কামরুল হাসান

জেলখানায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে গেলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া খুনের এক আসামি। খবর বলতে ছিল এটুকুই। আদালত, প্রসিকিউশন, আইনজীবী—কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। কারাগারও মুখ খোলে না। ভাবছি হাল ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা।
তার পরে যা ঘটল রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সেই খবর ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংসদে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল। আইনমন্ত্রীকে তিনবার সংবাদ সম্মেলন করতে হলো। তাতেও শেষ নয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা পর্যন্ত করলেন আইনমন্ত্রী। রাজনীতির মাঠ আর সরকারের ভেতর-বাহির যেন তেতে উঠল একটি ছোট্ট খবরে। আজ ‘আষাঢ়ে নয়’-এর জন্য সেই গল্পটা।
প্রথম আলোয় যোগ দিয়েছি কিছুদিন আগে। হাতে বড় কোনো খবর নেই। খবরের খোঁজে দিনরাত টো টো করে ঘুরি। অফিসে ঢুকলে কর্তাব্যক্তিরা চশমার ফাঁক দিয়ে তাকান, কিন্তু কিছু বলেন না। হঠাৎ পেলাম এই খবর। হাল ভাঙা নাবিকের মতো খড়কুটো ধরে বাঁচার মতো ছুটলাম সেই খবরের পেছনে—যদি কিছু মেলে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ছিলেন কামরুল ইসলাম। তাঁর সাফ জবাব, এই আসামির কোনো কাগজপত্র নেই। কারণ, ক্ষমার আবেদনটি নিজেরাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। পরে জেলখানার এক কর্মকর্তার পেছনে দুই দিন ঘোরাঘুরি করলে তিনি এক ব্যক্তির ঠিকানা লেখা একটি চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিলেন। তাতে লেখা—আসামির নাম মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু, পিতার নাম মরহুম শহীদুল্লাহ। ঠিকানা ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া। ব্যাস, ক্লু হাতে। এবার ছুট গেন্ডারিয়ার দিকে।
আসগর আলী জেনারেল হাসপাতাল এখন যেখানে, তার একটু সামনে হাসপাতালের দিক থেকে যেতে বাম হাতে ছিল একটি ওষুধের দোকান। সেই দোকানের পেছনেই বাড়িটি। ঠিকানা ধরে গেলাম, কিন্তু কেউ কোনো কথা বলে না। ডাকাডাকি করার পর একজন এসে বললেন, জিন্টু নামে কেউ সেখানে নেই। ফিরে গেলাম সেই ওষুধের দোকানে। দোকানের মালিকের সামনে সেদিনের দৈনিক পত্রিকা। পরিচয় দিতেই তেপায়া একটা টুল ঠেলে বসতে বললেন। নানা কথার ফাঁকে আসল কথা তুললাম। শুনে তিনি একটু চিন্তিত হলেন। বললেন, আজ যান, দেখি কাল কী করা যায়। পরের দিন গেলাম। তিনি বললেন দুই দিন পরে আবার যেতে। গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। এক দিন পর ঈদের ছুটি। আমার হাতে সময় নেই। পরের দিন আবার গেলাম।
একটি খবরের জন্য এভাবে ঘুরছি দেখে দোকানি খুবই মুগ্ধ হলেন। বললেন, জেল থেকে আসার পর জিন্টু নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে গোপনে আছেন। কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। আপনি অপেক্ষা করেন। আজ সন্ধ্যার পর দেখা হবেই। সেটা ছিল ২০০৫ সালের ১৮ জানুয়ারি।
সন্ধ্যা ৭টা কি ৮টা হবে। একটি দোতলা বাড়িতে আমি আর সেই দোকানি। দেখলাম, যাকে খুঁজছি, তিনি সেই দোকানির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দোকানি আমাকে এমনভাবে পরিচয় করালেন, যেন তাঁর সঙ্গে আমার অনেক দিনের সখ্য। তাতে বরফ গলল। আমাকে ঘরের ভেতরে ডাকলেন সেই মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু। একটি বিছানায় তাঁর মা ছালেহা বেগম শুয়ে আছেন। পাশে ভাই মিন্টু। আমি এমনভাবে শুরু করলাম, যেন সবকিছুই আমার জানা। এতে কাজ হলো। জিন্টু নিজে থেকেই কথার ঝাঁপি খুললেন। আমার পকেটে ৯০ মিনিট রেকর্ডের মিনি টেপরেকর্ডার, তাতে নতুন ব্যাটারি। সব রেকর্ড হচ্ছে।
বললেন, ১৯৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি সূত্রাপুরের ব্যবসায়ী আবদুল খালেক রানা ও ফিরোজ আল মামুন খুন হন। সেই সময়ের আলোচিত সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের খুন করেন। সেই মামলায় এরশাদের মন্ত্রী রুহুল আমীন হাওলাদার ও জিন্টুকে অভিযুক্ত করা হয়। সামরিক আদালত ১৯৮২ সালের ২০ জুলাই রায় দেন। তাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল, তাঁর দুই সহযোগী শহীদ হোসেন ও আবুল কাসেমের সঙ্গে মহিউদ্দিন জিন্টুর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশ কার্যকরও হয়। অবশ্য শুরু থেকেই জিন্টু পলাতক ছিলেন।
রায় ঘোষণার পর ভারতে পালিয়ে যান জিন্টু। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা সুলতান আহমেদের আশ্রয়ে তিন বছর কাটান। ভারতে অবস্থানের সময় তিনি গোপনে ভারতীয় পাসপোর্টও করেন। সেই পাসপোর্টে ভিসা নিয়ে চুপিসারে জাপানে চলে যান। তার আগে একবার ভারতীয় পাসপোর্টে থাইল্যান্ড ঘুরে আসেন। ভারত ত্যাগের পর তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টের বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা জেনে যায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে নোটিশ পাঠায়। জাপানের টোকিওতে পুলিশ তাঁকে তিন দিন আটকে রেখে জেরা করলে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চান। কিন্তু জাপান তাঁকে আশ্রয় না দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। টোকিওতে বসে একই সঙ্গে তিনি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইডেনের ভিসা নেন।
ঢাকা থেকে বিএনপির নেতা মরহুম আবদুস সালাম তালুকদার, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর রায় তাঁকে চিঠি দিয়ে কানাডায় না গিয়ে সুইডেনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর থেকে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে সুইডেনে বাস করেন। সেখানে ‘পায়েল’ নামে তাঁর একটি রেস্টুরেন্ট জমিয়ে তোলেন। বিএনপির বড় বড় নেতা সুইডেনে গেলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। তিনিও তাঁদের খাতির-যত্ন করতেন। এভাবে হয়ে যান সুইডেন শাখা বিএনপির সভাপতি। পলাতক থাকা অবস্থায় ১৯৯২ সালে তিনি টেলিফোনে ঢাকায় বিয়েও করেন।
প্রথম দফায় বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন দেশে আসার জন্য। সব ঠিকঠাক থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি বেঁকে বসেন। দ্বিতীয় দফায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি আবার যোগাযোগ করেন। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায়সহ দলের অনেক নেতা তাঁকে ফিরে আসার পরামর্শ দেন।
এরপর সবকিছু ঠিক করে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় আসেন। ৩ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতকে বলেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করায় ভয়ে আত্মগোপন করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এতে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। আত্মসমর্পণের ১০ দিন পর ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দ্রুত তাঁর সাজা মওকুফ করেন। ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেই খবর ছাপা হয়। খবর ছাপা হওয়ার দিনই তিনি দেশ ত্যাগ করেন। এরপর শুরু হয় হইচই।
সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধার লঙ্ঘন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সেই অভিযোগ করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সম্পাদক ইনায়েতুর রহীম আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে দায়ী করে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, দণ্ড মওকুফ হওয়ার আগে আইনমন্ত্রী সুইডেনে জিন্টুর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। আইনমন্ত্রী এই বিবৃতি মিথ্যা দাবি করে মানহানির মামলা করেন। মামলার পরপরই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ইনায়েতুর রহীমের বাসায় দুই দফা পুলিশ অভিযান চালায়। এভাবে পাল্টাপাল্টি চলতে থাকে প্রায় বছরজুড়ে। এরপর ধীর ধীরে নতুন ঘটনার ভিড়ে হারিয়ে যায় জিন্টুর ঘটনা।
আমার হাতেও অনেক কাজ। নানা ব্যস্ততার ভিড়ে ভুলে গেছি জিন্টুর ঘটনা। হঠাৎ একদিন রাতে ফোন করলেন জিন্টুদের হাতে যে দুজন নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের একজন ফিরোজ আল মামুনের স্ত্রী। তাঁর কণ্ঠে ক্ষোভ। বললেন, ‘সাংবাদিক সাহেব বিরাট চাকরি করেন। কাঁড়িকাঁড়ি টাকা বেতন পান। কিন্তু আমার মতো অসহায় মানুষের কথা কখনো ভাবেন? খোঁজ নিয়েছেন, স্বামী খুন হওয়ার পর আমরা এত বছর ধরে কীভাবে বেঁচে আছি, কেউ কি নিয়েছে?’ আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দেন।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ মেঘ করলে কখনো কখনো যেমন একা লাগে, ঠিক তেমনই নিঃসঙ্গ মনে হলো নিজেকে।

জেলখানায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে গেলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া খুনের এক আসামি। খবর বলতে ছিল এটুকুই। আদালত, প্রসিকিউশন, আইনজীবী—কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। কারাগারও মুখ খোলে না। ভাবছি হাল ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা।
তার পরে যা ঘটল রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সেই খবর ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংসদে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল। আইনমন্ত্রীকে তিনবার সংবাদ সম্মেলন করতে হলো। তাতেও শেষ নয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা পর্যন্ত করলেন আইনমন্ত্রী। রাজনীতির মাঠ আর সরকারের ভেতর-বাহির যেন তেতে উঠল একটি ছোট্ট খবরে। আজ ‘আষাঢ়ে নয়’-এর জন্য সেই গল্পটা।
প্রথম আলোয় যোগ দিয়েছি কিছুদিন আগে। হাতে বড় কোনো খবর নেই। খবরের খোঁজে দিনরাত টো টো করে ঘুরি। অফিসে ঢুকলে কর্তাব্যক্তিরা চশমার ফাঁক দিয়ে তাকান, কিন্তু কিছু বলেন না। হঠাৎ পেলাম এই খবর। হাল ভাঙা নাবিকের মতো খড়কুটো ধরে বাঁচার মতো ছুটলাম সেই খবরের পেছনে—যদি কিছু মেলে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ছিলেন কামরুল ইসলাম। তাঁর সাফ জবাব, এই আসামির কোনো কাগজপত্র নেই। কারণ, ক্ষমার আবেদনটি নিজেরাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। পরে জেলখানার এক কর্মকর্তার পেছনে দুই দিন ঘোরাঘুরি করলে তিনি এক ব্যক্তির ঠিকানা লেখা একটি চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিলেন। তাতে লেখা—আসামির নাম মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু, পিতার নাম মরহুম শহীদুল্লাহ। ঠিকানা ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া। ব্যাস, ক্লু হাতে। এবার ছুট গেন্ডারিয়ার দিকে।
আসগর আলী জেনারেল হাসপাতাল এখন যেখানে, তার একটু সামনে হাসপাতালের দিক থেকে যেতে বাম হাতে ছিল একটি ওষুধের দোকান। সেই দোকানের পেছনেই বাড়িটি। ঠিকানা ধরে গেলাম, কিন্তু কেউ কোনো কথা বলে না। ডাকাডাকি করার পর একজন এসে বললেন, জিন্টু নামে কেউ সেখানে নেই। ফিরে গেলাম সেই ওষুধের দোকানে। দোকানের মালিকের সামনে সেদিনের দৈনিক পত্রিকা। পরিচয় দিতেই তেপায়া একটা টুল ঠেলে বসতে বললেন। নানা কথার ফাঁকে আসল কথা তুললাম। শুনে তিনি একটু চিন্তিত হলেন। বললেন, আজ যান, দেখি কাল কী করা যায়। পরের দিন গেলাম। তিনি বললেন দুই দিন পরে আবার যেতে। গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। এক দিন পর ঈদের ছুটি। আমার হাতে সময় নেই। পরের দিন আবার গেলাম।
একটি খবরের জন্য এভাবে ঘুরছি দেখে দোকানি খুবই মুগ্ধ হলেন। বললেন, জেল থেকে আসার পর জিন্টু নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে গোপনে আছেন। কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। আপনি অপেক্ষা করেন। আজ সন্ধ্যার পর দেখা হবেই। সেটা ছিল ২০০৫ সালের ১৮ জানুয়ারি।
সন্ধ্যা ৭টা কি ৮টা হবে। একটি দোতলা বাড়িতে আমি আর সেই দোকানি। দেখলাম, যাকে খুঁজছি, তিনি সেই দোকানির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দোকানি আমাকে এমনভাবে পরিচয় করালেন, যেন তাঁর সঙ্গে আমার অনেক দিনের সখ্য। তাতে বরফ গলল। আমাকে ঘরের ভেতরে ডাকলেন সেই মহিউদ্দিন আহমেদ জিন্টু। একটি বিছানায় তাঁর মা ছালেহা বেগম শুয়ে আছেন। পাশে ভাই মিন্টু। আমি এমনভাবে শুরু করলাম, যেন সবকিছুই আমার জানা। এতে কাজ হলো। জিন্টু নিজে থেকেই কথার ঝাঁপি খুললেন। আমার পকেটে ৯০ মিনিট রেকর্ডের মিনি টেপরেকর্ডার, তাতে নতুন ব্যাটারি। সব রেকর্ড হচ্ছে।
বললেন, ১৯৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি সূত্রাপুরের ব্যবসায়ী আবদুল খালেক রানা ও ফিরোজ আল মামুন খুন হন। সেই সময়ের আলোচিত সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের খুন করেন। সেই মামলায় এরশাদের মন্ত্রী রুহুল আমীন হাওলাদার ও জিন্টুকে অভিযুক্ত করা হয়। সামরিক আদালত ১৯৮২ সালের ২০ জুলাই রায় দেন। তাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী গালকাটা কামাল, তাঁর দুই সহযোগী শহীদ হোসেন ও আবুল কাসেমের সঙ্গে মহিউদ্দিন জিন্টুর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশ কার্যকরও হয়। অবশ্য শুরু থেকেই জিন্টু পলাতক ছিলেন।
রায় ঘোষণার পর ভারতে পালিয়ে যান জিন্টু। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা সুলতান আহমেদের আশ্রয়ে তিন বছর কাটান। ভারতে অবস্থানের সময় তিনি গোপনে ভারতীয় পাসপোর্টও করেন। সেই পাসপোর্টে ভিসা নিয়ে চুপিসারে জাপানে চলে যান। তার আগে একবার ভারতীয় পাসপোর্টে থাইল্যান্ড ঘুরে আসেন। ভারত ত্যাগের পর তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টের বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা জেনে যায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে নোটিশ পাঠায়। জাপানের টোকিওতে পুলিশ তাঁকে তিন দিন আটকে রেখে জেরা করলে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চান। কিন্তু জাপান তাঁকে আশ্রয় না দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। টোকিওতে বসে একই সঙ্গে তিনি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সুইডেনের ভিসা নেন।
ঢাকা থেকে বিএনপির নেতা মরহুম আবদুস সালাম তালুকদার, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর রায় তাঁকে চিঠি দিয়ে কানাডায় না গিয়ে সুইডেনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর থেকে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে সুইডেনে বাস করেন। সেখানে ‘পায়েল’ নামে তাঁর একটি রেস্টুরেন্ট জমিয়ে তোলেন। বিএনপির বড় বড় নেতা সুইডেনে গেলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। তিনিও তাঁদের খাতির-যত্ন করতেন। এভাবে হয়ে যান সুইডেন শাখা বিএনপির সভাপতি। পলাতক থাকা অবস্থায় ১৯৯২ সালে তিনি টেলিফোনে ঢাকায় বিয়েও করেন।
প্রথম দফায় বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন দেশে আসার জন্য। সব ঠিকঠাক থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি বেঁকে বসেন। দ্বিতীয় দফায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি আবার যোগাযোগ করেন। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায়সহ দলের অনেক নেতা তাঁকে ফিরে আসার পরামর্শ দেন।
এরপর সবকিছু ঠিক করে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় আসেন। ৩ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতকে বলেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করায় ভয়ে আত্মগোপন করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এতে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। আত্মসমর্পণের ১০ দিন পর ১৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দ্রুত তাঁর সাজা মওকুফ করেন। ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেই খবর ছাপা হয়। খবর ছাপা হওয়ার দিনই তিনি দেশ ত্যাগ করেন। এরপর শুরু হয় হইচই।
সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধার লঙ্ঘন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সেই অভিযোগ করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সম্পাদক ইনায়েতুর রহীম আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে দায়ী করে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, দণ্ড মওকুফ হওয়ার আগে আইনমন্ত্রী সুইডেনে জিন্টুর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। আইনমন্ত্রী এই বিবৃতি মিথ্যা দাবি করে মানহানির মামলা করেন। মামলার পরপরই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ইনায়েতুর রহীমের বাসায় দুই দফা পুলিশ অভিযান চালায়। এভাবে পাল্টাপাল্টি চলতে থাকে প্রায় বছরজুড়ে। এরপর ধীর ধীরে নতুন ঘটনার ভিড়ে হারিয়ে যায় জিন্টুর ঘটনা।
আমার হাতেও অনেক কাজ। নানা ব্যস্ততার ভিড়ে ভুলে গেছি জিন্টুর ঘটনা। হঠাৎ একদিন রাতে ফোন করলেন জিন্টুদের হাতে যে দুজন নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের একজন ফিরোজ আল মামুনের স্ত্রী। তাঁর কণ্ঠে ক্ষোভ। বললেন, ‘সাংবাদিক সাহেব বিরাট চাকরি করেন। কাঁড়িকাঁড়ি টাকা বেতন পান। কিন্তু আমার মতো অসহায় মানুষের কথা কখনো ভাবেন? খোঁজ নিয়েছেন, স্বামী খুন হওয়ার পর আমরা এত বছর ধরে কীভাবে বেঁচে আছি, কেউ কি নিয়েছে?’ আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ফোন রেখে দেন।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ মেঘ করলে কখনো কখনো যেমন একা লাগে, ঠিক তেমনই নিঃসঙ্গ মনে হলো নিজেকে।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২১ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৪ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৬ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৫ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলখানায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে গেলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া খুনের এক আসামি। খবর বলতে ছিল এটুকুই। আদালত, প্রসিকিউশন, আইনজীবী—কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। কারাগারও মুখ খোলে না। ভাবছি হাল ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা।
০৯ অক্টোবর ২০২১
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৪ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৬ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৫ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

জেলখানায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে গেলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া খুনের এক আসামি। খবর বলতে ছিল এটুকুই। আদালত, প্রসিকিউশন, আইনজীবী—কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। কারাগারও মুখ খোলে না। ভাবছি হাল ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা।
০৯ অক্টোবর ২০২১
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২১ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৬ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৫ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

জেলখানায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে গেলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া খুনের এক আসামি। খবর বলতে ছিল এটুকুই। আদালত, প্রসিকিউশন, আইনজীবী—কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। কারাগারও মুখ খোলে না। ভাবছি হাল ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা।
০৯ অক্টোবর ২০২১
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২১ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৪ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৫ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জেলখানায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্ষমা পেয়ে বেরিয়ে গেলেন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া খুনের এক আসামি। খবর বলতে ছিল এটুকুই। আদালত, প্রসিকিউশন, আইনজীবী—কারও কাছে কোনো তথ্য নেই। কারাগারও মুখ খোলে না। ভাবছি হাল ছেড়ে দেব, ঠিক তখনই সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা।
০৯ অক্টোবর ২০২১
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
২১ ঘণ্টা আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৪ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৬ দিন আগে