গোলাম ওয়াদুদ

বাবা-মায়ের অন্যতম চিন্তা থাকে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা নিয়ে। সন্তান জন্মের পর থেকেই তাকে পড়তে শেখানোটাকে অনেক বড় করে দেখেন বাবা-মা। কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
দেশে এখন প্রি-স্কুল ধারণা বেশ প্রসার পেয়েছে। বিশেষত শহুরে শিশুরা বেশ অল্প বয়সেই গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাচ্ছে। রোজ সকালে অভিভাবকের আঙুল ধরে বাচ্চাদের এমন স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য চোখ মেললেই নজরে পড়ে। সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বদলে প্লে, নার্সারি হয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়াটা এখন শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
যে অভিভাবকের হাত ধরে চার-সাড়ে চার বছরের শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে, সেই অভিভাবক হয়তো ছয় কি সাত বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তাহলে পড়াশোনা শুরুর মোক্ষম বয়স সম্পর্কিত ধারণা কি বদলে গেল? একটা বিতর্ক প্রায়ই উঠতে দেখা যায়—শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। কেউ বলেন, শৈশবেই গুরুত্ব সহকারে পড়তে শেখানোটা জরুরি। আবার কেউ বলেন, আগে শৈশবটা কাটাতে দিতে হবে। বাড়তি চাপ না দিয়ে শিশুকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিতে হবে। কখনো কখনো আবার অভিভাবকেরা শিশুর পড়াশোনা নিয়ে অহেতুক উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কি-না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কোনো সন্দেহ নেই যে লেখা, কথা, গাওয়া বা উচ্চ স্বরে পড়া আমাদের প্রাথমিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাবা-মা সন্তানকে শিশু অবস্থাতেই পড়তে উৎসাহিত করেন। শিশু হিসেবে তাদের সঙ্গে কতটা বেশি বা কম কথা বলা হয়, তা তার ভবিষ্যৎ শিক্ষা অর্জনের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
একটি শিশুর ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তাদের পরবর্তী সাফল্যের জন্য মুখ্য প্রভাবক হিসেবে বিবেচিত। তাই প্রি-স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগেই শিশুদের মৌলিক সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। শিশুরা যখন স্কুল শুরু করে, তখন সাক্ষরতা সব সময়ই একটি প্রধান মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সব শিশু লিখতে ও পড়তে পারে কি-না, তা নিশ্চিত করা এখন বেশি চাপের হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, মহামারির প্রভাবে ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের দক্ষতা অর্জনের ব্যবধান বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষা বৈষম্য।

অনেক দেশেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় চার বছর বয়স থেকে। কিছু অভিভাবক এই শিশুদের জন্য আবার অতিরিক্ত প্রাইভেট টিউটরিংয়ের ব্যবস্থাও করেন। তাড়াতাড়ি শুরু করলে শিশুরা শিক্ষাজীবনে দ্রুত এগিয়ে যাবে—এমন চিন্তা থেকেই এটি করা হয়। মূল লক্ষ্য—এ যুগের অস্ত্র ‘শিক্ষা’ দিয়ে সন্তান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ‘সশস্ত্র’ করে তোলা, যাতে সে প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারে।
কয়েক দশক আগের খেলাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করলেই এখনকার প্রবণতার সঙ্গে এর নীতিগত ফারাকটা বোঝা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে একটি আইন করে, যেখানে বলা হয় ‘কোনো শিশুকে পেছনে ফেলব না’। এই আইনের পর দেশটিতে শিশুদের তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে শিশুদের বয়স ৫-৬ বছর হলে তারা পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত কি-না, তা বুঝতে তাদের পরীক্ষা করা হয়। এই নিয়মের প্রবক্তাদের ভাষ্য, কোন শিশুর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, তা এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করা যায়। এর সমালোচনাও আছে। সমালোচকদের বক্তব্য, এই পদ্ধতি কিছু শিশুর পড়া বন্ধ করে দিতে পারে।
যা হোক, কিছু গবেষণা বলছে তাড়াতাড়ি অ্যাকাডেমিক পরিবেশে প্রবেশ শিশুদের কিছু সুবিধা দেয়। ২০১৫ সালে একটি মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের কী জানা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সমাজের প্রত্যাশায় পরিবর্তন হয়েছে। তারা খেলাভিত্তিক শিক্ষার বদলে উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষেই শিশুদের পাঠাতে বেশি আগ্রহী।
তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে পাঠানোর ঝুঁকি
শিশুরা কী এবং কীভাবে শেখে, তা নির্ভর করে শিক্ষার পরিবেশের ওপর। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষার অধ্যাপক ডমিনিক ওয়াইস বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো শিশুদের পড়তে শেখা। এটি শিশুদের জীবনে অগ্রগতির জন্য মৌলিক বিষয়।’ডমিনিক ওয়াইস সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালিস ব্র্যাডবারির সঙ্গে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে শিশুদের সাক্ষরতা শেখাই, তা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
২০২২ সালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইংরেজি স্কুল সিস্টেমে ধ্বনির ওপর যে মনোযোগ দেওয়া হয়, তাতে কিছু বাচ্চা ব্যর্থ হতে পারে। এর কারণ হিসেবে ব্র্যাডবারি বলছেন, তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর ফলে অ্যাকাডেমিক শিক্ষার দিকে ঝোঁক বেড়ে গেছে। কিন্তু শিশুদের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রাথমিক শিক্ষার বই বা অন্যান্য পাঠ্যবইগুলো পড়া বা উপভোগ করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, সেটা খুবই কম হচ্ছে।
কীভাবে পড়া শেখা উচিত, সে বিষয়ে ডমিনিক ওয়াইস বা ব্র্যাডবারি—কেউই আলোকপাত করেননি। বরং শিশুদের যেভাবে সাক্ষরতা শেখানো হয়, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, ‘গল্পের বই, গান ও কবিতা ব্যবহার করে শব্দের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত ও আগ্রহী করায় উৎসাহিত করা উচিত। এগুলো শিশুকে শব্দ উচ্চারণ করতে, সেই সঙ্গে শব্দভান্ডার প্রসারিত করতে সহায়তা করে।’
প্রি-স্কুলে যোগদান শিশুদের জীবনের পরবর্তী অর্জনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি অ্যাকাডেমিক দক্ষতার ক্ষেত্রে তেমন প্রয়োজনীয় নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং এটি অত্যধিক অ্যাকাডেমিক চাপ, এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলেও অনেক গবেষক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে এর স্বপক্ষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা অ্যাকাডেমিকভাবে জোর দিয়ে প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, তারা কয়েক বছর পর খুব কম অ্যাকাডেমিক কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অন্যদিকে যারা প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়নি বা হতে পারেনি, তারা তাদের চেয়ে ভালো করেছিল।
শিশুকালে খেলাভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্বের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, খেলাভিত্তিক প্রি-স্কুলগুলো অ্যাকাডেমিকভাবে পরিচালিত প্রি-স্কুলগুলোর চেয়ে ভালো ফলাফল করছে। চলতি বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের সামগ্রিক স্কুলজীবনের সাফল্য তাদের প্রাথমিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা ওপর নির্ভর করে। সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয়, শিশুদের খুব তাড়াতাড়ি প্রি-স্কুলে ভর্তি করাটা আসলেই সমস্যার হতে পারে।
পরে শুরু, ভালো ফলাফল
দেখা যাচ্ছে শিশুশিক্ষা সবাই তাড়াতাড়ি শুরুর পক্ষে নন। জার্মানি, ইরান, জাপানসহ অনেক দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় ছয় বছরের দিকে। ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে সমাদৃত। সেখানে শিশুরা সাত বছর বয়সে স্কুল শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের থেকে পড়া বোঝার দিক দিয়ে বেশি স্কোর করে। ফিনল্যান্ডের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে খেলা ও কিছু আনুষ্ঠানিক অ্যাকাডেমিক নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়।
২০০৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পর্যালোচনা প্রস্তাব করে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুল শুরুর বয়স ছয় বছর হওয়া উচিত বলে মত দেওয়া হয়। বলা হয়, তাড়াতাড়ি স্কুলে দিলে পাঁচ বছরের শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। তারা শেখার দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে শিশুরা আগে যে বয়সে ভর্তি হতো, তার চেয়ে এক বছর দেরিতে ভর্তি হওয়ায় তাদের পরীক্ষায় নম্বরের উন্নতি হয়েছে।
তাড়াতাড়ি শুরু করা ও দেরিতে শুরু করা শিশুদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে, যারা তাড়াতাড়ি শুরু করেছে, তারা দেরিতে শুরু করা শিশুদের থেকে পড়া এবং তা বোঝার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জার্মানির রেজেনসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক সেবাস্টিয়ান সুগেট বিবিসিকে বলেন, দেরিতে শেখার ফলে তারা যা শিখছে, তার সঙ্গে তাদের জ্ঞান, বোধগম্যতাকে মিলিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি ভাষায় মনোযোগ দিতে বেশি সময় ব্যয় করেন, তবে আসলে আপনি দক্ষতার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছেন, যার বিকাশ ঘটতে কয়েক বছর সময় লাগে। পড়া দ্রুত বাছাই করা যেতে পারে। কিন্তু ভাষার জন্য কোনো সস্তা কৌশল নেই। এটার জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম।’
তাই প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি তাড়াতাড়ি শেখার মাধ্যমে পড়ার ক্ষমতা উন্নত না হয়, তবে তাড়াতাড়ি শুরু করা কেন? মূল লক্ষ্য যদি হয় শিশুকে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা, তবে তার জন্য যেটা ভালো, সে পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত। শিশুর সাক্ষরতার জন্য তাড়াহুড়ো না করে, তার প্রবণতার দিকে তাকানোটাই জরুরি। শিশু যদি অল্প বয়সেই পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে, তবে তার সে আগ্রহকে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। বিপরীতে তেমন আগ্রহ যদি তার ভেতরে দেখা না যায়, তবে তাকে ধরেবেঁধে পড়ার জগতে না ঢুকিয়ে অপেক্ষা করাটাই ভালো। যেহেতু দ্রুত পাঠ শুরুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পড়াশোনায় সুফল পাওয়ার তেমন প্রমাণ হাত নেই।

বাবা-মায়ের অন্যতম চিন্তা থাকে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা নিয়ে। সন্তান জন্মের পর থেকেই তাকে পড়তে শেখানোটাকে অনেক বড় করে দেখেন বাবা-মা। কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
দেশে এখন প্রি-স্কুল ধারণা বেশ প্রসার পেয়েছে। বিশেষত শহুরে শিশুরা বেশ অল্প বয়সেই গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাচ্ছে। রোজ সকালে অভিভাবকের আঙুল ধরে বাচ্চাদের এমন স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য চোখ মেললেই নজরে পড়ে। সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বদলে প্লে, নার্সারি হয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়াটা এখন শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
যে অভিভাবকের হাত ধরে চার-সাড়ে চার বছরের শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে, সেই অভিভাবক হয়তো ছয় কি সাত বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তাহলে পড়াশোনা শুরুর মোক্ষম বয়স সম্পর্কিত ধারণা কি বদলে গেল? একটা বিতর্ক প্রায়ই উঠতে দেখা যায়—শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। কেউ বলেন, শৈশবেই গুরুত্ব সহকারে পড়তে শেখানোটা জরুরি। আবার কেউ বলেন, আগে শৈশবটা কাটাতে দিতে হবে। বাড়তি চাপ না দিয়ে শিশুকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিতে হবে। কখনো কখনো আবার অভিভাবকেরা শিশুর পড়াশোনা নিয়ে অহেতুক উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কি-না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কোনো সন্দেহ নেই যে লেখা, কথা, গাওয়া বা উচ্চ স্বরে পড়া আমাদের প্রাথমিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাবা-মা সন্তানকে শিশু অবস্থাতেই পড়তে উৎসাহিত করেন। শিশু হিসেবে তাদের সঙ্গে কতটা বেশি বা কম কথা বলা হয়, তা তার ভবিষ্যৎ শিক্ষা অর্জনের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
একটি শিশুর ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তাদের পরবর্তী সাফল্যের জন্য মুখ্য প্রভাবক হিসেবে বিবেচিত। তাই প্রি-স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগেই শিশুদের মৌলিক সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। শিশুরা যখন স্কুল শুরু করে, তখন সাক্ষরতা সব সময়ই একটি প্রধান মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সব শিশু লিখতে ও পড়তে পারে কি-না, তা নিশ্চিত করা এখন বেশি চাপের হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, মহামারির প্রভাবে ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের দক্ষতা অর্জনের ব্যবধান বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষা বৈষম্য।

অনেক দেশেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় চার বছর বয়স থেকে। কিছু অভিভাবক এই শিশুদের জন্য আবার অতিরিক্ত প্রাইভেট টিউটরিংয়ের ব্যবস্থাও করেন। তাড়াতাড়ি শুরু করলে শিশুরা শিক্ষাজীবনে দ্রুত এগিয়ে যাবে—এমন চিন্তা থেকেই এটি করা হয়। মূল লক্ষ্য—এ যুগের অস্ত্র ‘শিক্ষা’ দিয়ে সন্তান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ‘সশস্ত্র’ করে তোলা, যাতে সে প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারে।
কয়েক দশক আগের খেলাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করলেই এখনকার প্রবণতার সঙ্গে এর নীতিগত ফারাকটা বোঝা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে একটি আইন করে, যেখানে বলা হয় ‘কোনো শিশুকে পেছনে ফেলব না’। এই আইনের পর দেশটিতে শিশুদের তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে শিশুদের বয়স ৫-৬ বছর হলে তারা পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত কি-না, তা বুঝতে তাদের পরীক্ষা করা হয়। এই নিয়মের প্রবক্তাদের ভাষ্য, কোন শিশুর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, তা এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করা যায়। এর সমালোচনাও আছে। সমালোচকদের বক্তব্য, এই পদ্ধতি কিছু শিশুর পড়া বন্ধ করে দিতে পারে।
যা হোক, কিছু গবেষণা বলছে তাড়াতাড়ি অ্যাকাডেমিক পরিবেশে প্রবেশ শিশুদের কিছু সুবিধা দেয়। ২০১৫ সালে একটি মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের কী জানা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সমাজের প্রত্যাশায় পরিবর্তন হয়েছে। তারা খেলাভিত্তিক শিক্ষার বদলে উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষেই শিশুদের পাঠাতে বেশি আগ্রহী।
তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে পাঠানোর ঝুঁকি
শিশুরা কী এবং কীভাবে শেখে, তা নির্ভর করে শিক্ষার পরিবেশের ওপর। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষার অধ্যাপক ডমিনিক ওয়াইস বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো শিশুদের পড়তে শেখা। এটি শিশুদের জীবনে অগ্রগতির জন্য মৌলিক বিষয়।’ডমিনিক ওয়াইস সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালিস ব্র্যাডবারির সঙ্গে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে শিশুদের সাক্ষরতা শেখাই, তা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
২০২২ সালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইংরেজি স্কুল সিস্টেমে ধ্বনির ওপর যে মনোযোগ দেওয়া হয়, তাতে কিছু বাচ্চা ব্যর্থ হতে পারে। এর কারণ হিসেবে ব্র্যাডবারি বলছেন, তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর ফলে অ্যাকাডেমিক শিক্ষার দিকে ঝোঁক বেড়ে গেছে। কিন্তু শিশুদের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রাথমিক শিক্ষার বই বা অন্যান্য পাঠ্যবইগুলো পড়া বা উপভোগ করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, সেটা খুবই কম হচ্ছে।
কীভাবে পড়া শেখা উচিত, সে বিষয়ে ডমিনিক ওয়াইস বা ব্র্যাডবারি—কেউই আলোকপাত করেননি। বরং শিশুদের যেভাবে সাক্ষরতা শেখানো হয়, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, ‘গল্পের বই, গান ও কবিতা ব্যবহার করে শব্দের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত ও আগ্রহী করায় উৎসাহিত করা উচিত। এগুলো শিশুকে শব্দ উচ্চারণ করতে, সেই সঙ্গে শব্দভান্ডার প্রসারিত করতে সহায়তা করে।’
প্রি-স্কুলে যোগদান শিশুদের জীবনের পরবর্তী অর্জনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি অ্যাকাডেমিক দক্ষতার ক্ষেত্রে তেমন প্রয়োজনীয় নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং এটি অত্যধিক অ্যাকাডেমিক চাপ, এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলেও অনেক গবেষক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে এর স্বপক্ষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা অ্যাকাডেমিকভাবে জোর দিয়ে প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, তারা কয়েক বছর পর খুব কম অ্যাকাডেমিক কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অন্যদিকে যারা প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়নি বা হতে পারেনি, তারা তাদের চেয়ে ভালো করেছিল।
শিশুকালে খেলাভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্বের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, খেলাভিত্তিক প্রি-স্কুলগুলো অ্যাকাডেমিকভাবে পরিচালিত প্রি-স্কুলগুলোর চেয়ে ভালো ফলাফল করছে। চলতি বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের সামগ্রিক স্কুলজীবনের সাফল্য তাদের প্রাথমিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা ওপর নির্ভর করে। সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয়, শিশুদের খুব তাড়াতাড়ি প্রি-স্কুলে ভর্তি করাটা আসলেই সমস্যার হতে পারে।
পরে শুরু, ভালো ফলাফল
দেখা যাচ্ছে শিশুশিক্ষা সবাই তাড়াতাড়ি শুরুর পক্ষে নন। জার্মানি, ইরান, জাপানসহ অনেক দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় ছয় বছরের দিকে। ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে সমাদৃত। সেখানে শিশুরা সাত বছর বয়সে স্কুল শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের থেকে পড়া বোঝার দিক দিয়ে বেশি স্কোর করে। ফিনল্যান্ডের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে খেলা ও কিছু আনুষ্ঠানিক অ্যাকাডেমিক নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়।
২০০৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পর্যালোচনা প্রস্তাব করে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুল শুরুর বয়স ছয় বছর হওয়া উচিত বলে মত দেওয়া হয়। বলা হয়, তাড়াতাড়ি স্কুলে দিলে পাঁচ বছরের শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। তারা শেখার দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে শিশুরা আগে যে বয়সে ভর্তি হতো, তার চেয়ে এক বছর দেরিতে ভর্তি হওয়ায় তাদের পরীক্ষায় নম্বরের উন্নতি হয়েছে।
তাড়াতাড়ি শুরু করা ও দেরিতে শুরু করা শিশুদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে, যারা তাড়াতাড়ি শুরু করেছে, তারা দেরিতে শুরু করা শিশুদের থেকে পড়া এবং তা বোঝার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জার্মানির রেজেনসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক সেবাস্টিয়ান সুগেট বিবিসিকে বলেন, দেরিতে শেখার ফলে তারা যা শিখছে, তার সঙ্গে তাদের জ্ঞান, বোধগম্যতাকে মিলিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি ভাষায় মনোযোগ দিতে বেশি সময় ব্যয় করেন, তবে আসলে আপনি দক্ষতার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছেন, যার বিকাশ ঘটতে কয়েক বছর সময় লাগে। পড়া দ্রুত বাছাই করা যেতে পারে। কিন্তু ভাষার জন্য কোনো সস্তা কৌশল নেই। এটার জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম।’
তাই প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি তাড়াতাড়ি শেখার মাধ্যমে পড়ার ক্ষমতা উন্নত না হয়, তবে তাড়াতাড়ি শুরু করা কেন? মূল লক্ষ্য যদি হয় শিশুকে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা, তবে তার জন্য যেটা ভালো, সে পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত। শিশুর সাক্ষরতার জন্য তাড়াহুড়ো না করে, তার প্রবণতার দিকে তাকানোটাই জরুরি। শিশু যদি অল্প বয়সেই পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে, তবে তার সে আগ্রহকে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। বিপরীতে তেমন আগ্রহ যদি তার ভেতরে দেখা না যায়, তবে তাকে ধরেবেঁধে পড়ার জগতে না ঢুকিয়ে অপেক্ষা করাটাই ভালো। যেহেতু দ্রুত পাঠ শুরুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পড়াশোনায় সুফল পাওয়ার তেমন প্রমাণ হাত নেই।
গোলাম ওয়াদুদ

বাবা-মায়ের অন্যতম চিন্তা থাকে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা নিয়ে। সন্তান জন্মের পর থেকেই তাকে পড়তে শেখানোটাকে অনেক বড় করে দেখেন বাবা-মা। কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
দেশে এখন প্রি-স্কুল ধারণা বেশ প্রসার পেয়েছে। বিশেষত শহুরে শিশুরা বেশ অল্প বয়সেই গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাচ্ছে। রোজ সকালে অভিভাবকের আঙুল ধরে বাচ্চাদের এমন স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য চোখ মেললেই নজরে পড়ে। সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বদলে প্লে, নার্সারি হয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়াটা এখন শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
যে অভিভাবকের হাত ধরে চার-সাড়ে চার বছরের শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে, সেই অভিভাবক হয়তো ছয় কি সাত বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তাহলে পড়াশোনা শুরুর মোক্ষম বয়স সম্পর্কিত ধারণা কি বদলে গেল? একটা বিতর্ক প্রায়ই উঠতে দেখা যায়—শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। কেউ বলেন, শৈশবেই গুরুত্ব সহকারে পড়তে শেখানোটা জরুরি। আবার কেউ বলেন, আগে শৈশবটা কাটাতে দিতে হবে। বাড়তি চাপ না দিয়ে শিশুকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিতে হবে। কখনো কখনো আবার অভিভাবকেরা শিশুর পড়াশোনা নিয়ে অহেতুক উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কি-না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কোনো সন্দেহ নেই যে লেখা, কথা, গাওয়া বা উচ্চ স্বরে পড়া আমাদের প্রাথমিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাবা-মা সন্তানকে শিশু অবস্থাতেই পড়তে উৎসাহিত করেন। শিশু হিসেবে তাদের সঙ্গে কতটা বেশি বা কম কথা বলা হয়, তা তার ভবিষ্যৎ শিক্ষা অর্জনের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
একটি শিশুর ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তাদের পরবর্তী সাফল্যের জন্য মুখ্য প্রভাবক হিসেবে বিবেচিত। তাই প্রি-স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগেই শিশুদের মৌলিক সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। শিশুরা যখন স্কুল শুরু করে, তখন সাক্ষরতা সব সময়ই একটি প্রধান মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সব শিশু লিখতে ও পড়তে পারে কি-না, তা নিশ্চিত করা এখন বেশি চাপের হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, মহামারির প্রভাবে ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের দক্ষতা অর্জনের ব্যবধান বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষা বৈষম্য।

অনেক দেশেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় চার বছর বয়স থেকে। কিছু অভিভাবক এই শিশুদের জন্য আবার অতিরিক্ত প্রাইভেট টিউটরিংয়ের ব্যবস্থাও করেন। তাড়াতাড়ি শুরু করলে শিশুরা শিক্ষাজীবনে দ্রুত এগিয়ে যাবে—এমন চিন্তা থেকেই এটি করা হয়। মূল লক্ষ্য—এ যুগের অস্ত্র ‘শিক্ষা’ দিয়ে সন্তান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ‘সশস্ত্র’ করে তোলা, যাতে সে প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারে।
কয়েক দশক আগের খেলাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করলেই এখনকার প্রবণতার সঙ্গে এর নীতিগত ফারাকটা বোঝা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে একটি আইন করে, যেখানে বলা হয় ‘কোনো শিশুকে পেছনে ফেলব না’। এই আইনের পর দেশটিতে শিশুদের তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে শিশুদের বয়স ৫-৬ বছর হলে তারা পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত কি-না, তা বুঝতে তাদের পরীক্ষা করা হয়। এই নিয়মের প্রবক্তাদের ভাষ্য, কোন শিশুর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, তা এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করা যায়। এর সমালোচনাও আছে। সমালোচকদের বক্তব্য, এই পদ্ধতি কিছু শিশুর পড়া বন্ধ করে দিতে পারে।
যা হোক, কিছু গবেষণা বলছে তাড়াতাড়ি অ্যাকাডেমিক পরিবেশে প্রবেশ শিশুদের কিছু সুবিধা দেয়। ২০১৫ সালে একটি মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের কী জানা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সমাজের প্রত্যাশায় পরিবর্তন হয়েছে। তারা খেলাভিত্তিক শিক্ষার বদলে উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষেই শিশুদের পাঠাতে বেশি আগ্রহী।
তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে পাঠানোর ঝুঁকি
শিশুরা কী এবং কীভাবে শেখে, তা নির্ভর করে শিক্ষার পরিবেশের ওপর। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষার অধ্যাপক ডমিনিক ওয়াইস বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো শিশুদের পড়তে শেখা। এটি শিশুদের জীবনে অগ্রগতির জন্য মৌলিক বিষয়।’ডমিনিক ওয়াইস সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালিস ব্র্যাডবারির সঙ্গে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে শিশুদের সাক্ষরতা শেখাই, তা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
২০২২ সালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইংরেজি স্কুল সিস্টেমে ধ্বনির ওপর যে মনোযোগ দেওয়া হয়, তাতে কিছু বাচ্চা ব্যর্থ হতে পারে। এর কারণ হিসেবে ব্র্যাডবারি বলছেন, তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর ফলে অ্যাকাডেমিক শিক্ষার দিকে ঝোঁক বেড়ে গেছে। কিন্তু শিশুদের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রাথমিক শিক্ষার বই বা অন্যান্য পাঠ্যবইগুলো পড়া বা উপভোগ করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, সেটা খুবই কম হচ্ছে।
কীভাবে পড়া শেখা উচিত, সে বিষয়ে ডমিনিক ওয়াইস বা ব্র্যাডবারি—কেউই আলোকপাত করেননি। বরং শিশুদের যেভাবে সাক্ষরতা শেখানো হয়, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, ‘গল্পের বই, গান ও কবিতা ব্যবহার করে শব্দের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত ও আগ্রহী করায় উৎসাহিত করা উচিত। এগুলো শিশুকে শব্দ উচ্চারণ করতে, সেই সঙ্গে শব্দভান্ডার প্রসারিত করতে সহায়তা করে।’
প্রি-স্কুলে যোগদান শিশুদের জীবনের পরবর্তী অর্জনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি অ্যাকাডেমিক দক্ষতার ক্ষেত্রে তেমন প্রয়োজনীয় নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং এটি অত্যধিক অ্যাকাডেমিক চাপ, এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলেও অনেক গবেষক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে এর স্বপক্ষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা অ্যাকাডেমিকভাবে জোর দিয়ে প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, তারা কয়েক বছর পর খুব কম অ্যাকাডেমিক কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অন্যদিকে যারা প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়নি বা হতে পারেনি, তারা তাদের চেয়ে ভালো করেছিল।
শিশুকালে খেলাভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্বের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, খেলাভিত্তিক প্রি-স্কুলগুলো অ্যাকাডেমিকভাবে পরিচালিত প্রি-স্কুলগুলোর চেয়ে ভালো ফলাফল করছে। চলতি বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের সামগ্রিক স্কুলজীবনের সাফল্য তাদের প্রাথমিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা ওপর নির্ভর করে। সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয়, শিশুদের খুব তাড়াতাড়ি প্রি-স্কুলে ভর্তি করাটা আসলেই সমস্যার হতে পারে।
পরে শুরু, ভালো ফলাফল
দেখা যাচ্ছে শিশুশিক্ষা সবাই তাড়াতাড়ি শুরুর পক্ষে নন। জার্মানি, ইরান, জাপানসহ অনেক দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় ছয় বছরের দিকে। ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে সমাদৃত। সেখানে শিশুরা সাত বছর বয়সে স্কুল শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের থেকে পড়া বোঝার দিক দিয়ে বেশি স্কোর করে। ফিনল্যান্ডের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে খেলা ও কিছু আনুষ্ঠানিক অ্যাকাডেমিক নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়।
২০০৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পর্যালোচনা প্রস্তাব করে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুল শুরুর বয়স ছয় বছর হওয়া উচিত বলে মত দেওয়া হয়। বলা হয়, তাড়াতাড়ি স্কুলে দিলে পাঁচ বছরের শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। তারা শেখার দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে শিশুরা আগে যে বয়সে ভর্তি হতো, তার চেয়ে এক বছর দেরিতে ভর্তি হওয়ায় তাদের পরীক্ষায় নম্বরের উন্নতি হয়েছে।
তাড়াতাড়ি শুরু করা ও দেরিতে শুরু করা শিশুদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে, যারা তাড়াতাড়ি শুরু করেছে, তারা দেরিতে শুরু করা শিশুদের থেকে পড়া এবং তা বোঝার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জার্মানির রেজেনসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক সেবাস্টিয়ান সুগেট বিবিসিকে বলেন, দেরিতে শেখার ফলে তারা যা শিখছে, তার সঙ্গে তাদের জ্ঞান, বোধগম্যতাকে মিলিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি ভাষায় মনোযোগ দিতে বেশি সময় ব্যয় করেন, তবে আসলে আপনি দক্ষতার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছেন, যার বিকাশ ঘটতে কয়েক বছর সময় লাগে। পড়া দ্রুত বাছাই করা যেতে পারে। কিন্তু ভাষার জন্য কোনো সস্তা কৌশল নেই। এটার জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম।’
তাই প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি তাড়াতাড়ি শেখার মাধ্যমে পড়ার ক্ষমতা উন্নত না হয়, তবে তাড়াতাড়ি শুরু করা কেন? মূল লক্ষ্য যদি হয় শিশুকে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা, তবে তার জন্য যেটা ভালো, সে পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত। শিশুর সাক্ষরতার জন্য তাড়াহুড়ো না করে, তার প্রবণতার দিকে তাকানোটাই জরুরি। শিশু যদি অল্প বয়সেই পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে, তবে তার সে আগ্রহকে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। বিপরীতে তেমন আগ্রহ যদি তার ভেতরে দেখা না যায়, তবে তাকে ধরেবেঁধে পড়ার জগতে না ঢুকিয়ে অপেক্ষা করাটাই ভালো। যেহেতু দ্রুত পাঠ শুরুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পড়াশোনায় সুফল পাওয়ার তেমন প্রমাণ হাত নেই।

বাবা-মায়ের অন্যতম চিন্তা থাকে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা নিয়ে। সন্তান জন্মের পর থেকেই তাকে পড়তে শেখানোটাকে অনেক বড় করে দেখেন বাবা-মা। কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
দেশে এখন প্রি-স্কুল ধারণা বেশ প্রসার পেয়েছে। বিশেষত শহুরে শিশুরা বেশ অল্প বয়সেই গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাচ্ছে। রোজ সকালে অভিভাবকের আঙুল ধরে বাচ্চাদের এমন স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য চোখ মেললেই নজরে পড়ে। সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বদলে প্লে, নার্সারি হয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়াটা এখন শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
যে অভিভাবকের হাত ধরে চার-সাড়ে চার বছরের শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে, সেই অভিভাবক হয়তো ছয় কি সাত বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। তাহলে পড়াশোনা শুরুর মোক্ষম বয়স সম্পর্কিত ধারণা কি বদলে গেল? একটা বিতর্ক প্রায়ই উঠতে দেখা যায়—শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। কেউ বলেন, শৈশবেই গুরুত্ব সহকারে পড়তে শেখানোটা জরুরি। আবার কেউ বলেন, আগে শৈশবটা কাটাতে দিতে হবে। বাড়তি চাপ না দিয়ে শিশুকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিতে হবে। কখনো কখনো আবার অভিভাবকেরা শিশুর পড়াশোনা নিয়ে অহেতুক উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কি-না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কোনো সন্দেহ নেই যে লেখা, কথা, গাওয়া বা উচ্চ স্বরে পড়া আমাদের প্রাথমিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাবা-মা সন্তানকে শিশু অবস্থাতেই পড়তে উৎসাহিত করেন। শিশু হিসেবে তাদের সঙ্গে কতটা বেশি বা কম কথা বলা হয়, তা তার ভবিষ্যৎ শিক্ষা অর্জনের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
একটি শিশুর ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা তাদের পরবর্তী সাফল্যের জন্য মুখ্য প্রভাবক হিসেবে বিবেচিত। তাই প্রি-স্কুলগুলোতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরুর আগেই শিশুদের মৌলিক সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। শিশুরা যখন স্কুল শুরু করে, তখন সাক্ষরতা সব সময়ই একটি প্রধান মনোযোগের বিষয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সব শিশু লিখতে ও পড়তে পারে কি-না, তা নিশ্চিত করা এখন বেশি চাপের হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, মহামারির প্রভাবে ধনী ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের দক্ষতা অর্জনের ব্যবধান বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষা বৈষম্য।

অনেক দেশেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় চার বছর বয়স থেকে। কিছু অভিভাবক এই শিশুদের জন্য আবার অতিরিক্ত প্রাইভেট টিউটরিংয়ের ব্যবস্থাও করেন। তাড়াতাড়ি শুরু করলে শিশুরা শিক্ষাজীবনে দ্রুত এগিয়ে যাবে—এমন চিন্তা থেকেই এটি করা হয়। মূল লক্ষ্য—এ যুগের অস্ত্র ‘শিক্ষা’ দিয়ে সন্তান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ‘সশস্ত্র’ করে তোলা, যাতে সে প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারে।
কয়েক দশক আগের খেলাভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করলেই এখনকার প্রবণতার সঙ্গে এর নীতিগত ফারাকটা বোঝা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে একটি আইন করে, যেখানে বলা হয় ‘কোনো শিশুকে পেছনে ফেলব না’। এই আইনের পর দেশটিতে শিশুদের তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে শিশুদের বয়স ৫-৬ বছর হলে তারা পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত কি-না, তা বুঝতে তাদের পরীক্ষা করা হয়। এই নিয়মের প্রবক্তাদের ভাষ্য, কোন শিশুর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, তা এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করা যায়। এর সমালোচনাও আছে। সমালোচকদের বক্তব্য, এই পদ্ধতি কিছু শিশুর পড়া বন্ধ করে দিতে পারে।
যা হোক, কিছু গবেষণা বলছে তাড়াতাড়ি অ্যাকাডেমিক পরিবেশে প্রবেশ শিশুদের কিছু সুবিধা দেয়। ২০১৫ সালে একটি মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের কী জানা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সমাজের প্রত্যাশায় পরিবর্তন হয়েছে। তারা খেলাভিত্তিক শিক্ষার বদলে উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষেই শিশুদের পাঠাতে বেশি আগ্রহী।
তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে পাঠানোর ঝুঁকি
শিশুরা কী এবং কীভাবে শেখে, তা নির্ভর করে শিক্ষার পরিবেশের ওপর। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রাথমিক শিক্ষার অধ্যাপক ডমিনিক ওয়াইস বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো শিশুদের পড়তে শেখা। এটি শিশুদের জীবনে অগ্রগতির জন্য মৌলিক বিষয়।’ডমিনিক ওয়াইস সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালিস ব্র্যাডবারির সঙ্গে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেভাবে শিশুদের সাক্ষরতা শেখাই, তা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
২০২২ সালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইংরেজি স্কুল সিস্টেমে ধ্বনির ওপর যে মনোযোগ দেওয়া হয়, তাতে কিছু বাচ্চা ব্যর্থ হতে পারে। এর কারণ হিসেবে ব্র্যাডবারি বলছেন, তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠানোর ফলে অ্যাকাডেমিক শিক্ষার দিকে ঝোঁক বেড়ে গেছে। কিন্তু শিশুদের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রাথমিক শিক্ষার বই বা অন্যান্য পাঠ্যবইগুলো পড়া বা উপভোগ করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, সেটা খুবই কম হচ্ছে।
কীভাবে পড়া শেখা উচিত, সে বিষয়ে ডমিনিক ওয়াইস বা ব্র্যাডবারি—কেউই আলোকপাত করেননি। বরং শিশুদের যেভাবে সাক্ষরতা শেখানো হয়, সেটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, ‘গল্পের বই, গান ও কবিতা ব্যবহার করে শব্দের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত ও আগ্রহী করায় উৎসাহিত করা উচিত। এগুলো শিশুকে শব্দ উচ্চারণ করতে, সেই সঙ্গে শব্দভান্ডার প্রসারিত করতে সহায়তা করে।’
প্রি-স্কুলে যোগদান শিশুদের জীবনের পরবর্তী অর্জনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি অ্যাকাডেমিক দক্ষতার ক্ষেত্রে তেমন প্রয়োজনীয় নয় বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং এটি অত্যধিক অ্যাকাডেমিক চাপ, এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলেও অনেক গবেষক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে এর স্বপক্ষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পরিচালিত এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা অ্যাকাডেমিকভাবে জোর দিয়ে প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, তারা কয়েক বছর পর খুব কম অ্যাকাডেমিক কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অন্যদিকে যারা প্রি-স্কুলে ভর্তি হয়নি বা হতে পারেনি, তারা তাদের চেয়ে ভালো করেছিল।
শিশুকালে খেলাভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্বের ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, খেলাভিত্তিক প্রি-স্কুলগুলো অ্যাকাডেমিকভাবে পরিচালিত প্রি-স্কুলগুলোর চেয়ে ভালো ফলাফল করছে। চলতি বছরের এক গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের সামগ্রিক স্কুলজীবনের সাফল্য তাদের প্রাথমিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা ওপর নির্ভর করে। সমীক্ষার উপসংহারে বলা হয়, শিশুদের খুব তাড়াতাড়ি প্রি-স্কুলে ভর্তি করাটা আসলেই সমস্যার হতে পারে।
পরে শুরু, ভালো ফলাফল
দেখা যাচ্ছে শিশুশিক্ষা সবাই তাড়াতাড়ি শুরুর পক্ষে নন। জার্মানি, ইরান, জাপানসহ অনেক দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে পড়াশোনা শুরু হয় ছয় বছরের দিকে। ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে সমাদৃত। সেখানে শিশুরা সাত বছর বয়সে স্কুল শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের থেকে পড়া বোঝার দিক দিয়ে বেশি স্কোর করে। ফিনল্যান্ডের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে খেলা ও কিছু আনুষ্ঠানিক অ্যাকাডেমিক নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়।
২০০৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একটি পর্যালোচনা প্রস্তাব করে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুল শুরুর বয়স ছয় বছর হওয়া উচিত বলে মত দেওয়া হয়। বলা হয়, তাড়াতাড়ি স্কুলে দিলে পাঁচ বছরের শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। তারা শেখার দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে শিশুরা আগে যে বয়সে ভর্তি হতো, তার চেয়ে এক বছর দেরিতে ভর্তি হওয়ায় তাদের পরীক্ষায় নম্বরের উন্নতি হয়েছে।
তাড়াতাড়ি শুরু করা ও দেরিতে শুরু করা শিশুদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে, যারা তাড়াতাড়ি শুরু করেছে, তারা দেরিতে শুরু করা শিশুদের থেকে পড়া এবং তা বোঝার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জার্মানির রেজেনসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক সেবাস্টিয়ান সুগেট বিবিসিকে বলেন, দেরিতে শেখার ফলে তারা যা শিখছে, তার সঙ্গে তাদের জ্ঞান, বোধগম্যতাকে মিলিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি ভাষায় মনোযোগ দিতে বেশি সময় ব্যয় করেন, তবে আসলে আপনি দক্ষতার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছেন, যার বিকাশ ঘটতে কয়েক বছর সময় লাগে। পড়া দ্রুত বাছাই করা যেতে পারে। কিন্তু ভাষার জন্য কোনো সস্তা কৌশল নেই। এটার জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম।’
তাই প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি তাড়াতাড়ি শেখার মাধ্যমে পড়ার ক্ষমতা উন্নত না হয়, তবে তাড়াতাড়ি শুরু করা কেন? মূল লক্ষ্য যদি হয় শিশুকে ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করা, তবে তার জন্য যেটা ভালো, সে পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিত। শিশুর সাক্ষরতার জন্য তাড়াহুড়ো না করে, তার প্রবণতার দিকে তাকানোটাই জরুরি। শিশু যদি অল্প বয়সেই পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে, তবে তার সে আগ্রহকে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। বিপরীতে তেমন আগ্রহ যদি তার ভেতরে দেখা না যায়, তবে তাকে ধরেবেঁধে পড়ার জগতে না ঢুকিয়ে অপেক্ষা করাটাই ভালো। যেহেতু দ্রুত পাঠ শুরুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ পড়াশোনায় সুফল পাওয়ার তেমন প্রমাণ হাত নেই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ততই বাড়ছে। বিশেষত, ৩টি বিষয়ের ৬টি পত্রের সব টপিকের ওপর ৩ ঘণ্টার এই একটি পরীক্ষা যখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, তখন সে পরীক্ষার জন্য ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক।
৮ ঘণ্টা আগে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আসন বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সবুজ ক্যাম্পাস, মানসম্মত শিক্ষা ও সীমিত আসনের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বরাবরই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে থাকে।
৮ ঘণ্টা আগে
অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এল দারুণ সুযোগ। মোনাশ ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী ও অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১ দিন আগেশরিফুল ইসলাম শুভ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ততই বাড়ছে। বিশেষত, ৩টি বিষয়ের ৬টি পত্রের সব টপিকের ওপর ৩ ঘণ্টার এই একটি পরীক্ষা যখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, তখন সে পরীক্ষার জন্য ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, এ ভয় শুধু তুমি একা পাচ্ছ না; সব পরীক্ষার্থীই কম-বেশি একই অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তোমার আগে যেসব সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা চান্স পেয়েছেন, তাঁরাও এই একই অনুভূতির মধ্য দিয়ে গেছেন।
৬ পেপারের প্রস্তুতি
সাধারণত শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষা বা কলেজে একটি বিষয়ের একটি পত্রের পরীক্ষা দিয়ে থাকে (যেমন: পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র)। আর এ একটি পত্রের প্রস্তুতিই যেখানে বেশ কঠিন, সেখানে ৬টি পত্রের প্রস্তুতি নেওয়াটা নিশ্চয়ই আরও কঠিন। আর তাই এই কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমেই অসংখ্য পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে অল্পসংখ্যককে বুয়েটে পড়াশোনার জন্য নির্বাচন করা হয়।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মূল কৌশল
তোমার হাতে যখন আর অল্প ক’দিন বাকি আছে, তখন শেষ মুহূর্তে নিজের প্রস্তুতিকে শাণিত করতে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, একাডেমিক থেকে অ্যাডমিশন পর্যন্ত শেখা টপিকগুলো ভালোভাবে রিভিশন দিতে হবে। আর তা করতে হবে তোমার নিজস্ব নোটখাতা থেকে। যদি নিজের ভালোভাবে নোট করা না থাকে তবে যে বইগুলো পড়েছ, সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। থিওরির ক্ষেত্রে ডিটেইলস প্রতিপাদন বা লাইন বাই লাইন সব পড়ার দরকার নেই; বরং মূল আইডিয়াগুলো পরিষ্কারভাবে মাথায় রাখতে হবে। আর ম্যাথের ক্ষেত্রে সব ধরনের সূত্র ও প্রশ্নের টাইপ ভালোভাবে আয়ত্তে রাখতে হবে।
প্রস্তুতি যেভাবে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখবে
দেখো, শুধু রিভিশন করলেই আত্মবিশ্বাস আসবে না। আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য অবশ্যই ফাইনাল মডেল টেস্ট দিতে হবে। ফিজিকস, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথ মিলিয়ে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে এবং তাতে ধীরে ধীরে উন্নতি করার মাধ্যমেই আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। অফলাইনে পরীক্ষা দিতে যাতায়াতে সময় অপচয় হলে বা সুবিধামতো টাইম শিডিউল না পেলে চাইলে অনলাইনেও মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পার। বর্তমানে শিখোসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে মডেল টেস্ট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
মডেল টেস্টে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে
কয়েকটি ফুল মডেল টেস্ট (বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ) দেওয়ার পর তুমি বুঝতে পারবে, কিছু টপিক তুমি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে উত্তর করতে পারছ। আবার কিছু টপিক থেকে প্রশ্ন এলে তোমার উত্তর করতে কষ্ট হচ্ছে বা মনে থাকছে না। বেছে বেছে সে টপিকগুলো ভালো করে আবার ঝালাই করে নিতে হবে।
মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় বিশেষভাবে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখবে। যেমন: স্পিড মেইনটেইন করা; রিভিশন দেওয়া ও সিলি মিসটেক কমানো।
আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শেষ করার অভ্যাস করতে হবে
বুয়েট অ্যাডমিশন টেস্টের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো টাইম শর্টেজ। ৩ ঘণ্টায় ৬০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাই মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় চেষ্টা করবে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে লেখা শেষ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে। এতে এক্সাম ডে-তে টাইম ম্যানেজ করা অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি শেষে ১০-১৫ মিনিট সময় রাখতে হবে রিভিশনের জন্য। অনেক সময় মেন্টাল প্রেশারের কারণে ছোটখাটো ক্যালকুলেশন মিসটেক হয়ে যায়, যা শেষে রিভিশন দেওয়ার সময় ধরতে পারলে ওভারঅল নম্বর তথা ফলাফল অনেক ভালো হয়।
মডেল টেস্টের খাতাগুলোও রিভিশন দাও
মডেল টেস্ট দিতে গেলে দেখবে, অসংখ্য ছোট ছোট ভুল তোমার নম্বর কমিয়ে দিচ্ছে। আমার পরামর্শ হলো, পরীক্ষার আগের কয়েক দিন গত দুই বছরে তুমি যেসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছো, সেগুলোর মধ্যে যেসব খাতা তোমার কাছে আছে, সেগুলো একবার করে দেখে যাও। বিশেষ করে যেসব জায়গায় ভুলের কারণে নম্বর কাটা গেছে, সেগুলোর দিকে ৩০ সেকেন্ড করে ফোকাস করো। এতে ভুলের ব্যাপারে তোমার সেনসিটিভিটি বাড়বে এবং ছোট ছোট ভুল অনেক কমে যাবে।
সবশেষে বলব, প্রস্তুতি যেমনই হোক না কেন, বিশ্বাস রাখবে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা হবে তোমার জীবনের বেস্ট পরীক্ষা। আর এক্সাম চলাকালে যদি কোনো প্রশ্ন না পার, তখন ঘাবড়ে যাবে না; বরং ভাববে এটা শুধু আমি না, বাকিরাও সম্ভবত পারছে না। তাই ভয় না পেয়ে যেগুলো পারছ, সেগুলো ভালোভাবে করার চেষ্টা করো। তাহলেই তোমার এক্সাম ভালো হবে। আজ আর বেশি কিছু বলব না। শেষ মুহূর্তে নিজের বেস্ট এফোর্টটা দাও। ইনশা আল্লাহ, তোমার পরীক্ষা অনেক ভালো হবে।
শিক্ষার্থী, ইইই বিভাগ, ১৪ ব্যাচ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ততই বাড়ছে। বিশেষত, ৩টি বিষয়ের ৬টি পত্রের সব টপিকের ওপর ৩ ঘণ্টার এই একটি পরীক্ষা যখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, তখন সে পরীক্ষার জন্য ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, এ ভয় শুধু তুমি একা পাচ্ছ না; সব পরীক্ষার্থীই কম-বেশি একই অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তোমার আগে যেসব সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা চান্স পেয়েছেন, তাঁরাও এই একই অনুভূতির মধ্য দিয়ে গেছেন।
৬ পেপারের প্রস্তুতি
সাধারণত শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষা বা কলেজে একটি বিষয়ের একটি পত্রের পরীক্ষা দিয়ে থাকে (যেমন: পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র)। আর এ একটি পত্রের প্রস্তুতিই যেখানে বেশ কঠিন, সেখানে ৬টি পত্রের প্রস্তুতি নেওয়াটা নিশ্চয়ই আরও কঠিন। আর তাই এই কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমেই অসংখ্য পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে অল্পসংখ্যককে বুয়েটে পড়াশোনার জন্য নির্বাচন করা হয়।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মূল কৌশল
তোমার হাতে যখন আর অল্প ক’দিন বাকি আছে, তখন শেষ মুহূর্তে নিজের প্রস্তুতিকে শাণিত করতে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, একাডেমিক থেকে অ্যাডমিশন পর্যন্ত শেখা টপিকগুলো ভালোভাবে রিভিশন দিতে হবে। আর তা করতে হবে তোমার নিজস্ব নোটখাতা থেকে। যদি নিজের ভালোভাবে নোট করা না থাকে তবে যে বইগুলো পড়েছ, সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। থিওরির ক্ষেত্রে ডিটেইলস প্রতিপাদন বা লাইন বাই লাইন সব পড়ার দরকার নেই; বরং মূল আইডিয়াগুলো পরিষ্কারভাবে মাথায় রাখতে হবে। আর ম্যাথের ক্ষেত্রে সব ধরনের সূত্র ও প্রশ্নের টাইপ ভালোভাবে আয়ত্তে রাখতে হবে।
প্রস্তুতি যেভাবে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখবে
দেখো, শুধু রিভিশন করলেই আত্মবিশ্বাস আসবে না। আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য অবশ্যই ফাইনাল মডেল টেস্ট দিতে হবে। ফিজিকস, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথ মিলিয়ে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে এবং তাতে ধীরে ধীরে উন্নতি করার মাধ্যমেই আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। অফলাইনে পরীক্ষা দিতে যাতায়াতে সময় অপচয় হলে বা সুবিধামতো টাইম শিডিউল না পেলে চাইলে অনলাইনেও মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করতে পার। বর্তমানে শিখোসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে মডেল টেস্ট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
মডেল টেস্টে যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে
কয়েকটি ফুল মডেল টেস্ট (বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ) দেওয়ার পর তুমি বুঝতে পারবে, কিছু টপিক তুমি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে উত্তর করতে পারছ। আবার কিছু টপিক থেকে প্রশ্ন এলে তোমার উত্তর করতে কষ্ট হচ্ছে বা মনে থাকছে না। বেছে বেছে সে টপিকগুলো ভালো করে আবার ঝালাই করে নিতে হবে।
মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় বিশেষভাবে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখবে। যেমন: স্পিড মেইনটেইন করা; রিভিশন দেওয়া ও সিলি মিসটেক কমানো।
আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শেষ করার অভ্যাস করতে হবে
বুয়েট অ্যাডমিশন টেস্টের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো টাইম শর্টেজ। ৩ ঘণ্টায় ৬০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাই মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় চেষ্টা করবে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে লেখা শেষ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে। এতে এক্সাম ডে-তে টাইম ম্যানেজ করা অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি শেষে ১০-১৫ মিনিট সময় রাখতে হবে রিভিশনের জন্য। অনেক সময় মেন্টাল প্রেশারের কারণে ছোটখাটো ক্যালকুলেশন মিসটেক হয়ে যায়, যা শেষে রিভিশন দেওয়ার সময় ধরতে পারলে ওভারঅল নম্বর তথা ফলাফল অনেক ভালো হয়।
মডেল টেস্টের খাতাগুলোও রিভিশন দাও
মডেল টেস্ট দিতে গেলে দেখবে, অসংখ্য ছোট ছোট ভুল তোমার নম্বর কমিয়ে দিচ্ছে। আমার পরামর্শ হলো, পরীক্ষার আগের কয়েক দিন গত দুই বছরে তুমি যেসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছো, সেগুলোর মধ্যে যেসব খাতা তোমার কাছে আছে, সেগুলো একবার করে দেখে যাও। বিশেষ করে যেসব জায়গায় ভুলের কারণে নম্বর কাটা গেছে, সেগুলোর দিকে ৩০ সেকেন্ড করে ফোকাস করো। এতে ভুলের ব্যাপারে তোমার সেনসিটিভিটি বাড়বে এবং ছোট ছোট ভুল অনেক কমে যাবে।
সবশেষে বলব, প্রস্তুতি যেমনই হোক না কেন, বিশ্বাস রাখবে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা হবে তোমার জীবনের বেস্ট পরীক্ষা। আর এক্সাম চলাকালে যদি কোনো প্রশ্ন না পার, তখন ঘাবড়ে যাবে না; বরং ভাববে এটা শুধু আমি না, বাকিরাও সম্ভবত পারছে না। তাই ভয় না পেয়ে যেগুলো পারছ, সেগুলো ভালোভাবে করার চেষ্টা করো। তাহলেই তোমার এক্সাম ভালো হবে। আজ আর বেশি কিছু বলব না। শেষ মুহূর্তে নিজের বেস্ট এফোর্টটা দাও। ইনশা আল্লাহ, তোমার পরীক্ষা অনেক ভালো হবে।
শিক্ষার্থী, ইইই বিভাগ, ১৪ ব্যাচ

শিশু কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
০৮ এপ্রিল ২০২২
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আসন বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সবুজ ক্যাম্পাস, মানসম্মত শিক্ষা ও সীমিত আসনের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বরাবরই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে থাকে।
৮ ঘণ্টা আগে
অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এল দারুণ সুযোগ। মোনাশ ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী ও অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১ দিন আগেমো. ফাহিম ফরহাদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আসন বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সবুজ ক্যাম্পাস, মানসম্মত শিক্ষা ও সীমিত আসনের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বরাবরই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে থাকে। পরীক্ষার দিন যত ঘনিয়ে আসে, ততই ভর্তি-ইচ্ছুকদের মনে তৈরি হয় দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা, বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পিত কৌশল অনুসরণ করলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
বাংলা
বাংলার ক্ষেত্রে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের গদ্য, পদ্য, উপন্যাস ও নাটক নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে। প্রতিবছর বাংলা পাঠ্যবইয়ের কবি-লেখক পরিচিতি, শব্দার্থ এবং গদ্য-পদ্যের লাইন থেকে প্রশ্ন আসে। বাংলা ব্যাকরণের সমাস, সন্ধি, শব্দধ্বনি, বাক্য, পদ, ণ-ত্ব বিধান-ষ-ত্ব বিধান এবং মুখস্থ অংশ (বিপরীত শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, বাগধারা) গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। যদি কেউ জাবির নৃবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করতে চায়, তাহলে অবশ্যই বাংলায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
ইংরেজি
ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইংরেজি। প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় শুধু ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতার কারণে। জাবির ‘বি’ ইউনিটে প্যাসেজ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রে বাসায় প্যাসেজ অনুশীলন করা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, ইংরেজি প্রথম পত্র পাঠ্যবইয়ের প্যাসেজ থেকেও প্রশ্ন আসে, তাই সেগুলোও পড়া গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও ইংরেজি গ্রামারের পার্টস অব স্পিচ, সেন্টেন্স, নেরেশন, টেন্স, ভয়েস এ টপিকগুলো গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে এবং ইংরেজি সাহিত্যিক পদ থেকেও প্রশ্ন আসতে দেখা যায়।
সাধারণ গণিত
জাবির ‘বি’ ইউনিটে শুধু বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ রয়েছে। তাই ‘বি’ ইউনিটে সাধারণ গণিত থেকেও ২০টি প্রশ্ন আসে। তবে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ গণিত থেকে আসা প্রশ্নগুলো সহজ এবং মৌলিক ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণ গণিতে বীজগণিত (সাধারণ সূত্র, ফাংশন, সেট, সম্ভাবনা, সমীকরণ, উৎপাদক), পাটিগণিত (ধারা, ল সা গু-গ সা গু, গড়, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ-ক্ষতি-মুনাফা) এবং জ্যামিতি (সাধারণ ধারণা, ক্ষেত্রফল, পিথাগোরাস, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত) গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ জ্ঞান ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ
সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রথমত সাময়িক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়াও সাধারণ জ্ঞানের জন্য নদী-নালা, বাংলাদেশের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ সাল, বিভিন্ন সংস্থা, পূর্বনাম, পূর্ণরূপ, সদর দপ্তর-ভাষা-মুদ্রা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সংসদ ও সরকারব্যবস্থা, সংবিধান—এ টপিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অত্যাবশ্যক তথ্যগুলো মনে রাখতে হবে।
বাজারে যৌক্তিক বিশ্লেষণ বিষয়টির জন্য কিছু বই পাওয়া যায়। সেসব বই থেকে ঘড়ির সময়, বার, দিন, মাস, বছর নির্ণয়, দূরত্ব, নৌকা স্রোত, সংখ্যা সিরিজ, রক্তের সম্পর্ক, প্রতিবিম্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ—এ টপিকগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যেহেতু পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নেতিবাচক নম্বর কাটা হবে, তাই মনোযোগসহকারে সঠিক উত্তর চিহ্নিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা তীব্র, তাই সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়া যাবে না, পরিশ্রম একদিন ফলপ্রসূ হবেই।
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আসন বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সবুজ ক্যাম্পাস, মানসম্মত শিক্ষা ও সীমিত আসনের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বরাবরই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে থাকে। পরীক্ষার দিন যত ঘনিয়ে আসে, ততই ভর্তি-ইচ্ছুকদের মনে তৈরি হয় দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা, বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পিত কৌশল অনুসরণ করলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
বাংলা
বাংলার ক্ষেত্রে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের গদ্য, পদ্য, উপন্যাস ও নাটক নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে। প্রতিবছর বাংলা পাঠ্যবইয়ের কবি-লেখক পরিচিতি, শব্দার্থ এবং গদ্য-পদ্যের লাইন থেকে প্রশ্ন আসে। বাংলা ব্যাকরণের সমাস, সন্ধি, শব্দধ্বনি, বাক্য, পদ, ণ-ত্ব বিধান-ষ-ত্ব বিধান এবং মুখস্থ অংশ (বিপরীত শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, বাগধারা) গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। যদি কেউ জাবির নৃবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করতে চায়, তাহলে অবশ্যই বাংলায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
ইংরেজি
ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইংরেজি। প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় শুধু ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতার কারণে। জাবির ‘বি’ ইউনিটে প্যাসেজ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রে বাসায় প্যাসেজ অনুশীলন করা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, ইংরেজি প্রথম পত্র পাঠ্যবইয়ের প্যাসেজ থেকেও প্রশ্ন আসে, তাই সেগুলোও পড়া গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও ইংরেজি গ্রামারের পার্টস অব স্পিচ, সেন্টেন্স, নেরেশন, টেন্স, ভয়েস এ টপিকগুলো গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে এবং ইংরেজি সাহিত্যিক পদ থেকেও প্রশ্ন আসতে দেখা যায়।
সাধারণ গণিত
জাবির ‘বি’ ইউনিটে শুধু বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ রয়েছে। তাই ‘বি’ ইউনিটে সাধারণ গণিত থেকেও ২০টি প্রশ্ন আসে। তবে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ গণিত থেকে আসা প্রশ্নগুলো সহজ এবং মৌলিক ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণ গণিতে বীজগণিত (সাধারণ সূত্র, ফাংশন, সেট, সম্ভাবনা, সমীকরণ, উৎপাদক), পাটিগণিত (ধারা, ল সা গু-গ সা গু, গড়, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ-ক্ষতি-মুনাফা) এবং জ্যামিতি (সাধারণ ধারণা, ক্ষেত্রফল, পিথাগোরাস, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত) গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ জ্ঞান ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ
সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রথমত সাময়িক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়াও সাধারণ জ্ঞানের জন্য নদী-নালা, বাংলাদেশের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ সাল, বিভিন্ন সংস্থা, পূর্বনাম, পূর্ণরূপ, সদর দপ্তর-ভাষা-মুদ্রা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সংসদ ও সরকারব্যবস্থা, সংবিধান—এ টপিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অত্যাবশ্যক তথ্যগুলো মনে রাখতে হবে।
বাজারে যৌক্তিক বিশ্লেষণ বিষয়টির জন্য কিছু বই পাওয়া যায়। সেসব বই থেকে ঘড়ির সময়, বার, দিন, মাস, বছর নির্ণয়, দূরত্ব, নৌকা স্রোত, সংখ্যা সিরিজ, রক্তের সম্পর্ক, প্রতিবিম্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ—এ টপিকগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যেহেতু পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য নেতিবাচক নম্বর কাটা হবে, তাই মনোযোগসহকারে সঠিক উত্তর চিহ্নিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা তীব্র, তাই সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়া যাবে না, পরিশ্রম একদিন ফলপ্রসূ হবেই।
শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাবি

শিশু কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
০৮ এপ্রিল ২০২২
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ততই বাড়ছে। বিশেষত, ৩টি বিষয়ের ৬টি পত্রের সব টপিকের ওপর ৩ ঘণ্টার এই একটি পরীক্ষা যখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, তখন সে পরীক্ষার জন্য ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক।
৮ ঘণ্টা আগে
অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এল দারুণ সুযোগ। মোনাশ ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী ও অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১ দিন আগেশিক্ষা ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এল দারুণ সুযোগ। মোনাশ ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী ও অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃত্তিটিতে অর্থায়ন করবে দেশের সরকার। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য বৃত্তিটি উন্মুক্ত।
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় ও বিশ্বখ্যাত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মোনাশ ইউনিভার্সিটি অন্যতম। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে অবস্থিত। গবেষণা, উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত রয়েছে। কিউএস ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে মোনাশ ইউনিভার্সিটি ধারাবাহিকভাবে স্থান করে নিচ্ছে।
আর্থিক সুবিধা
এই বৃত্তিটি যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়িত একটি সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রদত্ত এ স্কলারশিপে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব খরচই বহন করা হয়। এর আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে এবং মাসিক স্টাইপেন্ড বা ভাতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মিলবে আন্তর্জাতিক যাতায়াতের বিমান টিকিট, নতুন দেশে গিয়ে বসবাস শুরুর জন্য রিলোকেশন অ্যালাউয়েন্স, নিয়মিত লিভিং অ্যালাউয়েন্স, বই ও কোর্স উপকরণের খরচ এবং স্বাস্থ্যসেবা ভাতা।
বৃত্তির ধরন
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একাধিক মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ। এর মধ্যে রিসার্চ ট্রেনিং প্রোগ্রাম স্কলারশিপ অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করা হয়। এই বৃত্তির মোট মূল্য সর্বোচ্চ প্রায় ৩২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। একই পরিসরে মোনাশ গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণা ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রয়েছে ম্যাক্সওয়েল কিং পিএইচডি স্কলারশিপ, যা পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। এই বৃত্তির আর্থিক মূল্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৬০০ ডলার। প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন অনুষদে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয় মোনাশ সিলভার জুবিলি পিএইচডি স্কলারশিপ। যার মূল্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ডলার। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য রয়েছে রেডন গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ। এই বৃত্তির মূল্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডলার।
আবেদনের যোগ্যতা
দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীদের অবশ্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। এই স্কলারশিপ মূলত প্রার্থীর একাডেমিক ফলাফল, গবেষণাকর্ম এবং পূর্ববর্তী গবেষণা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ থাকা বাধ্যতামূলক।
অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো
আর্টস, ডিজাইন ও আর্কিটেকচার; হিউম্যানিটিজ এবং সোশ্যাল সায়েন্সেস; বিজনেস; এডুকেশন; ইঞ্জিনিয়ারিং; ইনফরমেশন টেকনোলজি; মেডিসিন; নার্সিং; হেলথ সায়েন্সেস; ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস এবং ল। এ বিষয়গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা এই লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়
৩১ মার্চ, ২০২৬।

অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এল দারুণ সুযোগ। মোনাশ ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী ও অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃত্তিটিতে অর্থায়ন করবে দেশের সরকার। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য বৃত্তিটি উন্মুক্ত।
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় ও বিশ্বখ্যাত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মোনাশ ইউনিভার্সিটি অন্যতম। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে অবস্থিত। গবেষণা, উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত রয়েছে। কিউএস ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে মোনাশ ইউনিভার্সিটি ধারাবাহিকভাবে স্থান করে নিচ্ছে।
আর্থিক সুবিধা
এই বৃত্তিটি যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়িত একটি সুযোগ। অস্ট্রেলিয়া সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রদত্ত এ স্কলারশিপে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব খরচই বহন করা হয়। এর আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে এবং মাসিক স্টাইপেন্ড বা ভাতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মিলবে আন্তর্জাতিক যাতায়াতের বিমান টিকিট, নতুন দেশে গিয়ে বসবাস শুরুর জন্য রিলোকেশন অ্যালাউয়েন্স, নিয়মিত লিভিং অ্যালাউয়েন্স, বই ও কোর্স উপকরণের খরচ এবং স্বাস্থ্যসেবা ভাতা।
বৃত্তির ধরন
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একাধিক মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ। এর মধ্যে রিসার্চ ট্রেনিং প্রোগ্রাম স্কলারশিপ অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদান করা হয়। এই বৃত্তির মোট মূল্য সর্বোচ্চ প্রায় ৩২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার। একই পরিসরে মোনাশ গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণা ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রয়েছে ম্যাক্সওয়েল কিং পিএইচডি স্কলারশিপ, যা পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। এই বৃত্তির আর্থিক মূল্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৬০০ ডলার। প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন অনুষদে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয় মোনাশ সিলভার জুবিলি পিএইচডি স্কলারশিপ। যার মূল্য সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ডলার। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য রয়েছে রেডন গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ। এই বৃত্তির মূল্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার ডলার।
আবেদনের যোগ্যতা
দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীদের অবশ্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। এই স্কলারশিপ মূলত প্রার্থীর একাডেমিক ফলাফল, গবেষণাকর্ম এবং পূর্ববর্তী গবেষণা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ থাকা বাধ্যতামূলক।
অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো
আর্টস, ডিজাইন ও আর্কিটেকচার; হিউম্যানিটিজ এবং সোশ্যাল সায়েন্সেস; বিজনেস; এডুকেশন; ইঞ্জিনিয়ারিং; ইনফরমেশন টেকনোলজি; মেডিসিন; নার্সিং; হেলথ সায়েন্সেস; ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস এবং ল। এ বিষয়গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা এই লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়
৩১ মার্চ, ২০২৬।

শিশু কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
০৮ এপ্রিল ২০২২
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ততই বাড়ছে। বিশেষত, ৩টি বিষয়ের ৬টি পত্রের সব টপিকের ওপর ৩ ঘণ্টার এই একটি পরীক্ষা যখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, তখন সে পরীক্ষার জন্য ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক।
৮ ঘণ্টা আগে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আসন বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সবুজ ক্যাম্পাস, মানসম্মত শিক্ষা ও সীমিত আসনের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বরাবরই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে থাকে।
৮ ঘণ্টা আগে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালন করা হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাহসী জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি এবং ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল জুলাই যোদ্ধা ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান ইউনিটের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকল জুলাই যোদ্ধা, শরিফ ওসমান হাদি ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় এই পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানা গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস পালন করা হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাহসী জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি এবং ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল জুলাই যোদ্ধা ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান ইউনিটের প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।’

শিশু কথা বলতে শেখার পরই শুরু হয় পড়তে শেখানোর তোড়জোড়। কোনো কোনো দেশে চার বছর বয়সে বাচ্চারা লিখতে ও পড়তে শেখে। আবার কোনো দেশে সাত বছরের আগে কোনোভাবেই পড়ালেখা শুরু করা হয় না। কেউ বলেন অল্প বয়স থেকেই পড়তে শেখা শুরু করা উচিত, আবার কেউ বলেন একেবারে উল্টো কথা। কোনটি সঠিক?
০৮ এপ্রিল ২০২২
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ততই বাড়ছে। বিশেষত, ৩টি বিষয়ের ৬টি পত্রের সব টপিকের ওপর ৩ ঘণ্টার এই একটি পরীক্ষা যখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়, তখন সে পরীক্ষার জন্য ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক।
৮ ঘণ্টা আগে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একটি আসন বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। সবুজ ক্যাম্পাস, মানসম্মত শিক্ষা ও সীমিত আসনের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বরাবরই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে থাকে।
৮ ঘণ্টা আগে
অস্ট্রেলিয়ায় যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের জন্য এল দারুণ সুযোগ। মোনাশ ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কলারশিপ ২০২৬-এর আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থী ও অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৮ ঘণ্টা আগে