Ajker Patrika

গ্রামীণ ব্যাংকে কমছে সরকারের কর্তৃত্ব

  • গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠবে আজ।
  • সরকার ব্যাংকটিতে শুধু দুজন পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে, সব ক্ষমতা বোর্ডের হাতে ন্যস্ত হবে।
  • ব্যাংকটিতে সরকারের মালিকানা কমিয়ে ১০, বাকি ৯০ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের দেওয়ার প্রস্তাব।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫৪
গ্রামীণ ব্যাংকে কমছে সরকারের কর্তৃত্ব

গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর থেকে সরকারের একক কর্তৃক ঝেড়ে ফেলতে আইনে সংশোধনী এনে নতুন অধ্যাদেশ জারি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

নতুন এই অধ্যাদেশ জারি হলে সরকার ব্যাংকটিতে শুধু দুজন পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে। এর বাইরে সব ক্ষমতা বোর্ডের হাতে ন্যস্ত হবে। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় সরকারের অংশ কমে ঋণগ্রহীতাদের মালিকানার পরিমাণ বাড়বে।

গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ মালিকানা এখন আছে সরকারে হাতে; বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের। সংশোধিত খসড়ায় ব্যাংকটিতে সরকারের মালিকানা কমিয়ে ১০ এবং বাকি ৯০ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা ক্রমান্বয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে ৯০ শতাংশের অনুপাত অর্জন করতে পারবেন। বর্তমান গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত শেয়ার মূলধন বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও এটিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরকার নিযুক্ত তিনজন এবং ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার নির্বাচিত ৯ জন পরিচালককে নিয়ে বোর্ড গঠন হয়। এই বিধান বদলে সরকার নিযুক্ত দুজন এবং শেয়ারহোল্ডার নিযুক্ত ১০ জন পরিচালক নিয়ে বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিত সরকার। এখন বোর্ড চেয়ারম্যান নিয়োগের এখতিয়ার বোর্ডের হাতে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তাঁর অনুপস্থিতিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া অন্য যেকোনো পরিচালককে সরকার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিতে পারে। এই নিয়ম পরিবর্তন করে অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তাঁর অনুপস্থিতিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদে পরিচালকদের মধ্য থেকে অন্য যে কাউকে বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দেওয়া যাবে।

বর্তমান আইনে নির্বাচিত পরিচালকদের মেয়াদ ধরা আছে তিন বছর। এটিকে সংশোধন করে নির্বাচিত পরিচালকদের মেয়াদ তিন বছর রাখা হলেও পরবর্তী নির্বাচিত পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের আগপর্যন্ত তাঁদের পরিচালক পদে বহাল রাখার নিয়ম যুক্ত করা হচ্ছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। এটিকে পরিবর্তন করে বাছাই কমিটি গঠনের এখতিয়ার বোর্ডের হাতে দেওয়া হচ্ছে।

আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকতে পারেন। সংশোধিত খসড়ায় একই নিয়ম রেখে সেখানে একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলা হয়েছে, বোর্ডের বিবেচনায় ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে বোর্ড ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরিকাল সর্বোচ্চ ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়াতে পারবে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ শূন্য হলে বা তাঁর অনুপস্থিতিতে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে শূন্য পদে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বোর্ড ব্যাংকের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিতে পারে। এই নিয়ম বদলে সর্বোচ্চ তিন মাস ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণ না করলে বোর্ড তাদের একক সিদ্ধান্তে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ পূরণ করার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালক সরকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা নির্বাচিত পরিচালক চেয়ারম্যানের কাছে পদত্যাগ করেন। তবে সরকার বা ক্ষেত্রমতে চেয়ারম্যান কর্তৃক গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত কোনো পদত্যাগ কার্যকর হয় না। নতুন আইন কার্যকর হলে চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা নির্বাচিত পরিচালকেরা বোর্ডের কাছে পদত্যাগ করতে পারবেন। তবে বোর্ড পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা পর্যন্ত ওই পদত্যাগ কার্যকর হবে না। সরকার মনোনীত পরিচালকদের সরকারের কাছে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর সরকার তা অনুমোদন করে বোর্ডের কাছে পাঠালে তা বোর্ডের কাছে গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।

বর্তমানে চেয়ারম্যান ও তিনজন পরিচালকের উপস্থিতিতে কোরাম হয়। এটিকে বদলে দিয়ে চেয়ারম্যান ও চারজন পরিচালকের উপস্থিতিতে কোরাম হবে। বর্তমান আইনে বলা আছে, নির্বাচিত পরিচালকের পদ শূন্য হলে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালক নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান এবং সরকার নিযুক্ত দুজন পরিচালকের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবে। এই উপধারা বিলুপ্ত করা হচ্ছে।

কোনো কারণে চেয়ারম্যান বোর্ডের সভায় উপস্থিত হতে না পারলে উপস্থিত পরিচালকেরা সরকার থেকে নিযুক্ত পরিচালকদের মধ্য থেকে সভাপতিত্ব করার জন্য একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারেন। বিদ্যমান আইনের এই ধারা পরিবর্তন করে নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে চেয়ারম্যান বোর্ডের সভায় উপস্থিত হতে না পারলে উপস্থিত পরিচালকেরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদে অন্য যেকোনো পরিচালককে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারবেন।

বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অর্ডার, ১৯৭৩ অনুযায়ী, বর্তমানে দুটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম দ্বারা প্রতিবছর ব্যাংকের হিসাব নিরীক্ষা করা হয়। এই নিয়ম পরিবর্তন করতে সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন, ২০১৫-এর ২(৮) ধারায় সংজ্ঞায়িত জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে আইনে যা-ই থাকুক না কেন, জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব হবে ওই আইনের আওতায় গঠিত ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত নিরীক্ষক দিয়ে ব্যাংকের হিসাব নিরীক্ষা করা।

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত