Ajker Patrika

মিরসরাইয়ে বিএনপি দুই পক্ষের সংঘর্ষ, জুলাই মঞ্চ নেতার মৃত্যু

মিরসরাই (প্রতিনিধি) চট্টগ্রাম
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে তাহমিদ উল্যাহ (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও সাত-আটজন আহত হয়েছেন।

এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায় বারইয়ারহাট পৌর বাজারে একটি দোকানে পা তুলে বসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

নিহত তাহমিদ উল্যাহ বারইয়ারহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেনের একমাত্র ছেলে। তিনি স্থানীয় কদমতলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। এ ছাড়া দি রেড জুলাই মঞ্চের আহ্বায়ক, আপ বাংলাদেশ (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য ও ধর্ষণ প্রতিরোধ মঞ্চের উদ্যোক্তা ছিলেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জুবায়ের বারইয়ারহাট পৌরসভার একটি দোকানে পা তুলে বসেছিলেন। এ সময় দোকানে আসেন পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটন। তাঁকে দেখে জুবায়ের পা নামিয়ে না বসায় লিটন জুবায়েরকে লাথি মারেন। এতে উভয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা জড়ান।

পরে লিটন ও জুবায়ের নিজ নিজ এলাকা জামালপুর ও হিঙ্গুলীর লোকজন নিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে জুলাই যোদ্ধা তাহমিদসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

গুরুতর আহত তাহমিদকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার সময় তাঁর মৃত্যু হয়।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম উত্তরের সংগঠক মোহাম্মদ সাইফুল হাওলাদার বলেন, ‘তাহমিদ জুলাই যোদ্ধা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতা ছিলেন। ফেনীতে আন্দোলনের সময় তাঁর পেটে পুলিশের গুলি লেগেছিল। তাঁকে এভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই উপজেলার আহ্বায়ক মো. জামশেদ আলম বলেন, ‘তাহমিদ নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব। সে জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাহমিদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

নিহত তাহমিদের মা বিবি জোহরা বলেন, ‘মাদ্রাসায় তার পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে বিকেলে বাড়ি এসে ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। পরে তার এক বন্ধু বাড়িতে এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় খবর পাই, আমার ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ছেলে মারা যায়।’

বড় বোন আকলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই ছিল জুলাই যোদ্ধা। ’২৪ সালের ৪ আগস্ট আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। সমাজের অনেক মানুষের উপকার করত। ২০২৪ সালে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার সময়ও সে কাজ করেছে মানুষের জন্য। আমার ভাইটাকে নোংরা রাজনীতির লোকজন মেরে ফেলেছে। আমার ভাই একজন কোরআনের হাফেজ ছিল। আমাদের একমাত্র ভাইকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

তাহমিদের বাবা আলমগীর বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে কেন তারা মেরে ফেলল। ও তো কোনো দোষ করেনি। যদি কখনো ভুল করেও থাকে, তবে আমি নিজেই বিচার করতাম। এভাবে আমার ছেলেকে শেষ করে দিল কেন? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

বারইয়ারহাট পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব মোহন দে বলেন, ‘তাহমিদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনে সে কাজ করেছে। কিছুদিন আগে সে আমার সঙ্গে চলাফেরা করছে। ছাত্রদলের রাজনীতির করার মনস্থির করেছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

এ বিষয়ে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘ঘটনার আগে এলাকায় সামান্য ছেলেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় জুবায়েরের সঙ্গে আমার হাতাহাতি হয়। এরপর তারা বারইয়ারহাট চলে যায়। সেখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরপর কী হয়েছে আমার জানা নেই। অভ্যন্তরীণ পূর্বশত্রুতার জেরে এমনটা ঘটতে পারে।’

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাহমিদের নিহত হওয়ার খবর শুনে আমরা সবাই শোকাহত। এই ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কঠিন বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। আমি নিশ্চিত করে বলেছি, এটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে।’

চট্টগ্রাম পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) নাদিম হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘তাহমিদ হত্যার পেছনে কারা জড়িত, কারা তাকে গুরুতর আঘাত করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়—এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত যা থেকে বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়।’

তিনি আরও বলেন, তাঁর মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসা হবে।

এদিকে তাহমিদের খুনের ঘটনায় শোক জানিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে আপ বাংলাদেশ। সংগঠনের মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে খুনিদের শনাক্ত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...