Ajker Patrika

ভালোবাসার ‘বাজার’ রমরমা

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫১
ভালোবাসার ‘বাজার’ রমরমা

দরজায় কড়া নাড়ছে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। আর কয়েক ঘণ্টা। ভালোবাসার মানুষটির জন্য হৃদয়ের সবটা নিংড়ে একটা জুতসই বার্তা লিখতে হয়তো ব্যস্ত এখন অনেকে। অনেকের চোখের সামনেই হয়তো ভাসছে সেই মুহূর্তটি, যখন সে তার প্রিয় মানুষটিকে জানাবে তার ভালোবাসার কথা। ভালোবাসার বয়স নেই। তবু মূলত তরুণ-তরুণীরাই ভালোবাসার মানুষকে আকৃষ্ট করতে দিনটিকে বেছে নেয়। ভালোবাসার মানুষকে চমকে দিতে জোগাড় করে নানা উপহার। তা নিয়ে থাকে কত-না স্বপ্ন, কত-না ভাবনা। অনেকেই হয়তো প্রেমাষ্পদের জন্য সে উপহার কিনে ফেলেছেন। ভালোবাসা দিবস তো উৎসব এক। আর উৎসব তো উপহার ছাড়া হয় না। আর তাই দিনটিকে ঘিরে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নয় হাসি ফোটে ব্যবসায়ীদের মুখেও। 

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে শুধু ভালোবাসার দেবতার রাজত্ব নয়; এটি একই সঙ্গে বাণিজ্যলক্ষ্মীরও। এটা শুধু এখানে নয়, গোটা বিশ্বেই এমন। প্রেম তো সব জড়িয়ে রাখে। ফলে বাণিজ্যের পরিসরও বিরাট। এখন তো আর শুধু ভ্যালেন্টাইন ডে নয়, আছে চকলেট ডে, প্রোপোজ ডে আরও কত কী। এই প্রতিটি দিনের জন্য আবার নির্ধারিত আছে নানা উপহার। মোটাদাগে উপহারের তালিকায় আছে ফুল, কেক, চকলেট, আংটি, রকমারি গ্যাজেট ইত্যাদি। আর উপহারের তালিকায় চির অমলিন পোশাক, জুয়েলারির মতো বিষয় তো আছেই। আছে বেড়াতে যাওয়া, খাওয়া, আড্ডা ইত্যাদি অনুষঙ্গ। ফলে হোটেল-রিসোর্ট, বিনোদনকেন্দ্র, রেস্তোরাঁর হিস্যাও জোরদার। সব মিলিয়ে এই দিবসকে কেন্দ্র করে লেনদেনের পরিমাণ কমপক্ষে কয়েক শ কোটি টাকা বললে অত্যুক্তি হবে না। 

গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা তেমন না জমলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন ব্যবসায়ীরা। রেস্তোরাঁগুলোতে চলছে যুগলদের জন্য বিশেষ অফার। পোশাক, জুয়েলারির বিভিন্ন শোরুমে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের কেনাকাটায় চলছে বিশেষ ছাড়। ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তবে জমজমাট ব্যবসার ভিড়েও কিছুটা শঙ্কা জাগিয়েছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। ওমিক্রনের শঙ্কা না থাকলে ব্যবসা আরও জমজমাট হতো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

তবে একেবারে খারাপ হচ্ছে না। রিটেইল চেইনশপ ‘স্বপ্ন’-এর ওয়ারী শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটলেট অপারেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ রাকিব হোসেন রাজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি বেশ ভালো। শুধু আমাদের এই শাখাতেই ভ্যালেন্টাইন ডের বিক্রি সাত-আট লাখ টাকা। স্বপ্নের দুই শতাধিক আউটলেট আছে। সব আউটলেট মিলে কোটি টাকার হিসাব। সঠিক অঙ্ক বলা মুশকিল। কারণ, একেক শাখায় বিক্রি একেক রকম।’ 

কী ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে সুপারশপগুলো থেকে? এর একটা জবাব পাওয়া যায় রাকিব হোসেনের কথায়। তিনি জানালেন, ‘ভ্যালেন্টাইন ডেতে মূলত চকলেট, কৃত্রিম ফুল, পুতুল, খেলনা, উপহারসামগ্রী, শো-পিসের বিক্রি বেড়েছে। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক পণ্যের চালান আটকে আছে। সেই পণ্যগুলো হয়তো ভ্যালেন্টাইন ডের পর ঢুকবে। সেগুলো সময়মতো পাওয়া গেলে বিক্রি আরও বাড়ত।’ 

ভালোবাসা দিবসের আয়োজনবিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে ফুলের। ভালোবাসা প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেওয়া। প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের ব্যবসা জমজমাট। ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের উৎসবকে ঘিরে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে এরই মধ্যে। 

আজকের পত্রিকার ঝিকরগাছা প্রতিনিধি মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, চাহিদা বেশি থাকায় ফুলের দামও বেড়েছে। ফলে করোনার কারণে গত বছরের লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকেরা। এবার বাজারে ১০০টি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৫০০-১৬০০ টাকা দরে, যা আগে বিক্রি হতো ৩০০-৪০০ টাকায়। এবার রজনীগন্ধা একেকটি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১০-১২ টাকায়, যা আগে ছিল ৫-৬ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ১৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৪-৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১০-১২ টাকায়, যার আগে ছিল ৬-৮ টাকা। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ১০০ টাকায়, যা আগে বিক্রি হতো ৪০-৫০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়। যা আগে ছিল ২০-২৫ টাকায়। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ৬০০-৮০০ টাকায়, যা আগে ছিল ২০০-৩০০ টাকা। লিলিয়াম প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। চন্দ্রমল্লিকা ৩০০ টাকা, যা আগে বিক্রি হতো ১০০ টাকায়। রকস্টিকের আঁটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়, আগে বিক্রি হতো ৫০ টাকায়। 

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনাভাইরাস, লকডাউন, আম্ফান ঘূর্ণিঝড় ও অসময়ে বৃষ্টিতে ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পাঁচ দিনে প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ায় চাষিদের মুখে এবার হাসি ফুটেছে। 

 ১০০টি গোলাপের দাম ১৫০০-১৬০০ টাকা। ছবি: মাসুদুর রহমান মাসুদভ্যালেন্টাইন ডের অন্যতম আকর্ষণ কেক। ভ্যালেন্টাইন এলেই বিভিন্ন আকার, নকশা ও ফ্লেভারের কেকের চাহিদা বাড়ে। প্রিয়জনকে সারপ্রাইজ দিতে অনেকেই উপহার হিসেবে কেক বেছে নেন। এই সময়ে বেকারি ও পেস্ট্রি শপগুলোতে ব্যস্ততার শেষ থাকে না। কিন্তু কতটা বিক্রি হচ্ছে তার একটা ধারণা পাওয়া গেল স্যান্ড্রা ফুডসের উৎপাদন ব্যবস্থাপক রিদওয়ানুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘ভ্যালেন্টাইন ডেতে বিক্রি বেড়েছে। আমাদের ছয়টি আউটলেটে কয়েক লাখ টাকার ভ্যালেন্টাইন কেক বিক্রি হবে। এরই মধ্যে তিন শতাধিক কেক বিক্রি হয়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডের দিনেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভ্যালেন্টাইন কেক সেল হবে।’

তবে এই কেকের বাজার ঠিক কত বড়, সে সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান হাতে নেই। একই অবস্থা চকলেটের ক্ষেত্রেও। চকলেটকে বলা যেতে পারে ম্যান্ডেটরি গিফট। সব বয়সী মানুষই এই উপহার পছন্দ করেন। কিন্তু ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এই বাজার ঠিক কতটা বড়, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। দেশে চকলেটের চাহিদার একটি বড় অংশই মেটে আমদানি থেকে। এখানেও রয়েছে জটিলতা। অনেকে শুল্ক ফাঁকি দিতে ব্যক্তিগতভাবে লাগেজে করে চকলেট পরিবহন করেন। ফলে একটি দিবসকে কেন্দ্র করে এর বাজারের পরিসর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া আসলেই দুরুহ।

ভ্যালেন্টাইন ডের অন্যতম আকর্ষণ কেক।করোনার ধকল কাটিয়ে পর্যটন খাতেও আশার আলো নিয়ে এসেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দম্পতিদের জন্য বিভিন্ন কাপল অফার আছে। ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট রয়েছে। ক্যান্ডেল লাইট ডিনারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থাকছে। আমরা চাই দম্পতিদের জন্য যেন দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকে।’ 

কলিম উল্লাহ আরও বলেন, ‘এবার বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এটা বেশ আশা জাগানিয়া বিষয়। মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা আমাদের অণুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশা রাখছি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হবে।’ 

এ ছাড়া জুয়েলারি, মোবাইল সেটসহ নানা ডিভাইস এখন ভালোবাসা দিবসের উপহারের তালিকায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জুয়েলারি, ডিভাইস ইত্যাদি উপহারের বিষয়টি সামর্থ্যের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এই সামর্থ্যের পরিসরও কিন্তু বাড়ছে। ফলে বাড়ছে ভালোবাসা দিবসকেন্দ্রিক ব্যবসার পরিসর। বাংলাদেশে এই উপহারের বাজারের আকার এখন কত বড়, তার ঠিকঠাক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে অনুমান করা যায় ঠিকই। শুধু ফুল ও পর্যটন খাত মিলিয়েই কিন্তু বাজারটির আকার ২০ কোটি ছাড়িয়ে গেল। এর সঙ্গে চকলেট, জুয়েলারি, পুতুল, রকমারি ডিভাইস, অনলাইন কেনাকাটার গিফট কুপন ইত্যাদি যোগ করে নিলে এটি শত কোটি টাকা অনায়াসে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়।

একটু বিদেশ ঘুরে এলেই ব্যাপারটি কিছুটা বোঝা যাবে। স্ট্যাটিস্টা ডটকমের তথ্যমতে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভালোবাসা দিবস ঘিরে ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়েছে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। আর ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এ দিবসকে কেন্দ্র করে শুধু উপহারসামগ্রীর ব্যবসার আকার ছিল ৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। নিউজিল্যান্ডে এর পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। 

পাশের দেশ ভারতে এর আকারটি কেমন? করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশটিতে ভ্যালেন্টাইন ডে ঘিরে মাথাপিছু ব্যয়ে বেড়েছে। এ বছরের হিসাব পাওয়া না গেলেও গেল বছর গড়ে প্রতিজন তাদের প্রিয়জনকে উপহার দিতে ১৩০ ডলারের বেশি ব্যয় করেছেন। নিশ্চিতভাবেই আগের তুলনায় দেশটিতে এ বাবদ মানুষের বাজেট বেড়েছে। আগে কেমন ছিল। ইকোনমিক টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ২০০৭ সালে ভালোবাসা দিবসে ১ হাজার ২০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা হয়েছিল। তাহলে বর্তমানের ব্যবসার পরিসরটি সহজেই বোঝা যাচ্ছে। আর বাংলাদেশ? সঠিক পরিসংখ্যান হাতে না থাকলেও ব্যবসার আকারটি যে চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত