Ajker Patrika

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখার আগে ভাবুন

আশিকুর রিমেল
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৪৬
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দেখার আগে ভাবুন

অপরাধ কী? একটা ঘটনাই তো? সে ঠিক আছে। কিন্তু ঘটনায় কর্তা থাকে, থাকে বিধেয়। আর কিছু কি থাকে? থাকে। পৃথিবীর নিয়মে ‘পর্যবেক্ষক’ ছাড়া তো ঘটনাই নেই। তাহলে ঘটনার সঙ্গে কে জড়ায়, কীভাবে জড়ায়? যদি ঘটনা অপরাধই হয়, তবে ভুক্তভোগী কি শুধু ঘটনার সক্রিয় সত্তা কেবল, নাকি এর সঙ্গে দ্রষ্টাও জড়িয়ে পড়ে? দ্রষ্টা নিজেও কি ভুক্তভোগী হয়ে ওঠে না? এই তাবৎ প্রশ্ন নিয়ে তালগোল পাকিয়ে গেলে একটু বড় শ্বাস নিন। 

তারপর ভাবুন একটা সিনেমা আপনার সামনে অথবা আপনি তার সামনে। আর তার নাম—‘রেহানা মরিয়ম নূর’। সম্পূর্ণ বাংলাদেশে ধারণকৃত একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র। যোগ্যতা তো বটেই, অর্জনের খাতার দিকে তাকালেই সিনেমাটির নাম গর্ব করে বলতে হবে। দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে যখন মৌলিক নির্মাণ নিয়ে হাপিত্যেশ চলছে, তখন কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেওয়া সিনেমা নিয়ে আলাদা করে কথা বলার দাবি এমনিতেই ওঠে। 

এমনিতে পুরস্কার না জেতা পর্যন্ত কোনো নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন আলোচনার রেওয়াজ নেই। এই বিচারেও রেহানা মরিয়ম নূর আলোচনার দাবিটি জানিয়ে রেখেছে জোরেশোরে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো আঁ সেরতাঁ র‍্যগা বিভাগে প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়া ছাড়াও হংকং এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে ‘রেহানা’। ঝুলিতে রয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসে (অ্যাপসা) গ্র্যান্ড জুরি ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। আর এসব এড়িয়ে গিয়ে শুধু নির্মাণ হিসেবে দেখলেও আলোচনাটি করতে হবে। কারণটি উন্মোচিত হবে ক্রমশ। 

তবে, আপনি যদি ভেবে থাকেন অনেক আলোচনা-সমালোচনা শুনেছি এই সিনেমা নিয়ে; যাই দেখে আসি, তাহলে আপনি ফেঁসেছেন। শুধু তাঁরাই নন, যাঁরা সিনেমাটি খুব বুঝতে যাবেন; তাঁরা তো বটেই, এমনকি নিছক বিনোদনের জন্য যাঁরা যাবেন, তারাও বিরক্ত হওয়ার আশঙ্কাটা সবচেয়ে বেশি। বিষয়টি আসলে বিরক্তিরও নয়, উদ্বেগের, মানসিক চাপের! খুব চলতি কথায় বোঝাতে ‘বিরক্ত’ই বলছি। 

কিন্তু কী কারণ? সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি! আগে এই প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা আছে কি না, একটু ভেবে দেখুন তো! 

একটি ঘটনা! কেউ দেখেনি! তাই বলে কি তা ঘটেনি? আবার যদি এমন হয়, সেই ঘটনার সাক্ষী শুধু আপনিই, তাহলে ঘটনাটি প্রমাণের জন্য কি আপনি একাই যথেষ্ট? অন্যদিকে আপসেরও ঢের সুযোগ আছে! আপনি কি আপস করবেন? যদি ঘটনাটি আপনার পাশেই বারবার ঘটে যাওয়া একটি অন্যায় হয়, তবুও? আর যদি আপস না-ই করেন, তাহলে কেনই-বা করবেন না, ভেবেছেন? 

আপাতত ভাবনাটা থাক। এসব না ভাবলেও চলবে। কারণ, সিনেমাটিই আপনাকে সঙ্গে করে এই ভাবনার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি যে সিনেমাটি দেখতে যাচ্ছেন, তার নাম ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আপনি জানেন যে, এই নামের একটি চরিত্রের সঙ্গে আপনার পরিচয় ঘটবেই। এবং সেটি অবশ্যই প্রধান চরিত্র হবে। 

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার একটি দৃশ্য

হয়েছেও তাই। সিনেমাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেহানার সঙ্গেই চলতে হয় দর্শকদের। চিত্রনাট্য ও দৃশ্যায়ন দেখে অনায়াসে বলা যায় সিনেমাটির নামকরণ সার্থক হয়েছে। অন্তত এ বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। আপনি ভীষণ রাগী বা জেদি হলে তো কথাই নেই, প্রথম দৃশ্য ও ডায়ালগ থেকেই আপনি রেহানা মরিয়ম নূর হয়ে উঠবেন। বলে নেওয়া ভালো, নারী-পুরুষের ভেদে নয়, আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা থেকেই আপনি নূরের সঙ্গে মিশে যাবেন। একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক আচার-আচরণের মধ্যেই সে প্রবণতা রয়েছে। আর রাগ, জেদ কম থাকলেও সমস্যা নেই; ক্যামেরা তো আছেই। মুভিং মোডে সব সময় আপনাকে নিয়ে যাবে রেহানার সঙ্গে। চরিত্রের সঙ্গে সংযোগ ঘটতে যা লাগে, তাই। ক্যামেরার কাজ প্রশংসার দাবি রাখে। চরিত্রের সঙ্গে ক্যামেরার দৌড় আপনাকেও হাঁপিয়ে তুলতে পারে। 

যদিও ক্যামেরা মুভিং শটে আমাদের দেশের আরেক নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত চলচ্চিত্র, টেলিছবিতে দেখে আমরা খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। সে কথায় না যাই। 

একটা কথা বলুন তো, আপনার কি মনে হয় একশ্রেণির মেয়েই থাকে, যারা আসলে ধর্ষণ হওয়ার যোগ্য? ধর্ষণের জন্য একশ্রেণির নারীই থাকে? থাক আপনাকে আর এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করতে চাই না! এসব প্রশ্ন এবং উত্তর সিনেমার গল্পের মধ্যে পেয়ে যাবেন হয়তো। শুধু আপনার নিজের অভিজ্ঞতাটুকু যোগ হবে। 

তা ছাড়া এখনই সিনেমার গল্প তো আর বলে দিতে পারি না। আজও দেশের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি; একটু খুঁজলেই সেই তালিকা পেয়ে যাবেন। সিনেমার দলের বাইরে, বিশেষত নির্মাতার বাইরে প্রত্যেকেই আমরা দর্শক। রেহানা মরিয়মের গল্পটা দেখে-শুনে, বুঝতে চেষ্টা করতে পারি, মন্তব্যও করতে পারি। এ ছাড়া আরেকটু সাহস থাকলে কোনো চরিত্রকে ধারণ করার শিক্ষাটিও নিয়ে নিতে পারি! 

কিন্তু এই মুহূর্তে গল্প বলা, উঁহু; আবার পরে কখনো বিস্তর গল্প করা যাবে। তবে হ্যাঁ, সিনেমাটিতে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে রেহানা মরিয়মকে বুঝতে কিঞ্চিৎ দূরত্ব থেকে যাবে, বড়জোর সেগুলোর বিষয়ে ব্যক্তিগত কিছু মন্তব্য তুলে ধরা যেতে পারে। 

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার পোস্টাররেহানা মরিয়ম অন্য চরিত্রগুলোর নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে তার একান্ত নিজের বলতে কোনো সময় নেই। অন্য চরিত্রগুলোর প্রতি শুধু নিরলস দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মানুষের বাইরে স্রষ্টার ইবাদতে নামাজ পড়েন তিনি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত চরিত্রগুলোর ভয়, দুশ্চিন্তা, অহংকার, হুমকি, অসহায়ত্ব তাঁকে পুরোটা সময় মানসিক চাপে রাখে। চলতি কথায় ‘বিরক্ত’ করে। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা, আমাদের চারপাশেই বারবার ঘটে যাওয়া একটা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে গিয়ে ক্ষুব্ধ, জেদি, বাধ্য, বিধ্বস্ত, দুঃখী, আহত, আনন্দিত করে মরিয়মকে। বিশেষ করে সিনেমাটিতে ঘটনার সঙ্গে শব্দ ধারণ, দরজার শব্দ, পানির শব্দ, এমনকি নিশ্বাসের শব্দ ভীষণ প্রভাবিত করেছে। 

শুরুতেই বলেছি, দর্শক ‘বিরক্ত’ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি! কারণ, সিনেমাটিতে আপনি যে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন, তার সময়টা এভাবেই কাটছে! 

ক্রমে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে রেহানার রাগ ও জেদের অন্যতম কারণগুলো। সিনেমাটি শেষে যদি আপনি বিরক্ত হন এবং চারপাশের কোথাও এর প্রভাব পড়তে দেখেন, তাহলে বুঝে নেবেন নির্মাতা সফল হয়েছেন। সে হিসেবে কমই ভুল হবে যে, নির্মাতা আপনাকে বিরক্তই করতে চেয়েছিলেন! 

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জানানো খুব জরুরি। সেটি হলো রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটির অন্যতম প্রধান চরিত্র তার মেয়ে। মা ও মেয়ে—উভয়ের সঙ্গেই রয়েছে ‘বাহির’ থেকে দরজা আটকে যাওয়ার দৃশ্য! একটু খেয়াল রাখবেন, দরজার ভেতর-বাহির এই বন্দী-মুক্তি খেলায় কোনো রহস্য লুকিয়ে নেই তো! 

চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি এখনো চলছে। এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই ছবিটি পাইরেসি হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ কথা বলা মুশকিল যে, কে কোন মাধ্যমে দেখবেন। তবে সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখার আনন্দটা আসলেই অন্য রকম। 

শেষ কথা। কথা নয় ঠিক। আচ্ছা, #metoo আন্দোলনের কথা আপনাদের মনে আছে? রেহানা মরিয়ম নূর দেখতে দেখতে এ নিয়ে বলতে বা লিখতে গিয়ে এ প্রশ্নই মাথায় আসছে কেবল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এ সপ্তাহের ওটিটি

‘ম্যান ভার্সেস বেবি’সহ মুক্তি পেল যেসব সিনেমা-সিরিজ

প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পেয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।

বিনোদন ডেস্ক
‘ম্যান ভার্সেস বেবি’ সিরিজের দৃশ্য
‘ম্যান ভার্সেস বেবি’ সিরিজের দৃশ্য

নূর (বাংলা সিনেমা)

  • মুক্তি: বায়স্কোপ প্লাস (১১ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: আরিফিন শুভ, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী
  • গল্পসংক্ষেপ: মফস্বল এলাকার বোকাসোকা ছেলে নূর প্রেমে পড়ে শিউলীর। মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক হঠাৎই বাঁক নেয় করুণ দীর্ঘশ্বাসে। প্রেমিকা শিউলীকে হারিয়ে প্রায় পাগল হয়ে যায় নূর। সময় পেরিয়ে এরপর তাকে দেখা যায় বন্দী অবস্থায়। কেন নূরের জীবন অন্ধকার করে দিল শিউলী, তার রহস্য জানা যাবে গল্পে।

ডিমলাইট (বাংলা ওয়েব সিনেমা)

  • মুক্তি: চরকি (১১ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মোশাররফ করিম, তানজিকা আমিন, পারশা ইভানা
  • গল্পসংক্ষেপ: এতে শামসুজ্জামান নামের একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণীর। তার প্রেমে পড়ে যায়। এই নতুন সম্পর্ক নিয়ে যখন পরিবারে অশান্তি শুরু হয়, তখন নিজের ভুল বুঝতে পারে শামসুজ্জামান।

কারমা কোর্মা (বাংলা সিরিজ)

  • মুক্তি: হইচই (১২ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, ঋতাভরী চক্রবর্তী
  • গল্পসংক্ষেপ: কর্মফল আর জীবনের দ্বন্দ্ব নিয়ে এই মার্ডার মিস্ট্রি। ভিন্ন সামাজিক শ্রেণির দুই নারীর রান্না ক্লাসে দেখা হওয়া এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও প্রতিশোধের এক রহস্যময় আখ্যান। একটি খুনের তদন্ত করতে গিয়ে এই দুই নারীর সঙ্গে আলাপ হয় পুলিশ কর্মকর্তা ভুপেন ভাদুড়ির।

ম্যান ভার্সেস বেবি (ইংরেজি সিরিজ)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১১ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: রোয়ান অ্যাটকিনসন
  • গল্পসংক্ষেপ: এক স্কুলে কেয়ারটেকারের চাকরি নিয়েছে বিংলি। কয়েক দিন ধরে তার মন বেশ প্রফুল্ল। কারণ, স্কুলে ক্রিসমাসের ছুটি শুরু হচ্ছে। ক্লাসের শেষ দিন স্কুলের আশপাশে নাম-পরিচয়হীন দুই শিশুকে খুঁজে পায় বিংলি। কোনো অভিভাবক না পাওয়ায় তার ওপরই পড়ে শিশুদের দেখাশোনার ভার। তাদের সামলাতে গিয়ে একের পর এক ঝামেলায় পড়ে বিংলি।

সুপারম্যান (ইংরেজি সিনেমা)

  • মুক্তি: জিওহটস্টার (১১ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: ডেভিড কোরেন্সওয়েট, র‍্যাচেল ব্রসনাহান, নিকোলাস হল্ট
  • গল্পসংক্ষেপ: এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে বিতর্কিত হয়ে পড়ে সুপারম্যানের কর্মকাণ্ড। টেক বিলিয়নিয়ার লেক্স লুথর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সংঘাত সৃষ্টি করে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় সুপারম্যান। সাহসী রিপোর্টার লোইস লেন এবং পোষা কুকুর ক্রিপ্টোর সাহায্য নিয়ে সুপারম্যান আবার জনসমর্থন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঈদে মুক্তি পাবে ‘ট্রাইব্যুনাল’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
(বাঁ থেকে) আদর আজাদ, মৌসুমী, ইভন ও তানিয়া বৃষ্টি। ছবি: সংগৃহীত
(বাঁ থেকে) আদর আজাদ, মৌসুমী, ইভন ও তানিয়া বৃষ্টি। ছবি: সংগৃহীত

নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তবে সিনেমা বানানোর কথা ভাবেননি কখনো। গত ঈদে তানিম নূরের ‘উৎসব’ দেখে বড় পর্দার প্রতি আগ্রহী হন তিনি।

সিনেমা বানানোর ইচ্ছা নতুন হলেও ট্রাইব্যুনাল গল্পটি অনেক বছর ধরে লালন করছেন বলে জানালেন রায়হান খান। একবার ব্যক্তিগত কারণে আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই আইনজীবীর কাছ থেকে শোনা একটি বাস্তব গল্প অবলম্বনে লেখা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল সিনেমার চিত্রনাট্য। চট্টগ্রামে এক নারীকে তার স্বামী কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। ২৬ জন সাক্ষী এবং একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল সেই মামলায়। পরে আদালতে মামলাটির গতিপথ কীভাবে ঘুরতে থাকে নানা দিকে, সেসব নিয়েই ট্রাইব্যুনালের কাহিনি।

নির্মাতা রায়হান খান বলেন, ‘২০১৭ সালে একবার মোশাররফ করিমকে গল্পটি শুনিয়ে এ নিয়ে একটি ধারাবাহিক নাটক বানানোর কথা বলি। তিনি পরামর্শ দেন, নাটক নয়, গল্পটি নিয়ে সিনেমা বানানোর। পরে বছরের পর বছর কেটে যায়, সিনেমা আর বানানো হয় না। গত বছর উৎসব দেখার পর মনে হয়, আমি সিনেমা করব এবং সেটা ট্রাইব্যুনাল। তারপর চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করি। ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে ফুলফর্ম কোর্ট স্টোরি। প্রতিটি সংলাপ আদালতের ভাষা অনুযায়ী এবং বাংলাদেশের আইনের মধ্যে থেকে লেখা হয়েছে। আইনগত কোনো অসংগতি নেই।’

ট্রাইব্যুনাল সিনেমায় অভিনয় করেছেন মৌসুমী হামিদ, তানিয়া বৃষ্টি, সায়রা আক্তার জাহান, তারিক আনাম খান, আদর আজাদ, রাকিব হোসেন ইভন, সাবেরি আলম, মিলন ভট্টাচার্য, শাহেদ আলী প্রমুখ। একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে নুসরাত ফারিয়াকে।

মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘আমার অভিনীত প্রথম সিরিয়াল রায়হান খানের সঙ্গে করা। এরপর একসঙ্গে অনেক কাজ হয়েছে আমাদের। এই সিনেমার গল্প শুনেই রাজি হই। অসাধারণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। মূলত গল্পের কারণেই ট্রাইব্যুনাল সিনেমার প্রতি দর্শক উৎসাহী হবে আশা করি। চিত্রনাট্য এত চমৎকারভাবে লেখা যে প্রতি মুহূর্তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।’

রায়হান খান
রায়হান খান

তানিয়া বৃষ্টি বলেন, ‘আমি জেসমিন নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি, পুরো গল্প এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে। মনে হয়েছিল, সিনেমায় আবার যদি ব্যাক করতে চাই, সে ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত গল্প। এতে অভিনয়ের জন্য তারিক আনাম খান স্যারের কাছে এক মাস রিহার্সাল করেছি। চরিত্রের কষ্ট বোঝার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছি। যতটা পেরেছি, পুরোপুরি এফোর্ট দিয়েছি চরিত্রটির জন্য।’

সম্প্রতি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে দুই সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন আদর আজাদ। এই সিনেমায়ও তিনি থাকছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে।

থিয়েটার দিয়ে অভিনয় শুরু রাকিব হোসেন ইভনের। ‘ইতি চিত্রা’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। এই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে ইভন বলেন, ‘আমি থিয়েটার করা ছেলে। অভিনয় আমাকে টানে। এই সিনেমার চরিত্রটিতে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমি সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। অন্যেরাও বেশ ভালো করেছেন। আশা করছি, সবার চেষ্টায় একটি সুন্দর সিনেমা উপহার দিতে পারব দর্শকদের।’

নির্মাতা রায়হান খান জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ হয়েছে। শিগগির আবার শুটিংয়ে যাবে ট্রাইব্যুনাল টিম। রোজার ঈদে ট্রাইব্যুনাল মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেসবুক পোস্টের গল্প থেকে নাটক, কেন্দ্রীয় চরিত্রে অহনা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
অহনা। ছবি: সংগৃহীত
অহনা। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।

অহনা এখন আগের মতো নিয়মিত কাজ করছেন না। গল্প, চিত্রনাট্য আর চরিত্র পছন্দ হলে শুটিং করছেন। এই নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহিনের নির্দেশনায় আগেও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। এই নাটকের গল্প ভাবনা এবং চিত্রনাট্য দারুণ হয়েছে। আমার চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। বেশ উত্থানপতন আছে। চেষ্টা করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। আশা করছি, প্রচারে এলে নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ মহিনকে আমাকে সুন্দর একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।’

নাটকের গল্প প্রসঙ্গে মহিন খান বলেন, ‘ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে গল্পের ভাবনাটা নিয়েছি। সেই থিম থেকে নিজের মতো করে চিত্রনাট্য লিখেছি। গল্পে দেখা যাবে, স্বামীর সঙ্গে অহনার বেশ সুখের সংসার। একসময় চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেয় অহনা। স্বামী তার আবদার মেনে নেয়। পাঁচ লাখ টাকা ম্যানেজ করে স্ত্রীকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আচরণ বদলে যায় অহনার। স্বামীর সঙ্গেও সংসার করতে চায় না। গল্প যখন চরম নাটকীয়তায়, এমন সময় হুট করে চাকরি চলে যায় অহনার। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পারে সে। অহনা ও রাশেদ সীমান্ত—দুজনেই দারুণ অভিনয় করেছেন। তাঁদের অভিনয়গুণে গল্পটি আরও হৃদয়গ্রাহী হয়েছে।’

নির্মাতা জানিয়েছেন, পতন নাটকটি প্রকাশ করা হবে ইউটিউব চ্যানেলে। শিগগির এর প্রকাশের সময় এবং চ্যানেলের নাম জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করলেন সোনিয়া, জানালেন কেমন আছেন নায়ক

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সোনিয়া। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সোনিয়া। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে মেয়ের সঙ্গে আছেন তিনি। গত জুলাই মাসে ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডন গেলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় চিত্রনায়িকা রোজিনার। ওই সময় রোজিনা ছিলেন কানাডায়। সেখান থেকে ফিরে গত সেপ্টেম্বর অভিনেতাকে দেখেতে যান তিনি। তখন রোজিনা জানিয়েছিলেন, অসুস্থতার ধঁকলে কিছুটা বিধ্বস্ত দেখালেও কাঞ্চন দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন নিয়মিত। ধীরে ধীরে কথা বলছেন। ব্রেনের সস্যার কারণে মাঝে মাঝে কথা ভুলে যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ব্রেনের স্পর্শকাতর জায়গায় টিউমার হওয়ায় অস্ত্রোপচার করে সম্পূর্ণ টিউমার সরানো যায়নি। তবে কেমোথেরাপির মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা চলবে।

সম্প্রতি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলা সিনেমার নব্বই দশকের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা সোনিয়া। অনেক বছর হলো স্বামী-সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডে স্থায়ী হয়েছেন সোনিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।

গত সেপ্টেম্বরে ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখতে যান রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত
গত সেপ্টেম্বরে ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখতে যান রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন সোনিয়া। নায়কের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্যসহ জানিয়েছেন চিকিৎসার খবর।

স্ট্যাটাসে সোনিয়া লেখেন, ‘ইংল্যান্ডের কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে অনেকদিন ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হয়নি। যোগাযোগ সবসময় হয়, তবে আজ প্রথম সুযোগ পেলাম তাকে দেখতে যাওয়ার। ভাইয়ার চলমান চিকিৎসায় কিছুদিনের বিরতি ছিল। আগামী সপ্তাহে আবার চিকিৎসা শুরু হবে।’

সোনিয়া জানিয়েছেন, ইলিয়াস কাঞ্চন এখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন। সময় কাটাচ্ছেন স্বজনদের সঙ্গে। তবে শিগগির দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই তাঁর। এ বিষয়ে সোনিয়া লেখেন, ‘ভাইয়া আমার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। উনার পরিবারের সঙ্গে কাটালাম ভালো সময়। তবে আপাতত বাংলাদেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই তাঁর। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত জানানো যাচ্ছে না।’

সোনিয়া আরও জানিয়েছেন, ইলিয়াস কাঞ্চনের চিকিৎসা বেশ ভালোভাবেই চলছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন নায়ক। পুরো চিকিৎসাপ্রক্রিয়া শেষে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন অভিনেতা। সোনিয়া অনুরোধ করেছেন, কোনো ধরনের গুজব না ছড়িয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে।

উল্লেখ্য, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ‘ভয়ংকর ৭ দিন’, ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ‘বডিগার্ড’, ‘শেষ রক্ষা’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সোনিয়া। তবে তাঁর নায়িকা হয়ে কোনো সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত