Ajker Patrika

দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংকিং সুপার অ্যাপ ‘আস্থা লাইফস্টাইল’ চালু করল ব্র্যাক ব্যাংক

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩: ৪৩
দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংকিং সুপার অ্যাপ ‘আস্থা লাইফস্টাইল’ চালু করল ব্র্যাক ব্যাংক

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে প্রথম ডিজিটাল ব্যাংকিং সুপার অ্যাপ ‘আস্থা লাইফস্টাইল’ চালু করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এই নতুন অ্যাপের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকেরা লাইফস্টাইলের নানা সুবিধা পাবেন।

প্রাথমিকভাবে সুপার অ্যাপ হিসেবে অলরাউন্ডার আস্থা অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত থাকবে এক্সক্লুসিভ আর্লি এক্সেস কনটেন্টে সমৃদ্ধ ওটিটি বিনোদন প্ল্যাটফর্ম ‘আস্থা প্লে’। যেখানে থাকবে এক লাখের বেশি বিনোদনমূলক কনটেন্ট। 

দেশের সবচেয়ে বড় মিউজিক ও পডকাস্ট প্ল্যাটফর্ম ‘আস্থা মিউজিক’। কোরআন ও হাদিসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ইসলামিক সেবা ‘আস্থা ইসলামিক’। একাডেমিক, প্রফেশনাল ক্লাসসহ দেশের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংকিং লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘আস্থা লার্নিং’ এবং ভ্রমণের জন্য তৈরি ‘আস্থা ট্রাভেল’।

দুই বছরের কম সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘আস্থা’ অ্যাপ একটি ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে পরিবর্তন ঘটিয়ে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করা। 

এই যাত্রায় টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে একটি ডিজিটাল ব্যাংকিং টোল-ফ্রি অ্যাপ। যেখানে ডিজিটাল রিওয়ার্ডের মতো বিভিন্ন পুরস্কার জেতার ফিচার চালু করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এই বিশেষ সুবিধাগুলোই আস্থা অ্যাপকে দেশের দ্রুততম বর্ধনশীল ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপে পরিণত হতে সাহায্য করেছে। 

গত বছর ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রবৃদ্ধির গতি ছিল দেশের ব্যাংকিং খাতের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এই সময়ে আস্থা অ্যাপের বার্ষিক ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫ হাজার কোটি টাকা এবং মোট ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান এবং আসন্ন ডিজিটাল সক্ষমতা এবং লাইফস্টাইল পার্টনারদের সঙ্গে ক্রস-ইন্ডাস্ট্রি সহযোগিতার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে চায় ব্র্যাক ব্যাংক। 

আজ বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনন্য সেবা চালু করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনের সিইও এরিক আস, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, গ্রামীণফোনের চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অফিসার সোলায়মান আলম, বিকাশ লিমিটেডের সিইও কামাল কাদীর, রবি আজিয়াটার চিফ এন্টারপ্রাইজ বিজনেস অফিসার মো. আদিল হোসেন নোবেল এবং ফেসবুক অ্যান্ড গুগল টেকনোলজি এক্সপার্ট আনন্দ তিলক। 

এ ছাড়া তাঁরা ‘ডিজিটাল ডিজরাপশন্স অ্যান্ড ক্রস ইন্ডাস্ট্রি কোলাবোরেশন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনাটি পরিচালনা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব ডিজিটাল বিজনেস অ্যান্ড পেমেন্টস মো. রাশেদুল হাসান স্ট্যালিন। 

অনুষ্ঠানে ‘আস্থা প্লে’র উদ্বোধন করেন স্টেলার ডিজিটাল ওটিটি প্লাটফর্ম বঙ্গর সিওও ফায়াজ তাহের, রবি আজিয়াটার চিফ এন্টারপ্রাইজ বিজনেস অফিসার মো. আদিল হোসেন নোবেল এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ডিএমডি অ্যান্ড সিওও মো. সাব্বির হোসেন। 

আস্থা মিউজিকের উদ্বোধন করেন স্বাধীন মিউজিকের সিইও সাবিরুল হক এবং গ্রামীণফোনের চিফ বিজনেস অফিসার ড. আসিফ নাইমুর রশীদ। 

আস্থা লার্নিংয়ের উদ্বোধন করেন শিখো টেকনোলজিস বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও শাহির চৌধুরী এবং বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনের এন্টারপ্রাইজ বিজনেস ডিরেক্টর রুবাইয়াত এ. তানজিন। 

আস্থা ট্রাভেলের উদ্বোধন করেন গো জায়ানের সিইও রিদওয়ান হাফিজ, চরকির সিইও রেদোয়ান রনি এবং ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব ব্রাঞ্চেস শেখ মোহাম্মদ আশফাক। 

আস্থা ইসলামিকের উদ্বোধন করেন গাকের মিডিয়া প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ রহমান, বিকাশ লিমিটেডের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহমেদ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. মাহীয়ুল ইসলাম। 

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের এফএভিপি ও ডিজিটাল বিজনেস অ্যান্ড পেমেন্টস অব সুলতান মাহমুদ সরকার। 

প্রথম বাংলাদেশি ডিজিটাল ব্যাংকিং সুপার অ্যাপের অধীনে আস্থা লাইফস্টাইলের প্রবর্তন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, ‘ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন যাত্রার প্রধান মাধ্যম ‘আস্থা অ্যাপ’। ডিজিটাল উদ্ভাবনের সাহায্যে গ্রাহকসেবা উন্নত করার প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক যে বিশেষ জোর দিচ্ছে, আস্থা অ্যাপ তার প্রমাণ। অ্যাপটি সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা গ্রাহকদের নখদর্পণে নিয়ে এসেছে।’ 

সেলিম আর. এফ. হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি লাইফস্টাইল সার্ভিসের সঙ্গে ব্যাংকিং সল্যুশন যুক্ত করার মাধ্যমে ‘আস্থা অ্যাপ’ গ্রাহকদের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠবে। লাইফস্টাইল ফিচারগুলো আস্থাকে একটি অলরাউন্ডার অ্যাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। যেখানে গ্রাহকেরা এক জায়গায় ব্যাংকিং এবং লাইফস্টাইল সুবিধাগুলো একসঙ্গে পাবেন। একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে ব্র্যাক ব্যাংকের ক্রমাগত প্রচেষ্টার অংশ ‘আস্থা লাইফস্টাইল’, যা ব্যাংকিংয়ের বাইরেও গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদাগুলো সহজেই পূরণ করবে। গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা আস্থাতে নতুন নতুন ফিচার যোগ করতে থাকব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত