মুশফিকুর রিজন, জাবি

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে। সেদিন সরকারি চাকরির নিয়োগব্যবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারপ্রদত্ত একটি সার্কুলারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি। ৬ জুনও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়; তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ১ জুলাই ছুটি শেষে পুনরায় আন্দোলনের সূচনা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিটি কর্মসূচির শুরু হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সেখানেই গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি ও ব্যানার নির্ধারিত হতো। একই সঙ্গে আন্দোলন চালাতে ক্রাউড ফান্ডিংও চলত। সারা দেশে যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কর্মসূচি চলেছে, তার নাম প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর থেকেই।

এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম জানান, ‘আমরা লাইব্রেরির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই কীভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২৯ জুন আমরা একটি সাধারণ সভা করি, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় একটি একক ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। ওই দিনই আমাদের ইন্টারনাল গ্রুপে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামটি প্রস্তাব করি এবং পরদিন ৩০ জুন তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই ব্যানারে আন্দোলন চলে।’
১ জুলাই থেকে প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগরে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করে। ৪ জুলাই একটি রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই রায় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গেলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং সদস্যসচিব হন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ। পরে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
৫ জুলাই মানববন্ধনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ৬ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ ডাকা হয়। যদিও কেন্দ্র থেকে বিকেল ৩টায় ব্লকেড শুরুর নির্দেশনা ছিল, জাহাঙ্গীরনগরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এটি শুরু হয়—যা ছিল দেশের প্রথম ব্লকেড কর্মসূচি।
১০ জুলাই পর্যন্ত টানা ব্লকড কর্মসূচি চলে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরদিন ১১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীরা। ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে সারা দেশের মত জাবির ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের হামলা ও হল সিসিটিভি না দেখানোর প্রতিবাদে হল প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। পরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন এবং পরে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি। এদিকে একই সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। রাত বারোটার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। হামলার খবর আগেভাগেই আন্দোলনকারীরা জেনে গেলে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাসভবন ঘিরে ফেললেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সময়কার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে হামলার খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করেন। ওই রাতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রুম ভাঙচুর করেন এবং ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন। সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস, যেখান থেকে ছাত্রলীগকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে জাহাঙ্গীরনগরে আসতে থাকেন। সারা দিনজুড়ে ‘জাবি, তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় খবর আসে যে, ছাত্রলীগ আবার হলে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে—এ জন্য শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে থেকে পাহারা দেন।

১৭ জুলাই সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি (ভ্যাকেন্ট) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায়। সকাল থেকেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে সরে গিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে পুলিশ জোরপূর্বক সকল শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী আশপাশের ইসলামনগর, গেরুয়া ও আমবাগান এলাকায় অবস্থান নেন। এদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল করেন। বিকেলে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেন।
১৯ জুলাইও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেন। ২০ জুলাই বিকেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য–২৪ ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে। এরপর শিক্ষার্থীরা কারফিউ ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ‘ঘোড়ার ডিমের কারফিউ, মানি না, মানব না’ স্লোগানে মুখরিত হয় আন্দোলন।
১৮ জুলাই থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন সাধারণ জনতা। তখন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলে অফলাইনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। তখন আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান। তিনি জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাওয়ায় স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। এই কাজে আমাকে সহায়তা করেন আমাদের ক্যাম্পাসের অরিত্র সত্তার এবং তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক ভাই। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন।’
২৬ জুলাই রাতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ‘সেতু ভবন’ মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘২৪ তারিখের দিকে আমার কাছে একটি মেসেজ আসে; সব সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাকে পুরো দেশের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ঢাকায় চলে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমি আমবাগানের বাসায় যাই। সেখান থেকেই ব্লক রেইড দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এরপর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। আমি ৩ আগস্ট মুক্তি পাই এবং সেদিনই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
আরিফ সোহেলের গ্রেপ্তারের পর যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলমান থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি জানান, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে একপ্রকার পালিয়ে পালিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে আমি কয়েক রাত নৌকায় ঘুমিয়েছি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।’
২৮ ও ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ৩০ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে এবং সেদিনের মিছিলেও অনেক বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক যোগ দেন। এদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও দমে যাননি। ওই দিন দুপুরেই নিজের অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাতে আমার সন্তানের রক্ত, তার ছবি আমার দেয়ালে থাকতে পারে না। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে, যার কারণে আমরা আগে তাঁর ছবি টাঙিয়েছিলাম, তিনি আর সেই পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর জন্য তখন সবাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।’
ছবি নামানোর পর কোনো চাপ এসেছিল কি না? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তখন শোকজ করা হয়েছিল। কেন ছবি নামিয়েছি, সে বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক শিক্ষক। অনেকে ফোন করে জানিয়েছে, আমার ছবি কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল—আমার সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।’
২, ৩ ও ৪ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। এই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ‘আমরা সম্ভবপর সব ধরনের তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা অফিসে কল করে সংবাদ পাঠাতাম। আমরা চাইতাম, এই আন্দোলনের ভেতর থেকেও জাহাঙ্গীরনগর যেন অদৃশ্য না হয়ে যায়—সবাই যেন এখানকার কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতাম।’
৫ আগস্টের লং মার্চে অংশ নিতে সকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণ। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার মানুষের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল কারখানা শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মী। তবে সাভার এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শ্রাবণ গাজী নামে এক শিক্ষার্থী শহীদ হন। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা পৌঁছাতে না পেরে শহীদ শ্রাবণ গাজীর মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ধীরে ধীরে বাইরের অংশগ্রহণকারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। দেশের সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরাই একত্র হয়ে ক্যাম্পাস পাহারায় অংশ নেন।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় যখন আমরা মনোবল ও আশা হারিয়ে ফেলছিলাম, তখন জাহাঙ্গীরনগর আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে। সেদিন সরকারি চাকরির নিয়োগব্যবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারপ্রদত্ত একটি সার্কুলারকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে এবং ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি। ৬ জুনও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়; তবে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ১ জুলাই ছুটি শেষে পুনরায় আন্দোলনের সূচনা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরে প্রতিটি কর্মসূচির শুরু হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে। সেখানেই গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি ও ব্যানার নির্ধারিত হতো। একই সঙ্গে আন্দোলন চালাতে ক্রাউড ফান্ডিংও চলত। সারা দেশে যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে কর্মসূচি চলেছে, তার নাম প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর থেকেই।

এ বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম জানান, ‘আমরা লাইব্রেরির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই কীভাবে আন্দোলন পরিচালিত হবে। ২৯ জুন আমরা একটি সাধারণ সভা করি, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় একটি একক ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। ওই দিনই আমাদের ইন্টারনাল গ্রুপে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামটি প্রস্তাব করি এবং পরদিন ৩০ জুন তা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে এই ব্যানারে আন্দোলন চলে।’
১ জুলাই থেকে প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগরে লাগাতার কর্মসূচি চলতে থাকে এবং প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতীকী অবরোধ করে। ৪ জুলাই একটি রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই রায় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গেলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ওই দিনই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল এবং সদস্যসচিব হন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ। পরে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
৫ জুলাই মানববন্ধনের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ৬ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ৭ জুলাই সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ ডাকা হয়। যদিও কেন্দ্র থেকে বিকেল ৩টায় ব্লকেড শুরুর নির্দেশনা ছিল, জাহাঙ্গীরনগরে সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এটি শুরু হয়—যা ছিল দেশের প্রথম ব্লকেড কর্মসূচি।
১০ জুলাই পর্যন্ত টানা ব্লকড কর্মসূচি চলে। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরদিন ১১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীরা। ১২ ও ১৩ জুলাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্যের প্রতিবাদে সারা দেশের মত জাবির ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের হামলা ও হল সিসিটিভি না দেখানোর প্রতিবাদে হল প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন।

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সময় পরিবর্তন করে বিকেল পাঁচটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদেরও মারধর করা হয়। পরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন।
এই ঘটনার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হন এবং পরে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যান। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাননি। এদিকে একই সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। রাত বারোটার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। হামলার খবর আগেভাগেই আন্দোলনকারীরা জেনে গেলে তারা উপাচার্যের বাসভবনের মধ্যে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে বাসভবন ঘিরে ফেললেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। রাত দেড়টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এই সময়কার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে হামলার খবর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করেন। ওই রাতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের রুম ভাঙচুর করেন এবং ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন। সারা বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস, যেখান থেকে ছাত্রলীগকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা একে একে জাহাঙ্গীরনগরে আসতে থাকেন। সারা দিনজুড়ে ‘জাবি, তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’—স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সেদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যায় খবর আসে যে, ছাত্রলীগ আবার হলে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে—এ জন্য শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে থেকে পাহারা দেন।

১৭ জুলাই সকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি (ভ্যাকেন্ট) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় প্রশাসন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করায়। সকাল থেকেই পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে সরে গিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেয়। এই ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাতে পুলিশ জোরপূর্বক সকল শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে।
১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, আর কিছু শিক্ষার্থী আশপাশের ইসলামনগর, গেরুয়া ও আমবাগান এলাকায় অবস্থান নেন। এদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মৌন মিছিল করেন। বিকেলে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে বের করে দেন।
১৯ জুলাইও শিক্ষার্থীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করেন। ২০ জুলাই বিকেলে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য–২৪ ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় পুরোনো ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে। এরপর শিক্ষার্থীরা কারফিউ ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ‘ঘোড়ার ডিমের কারফিউ, মানি না, মানব না’ স্লোগানে মুখরিত হয় আন্দোলন।
১৮ জুলাই থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন সাধারণ জনতা। তখন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হলে অফলাইনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। তখন আন্দোলনের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামান। তিনি জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাওয়ায় স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ সময় আমার দায়িত্ব ছিল আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। এই কাজে আমাকে সহায়তা করেন আমাদের ক্যাম্পাসের অরিত্র সত্তার এবং তৎকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক ভাই। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতের অনেক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছিল। তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন।’
২৬ জুলাই রাতে সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ‘সেতু ভবন’ মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘২৪ তারিখের দিকে আমার কাছে একটি মেসেজ আসে; সব সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আমাকে পুরো দেশের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে এবং ঢাকায় চলে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আমি আমবাগানের বাসায় যাই। সেখান থেকেই ব্লক রেইড দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এরপর আবার আন্দোলনে যোগ দিই। আমি ৩ আগস্ট মুক্তি পাই এবং সেদিনই ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।’
আরিফ সোহেলের গ্রেপ্তারের পর যাঁদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলমান থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি জানান, ‘১৮ জুলাইয়ের পর থেকে একপ্রকার পালিয়ে পালিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সিম পরিবর্তন করতে হয়েছে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভয়ে আমি কয়েক রাত নৌকায় ঘুমিয়েছি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।’
২৮ ও ২৯ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও স্থানীয় জনগণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ৩০ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিলে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে এবং সেদিনের মিছিলেও অনেক বেশি শিক্ষক যোগ দেন।
১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদী গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১২ জন শিক্ষক যোগ দেন। এদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও দমে যাননি। ওই দিন দুপুরেই নিজের অফিস কক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলে প্রতিবাদ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। যার হাতে আমার সন্তানের রক্ত, তার ছবি আমার দেয়ালে থাকতে পারে না। সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছে, যার কারণে আমরা আগে তাঁর ছবি টাঙিয়েছিলাম, তিনি আর সেই পদে থাকার যোগ্য নন। তাঁর জন্য তখন সবাই অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।’
ছবি নামানোর পর কোনো চাপ এসেছিল কি না? এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে তখন শোকজ করা হয়েছিল। কেন ছবি নামিয়েছি, সে বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে অনেক শিক্ষক। অনেকে ফোন করে জানিয়েছে, আমার ছবি কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবিনি। আমার একমাত্র চিন্তা ছিল—আমার সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।’
২, ৩ ও ৪ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। এই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল জানান, ‘আমরা সম্ভবপর সব ধরনের তথ্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সহায়তা করার চেষ্টা করতাম। একই সঙ্গে আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা অফিসে কল করে সংবাদ পাঠাতাম। আমরা চাইতাম, এই আন্দোলনের ভেতর থেকেও জাহাঙ্গীরনগর যেন অদৃশ্য না হয়ে যায়—সবাই যেন এখানকার কর্মসূচিগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষদেরও আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করতাম।’
৫ আগস্টের লং মার্চে অংশ নিতে সকাল থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনগণ। বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার মানুষের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল কারখানা শ্রমিক ও গার্মেন্টস কর্মী। তবে সাভার এলাকায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আসা শ্রাবণ গাজী নামে এক শিক্ষার্থী শহীদ হন। পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা পৌঁছাতে না পেরে শহীদ শ্রাবণ গাজীর মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ধীরে ধীরে বাইরের অংশগ্রহণকারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। দেশের সেই উত্তাল পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাতের বেলায় শিক্ষার্থীরাই একত্র হয়ে ক্যাম্পাস পাহারায় অংশ নেন।
বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ‘গণ–অভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ও বর্তমান জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় যখন আমরা মনোবল ও আশা হারিয়ে ফেলছিলাম, তখন জাহাঙ্গীরনগর আমাদের সাহস জুগিয়েছে।’

চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে বড় সুযোগ। দেশটির বেইহাং ইউনিভার্সিটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই বৃত্তিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার।
৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের ‘আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ এবং তাঁদের ‘সামাজিক মর্যাদা সুসংহত’ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
১ দিন আগে
অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের...
২ দিন আগেশিক্ষা ডেস্ক

চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে বড় সুযোগ। দেশটির বেইহাং ইউনিভার্সিটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই বৃত্তিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার। বৃত্তিটির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রদত্ত এই বৃত্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য সুযোগ।
চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেইহাং ইউনিভার্সিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত। এর পূর্ব নাম ছিল বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস। চীনের ‘ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ইউনিভার্সিটি’ উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত এই প্রতিষ্ঠান আধুনিক গবেষণাগার, বিশ্বমানের ফ্যাকাল্টি এবং শক্তিশালী শিল্প-সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত।
সুযোগ-সুবিধা
বেইহাং ইউনিভার্সিটি সিএসসি স্কলারশিপ চীনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়িত একটি বৃত্তি। এই বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রায় সব খরচ বহন করা হয়। এই বৃত্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিনা মূল্যে আবাসন অথবা আবাসন ভর্তুকির সুযোগ থাকবে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ নির্বাহের জন্য দেওয়া হবে মাসিক ভাতা (স্টাইপেন্ড)। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সমন্বিত চিকিৎসাবিমা।
আবেদনের যোগ্যতা
বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বাইরে অন্য কোনো দেশের নাগরিক হতে হবে। প্রার্থীদের অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের ক্ষেত্রে মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে এবং বয়স ৩৫ বছরের নিচে থাকতে হবে। অন্যদিকে, ডক্টরাল (পিএইচডি) প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে এবং বয়স ৪০ বছরের নিচে হতে হবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বৃত্তিটিতে আবেদন করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত ও জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদন ফরম (চীনা অথবা ইংরেজি ভাষায় পূরণকৃত), হালনাগাদ রেজুমে বা সিভি, পাসপোর্টের মূল তথ্য-পাতার কপি, সর্বোচ্চ ডিগ্রির নোটারাইজড সনদ এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সুপারভাইজরের অ্যাকসেপ্ট্যান্স লেটার, একটি সুস্পষ্ট স্টাডি প্ল্যান বা গবেষণা প্রস্তাবনা এবং দুটি সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ফরেনার ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন ফরমের কপি, নন-ক্রিমিনাল রেকর্ডের নথি এবং ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ সংযুক্ত করতে হবে।
অধ্যয়নের ক্ষেত্রসমূহ
স্কুল অব অ্যারোনটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাস্ট্রোনটিকস, অটোমেশন সায়েন্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমেশন, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড সিস্টেমস সায়েন্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইকোনমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস এবং স্কুল অব ল।
আবেদনের পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬।

চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে বড় সুযোগ। দেশটির বেইহাং ইউনিভার্সিটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই বৃত্তিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার। বৃত্তিটির আওতায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পাবেন। ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রদত্ত এই বৃত্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য সুযোগ।
চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেইহাং ইউনিভার্সিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত। এর পূর্ব নাম ছিল বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস। চীনের ‘ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ইউনিভার্সিটি’ উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত এই প্রতিষ্ঠান আধুনিক গবেষণাগার, বিশ্বমানের ফ্যাকাল্টি এবং শক্তিশালী শিল্প-সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত।
সুযোগ-সুবিধা
বেইহাং ইউনিভার্সিটি সিএসসি স্কলারশিপ চীনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ অর্থায়িত একটি বৃত্তি। এই বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রায় সব খরচ বহন করা হয়। এই বৃত্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিনা মূল্যে আবাসন অথবা আবাসন ভর্তুকির সুযোগ থাকবে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ নির্বাহের জন্য দেওয়া হবে মাসিক ভাতা (স্টাইপেন্ড)। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সমন্বিত চিকিৎসাবিমা।
আবেদনের যোগ্যতা
বৃত্তিটির জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বাইরে অন্য কোনো দেশের নাগরিক হতে হবে। প্রার্থীদের অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের ক্ষেত্রে মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে এবং বয়স ৩৫ বছরের নিচে থাকতে হবে। অন্যদিকে, ডক্টরাল (পিএইচডি) প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে এবং বয়স ৪০ বছরের নিচে হতে হবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
বৃত্তিটিতে আবেদন করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত ও জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদন ফরম (চীনা অথবা ইংরেজি ভাষায় পূরণকৃত), হালনাগাদ রেজুমে বা সিভি, পাসপোর্টের মূল তথ্য-পাতার কপি, সর্বোচ্চ ডিগ্রির নোটারাইজড সনদ এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সুপারভাইজরের অ্যাকসেপ্ট্যান্স লেটার, একটি সুস্পষ্ট স্টাডি প্ল্যান বা গবেষণা প্রস্তাবনা এবং দুটি সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ফরেনার ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন ফরমের কপি, নন-ক্রিমিনাল রেকর্ডের নথি এবং ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ সংযুক্ত করতে হবে।
অধ্যয়নের ক্ষেত্রসমূহ
স্কুল অব অ্যারোনটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাস্ট্রোনটিকস, অটোমেশন সায়েন্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অটোমেশন, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড সিস্টেমস সায়েন্স, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইকোনমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস এবং স্কুল অব ল।
আবেদনের পদ্ধতি
আগ্রহী প্রার্থীরা লিংকে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের ‘আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ এবং তাঁদের ‘সামাজিক মর্যাদা সুসংহত’ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
১ দিন আগে
অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের...
২ দিন আগেজবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ১৩ দফার ইশতেহারে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত বাস্তবায়ন ও আবাসন-সংকট নিরসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিকায়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণসহ ২১ দফা অঙ্গীকার করেছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী এ কে এম রাকিব ইশতেহার পাঠ করেন। পরে প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থী পর্যায়ক্রমে ইশতেহারের বিভিন্ন দফা উপস্থাপন করেন।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ১৩ দফার মধ্যে রয়েছে—গণতান্ত্রিক ও সুরক্ষিত ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ; আবাসন-সংকটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান; মূল ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন; দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করা; পরিবহন ও যাতায়াতব্যবস্থার মানোন্নয়ন; স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতকরণ; মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিমা; শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন; প্রশাসনিক সেবা সহজ ও দ্রুততর করা; কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন; ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ; নারী শিক্ষার্থীর অধিকার সুরক্ষা; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সবুজায়ন; আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম নিজেদের ইশতেহার পাঠ করেন। পরে প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থী পর্যায়ক্রমে ইশতেহারের বিভিন্ন দফা উপস্থাপন করেন।
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের ২১ দফার মধ্যে রয়েছে—স্বপ্নের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, আবাসন-সংকট নিরসন, বর্তমান ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিকায়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস, বিশ্বমানের শিক্ষা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা, শিক্ষার্থীবান্ধব লাইব্রেরি ও সেমিনার, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস, ছাত্রী হল, ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, পরিবহন সেবা, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনি সেবা ও মানবাধিকার সুরক্ষা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা, ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহি।
সরে দাঁড়ালেন তিন স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী
গতকাল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সংবাদ সম্মেলনে ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিবকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী চন্দন কুমার দাস, রাকিব হাসান ও মাশরুফ আহম্মেদ। তাঁরা বলেন, জবিয়ানদের অধিকার রক্ষার এই লড়াইয়ে অনৈক্যের কোনো স্থান নেই। বৃহত্তর স্বার্থে শক্তিশালী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এ কে এম রাকিবকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।
সরে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মাশরুফ আহম্মেদ বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছিলাম, তবে রাকিব ভাই দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাই শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা তাঁর প্রাপ্য হোক।’
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দাবিতে রাকিব ভাইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃহত্তর স্বার্থ ও ঐক্যের জন্য আমি তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’
ইশতেহারের বাস্তবায়ন চান শিক্ষার্থীরা
নির্বাচনের পর প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া নোভা বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে শুধু আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান চাই। প্রার্থীরা যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা যেন নির্বাচন শেষে বাস্তবায়িত হয়, এটাই আমাদের কামনা।’
আরেক শিক্ষার্থী আশিক বলেন, ‘আমরা শুধু কথা চাই না, আমরা চাই কাজ। নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যেন বাস্তবে দেখা যায়।’
নতুন তফসিল অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারণা চলবে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর এবং ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা হবে ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ১৩ দফার ইশতেহারে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত বাস্তবায়ন ও আবাসন-সংকট নিরসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিকায়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণসহ ২১ দফা অঙ্গীকার করেছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী এ কে এম রাকিব ইশতেহার পাঠ করেন। পরে প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থী পর্যায়ক্রমে ইশতেহারের বিভিন্ন দফা উপস্থাপন করেন।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ১৩ দফার মধ্যে রয়েছে—গণতান্ত্রিক ও সুরক্ষিত ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ; আবাসন-সংকটের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান; মূল ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সংস্কার, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন; দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করা; পরিবহন ও যাতায়াতব্যবস্থার মানোন্নয়ন; স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতকরণ; মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিমা; শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন; প্রশাসনিক সেবা সহজ ও দ্রুততর করা; কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন; ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ; নারী শিক্ষার্থীর অধিকার সুরক্ষা; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সবুজায়ন; আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম নিজেদের ইশতেহার পাঠ করেন। পরে প্যানেলের অন্যান্য প্রার্থী পর্যায়ক্রমে ইশতেহারের বিভিন্ন দফা উপস্থাপন করেন।
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের ২১ দফার মধ্যে রয়েছে—স্বপ্নের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, আবাসন-সংকট নিরসন, বর্তমান ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য রক্ষা ও আধুনিকায়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস, বিশ্বমানের শিক্ষা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা, শিক্ষার্থীবান্ধব লাইব্রেরি ও সেমিনার, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস, ছাত্রী হল, ন্যায্যমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, পরিবহন সেবা, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনি সেবা ও মানবাধিকার সুরক্ষা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা, ক্যারিয়ার লঞ্চপ্যাড, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহি।
সরে দাঁড়ালেন তিন স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী
গতকাল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের সংবাদ সম্মেলনে ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিবকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী চন্দন কুমার দাস, রাকিব হাসান ও মাশরুফ আহম্মেদ। তাঁরা বলেন, জবিয়ানদের অধিকার রক্ষার এই লড়াইয়ে অনৈক্যের কোনো স্থান নেই। বৃহত্তর স্বার্থে শক্তিশালী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এ কে এম রাকিবকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।
সরে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মাশরুফ আহম্মেদ বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছিলাম, তবে রাকিব ভাই দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাই শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা তাঁর প্রাপ্য হোক।’
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দাবিতে রাকিব ভাইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃহত্তর স্বার্থ ও ঐক্যের জন্য আমি তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’
ইশতেহারের বাস্তবায়ন চান শিক্ষার্থীরা
নির্বাচনের পর প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া নোভা বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে শুধু আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান চাই। প্রার্থীরা যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা যেন নির্বাচন শেষে বাস্তবায়িত হয়, এটাই আমাদের কামনা।’
আরেক শিক্ষার্থী আশিক বলেন, ‘আমরা শুধু কথা চাই না, আমরা চাই কাজ। নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যেন বাস্তবে দেখা যায়।’
নতুন তফসিল অনুযায়ী ১৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারণা চলবে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর এবং ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা হবে ৩০ অথবা ৩১ ডিসেম্বর।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে বড় সুযোগ। দেশটির বেইহাং ইউনিভার্সিটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই বৃত্তিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের ‘আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ এবং তাঁদের ‘সামাজিক মর্যাদা সুসংহত’ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
১ দিন আগে
অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের...
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে তাঁদের বেতন একাদশ থেকে বাড়িয়ে দশম গ্রেডে নির্ধারণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে স্বাক্ষর করেন উপসচিব (বিদ্যালয়-২) রাজীব কুমার সরকার।
এদিন এই প্রজ্ঞাপন জারি হলেও নতুন গ্রেডে বেতন ১৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষককে গেল ২৭ অক্টোবর গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে তাঁদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। এরপর ৬৫ হাজার ৫০২টি প্রধান শিক্ষকদের সবগুলো পদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২৮ জুলাই অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ ও অক্টোবরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব প্রধান শিক্ষক পদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার সম্মতি দিয়েছিল।
পরে গত ১১ নভেম্বর অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এ প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।
৩ ডিসেম্বর প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের ‘আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ এবং তাঁদের ‘সামাজিক মর্যাদা সুসংহত’ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এর ফলে প্রধান শিক্ষকেরা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও ‘সৃজনশীল ও উদ্দীপ্ত’ ভূমিকা রাখবেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আরও উন্নত ও গতিশীল’ শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
মন্ত্রণালয় বলছে, প্রধান শিক্ষকেরা অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও সব স্তরের অংশীজনদের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার মান ‘কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে’ উন্নীত করবেন বলে প্রত্যাশা করছে সরকার।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে তাঁদের বেতন একাদশ থেকে বাড়িয়ে দশম গ্রেডে নির্ধারণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে স্বাক্ষর করেন উপসচিব (বিদ্যালয়-২) রাজীব কুমার সরকার।
এদিন এই প্রজ্ঞাপন জারি হলেও নতুন গ্রেডে বেতন ১৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষককে গেল ২৭ অক্টোবর গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে তাঁদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। এরপর ৬৫ হাজার ৫০২টি প্রধান শিক্ষকদের সবগুলো পদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ২৮ জুলাই অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ ও অক্টোবরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব প্রধান শিক্ষক পদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার সম্মতি দিয়েছিল।
পরে গত ১১ নভেম্বর অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এ প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।
৩ ডিসেম্বর প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের ‘আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ এবং তাঁদের ‘সামাজিক মর্যাদা সুসংহত’ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এর ফলে প্রধান শিক্ষকেরা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও ‘সৃজনশীল ও উদ্দীপ্ত’ ভূমিকা রাখবেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আরও উন্নত ও গতিশীল’ শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
মন্ত্রণালয় বলছে, প্রধান শিক্ষকেরা অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও সব স্তরের অংশীজনদের সহায়তায় প্রাথমিক শিক্ষার মান ‘কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে’ উন্নীত করবেন বলে প্রত্যাশা করছে সরকার।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে বড় সুযোগ। দেশটির বেইহাং ইউনিভার্সিটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই বৃত্তিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার।
৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
৯ ঘণ্টা আগে
অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের...
২ দিন আগেরাহুল শর্মা, ঢাকা

অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অর্থ ব্যয় এবং পরিচালনায় এমন অনেক অনিয়ম ও অসংগতি পেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অনিয়মে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আইন লঙ্ঘন করে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানত ফেরত না পাওয়ায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি ৬৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা ও আইন অনুবিভাগ) জহিরুল ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি এখনো হাতে পাননি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অবসর সুবিধা দেওয়া শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। এই দুই সুবিধা বাবদ শিক্ষকেরা চাকরিকাল অনুযায়ী এককালীন অর্থ পান। সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৫ লাখের বেশি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৭৫টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে স্কুলপর্যায়ের ২৭ হাজার ৮৬২টি, কলেজের ১৭ হাজার ২৭৮টি, মাদ্রাসার ১২ হাজার ৯৬৮টি এবং কারিগরির শিক্ষকদের ৬ হাজার ৬৬৭টি।
আইন অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) থেকে চাঁদা হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে অবসর সুবিধা বোর্ড ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্ট ৪ শতাংশ পায়। এর বাইরে বিশেষ বা থোক বরাদ্দ এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেওয়া সিড মানি বা গচ্ছিত অর্থের লভ্যাংশ পায় সংস্থা দুটি।
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১৮ জন ভুয়া ইনডেক্সধারীকে বোর্ড তহবিল থেকে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬৭ টাকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা পরিশোধের আগে ইনডেক্স যাচাই আবশ্যক। অথচ ইনডেক্স যাচাই না করে ভুয়া ইনডেক্সের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এসব অর্থ আদায় করে বোর্ডের তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা দল।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর ভাতা প্রাপ্তির আবেদন না করলেও এবং বোর্ড থেকে ব্যাংকে কোনো অ্যাডভাইস না পাঠালেও তাঁদের অনুকূলে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ইনডেক্সধারীকে একাধিকবার অবসর সুবিধা দেওয়ায় বোর্ডের ১ কোটি চার লাখ ৭২ হাজার ৮৬১ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল আবেদনপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন হিসাবে ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮ টাকা এবং ভুয়া ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করে সফটওয়্যার ভেন্ডরের মাধ্যমে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৫ টাকা পরিশোধের তথ্যও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোর্ডের আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে না রেখে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা ফেরত না পাওয়ায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি ৬৩৯ কোটি ৬০ লাখ ৬১ হাজার ৭২৫ টাকা। এসব টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা করা আবশ্যক বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য আদায় করা ২৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৪০ টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তহবিল থেকে অবসর সুবিধা বোর্ডের তহবিলে জমা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপিওর চেক নগদায়নপূর্বক নির্ধারিত সময়ে ৫২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৩ টাকা জমা হয়নি। স্থায়ী তহবিলের প্রাপ্ত সুদ চলতি তহবিলে জমা না দেওয়ায় ৫৬ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৫২৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া তহবিল যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় ৯১ লাখ ৩৫ হাজার, যথাযথ নিয়মে হিসাবভুক্ত না করায় ২৯ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৭ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
পরামর্শক বাবদ বিল পরিশোধ করায় অনিয়মিত ব্যয় ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৪৮০ টাকা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাপ্যতা না থাকলেও সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮০ টাকা পারিতোষিক দেওয়া হয়েছে। আবার অতিরিক্ত অবসর সুবিধা পরিশোধ করায় ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৪ টাকা, ভ্যাট না কাটায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৩ টাকা, চেকের ব্যবহার না থাকলেও এ খাতে ব্যয় দেখিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৫ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এসব ব্যয়কে প্রতিবেদনে আর্থিক ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে এসব অর্থ আদায় করে বোর্ড তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে উৎসে কর না কাটায় ১ লাখ ৬ হাজার ১১ টাকা, ক্রয় সিলিং না মেনে ২৬ লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা না মেনে ১ কোটি ৮ লাখ ২৮ হাজার ৭০৭ টাকা ব্যয় এবং আর্থিক ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪১ টাকা ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে অবসর সুবিধা বোর্ডের তহবিল ব্যবস্থাপনা ও সম্পাদিত কার্যাবলির প্রতিবেদন প্রণয়ন না করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন বোর্ডের আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বোর্ড কর্তৃক ক্যাশবই ও স্টক রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়নি। তহবিল প্রাপ্তি নিশ্চিত না করে অধিক হারে পরিশোধের অঙ্গীকার করার অবসর সুবিধা বোর্ডের দায় উত্তরোত্তর বাড়ছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আপত্তিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরীক্ষার আপত্তিগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

অবসর ভাতার আবেদন করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবশ্যই ইনডেক্স (পরিচয় শনাক্তকারী নম্বর) থাকতে হবে। এই শর্ত ঠিক রেখেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া ইনডেক্সধারীদের অবসর ভাতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আবেদন না করেও অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অর্থ ব্যয় এবং পরিচালনায় এমন অনেক অনিয়ম ও অসংগতি পেয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অনিয়মে প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আইন লঙ্ঘন করে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানত ফেরত না পাওয়ায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি ৬৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা ও আইন অনুবিভাগ) জহিরুল ইসলাম ১৪ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি এখনো হাতে পাননি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অবসর সুবিধা দেওয়া শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। এই দুই সুবিধা বাবদ শিক্ষকেরা চাকরিকাল অনুযায়ী এককালীন অর্থ পান। সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৫ লাখের বেশি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৭৫টি আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে স্কুলপর্যায়ের ২৭ হাজার ৮৬২টি, কলেজের ১৭ হাজার ২৭৮টি, মাদ্রাসার ১২ হাজার ৯৬৮টি এবং কারিগরির শিক্ষকদের ৬ হাজার ৬৬৭টি।
আইন অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) থেকে চাঁদা হিসেবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে অবসর সুবিধা বোর্ড ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্ট ৪ শতাংশ পায়। এর বাইরে বিশেষ বা থোক বরাদ্দ এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেওয়া সিড মানি বা গচ্ছিত অর্থের লভ্যাংশ পায় সংস্থা দুটি।
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১৮ জন ভুয়া ইনডেক্সধারীকে বোর্ড তহবিল থেকে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬৭ টাকা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা পরিশোধের আগে ইনডেক্স যাচাই আবশ্যক। অথচ ইনডেক্স যাচাই না করে ভুয়া ইনডেক্সের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এসব অর্থ আদায় করে বোর্ডের তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা দল।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর ভাতা প্রাপ্তির আবেদন না করলেও এবং বোর্ড থেকে ব্যাংকে কোনো অ্যাডভাইস না পাঠালেও তাঁদের অনুকূলে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৭ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া একই ইনডেক্সধারীকে একাধিকবার অবসর সুবিধা দেওয়ায় বোর্ডের ১ কোটি চার লাখ ৭২ হাজার ৮৬১ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল আবেদনপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন হিসাবে ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮ টাকা এবং ভুয়া ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করে সফটওয়্যার ভেন্ডরের মাধ্যমে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৫ টাকা পরিশোধের তথ্যও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোর্ডের আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে না রেখে বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা ফেরত না পাওয়ায় বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি ৬৩৯ কোটি ৬০ লাখ ৬১ হাজার ৭২৫ টাকা। এসব টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা করা আবশ্যক বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য আদায় করা ২৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৪০ টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তহবিল থেকে অবসর সুবিধা বোর্ডের তহবিলে জমা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমপিওর চেক নগদায়নপূর্বক নির্ধারিত সময়ে ৫২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৩ টাকা জমা হয়নি। স্থায়ী তহবিলের প্রাপ্ত সুদ চলতি তহবিলে জমা না দেওয়ায় ৫৬ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৫২৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া তহবিল যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় ৯১ লাখ ৩৫ হাজার, যথাযথ নিয়মে হিসাবভুক্ত না করায় ২৯ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৭ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
পরামর্শক বাবদ বিল পরিশোধ করায় অনিয়মিত ব্যয় ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৪৮০ টাকা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাপ্যতা না থাকলেও সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮০ টাকা পারিতোষিক দেওয়া হয়েছে। আবার অতিরিক্ত অবসর সুবিধা পরিশোধ করায় ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৪ টাকা, ভ্যাট না কাটায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৩ টাকা, চেকের ব্যবহার না থাকলেও এ খাতে ব্যয় দেখিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৫ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এসব ব্যয়কে প্রতিবেদনে আর্থিক ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে এসব অর্থ আদায় করে বোর্ড তহবিলে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে উৎসে কর না কাটায় ১ লাখ ৬ হাজার ১১ টাকা, ক্রয় সিলিং না মেনে ২৬ লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা না মেনে ১ কোটি ৮ লাখ ২৮ হাজার ৭০৭ টাকা ব্যয় এবং আর্থিক ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৪১ টাকা ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে অবসর সুবিধা বোর্ডের তহবিল ব্যবস্থাপনা ও সম্পাদিত কার্যাবলির প্রতিবেদন প্রণয়ন না করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন বোর্ডের আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বোর্ড কর্তৃক ক্যাশবই ও স্টক রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হয়নি। তহবিল প্রাপ্তি নিশ্চিত না করে অধিক হারে পরিশোধের অঙ্গীকার করার অবসর সুবিধা বোর্ডের দায় উত্তরোত্তর বাড়ছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আপত্তিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিরীক্ষার আপত্তিগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে। সে আলোকে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় গণজাগরণ, যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। ৩৬ দিনের এই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যেখানে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন কর্মসূচি পালন
২৭ জুলাই ২০২৫
চীনে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে বড় সুযোগ। দেশটির বেইহাং ইউনিভার্সিটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্পূর্ণ অর্থায়িত এই বৃত্তিতে অর্থায়ন করবে দেশটির সরকার।
৯ ঘণ্টা আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেল।
৯ ঘণ্টা আগে
প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ প্রধান শিক্ষকদের ‘আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত’ এবং তাঁদের ‘সামাজিক মর্যাদা সুসংহত’ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
১ দিন আগে