Ajker Patrika

এক মানুষখেকোর কাহিনি

পরাগ মাঝি
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০: ০৩
এক মানুষখেকোর কাহিনি

রাষ্ট্রশক্তির গহিনে চলে অন্তর্ঘাতের খেলা। সেই খেলায় ভর দিয়ে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠে ভয়ংকর সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক। এই চক্রের পাঁকে পড়ে কেউ খুনি, কেউ ডাকাত, কেউ ধর্ষক ও লুটেরা হয়। মানবতার সেখানে কোনো ঠাঁই নেই, পাগলামিই হয়ে ওঠে মুখ্য। দুনিয়াজুড়ে বেড়ে ওঠা এমন ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আজকের পত্রিকার এই সিরিজ প্রতিবেদন। তবে বলে রাখা ভালো, এটা কোনো মৌলিক রচনা নয়, সংকলনমাত্র। প্রকাশিত হয় প্রতি শুক্রবার দুপুরে, আজ তার পঞ্চম কিস্তি।

পানশালাটির নাম ‘ক্লাব ২১৯’। সমকামীদের এই পানশালায় কিছুদিন ধরেই আনাগোনা করছিলেন জেফরি ডাহমার। ১৯৯১ সালের ২২ জুলাই সন্ধ্যায়ও যথারীতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ৩১ বছর বয়সী স্বর্ণকেশী শ্বেতাঙ্গ এই যুবককে নিয়ে কদিন ধরেই ক্লাবে আসা নর্তকদের মধ্যে কানাকানি আর হাসিঠাট্টা চলছিল। বিশেষ করে বিয়ার অফার করে নর্তকদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা অনেকের দৃষ্টি এড়ায়নি। বিনা মূল্যে বিয়ারের আশায় কেউ কেউ আবার তাঁর সঙ্গে খাতির জমানোর চেষ্টাতেও ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে অবস্থিত সেই পানশালায় সেদিন সন্ধ্যায়ও কৃষ্ণাঙ্গ তিন নর্তককে বিয়ার অফার করেন জেফরি। শুধু বিয়ারই নয়, ওই তিন নর্তকের যেকোনো একজনকে তাঁর সঙ্গে বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে দেবেন ৫০ ডলার। কাজ খুব বেশি নয়। জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে পোজ দিতে হবে শুধু। কয়েকটি ছবি তুলবেন নিজেকে শিল্পী পরিচয় দেওয়া জেফরি। 

প্রস্তাবটি দুজন উড়িয়ে দিলেও লুফে নিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী ট্রেসি এডওয়ার্ডস নামের নর্তক যুবকটি। সারা রাতের জন্য সেদিন জেফরির সঙ্গে রওনা হন তিনি। কিন্তু মিলওয়াকির অক্সফোর্ড অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত জেফরির ২১৩ নম্বর ফ্ল্যাটে ঢুকেই কিছুটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যান ট্রেসি। ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই উৎকট এক গন্ধ তাঁর নাকে এসে ধাক্কা দেয়। কিছুটা দ্বিধা নিয়েই তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। জেফরি তাঁকে জানান, গন্ধটা আর কিছুর নয়, বাড়ি থেকে শূকরের মাংস পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই মাংস ফ্রিজে রাখলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে যা হওয়ার হলো—সব মাংস পচে গেছে!

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জেফরি ডাহমার। ছবি: সংগৃহীতজেফরির এ কথায়ও সন্দেহ দূর হয়নি ট্রেসির। ফ্ল্যাটে প্রবেশের পর একটি গ্লাসে ডাহমার বিয়ার ঢেলে দিলেও তিনি তা কৌশলে পান করেননি। ট্রেসির সন্দেহ শেষ পর্যন্ত আতঙ্কে পরিণত হয়, যখন অ্যাকোরিয়ামের মাছ দেখানোর ছলে তাঁর হাতে একটি হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন জেফরি। আর বলেন, তিনি ট্রেসির হৃৎপিণ্ড খেতে চান। 

ট্রেসি বুঝতে পারেন, খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তবু অনেক কৌশল এবং কথার ছলে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন এবং পেয়েও গেলেন। জেফরির একটু অন্যমনস্কতায় হ্যান্ডকাফ পরা হাতেই তাঁর মুখে মোক্ষম এক আঘাত করেন ট্রেসি। জেফরি মেঝেতে পড়ে গেলে ট্রেসি দৌড়ে যান দরজার কাছে। কোনোক্রমে দরজা খুলে বেরিয়েই তিনি দিগ্বিদিক দৌড়াতে শুরু করেন। তাঁর মুখ দিয়ে তখন কেবল একটি শব্দই বের হচ্ছিল—পুলিশ...পুলিশ...। 

জেফরি ডাহমারকে নিয়ে নির্মিত নেটফ্লিক্সের সিনেমায় ট্রেসি এডওয়ার্ডের ভূমিকায় ছিলেন এই অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীতকিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের একটি গাড়ি ট্রেসির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রেসিও হাত-পা ছেড়ে দিয়ে গাড়িটির সামনে একেবারে শুয়ে পড়ার দশা হয়। একটু আগেই ঘটে যাওয়া জীবনের কঠিনতম মুহূর্তটির কথা গাড়িতে থাকা দুই পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশ অবশ্য শুরুতে তাঁর কথাকে এতটা পাত্তা দিতে চায়নি। তবু তারা ট্রেসিকে নিয়ে জেফরির ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলতো করে টোকা দেওয়ার পর জেফরিও দরজাটি একটু ফাঁক করেন। পুলিশ তখন ট্রেসির অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চায়। জেফরি জানান, আসলে ট্রেসি তাঁর পুরুষ প্রেমিকা। তাঁরা দুজন সমকামী। একটু মান-অভিমান হয়েছে, তাই এমন অভিযোগ করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

পুলিশ এবার ট্রেসির দিকে তাকায়। ভাবখানা এমন—তলে তলে এসব চলছে, এর মাঝে আবার পুলিশের কাছে নালিশ কেন? প্রেমিকের সঙ্গে মিলে যাও আর সুখে থাকো। 

কিন্তু ট্রেসির হাতের হ্যান্ডকাফটিই সব গন্ডগোল করে দিল। জেফরির কাছে পুলিশ জানতে চাইল, এই হ্যান্ডকাফ কোথায় পেলেন? এর চাবি কোথায়? 

চাবি কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই কিছুটা হকচকিয়ে যান জেফরি। আসলে একটু আগের ধস্তাধস্তি আর গোলমালে চাবিটি ঠিক কোথায়, মনে করতে পারছিলেন না তিনি। তবু শোয়ার ঘরের একটি ড্রয়ারে চাবিটি রাখা আছে বলে জানান। পুলিশ এবার চাবিটির জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। পুলিশকে না বলার মতো কোনো অজুহাতই মাথায় আসেনি জেফরির। অগত্যা দুই পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ট্রেসিকেও ডাকে। কিন্তু ট্রেসি ইশারায় জানিয়ে দেন—না, আপনারাই যান, আমি আর এর মধ্যে নেই। 

জেফরির ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুম। ছবি: সংগৃহীতফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করেই সেই বিদঘুটে গন্ধ পায় পুলিশ। বিষয়টি তাদের কাছেও অস্বাভাবিক ঠেকে। এবার তারা জেফরিকে দাঁড় করিয়ে কোন ড্রয়ারে চাবি রাখা, সেই ড্রয়ার দেখিয়ে দিতে বলে। ড্রয়ার খুলে চাবি শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়, কিন্তু সেই ড্রয়ারেই কতগুলো ছবিও পাওয়া যায়। ছবিগুলোতে নৃশংসতার শিকার কিছু মানুষ, শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মাথাবিহীন শরীর দেখে পুলিশ বুঝতে পারছিল না এগুলো সত্যি কি না। জেফরি অবশ্য সেই মুহূর্তে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুই পুলিশের একজন তাঁকে জাপটে ধরে মেঝেতে শুইয়ে ফেলে। এরপরের ঘটনাগুলো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল পুরো পুলিশ বাহিনীর। জেফরির ঘরে পরে যা পাওয়া যায়, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না পুলিশ। ফ্রিজের মধ্যে পাওয়া যায় মানুষের বিচ্ছিন্ন একটি মাথা। ফ্রিজের ভেতরেই দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছিল মানুষের দুটি হৃৎপিণ্ড। একটি পুরুষাঙ্গও ছিল আরেক ব্যাগে। শোয়ার ঘরে পাওয়া যায় মানুষের মাথার পাঁচটি খুলি, ধারালো ছুরি আর করাত। একটি ড্রয়ারে মানুষের আস্ত একটি কঙ্কালও মেলে। ঘরের ভেতরেই ছিল ৫৭ গ্যালনের একটি প্লাস্টিকের ড্রাম। ওই ড্রামে রাখা অ্যাসিডের মধ্যে ডুবানো অবস্থায় পাওয়া যায় মাথাবিহীন আরও তিনটি শরীর। মূলত হত্যার পর এই অ্যাসিডে ডুবিয়েই হাড় থেকে মানুষের রক্ত-মাংস আলাদা করে নিতেন জেফরি। 

আলামত হিসেবে জেফরির বাড়ি থেকে ফ্রিজ জব্দ করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত২৯ বছর আগে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের ঘটনাটি নাড়িয়ে দেয় পুরো পৃথিবীকে। ফ্ল্যাটে তল্লাশির সময়ই পুলিশ বুঝতে পেরেছিল, এই শতাব্দীর ভয়ংকরতম খুনির সন্ধান পেয়ে গেছে তারা। জেফরি ডাহমারও বুঝে যান, এখানেই তাঁর শেষ। তাই কোনো কিছু না লুকিয়ে পুলিশের কাছে তিনি স্বীকারোক্তি দেন। জেফরি জানান, তিনি মোট ১৭ জনকে খুন করেছেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সব কটি খুন করেন তিনি। হাত ফসকে না গেলে ট্রেসি হতেন তাঁর ১৮তম খুন। তবে শুধু খুন নয়, খুনের পর কিংবা অচেতন অবস্থায় তিনি তাঁর শিকারকে ধর্ষণও করতেন। কিশোর বয়সেই তাঁর মধ্যে সমকামিতা প্রকট হতে শুরু করেছিল। 

অনেকে মনে করেন, জেফরির এমন ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠার নেপথ্যে ছিল তাঁর শৈশব। ছোটবেলা থেকেই তিনি একটি বিশৃঙ্খল পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। ১৯৬০ সালের ২১ মে মিলওয়াকির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। মা জয়েস ফ্লিন্ট ছিলেন অস্বাভাবিক চরিত্রের অধিকারী। সব সময় স্বামীর মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জেফরির বাবা লিওনেল ডাহমার ছিলেন একজন রসায়নবিদ এবং কাজপাগল মানুষ। সংসারে সময় দেওয়ার সুযোগ পেতেন কম। ফলে এটা-ওটা নিয়ে দাম্পত্য কলহ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় সময়ই বাড়ি থেকে কয়েক দিনের জন্য বেরিয়ে যেতেন লিওনেল। 

বাবা-মায়ের সঙ্গে জেফরি। ছবি: সংগৃহীতপারিবারিক এই বিশৃঙ্খলা স্কুল কিংবা সমবয়সীদের মাঝেও একা করে দিয়েছিল জেফরিকে। তাঁর বাবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অল্প বয়সেই মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। প্রায়ই তিনি মৃত প্রাণীদের হাড় নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন। 

জেফরি হাইস্কুলে ওঠার পর ডাহমার পরিবার উইসকনসিন থেকে ওহাইও অঙ্গরাজ্যে চলে যায়। হাইস্কুলে পড়ার সময় ১৪ বছর বয়সেই মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন জেফরি। জ্যাকেটের পকেটে বিয়ার কিংবা মদের বোতল নিয়ে তিনি স্কুলে যেতেন। এর প্রভাব পড়ে পড়াশোনায়ও। কিছুদিনের মধ্যে নিজের ভেতরে আরও এক অস্বাভাবিক কিছু টের পান জেফরি। বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি সমকামী। বিপরীত লিঙ্গের বদলে ছেলেদের প্রতিই যৌন আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেন। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায় যে ১৬ বছর বয়সে একদিন রাস্তার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গেও তিনি মিলিত হয়েছিলেন। মিলনের পর অবশ্য তিনি কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, বিষয়টি টের পেয়ে যাবেন ওই লোক এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তাই একটি ঝোপের আড়ালে বেসবলের ব্যাট নিয়ে ওত পেতে ছিলেন তিনি। লোকটি অবশ্য সেদিন ওই পথে না গিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তা না হলে ওই লোকই হতেন জেফরির হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। 

হাইস্কুলে পড়ার দিনগুলোতে মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জেফরি। ছবি: সংগৃহীতপরের বছর, অর্থাৎ জেফরির যখন ১৭ বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা-মায়ের মধ্যে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটে। একদিন বাড়ি ফিরে জেফরি দেখেন, ছোট ভাইকে নিয়ে তাঁর মা চলে গেছেন আত্মীয়দের বাড়িতে আর বাবা গিয়ে উঠেছেন একটি মোটেলে। এর ফলে পুরো বাড়িতে জেফরির একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিঃসঙ্গ এমন পরিবেশই হয়তো তাঁকে সিরিয়াল কিলারে পরিণত করেছিল। 

১৯৭৮ সালে ১৮ বছর বয়সে হাইস্কুল পাস করেন জেফরি। এর কয়েক সপ্তাহ পরই নিজ বাড়িতে তিনি জীবনের প্রথম খুনটি করেন। সেদিন তাঁর শিকার ছিলেন স্টিভেন মার্ক হিকস নামে ১৯ বছর বয়সী এক হিচহাইকার। হিচহাইকার বলা হয় তাদেরই, যারা গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অন্যের গাড়িতে লিফট নেয়। হাত ওড়াতে দেখে হিকসকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন জেফরি। হিকস যাচ্ছিলেন ওহাইওর চিপ্পেওয়া লেক পার্কে একটি রক ব্যান্ডের কনসার্টে। জেফরি তাঁকে পৌঁছে দেবেন বলেছিলেন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে হিকসকে নিজ বাড়িতে কয়েক চুমুক বিয়ার পান করারও অফার করেন তিনি। হিকসের কাছে এই প্রস্তাব ছিল মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কনসার্টে যাওয়ার আগে একটু পান করে নিলে মন্দ হয় না। কিন্তু সেই বাড়িতে কয়েক টান গাঁজা আর বিয়ার পানের পরই হিকস বুঝতে পেরেছিলেন জেফরির সমকামিতার বিষয়টি। হিকস তাই ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিলেন। ঠিক এমন সময় মেজাজ হারিয়ে তাঁর মাথায় ১০ পাউন্ড ওজনের একটি ডাম্বেল দিয়ে সজোরে আঘাত করেন জেফরি। মেঝেতে লুটিয়ে পড়া হিকসকে পরে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। একপর্যায়ে জামাকাপড় খুলে হিকসের নগ্ন মরদেহের ওপর হস্তমৈথুনও করেন। 

পরদিন হিকসের মৃতদেহটি কেটে টুকরো টুকরো করে বাড়ির পেছনেই মাটিচাপা দেন। এক সপ্তাহ পর সেই টুকরোগুলো আবার ওপরে তোলেন এবং হাড় থেকে মাংস আলাদা করেন। পরে অ্যাসিডে মাংস গলিয়ে বাথরুমের কমোডে ঢেলে ফ্ল্যাশ করে দেন। আর হাড়গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন বাড়িসংলগ্ন জঙ্গলে। 

জেফরির প্রথম শিকার স্টিভেন মার্ক হিকস। ছবি: সংগৃহীতজেফরির প্রথম খুনের ছয় সপ্তাহ পর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর বাবা বাড়িতে এসে হাজির হন। সেই বছরের আগস্টে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ছাত্রত্ব হারান। ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে বাবার পীড়াপীড়িতে মার্কিন সেনাবাহিনীতেও যোগ দেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহলের কারণে দুই বছরের মাথায় তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে সম্মানজনকভাবে বিদায় করা হয়। 

সেনাবাহিনী থেকে ফেরার পর জেফরির ঠিকানা হয় আবারও উইসকনসিন। মিলওয়াকির শহরতলি অ্যালিসে দাদির বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। বেসামরিক জীবনে মদ্যপান ছাড়াও শিশুদের সামনে হস্তমৈথুন করা থেকে শুরু করে একটি সমকামী স্নানাগারে অন্তত ১২ জন সঙ্গীকে ঘুমের ওষুধ মেশানো মদ খাইয়ে তাঁদের অচেতন দেহের সঙ্গে যৌনতার মতো নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন। এই অভিযোগে পরে তাঁর সদস্যপদও বাতিল করে স্নানাগার কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম খুনের পর দ্বিতীয় খুনটি করতে ৯ বছর সময় লেগেছিল তাঁর। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি হত্যা করেন স্টিভেন তুওমি নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে। একটি পানশালায় দেখা হয়েছিল দুজনের। পরে তাঁরা শহরের একটি হোটেলে রাত কাটাতে যান। কিন্তু সেই রাতের পরদিন সকালে তুওমিকে রক্তাক্ত ও নিহত অবস্থায় দেখেন জেফরি। স্বীকারোক্তিতে তিনি দাবি করেছিলেন, অচেতন করে যৌন সম্পর্ক করা ছাড়া তুওমির সঙ্গে আর কিছু করার পরিকল্পনা ছিল না তাঁর। কিন্তু রাতের বেলায় কখন কী ঘটল কিছুই মনে ছিল না। পরদিন তুওমির মরদেহটি একটি স্যুটকেসে ভরে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন বলে কেউ কিছু জানেনি। 

জেফরির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড়। ছবি: সংগৃহীতমূলত তুওমির হত্যার মধ্য দিয়েই সিরিয়াল কিলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেছিলেন জেফরি। সেই দিনগুলোতে দাদির সঙ্গে থাকা অবস্থায় দাদির বাড়ির বেসমেন্টে নিয়ে অন্তত তিনজন সমকামীকে মাদক সেবন করিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন তিনি। এই তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন অ্যান্টনি সিয়ার্স নামে ২৪ বছর বয়সী উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক মডেল। তাঁকে হত্যার পর স্মারক হিসেবে তাঁর মাথা ও পুরুষাঙ্গ অ্যাসিটোনে ভরা একটি বয়ামে সংরক্ষণ করেছিলেন জেফরি। পরবর্তী সময়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে অক্সফোর্ড অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত নিজের ভাড়া করা ফ্ল্যাটেও ওই মাথা ও পুরুষাঙ্গ নিয়ে গিয়েছিলেন। পরের দুই বছরে তিনি তাঁর ১৭টি খুনের সিংহভাগই করেছিলেন ওই ফ্ল্যাটে। সেখানেই মানুষের মাংস ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে তাঁর। নর্তক ট্রেসি এডওয়ার্ডসের উপস্থিত বুদ্ধিতে শেষ পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটেই ধরা পড়েছিলেন তিনি। 

১৯৯২ সালের বিচারে ১৬টি যাবজ্জীবনসহ মোট ৯৪১ বছরের জামিন অযোগ্য কারাদণ্ড পান জেফরি। তবে জীবনের নির্মম পরিণতি তাঁর জন্যও অপেক্ষা করছিল খোদ কারাগারের ভেতরে। দিনটি ছিল ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর। সেদিন সকালে উইসকনসিনের কলম্বিয়া কারেকশনাল ইনস্টিটিউট কারাগারের ভেতর জেফরির সামনে মূর্তিমান এক যমরূপে হাজির হন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক বন্দী ক্রিস্টোফার স্কারভার। কারাগারের স্নানাগারের ভেতরে জেফরিকে একটি লৌহদণ্ড দিয়ে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করেন তিনি। নির্মম প্রহারে মাথার খুলি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়েছিল সিরিয়াল কিলারের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু ঘটে। 

কারাগারের ভেতর জেফরিকে হত্যা করা ক্রিস্টোফার স্কারভার তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীতএই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ক্রিস্টোফার স্কারভার জানিয়েছিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তিনি জেফরিকে খুন করেছেন। পেটানোর সময় জেফরি কোনো প্রতিরোধ কিংবা পাল্টা আঘাত করেননি। যেন নিয়তিকে তিনি মেনে নিয়েছিলেন। 

জেফরির হাতে নিহত ১৭ জনের বেশির ভাগই ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। ধারণা করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিশোধ নিতেই জেফরিকে খুন করেন কালো শরীরের ক্রিস্টোফার স্কারভার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।

ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচজন রিমান্ডে

মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত