Ajker Patrika

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসে পড়তে চাইলে

ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ১৯
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসে পড়তে চাইলে

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বা জনস্বাস্থ্য হচ্ছে এমন একটা বিজ্ঞান এবং শিল্প, যা ব্যক্তি, সম্প্রদায়, সমাজ, সংস্থা ও সমাজে বিরাজমান আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দীর্ঘায়িত সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। পাবলিক হেলথের বা জনস্বাস্থ্যের বিষয়বস্তু হচ্ছে, মানুষের রোগ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিরোধে পদ্ধতি-ব্যবস্থাপনার আবিষ্কার। 

পড়ার যোগ্যতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে হবে। এ বিষয়ে পড়ার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। এ ছাড়া উভয় পরীক্ষায় টোটাল জিপিএ সর্বনিম্ন ৯.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতে এ গ্রেড থাকতে হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এসব প্রোগ্রামে ভর্তি হতে মেডিকেল সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে অনার্স পাস হতে হবে। 

কোথায় পড়া যাবে
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস কোর্সটি ২০১১ সালে চালু হয়। এখানে স্নাতকের পাশাপাশি মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারির মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তবে বেশ কটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। এর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) থেকে এমবিবিএস ডাক্তাররা মাস্টার্স (এমপিএইচ) ডিগ্রি নিতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এমবিবিএস ডাক্তারদের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। 

যেসব কোর্সে পড়ানো হয় 
পাবলিক হেলথ একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। প্রোগ্রামটিতে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার কম্বিনেশন রয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি কোর্স রয়েছে। এর মধ্যে স্নাতক (বিপিএইচ) প্রোগ্রামে—ইন্ট্রোডাকশন টু পাবলিক হেলথ, বেসিক বায়োকেমিস্ট্রি, মেন্টাল হেলথ, হিউম্যান অ্যানাটমি, এপিডেমিওলজি, বায়োস্ট্যাটিস্টিকস, পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, অকুপেশনাল হেলথ, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, রিপ্রোডাকটিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন, গ্লোবাল হেলথ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ, ফুড সেফটি অ্যান্ড হেলথ ইত্যাদি কোর্স পড়ানো হয়। পাশাপাশি মাস্টার্স (এমপিএইচ) প্রোগ্রামে-অ্যাডভান্স এপিডেমিওলজি, সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ, বায়োইনফরমেটিকস, ট্রপিক্যাল ডিজেস, আরবান হেলথ, অ্যাডভান্স বায়োস্ট্যাটিস্টিকস, অ্যাডভান্স পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, অ্যাডভান্স এনভায়রনমেন্টাল হেলথ এবং গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ ইত্যাদি কোর্সে পড়ানো হয়। 

চাকরি বা কর্মসংস্থান কোথায়
পাবলিক হেলথে চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে অ্যাকাডেমিয়া, ইন্ডাস্ট্রি, রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সরকারি অফিসার, নন-গভার্নমেন্ট অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে। বেশ কিছু মাল্টিন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে জবের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশনের মধ্যে—আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, ডব্লিউএইচও, ইউএনএফপিএ, ইউএনডিপি, ইউএস ভলান্টিয়ার, এডিবি, ইউএনএআইডিএস, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়াটার এইড, ইউনিসেফ, জাইকা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানে বিশাল কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। এ ছাড়া হেলথ এডুকেশন, হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, কনসালট্যান্ট, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, এপিডেমিওলজিস্ট, স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। 

পড়ার খরচ 
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকসে স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ খুবই কম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রোগ্রামে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ২ থেকে ৮ লাখ টাকা গুনতে হতে পারে। তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি টাকা গুনতে হতে পারে। 

জনস্বাস্থ্যে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে পাবলিক হেলথ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি, যেমন—করোনা, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, জিকা, কলেরা, বসন্ত, মহামারি এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য, যেমন—বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ও গ্র্যাজুয়েটদের গুরুত্ব অপরিসীম। করোনা মহামারির পর পাবলিক হেলথের গুরুত্ব মানুষ বুঝতে পেরেছে। একটা মহামারি পুরো দেশ বা বিশ্বকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়। এই মহামারি থেকে জনগণকে সচেতন করা এবং রোগ থেকে রক্ষা করতে পাবলিক হেলথে গ্র্যাজুয়েটদের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। করোনা মহামারির সময় মানুষকে সচেতন ও শিক্ষাদানে পাবলিক হেলথ গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করেছেন। দেশে নানাবিধ রোগব্যাধির পাশাপাশি হেলথ সেক্টরে জটিলতা রয়েছে। তাই পাবলিক হেলথে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজন আছে। বর্তমানে আমাদের হেলথ সেক্টরটগুলো ক্লিনিক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তাই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। তারা প্রতিটি কমিউনিটিতে কাজ করতে পারলে সবার স্বাস্থ্যগত দিকের উন্নতি হবে। এ ছাড়া হেলথ সেক্টরের পলিসি লেভেলে গ্র্যাজুয়েটদের গুরুত্ব অনেক বেশি।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক হেলথে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাবলিক হেলথের ওপর স্কুল রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনার্স (বিপিএইচ), মাস্টার্স (এমপিএইচ), এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামের ওপর বৃত্তি দিয়ে থাকে। পাবলিক হেলথে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রচুর বৃত্তি, অনুদান এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হয়। পাবলিক হেলথের ওপর ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ডেভিড এ. উইস্টোন হেলথ পলিসি স্কলারস প্রোগ্রাম, এনভায়রনমেন্টাল পাবলিক হেলথ স্কলারশিপ, জর্জিয়া হেলথ ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ, টেক্সাস মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, ট্রুমান স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি অব সান ফ্রান্সিসকো, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস পাবলিক হেলথ স্কলারশিপ ইত্যাদি বৃত্তি দেওয়া হয়। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হার্ভার্ড, জন হপকিন্স ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে গেছেন। 

ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

পরীক্ষা নিয়ে স্কুলে মুখোমুখি শিক্ষক-অভিভাবকেরা

  • পিরোজপুর, পাবনায় শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের সংঘর্ষ।
  • অনেক জায়গায় স্কুলের তালা ভেঙে পরীক্ষা নেন অভিভাবকেরা।
  • শিক্ষকনেতাদের বদলি। প্রতিবাদে আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জেরে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার নেছারাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জেরে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার নেছারাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন সহকারী শিক্ষকেরা। পরীক্ষা বন্ধ রাখায় শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলন করায় পিরোজপুর, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জামালপুর সদর, শেরপুরের শ্রীবরদী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যালয়ের তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন তাঁরা।

এদিকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও কোনো কাজ না হওয়ায় গতকাল শিক্ষকনেতা মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, খাইরুন নাহার লিপিসহ একাধিক শিক্ষককে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এ নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ও আন্দোলনের গতিপথ ঠিক করতে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষকনেতারা। গতকাল রাত ৯টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁদের বৈঠক চলছিল।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি রাত ৯টার দিকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছি, তাঁদের হয়রানি করার জন্য ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে। আমরা সার্বিক বিষয়ে বৈঠক করছি। আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।’

এদিকে চতুর্থ দিনের মতো গতকাল বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। তিন দফা দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মবিরতির কারণে দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন অভিভাবকেরা।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় পরীক্ষা না নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এক শিক্ষক। এ ছাড়াও অনেক জায়গায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে পরীক্ষার দায়িত্ব নিলেন অভিভাবকেরা।

বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে গতকাল পিরোজপুরের নেছারাবাদে উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে শিক্ষকেরা আন্দোলন করতে গেলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি করার জেরে পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় এক অভিভাবকের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন এক সহকারী শিক্ষক। রাজিব সরকার নামের ওই শিক্ষক বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান জানান, যৌক্তিক দাবিতে চলমান আন্দোলনে পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন রাজিব ও তাঁর সহকর্মীরা। অভিভাবক পরিচয়ের কিছু ব্যক্তি সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের মারধর করেন। এতে সহকারী শিক্ষক রাজিবের মাথা ফেটে গেছে। তাঁর মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।

এ ছাড়াও কোনো কোনো জায়গায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা তালা ভেঙে স্কুলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার ১৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র দু-তিনটি ছাড়া কোনোটিতেই হয়নি পরীক্ষা। গতকাল সকালে সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকদের পরীক্ষা নিতে বাধা দেন এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন স্কুলের কক্ষে তালা মেরে তাঁরা উপজেলা চত্বরে সমাবেশে যোগ দেন। উপজেলার ষাটমা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেন অভিভাবকেরা।

একইভাবে কুষ্টিয়া শহরতলির ১৮ নম্বর লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষার আয়োজন করেন। প্রশ্ন বিতরণ, খাতা সংগ্রহ, শৃঙ্খলা রক্ষা সবকিছুই সামলান তাঁরা। একপর্যায়ে অভিভাবকদের তীব্র চাপ ও বিক্ষোভের মুখে প্রায় এক ঘণ্টা পর বার্ষিক পরীক্ষা নিতে বাধ্য হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

জামালপুর সদর উপজেলার গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন অভিভাবকেরা। কোনো কোনো জায়গায় উপজেলা প্রশাসন এ কাজে সহযোগিতা করে।

জামালপুরের গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক রেনুকা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সারা বছরের পর এই বার্ষিক পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকি। যখন বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তখন সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এটা কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে? তাঁদের এই কর্মবিরতি অন্য সময়ও করতে পারতেন। তাই আমরা সব অভিভাবক মিলে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পে-কমিশনের সুপারিশ লাগবে। সেটিও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অপেক্ষা করা দরকার ছিল।’

দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন গত ৮ নভেম্বর। এই আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষকেরা। পরদিন ৯ নভেম্বর থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আন্দোলনের তৃতীয় দিন (১০ নভেম্বর) সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নির্ধারণের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা।

সরকারের এই আশ্বাসের পর নভেম্বরের শেষ নাগাদ সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় নতুন করে গত ৩০ নভেম্বর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাবিপ্রবির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন শুরু ৮ ডিসেম্বর

শিক্ষা ডেস্ক
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

গত রোববার (৩০ নভেম্বর) ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘এ-১’ (বিজ্ঞান) ইউনিটের আবেদন ফি ১ হাজার ২৫০, ‘এ-২’ (আর্কিটেকচার) ফি ১ হাজার ৪০০ এবং ‘বি’ (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) ইউনিটের আবেদন ফি ১ হাজার ২০০ টাকা।

২০২৪ অথবা ২০২৫ সালের এইচএসসি (সাধারণ বা কারিগরি) বা আলিমবা ডিপ্লোমা ইন কমার্স বা সমমান, ২০২২ অথবা ২০২৩ সালের এসএসসি (সাধারণ বা কারিগরি) বা দাখিল বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের প্রক্রিয়া শেষে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা, ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা ১৪ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদন করার নিয়ম, বিস্তারিত তথ্য, আবেদন ফি এবং জমা দেওয়ার পদ্ধতি ভর্তি-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট-এর ভর্তি নির্দেশিকায় পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকে ব্যবহৃত ১০টি ইংরেজি বাক্য: (পর্ব-১)

শিক্ষা ডেস্ক
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

ব্যাংকিং খাতে কাজ করতে আগ্রহীদের শুধু আর্থিক জ্ঞানই নয়, প্রয়োজনীয় ইংরেজি জানাও জরুরি। নিয়মিত ব্যবহৃত ইংরেজি জানা থাকলে গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়। গ্রাহকদেরও কিছু সাধারণ ব্যাংকিং ইংরেজি জানা থাকলে সুবিধা হয়। আজ থাকছে ব্যাংকে নিয়মিত ব্যবহৃত এমন ১০টি ইংরেজি বাক্য। চলুন শিখে নিই—

  • Welcome to our bank. – আমাদের ব্যাংকে স্বাগতম।
  • May I have your name, please?– দয়া করে আপনার নাম বলবেন?
  • How can I assist you? – কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
  • Please fill out this form. – দয়া করে এই ফরমটি পূরণ করুন।
  • Do you have an account with us? – আপনার আমাদের সঙ্গে কোনো অ্যাকাউন্ট আছে কি?
  • I would like to open a new account. – আমি একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে চাই।
  • What type of account would you like to open? – আপনি কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে চান?
  • I’d like a savings account, please.– সেভিংস অ্যাকাউন্ট, অনুগ্রহ করে।
  • I want to deposit money. – আমি টাকা জমা দিতে চাই।
  • How much would you like to deposit? – কত টাকা জমা দিতে চান?
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনের চংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়িত বৃত্তি

শিক্ষা ডেস্ক
চংকিং বিশ্ববিদ্যালয়, চীন। ছবি: সংগৃহীত
চংকিং বিশ্ববিদ্যালয়, চীন। ছবি: সংগৃহীত

চীনের সিকিউইউ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশটির চংকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। বৃত্তিটি ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রযোজ্য। চংকিং বিশ্ববিদ্যালয় চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ গবেষণাবান্ধব ও সমৃদ্ধ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ১৯২৯ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক ল্যাব-সুবিধা, আন্তর্জাতিক বিনিময় কর্মসূচি এবং বৈশ্বিক মানের গবেষণা সুযোগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বজুড়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে।

সুযোগ-সুবিধা

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিটি সম্পূর্ণ অর্থায়িত। বৃত্তিটিতে আবেদন করতে কোনো ফি লাগবে না। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে বিনা মূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এটা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বড় স্বস্তির বিষয়। জীবনযাপনের ব্যয় হিসেবে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের ৩ হাজার আর পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সাড়ে ৩ হাজার চায়নিজ ইউয়ান দেওয়া হবে।

আবেদনের যোগ্যতা

আবেদনকারীর অবশ্যই চীনের নাগরিকত্ব থাকা যাবে না। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। একাডেমিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে, মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে হলে আবেদনকারীর স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে এবং বয়স ৩৫ বছরের নিচে হতে হবে। আর পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য থাকতে হবে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৪০ বছর। ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রেও নির্ধারিত মানদণ্ড রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের প্রয়োজন অনুযায়ী পূরণ করতে হবে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

প্রথমে প্রয়োজন হবে ‘চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ অ্যাপলিকেশন ফরম, বিস্তারিত সিভি, নোটারাইজড করা সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট। সঙ্গে যুক্ত করতে হবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি), রিচার্জ প্রপোজাল এবং দুজন অধ্যাপকের পক্ষ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার। নন-ক্রিমিনাল সার্টিফিকেট, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ, ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্রসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

অধ্যয়নের ক্ষেত্রসমূহ

বিশ্ববিদ্যালয়টি ফ্যাকাল্টি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের অধীনে রয়েছে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে অর্থনীতি, ভাষা, সাংবাদিকতা, আইন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ বিস্তৃত বিষয়ের সমাহার। পাশাপাশি ফ্যাকাল্টি অব দ্য বিল্ড এনভায়রনমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য আর্কিটেকচার, আরবান প্ল্যানিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশবিজ্ঞান এবং রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্টের মতো পেশাদারি ক্ষেত্রের সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তিমুখী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধিশালী বিভিন্ন বিষয়।

আবেদন পদ্ধতি

আগ্রহী প্রার্থীরা ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের শেষ সময়: আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত