Ajker Patrika

পশ্চিমাদের প্রস্থানে ইরাকের তেল বাণিজ্যে আধিপত্য বাড়ছে চীনা কোম্পানির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে চীনা তেল উত্তোলন কোম্পানি। ছবি: মানি কন্ট্রোল
ইরাকের তেলক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে চীনা তেল উত্তোলন কোম্পানি। ছবি: মানি কন্ট্রোল

বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য ইরাক। সম্প্রতি ইরাকে নিজেদের কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে চীনের স্বশাসিত তুলনামূলক ছোট ও বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলো। যেখানে আন্তর্জাতিক বড় বড় তেল কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ইরাক থেকে নিজেদের কার্যক্রম কমিয়ে আনছে, সেখানে বিপরীত পথে হাঁটছে চীনের এই কোম্পানিগুলো।

চীনের এই কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ইরাকে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই খাতে কাজ করা চারটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের থেকে জানা যায়, তারা ইরাকে দৈনিক উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ করে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে।

বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করতে লড়াই করতে থাকা ইরাকের জন্য এ বিষয়টি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে দেশটির তেল উৎপাদন খাতে চীনের বেসরকারি খাতের ক্রমাগত জায়গা করে নেওয়া উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। ইরাকের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা চীনের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি ঠেকানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও, ইরাকের তেল খাতে স্বশাসিত চীনা কোম্পানিগুলোর আধিপত্য স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল জায়ান্টগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালিত ছোট ছোট চীনা তেল কোম্পানিগুলোর কাছে ইরাক এখন একটি বড় সুযোগ। পশ্চিমা বা বড় চীনা কোম্পানির জন্য যেসব প্রকল্প তুলনামূলকভাবে ছোট ও কম লাভজনক, সেগুলোতে কম খরচে এবং দ্রুতগতিতে উন্নয়ন ঘটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল ও গ্যাস খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ কম থাকায় এই বিদেশমুখী উদ্যোগ অন্য ভারী শিল্প খাতের মতোই চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাজার ও দক্ষতা ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করছে।

জিও-জাদে পেট্রোলিয়াম কর্প, ইউনাইটেড এনার্জি গ্রুপ, ঝংমান পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস গ্রুপ ও অ্যান্টন অয়েলফিল্ড সার্ভিসেস গ্রুপের মতো তুলনামূলকভাবে অখ্যাত কোম্পানিগুলো গত বছর ইরাকের তেল অনুসন্ধানের সুযোগ পেয়ে সবার নজরে আসে।

এই কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা জানান, ইরাকে বিনিয়োগের পরিবেশ আগের চেয়ে তুলনায় অনেক উন্নত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় বাগদাদ এখন একইসঙ্গে চীনা ও পশ্চিমা উভয় ধরনের কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে আগ্রহী।

২০২৯ সালের মধ্যে তেল উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দৈনিক ৬০ লাখ ব্যারেলে নিয়ে যেতে চায় ইরাক। বর্তমানে দেশটির উৎপাদনের বড় একটি অংশই আসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) পরিচালিত হাইফায়া, রুমাইলা ও ওয়েস্ট কুর্না ১-এর মতো বিশাল তেলক্ষেত্রগুলো থেকে।

এক বছর আগে তেল প্রকল্পের জন্য আগের নির্ধারিত ফি ভিত্তিক চুক্তি থেকে সরে আসে ইরাক। এ সময় লাভ ভাগাভাগি নির্ভর মডেল চালু করে দেশটির সরকার। এক্সনমোবিল ও শেলের মতো পশ্চিমা তেল জায়ান্টদের কার্যক্রম সীমিত হওয়ার পর প্রকল্পে গতি আনার লক্ষ্যে নেওয়া এই পদক্ষেপ চীনের স্বশাসিত বেসরকারি তেল কোম্পানিগুলোর জন্য এক বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়।

এই ছোট চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বড় চীনা কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি চটপটে ও অভিযোজনযোগ্য। আবার পশ্চিমা অনেক বিনিয়োগকারীর তুলনায় তারা ঝুঁকি নিতে অনেক বেশি আগ্রহী।

ইরাকের রাষ্ট্রীয় বসরা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা আলি আব্দুলআমির জানান, চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক অর্থায়ন প্রস্তাব করে, তুলনামূলক সস্তা চীনা শ্রমিক ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে খরচ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি পেতে কম লাভেও কাজ করতে রাজি থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘চীনা কোম্পানিরা দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ, সময়সীমা মেনে চলে এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জপূর্ণ এলাকাতেও কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। পশ্চিমা কোম্পানির তুলনায় তাদের সঙ্গে কাজ করা অনেক সহজ ও কম জটিল।’

চীনা কোম্পানিগুলো নির্বাহীরা জানান, পশ্চিমা কোম্পানির যেখানে একটি তেলক্ষেত্র উন্নয়নে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে, সেখানে চীনের ছোট কোম্পানিগুলো ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারে।

জিও-জাদে পেট্রোলিয়াম-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ডাই শিয়াওপিং বলেন, ‘চীনের স্বশাসিত কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনাগত খরচ পশ্চিমা কোম্পানির তুলনায় অনেক কম এবং তারা রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে।’

তিনি আরও জানান, এই কোম্পানিগুলোর কারণে ইরাকে একটি বড় তেলক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক একটি কূপ খননের গড় খরচ গত এক দশকে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন তা প্রায় ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে।

ইরাকের জন্য এই চীনা কোম্পানির সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হলেও উচ্চমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু আপস করতে হচ্ছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন ইরাকি বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের মে মাসে চীনা কোম্পানি জিও-জেডের নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম দক্ষিণ বসরার টুবা তেলক্ষেত্রের উন্নয়ন ও একটি ২ লাখ ব্যারেল দৈনিক ক্ষমতাসম্পন্ন রিফাইনারি নির্মাণে বিনিয়োগের চুক্তি করে। জিও-জেড কোম্পানির সিইও ডাই শিয়াওপিং জানান, প্রায় ৮৪৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা টুবা ক্ষেত্রের উৎপাদন ৪০ হাজার ব্যারেল দৈনিক করা হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় একটি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স ও দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে বলে জানান ডাই।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছোট চীনা প্রতিষ্ঠান ঝেনহুয়া অয়েল ২০০৮ সালে সিএনপিসির সঙ্গে যৌথভাবে ৩ বিলিয়ন ডলারের আহদাব তেলক্ষেত্র উন্নয়নে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ওই প্রকল্পটি ছিল ইরাকে প্রথম বড় বিদেশি বিনিয়োগ। এখন ঝেনহুয়া ২০৩০ সালের মধ্যে এর উৎপাদন দ্বিগুণ করে ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল দৈনিক করার লক্ষ্য নিয়েছে।

চীনা কোম্পানি ঝংমান পেট্রোলিয়াম চলতি বছরের জুনে ঘোষণা দেয়, ২০২৪ সালে পাওয়া মধ্য ইউফ্রেটিস ও পূর্ব বাগদাদ উত্তর ব্লকের উন্নয়নে তারা ৪৮১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।

তবে, এই সাশ্রয়ী প্রকল্পগুলোর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এতে ইরাকের উচ্চতর প্রযুক্তি সংযোজন ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাধা তৈরি হতে পারে। বসরা অয়েলের সাবেক অপরিশোধিত তেল বিভাগের প্রধান মুওয়াফাক আব্বাস বলেন, ‘চীনা কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও কারিগরি মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারা প্রায়ই চীনা কর্মীদের ওপর নির্ভর করে এবং ইরাকি কর্মীদের নিম্ন বেতনের পদে সীমাবদ্ধ রাখে।’

তবে কিছু পশ্চিমা কোম্পানি আবার ইরাকে ফিরছে। ২০২৩ সালে ফরাসি কোম্পানি টোটালএনার্জি ২৭ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ঘোষণা করেছে। আর ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বিপি কিরকুকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলে চারটি তেলক্ষেত্র পুনর্গঠনে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত