Ajker Patrika

দেউলিয়া ঝুঁকিতে বিশ্বের ৭ অর্থনীতি, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ১৩
দেউলিয়া ঝুঁকিতে বিশ্বের ৭ অর্থনীতি, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী

জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ২০২২ সালে বলেছিলেন, ৫০টি দরিদ্র দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেউলিয়া হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা। ইউএনডিপি প্রধান আচিম স্টেইনারের বিবৃতি আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ বেশ কয়েকটি দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে, আবার অনেকেই দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। 

ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিএনবিসি টিভি১৮ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। 

পাকিস্তান 
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পাকিস্তানকে আপাতত দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছে কিন্তু দেশটির অর্থনীতি এখনো ভঙ্গুর। ২০২৩ সালে আইএমএফের দেওয়া ৩ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা দেশটিকে দেউলিয়া এড়াতে পারে, তবে রাজনৈতিক সংকটে থাকা দেশটির এ বছর আরও একটি ঋণসহায়তা প্রয়োজন। 

সর্বশেষ আইএমএফ ৭ বিলিয়ন ডলারের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সাহারা মরুভূমিতে এক বিন্দু জলের মতোই। কারণ দেশটির মোট আয়কর রাজস্বের অন্তত ৬০ শতাংশ পুরোনো ঋণ পরিশোধেই যাবে। ২০২৪ সালের মে মাসে আইএমএফ অনুমান করেছিল, ২০২৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের অন্তত ১২৩ বিলিয়ন ডলারের বাহ্যিক অর্থ সহায়তার প্রয়োজন হবে। দেশের জিডিপি ২০২২ সালে ৩৭৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ সালে ৩৭৪ দশমিক ৯০৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। 

অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও আগস্টে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ৯৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আগে পাকিস্তানের জনগণকে আরও অর্থকষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। ২০২২ সালের এপ্রিলের পর প্রথমবারের মতো দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছে, তবে এর মধ্যে আইএমএফের ১ বিলিয়ন ডলারের ট্রাঞ্চ রয়েছে। কিন্তু এই রিজার্ভ পাকিস্তানের তিন মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারবে না। 

শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এলে ২০২২ সালের এপ্রিলে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের দেউলিয়ায় পড়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। দেশটির ফরেক্স রিজার্ভ এখন ৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের আগস্টে কমে মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। ২০১৭ সালে দেশটির জিডিপি প্রায় ৯৪ বিলিয়ন ছিল। কিন্তু সেটি ২০২৩ সালে হঠাৎ কমে ৮৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে নামে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনে শ্রীলঙ্কার জিডিপি বেড়েছে। 

২০২২ এবং ২০২৩ সালে অর্থনীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ সংকোচনের পরে স্থিতিশীল হয়েছে। যা হোক, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য এবং ঋণের বাধ্যবাধকতার কারণে দেশটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে জটিলতার মধ্যে পড়তে পারে। দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কার ঋণ খেলাপি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশটি ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পুনর্গঠনের জন্য ঋণদাতাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। ঋণদাতারা চুক্তির অংশ হিসাবে ২৭ শতাংশ নেবে। 

বাংলাদেশ 
বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০০৮ সালের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মতো বিশ্বব্যাপী রেটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশকে ‘জাঙ্ক’ বা আস্তাকুঁড় হিসাবে চিহ্নিত করেছে। সর্বশেষ রাজনৈতিক সংকট ও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের আগেও বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের সক্ষমতা নিম্নগামী ছিল। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৩২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন করেছে, কিন্তু এই পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ধারণা করছে, খাদ্যদ্রব্যর দাম বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ঋণখেলাপি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকে তারল্য সংকটের আশঙ্কাও রয়েছে। এখনই কোনো ঋণ সংকট না থাকলেও অর্থনীতির অবনতি ঘটছে এবং এর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। আইএমএফ অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কিছুটা শক্তি দিয়েছে, যা পরিশোধ করতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। 

ভেনেজুয়েলা 
ইতিহাসের এক সময়ে ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল ভেনেজুয়েলা। তবে নিকোলাস মাদুরোর নিয়ন্ত্রণমূলক শাসন ব্যবস্থায় দেশটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেশটি ২০১৭ সালে খেলাপি শুরু করে। বর্তমানে মোট ঋণ ১৫৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। জিডিপি ২০১২ সালে ৩৭২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন থেকে কমে ২০২৪ সালে ১০৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। 

মাদুরো চলতি বছরের জুলাই মাসে বিতর্কিত নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। এর প্রভাব পড়ে অর্থনীতির ওপর। দেশটির অর্থনীতি গত বছর ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল এবং এই বছর ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটির এই অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা আংশিকভাবে দায়ী। তেলসমৃদ্ধ দেশটি ঋণ পুনর্গঠনের জন্যও আলোচনায় রয়েছে। 

ভেনেজুয়েলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, মুদ্রাস্ফীতি ক্রমহ্রাসমান হলেও দেশটির ৮২ শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এক বছরের আগের তুলনায় দ্রব্যমূল্যর দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে। 

আর্জেন্টিনা 
দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি একবিংশ শতাব্দীতে এরই মধ্যে তিনবার ঋণখেলাপি করেছে। পাওনাদারদের কাছে আর্জেন্টিনার ৪০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পাওনা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালসহ অতীতে দেশটি বেশ কয়েকটি ঋণ পুনর্গঠন করেছে। প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলির সংস্কারকালে আট মাসে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ৩০০ শতাংশ থেকে ২৩৬ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু এটি এখনো স্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি হারের চেয়ে অনেক বেশি। দেশটির অর্থনীতিও ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছে। তবে দারিদ্র্যের মাত্রা ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস বলছে, অনিশ্চিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ২০২৫ এবং ২০২৭ সালে আর্জেন্টিনার আবারও দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা ৭৫ শতাংশ। 

জাম্বিয়া
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশটি ২০২০ সালে ইউরো বন্ড ঋণে খেলাপি করেছে। চলতি বছর ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন বাহ্যিক ঋণ পুনর্গঠনের জন্য প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে জাম্বিয়া। কিন্তু দেশটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। দেশটির আন্তর্জাতিক বকেয়া স্টক ২০২৩ সালের মধ্যে জিডিপির ২৬ শতাংশে পৌঁছেছে। আইএমএফের ভাষ্যমতে, এটি টেকসই নয়। এ ছাড়াও দেশটি এখনো কমপক্ষে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বাণিজ্যিক ঋণ পুনর্গঠন করতে পারেনি। আইএমএফ বলছে, বাণিজ্যিক ঋণ পুনর্গঠনে ব্যর্থতা এবং ২০২৪ সালের ঋণ পুনর্গঠন চুক্তির কিছু ধারা জাম্বিয়াকে আরেকটি খেলাপির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। 

ঘানা
আফ্রিকার দেশটির মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট জিডিপির ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ঋণে খেলাপি করে অর্থনীতিকে সংকটে ফেলেছে। ঋণের খরচ ও মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। ঘানার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। 

দেশটির অর্থনীতি এখন পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধির গড় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। ২০২২ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতি সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। আইএমএফ বলছে, ২০২৩ সালের মে মাসে অনুমোদিত ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা দেশটির অর্থনীতিকে সাহায্য করেছে। সম্প্রতি ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পুনর্গঠন চুক্তিতে পৌঁছানোর পর দেশটির সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির অংশ হিসেবে ঋণদাতারা ঋণের ৪০ শতাংশ ছেড়ে দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত