Ajker Patrika

ইইউতে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা এখনো ঝুঁকির মুখে

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১: ০৬
ইইউতে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা এখনো ঝুঁকির মুখে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বা জিএসপি সুবিধা এখনো ঝুঁকির মুখেই রয়েছে। গত মাসের মাঝামাঝি ইইউ প্রতিনিধিদল সফর করে যাওয়ার পর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। জিএসপি সুবিধার সঙ্গে শর্ত হিসেবে যুক্ত মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়ে যেসব উদ্বেগ আগে থেকে ছিল, তার প্রায় সবই হালনাগাদ প্রতিবেদনেও তুলে ধরা হয়েছে।

দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পণ্য রপ্তানিতে সহায়তা করতে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) নীতির আওতায় জিএসপি সুবিধা দেয় ইইউ। ইবিএর সুবিধাভোগী বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার নিয়ে ‘জয়েন্ট স্টাফ ওয়ার্কিং ডকুমেন্ট’ নামে হালনাগাদ প্রতিবেদন গত ২১ নভেম্বর ব্রাসেলস থেকে প্রকাশিত হয়। এর আগে ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর পাঁচ দিনের সফর করে যায় ইইউর প্রতিনিধিদল। 

মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ, জলবায়ু ও সুশাসনের ওপর আন্তর্জাতিক মানকে সম্মান জানানোর শর্ত সাপেক্ষে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধার আওতায় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া প্রায় ৭ হাজার ২০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়। এই সুবিধার ফলে বাংলাদেশি পণ্যের বড় রপ্তানি গন্তব্য এখন ইইউ। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৪৫ শতাংশ গেছে ইইউভুক্ত ২৭ দেশে।

জিএসপি সুবিধা পাওয়া তিন দেশ—বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে ইইউ। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, দেশগুলোতে মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের মানদণ্ডের প্রতি সম্মান দেখানোর ঘাটতির বিষয়টি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও সুশীল সমাজের প্রতিবেদনে প্রমাণিত। 

ইইউ বলেছে, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে ব্যর্থ হলে সুবিধাভোগী দেশগুলো তাদের জিএসপি সুবিধা হারাতে পারে। তবে পরিস্থিতি উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশের ভালো সম্পৃক্ততার স্বীকৃতিও দিয়েছে ইইউ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি দেশের বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার বিষয়ে সৃষ্টিশীল দ্বিপক্ষীয় মতবিনিময়ের জন্য সম্পৃক্ততায় বেশ জোর দেওয়া হয়। ২০২০-২২ মেয়াদে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টেকসই সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। 

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত মানবাধিকার নীতি গুরুতর ও পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের দায়ে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে কম্বোডিয়ার আংশিক জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনে। তখন কম্বোডিয়ার রপ্তানি কমে যায়। বাংলাদেশের সামনেও এ ধরনের ঝুঁকি আছে।

ইইউর মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ে বেশ কয়েকটি উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধি নির্বাচন এবং অবাধে ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম চালানোর অধিকারের আইনি বাধা; ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য ন্যূনতম সদস্যের প্রয়োজনীয়তা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়নের অনুপস্থিতি। 

এসব বাধা দূর করার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি কারখানা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ঘাটতি সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সহিংসতা, হয়রানি, বরখাস্ত, ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত, মামলা ও কর্মীদের গ্রেপ্তারের মতো ইউনিয়নবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বলা হয়। 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শ্রম পরিদর্শনে সক্ষমতা ও সামর্থ্যের ঘাটতি দূর করার তাগিদ দেওয়া হয় এবং শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (ন্যাপ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) রূপকল্পে অন্তর্ভুক্ত শ্রম অধিকারসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইইউ। 

বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ইইউর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রম অধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে ২০২১-২৬ সাল মেয়াদি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। বর্তমানে সে অনুযায়ী কাজ করছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ইপিজেড শ্রমবিধি এবং শ্রম আইন ও ইপিজেড শ্রম আইনের উপবিধি সংশোধিত হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডে পৌঁছাতে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে।

সরকার ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ শ্রম পরিদর্শক পদে অতিরিক্ত ৯৪২ জনবল নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে শ্রম পরিদর্শকের পদসংখ্যা ২০০। তাঁদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই আবার ফাঁকা রয়েছে।

ইইউর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব সামান্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ও নাগরিক সমাজের পরিসরে বাধা এবং মৃত্যুদণ্ড অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ইইউ মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত