়া গান ‘ময়না’। জনপ্রিয়তা পায় ড্যান্স ঘরানার গানটি। আসিফ ইকবালের লেখা গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছিলেন আকাশ সেন। ময়নার পর আবার নতুন গান নিয়ে আসছেন নিলয় ও কোনাল। শিরোনাম ‘ও জান’।
১২ ঘণ্টা আগে
বছরজুড়ে রাজনীতির গতিপ্রবাহ আর নির্বাচন ছিল দেশের মানুষের মূল আলোচনার বিষয়। ফলে দর্শকদের আগ্রহের প্রায় সবটা দখল করেছে রাজনৈতিক টক শো। টেলিভিশন হোক কিংবা ইউটিউব, রাজনৈতিক সেলিব্রিটি কিংবা বক্তাদের কথাই ভিউ পেয়েছে বেশি। ব্যাকফুটে চলে গেছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
১৩ ঘণ্টা আগে
অক্টোবরে তানজিন তিশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করে একটি অনলাইন ফ্যাশন হাউস। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তিশা শাড়ি নিয়েছেন, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী সেই শাড়ি পরে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রমোশন করেননি। এই ঘটনায় তিশার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে আরও একজন উদ্যোক্তা তিশার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।
১৩ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্ম ও মৃত্যুদিবস ৯ ডিসেম্বর। এই উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) আয়োজন করা হয় ‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ শিরোনামের কাব্যনাটকের প্রদর্শনী।
সাহিত্য-সংস্কৃতির সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম ‘লেখার পোকা’র পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা কাব্যনাট্যে আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু, সুজন রেহমান, নূরাইশা হাসান সামিয়া, মীর উমাইয়া হক পদ্ম, উম্মে হাবিবা শিবলী, অদ্রিতা ভদ্র ও নার্গিস সুলতানা।
প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা। পোশাক পরিকল্পনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি। আবহসংগীত করেছেন আরেফিন নিপুন ও মাজহারুল তুষার। দেড় ঘণ্টার এই আয়োজনে হলভর্তি দর্শক পিনপতন নীরবতায় উপভোগ করেন কবিতা, আবৃত্তি, শ্রুতিনাট্য ও অভিনয়ের সম্মিলিত শিল্পভাষা।
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে এই আয়োজন প্রসঙ্গে নির্দেশক নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার সাহসী ও ক্ষুরধার লেখা এবং তাঁর দূরদর্শী চিন্তা-চেতনা ও দর্শনই আমাদের রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি। সমাজে নারীর বর্তমান অবস্থান ও তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি আমাদের এই প্রযোজনায়।’
নার্গিস সুলতানা আরও বলেন, ‘আজ শত বছর পরে, এই তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজে দাঁড়িয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা, আজকের সুলতানারা কেমন আছেন? রোকেয়ার স্বপ্ন কতখানি বাস্তবে রূপ নিয়েছে? আজকের নারী কি সত্যিই অবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে না রোকেয়ার সুলতানারা এখনো নিজেদের অধিকার ও অস্তিত্বের লড়াইয়ে ব্যতিব্যস্ত! এসব প্রশ্নের উত্তরই এই কাব্যনাটকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।’
যেসব নারী রোকেয়ার সেই স্বপ্নের পৃথিবীকে বাস্তবে পরিণত করতে লড়াই-সংগ্রামে সোচ্চার রয়েছেন, সেসব রোকেয়া-অনুরাগীর জন্য অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়েছে বলে জানান নির্দেশক।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্ম ও মৃত্যুদিবস ৯ ডিসেম্বর। এই উপলক্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) আয়োজন করা হয় ‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ শিরোনামের কাব্যনাটকের প্রদর্শনী।
সাহিত্য-সংস্কৃতির সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম ‘লেখার পোকা’র পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা কাব্যনাট্যে আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু, সুজন রেহমান, নূরাইশা হাসান সামিয়া, মীর উমাইয়া হক পদ্ম, উম্মে হাবিবা শিবলী, অদ্রিতা ভদ্র ও নার্গিস সুলতানা।
প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা। পোশাক পরিকল্পনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি। আবহসংগীত করেছেন আরেফিন নিপুন ও মাজহারুল তুষার। দেড় ঘণ্টার এই আয়োজনে হলভর্তি দর্শক পিনপতন নীরবতায় উপভোগ করেন কবিতা, আবৃত্তি, শ্রুতিনাট্য ও অভিনয়ের সম্মিলিত শিল্পভাষা।
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে এই আয়োজন প্রসঙ্গে নির্দেশক নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘বেগম রোকেয়ার সাহসী ও ক্ষুরধার লেখা এবং তাঁর দূরদর্শী চিন্তা-চেতনা ও দর্শনই আমাদের রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি। সমাজে নারীর বর্তমান অবস্থান ও তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি আমাদের এই প্রযোজনায়।’
নার্গিস সুলতানা আরও বলেন, ‘আজ শত বছর পরে, এই তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজে দাঁড়িয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা, আজকের সুলতানারা কেমন আছেন? রোকেয়ার স্বপ্ন কতখানি বাস্তবে রূপ নিয়েছে? আজকের নারী কি সত্যিই অবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে না রোকেয়ার সুলতানারা এখনো নিজেদের অধিকার ও অস্তিত্বের লড়াইয়ে ব্যতিব্যস্ত! এসব প্রশ্নের উত্তরই এই কাব্যনাটকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।’
যেসব নারী রোকেয়ার সেই স্বপ্নের পৃথিবীকে বাস্তবে পরিণত করতে লড়াই-সংগ্রামে সোচ্চার রয়েছেন, সেসব রোকেয়া-অনুরাগীর জন্য অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়েছে বলে জানান নির্দেশক।

পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
০৭ জুলাই ২০২১
গত জুলাইয়ে প্রকাশ পেয়েছিল সংগীতশিল্পী নিলয় ও কোনালের গাওয়া গান ‘ময়না’। জনপ্রিয়তা পায় ড্যান্স ঘরানার গানটি। আসিফ ইকবালের লেখা গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছিলেন আকাশ সেন। ময়নার পর আবার নতুন গান নিয়ে আসছেন নিলয় ও কোনাল। শিরোনাম ‘ও জান’।
১২ ঘণ্টা আগে
বছরজুড়ে রাজনীতির গতিপ্রবাহ আর নির্বাচন ছিল দেশের মানুষের মূল আলোচনার বিষয়। ফলে দর্শকদের আগ্রহের প্রায় সবটা দখল করেছে রাজনৈতিক টক শো। টেলিভিশন হোক কিংবা ইউটিউব, রাজনৈতিক সেলিব্রিটি কিংবা বক্তাদের কথাই ভিউ পেয়েছে বেশি। ব্যাকফুটে চলে গেছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
১৩ ঘণ্টা আগে
অক্টোবরে তানজিন তিশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করে একটি অনলাইন ফ্যাশন হাউস। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তিশা শাড়ি নিয়েছেন, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী সেই শাড়ি পরে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রমোশন করেননি। এই ঘটনায় তিশার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে আরও একজন উদ্যোক্তা তিশার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।
১৩ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

গত জুলাইয়ে প্রকাশ পেয়েছিল সংগীতশিল্পী নিলয় ও কোনালের গাওয়া গান ‘ময়না’। জনপ্রিয়তা পায় ড্যান্স ঘরানার গানটি। আসিফ ইকবালের লেখা গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছিলেন আকাশ সেন। ময়নার পর আবার নতুন গান নিয়ে আসছেন নিলয় ও কোনাল। শিরোনাম ‘ও জান’। ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে ১ জানুয়ারি গানচিল মিউজিক ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পাবে গানটি।
ময়নার মতো ‘ও জান’ গানটিও লিখেছেন আসিফ ইকবাল। তবে পরিবর্তন এসেছে সুরকার ও সংগীত আয়োজকের ক্ষেত্রে। ও জান যৌথভাবে সুর করেছেন আভ্রাল সাহির ও পশ্চিমবঙ্গের লিংকন। সংগীত আয়োজন করেছেন আভ্রাল সাহির। আসিফ ইকবাল বলেন, ‘ময়না গানের সাফল্যের পর তার ধারাবাহিকতায় আমরা ও জান গানটি নিয়ে আসছি। ময়না ছিল একটি ড্যান্স নাম্বার গান। ও জান হচ্ছে একেবারে পিউর রোমান্টিক গান। গানের কথা, গায়কী, সুর, সংগীত আয়োজন ও ভিডিও—সবকিছুতেই নতুন সংযোজন থাকবে।’
কোনাল বলেন, ‘ময়না গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সময়ই বলেছিলাম, এটি জনপ্রিয়তা পাবে; পেয়েছেও। ওটি ছিল নাচের গান। এবার আমরা আসছি রোমান্টিক ঘরানার গান নিয়ে। আমার বিশ্বাস, গানটি আগের গানের রেকর্ড ভেঙে দেবে। সবার ভালো লাগবে।’
নিলয় বলেন, ‘আসিফ ইকবাল ভাই রোমান্টিক গান অসাধারণ লেখেন। ও জান গানটিও দারুণ লিখেছেন। সুর ও সংগীত আয়োজনও ভালো হয়েছে। ভিডিওতেও আছে চমক। সব মিলিয়ে নতুন এই গান নিয়ে দারুণ আশাবাদী আমি।’
সিনেম্যাটিক আয়োজনে ময়না গানের ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছিলেন তানিম রহমান অংশু। ভিডিওতে দেখা মিলেছিল শবনম বুবলী ও শরাফ আহমেদের জীবনের। এবারও ভিডিও নির্মাণে থাকছেন অংশু। নির্মাতা জানান, এবারের ভিডিওতে থাকছে নানা চমক। শুটিং লোকেশনেও ভিন্নতা থাকবে। তবে এখনই জানাতে চান না গানের ভিডিওতে কে থাকছেন মডেল হিসেবে।
ও জান গানচিল মিউজিকের ‘বাংলা অরিজিনালস’ প্রজেক্টের দ্বিতীয় গান। ময়না গান দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন এই প্রজেক্ট।

গত জুলাইয়ে প্রকাশ পেয়েছিল সংগীতশিল্পী নিলয় ও কোনালের গাওয়া গান ‘ময়না’। জনপ্রিয়তা পায় ড্যান্স ঘরানার গানটি। আসিফ ইকবালের লেখা গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছিলেন আকাশ সেন। ময়নার পর আবার নতুন গান নিয়ে আসছেন নিলয় ও কোনাল। শিরোনাম ‘ও জান’। ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে ১ জানুয়ারি গানচিল মিউজিক ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পাবে গানটি।
ময়নার মতো ‘ও জান’ গানটিও লিখেছেন আসিফ ইকবাল। তবে পরিবর্তন এসেছে সুরকার ও সংগীত আয়োজকের ক্ষেত্রে। ও জান যৌথভাবে সুর করেছেন আভ্রাল সাহির ও পশ্চিমবঙ্গের লিংকন। সংগীত আয়োজন করেছেন আভ্রাল সাহির। আসিফ ইকবাল বলেন, ‘ময়না গানের সাফল্যের পর তার ধারাবাহিকতায় আমরা ও জান গানটি নিয়ে আসছি। ময়না ছিল একটি ড্যান্স নাম্বার গান। ও জান হচ্ছে একেবারে পিউর রোমান্টিক গান। গানের কথা, গায়কী, সুর, সংগীত আয়োজন ও ভিডিও—সবকিছুতেই নতুন সংযোজন থাকবে।’
কোনাল বলেন, ‘ময়না গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সময়ই বলেছিলাম, এটি জনপ্রিয়তা পাবে; পেয়েছেও। ওটি ছিল নাচের গান। এবার আমরা আসছি রোমান্টিক ঘরানার গান নিয়ে। আমার বিশ্বাস, গানটি আগের গানের রেকর্ড ভেঙে দেবে। সবার ভালো লাগবে।’
নিলয় বলেন, ‘আসিফ ইকবাল ভাই রোমান্টিক গান অসাধারণ লেখেন। ও জান গানটিও দারুণ লিখেছেন। সুর ও সংগীত আয়োজনও ভালো হয়েছে। ভিডিওতেও আছে চমক। সব মিলিয়ে নতুন এই গান নিয়ে দারুণ আশাবাদী আমি।’
সিনেম্যাটিক আয়োজনে ময়না গানের ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছিলেন তানিম রহমান অংশু। ভিডিওতে দেখা মিলেছিল শবনম বুবলী ও শরাফ আহমেদের জীবনের। এবারও ভিডিও নির্মাণে থাকছেন অংশু। নির্মাতা জানান, এবারের ভিডিওতে থাকছে নানা চমক। শুটিং লোকেশনেও ভিন্নতা থাকবে। তবে এখনই জানাতে চান না গানের ভিডিওতে কে থাকছেন মডেল হিসেবে।
ও জান গানচিল মিউজিকের ‘বাংলা অরিজিনালস’ প্রজেক্টের দ্বিতীয় গান। ময়না গান দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন এই প্রজেক্ট।

পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
০৭ জুলাই ২০২১
‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা। আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু প্রমুখ।
১ ঘণ্টা আগে
বছরজুড়ে রাজনীতির গতিপ্রবাহ আর নির্বাচন ছিল দেশের মানুষের মূল আলোচনার বিষয়। ফলে দর্শকদের আগ্রহের প্রায় সবটা দখল করেছে রাজনৈতিক টক শো। টেলিভিশন হোক কিংবা ইউটিউব, রাজনৈতিক সেলিব্রিটি কিংবা বক্তাদের কথাই ভিউ পেয়েছে বেশি। ব্যাকফুটে চলে গেছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
১৩ ঘণ্টা আগে
অক্টোবরে তানজিন তিশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করে একটি অনলাইন ফ্যাশন হাউস। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তিশা শাড়ি নিয়েছেন, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী সেই শাড়ি পরে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রমোশন করেননি। এই ঘটনায় তিশার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে আরও একজন উদ্যোক্তা তিশার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।
১৩ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

বছরজুড়ে রাজনীতির গতিপ্রবাহ আর নির্বাচন ছিল দেশের মানুষের মূল আলোচনার বিষয়। ফলে দর্শকদের আগ্রহের প্রায় সবটা দখল করেছে রাজনৈতিক টক শো। টেলিভিশন হোক কিংবা ইউটিউব, রাজনৈতিক সেলিব্রিটি কিংবা বক্তাদের কথাই ভিউ পেয়েছে বেশি। ব্যাকফুটে চলে গেছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। এই বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে টিভি চ্যানেলগুলোও নাটক-সিনেমা-সংগীতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে টক শোর দিকে।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও টিভি চ্যানেলের চেয়ে এখন ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণে বেশি আগ্রহী। এ প্রবণতা কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। টিভি নাটকের তুলনায় বাজেট ও পারিশ্রমিক বেশি পাওয়া যায় বলে অভিনয়শিল্পীরাও ইউটিউবের নাটকে অভিনয় করতে বেশি আগ্রহী থাকেন। তবে এই ‘অতিরিক্ত বাজেট’ হিতে বিপরীত ফল নিয়ে এসেছে। অনেক ব্র্যান্ড এখন নাটকে স্পনসর বা বিজ্ঞাপন কমিয়ে দিয়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। ফলে এ বছর ব্যাপকভাবে কমেছে ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ।
মোশাররফ করিম, অপূর্ব, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণদের মতো জনপ্রিয় শিল্পী নাটকে অভিনয় কমিয়ে দেওয়ায় ছোট পর্দায় একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে অন্যরা উঠে না আসায় এ অঙ্গনে সংকট আরও বেড়েছে। তবে এত নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে আশার খবর একটাই, জনপ্রিয়তা বেড়েছে পারিবারিক গল্পের ধারাবাহিক নাটকের। ‘এটা আমাদেরই গল্প’, ‘দেনা পাওনা’র মতো ধারাবাহিক দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রযোজক-পরিচালকেরা ঝুঁকেছেন এ ঘরানার গল্পের দিকে। এ ছাড়া যেসব নাটক এ বছর দর্শকের পছন্দের তালিকায় ছিল, তার মধ্যে রয়েছে ‘তোমাদের গল্প’, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’, ‘কেন এই সঙ্গতা’, ‘হৃদয় গভীরে’, ‘মন দুয়ারী’, ‘মেঘবালিকা’, ‘মানুষ কী বলবে’, ‘ভালো থেকো’, ‘খোয়াবনামা’ ইত্যাদি।
বিশ্বজুড়ে টেলিভিশন ও প্রেক্ষাগৃহকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশেও যথেষ্ট সম্ভাবনা জাগিয়ে এ মাধ্যমের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরেই ধস নেমেছে দেশের প্ল্যাটফর্মগুলোয়। ব্যাপকভাবে দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে, এমন কনটেন্ট খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়ের বৈচিত্র্যও কমেছে। বেশির ভাগ কনটেন্ট আটকে আছে থ্রিলার আর খুনের তদন্তের গল্পে। ফলে দর্শকও আগ্রহ হারাচ্ছে। ২০২৫ সালে সব মিলিয়ে ৪২টি কনটেন্ট মুক্তি পেয়েছে, এর মধ্যে সিরিজ ছিল ১৩টি।
চরকি এ বছর মুক্তি দিয়েছে ‘২ষ’, ‘ঘুমপরী’, ‘ফেউ’, ‘আমলনামা’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘গুলমোহর’, ‘তোমার জন্য মন’, ‘ডিমলাইট’ ইত্যাদি। বঙ্গতে এসেছে ‘ব্ল্যাক মানি’, ‘হাউ সুইট’, ‘ননসেন্স’, ‘ফ্যাকড়া’, ‘মির্জা’, ‘কানাগলি’ ইত্যাদি। কনটেন্ট বেড়েছে আইস্ক্রিনে, প্ল্যাটফর্মটি মুক্তি দিয়েছে ‘কিস্তিমাত’, ‘নীলপদ্ম’, ‘জলরঙ’, ‘নয়া নোট’, ‘পাপকাহিনি’, ‘অমীমাংসিত’ ইত্যাদি। বিঞ্জে মুক্তি পেয়েছে ‘অন্ধকারের গান’ ও ‘নীল সুখ’। ‘হাইড এন সিক’ নামে মাত্র একটি ওয়েব ফিল্ম এসেছে দীপ্ত প্লেতে। গত বছরের মতো এবারও হইচইয়ে মাত্র ৩টি সিরিজ প্রকাশ পেয়েছে—‘জিম্মি’, ‘আকা’ ও ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’। এ ছাড়া ‘নূর’ সিনেমা দিয়ে এ বছর যাত্রা শুরু করেছে নতুন প্ল্যাটফর্ম বায়স্কোপ প্লাস।
তবে হতাশার বিষয়, এত কনটেন্টের ভিড়ে ব্যাপকভাবে দর্শকদের মধ্যে আলোচিত হয়েছে এমন সিনেমা-সিরিজের সংখ্যা হাতে গোনা। মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন, গুলমোহর, নয়া নোট, জিম্মি, আকা ও বোহেমিয়ান ঘোড়া নিয়ে প্রশংসা চোখে পড়েছে। প্রচার-প্রচারণারও যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। আগে যেকোনো সিরিজ মুক্তির আগে নানা মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাত প্ল্যাটফর্মগুলো। এখন অনেকটা দায়সারাভাবেই মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে দর্শকেরা জানতেও পারে না, কোন কনটেন্ট কখন আসছে। সব মিলিয়ে যেসব ঘাটতি রয়েছে দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে, নতুন বছরে তার সমাধান হবে—এটাই প্রত্যাশা।

বছরজুড়ে রাজনীতির গতিপ্রবাহ আর নির্বাচন ছিল দেশের মানুষের মূল আলোচনার বিষয়। ফলে দর্শকদের আগ্রহের প্রায় সবটা দখল করেছে রাজনৈতিক টক শো। টেলিভিশন হোক কিংবা ইউটিউব, রাজনৈতিক সেলিব্রিটি কিংবা বক্তাদের কথাই ভিউ পেয়েছে বেশি। ব্যাকফুটে চলে গেছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। এই বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে টিভি চ্যানেলগুলোও নাটক-সিনেমা-সংগীতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে টক শোর দিকে।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও টিভি চ্যানেলের চেয়ে এখন ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণে বেশি আগ্রহী। এ প্রবণতা কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। টিভি নাটকের তুলনায় বাজেট ও পারিশ্রমিক বেশি পাওয়া যায় বলে অভিনয়শিল্পীরাও ইউটিউবের নাটকে অভিনয় করতে বেশি আগ্রহী থাকেন। তবে এই ‘অতিরিক্ত বাজেট’ হিতে বিপরীত ফল নিয়ে এসেছে। অনেক ব্র্যান্ড এখন নাটকে স্পনসর বা বিজ্ঞাপন কমিয়ে দিয়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। ফলে এ বছর ব্যাপকভাবে কমেছে ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ।
মোশাররফ করিম, অপূর্ব, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণদের মতো জনপ্রিয় শিল্পী নাটকে অভিনয় কমিয়ে দেওয়ায় ছোট পর্দায় একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে অন্যরা উঠে না আসায় এ অঙ্গনে সংকট আরও বেড়েছে। তবে এত নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে আশার খবর একটাই, জনপ্রিয়তা বেড়েছে পারিবারিক গল্পের ধারাবাহিক নাটকের। ‘এটা আমাদেরই গল্প’, ‘দেনা পাওনা’র মতো ধারাবাহিক দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রযোজক-পরিচালকেরা ঝুঁকেছেন এ ঘরানার গল্পের দিকে। এ ছাড়া যেসব নাটক এ বছর দর্শকের পছন্দের তালিকায় ছিল, তার মধ্যে রয়েছে ‘তোমাদের গল্প’, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’, ‘কেন এই সঙ্গতা’, ‘হৃদয় গভীরে’, ‘মন দুয়ারী’, ‘মেঘবালিকা’, ‘মানুষ কী বলবে’, ‘ভালো থেকো’, ‘খোয়াবনামা’ ইত্যাদি।
বিশ্বজুড়ে টেলিভিশন ও প্রেক্ষাগৃহকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশেও যথেষ্ট সম্ভাবনা জাগিয়ে এ মাধ্যমের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরেই ধস নেমেছে দেশের প্ল্যাটফর্মগুলোয়। ব্যাপকভাবে দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে, এমন কনটেন্ট খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়ের বৈচিত্র্যও কমেছে। বেশির ভাগ কনটেন্ট আটকে আছে থ্রিলার আর খুনের তদন্তের গল্পে। ফলে দর্শকও আগ্রহ হারাচ্ছে। ২০২৫ সালে সব মিলিয়ে ৪২টি কনটেন্ট মুক্তি পেয়েছে, এর মধ্যে সিরিজ ছিল ১৩টি।
চরকি এ বছর মুক্তি দিয়েছে ‘২ষ’, ‘ঘুমপরী’, ‘ফেউ’, ‘আমলনামা’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘গুলমোহর’, ‘তোমার জন্য মন’, ‘ডিমলাইট’ ইত্যাদি। বঙ্গতে এসেছে ‘ব্ল্যাক মানি’, ‘হাউ সুইট’, ‘ননসেন্স’, ‘ফ্যাকড়া’, ‘মির্জা’, ‘কানাগলি’ ইত্যাদি। কনটেন্ট বেড়েছে আইস্ক্রিনে, প্ল্যাটফর্মটি মুক্তি দিয়েছে ‘কিস্তিমাত’, ‘নীলপদ্ম’, ‘জলরঙ’, ‘নয়া নোট’, ‘পাপকাহিনি’, ‘অমীমাংসিত’ ইত্যাদি। বিঞ্জে মুক্তি পেয়েছে ‘অন্ধকারের গান’ ও ‘নীল সুখ’। ‘হাইড এন সিক’ নামে মাত্র একটি ওয়েব ফিল্ম এসেছে দীপ্ত প্লেতে। গত বছরের মতো এবারও হইচইয়ে মাত্র ৩টি সিরিজ প্রকাশ পেয়েছে—‘জিম্মি’, ‘আকা’ ও ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’। এ ছাড়া ‘নূর’ সিনেমা দিয়ে এ বছর যাত্রা শুরু করেছে নতুন প্ল্যাটফর্ম বায়স্কোপ প্লাস।
তবে হতাশার বিষয়, এত কনটেন্টের ভিড়ে ব্যাপকভাবে দর্শকদের মধ্যে আলোচিত হয়েছে এমন সিনেমা-সিরিজের সংখ্যা হাতে গোনা। মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন, গুলমোহর, নয়া নোট, জিম্মি, আকা ও বোহেমিয়ান ঘোড়া নিয়ে প্রশংসা চোখে পড়েছে। প্রচার-প্রচারণারও যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। আগে যেকোনো সিরিজ মুক্তির আগে নানা মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাত প্ল্যাটফর্মগুলো। এখন অনেকটা দায়সারাভাবেই মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে দর্শকেরা জানতেও পারে না, কোন কনটেন্ট কখন আসছে। সব মিলিয়ে যেসব ঘাটতি রয়েছে দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে, নতুন বছরে তার সমাধান হবে—এটাই প্রত্যাশা।

পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
০৭ জুলাই ২০২১
‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা। আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু প্রমুখ।
১ ঘণ্টা আগে
গত জুলাইয়ে প্রকাশ পেয়েছিল সংগীতশিল্পী নিলয় ও কোনালের গাওয়া গান ‘ময়না’। জনপ্রিয়তা পায় ড্যান্স ঘরানার গানটি। আসিফ ইকবালের লেখা গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছিলেন আকাশ সেন। ময়নার পর আবার নতুন গান নিয়ে আসছেন নিলয় ও কোনাল। শিরোনাম ‘ও জান’।
১২ ঘণ্টা আগে
অক্টোবরে তানজিন তিশার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করে একটি অনলাইন ফ্যাশন হাউস। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তিশা শাড়ি নিয়েছেন, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী সেই শাড়ি পরে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রমোশন করেননি। এই ঘটনায় তিশার বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে আরও একজন উদ্যোক্তা তিশার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।
১৩ ঘণ্টা আগেবিনোদন ডেস্ক



পঞ্চাশের দশকের ৩০টি ব্যবসাসফল ছবির মধ্যে দিলীপ কুমার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছিল নয়টি। তাহলে না বোঝার কোনো কারণ নেই, এ সময় গরিব মানুষটা টাকা–পয়সার মুখ দেখেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা হয়েছিল আকাশসমান।
০৭ জুলাই ২০২১
‘রোকেয়ার স্বপ্নে আজকের সুলতানারা’ প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন নার্গিস সুলতানা। আবৃত্তি, শ্রুতিকথন আর অভিনয়ে অংশ নেন নার্গিস আক্তার, রেজিনা খন্দকার, জয়া হাওলাদার, আবুল ফজল, তোফাজ্জল হোসেন তপু প্রমুখ।
১ ঘণ্টা আগে
গত জুলাইয়ে প্রকাশ পেয়েছিল সংগীতশিল্পী নিলয় ও কোনালের গাওয়া গান ‘ময়না’। জনপ্রিয়তা পায় ড্যান্স ঘরানার গানটি। আসিফ ইকবালের লেখা গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছিলেন আকাশ সেন। ময়নার পর আবার নতুন গান নিয়ে আসছেন নিলয় ও কোনাল। শিরোনাম ‘ও জান’।
১২ ঘণ্টা আগে
বছরজুড়ে রাজনীতির গতিপ্রবাহ আর নির্বাচন ছিল দেশের মানুষের মূল আলোচনার বিষয়। ফলে দর্শকদের আগ্রহের প্রায় সবটা দখল করেছে রাজনৈতিক টক শো। টেলিভিশন হোক কিংবা ইউটিউব, রাজনৈতিক সেলিব্রিটি কিংবা বক্তাদের কথাই ভিউ পেয়েছে বেশি। ব্যাকফুটে চলে গেছে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
১৩ ঘণ্টা আগে