ড. আতিউর রহমান

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থকে বেশি করে দেখতে গিয়ে উন্নত দেশগুলো এই টিকার সরবরাহ সবার জন্য উন্মুক্ত করে উঠতে পারেনি। তাই বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তাদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি টিকা মজুত করে রেখেছে, আরেক দল পর্যাপ্ত টিকা টাকা দিয়েও সংগ্রহ করতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় উন্নত সাত দেশের সংস্থা জি-৭ ঘোষণা করেছে যে তারা গরিব দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করবে। তবে কবে করবে, কীভাবে করবে–সেসব এখনো পরিষ্কার নয়। তাই আইএমএফপ্রধান বলেছেন, সারা বিশ্বের বেশির ভাগ নাগরিককেই যদি আগামী বছরের মধ্যে এই টিকা না দেওয়া যায় তাহলে করোনাসংকট থেকে মুক্তির আশা বেশ ক্ষীণ। সে কারণেই তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে সব দেশে টিকা দেওয়ার নীতিটিই আসলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নীতি। জানি না কবে করোনা এ বিশ্বকে রেহাই দেবে। তবে সবার প্রচেষ্টায় যদি বিশ্ববাসী এই অভাবনীয় সংকট থেকে বের হয়ে আসতেও পারে, তাহলেও আগামীর পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীর মতো হবে না। শুধু অর্থনীতি নয়; সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পুরোপুরিই বদলে যাবে। বদলে যাবে মানুষের জীবন চলার ধরন। বদলাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, বিনোদন, পর্যটন ও মানবিক সম্পর্কগুলোও। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ জেঁকে বসবে বিশ্বজুড়েই। প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে দ্রুতলয়ে। জীবন ও জীবিকার ধরনও পাল্টাবে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়াও বদলে যাবে।
সেই বদলে যাওয়া বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মোটেও সহজ নয়। করোনার মতিগতি কেমন হবে তার ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, তখন কেমন হবে? বর্তমানে পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত। এক দিকে টিকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মানুষ খুবই অসচেতন। কিছুতেই তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছে না। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস যেভাবে আঘাত হেনেছে, তার প্রভাব শুধু স্থানীয় অর্থনীতির ওপরই পড়বে–এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এই সংক্রমণ একপর্যায়ে রাজধানী ও তার আশপাশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আছড়ে পড়লে তার পরিণতি ভালো হবে না। কেননা, তরুণ শ্রমজীবী সবাইকে আমরা টিকা দিতে পারিনি। তবে তাঁরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। মাস্ক পরছেন। কিন্তু কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলেও তাঁরা যেখানে থাকেন, সেখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এমনি এক অনিশ্চিত পরিবেশে আমাদের করোনা-উত্তর বাংলাদেশের কথা ভাবতে হচ্ছে।
ধরে নিচ্ছি, এই সংকট কেটে যাবে। বাংলাদেশ ফের তার পুরোনো লয় খুঁজে পাবে। জীবন ও জীবিকা–দুই–ই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তা–ই যেন হয়। তবুও নয়া পৃথিবীর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যে বাংলাদেশকে হতে হবে তা তো বলাই বাহুল্য। অবশ্য, সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটিই শেষ পর্যন্ত তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সীমাহীন দুঃখ ও বেদনার মধ্য দিয়ে। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যিনি, সেই জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগারে। অথচ তাঁরই নেতৃত্বে চলছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারে এক কোটির মতো মানুষ শরণার্থী। দেশের তরুণ-তরুণীরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছে। সে বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল প্রবল। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঙালি মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল মুক্তির অন্বেষায়। তাদের মনে লড়াই করার মতো মণ উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর সহনেতারা দেশবাসীকে তাঁরই নামে ঐক্যবদ্ধ করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশকে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ওই দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের সমর্থনে অতি অল্প সময়েই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। এর পরের সংগ্রাম দেশ গড়ার। সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা স্বয়ং। ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে কী করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু সে এক অনন্য কাহিনি। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, অন্তর্ঘাত, ঝড়-বৃষ্টি এবং বিভ্রান্ত তারুণ্যের অসহিষ্ণুতা–সবকিছু মোকাবিলা করেই বঙ্গবন্ধু একটি সুপরিকল্পিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের জন্য। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামোসমূহ পুনর্নির্মাণ, এক কোটি শরণার্থীদের পুনর্বাসন, প্রাদেশিক একটি সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারে উন্নীতকরণ এবং বিপুল খাদ্যঘাটতি মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ সামলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় মাত্র ৯৩ ডলার থেকে ২৭৩ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, শিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় (ব্যক্তিমালিকানা ও সমবায় মালিকানার পথ খোলা রেখে) নিয়ে তিনি দ্রুতই অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুরুতেই তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার মতো সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করেছিলেন। রাষ্ট্রের সক্ষমতা তখনো যথেষ্ট অর্জিত হয়নি। বিদেশি সাহায্য-নির্ভর কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে তাই বেসরকারি উদ্যোগকে অংশীদার করতে তিনি দ্বিধা করেননি। এমনকি এসব সামাজিক উদ্যোক্তাদের (ডা. জাফরুল্লাহসহ আরও অনেকেই) জমি ও নীতি সমর্থন দিতেও কার্পণ্য করেননি। তাই শুরুর দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ থেকে উৎসারিত এসব উন্নয়ন উদ্যোক্তারা যথেষ্ট স্বাধীনতা ও নীতি-সমর্থন ভোগ করেছেন। ফলে কম খরচে মানব উন্নয়নের নানা উদ্যোগ সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। অংশীদারিমূলক সেই উন্নয়নের ধারা বাংলাদেশে আজও বহমান।
দেশ যখন বিপর্যয় কাটিয়ে সুস্থিতির দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মরণ ছোবল হানে বাঙালির জাতির পিতা ও তাঁর সহনেতাদের ওপর। পঁচাত্তরের সেই ট্র্যাজেডির ধাক্কায় বাংলাদেশ হাঁটতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো দিকে। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিল বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ২৭৩ ডলারের মাথাপিছু আয়ে পুনরায় পৌঁছাতে। এরপরেও দেশ চলছিল ঢিমেতালে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সরকার গঠন করে দেশকে ফিরিয়ে আনেন মুক্তিযুদ্ধের পথে। ১৯৯৮–এর বন্যা মোকাবিলার সময় তিনি দেখিয়ে দেন সংকটকালেও কী করে সামাজিক সক্রিয়তা বজায় রেখে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।
একজন মানুষকেও অনাহারে মরতে দেননি তিনি ওই দুর্যোগকালে। শুরু করেন বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতার মতো সুদূরপ্রসারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ। এগুলো এখন আরও বিস্তৃত ও গভীরতর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। ২০০১ সালে ফের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর পরের বছরগুলো বাংলাদেশ কেমন ছিল তা আর না–ইবা বললাম। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ–তিতিক্ষার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের ‘সনদ’–এর অঙ্গীকার করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েন। আজও সমান গতিতেই এগিয়ে চলেছেন তিনি উন্নয়নের ঝান্ডা হাতে নিয়ে। বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নসূচকে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাংলাদেশের আজ অবধি মাথাপিছু আয় সাত গুণের বেশি বেড়েছে। এর ৭৩ শতাংশই বেড়েছে গত এক যুগে। এই এক যুগে তা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। পঁচাত্তর থেকে এখন অবধি প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৮৫ গুণ। রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তৈরি পোশাক খাত। গত ১২ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। এ সময় মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থেকেছে। ম্যাক্রো অর্থনীতির ভিত্তি দারুণ শক্তিশালী এখন। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের উপযুক্ত ম্যাক্রো অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণের জন্য। আরও সাহায্য করছে তরুণ জনগোষ্ঠী। এরই অংশ অধিক হারে নারীর আনুষ্ঠানিক কর্মে অংশগ্রহণ। সরকার ও আর্থিক খাতে ব্যাপক ডিজিটাইজেশনও খুব সহায়ক হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। এসব অবকাঠামো আগামীর বাংলাদেশের চেহারাই বদলে দেবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের এই গতিময়তার পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সূচকগুলোতেও দারুণ অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত বলে দম্পতি প্রতি সন্তানের সংখ্যা এখন ২ দশমিক ১–এ দাঁড়িয়েছে। বাহাত্তরের তা ছিল ৬–এরও বেশি। এখন আমাদের জীবনের আয়ু ৭৩ বছর। বাহাত্তরে তা ছিল ৪৭ বছর। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্ধেক। সব শিশুকে আমরা টিকা দেওয়ার অবকাঠামো গড়ে তুলেছি। খাবার স্যালাইন, পুষ্টি শিক্ষা, স্যানিটেশন, সন্তান পালনসহ সামাজিক সচেতনতা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। কোভিড আসার আগে দারিদ্র্য কমে ২০ শতাংশে পৌঁছেছিল। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যেই আছে। খাদ্য উৎপাদন ৫০ বছরে চার গুণ বেড়েছে। মাছ, সবজি, মাংস, ফল– উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষার পরিমাণ বেড়েছে। গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বিস্তার ঘটেছে। মধ্যম ও টারশিয়ারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আরও যথেষ্ট নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের এ অসামান্য অর্জনের পেছনে নিঃসন্দেহে নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল প্রবল। বঙ্গবন্ধু যেমনটি চেয়েছিলেন ঠিক সেরকম বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে অনেকেই ‘রানিং বল’ বা ‘প্যারাগন অব ডেভেলপমেন্ট’ বলছেন। কেউ কেউ আবার তাকে মিরাকলও বলতে চাইছেন। আমি বলি এ অর্জন ‘বিরল’। আমাদের পরিশ্রমী উদ্যোক্তা মানুষ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের অর্জন। ]
অর্জনের এই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই আমরা করোনা-উত্তর বাংলাদেশকে যেমনটি দেখতে চাই তা সংক্ষেপে উল্লেখ করছি:
এক. আগামীর বাংলাদেশ হবে পুরোপুরি ডিজিটাল। ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবকিছুই হবে প্রযুক্তি-নির্ভর। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এই আধুনিক বাংলাদেশের শুভসূচনা করেছি এক যুগ আগেই।
দুই. আগামীর বাংলাদেশ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব। উদ্ভাবনই হবে মূল কথা। অর্থনীতির পিরামিডের ভিত্তিটি শক্ত করেই আমরা আমাদের ম্যাক্রো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও টেকসই রাখব।
তিন. রাষ্ট্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করব। আর সেই পরিবেশে ব্যক্তি খাত অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ অর্থনৈতিক রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
চার. আমরা উচ্চশিক্ষাকে শিল্প তথা চতুর্থ শিল্প–বিপ্লবের সহযোগী করে ঢেলে সাজাতে চাই। শিল্পের চাহিদামতো জনশক্তি তৈরি করবে উচ্চ শিক্ষালয়।
পাঁচ. কৃষির আধুনিকায়ন এবং যন্ত্রায়ণের যে নীতি সমর্থন দিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার, তা আরও বেগবান করার কোনো বিকল্প নেই।
ছয়. আমাদের গ্রামগুলোকেও শহরের সুবিধা দেব। তবে নগরায়ণকে হতে হবে স্মার্ট ও মানুষের বসবাসযোগ্য।
সাত. স্থানীয়, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ চেইনগুলোকে সমন্বিত করে আমরা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করতে কানেকটিভিটির ওপর বেশি জোর দিতে চাই।
আট. আমাদের নিজস্ব সম্পদ বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার করতে হবে। তার সক্ষমতা বাড়িয়ে কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে তার দ্বিগুণ করতে আগ্রহী আমরা।
নয়. এ সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা শাসনব্যবস্থার উন্নতি করে সামাজিক সুবিচার ও প্রবৃদ্ধিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারি। সে জন্য সর্বত্র জবাবদিহি ও অপচয়বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা খুবই জরুরি। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সামাজিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত এই গভর্নেন্সের মান নিশ্চয় উন্নত করতে পারি।
দশ. আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব সহজে করা যায় না। পদে পদে বাধা। আর রয়েছে অযথা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তাই নিয়মনীতি সহজ করে ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’সুবিধা আরও বাড়াতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।
এগারো. প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আয়ের বৈষম্যও বাড়ছে। তাই প্রগতিশীল চালু করে করব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে আয়বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ভোগবৈষম্য এখনো তীব্র নয়। এই সূচককে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বারো. প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি অবশ্য সবুজ হতে হবে। সবুজ বিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উৎপাদনের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে আরও জলবায়ুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
চলমান করোনাসংকট সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করে আমরা এমন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চাই, যাতে বাংলাদেশের এত দিনের অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারি। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের মহাসড়ককে আরও মসৃণ ও সবুজ হোক, সেই প্রত্যাশাই করছি। এ সবকিছুতেই অঙ্গীকারবদ্ধ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই নেতৃত্ব আমাদের মাঝে আছে। আসুন, আরও সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
ড. আতিউর রহমান
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থকে বেশি করে দেখতে গিয়ে উন্নত দেশগুলো এই টিকার সরবরাহ সবার জন্য উন্মুক্ত করে উঠতে পারেনি। তাই বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তাদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি টিকা মজুত করে রেখেছে, আরেক দল পর্যাপ্ত টিকা টাকা দিয়েও সংগ্রহ করতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় উন্নত সাত দেশের সংস্থা জি-৭ ঘোষণা করেছে যে তারা গরিব দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করবে। তবে কবে করবে, কীভাবে করবে–সেসব এখনো পরিষ্কার নয়। তাই আইএমএফপ্রধান বলেছেন, সারা বিশ্বের বেশির ভাগ নাগরিককেই যদি আগামী বছরের মধ্যে এই টিকা না দেওয়া যায় তাহলে করোনাসংকট থেকে মুক্তির আশা বেশ ক্ষীণ। সে কারণেই তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে সব দেশে টিকা দেওয়ার নীতিটিই আসলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নীতি। জানি না কবে করোনা এ বিশ্বকে রেহাই দেবে। তবে সবার প্রচেষ্টায় যদি বিশ্ববাসী এই অভাবনীয় সংকট থেকে বের হয়ে আসতেও পারে, তাহলেও আগামীর পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীর মতো হবে না। শুধু অর্থনীতি নয়; সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পুরোপুরিই বদলে যাবে। বদলে যাবে মানুষের জীবন চলার ধরন। বদলাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, বিনোদন, পর্যটন ও মানবিক সম্পর্কগুলোও। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ জেঁকে বসবে বিশ্বজুড়েই। প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে দ্রুতলয়ে। জীবন ও জীবিকার ধরনও পাল্টাবে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়াও বদলে যাবে।
সেই বদলে যাওয়া বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মোটেও সহজ নয়। করোনার মতিগতি কেমন হবে তার ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, তখন কেমন হবে? বর্তমানে পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত। এক দিকে টিকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মানুষ খুবই অসচেতন। কিছুতেই তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছে না। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস যেভাবে আঘাত হেনেছে, তার প্রভাব শুধু স্থানীয় অর্থনীতির ওপরই পড়বে–এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এই সংক্রমণ একপর্যায়ে রাজধানী ও তার আশপাশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আছড়ে পড়লে তার পরিণতি ভালো হবে না। কেননা, তরুণ শ্রমজীবী সবাইকে আমরা টিকা দিতে পারিনি। তবে তাঁরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। মাস্ক পরছেন। কিন্তু কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলেও তাঁরা যেখানে থাকেন, সেখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এমনি এক অনিশ্চিত পরিবেশে আমাদের করোনা-উত্তর বাংলাদেশের কথা ভাবতে হচ্ছে।
ধরে নিচ্ছি, এই সংকট কেটে যাবে। বাংলাদেশ ফের তার পুরোনো লয় খুঁজে পাবে। জীবন ও জীবিকা–দুই–ই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তা–ই যেন হয়। তবুও নয়া পৃথিবীর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যে বাংলাদেশকে হতে হবে তা তো বলাই বাহুল্য। অবশ্য, সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটিই শেষ পর্যন্ত তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সীমাহীন দুঃখ ও বেদনার মধ্য দিয়ে। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যিনি, সেই জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগারে। অথচ তাঁরই নেতৃত্বে চলছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারে এক কোটির মতো মানুষ শরণার্থী। দেশের তরুণ-তরুণীরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছে। সে বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল প্রবল। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঙালি মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল মুক্তির অন্বেষায়। তাদের মনে লড়াই করার মতো মণ উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর সহনেতারা দেশবাসীকে তাঁরই নামে ঐক্যবদ্ধ করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশকে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ওই দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের সমর্থনে অতি অল্প সময়েই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। এর পরের সংগ্রাম দেশ গড়ার। সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা স্বয়ং। ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে কী করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু সে এক অনন্য কাহিনি। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, অন্তর্ঘাত, ঝড়-বৃষ্টি এবং বিভ্রান্ত তারুণ্যের অসহিষ্ণুতা–সবকিছু মোকাবিলা করেই বঙ্গবন্ধু একটি সুপরিকল্পিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের জন্য। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামোসমূহ পুনর্নির্মাণ, এক কোটি শরণার্থীদের পুনর্বাসন, প্রাদেশিক একটি সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারে উন্নীতকরণ এবং বিপুল খাদ্যঘাটতি মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ সামলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় মাত্র ৯৩ ডলার থেকে ২৭৩ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, শিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় (ব্যক্তিমালিকানা ও সমবায় মালিকানার পথ খোলা রেখে) নিয়ে তিনি দ্রুতই অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুরুতেই তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার মতো সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করেছিলেন। রাষ্ট্রের সক্ষমতা তখনো যথেষ্ট অর্জিত হয়নি। বিদেশি সাহায্য-নির্ভর কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে তাই বেসরকারি উদ্যোগকে অংশীদার করতে তিনি দ্বিধা করেননি। এমনকি এসব সামাজিক উদ্যোক্তাদের (ডা. জাফরুল্লাহসহ আরও অনেকেই) জমি ও নীতি সমর্থন দিতেও কার্পণ্য করেননি। তাই শুরুর দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ থেকে উৎসারিত এসব উন্নয়ন উদ্যোক্তারা যথেষ্ট স্বাধীনতা ও নীতি-সমর্থন ভোগ করেছেন। ফলে কম খরচে মানব উন্নয়নের নানা উদ্যোগ সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। অংশীদারিমূলক সেই উন্নয়নের ধারা বাংলাদেশে আজও বহমান।
দেশ যখন বিপর্যয় কাটিয়ে সুস্থিতির দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মরণ ছোবল হানে বাঙালির জাতির পিতা ও তাঁর সহনেতাদের ওপর। পঁচাত্তরের সেই ট্র্যাজেডির ধাক্কায় বাংলাদেশ হাঁটতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো দিকে। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিল বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ২৭৩ ডলারের মাথাপিছু আয়ে পুনরায় পৌঁছাতে। এরপরেও দেশ চলছিল ঢিমেতালে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সরকার গঠন করে দেশকে ফিরিয়ে আনেন মুক্তিযুদ্ধের পথে। ১৯৯৮–এর বন্যা মোকাবিলার সময় তিনি দেখিয়ে দেন সংকটকালেও কী করে সামাজিক সক্রিয়তা বজায় রেখে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।
একজন মানুষকেও অনাহারে মরতে দেননি তিনি ওই দুর্যোগকালে। শুরু করেন বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতার মতো সুদূরপ্রসারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ। এগুলো এখন আরও বিস্তৃত ও গভীরতর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। ২০০১ সালে ফের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর পরের বছরগুলো বাংলাদেশ কেমন ছিল তা আর না–ইবা বললাম। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ–তিতিক্ষার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের ‘সনদ’–এর অঙ্গীকার করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েন। আজও সমান গতিতেই এগিয়ে চলেছেন তিনি উন্নয়নের ঝান্ডা হাতে নিয়ে। বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নসূচকে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাংলাদেশের আজ অবধি মাথাপিছু আয় সাত গুণের বেশি বেড়েছে। এর ৭৩ শতাংশই বেড়েছে গত এক যুগে। এই এক যুগে তা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। পঁচাত্তর থেকে এখন অবধি প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৮৫ গুণ। রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তৈরি পোশাক খাত। গত ১২ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। এ সময় মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থেকেছে। ম্যাক্রো অর্থনীতির ভিত্তি দারুণ শক্তিশালী এখন। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের উপযুক্ত ম্যাক্রো অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণের জন্য। আরও সাহায্য করছে তরুণ জনগোষ্ঠী। এরই অংশ অধিক হারে নারীর আনুষ্ঠানিক কর্মে অংশগ্রহণ। সরকার ও আর্থিক খাতে ব্যাপক ডিজিটাইজেশনও খুব সহায়ক হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। এসব অবকাঠামো আগামীর বাংলাদেশের চেহারাই বদলে দেবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের এই গতিময়তার পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সূচকগুলোতেও দারুণ অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত বলে দম্পতি প্রতি সন্তানের সংখ্যা এখন ২ দশমিক ১–এ দাঁড়িয়েছে। বাহাত্তরের তা ছিল ৬–এরও বেশি। এখন আমাদের জীবনের আয়ু ৭৩ বছর। বাহাত্তরে তা ছিল ৪৭ বছর। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্ধেক। সব শিশুকে আমরা টিকা দেওয়ার অবকাঠামো গড়ে তুলেছি। খাবার স্যালাইন, পুষ্টি শিক্ষা, স্যানিটেশন, সন্তান পালনসহ সামাজিক সচেতনতা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। কোভিড আসার আগে দারিদ্র্য কমে ২০ শতাংশে পৌঁছেছিল। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যেই আছে। খাদ্য উৎপাদন ৫০ বছরে চার গুণ বেড়েছে। মাছ, সবজি, মাংস, ফল– উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষার পরিমাণ বেড়েছে। গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বিস্তার ঘটেছে। মধ্যম ও টারশিয়ারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আরও যথেষ্ট নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের এ অসামান্য অর্জনের পেছনে নিঃসন্দেহে নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল প্রবল। বঙ্গবন্ধু যেমনটি চেয়েছিলেন ঠিক সেরকম বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে অনেকেই ‘রানিং বল’ বা ‘প্যারাগন অব ডেভেলপমেন্ট’ বলছেন। কেউ কেউ আবার তাকে মিরাকলও বলতে চাইছেন। আমি বলি এ অর্জন ‘বিরল’। আমাদের পরিশ্রমী উদ্যোক্তা মানুষ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের অর্জন। ]
অর্জনের এই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই আমরা করোনা-উত্তর বাংলাদেশকে যেমনটি দেখতে চাই তা সংক্ষেপে উল্লেখ করছি:
এক. আগামীর বাংলাদেশ হবে পুরোপুরি ডিজিটাল। ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবকিছুই হবে প্রযুক্তি-নির্ভর। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এই আধুনিক বাংলাদেশের শুভসূচনা করেছি এক যুগ আগেই।
দুই. আগামীর বাংলাদেশ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব। উদ্ভাবনই হবে মূল কথা। অর্থনীতির পিরামিডের ভিত্তিটি শক্ত করেই আমরা আমাদের ম্যাক্রো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও টেকসই রাখব।
তিন. রাষ্ট্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করব। আর সেই পরিবেশে ব্যক্তি খাত অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ অর্থনৈতিক রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
চার. আমরা উচ্চশিক্ষাকে শিল্প তথা চতুর্থ শিল্প–বিপ্লবের সহযোগী করে ঢেলে সাজাতে চাই। শিল্পের চাহিদামতো জনশক্তি তৈরি করবে উচ্চ শিক্ষালয়।
পাঁচ. কৃষির আধুনিকায়ন এবং যন্ত্রায়ণের যে নীতি সমর্থন দিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার, তা আরও বেগবান করার কোনো বিকল্প নেই।
ছয়. আমাদের গ্রামগুলোকেও শহরের সুবিধা দেব। তবে নগরায়ণকে হতে হবে স্মার্ট ও মানুষের বসবাসযোগ্য।
সাত. স্থানীয়, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ চেইনগুলোকে সমন্বিত করে আমরা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করতে কানেকটিভিটির ওপর বেশি জোর দিতে চাই।
আট. আমাদের নিজস্ব সম্পদ বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার করতে হবে। তার সক্ষমতা বাড়িয়ে কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে তার দ্বিগুণ করতে আগ্রহী আমরা।
নয়. এ সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা শাসনব্যবস্থার উন্নতি করে সামাজিক সুবিচার ও প্রবৃদ্ধিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারি। সে জন্য সর্বত্র জবাবদিহি ও অপচয়বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা খুবই জরুরি। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সামাজিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত এই গভর্নেন্সের মান নিশ্চয় উন্নত করতে পারি।
দশ. আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব সহজে করা যায় না। পদে পদে বাধা। আর রয়েছে অযথা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তাই নিয়মনীতি সহজ করে ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’সুবিধা আরও বাড়াতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।
এগারো. প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আয়ের বৈষম্যও বাড়ছে। তাই প্রগতিশীল চালু করে করব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে আয়বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ভোগবৈষম্য এখনো তীব্র নয়। এই সূচককে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বারো. প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি অবশ্য সবুজ হতে হবে। সবুজ বিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উৎপাদনের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে আরও জলবায়ুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
চলমান করোনাসংকট সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করে আমরা এমন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চাই, যাতে বাংলাদেশের এত দিনের অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারি। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের মহাসড়ককে আরও মসৃণ ও সবুজ হোক, সেই প্রত্যাশাই করছি। এ সবকিছুতেই অঙ্গীকারবদ্ধ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই নেতৃত্ব আমাদের মাঝে আছে। আসুন, আরও সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
ড. আতিউর রহমান
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
ড. আতিউর রহমান

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থকে বেশি করে দেখতে গিয়ে উন্নত দেশগুলো এই টিকার সরবরাহ সবার জন্য উন্মুক্ত করে উঠতে পারেনি। তাই বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তাদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি টিকা মজুত করে রেখেছে, আরেক দল পর্যাপ্ত টিকা টাকা দিয়েও সংগ্রহ করতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় উন্নত সাত দেশের সংস্থা জি-৭ ঘোষণা করেছে যে তারা গরিব দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করবে। তবে কবে করবে, কীভাবে করবে–সেসব এখনো পরিষ্কার নয়। তাই আইএমএফপ্রধান বলেছেন, সারা বিশ্বের বেশির ভাগ নাগরিককেই যদি আগামী বছরের মধ্যে এই টিকা না দেওয়া যায় তাহলে করোনাসংকট থেকে মুক্তির আশা বেশ ক্ষীণ। সে কারণেই তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে সব দেশে টিকা দেওয়ার নীতিটিই আসলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নীতি। জানি না কবে করোনা এ বিশ্বকে রেহাই দেবে। তবে সবার প্রচেষ্টায় যদি বিশ্ববাসী এই অভাবনীয় সংকট থেকে বের হয়ে আসতেও পারে, তাহলেও আগামীর পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীর মতো হবে না। শুধু অর্থনীতি নয়; সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পুরোপুরিই বদলে যাবে। বদলে যাবে মানুষের জীবন চলার ধরন। বদলাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, বিনোদন, পর্যটন ও মানবিক সম্পর্কগুলোও। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ জেঁকে বসবে বিশ্বজুড়েই। প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে দ্রুতলয়ে। জীবন ও জীবিকার ধরনও পাল্টাবে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়াও বদলে যাবে।
সেই বদলে যাওয়া বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মোটেও সহজ নয়। করোনার মতিগতি কেমন হবে তার ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, তখন কেমন হবে? বর্তমানে পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত। এক দিকে টিকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মানুষ খুবই অসচেতন। কিছুতেই তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছে না। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস যেভাবে আঘাত হেনেছে, তার প্রভাব শুধু স্থানীয় অর্থনীতির ওপরই পড়বে–এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এই সংক্রমণ একপর্যায়ে রাজধানী ও তার আশপাশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আছড়ে পড়লে তার পরিণতি ভালো হবে না। কেননা, তরুণ শ্রমজীবী সবাইকে আমরা টিকা দিতে পারিনি। তবে তাঁরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। মাস্ক পরছেন। কিন্তু কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলেও তাঁরা যেখানে থাকেন, সেখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এমনি এক অনিশ্চিত পরিবেশে আমাদের করোনা-উত্তর বাংলাদেশের কথা ভাবতে হচ্ছে।
ধরে নিচ্ছি, এই সংকট কেটে যাবে। বাংলাদেশ ফের তার পুরোনো লয় খুঁজে পাবে। জীবন ও জীবিকা–দুই–ই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তা–ই যেন হয়। তবুও নয়া পৃথিবীর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যে বাংলাদেশকে হতে হবে তা তো বলাই বাহুল্য। অবশ্য, সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটিই শেষ পর্যন্ত তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সীমাহীন দুঃখ ও বেদনার মধ্য দিয়ে। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যিনি, সেই জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগারে। অথচ তাঁরই নেতৃত্বে চলছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারে এক কোটির মতো মানুষ শরণার্থী। দেশের তরুণ-তরুণীরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছে। সে বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল প্রবল। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঙালি মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল মুক্তির অন্বেষায়। তাদের মনে লড়াই করার মতো মণ উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর সহনেতারা দেশবাসীকে তাঁরই নামে ঐক্যবদ্ধ করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশকে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ওই দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের সমর্থনে অতি অল্প সময়েই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। এর পরের সংগ্রাম দেশ গড়ার। সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা স্বয়ং। ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে কী করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু সে এক অনন্য কাহিনি। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, অন্তর্ঘাত, ঝড়-বৃষ্টি এবং বিভ্রান্ত তারুণ্যের অসহিষ্ণুতা–সবকিছু মোকাবিলা করেই বঙ্গবন্ধু একটি সুপরিকল্পিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের জন্য। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামোসমূহ পুনর্নির্মাণ, এক কোটি শরণার্থীদের পুনর্বাসন, প্রাদেশিক একটি সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারে উন্নীতকরণ এবং বিপুল খাদ্যঘাটতি মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ সামলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় মাত্র ৯৩ ডলার থেকে ২৭৩ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, শিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় (ব্যক্তিমালিকানা ও সমবায় মালিকানার পথ খোলা রেখে) নিয়ে তিনি দ্রুতই অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুরুতেই তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার মতো সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করেছিলেন। রাষ্ট্রের সক্ষমতা তখনো যথেষ্ট অর্জিত হয়নি। বিদেশি সাহায্য-নির্ভর কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে তাই বেসরকারি উদ্যোগকে অংশীদার করতে তিনি দ্বিধা করেননি। এমনকি এসব সামাজিক উদ্যোক্তাদের (ডা. জাফরুল্লাহসহ আরও অনেকেই) জমি ও নীতি সমর্থন দিতেও কার্পণ্য করেননি। তাই শুরুর দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ থেকে উৎসারিত এসব উন্নয়ন উদ্যোক্তারা যথেষ্ট স্বাধীনতা ও নীতি-সমর্থন ভোগ করেছেন। ফলে কম খরচে মানব উন্নয়নের নানা উদ্যোগ সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। অংশীদারিমূলক সেই উন্নয়নের ধারা বাংলাদেশে আজও বহমান।
দেশ যখন বিপর্যয় কাটিয়ে সুস্থিতির দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মরণ ছোবল হানে বাঙালির জাতির পিতা ও তাঁর সহনেতাদের ওপর। পঁচাত্তরের সেই ট্র্যাজেডির ধাক্কায় বাংলাদেশ হাঁটতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো দিকে। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিল বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ২৭৩ ডলারের মাথাপিছু আয়ে পুনরায় পৌঁছাতে। এরপরেও দেশ চলছিল ঢিমেতালে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সরকার গঠন করে দেশকে ফিরিয়ে আনেন মুক্তিযুদ্ধের পথে। ১৯৯৮–এর বন্যা মোকাবিলার সময় তিনি দেখিয়ে দেন সংকটকালেও কী করে সামাজিক সক্রিয়তা বজায় রেখে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।
একজন মানুষকেও অনাহারে মরতে দেননি তিনি ওই দুর্যোগকালে। শুরু করেন বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতার মতো সুদূরপ্রসারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ। এগুলো এখন আরও বিস্তৃত ও গভীরতর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। ২০০১ সালে ফের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর পরের বছরগুলো বাংলাদেশ কেমন ছিল তা আর না–ইবা বললাম। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ–তিতিক্ষার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের ‘সনদ’–এর অঙ্গীকার করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েন। আজও সমান গতিতেই এগিয়ে চলেছেন তিনি উন্নয়নের ঝান্ডা হাতে নিয়ে। বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নসূচকে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাংলাদেশের আজ অবধি মাথাপিছু আয় সাত গুণের বেশি বেড়েছে। এর ৭৩ শতাংশই বেড়েছে গত এক যুগে। এই এক যুগে তা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। পঁচাত্তর থেকে এখন অবধি প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৮৫ গুণ। রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তৈরি পোশাক খাত। গত ১২ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। এ সময় মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থেকেছে। ম্যাক্রো অর্থনীতির ভিত্তি দারুণ শক্তিশালী এখন। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের উপযুক্ত ম্যাক্রো অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণের জন্য। আরও সাহায্য করছে তরুণ জনগোষ্ঠী। এরই অংশ অধিক হারে নারীর আনুষ্ঠানিক কর্মে অংশগ্রহণ। সরকার ও আর্থিক খাতে ব্যাপক ডিজিটাইজেশনও খুব সহায়ক হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। এসব অবকাঠামো আগামীর বাংলাদেশের চেহারাই বদলে দেবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের এই গতিময়তার পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সূচকগুলোতেও দারুণ অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত বলে দম্পতি প্রতি সন্তানের সংখ্যা এখন ২ দশমিক ১–এ দাঁড়িয়েছে। বাহাত্তরের তা ছিল ৬–এরও বেশি। এখন আমাদের জীবনের আয়ু ৭৩ বছর। বাহাত্তরে তা ছিল ৪৭ বছর। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্ধেক। সব শিশুকে আমরা টিকা দেওয়ার অবকাঠামো গড়ে তুলেছি। খাবার স্যালাইন, পুষ্টি শিক্ষা, স্যানিটেশন, সন্তান পালনসহ সামাজিক সচেতনতা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। কোভিড আসার আগে দারিদ্র্য কমে ২০ শতাংশে পৌঁছেছিল। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যেই আছে। খাদ্য উৎপাদন ৫০ বছরে চার গুণ বেড়েছে। মাছ, সবজি, মাংস, ফল– উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষার পরিমাণ বেড়েছে। গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বিস্তার ঘটেছে। মধ্যম ও টারশিয়ারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আরও যথেষ্ট নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের এ অসামান্য অর্জনের পেছনে নিঃসন্দেহে নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল প্রবল। বঙ্গবন্ধু যেমনটি চেয়েছিলেন ঠিক সেরকম বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে অনেকেই ‘রানিং বল’ বা ‘প্যারাগন অব ডেভেলপমেন্ট’ বলছেন। কেউ কেউ আবার তাকে মিরাকলও বলতে চাইছেন। আমি বলি এ অর্জন ‘বিরল’। আমাদের পরিশ্রমী উদ্যোক্তা মানুষ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের অর্জন। ]
অর্জনের এই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই আমরা করোনা-উত্তর বাংলাদেশকে যেমনটি দেখতে চাই তা সংক্ষেপে উল্লেখ করছি:
এক. আগামীর বাংলাদেশ হবে পুরোপুরি ডিজিটাল। ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবকিছুই হবে প্রযুক্তি-নির্ভর। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এই আধুনিক বাংলাদেশের শুভসূচনা করেছি এক যুগ আগেই।
দুই. আগামীর বাংলাদেশ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব। উদ্ভাবনই হবে মূল কথা। অর্থনীতির পিরামিডের ভিত্তিটি শক্ত করেই আমরা আমাদের ম্যাক্রো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও টেকসই রাখব।
তিন. রাষ্ট্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করব। আর সেই পরিবেশে ব্যক্তি খাত অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ অর্থনৈতিক রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
চার. আমরা উচ্চশিক্ষাকে শিল্প তথা চতুর্থ শিল্প–বিপ্লবের সহযোগী করে ঢেলে সাজাতে চাই। শিল্পের চাহিদামতো জনশক্তি তৈরি করবে উচ্চ শিক্ষালয়।
পাঁচ. কৃষির আধুনিকায়ন এবং যন্ত্রায়ণের যে নীতি সমর্থন দিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার, তা আরও বেগবান করার কোনো বিকল্প নেই।
ছয়. আমাদের গ্রামগুলোকেও শহরের সুবিধা দেব। তবে নগরায়ণকে হতে হবে স্মার্ট ও মানুষের বসবাসযোগ্য।
সাত. স্থানীয়, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ চেইনগুলোকে সমন্বিত করে আমরা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করতে কানেকটিভিটির ওপর বেশি জোর দিতে চাই।
আট. আমাদের নিজস্ব সম্পদ বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার করতে হবে। তার সক্ষমতা বাড়িয়ে কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে তার দ্বিগুণ করতে আগ্রহী আমরা।
নয়. এ সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা শাসনব্যবস্থার উন্নতি করে সামাজিক সুবিচার ও প্রবৃদ্ধিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারি। সে জন্য সর্বত্র জবাবদিহি ও অপচয়বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা খুবই জরুরি। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সামাজিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত এই গভর্নেন্সের মান নিশ্চয় উন্নত করতে পারি।
দশ. আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব সহজে করা যায় না। পদে পদে বাধা। আর রয়েছে অযথা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তাই নিয়মনীতি সহজ করে ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’সুবিধা আরও বাড়াতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।
এগারো. প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আয়ের বৈষম্যও বাড়ছে। তাই প্রগতিশীল চালু করে করব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে আয়বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ভোগবৈষম্য এখনো তীব্র নয়। এই সূচককে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বারো. প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি অবশ্য সবুজ হতে হবে। সবুজ বিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উৎপাদনের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে আরও জলবায়ুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
চলমান করোনাসংকট সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করে আমরা এমন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চাই, যাতে বাংলাদেশের এত দিনের অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারি। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের মহাসড়ককে আরও মসৃণ ও সবুজ হোক, সেই প্রত্যাশাই করছি। এ সবকিছুতেই অঙ্গীকারবদ্ধ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই নেতৃত্ব আমাদের মাঝে আছে। আসুন, আরও সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
ড. আতিউর রহমান
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থকে বেশি করে দেখতে গিয়ে উন্নত দেশগুলো এই টিকার সরবরাহ সবার জন্য উন্মুক্ত করে উঠতে পারেনি। তাই বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তাদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি টিকা মজুত করে রেখেছে, আরেক দল পর্যাপ্ত টিকা টাকা দিয়েও সংগ্রহ করতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় উন্নত সাত দেশের সংস্থা জি-৭ ঘোষণা করেছে যে তারা গরিব দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করবে। তবে কবে করবে, কীভাবে করবে–সেসব এখনো পরিষ্কার নয়। তাই আইএমএফপ্রধান বলেছেন, সারা বিশ্বের বেশির ভাগ নাগরিককেই যদি আগামী বছরের মধ্যে এই টিকা না দেওয়া যায় তাহলে করোনাসংকট থেকে মুক্তির আশা বেশ ক্ষীণ। সে কারণেই তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে সব দেশে টিকা দেওয়ার নীতিটিই আসলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নীতি। জানি না কবে করোনা এ বিশ্বকে রেহাই দেবে। তবে সবার প্রচেষ্টায় যদি বিশ্ববাসী এই অভাবনীয় সংকট থেকে বের হয়ে আসতেও পারে, তাহলেও আগামীর পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীর মতো হবে না। শুধু অর্থনীতি নয়; সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি পুরোপুরিই বদলে যাবে। বদলে যাবে মানুষের জীবন চলার ধরন। বদলাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, বিনোদন, পর্যটন ও মানবিক সম্পর্কগুলোও। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ জেঁকে বসবে বিশ্বজুড়েই। প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে দ্রুতলয়ে। জীবন ও জীবিকার ধরনও পাল্টাবে এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়াও বদলে যাবে।
সেই বদলে যাওয়া বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মোটেও সহজ নয়। করোনার মতিগতি কেমন হবে তার ওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, তখন কেমন হবে? বর্তমানে পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত। এক দিকে টিকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মানুষ খুবই অসচেতন। কিছুতেই তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছে না। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস যেভাবে আঘাত হেনেছে, তার প্রভাব শুধু স্থানীয় অর্থনীতির ওপরই পড়বে–এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এই সংক্রমণ একপর্যায়ে রাজধানী ও তার আশপাশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আছড়ে পড়লে তার পরিণতি ভালো হবে না। কেননা, তরুণ শ্রমজীবী সবাইকে আমরা টিকা দিতে পারিনি। তবে তাঁরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। মাস্ক পরছেন। কিন্তু কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলেও তাঁরা যেখানে থাকেন, সেখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এমনি এক অনিশ্চিত পরিবেশে আমাদের করোনা-উত্তর বাংলাদেশের কথা ভাবতে হচ্ছে।
ধরে নিচ্ছি, এই সংকট কেটে যাবে। বাংলাদেশ ফের তার পুরোনো লয় খুঁজে পাবে। জীবন ও জীবিকা–দুই–ই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তা–ই যেন হয়। তবুও নয়া পৃথিবীর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি যে বাংলাদেশকে হতে হবে তা তো বলাই বাহুল্য। অবশ্য, সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটিই শেষ পর্যন্ত তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সীমাহীন দুঃখ ও বেদনার মধ্য দিয়ে। একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যিনি, সেই জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগারে। অথচ তাঁরই নেতৃত্বে চলছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারে এক কোটির মতো মানুষ শরণার্থী। দেশের তরুণ-তরুণীরা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছে। সে বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগও ছিল প্রবল। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঙালি মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল মুক্তির অন্বেষায়। তাদের মনে লড়াই করার মতো মণ উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা। তাঁর সহনেতারা দেশবাসীকে তাঁরই নামে ঐক্যবদ্ধ করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে স্বাধীন করেছিলেন বাংলাদেশকে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ওই দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের সমর্থনে অতি অল্প সময়েই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। এর পরের সংগ্রাম দেশ গড়ার। সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা স্বয়ং। ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে কী করে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু সে এক অনন্য কাহিনি। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, অন্তর্ঘাত, ঝড়-বৃষ্টি এবং বিভ্রান্ত তারুণ্যের অসহিষ্ণুতা–সবকিছু মোকাবিলা করেই বঙ্গবন্ধু একটি সুপরিকল্পিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশের জন্য। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামোসমূহ পুনর্নির্মাণ, এক কোটি শরণার্থীদের পুনর্বাসন, প্রাদেশিক একটি সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারে উন্নীতকরণ এবং বিপুল খাদ্যঘাটতি মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ সামলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় মাত্র ৯৩ ডলার থেকে ২৭৩ ডলারে উন্নীত করেছিলেন। কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, শিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় (ব্যক্তিমালিকানা ও সমবায় মালিকানার পথ খোলা রেখে) নিয়ে তিনি দ্রুতই অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শুরুতেই তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার মতো সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করেছিলেন। রাষ্ট্রের সক্ষমতা তখনো যথেষ্ট অর্জিত হয়নি। বিদেশি সাহায্য-নির্ভর কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে তাই বেসরকারি উদ্যোগকে অংশীদার করতে তিনি দ্বিধা করেননি। এমনকি এসব সামাজিক উদ্যোক্তাদের (ডা. জাফরুল্লাহসহ আরও অনেকেই) জমি ও নীতি সমর্থন দিতেও কার্পণ্য করেননি। তাই শুরুর দিনগুলোতে জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ সামাজিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ থেকে উৎসারিত এসব উন্নয়ন উদ্যোক্তারা যথেষ্ট স্বাধীনতা ও নীতি-সমর্থন ভোগ করেছেন। ফলে কম খরচে মানব উন্নয়নের নানা উদ্যোগ সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। অংশীদারিমূলক সেই উন্নয়নের ধারা বাংলাদেশে আজও বহমান।
দেশ যখন বিপর্যয় কাটিয়ে সুস্থিতির দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মরণ ছোবল হানে বাঙালির জাতির পিতা ও তাঁর সহনেতাদের ওপর। পঁচাত্তরের সেই ট্র্যাজেডির ধাক্কায় বাংলাদেশ হাঁটতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো দিকে। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিল বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ২৭৩ ডলারের মাথাপিছু আয়ে পুনরায় পৌঁছাতে। এরপরেও দেশ চলছিল ঢিমেতালে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত সরকার গঠন করে দেশকে ফিরিয়ে আনেন মুক্তিযুদ্ধের পথে। ১৯৯৮–এর বন্যা মোকাবিলার সময় তিনি দেখিয়ে দেন সংকটকালেও কী করে সামাজিক সক্রিয়তা বজায় রেখে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।
একজন মানুষকেও অনাহারে মরতে দেননি তিনি ওই দুর্যোগকালে। শুরু করেন বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মুক্তিযোদ্ধাভাতার মতো সুদূরপ্রসারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসমূহ। এগুলো এখন আরও বিস্তৃত ও গভীরতর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের। ২০০১ সালে ফের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর পরের বছরগুলো বাংলাদেশ কেমন ছিল তা আর না–ইবা বললাম। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ–তিতিক্ষার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দিন বদলের ‘সনদ’–এর অঙ্গীকার করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েন। আজও সমান গতিতেই এগিয়ে চলেছেন তিনি উন্নয়নের ঝান্ডা হাতে নিয়ে। বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নসূচকে যে উল্লম্ফন ঘটেছে, তা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাংলাদেশের আজ অবধি মাথাপিছু আয় সাত গুণের বেশি বেড়েছে। এর ৭৩ শতাংশই বেড়েছে গত এক যুগে। এই এক যুগে তা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। পঁচাত্তর থেকে এখন অবধি প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৮৫ গুণ। রপ্তানি বেড়েছে ১৩৩ গুণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তৈরি পোশাক খাত। গত ১২ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ। এ সময় মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থেকেছে। ম্যাক্রো অর্থনীতির ভিত্তি দারুণ শক্তিশালী এখন। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের উপযুক্ত ম্যাক্রো অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণের জন্য। আরও সাহায্য করছে তরুণ জনগোষ্ঠী। এরই অংশ অধিক হারে নারীর আনুষ্ঠানিক কর্মে অংশগ্রহণ। সরকার ও আর্থিক খাতে ব্যাপক ডিজিটাইজেশনও খুব সহায়ক হয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। এসব অবকাঠামো আগামীর বাংলাদেশের চেহারাই বদলে দেবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের এই গতিময়তার পাশাপাশি আমাদের সামাজিক সূচকগুলোতেও দারুণ অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। আমাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত বলে দম্পতি প্রতি সন্তানের সংখ্যা এখন ২ দশমিক ১–এ দাঁড়িয়েছে। বাহাত্তরের তা ছিল ৬–এরও বেশি। এখন আমাদের জীবনের আয়ু ৭৩ বছর। বাহাত্তরে তা ছিল ৪৭ বছর। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্ধেক। সব শিশুকে আমরা টিকা দেওয়ার অবকাঠামো গড়ে তুলেছি। খাবার স্যালাইন, পুষ্টি শিক্ষা, স্যানিটেশন, সন্তান পালনসহ সামাজিক সচেতনতা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। কোভিড আসার আগে দারিদ্র্য কমে ২০ শতাংশে পৌঁছেছিল। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যেই আছে। খাদ্য উৎপাদন ৫০ বছরে চার গুণ বেড়েছে। মাছ, সবজি, মাংস, ফল– উৎপাদনে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষার পরিমাণ বেড়েছে। গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের বিস্তার ঘটেছে। মধ্যম ও টারশিয়ারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আরও যথেষ্ট নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের এ অসামান্য অর্জনের পেছনে নিঃসন্দেহে নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল প্রবল। বঙ্গবন্ধু যেমনটি চেয়েছিলেন ঠিক সেরকম বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে অনেকেই ‘রানিং বল’ বা ‘প্যারাগন অব ডেভেলপমেন্ট’ বলছেন। কেউ কেউ আবার তাকে মিরাকলও বলতে চাইছেন। আমি বলি এ অর্জন ‘বিরল’। আমাদের পরিশ্রমী উদ্যোক্তা মানুষ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের অর্জন। ]
অর্জনের এই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই আমরা করোনা-উত্তর বাংলাদেশকে যেমনটি দেখতে চাই তা সংক্ষেপে উল্লেখ করছি:
এক. আগামীর বাংলাদেশ হবে পুরোপুরি ডিজিটাল। ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সবকিছুই হবে প্রযুক্তি-নির্ভর। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এই আধুনিক বাংলাদেশের শুভসূচনা করেছি এক যুগ আগেই।
দুই. আগামীর বাংলাদেশ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব। উদ্ভাবনই হবে মূল কথা। অর্থনীতির পিরামিডের ভিত্তিটি শক্ত করেই আমরা আমাদের ম্যাক্রো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও টেকসই রাখব।
তিন. রাষ্ট্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করব। আর সেই পরিবেশে ব্যক্তি খাত অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ অর্থনৈতিক রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
চার. আমরা উচ্চশিক্ষাকে শিল্প তথা চতুর্থ শিল্প–বিপ্লবের সহযোগী করে ঢেলে সাজাতে চাই। শিল্পের চাহিদামতো জনশক্তি তৈরি করবে উচ্চ শিক্ষালয়।
পাঁচ. কৃষির আধুনিকায়ন এবং যন্ত্রায়ণের যে নীতি সমর্থন দিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার, তা আরও বেগবান করার কোনো বিকল্প নেই।
ছয়. আমাদের গ্রামগুলোকেও শহরের সুবিধা দেব। তবে নগরায়ণকে হতে হবে স্মার্ট ও মানুষের বসবাসযোগ্য।
সাত. স্থানীয়, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ চেইনগুলোকে সমন্বিত করে আমরা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রসারিত করতে কানেকটিভিটির ওপর বেশি জোর দিতে চাই।
আট. আমাদের নিজস্ব সম্পদ বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার করতে হবে। তার সক্ষমতা বাড়িয়ে কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে তার দ্বিগুণ করতে আগ্রহী আমরা।
নয়. এ সবকিছুই সম্ভব যদি আমরা শাসনব্যবস্থার উন্নতি করে সামাজিক সুবিচার ও প্রবৃদ্ধিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারি। সে জন্য সর্বত্র জবাবদিহি ও অপচয়বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা খুবই জরুরি। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সামাজিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত এই গভর্নেন্সের মান নিশ্চয় উন্নত করতে পারি।
দশ. আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব সহজে করা যায় না। পদে পদে বাধা। আর রয়েছে অযথা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তাই নিয়মনীতি সহজ করে ‘ওয়ান–স্টপ সার্ভিস’সুবিধা আরও বাড়াতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।
এগারো. প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আয়ের বৈষম্যও বাড়ছে। তাই প্রগতিশীল চালু করে করব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়ে আয়বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ভোগবৈষম্য এখনো তীব্র নয়। এই সূচককে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বারো. প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি অবশ্য সবুজ হতে হবে। সবুজ বিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উৎপাদনের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে আরও জলবায়ুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
চলমান করোনাসংকট সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করে আমরা এমন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চাই, যাতে বাংলাদেশের এত দিনের অর্জন আমরা ধরে রাখতে পারি। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়নের মহাসড়ককে আরও মসৃণ ও সবুজ হোক, সেই প্রত্যাশাই করছি। এ সবকিছুতেই অঙ্গীকারবদ্ধ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই নেতৃত্ব আমাদের মাঝে আছে। আসুন, আরও সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
ড. আতিউর রহমান
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প
৩০ জুন ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প
৩০ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প
৩০ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারা বিশ্বকেই টালমাটাল করে রেখেছে। এমন দীর্ঘস্থায়ী সর্বব্যাপী সংকটে আমাদের এই চেনা পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। এমনকি দুই দুটো বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্ববাসীকে এতটা অসহায় বোধ করতে দেখা যায়নি। এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে এই অদৃশ্য শত্রু হানা দেয়নি। বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতির কারণেই দ্রুতই এই সংক্রমণ প
৩০ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫