মুশফিকুর রিজন, জাবি

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে। সেদিন সরকারি চাকরির নিয়োগব্যবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারপ্রদত্ত একটি সার্কুলারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি। ৬ জুনও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়; তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ১ জুলাই ছুটি শেষে পুনরায় আন্দোলনের সূচনা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিটি কর্মসূচির শুরু হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সেখানেই গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি ও ব্যানার নির্ধারিত হতো। একই সঙ্গে আন্দোলন চালাতে ক্রাউড ফান্ডিংও চলত। সারা দেশে যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কর্মসূচি চলেছে, তার নাম প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর থেকেই।

এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম জানান, ‘আমরা লাইব্রেরির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই কীভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২৯ জুন আমরা একটি সাধারণ সভা করি, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় একটি একক ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। ওই দিনই আমাদের ইন্টারনাল গ্রুপে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামটি প্রস্তাব করি এবং পরদিন ৩০ জুন তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই ব্যানারে আন্দোলন চলে।’
১ জুলাই থেকে প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগরে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করে। ৪ জুলাই একটি রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই রায় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গেলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং সদস্যসচিব হন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ। পরে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
৫ জুলাই মানববন্ধনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ৬ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ ডাকা হয়। যদিও কেন্দ্র থেকে বিকেল ৩টায় ব্লকেড শুরুর নির্দেশনা ছিল, জাহাঙ্গীরনগরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এটি শুরু হয়—যা ছিল দেশের প্রথম ব্লকেড কর্মসূচি।
১০ জুলাই পর্যন্ত টানা ব্লকড কর্মসূচি চলে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরদিন ১১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীরা। ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে সারা দেশের মত জাবির ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের হামলা ও হল সিসিটিভি না দেখানোর প্রতিবাদে হল প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। পরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন এবং পরে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি। এদিকে একই সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। রাত বারোটার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। হামলার খবর আগেভাগেই আন্দোলনকারীরা জেনে গেলে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাসভবন ঘিরে ফেললেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সময়কার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে হামলার খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করেন। ওই রাতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রুম ভাঙচুর করেন এবং ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন। সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস, যেখান থেকে ছাত্রলীগকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে জাহাঙ্গীরনগরে আসতে থাকেন। সারা দিনজুড়ে ‘জাবি, তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় খবর আসে যে, ছাত্রলীগ আবার হলে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে—এ জন্য শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে থেকে পাহারা দেন।

১৭ জুলাই সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি (ভ্যাকেন্ট) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায়। সকাল থেকেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে সরে গিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে পুলিশ জোরপূর্বক সকল শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী আশপাশের ইসলামনগর, গেরুয়া ও আমবাগান এলাকায় অবস্থান নেন। এদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল করেন। বিকেলে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেন।
১৯ জুলাইও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেন। ২০ জুলাই বিকেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য–২৪ ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে। এরপর শিক্ষার্থীরা কারফিউ ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ‘ঘোড়ার ডিমের কারফিউ, মানি না, মানব না’ স্লোগানে মুখরিত হয় আন্দোলন।
১৮ জুলাই থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন সাধারণ জনতা। তখন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলে অফলাইনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। তখন আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান। তিনি জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাওয়ায় স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। এই কাজে আমাকে সহায়তা করেন আমাদের ক্যাম্পাসের অরিত্র সত্তার এবং তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক ভাই। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন।’
২৬ জুলাই রাতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ‘সেতু ভবন’ মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘২৪ তারিখের দিকে আমার কাছে একটি মেসেজ আসে; সব সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাকে পুরো দেশের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ঢাকায় চলে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমি আমবাগানের বাসায় যাই। সেখান থেকেই ব্লক রেইড দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এরপর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। আমি ৩ আগস্ট মুক্তি পাই এবং সেদিনই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
আরিফ সোহেলের গ্রেপ্তারের পর যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলমান থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি জানান, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে একপ্রকার পালিয়ে পালিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে আমি কয়েক রাত নৌকায় ঘুমিয়েছি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।’
২৮ ও ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ৩০ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে এবং সেদিনের মিছিলেও অনেক বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক যোগ দেন। এদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও দমে যাননি। ওই দিন দুপুরেই নিজের অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাতে আমার সন্তানের রক্ত, তার ছবি আমার দেয়ালে থাকতে পারে না। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে, যার কারণে আমরা আগে তাঁর ছবি টাঙিয়েছিলাম, তিনি আর সেই পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর জন্য তখন সবাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।’
ছবি নামানোর পর কোনো চাপ এসেছিল কি না? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তখন শোকজ করা হয়েছিল। কেন ছবি নামিয়েছি, সে বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক শিক্ষক। অনেকে ফোন করে জানিয়েছে, আমার ছবি কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল—আমার সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।’
২, ৩ ও ৪ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। এই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ‘আমরা সম্ভবপর সব ধরনের তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা অফিসে কল করে সংবাদ পাঠাতাম। আমরা চাইতাম, এই আন্দোলনের ভেতর থেকেও জাহাঙ্গীরনগর যেন অদৃশ্য না হয়ে যায়—সবাই যেন এখানকার কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতাম।’
৫ আগস্টের লং মার্চে অংশ নিতে সকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণ। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার মানুষের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল কারখানা শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মী। তবে সাভার এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শ্রাবণ গাজী নামে এক শিক্ষার্থী শহীদ হন। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা পৌঁছাতে না পেরে শহীদ শ্রাবণ গাজীর মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ধীরে ধীরে বাইরের অংশগ্রহণকারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। দেশের সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরাই একত্র হয়ে ক্যাম্পাস পাহারায় অংশ নেন।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় যখন আমরা মনোবল ও আশা হারিয়ে ফেলছিলাম, তখন জাহাঙ্গীরনগর আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে। সেদিন সরকারি চাকরির নিয়োগব্যবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারপ্রদত্ত একটি সার্কুলারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি। ৬ জুনও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়; তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ১ জুলাই ছুটি শেষে পুনরায় আন্দোলনের সূচনা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিটি কর্মসূচির শুরু হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সেখানেই গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি ও ব্যানার নির্ধারিত হতো। একই সঙ্গে আন্দোলন চালাতে ক্রাউড ফান্ডিংও চলত। সারা দেশে যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কর্মসূচি চলেছে, তার নাম প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর থেকেই।

এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম জানান, ‘আমরা লাইব্রেরির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই কীভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২৯ জুন আমরা একটি সাধারণ সভা করি, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় একটি একক ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। ওই দিনই আমাদের ইন্টারনাল গ্রুপে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামটি প্রস্তাব করি এবং পরদিন ৩০ জুন তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই ব্যানারে আন্দোলন চলে।’
১ জুলাই থেকে প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগরে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করে। ৪ জুলাই একটি রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই রায় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গেলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং সদস্যসচিব হন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ। পরে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
৫ জুলাই মানববন্ধনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ৬ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ ডাকা হয়। যদিও কেন্দ্র থেকে বিকেল ৩টায় ব্লকেড শুরুর নির্দেশনা ছিল, জাহাঙ্গীরনগরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এটি শুরু হয়—যা ছিল দেশের প্রথম ব্লকেড কর্মসূচি।
১০ জুলাই পর্যন্ত টানা ব্লকড কর্মসূচি চলে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরদিন ১১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীরা। ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে সারা দেশের মত জাবির ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের হামলা ও হল সিসিটিভি না দেখানোর প্রতিবাদে হল প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। পরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন এবং পরে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি। এদিকে একই সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। রাত বারোটার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। হামলার খবর আগেভাগেই আন্দোলনকারীরা জেনে গেলে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাসভবন ঘিরে ফেললেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সময়কার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে হামলার খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করেন। ওই রাতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রুম ভাঙচুর করেন এবং ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন। সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস, যেখান থেকে ছাত্রলীগকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে জাহাঙ্গীরনগরে আসতে থাকেন। সারা দিনজুড়ে ‘জাবি, তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় খবর আসে যে, ছাত্রলীগ আবার হলে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে—এ জন্য শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে থেকে পাহারা দেন।

১৭ জুলাই সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি (ভ্যাকেন্ট) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায়। সকাল থেকেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে সরে গিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে পুলিশ জোরপূর্বক সকল শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী আশপাশের ইসলামনগর, গেরুয়া ও আমবাগান এলাকায় অবস্থান নেন। এদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল করেন। বিকেলে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেন।
১৯ জুলাইও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেন। ২০ জুলাই বিকেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য–২৪ ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে। এরপর শিক্ষার্থীরা কারফিউ ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ‘ঘোড়ার ডিমের কারফিউ, মানি না, মানব না’ স্লোগানে মুখরিত হয় আন্দোলন।
১৮ জুলাই থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন সাধারণ জনতা। তখন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলে অফলাইনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। তখন আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান। তিনি জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাওয়ায় স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। এই কাজে আমাকে সহায়তা করেন আমাদের ক্যাম্পাসের অরিত্র সত্তার এবং তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক ভাই। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন।’
২৬ জুলাই রাতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ‘সেতু ভবন’ মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘২৪ তারিখের দিকে আমার কাছে একটি মেসেজ আসে; সব সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাকে পুরো দেশের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ঢাকায় চলে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমি আমবাগানের বাসায় যাই। সেখান থেকেই ব্লক রেইড দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এরপর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। আমি ৩ আগস্ট মুক্তি পাই এবং সেদিনই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
আরিফ সোহেলের গ্রেপ্তারের পর যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলমান থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি জানান, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে একপ্রকার পালিয়ে পালিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে আমি কয়েক রাত নৌকায় ঘুমিয়েছি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।’
২৮ ও ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ৩০ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে এবং সেদিনের মিছিলেও অনেক বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক যোগ দেন। এদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও দমে যাননি। ওই দিন দুপুরেই নিজের অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাতে আমার সন্তানের রক্ত, তার ছবি আমার দেয়ালে থাকতে পারে না। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে, যার কারণে আমরা আগে তাঁর ছবি টাঙিয়েছিলাম, তিনি আর সেই পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর জন্য তখন সবাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।’
ছবি নামানোর পর কোনো চাপ এসেছিল কি না? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তখন শোকজ করা হয়েছিল। কেন ছবি নামিয়েছি, সে বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক শিক্ষক। অনেকে ফোন করে জানিয়েছে, আমার ছবি কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল—আমার সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।’
২, ৩ ও ৪ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। এই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ‘আমরা সম্ভবপর সব ধরনের তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা অফিসে কল করে সংবাদ পাঠাতাম। আমরা চাইতাম, এই আন্দোলনের ভেতর থেকেও জাহাঙ্গীরনগর যেন অদৃশ্য না হয়ে যায়—সবাই যেন এখানকার কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতাম।’
৫ আগস্টের লং মার্চে অংশ নিতে সকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণ। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার মানুষের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল কারখানা শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মী। তবে সাভার এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শ্রাবণ গাজী নামে এক শিক্ষার্থী শহীদ হন। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা পৌঁছাতে না পেরে শহীদ শ্রাবণ গাজীর মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ধীরে ধীরে বাইরের অংশগ্রহণকারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। দেশের সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরাই একত্র হয়ে ক্যাম্পাস পাহারায় অংশ নেন।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় যখন আমরা মনোবল ও আশা হারিয়ে ফেলছিলাম, তখন জাহাঙ্গীরনগর আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’
মুশফিকুর রিজন, জাবি

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে। সেদিন সরকারি চাকরির নিয়োগব্যবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারপ্রদত্ত একটি সার্কুলারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি। ৬ জুনও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়; তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ১ জুলাই ছুটি শেষে পুনরায় আন্দোলনের সূচনা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিটি কর্মসূচির শুরু হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সেখানেই গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি ও ব্যানার নির্ধারিত হতো। একই সঙ্গে আন্দোলন চালাতে ক্রাউড ফান্ডিংও চলত। সারা দেশে যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কর্মসূচি চলেছে, তার নাম প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর থেকেই।

এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম জানান, ‘আমরা লাইব্রেরির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই কীভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২৯ জুন আমরা একটি সাধারণ সভা করি, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় একটি একক ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। ওই দিনই আমাদের ইন্টারনাল গ্রুপে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামটি প্রস্তাব করি এবং পরদিন ৩০ জুন তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই ব্যানারে আন্দোলন চলে।’
১ জুলাই থেকে প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগরে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করে। ৪ জুলাই একটি রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই রায় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গেলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং সদস্যসচিব হন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ। পরে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
৫ জুলাই মানববন্ধনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ৬ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ ডাকা হয়। যদিও কেন্দ্র থেকে বিকেল ৩টায় ব্লকেড শুরুর নির্দেশনা ছিল, জাহাঙ্গীরনগরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এটি শুরু হয়—যা ছিল দেশের প্রথম ব্লকেড কর্মসূচি।
১০ জুলাই পর্যন্ত টানা ব্লকড কর্মসূচি চলে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরদিন ১১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীরা। ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে সারা দেশের মত জাবির ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের হামলা ও হল সিসিটিভি না দেখানোর প্রতিবাদে হল প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। পরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন এবং পরে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি। এদিকে একই সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। রাত বারোটার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। হামলার খবর আগেভাগেই আন্দোলনকারীরা জেনে গেলে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাসভবন ঘিরে ফেললেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সময়কার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে হামলার খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করেন। ওই রাতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রুম ভাঙচুর করেন এবং ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন। সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস, যেখান থেকে ছাত্রলীগকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে জাহাঙ্গীরনগরে আসতে থাকেন। সারা দিনজুড়ে ‘জাবি, তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় খবর আসে যে, ছাত্রলীগ আবার হলে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে—এ জন্য শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে থেকে পাহারা দেন।

১৭ জুলাই সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি (ভ্যাকেন্ট) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায়। সকাল থেকেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে সরে গিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে পুলিশ জোরপূর্বক সকল শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী আশপাশের ইসলামনগর, গেরুয়া ও আমবাগান এলাকায় অবস্থান নেন। এদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল করেন। বিকেলে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেন।
১৯ জুলাইও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেন। ২০ জুলাই বিকেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য–২৪ ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে। এরপর শিক্ষার্থীরা কারফিউ ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ‘ঘোড়ার ডিমের কারফিউ, মানি না, মানব না’ স্লোগানে মুখরিত হয় আন্দোলন।
১৮ জুলাই থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন সাধারণ জনতা। তখন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলে অফলাইনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। তখন আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান। তিনি জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাওয়ায় স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। এই কাজে আমাকে সহায়তা করেন আমাদের ক্যাম্পাসের অরিত্র সত্তার এবং তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক ভাই। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন।’
২৬ জুলাই রাতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ‘সেতু ভবন’ মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘২৪ তারিখের দিকে আমার কাছে একটি মেসেজ আসে; সব সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাকে পুরো দেশের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ঢাকায় চলে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমি আমবাগানের বাসায় যাই। সেখান থেকেই ব্লক রেইড দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এরপর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। আমি ৩ আগস্ট মুক্তি পাই এবং সেদিনই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
আরিফ সোহেলের গ্রেপ্তারের পর যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলমান থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি জানান, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে একপ্রকার পালিয়ে পালিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে আমি কয়েক রাত নৌকায় ঘুমিয়েছি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।’
২৮ ও ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ৩০ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে এবং সেদিনের মিছিলেও অনেক বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক যোগ দেন। এদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও দমে যাননি। ওই দিন দুপুরেই নিজের অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাতে আমার সন্তানের রক্ত, তার ছবি আমার দেয়ালে থাকতে পারে না। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে, যার কারণে আমরা আগে তাঁর ছবি টাঙিয়েছিলাম, তিনি আর সেই পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর জন্য তখন সবাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।’
ছবি নামানোর পর কোনো চাপ এসেছিল কি না? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তখন শোকজ করা হয়েছিল। কেন ছবি নামিয়েছি, সে বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক শিক্ষক। অনেকে ফোন করে জানিয়েছে, আমার ছবি কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল—আমার সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।’
২, ৩ ও ৪ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। এই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ‘আমরা সম্ভবপর সব ধরনের তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা অফিসে কল করে সংবাদ পাঠাতাম। আমরা চাইতাম, এই আন্দোলনের ভেতর থেকেও জাহাঙ্গীরনগর যেন অদৃশ্য না হয়ে যায়—সবাই যেন এখানকার কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতাম।’
৫ আগস্টের লং মার্চে অংশ নিতে সকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণ। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার মানুষের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল কারখানা শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মী। তবে সাভার এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শ্রাবণ গাজী নামে এক শিক্ষার্থী শহীদ হন। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা পৌঁছাতে না পেরে শহীদ শ্রাবণ গাজীর মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ধীরে ধীরে বাইরের অংশগ্রহণকারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। দেশের সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরাই একত্র হয়ে ক্যাম্পাস পাহারায় অংশ নেন।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় যখন আমরা মনোবল ও আশা হারিয়ে ফেলছিলাম, তখন জাহাঙ্গীরনগর আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে। সেদিন সরকারি চাকরির নিয়োগব্যবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারপ্রদত্ত একটি সার্কুলারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি। ৬ জুনও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়; তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ১ জুলাই ছুটি শেষে পুনরায় আন্দোলনের সূচনা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিটি কর্মসূচির শুরু হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সেখানেই গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি ও ব্যানার নির্ধারিত হতো। একই সঙ্গে আন্দোলন চালাতে ক্রাউড ফান্ডিংও চলত। সারা দেশে যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কর্মসূচি চলেছে, তার নাম প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর থেকেই।

এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম জানান, ‘আমরা লাইব্রেরির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই কীভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২৯ জুন আমরা একটি সাধারণ সভা করি, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় একটি একক ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। ওই দিনই আমাদের ইন্টারনাল গ্রুপে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামটি প্রস্তাব করি এবং পরদিন ৩০ জুন তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই ব্যানারে আন্দোলন চলে।’
১ জুলাই থেকে প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগরে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করে। ৪ জুলাই একটি রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই রায় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গেলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং সদস্যসচিব হন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ। পরে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
৫ জুলাই মানববন্ধনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ৬ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ ডাকা হয়। যদিও কেন্দ্র থেকে বিকেল ৩টায় ব্লকেড শুরুর নির্দেশনা ছিল, জাহাঙ্গীরনগরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এটি শুরু হয়—যা ছিল দেশের প্রথম ব্লকেড কর্মসূচি।
১০ জুলাই পর্যন্ত টানা ব্লকড কর্মসূচি চলে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরদিন ১১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীরা। ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে সারা দেশের মত জাবির ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের হামলা ও হল সিসিটিভি না দেখানোর প্রতিবাদে হল প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। পরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন এবং পরে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি। এদিকে একই সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। রাত বারোটার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। হামলার খবর আগেভাগেই আন্দোলনকারীরা জেনে গেলে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাসভবন ঘিরে ফেললেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সময়কার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে হামলার খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করেন। ওই রাতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রুম ভাঙচুর করেন এবং ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন। সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস, যেখান থেকে ছাত্রলীগকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে জাহাঙ্গীরনগরে আসতে থাকেন। সারা দিনজুড়ে ‘জাবি, তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় খবর আসে যে, ছাত্রলীগ আবার হলে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে—এ জন্য শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে থেকে পাহারা দেন।

১৭ জুলাই সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি (ভ্যাকেন্ট) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায়। সকাল থেকেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে সরে গিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে পুলিশ জোরপূর্বক সকল শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী আশপাশের ইসলামনগর, গেরুয়া ও আমবাগান এলাকায় অবস্থান নেন। এদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল করেন। বিকেলে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেন।
১৯ জুলাইও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেন। ২০ জুলাই বিকেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য–২৪ ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে। এরপর শিক্ষার্থীরা কারফিউ ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ‘ঘোড়ার ডিমের কারফিউ, মানি না, মানব না’ স্লোগানে মুখরিত হয় আন্দোলন।
১৮ জুলাই থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন সাধারণ জনতা। তখন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলে অফলাইনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। তখন আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান। তিনি জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাওয়ায় স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। এই কাজে আমাকে সহায়তা করেন আমাদের ক্যাম্পাসের অরিত্র সত্তার এবং তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক ভাই। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন।’
২৬ জুলাই রাতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ‘সেতু ভবন’ মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘২৪ তারিখের দিকে আমার কাছে একটি মেসেজ আসে; সব সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাকে পুরো দেশের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ঢাকায় চলে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমি আমবাগানের বাসায় যাই। সেখান থেকেই ব্লক রেইড দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এরপর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। আমি ৩ আগস্ট মুক্তি পাই এবং সেদিনই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
আরিফ সোহেলের গ্রেপ্তারের পর যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলমান থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি জানান, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে একপ্রকার পালিয়ে পালিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে আমি কয়েক রাত নৌকায় ঘুমিয়েছি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।’
২৮ ও ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ৩০ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে এবং সেদিনের মিছিলেও অনেক বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক যোগ দেন। এদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও দমে যাননি। ওই দিন দুপুরেই নিজের অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাতে আমার সন্তানের রক্ত, তার ছবি আমার দেয়ালে থাকতে পারে না। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে, যার কারণে আমরা আগে তাঁর ছবি টাঙিয়েছিলাম, তিনি আর সেই পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর জন্য তখন সবাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।’
ছবি নামানোর পর কোনো চাপ এসেছিল কি না? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তখন শোকজ করা হয়েছিল। কেন ছবি নামিয়েছি, সে বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক শিক্ষক। অনেকে ফোন করে জানিয়েছে, আমার ছবি কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল—আমার সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।’
২, ৩ ও ৪ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। এই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ‘আমরা সম্ভবপর সব ধরনের তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা অফিসে কল করে সংবাদ পাঠাতাম। আমরা চাইতাম, এই আন্দোলনের ভেতর থেকেও জাহাঙ্গীরনগর যেন অদৃশ্য না হয়ে যায়—সবাই যেন এখানকার কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতাম।’
৫ আগস্টের লং মার্চে অংশ নিতে সকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণ। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার মানুষের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল কারখানা শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মী। তবে সাভার এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শ্রাবণ গাজী নামে এক শিক্ষার্থী শহীদ হন। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা পৌঁছাতে না পেরে শহীদ শ্রাবণ গাজীর মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ধীরে ধীরে বাইরের অংশগ্রহণকারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। দেশের সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরাই একত্র হয়ে ক্যাম্পাস পাহারায় অংশ নেন।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় যখন আমরা মনোবল ও আশা হারিয়ে ফেলছিলাম, তখন জাহাঙ্গীরনগর আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’

দেশে অণুজীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টসের (বিএসএম)’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ড. মুনিরুল আলম।
১৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।
২০ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রিক ও সৃজনশীল পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে
১ দিন আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দিন পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা।
২ দিন আগেশিক্ষা ডেস্ক

দেশে অণুজীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টসের (বিএসএম)’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ড. মুনিরুল আলম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ ও বিএসএমের যৌথ উদ্যোগে গত ২১–২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অণুজীববিজ্ঞান গবেষণায় উদ্ভাবনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ, শিল্পখাতের প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল অণুজীববিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে সাম্প্রতিক গবেষণা ও অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় করা, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করা। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪০০-এর অধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় “Microbiomes for a Sustainable Future” সময়োপযোগী ছিল এবং মানব উন্নয়ন ও কল্যাণে অণুজীববিজ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরতে সহায়ক হয়। সর্বমোট ২৮৮টি সারসংক্ষেপ (Abstract) গৃহীত হওয়ার পর সম্মেলনের ১২টি টেকনিক্যাল সেশনে ২টি প্লেনারি বক্তৃতা, ৮টি কীনোট বক্তৃতা, ৬টি আমন্ত্রিত বক্তৃতা, ৪টি ইয়াং সায়েন্টিস্ট টক, ৫৮টি মৌখিক উপস্থাপনা এবং প্রায় ২২৬টি পোস্টার উপস্থাপন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এস. এম. এ. ফয়েজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) প্রফেসর ডা. মামুন আহমেদ। স্বাগতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. শাকিলা নার্গিস খান।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে সম্মেলন আয়োজন কমিটির চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসের (সিএআরএস) চিফ সায়েন্টিস্ট ডা. লতিফুল বারী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

দেশে অণুজীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টসের (বিএসএম)’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ড. মুনিরুল আলম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ ও বিএসএমের যৌথ উদ্যোগে গত ২১–২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অণুজীববিজ্ঞান গবেষণায় উদ্ভাবনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ, শিল্পখাতের প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল অণুজীববিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে সাম্প্রতিক গবেষণা ও অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় করা, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করা। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪০০-এর অধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় “Microbiomes for a Sustainable Future” সময়োপযোগী ছিল এবং মানব উন্নয়ন ও কল্যাণে অণুজীববিজ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরতে সহায়ক হয়। সর্বমোট ২৮৮টি সারসংক্ষেপ (Abstract) গৃহীত হওয়ার পর সম্মেলনের ১২টি টেকনিক্যাল সেশনে ২টি প্লেনারি বক্তৃতা, ৮টি কীনোট বক্তৃতা, ৬টি আমন্ত্রিত বক্তৃতা, ৪টি ইয়াং সায়েন্টিস্ট টক, ৫৮টি মৌখিক উপস্থাপনা এবং প্রায় ২২৬টি পোস্টার উপস্থাপন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এস. এম. এ. ফয়েজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) প্রফেসর ডা. মামুন আহমেদ। স্বাগতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. শাকিলা নার্গিস খান।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে সম্মেলন আয়োজন কমিটির চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসের (সিএআরএস) চিফ সায়েন্টিস্ট ডা. লতিফুল বারী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।
২০ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রিক ও সৃজনশীল পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে
১ দিন আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দিন পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা।
২ দিন আগেজবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এ সময় শহীদ সাজিদ ভবন, প্রক্টর অফিস ঘুরে প্রোগোজ স্কুলের মাঠে সাংবাদিক ও ফ্যানদের সঙ্গে কথা বলেন এই ফুটবলার।

এ সময় জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো এলাম। আমার অনেক ভালো লাগছে। এটি অনেক পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচন। আপনাদের সবার প্রতি শুভকামনা। আমি আবার আসব ইনশা আল্লাহ।’
এ সময় জাতীয় ছাত্র শক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী মো. ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘আমরা স্পোর্টস কার্নিভালের সময় জামাল ভাইকে আমাদের ক্যাম্পাসে আসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তখন শিডিউল না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি। এই প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশ ফুটবলের প্রথম সুপারস্টার জামাল ভূঁইয়া। তাঁর মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবলের এই নতুন ধারা উন্মোচিত হয়েছে।’

এ সময় এই সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলটির ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য, ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী ফেরদৌস হাসান সোহান, কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী সিনহা ইসলাম অর্না এবং ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ক্রীড়া সম্পাদক কামরুল হাছান নাফিজসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছিলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এ সময় শহীদ সাজিদ ভবন, প্রক্টর অফিস ঘুরে প্রোগোজ স্কুলের মাঠে সাংবাদিক ও ফ্যানদের সঙ্গে কথা বলেন এই ফুটবলার।

এ সময় জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো এলাম। আমার অনেক ভালো লাগছে। এটি অনেক পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচন। আপনাদের সবার প্রতি শুভকামনা। আমি আবার আসব ইনশা আল্লাহ।’
এ সময় জাতীয় ছাত্র শক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী মো. ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘আমরা স্পোর্টস কার্নিভালের সময় জামাল ভাইকে আমাদের ক্যাম্পাসে আসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তখন শিডিউল না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি। এই প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশ ফুটবলের প্রথম সুপারস্টার জামাল ভূঁইয়া। তাঁর মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবলের এই নতুন ধারা উন্মোচিত হয়েছে।’

এ সময় এই সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলটির ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য, ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী ফেরদৌস হাসান সোহান, কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী সিনহা ইসলাম অর্না এবং ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ক্রীড়া সম্পাদক কামরুল হাছান নাফিজসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছিলেন।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
দেশে অণুজীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টসের (বিএসএম)’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ড. মুনিরুল আলম।
১৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রিক ও সৃজনশীল পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে
১ দিন আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দিন পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা।
২ দিন আগেসোহানুর রহমান, জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রিক ও সৃজনশীল পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়তি আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
জকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারণায় পোস্টার ও লিফলেটের মতো প্রচলিত প্রচারসামগ্রীর বাইরে গিয়ে লাল কার্ড, রঙিন প্ল্যাকার্ড ও হাতে বহনযোগ্য নানা প্রচারসামগ্রী ব্যবহার করছেন। দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আচরণবিধি মেনেই ভিন্ন কৌশলে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে ব্যবহার করছেন এরোপ্লেন আকৃতির কাগজ, প্রতীকী নোট, কাপ, বোতল, প্রজাপতি, জকসু পাসপোর্টসহ নানা অভিনব উপকরণ। আকর্ষণীয় স্লোগান ও রঙিন ডিজাইনের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে নির্বাচনী অঙ্গীকার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
প্রচারণায় প্রযুক্তির ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। কিউআর কোড সংযুক্ত প্রচারণা সামগ্রীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন স্ক্যান করে মুহূর্তেই প্রার্থীদের বিস্তারিত ইশতেহার ও পরিকল্পনা জানতে পারছেন।
ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। শুরু থেকেই আমরা জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো এবং তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যেই আমি ভিন্নধর্মী প্রচার কার্ড ব্যবহার করছি।’
ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদপ্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘লিফলেট দিয়ে প্রচার করার ফলে ভোটাররা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন, তাই এবার আমাদের অন্য রকম প্রচারণা। আমাদের বার্তাটি আকর্ষণীয়ভাবে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
স্বতন্ত্র নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী আল শাহরিয়ার খান বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং প্রচারসামগ্রী যেন সংরক্ষণযোগ্য হয়, এই চিন্তা থেকেই আমি বিড়ালের আদলে কার্ড তৈরি করেছি।’
ছাত্রশক্তি-সমর্থিত ‘নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে ইশতেহার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের সমস্যা ও প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রিক ও সৃজনশীল পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়তি আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
জকসু নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারণায় পোস্টার ও লিফলেটের মতো প্রচলিত প্রচারসামগ্রীর বাইরে গিয়ে লাল কার্ড, রঙিন প্ল্যাকার্ড ও হাতে বহনযোগ্য নানা প্রচারসামগ্রী ব্যবহার করছেন। দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আচরণবিধি মেনেই ভিন্ন কৌশলে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে ব্যবহার করছেন এরোপ্লেন আকৃতির কাগজ, প্রতীকী নোট, কাপ, বোতল, প্রজাপতি, জকসু পাসপোর্টসহ নানা অভিনব উপকরণ। আকর্ষণীয় স্লোগান ও রঙিন ডিজাইনের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে নির্বাচনী অঙ্গীকার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
প্রচারণায় প্রযুক্তির ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। কিউআর কোড সংযুক্ত প্রচারণা সামগ্রীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন স্ক্যান করে মুহূর্তেই প্রার্থীদের বিস্তারিত ইশতেহার ও পরিকল্পনা জানতে পারছেন।
ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। শুরু থেকেই আমরা জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো এবং তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যেই আমি ভিন্নধর্মী প্রচার কার্ড ব্যবহার করছি।’
ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদপ্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘লিফলেট দিয়ে প্রচার করার ফলে ভোটাররা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন, তাই এবার আমাদের অন্য রকম প্রচারণা। আমাদের বার্তাটি আকর্ষণীয়ভাবে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
স্বতন্ত্র নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী আল শাহরিয়ার খান বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং প্রচারসামগ্রী যেন সংরক্ষণযোগ্য হয়, এই চিন্তা থেকেই আমি বিড়ালের আদলে কার্ড তৈরি করেছি।’
ছাত্রশক্তি-সমর্থিত ‘নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে ইশতেহার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের সমস্যা ও প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করছি।’

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
দেশে অণুজীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টসের (বিএসএম)’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ড. মুনিরুল আলম।
১৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।
২০ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দিন পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা।
২ দিন আগেজবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দিন পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা।
‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় ৮৬০টি আসনের বিপরীতে ৭২ হাজর ৪৭৪ জন আবেদন করেছে। প্রতি আসনের জন্য ৮৫ জন পরীক্ষার্থী লড়বেন। আর ‘সি’ ইউনিটে (বাণিজ্য অনুষদ) ৫২০টি আসনের বিপরীতে ২০ হাজর ৫৩৭ জন আবেদন করেছে। বিজ্ঞান অনুষদে ৮৬০ আসনের বিপরীতে ৭২ হাজর ৪৭৪ জন আবেদন করেছে। প্রতি আসনের জন্য ৪০ জন শিক্ষার্থী লড়বেন।
‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকার বাহিরে তিনটি কেন্দ্র, কুমিল্লা বিশ্বিবদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হবে। ঢাকার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষা হবে। ঢাকার ভেতরের কেন্দ্র সমূহ হলো— জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কে এল জুবিলি হাই স্কুল এন্ড কলেজ, বিইএএম মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজ।
‘সি’ ইউনিটে (বাণিজ্য অনুষদ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকার মধ্যে বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গভর্মেন্ট মুসলিম হাই স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৷
মোট ১০০ মার্কের পরীক্ষায় ৭২ মার্ক এমসিকিউ ও বাকী ১৮ মার্ক থাকবে এসএসসি (সমমান) ও এইচএসসি (সমমান) ফলাফলের ওপর। ‘এ’ ইউনিটে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন গণিত অথবা জীব বিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। ‘সি’ ইউনিটে ইংরেজি, গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা ও হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ বিষয়ে প্রশ্ন আসবে।
পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বলেন, ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। এবার পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে এবার ঢাকার বাহিরে খুলনা, রাজশাহী ও কুমিল্লা পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা হয়েছে।
বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের ৫২০ আসনের বিপরীতে ২০ হাজার ৫৩৭ জন আবেদন করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকার মধ্যে আরও ৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার বাহিরে কোন কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে না।
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর ‘ই’ ইউনিটের (চারুকলা অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লখ্য, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ডি ইউনিটের পরীক্ষা আগামী ৯ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। কলা ও আইন অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের পরীক্ষা আগামী ৩০ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষের ‘এ’ ইউনিট (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ‘সি’ ইউনিটের (বাণিজ্য অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ও ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দিন পরীক্ষার সময় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা।
‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় ৮৬০টি আসনের বিপরীতে ৭২ হাজর ৪৭৪ জন আবেদন করেছে। প্রতি আসনের জন্য ৮৫ জন পরীক্ষার্থী লড়বেন। আর ‘সি’ ইউনিটে (বাণিজ্য অনুষদ) ৫২০টি আসনের বিপরীতে ২০ হাজর ৫৩৭ জন আবেদন করেছে। বিজ্ঞান অনুষদে ৮৬০ আসনের বিপরীতে ৭২ হাজর ৪৭৪ জন আবেদন করেছে। প্রতি আসনের জন্য ৪০ জন শিক্ষার্থী লড়বেন।
‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা মোট ১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকার বাহিরে তিনটি কেন্দ্র, কুমিল্লা বিশ্বিবদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হবে। ঢাকার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষা হবে। ঢাকার ভেতরের কেন্দ্র সমূহ হলো— জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কে এল জুবিলি হাই স্কুল এন্ড কলেজ, বিইএএম মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজ।
‘সি’ ইউনিটে (বাণিজ্য অনুষদ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকার মধ্যে বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গভর্মেন্ট মুসলিম হাই স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৷
মোট ১০০ মার্কের পরীক্ষায় ৭২ মার্ক এমসিকিউ ও বাকী ১৮ মার্ক থাকবে এসএসসি (সমমান) ও এইচএসসি (সমমান) ফলাফলের ওপর। ‘এ’ ইউনিটে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন গণিত অথবা জীব বিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। ‘সি’ ইউনিটে ইংরেজি, গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা ও হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ বিষয়ে প্রশ্ন আসবে।
পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বলেন, ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। এবার পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে এবার ঢাকার বাহিরে খুলনা, রাজশাহী ও কুমিল্লা পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা হয়েছে।
বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের ৫২০ আসনের বিপরীতে ২০ হাজার ৫৩৭ জন আবেদন করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকার মধ্যে আরও ৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার বাহিরে কোন কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে না।
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর ‘ই’ ইউনিটের (চারুকলা অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লখ্য, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ডি ইউনিটের পরীক্ষা আগামী ৯ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। কলা ও আইন অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের পরীক্ষা আগামী ৩০ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
দেশে অণুজীববিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্টসের (বিএসএম)’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি ড. মুনিরুল আলম।
১৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া।
২০ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রিক ও সৃজনশীল পদ্ধতি, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে
১ দিন আগে