Ajker Patrika

বন সাবাড়, গবেষণা কেন্দ্রও জীর্ণ

  • ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বর্তমানে মাত্র চারটি পদে লোকবল আছে।
  • নানা প্রতিবন্ধকতায় ব্যাহত হচ্ছে গবেষণাকেন্দ্রটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল 
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বেহাল টাঙ্গাইলের মধুপুরের চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বেহাল টাঙ্গাইলের মধুপুরের চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির গাছের প্রজনন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ১৯৬৮ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ৪২৫ একর বনভূমিজুড়ে গড়ে তোলা হয় চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্র। শুরুতে ছিলেন ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে আছেন মাত্র ৪ জন। সেই সঙ্গে বরাদ্দও কমে গেছে।

জনবলসংকট, বরাদ্দের অপ্রতুলতা, গবেষণাকাজ সংকুচিত হওয়া, কর্মস্থলের জরাজীর্ণ অবস্থাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ধুঁকছে একসময়ের দেশের সবচেয়ে বড় এই বন গবেষণা কেন্দ্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনকালীন একজন গবেষণা কর্মকর্তা, একজন রেঞ্জ কর্মকর্তা, একজন ডেপুটি রেঞ্জার, একজন সিড ম্যানেজমেন্ট অফিসার, একজন নার্সারি সুপারভাইজার, বন প্রহরী, নার্সারি অ্যাটেনডেন্ট, অফিস সহায়কসহ ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করা হয়। ওই সময়ে দুই শতাধিক দুর্লভ এবং বিলুপ্তপ্রায় গাছ ও গুল্মলতা নিয়ে কার্যক্রম চলমান ছিল। এই গবেষণাকেন্দ্রের গবেষণাকর্ম দেশি বিদেশি জার্নালেও স্থান করে নিয়েছিল। এই কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্রটি দেশের বৃহত্তম বন গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক দশক ধরে মধুপুর বন উজাড় হচ্ছে। মূলত ৮০ থেকে ৯০ দশকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, অসাধু বন কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন মিলে অবাধে মধুপুর বনের গাছ কেটে নেয়। এমনকি চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো গাছপালাও কেটে ধ্বংস করে বনদস্যুরা।

চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্রের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বনদস্যুরা চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংসে মেতে উঠেছিল। গবেষণাকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটকে রেখে গাছ লুটের ঘটনাও ঘটেছে। এভাবেই বন গবেষণা কেন্দ্রটিও বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ে। পরে প্রভাবশালীরা দখল করে নেয় বনভূমি। বর্তমানে ৫৫ একর এলাকা চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে চাড়ালজানি বন গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, গবেষণাকেন্দ্রের প্রবেশপথে রয়েছে দুর্লভ সিদা জারুল, রক্তচন্দন, আগর, আমলকী, বহেড়া, হরীতকী, সোনালু, দারমারা, বেত, পীতরাজ, অর্জুন, সিদুগাছ। প্রবেশপথ বরাবর নার্সারি। নার্সারির চারা তৈরির অধিকাংশ বেড ফাঁকা। নার্সারিজুড়ে ১০-১৫ প্রজাতির গাছের চারা শোভা পাচ্ছে। নার্সারির ডান দিকে আবাসিক এলাকা। বাঁ দিকে বন গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়। ইটের প্রাচীরের ওপর টিনশেডের ছাউনির কার্যালয়টি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেহাল নার্সারি শেডও।

কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক বসে আছেন। তাঁর সামনে আরও তিন কর্মকর্তা। বীজ সংগ্রহ, নার্সারি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন, সম্প্রসারণ—সবই করতে হয় তাঁদের। গবেষণাকেন্দ্রের পাঁচটি আবাসিক ভবনের সব কটিই পরিত্যক্ত, ব্যবহারের অনুপযোগী। বাধ্য হয়ে সেখানেই বসবাস করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কথা হলে গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘আমি যে চেয়ারে বসে আছি, সেটিও নিজের টাকায় কেনা। কিছুদিন আগে অল্প কিছু টাকা পাইছিলাম, তাই দিয়া ভাঙা ঘরের ফ্লোরে টাইলস লাগাইছি। বরাদ্দ চাইলেও পাই না, কষ্টের কথা কারে কমু।’

তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গবেষণাকেন্দ্রে বছরে ১০ হাজার চারা উৎপাদিত হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বীজ সংগ্রহকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, গবেষণাকেন্দ্রে লাগানো বিরল প্রজাতির গাছগুলো থেকে বীজ সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে উন্নত প্রজাতির বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করা হয়।

ডেপুটি রেঞ্জ কর্মকর্তা অমরেন্দ্র নারায়ণ সরকার বলেন, ‘আমরা বনের মধ্যে থাকি, কিন্তু নেই বনপ্রহরী। নিরাপত্তার জন্য সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করেই আমাদের দিনরাত কাটে।’

মধুপুরের শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ খান চুন্নু বলেন, ‘ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। মধুপুরে বন গবেষণা কেন্দ্র যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।’

বাংলাদেশ বন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক যুগ্ম সচিব এ কে এম শওকত আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি পরিদর্শন না করে কোনো কিছু বলতে পারছি না। আগে পরিদর্শন করি, পরে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত