Ajker Patrika

কোম্পানি বড় হলে বড় অপরাধেও প্রেসিডেন্টের ক্ষমা জোটে

আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ২৩: ০৫
কোম্পানি বড় হলে বড় অপরাধেও প্রেসিডেন্টের ক্ষমা জোটে

এক প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলেন, আরেক প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এটাই বুঝি আধুনিক কনগ্লোমারেটের শক্তিমত্তার একটি বড় দৃষ্টান্ত।

স্যামসাং উত্তরাধিকারী লি জায়ে-ইয়ং ২০১৭ সালে ঘুষ ও অর্থ তছরুপের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এরপরও দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাঁকে বিশেষ ক্ষমতাবলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান পুঁজিপতি অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম লি। সাবেক প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে লি দুবার কারাবরণ করেছেন। এই ঘটনায় ক্ষমতা হারিয়েছেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাই। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

ঘুষ নেওয়া ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার তথ্য ফাঁস হলে ছয় বছর আগে সিউলে গণ-বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট পাক জিউন হাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এরপর রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া।

এত কিছুর পরও স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী বা কার্যত প্রধান লিকে ক্ষমা ঘোষণার একটি যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। এই পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণে সরকার বলছে, মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশের বৃহত্তম কোম্পানির ডি-ফ্যাক্টো (কার্যত) নেতাকে প্রয়োজন ছিল।

লিকে বিক্ষোভকারীরা বলতেন, ‘স্যামসাংয়ের ক্রাউন প্রিন্স’। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক এবং তাঁর সহযোগীকে ৮০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি। একটি মার্জারের (একাধিক কোম্পানি একীভূতকরণ) পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করতে তিনি এটি করেছিলেন। কারণ শেয়ারহোল্ডাররা এই মার্জারের বিরোধিতা করছিলেন। এই একীভূতকরণের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের পক্ষে স্যামসাং সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত হতে পারত।

এই তথ্য ফাঁস হয় ২০১৬-১৭ সালের শীতকালে। এরপর সপ্তাহান্তে নিয়ম করে লক্ষাধিক দক্ষিণ কোরীয় মোমবাতি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্কের সরকার ও রাজনীতি এবং ব্যবসার মধ্যে স্বার্থের সংঘাত মেটানোর দাবি জানান। কোরিয়ার পার্লামেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে। ২০১৭ সালে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।

স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী লি, পশ্চিমে জে ওয়াই লি নামেও পরিচিত। তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বন্ধুর মেয়ের জন্য ৮ লাখ ডলারে ঘোড়া কিনেছিলেন কোম্পানির টাকায়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানির অর্থ তছরুপের অপরাধে ঘটনার এক বছর পরই তাঁকে জেলে পাঠানো হয়।

নতুন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন রাজনীতি ও অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ দিনগুলোর মধ্যে পূর্বসূরিকে (আগের প্রেসিডেন্ট) ক্ষমা করেন। এর আট মাস পর আরেক প্রেসিডেন্ট স্যামসাং-এর কার্যত প্রধানকেও ক্ষমা করলেন।

কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এটি খুবই বাজে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল বলে মনে করছেন তাঁরা। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও শিল্প নীতির অধ্যাপক সানগিন পার্ক বলেন, ‘এটি হলো পিছু হটা। এবং এর অর্থ সেই মোমবাতি জ্বালানো বিক্ষোভের দিনগুলোর আগের যুগে ফিরে গেল কোরিয়া।’

লির এই ঘটনা সেই জনপ্রিয় ধারণাকেই আবার প্রতিষ্ঠিত করল যে—বড় ব্যবসায়ীরা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে!

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে বিশাল কনগ্লোমারেটগুলোর আধিপত্য। শীর্ষ ১০টি কোম্পানিরই জিডিপিতে অবদান প্রায় ৮০ শতাংশ। এগুলোকে কোরীয় ভাষায় বলে চেবোল। পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য এগুলো। এলজি, হুন্দাই, লোটে এবং এসকে এগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এই চেবোলগুলোর মধ্যে স্যামসাং সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমতাবান; বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা এবং বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড। তবে নিজ দেশে এই কোম্পানি আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। যেমন: হাসপাতাল, হোটেল, বিমা, বিলবোর্ড, শিপইয়ার্ড এবং এমনকি থিম পার্ক!

এ ব্যাপারে টরন্টো ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউনকিউং লি বিবিসিকে বলেন, ‘স্যামসাং এবং অন্য চেবোলগুলো এতটাই সর্বব্যাপী যে তারা “অক্টোপাস ফার্ম” নামে পরিচিত।’

অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেলেন স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী লি জায়ে-ইয়ং।এই বৃহৎ কোম্পানিগুলো দীর্ঘকাল আগেই কোরিয়ার রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তরে প্রবেশ করেছে। অধ্যাপক লি ২০১৬ সালের প্রতিবাদ বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। তিনি দেখেছেন, নাগরিকদের রাগ মূলত প্রেসিডেন্ট পার্কের ব্যক্তিগত কার্যকলাপ কেন্দ্রিক। কিন্তু শ্রমিক অধিকার কর্মী এবং অন্যরা সরকারের মধ্যে চেবোলদের প্রভাব-প্রতিপত্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

কোরীয় যুদ্ধের পর সরকার চেবোলদের ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে। তাদের কম দামে বিদ্যুৎ এবং কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। ‘দেশীয় পণ্য কেনার’ একটি নীতি নিয়েছিল সরকার। এমনকি শিল্প-কারখানাগুলোতে শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলন দমনে সরাসরি সহায়তা করেছিল খোদ সরকার।

এতে জায়ান্টগুলো আরও অবয়বে বাড়তে থাকে কিন্তু একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ ধ্বংস করে দেয় এবং শ্রমিক আন্দোলন দমন করা হয়। এভাবে স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী চর্চার একপর্যায়ে প্রবেশ করে অনিয়ম। কয়েক দশক ধরে ঘুষ ও দুর্নীতির জালে জড়িয়ে যায় চেবোলগুলো।

অধ্যাপক লি বলেন, বহুবার ধরা পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে নির্বাহীদের লঘু দণ্ড বা সাময়িক বরখাস্ত করার মতো সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে বিচারকেরা বলেছেন, যদি কোনো চেবোল নেতাকে তাঁর কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

স্যামসাংয়ের বর্তমান প্রধান লি-এর বাবা লি কুন-হি ১৯৯০-এর দশকে ঘুষ এবং জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি স্যামসাং চেয়ারম্যান। কিন্তু একদিনও জেল খাটেননি।

তাই ২০১৭ সালে যখন লি কুন হির ছেলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান এবং গরাদ ঘরের বাসিন্দা হন তখন অধিকার কর্মীরা আশা করেছিলেন, এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে।

কিন্তু শিগগিরই এই আশার গুড়ে বালি ঢেলেছে সরকার। আদালতে আইনি লড়াই বছরের পর বছর ধরে চলেছে। বারবার ঘটনা নানা দিকে মোড় নিয়েছে। একটি আপিল আদালত তাঁকে মুক্তি দেন। একটি উচ্চ আদালত তারপর আবার বিচারের আদেশ দেন, যেখানে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার কারাগারে পাঠানোর মাত্র কয়েক মাস পরে মুন সরকার তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেয়। যুক্তি হিসেবে ‘জাতীয় স্বার্থের’ কথা বলে সরকার।

এরপর থেকে লি স্যামসাংয়ের প্রধান মুখে পরিণত হন। গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাণিজ্য সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানান লি।

কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়নে কারচুপি, হিসাব জালিয়াতি এবং শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ফৌজদারি অপরাধ কাঁধে নিয়ে ঘুরছেন লি। এই ধরনের একজন অপরাধীকে ক্ষমা করার অর্থ হলো তিনি তাঁর নির্বাহী দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে যোগ্য বিবেচিত হবেন।

যুদ্ধ পরবর্তী কোরিয়ার ইতিহাস বলে, সাজা পাওয়া চেবোল নেতাদের ক্লিন চিট দেওয়ার একটি ঐতিহ্য এ দেশে রয়েছে। কারণ আনুষ্ঠানিক ক্ষমতার কথা বললে সামনে আসে—প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং জাতীয় পরিষদ—যারা আইন তৈরি করে। কিন্তু যখন রাজনৈতিক প্রভাব বা সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথা আসে বা কোরীয় সমাজে চেবোলের প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকেরা কীভাবে ভাবছে—তখন পুরো চিত্রটি একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক অভিজাতদের জোটের ধারণায় পর্যবসিত হয়, যাদের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে।

লি-কে সাধারণ ক্ষমা করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ‘অর্থনীতির জন্য চেবোল নেতাদের প্রয়োজনের’ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, এর সপক্ষে শক্ত প্রমাণ নেই। যেমন: লি যখন কারাগারে বা কারাগারের বাইরে বিচ্ছিন্ন ছিলেন তখনো কিন্তু স্যামসাং বেশ ভালোই চলেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর। সুতরাং এই চেবোলদের ওপর নির্ভরতা কমানোর এটাই সময়। তা ছাড়া বহু আলোচিত অর্থনীতির ‘ট্রিকল ডাউন’ (সম্পদ ওপর থেকে নিচে চুঁয়ে পড়া) তত্ত্ব একাধিক গবেষণায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি ও চেবোলদের প্রভাব মোকাবিলার ইচ্ছে সরকারের রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার পেছনে একটি আসন্ন মন্দা এবং বিশ্ব মঞ্চে কোরিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী স্যামসাংয়ের গর্ব খর্ব হওয়ার ভয় ও উদ্বেগ কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: জেএমবির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে পরিচালক গ্রেপ্তার হন দুবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।

আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’

গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’

ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’

ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’

ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’

পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’

পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

বিষয়:

অপরাধ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত