Ajker Patrika

তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য সামনের ৬ মাস কঠিন সময় : বিজিএমইএ সভাপতি  

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৩, ১৬: ০৪
তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য সামনের ৬ মাস কঠিন সময় : বিজিএমইএ সভাপতি  

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পকেটে টান পড়েছে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত বিশ্বের মানুষেরও। আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় খরচের লাগাম টানতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির ঋণ পরিশোধেও। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে পোশাকসহ অন্যান্য ননফুড আইটেমে খরচ অনেকটাই সংকোচন করছে। বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন, আগামী ছয় মাস তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য খুবই কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তৈরি পোশাক নিয়ে সামনের দিনগুলোতে কী চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে ৫ জুলাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। 

আজকের পত্রিকা: ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে টার্গেট ছিল, সেটা অর্জন করা গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি পোশাকের প্রধান আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বেড়ে যাওয়ার চাপে আছে সেখানকার ভোক্তারা।
ফারুক হাসান: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে চাপ থাকার কারণে পোশাকসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ কমিয়ে দিয়েছে ভোক্তারা। এর জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য কারণ। এই সংকটের মধ্যেও আমাদের তৈরি পোশাক খাতে গত বছরের যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেটা কোনোমতে অর্জন করা গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের মতো। কিন্তু আগের অর্থবছরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩০ শতাংশ। পোশাক খাতে গত বছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যতম কারণ। সার্বিক বিবেচনায় রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেলেও প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক নয়। 

আজকের পত্রিকা: একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানির সবচেয়ে বড় দেশ। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২০ শতাংশের বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় আছে। সেটা আপনাদের জন্য কতটুকু শঙ্কার?
ফারুক হাসান: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির তীব্র চাপে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশের নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, যার বহিঃপ্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা। আমাদের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যাওয়া স্বভাবতই খুবই উদ্বেগের। মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংকের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে বাসাবাড়ি, গাড়ি ও খাবারদাবারের পেছনে খরচের পর মানুষের হাতে আর টাকা থাকছে না। ফলে স্বভাবতই ভোক্তারা এখন পোশাকের পেছনে খরচ কমিয়ে দিয়েছে। 

তৈরি পোশাক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সার্বিকভাবে গত চার মাস ধরে মোট আমদানির প্রায় ২২ শতাংশ এবং ভলিয়মের দিক দিয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়েছে। সেই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি একটু ভালো। তবে এই ভালো ভালো নয়। প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি সংকুচিত হওয়ার কারণে আমরা নতুন এমার্জিং মার্কেট যেমন—ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। 

আজকের পত্রিকা: ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে এই যুদ্ধ শিগগির শেষ হচ্ছে না। যুদ্ধের জেরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির অন্যতম দেশ জার্মানিতে ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত কেমন পারফর্ম করতে পারে?
ফারুক হাসান: ইউক্রেন যুদ্ধের এখন যা অবস্থা এবং ইউরোপের অর্থনীতি ধীরে ধীরে মন্দার দিকে যাচ্ছে। এটা সহজে অনুমান করা যায় সামনের দিনগুলোতে তৈরি পোশাকে রপ্তানি ধরে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে যাবে। জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার রেশে জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশে এখন মন্দা দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক সমস্যা ছাড়াও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ, একই সঙ্গে কাস্টম বন্ডের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখছি না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস তৈরি পোশাক খাত খুবই কঠিন সময়ের মধ্যে যাবে। 

আজকের পত্রিকা: আপনি বলছেন, তৈরি পোশাকের জন্য সামনের ছয় মাস খুবই কঠিন সময়। অন্যদিকে এই বছরের প্রবৃদ্ধিও আশাব্যঞ্জক নয়। এই অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হবে নিশ্চিত।
ফারুক হাসান: দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য শীর্ষস্থানীয় রপ্তানির পণ্য তৈরি পোশাকে বিনিয়োগ খুবই জরুরি। তবে বর্তমান যে অবস্থা বিরাজ করছে, সেখানে এ অবস্থায় বিনিয়োগ করা খুবই কঠিন। অনেকেই এখন নতুন করে বিনিয়োগ করা বন্ধ রেখেছেন। এ বছর নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব তো হবেই না, বরং যে কর্মসংস্থানগুলো আছে, সেগুলো ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। 

আজকের পত্রিকা: ডলার সংকটের কারণে ক্যাপিটাল মেশিনারি ইমপোর্টের ক্ষেত্রে এলসি খোলায় কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
ফারুক হাসান: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় বর্তমানে আরএমজি খাতে তেমন বড় কোনো ইনভেস্টমেন্ট হবে না। তবে হাই অ্যান্ড প্রোডাক্ট প্রস্তুত করার জন্য যে ক্ষমতা প্রয়োজন, তার জন্য আমরা টেকনোলজিতে ইনভেস্ট করছি। তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখন বিনিয়োগ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। এখন যদি তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইনভেস্ট করা হয়, তাহলে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ নেবে। তাছাড়া নতুন বিনিয়োগের জন্য যে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করতে হয়, তা ডলারের সংকট থাকায় এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। দেশে যে ডলারের সংকট আছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। 

আজকের পত্রিকা: আইএমএফের পরামর্শে সরকার ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারেও ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংক ঋণ এখন আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাইছি।
ফারুক হাসান: ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য খাতের মতো তৈরি পোশাক খাতেও বিনিয়োগের খরচ বাড়াবে। একই সঙ্গে উৎপাদনে খরচও বাড়বে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা আমাদের প্রতিযোগী ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ সেসব দেশগুলোতে ব্যাংকের সুদের হার আমাদের চেয়ে অনেক কম, যার ফলে ব্যাংক ঋণের কস্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট, প্রোডাকশন এবং কস্ট অব গুডস বেড়ে যাবে, যার ভার দিন শেষে বহন করতে হবে ভোক্তাদের। 

আজকের পত্রিকা: যে সমস্যাগুলোর কথা বলছেন, সেগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়—এ রকম কোনো পরিকল্পনা কি আপনারা করছেন? 
ফারুক হাসান: তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলা কাটিয়ে ওঠার জন্য দেশ-বিদেশে দৌড়ঝাঁপ করছি। ক্রেতাদের মধ্যে মনোবল ফিরে আনার জন্য আমি শরীর খারাপ নিয়েও বায়ারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফ্রান্সের ছুটে এসেছি, যাতে আমাদের মেম্বাররা পোশাক খাত নিয়ে একটু আশ্বস্ত হতে পারে। তৈরি পোশাক নিয়ে ফ্রান্সে এখন তিনটা মেলা হচ্ছে। সেখানে আমাদের অনেক রপ্তানিকারক অংশগ্রহণ করছেন। আমি ফ্রান্সে ছুটে এসেছি ক্রেতা ও উৎপাদকদের একটু সাহস জোগাতে। 

আজকের পত্রিকা: শিল্প উৎপাদনের অন্যতম অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। শিল্পের রেকর্ড পরিমাণ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেওয়ার শর্তে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহ কেমন পাচ্ছেন। 
ফারুক হাসান: বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহে সংকট আছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে এই শর্তে গ্যাসের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তার পরও আমরা গ্যাসের পর্যাপ্ত সংগ্রহ পাচ্ছি না। বিশ্ববাজারে এখন গ্যাসের দাম দিনে দিনে কমছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এই সংকটের মধ্যে রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকারের উচিত উৎপাদনশিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গ সমন্বয় করা। 

আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি আপনি রিপাবলিকান পার্টির টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সিনেটর টেড ক্রুজসহ কয়েকজন মার্কিন আইন প্রণতাকে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য। কোনো সাড়া পেয়েছেন কি? 
ফারুক হাসান: এখনো তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে তুলা কিনি, তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। আমরা আমাদের তুলার মোট চাহিদার ১০ থেকে ১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকি। একটা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিতে শুল্ক মওকুফ করতে পারে, তাহলে উন্নত দেশ হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পোশাক রপ্তানিতে একই সুবিধা প্রত্যাশা করি। তা ছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যদি শুল্ক উঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা কম দামে পোশাক কিনতে পারবে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। সামনের দিনের ট্যাড ক্রসের সঙ্গে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে পোশাক রপ্তানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সহকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৬
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনবিআর কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি, সতর্কবার্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. কাউসারের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রতারকেরা মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে ফোন, মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে মো. কাউসারের সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বসাধারণকে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এ ধরনের ফোনকল বা বার্তার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জিডিতে মো. কাউসার উল্লেখ করেন, ২৩ ডিসেম্বর এনবিআরের উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) তাঁকে জানান, কাউসারের নাম ব্যবহার করে ০১৭০১৮৯০৩৮৭ নম্বর থেকে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ আছে’ উল্লেখ করে টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ০১৩২৮০৮৩২১৬ নম্বরে। পরে দেখা যায়, একই চক্র আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই কৌশলে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে। পরে কাউসার জানতে পারেন আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই নম্বর থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাঁর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কাউসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-কুষ্টিয়ার পরিদর্শী রেঞ্জ-৪-এর যুগ্ম কর কমিশনার রইসুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে কাউসারের নামেই ফোন করে। আমি বিষয়টি কাউসারকে জানাই। পরে আর ফোন করেনি। কোনো কথাও হয়নি।’

জানতে চাইলে মো. কাউসার বলেন, কোনো একটা চক্র এটা করছে। এর আগে চেয়ারম্যান স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে টাকা চেয়েছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটে নতুন সমীকরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত