Ajker Patrika

জনশক্তি রপ্তানি কমছে, বিদেশে ছোট হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ১২: ৪০
জনশক্তি রপ্তানি কমছে, বিদেশে ছোট হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার

কমছে জনশক্তি রপ্তানি। একই সঙ্গে কমছে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়)। জনশক্তি রপ্তানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই নতুন শ্রমবাজার ধরতে না পারলে এ খাত বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ২০১৮ সালে নতুন ৫৩টি দেশে কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো শ্রমবাজার এখনো তৈরি হয়নি।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার দ্বিগুণ কর্মী পাঠানো, ভিসার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে কয়েকটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। বেশি কর্মী পাঠানোর দায় জনশক্তি রপ্তানিকারকদেরও আছে। সরকারকে বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার দ্রুত চালু ও নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।

জানতে চাইলে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) শাহ্ আবদুল তারিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, অদক্ষ কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থান কঠিন হচ্ছে।

কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। তাই দক্ষ কর্মীর বাজার ধরতে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদেশি কর্মী বেশি হওয়ার কারণ দেখিয়ে ওমান ও মালয়েশিয়া শ্রমবাজার সাময়িক বন্ধ রেখেছে। প্রচলিত শ্রমবাজারের পাশাপাশি নতুন বাজারে কর্মী পাঠাতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের তালিকায় ১৬৮টি দেশের নাম থাকলেও বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা মূলত যান মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে। অর্থাৎ শ্রমবাজার সীমাবদ্ধ নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে। সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব। দ্বিতীয় মালয়েশিয়া ও তৃতীয় ওমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের ৯৫ শতাংশই গেছেন সৌদি আরব, ওমান, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত ও জর্ডানে। এর মধ্যে কর্মী ভিসায় গত তিন বছরে বিদেশে পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের অর্ধেকের বেশি গেছেন সৌদি আরবে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মূলত ইতালি ও রোমানিয়ায় গত দুই বছরে কিছু কর্মী পাঠানো গেছে।

সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) দেশটিতে গেছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৭ জন। ২০২৩ সালে যান ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন এবং এর আগের বছর গেছেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন এবং ২০২০ সালে ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৬ জন। দেশটি থেকে প্রবাসী আয় পাঠানো কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৬ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছিল ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ ডলার।

সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে গত কয়েক বছরে যাওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশই গেছেন ফ্রি ভিসায়। অর্থাৎ কাজ ঠিক না করেই। ফলে তাঁরা যেসব কাজ খুঁজে নিয়েছেন, তাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। আবার যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে কাজ করছেন, তাঁরাও কম বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ফলে দেশে বেশি অর্থ পাঠাতে পারছেন না।

একই অবস্থা প্রবাসী আয় আসার অন্যতম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও। দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি কর্মীরা সেখানে যাচ্ছেন ভ্রমণ ভিসায়। বিএমইটির তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে গেছেন ২৬ হাজার ১৯২ জন। গত বছর যান ৯৬ হাজার ৪২২ জন এবং ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৭৭৫ জন। কর্মী ভিসায় না যাওয়ায় তাঁদের কাজের নিশ্চয়তা নেই।

বন্ধ হচ্ছে একের পর এক শ্রমবাজার 
গত কয়েক বছরে কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসী আয় আসার অন্যতম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করেছে ২০১২ সালের আগস্টে। এখনো ওই বাজার চালু হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশি মুয়াজ্জিনের হাতে বাইরাইনের নাগরিক ইমাম খুনের পর দেশটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর আগে ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ৩১৮ জন এবং ২০১৬ সালে ৭২ হাজার ১৬৭ কর্মী যান। গত তিন বছরে গেছেন মাত্র ১১ জন। 
বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার ওমান ভিসার অপব্যবহার ও চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ কর্মী থাকার অভিযোগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে। বিএমইটি সূত্র বলছে, এর আগে ভিসা পাওয়া ৩০২ কর্মী গত জানুয়ারিতে ওমান যান। ২০২৩ সালে সেখানে গেছেন নতুন ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩ কর্মী। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ জন। তবে গত বুধবার ঢাকার ওমান দূতাবাস এক বিবৃতিতে পেশাগত ১০ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার কথা জানায়। শ্রমিক ভিসা বন্ধই রেখেছে।

জনশক্তি রপ্তানিতে আরেক দুঃসংবাদ এনেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। গত ৩১ মের পর দেশটি বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের কর্মী প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী থাকা মালয়েশিয়ায় গত বছর গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন। চার বছর পর ২০২২ সালে দেশটির শ্রমবাজার খোলার পর ওই বছর গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ৯০ জন। আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বাজারটি বন্ধ হলো।

সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপেও বাংলাদেশি কর্মী রপ্তানি বন্ধ হয়েছে মে মাসে। সিঙ্গাপুরেও কর্মী যাওয়া কমেছে। দেশটিতে ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৩৮৩ জন ও ২০২৩ সালে ৫৩ হাজার ২৬৫ জন গেলেও চলতি বছর গেছেন ১৪ হাজার ৯৬৪ জন।

এ প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের কো-অর্ডিনেটর ড. মো. জালাল উদ্দিন শিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট গঠন করা হয়েছে। এতে অভিবাসীরা শোষণের শিকার হন। ভুয়া কাগজপত্র দাখিল, নিয়োগে অনিয়ম, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়সহ নানা কারণে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে। আবার যেসব দেশে খোলা আছে, সেগুলোরও কোনো কোনোটিতে রপ্তানি কমছে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কাতার সফর করেন। তিনি ওই সফর নিয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমিরাত নতুন করে ১১টি ক্যাটাগরিতে দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদার কথা জানিয়েছে। প্রথম দফায় ডেলিভারি কাজে তিন হাজার কর্মী নেবে। এর মধ্যে ট্যাক্সিচালক ৪০০ ও মোটরসাইকেলচালক ৫০০ জন। ৪০০ কর্মী ইতিমধ্যে চলে গেছেন। আরও ৫০০ কর্মী যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

ওমানও দক্ষ কর্মী নিতে চায় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দক্ষ কর্মী যাওয়া শুরু করলে অদক্ষ কর্মীও যাওয়া শুরু করবে। পর্যায়ক্রমে সে ব্যবস্থা হবে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সৌদি আরবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মী পাঠানো হচ্ছে। গত কয়েক বছরে প্রায় ১৭ লাখ কর্মী দেশটিতে গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই কম বেতনে কাজ করছেন; যার প্রভাব রেমিট্যান্সে পড়েছে। বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বন্ধ শ্রমবাজার আবার চালুর জন্য সরকারি পর্যায়ে তৎপরতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে নতুন দেশের বিষয়ে উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে এনবিআরের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের হেল্পডেস্ক থেকে আগামী শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত