Ajker Patrika

বিদ্যুৎ রপ্তানিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নজর ভারতের

আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৩, ১৯: ২৩
বিদ্যুৎ রপ্তানিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নজর ভারতের

মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানির ব্যবসা করতে চায় ভারত। যেখানে এরই মধ্যে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে কিছু বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে। মিয়ানমারেও খুব অল্প পরিমাণে রপ্তানি করছে। নতুন পরিকল্পনার অধীনে ব্যাপকভাবে এই বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদন এমন তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে, নয়াদিল্লি আঞ্চলিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে চায়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি টেকসই টুল হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে তার ক্রমবর্ধমান নবায়নযোগ্য শক্তি। 

বিদ্যুৎ খাতে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ-বাণিজ্য শুরু করার প্রচেষ্টায় আছে ভারত। এই গ্রিড লাইন তৈরির কাজ সম্পন্ন হতে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগবে। এরপরই শুরু হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিদ্যুৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণের কাজ। 

রয়টার্স যে সূত্রগুলোর বরাত দিয়েছে তাঁদের মধ্যে চারজনই বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। তাঁরা নাম প্রকাশে অস্বীকার করেছেন কারণ পরিকল্পনাটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। আঞ্চলিক কূটনীতিতে খুব হিসাব করে পা ফেলছে। তবে এ নিয়ে ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ তাগিদটা খুব স্পষ্ট। তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোয়ায় চলমান জি-২০ গ্রুপের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড আন্তসংযোগ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কয়েকটি দেশের সঙ্গে পৃথক এবং দলগতভাবে আলোচনা করছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কর্মকর্তারা। 

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকার এবং ডেভেলপারদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার জন্য জি-২০ সদস্যদের সমর্থনকেই চাবিকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

এদিকে প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি নিয়ন্ত্রণ রূপরেখা প্রস্তুত করতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ইডিএফকে নিযুক্ত করেছে ভারত। তাদের কাজ হবে মূল্য নির্ধারণসহ এই প্রকল্পের মূল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। ইডিএফ চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রতিবেদন দেবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। 

এ নিয়ে ফ্রান্সের ইডিএফের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তারা কোনো মন্তব্য করেনি। 

ভারতের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা একবার ভারতের জাতীয় গ্রিডকে মিয়ানমারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারলে, সেখানে আমাদের গ্রিড আরও বিস্তৃত ও শক্তিশালী করতে এবং থাইল্যান্ডে, এমনকি এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হব।’ 

তবে ভারতের এমন পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী বলছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আন্তসীমান্ত গ্রিড সংযোগগুলোতে বেশ বিনিয়োগ এসেছে এবং সরকারগুলোও ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু সাব-সি (উপসাগরীয়) কেব্‌ল নির্মাণের ক্রমবর্ধমান খরচ, গ্রিড আপগ্রেড করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মতো ঝুঁকির কারণে এ ধরনের প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্যরা বহুপক্ষীয় বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সুবিধার্থে একটি আঞ্চলিক গ্রিড গঠনের জন্য কয়েক দশক ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু অগ্রগতি দেশগুলোর মধ্যে কেবল দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। 

ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তি এবং বৃহৎ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে ১৭৭ গিগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। এই নতুন সক্ষমতার পেছনে সৌর পার্কগুলোর বড় ভূমিকার রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রচেষ্টা দিনের বেলায় আরও বেশি সময় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়াতে পারলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে। 

তবে আরেক কর্মকর্তা বলছেন, আন্তসংযুক্ত আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সরবরাহ করা বিদ্যুতে ট্রান্সমিশন চার্জ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চার্জের কারণে বিদ্যুতের দাম প্রায়ই বেড়ে যায়। তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রিড আন্তসংযোগ সমুদ্রের নিচে এবং স্থল উভয় ক্ষেত্রেই হবে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলজুড়ে স্থাপিত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সংস্থান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত