Ajker Patrika

‘আমার পুয়ারে পুলিশে খেনে মারল, অপরাধটা কিতা’

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৪, ১৮: ১৭
‘আমার পুয়ারে পুলিশে খেনে মারল, অপরাধটা কিতা’

‘জুম্মার নামাজও গেছলা। নামাজ থাকি আর ফিরিয়া আইছইন না। নামাজ থাকি লাশ ওইয়া ফিরল। সখালে নাশতাও ঠিকমতো খাইছলা না আমার পুতে। খবর পাইয়া ইবনেসিনাত গেছি, চাইয়া খইছইন, আমার আম্মা আইছইন। ওউ খইছইন। শেষ খতা। আর ইতাত রক্ত যার। খালি আত দিতাম চাইছি। বেটাইনতে আমারে টানিয়া হরাইলিছইন। জিতা তাখতে আমার পুতরে ছইতাম পারছি না।’

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের যতরপুরের ভাড়া বাসায় গেলে এসব কথা বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মমতাজ বেগম (৬৭)।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সিলেটে ১৯ জুলাই শুক্রবার বাদ জুমা বন্দরবাজারে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের মা মমতাজ বেগম। তুরাব দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট ব্যুরোর রিপোর্টার ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ছেলের মৃত্যুর আট দিনেও স্বাভাবিক হতে পারেননি মমতাজ। এমনিতে বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি। আদরের ছেলেকে এভাবে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। বারবার বিলাপ করছেন ও মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। বাসায় কেউ গেলেই প্রশ্ন করছেন, ‘আমার পুয়ারে পুলিশে খেনে মারল, আমার পুয়ার অপরাধটা কিতা?’

এ সময় তুরাবের বড় ভাবি তাসলিমা জান্নাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তুরাবরা তিন ভাই, এক বোন। স্বামীর সঙ্গে বোন লন্ডনে থাকেন। যতরপুরের ১০৫ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন তুরাব। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। সবার আদরের তুরাবকে হারিয়ে পরিবারের আলো নিভে গেছে।’

তুরাবের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ফহেতপুর গ্রামে। ২০২১ সালে মারা গেছেন বাবা মাস্টার আব্দুর রহিম। ২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতেই তাঁর দাফন হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল এ টি এম তুরাবের। বিয়ের কিছুদিন পর যুক্তরাজ্যে চলে যান তাঁর স্ত্রী তানিয়া ইসলাম। তুরাবকেও সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু করেন তানিয়া। কিন্তু তা আর হলো না।

পরিবারের অভিযোগ, সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় তুরাবের মৃত মুখও তাঁর প্রবাসী স্ত্রী দেখতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 

তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ (জাবুর আহমদ) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ১৩ মে বিয়ে করেন তুরাব। ৫ জুন তাঁর স্ত্রী তানিয়া ইসলাম লন্ডন চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে সেখানে তানিয়া মুষড়ে পড়েছেন। এখনো স্বাভাবিক হননি। কাঁদতে কাঁদতে শেষ।’

জাবুর আহমদ বলেন, ‘তুরাবের মৃত্যুর খবর শুনেই তানিয়া দেশে আসার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট না পাওয়ায় আসতে পারেননি। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় শেষবারের মতো স্বামীর মুখও দেখতে পারেননি।’

তুরাবের স্থানীয় কর্মস্থল দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এম জে এইচ জামিল বলেন, ‘তুরাব খুবই পরোপকারী ছিলেন। কারও বিপদ-আপদ শুনলে সবার আগে দৌড়ে যেতেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন। অফিসের সবার সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। কারও সঙ্গে কোনো দিন মনোমালিন্য হয়নি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ১৯ জুলাই শুক্রবার বাদ জুমা নগরের বন্দরবাজার এলাকা থেকে মিছিল বের করেন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আচমকাই সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় তাঁদের। পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে। ওই দিন আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তুরাব। আচমকা সংঘর্ষ শুরু হলে তৎক্ষণাৎ নিজেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পারেননি তিনি।

সংঘর্ষ শুরুর কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত সহকর্মীরা দেখেন তুরাব মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।

বিয়ের পোশাকে এ টি এম তুরাব। ছবি: সংগৃহীতপরে সেখান থেকে তুরাবকে নগরের সোবহানীঘাট এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিনই সন্ধ্যায় ইবনে সিনা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুরাবের মৃত্যু হয়।

পরদিন ২০ জুলাই ওসমানী হাসপাতালে তুরাবের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামসুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহতের শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। গুলিতে তাঁর লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল। এ কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।’

এদিকে তুরাব নিহত হওয়ার ঘটনার ছয় দিন পর গত বুধবার রাতে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন তাঁর ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ। এজাহারে তুরাবের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে এজাহার দিলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করেছে।

পুলিশ বলছে, তুরাব কার গুলিতে নিহত হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। বন্দরবাজার এলাকায় সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলা ও তুরাব নিহতের ঘটনায় ২০ জুলাই কোতোয়ালি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলায় এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এসএমপির উপকমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘সাংবাদিক তুরাবের মৃত্যুর ঘটনায় আগেই পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। নিহতের ভাই জাবুর বাদী হয়ে আরেকটি এজাহার দিয়েছেন। আমরা সেটাও গ্রহণ করেছি। দুটি একসঙ্গে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার বলেন, এজাহার বা অভিযোগ যে কেউই, যে কারও বিরুদ্ধে করতে পারে। তদন্ত চলছে, পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনানুগ ও বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে তুরাবের বড় ভাই এজাহার দাখিলকারী আবুল আহসান মো. আজরফ আজকের পত্রিকাকে গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘আমরা জিডি করিনি। এজাহার দিয়েছি। শনিবারের মধ্যে মামলা হিসেবে না নিলে আমরা রোববার আদালতে মামলা করব।’ আজ রোববার বিকেলে আজরফ বলেন, ‘তিনি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেছেন। সন্ধ্যায় ফিরে তুরাবের ঢাকা ও সিলেট অফিস এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ঘন কুয়াশার কারণে বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার সময় নদীপথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। সে সময় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আরও বলেন, কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার: বিএনপিএস

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে আজ বুধবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠক। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে বসবাস করা ৫৫ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু প্রতিনিয়ত সুরক্ষা, শিক্ষা, পুষ্টি ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৯ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।

বিএনপিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে বসবাস করছে, যা বিশ্বে বৃহত্তম শরণার্থী আশ্রয়স্থলগুলোর একটি। এই জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশের বেশি নারী ও কন্যা।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আট বছরেরও বেশি সময়ে কক্সবাজারের প্রায় ৫ লাখ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের প্রভাবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবিকা, মজুরি, বন ও জলসম্পদ, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সংহতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে। ফলে এটি শুধু শরণার্থী সংকট নয়; এটি মানবিকতা, উন্নয়ন এবং শান্তির এক যৌথ চ্যালেঞ্জ।

‘শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ও দায়িত্ব’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএনপিএসের উপপরিচালক নাসরিন বেগম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ শামসুদ্দৌজা নয়ন। এ ছাড়া শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম এ সানোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ পরিবশে আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হুমায়রা বেগমসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা কমে এসেছে। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা, খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর অধীনে নিশ্চিত করা নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। একইভাবে, আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়েরও টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, সম্মানজনক কাজ এবং জনসেবায় ন্যায্য প্রবেশাধিকারের জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যবিপ্রবির প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন

­যশোর প্রতিনিধি
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত
মো. রফিকুল ইসলাম সরকার। ছবি: সংগৃহীত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার মারা গেছেন (ইন্না...রাজিউন)। আজ বুধবার সকালে ঢাকার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকার যবিপ্রবি স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। সেখানে তিনি কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কৃষিবিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া তিনি একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসেবে দেশের কৃষি খাতের যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃতিত্বের সঙ্গে অবদান রেখেছেন।

এদিকে, ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, রিজেন্টবোর্ড সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

এক শোক বার্তায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, রফিকুল ইসলাম সরকার ছিলেন একজন সৎ, মানবিক, ধর্মভীরু ও দায়িত্বশীল মানুষ। যবিপ্রবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।

তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক এবং বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী। যবিপ্রবির সূচনালগ্নে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে ভিত গড়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে তিনি শূন্য থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, তা যবিপ্রবি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর সেতু থেকে লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত ১০ কিলোমাটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে একটি ট্রাক দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ সময় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এ যানজট তৈরি হয়।

এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ এলাকায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিংয়ে সজোরে আঘাত করে। ট্রাকটিতে প্রায় ২৭ টন মালামাল বোঝাই ছিল। দুর্ঘটনায় সেতুর রেলিং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি আরও জানান, ট্রাকটিতে অতিরিক্ত মালামাল থাকায় রেকার দিয়ে সরানো সম্ভব হয়নি। ফলে প্রথমে অন্য একটি ট্রাকে মালামাল স্থানান্তরের কাজ শুরু করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি বিকেলের আগে সরানো যায়নি। এর ফলে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট। ছবি: আজকের পত্রিকা

পণ্যবাহী ট্রাকচালক শাহ আলম জানান, দুর্ঘটনার কারণে রাস্তা বন্ধ ছিল বুঝতে পারছি। কিন্তু এত সময় লাগবে ভাবিনি। মালামাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।

আরেক যাত্রী আক্তার হোসেন বলেন, আমি চট্টগ্রামে যাচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় আটকে আছি। ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ শুরু করে। বিকেল নাগাদ মালামাল সরিয়ে ট্রাকটি সড়ক থেকে অপসারণ করা হলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। টানা তিন দিনের ছুটি থাকায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত